অবন্তর আসক্তি পর্ব ১২

0
541

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১২
#Sharmin_Akter_Borsha
_________
‘ সব কিছুর একটা লিমিট থাকে, পেয়েছে টা কি সে আমাকে? ‘ চেচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে নিলাম। এমন ভাবে চেচানো শুনে পুতুল আপু মুন্নী আপু ও তিন্নি আপু রুম থেকে বের হয়ে আসল। আমার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

‘ কি হয়েছে? কে তোকে কি পেয়েছে? ‘

আমি উপর নিচ তাকিয়ে বেক্কেলের মতো প্রশ্ন ছুঁড়লাম, ‘ আমি কখন বলেছি আমাকে কেউ কিছু পেয়েছে? ‘

তিনজনে আঁড়চোখে একে অপরকে দেখে আবারও বলল, ‘ দুই মিনিট আগেই তো চেচিয়ে বললি। ‘

‘ আমি কিছু বলিনি তোমাদের তিনজনের কানে সমস্যা যাও ডাক্তার দেখাও, দুনিয়ার যতগুলা বয়রা সব আমার বংশেই আল্লাহ দিছেন ‘ বলে তাদের সামনে থেকে চলে গেলাম

‘ কি বলে গেলো? ‘ পুতুল আপু বলল।

‘ আমাদের বয়রার সার্টিফিকেট দিয়ে গেলো। ‘ মুন্নী আপু বলল।

‘ ও নিজে পাগল সেটা ও জানে? ‘ তিন্নি আপু বলল।

রুমে এসে ঝটপট রেডি হয়ে গেলাম। কলেজ যেতে হবে আমার কোনো ভাবেই আজ কলেজ মিস করা যাবে না। রেডি হয়ে কলেজের জন্য বেরিয়ে পরলাম।

একাই আসতে হলো রিয়ার পেটে ব্যাথা তাই বাড়িতে রেস্ট নিচ্ছে। কলেজে এসেও শান্তি নেই একটু ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছি না। আমার আমার বান্ধপী গুলান (বান্ধবী গুলো) আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে। আরও একজন সে আজ কলেজে আসেনি।

নিঝুম: দোস্ত ওইদিন রাস্তায় তোর অভ্র ভাইয়া কে দেখেছি বুঝছিস বাইক কি স্পিডে চালিয়ে যাচ্ছি যা জোস লাগছিল না।

আমি ভ্রু কুঁচকালাম আড়চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লাম, ‘ বাইক চালাচ্ছিল আর তুই তাকে দেখে ফেলেছিস? তোর চোখ তো চিলের চোখের থেকেও একধাপ এগিয়ে। ‘

নিঝুম: আরে কি যে বলিস না তুই। আমি বাজারে গিয়েছিলাম আম্মুর সাথে তখন দেখলাম একটা ব্লাক পাঞ্জাবি পরা ছেলের ব্যাক। তো পেছন থেকেই দেখে এতটা ক্রাশিত লাগছিল কি বলবো। তাই আমি ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম মুখ টা দেখার জন্য, মিনিট কয়েকপর সে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। পেছনে ঘুরলে আমি তাকে দেখে শূন্য ভাসতে লাগলাম। উনার চেহারা দেখে চিনলাম সে তোর অভ্র ভাই আর বলিস না যা কিউট রে কি বলবো আমি।

‘ হইছে হইছে তোর ন্যাকামি বন্ধ কর। ওই মোটামুটি একটু কিউট আর কি ‘

‘ কি বলিস দোস্ত এইসব? তুই তাহলে তাকে ভালো করে দেখিসই নি দেখলে নিশ্চয়ই ক্রাশ খেতি আল্লাহ সে এত কিউট? তুই জানিস তাকে দেখার পর আমার বুকের ভেতর চিলিক পেরে উঠেছিল। মাই লাভ মাই ক্রাশ ‘

ওর কথা আর হজম হচ্ছে না, তাই দুই হাত দিয়ে ওর চুল ধরে টান মারলাম। নিঝুম ব্যাথা পেয়ে, ‘মা গো ‘ বলে চেচিয়ে উঠল৷ স্যার ভ্রু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকালেন কন্ঠকঠোর করে বললেন,

‘ কত দিন বলছি তোমরা চারজন একসাথে বসবে না। তবুও কেন বসো? বের হয়ে যাও আমার ক্লাসরুম থেকে পুরো ক্লাস বাহিরে থাকবে। ‘

এমনিতেই মুড অফ তার উপরে বাঁচাল টার বকবক শোনার থেকে বাহিরে গিয়ে গাছের নিচে বসে বাতাস খাওয়াই ভালো। হনহনিয়ে বের হয়ে চলে আসলাম ক্লাস থেকে, বাহিরে এসেও শান্তি নেই। বাহিরে তীব্র রোদ তার উপরে ফাজিল অসভ্য মেয়ের অভ্র ভাইয়া কে নিয়া গুনগান আমার মাথা গরম করে ফেলছে।

স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেই আমরা তিনজন ঢুকে পরি। বিরক্তি নিয়ে ক্লাস শেষ করলাম।

কলেজ গেইটের সামনে এসেই চরম লেভেলের অবাক হলাম, চোখ জোড়া কপালে উঠে গেলো।
কলেজ গেইটের সামনে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অভ্র ভাইয়া পরনে ব্লু শার্ট, হাতা ফোল্ড করা, কালো প্যান্ট, চুলগুলো কপালের এক পাশে পরে আছে। হাতে মোবাইল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। আমি দেখিনি প্রথমে, দেখেছে নিঝুম ওর নজরে পরতেই চেচিয়ে উঠল, ‘ আরে আমার ক্রাশ ‘

নিঝুমের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনে তাকিয়ে দেখি উনি দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেখতে অবশ্য কিউট লাগছে তাতে আমার কি?
ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম তবুও সে দেখে ফেলছে।
পেছন থেকে ঢেকে বলল, ‘ বর্ষা দাঁড়া ‘

আমি ঠোঁট উল্টো করে দাঁত দিয়ে হাল্কা চাপ দিলাম। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেই। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে নিঝুমকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

‘ কোণ্থে কুত্তার ঘেউঘেউ আওয়াজ আসছে রে? ‘

দোমকা হাওয়ার মতো সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল, ‘ কি বললি তুই? ‘

অবাক হওয়ার মতো ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থেকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম,

‘ জি আমাকে বলছেন? ‘

রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ তোকেই বলছি তুই আমাকে কুত্তা কেন বললি? ‘

‘ নিঝুম উনি কে? আর যেইহোক উনাকে বলে দে আমি কারো নাম ধরে বলিনি। আমি জাস্ট কুত কুত্তা বলেছি। আর উনি কি কুত্তা নাকি যে উনার গায়ে লাগছে? ‘

নিঝুম, ‘ দোস্ত ব্লু শার্টে যা জোস লাগছে না রে ‘
নেশালো কন্ঠে আমার কানে কানে বলল।
পেছনে তাকিয়ে ওর পায়ের উপর পা দিয়ে পাড়া দিয়ে ফুসতে লাগলাম। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে কিভাবে আমারই পেছনে আমারই কানে কানে তাকে সুন্দর বলে ননসেন্স। রাগ দেখিয়ে চলে যেতে নিলে সে ডেকে বলল,

‘ আমি তোকে পিক করতে আসছি বাইকে উঠ ‘

‘ সকালে চুল ধরে টান মেরেছিলি মনে নেই। কিছুতেই তোর সাথে যাবো না। ‘

‘ কাল অব্ধি আপনি করে বলছিলি আর এখন তুই? ‘

নিঝুম আমাকে টেনে অভ্র ভাইয়ার সামনে থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে আসল কানে কানে আবারও বলল, ‘ দেখ দোস্ত আমার কলিজায় লাগে তুই কেন আমার ওর সাথে এমনে কথা বলছিস? ‘

আমি জেনো আকাশ থেকে পরলাম অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বের হয়ে আসল, ‘ তোর ও মানে? ও তোর কবে হলো? ‘

‘ যবে থেকে আমি ওকে দেখেছি ‘

‘ তুই চুপ করবি নিঝুম সকাল থেকে মাথা খেয়ে ফেলছিস ওই ঘুরেফিরে এক কথাই বলছিস। তোর ও না যা ওর কোলে গিয়ে বসে থাক। আর যদি তাও না হয় গিয়ে বল তোকে বাড়িতে ড্রপ করে দিতে আমার মাথা খাস না। ‘

বলে নিঝুম কে এড়িয়ে হাঁটতে লাগলাম। অসহ্য হয়ে গেছে কি আছে ওই ওর মধ্যে যার জন্য যেই দেখে সেই প্রেমে পরে যায় আজব। নিজের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলছিলাম। হঠাৎ মাথা তুলে রাস্তায় এক নজর তাকাতেই চোখ আঁটকে গেলো। সত্যি সত্যি অভ্র ভাইয়া নিঝুমকে বাইকের পেছনে তুলে বাইক স্পিডে চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকাতে জেনো আরও স্পিড বাড়ালো সাথে নিঝুম আমার উদ্দেশ্যে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো। রাস্তার মাঝে ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি, প্রচুর ম্যাজাজ খারাপ হলো, আমি যাইনি বলে কি আমার ফ্রেন্ড কে নিতে হবে নাকি? আমাকে আর দুই একবার বললেই আমি হয়তো রাজি হয়ে যেতাম। রাগ উঠে গেলো মাত্রারিতিক্ত, আমার মস্তিষ্ক আমাকে জানান দিচ্ছে আমাকেও কিছু একটা করতে হবে হার মানলে চলবে না৷ তখনই রাস্তায় আমার পাশে একটা বাইক এসে থামলো, চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকালাম। ছেলেটার গায়ের রং শ্যামল বর্ণের তবে ফেস কাটিং ওতো টা খেয়াল করিনি। একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। ছেলেটা আমার হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে বাইক স্লো টানছে, আমি কয়েকবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ছিলাম লোকটার দিকে, খারাপ মনে হলো না তাই আমিও পাত্তা না দিয়ে জোরে পা চালিয়ে হাঁটতে লাগলাম।

সে আমার সামনে বাইক থামিয়ে বলল, ‘ একা একা যাচ্ছেন চাহিলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারি? ‘

আমার মস্তিষ্ক তখন শূন্য মাথায় ঘুরছে তখন অভ্র ভাইয়ার সাথে নিঝুম চলে গেছে। ছেলেটা ড্রপ করার কথা বলার পরপরই আমি কোনো কিছু না ভেবেই একটা অচেনা ছেলার সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলাম। আমি বাইকের পেছনে উঠে বসতেই উনি বাইক স্টার্ট দিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর খেয়াল করলাম আমাদের রাস্তার আনাচে-কানাচেতে কোথাও অভ্র ভাইয়া নেই।

বাড়ির সামনে এসে উনি আমাকে নামিয়ে দিলেন, আমি উনাকে কয়েকবার বাড়িতে আসতে বলেছি কিন্তু তাতে উনি দ্বিধা বোধ করলেন। বললেন, ‘ পরে একদিন সময় করে আসবো। ‘

আমিও মুচকি হেঁসে উনাকে বিদায় জানিয়ে গেইটের ভেতরে ঢুকলাম। দারওয়ান দাদাকে সালাম জানিয়ে চলে আসি।

সিঁড়ি দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে উঠছিলাম। সিঁড়ির উপর পা স্লিপ করে পরে যাই।

‘ বাবা গো ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠি, উপরের রুম থেকে আমার সবগুলো ভাইবোন বের হয়ে আসে। আমি পরে গেছি ছুটে এসে আমাকে তুলে উঠাবে তা না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবগুলো অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে। প্রচুর খারাপ লাগছে আমার পায়ে লাগা ব্যাথার জন্য না৷ আমি পরে গেছি ওরা হাসছে তা দেখেই।

চোখের কার্নিশে এক ফোঁটা অশ্রু জমাট বেঁধেছে। গড়িয়ে পরবে এমন সময় কারো শক্তপোক্ত হাতের হিচকা টানে দাঁড়িয়ে পরলাম। মাথা তুলে দেখবো কে সেটুকুও সময় পাইনি। সে আমাকে দাঁড় করিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে পাঁজাকোলে তুলে নিয়েছে।

সিঁড়ি দিয়ে উঠে সোজা আমার রুমে নিয়ে আসে। রুমের মাঝ বরাবর দাঁড় করিয়ে দেয়। পায়ে আমার এখনও টনটন ব্যাথা করছে। আমাকে ছেড়ে দিয়ে সে দরজা আটকিয়ে দিলো। আমার সামনে এসে দাঁড়ালো, চোখাচোখি হতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চোখগুলো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। চোখ দিয়ে মানুষকে ধ্বংস করে দিবে এমন। আমি ভীতু কন্ঠে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বলল, ‘ ওই

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here