অবন্তর আসক্তি পর্ব ১৪

0
502

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৪
#Sharmin_Akter_Borsha
_________
ক্যাম্পাস ভর্তি ছেলে পোলের সামনে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ জোড়া ছলছল করছে এই বুঝি টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরবে। কিন্তু আমি যথা সম্ভবত অশ্রু আঁটকে রাখার চেষ্টা করছি। কলেজের সকল ছাত্রছাত্রীদের সামনে ছিদকাদুনি মেয়েদের মতো কাঁদলে আমার ইমেইজ নষ্ট হয়ে যাবে তাদের সামনে। কিন্তু চোখ যে বাঁধা মানতে নারাজ চাইছে অশ্রু বিসর্জন দিতে। নির্দয়া পাশান ব্যক্তি সজোড়ে কষে গালে থাপ্পড় মারল তার কি মায়া দয়া হয় নাই নাকি? মনে তো হচ্ছে হয়নি! এভাবে কেউ মারে?

কান্না পাচ্ছে খুব। সকলের দৃষ্টি এখন আমাদের দু’জনের উপর স্থির। সকলে ঘুরে ঘুরে দেখছে আমাদের দু’জন কে, সাথে মনে মনে উপন্যাস তৈরি করছে। চোখের জল আঁটকিয়ে রাখার চেষ্টায় সফল হয়ে ছিলাম। কিন্তু অবশেষে ব্যর্থ হয়ে গেলাম তার চিৎকার শুনে। টুপ করে কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরল এক ফোঁটা নোনাজল।

‘ কলেজে ছেলেদের সাথে ঠলাঠলি করতে আসিস? ছেলেদের গায়ের সাথে গা কষতে খুব ভালো লাগে নাকি? আয় আমিই কষিয়ে দিচ্ছি দেখি কত ভালো লাগে? ‘

কঠোর গলায় কথাগুলো বলল। মাথা নত করে কথাগুলো হজম করলাম অশ্রুকণা চোখ বেয়ে গড়িয়ে তখনই পরল যখন সে আমার হাতের কব্জি শক্ত করে চেপে ধরে কলেজের এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে আমাকে পাশাপাশি দাঁড় করালেন। ভাইয়ার হাতের সাথে আমার হাত কষা লাগতেই আমার চোখ দিয়ে পানি পরে। ইচ্ছে করছে তাকে ধরে কষে উল্টো হাতে এক থাপ্পড় মারি। কিন্তু তা আমি করতে পারবো না। নিজেকে অতি দূর্বল মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি নির্ঘাত চড় মারতে দু’বার ভাবতাম না। কিন্তু উনাকে কিভাবে? রাগ কন্ট্রোল করতে পারছি না বলেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে গাল ল্যাপ্টে যাচ্ছে। আমি দুই হাত দিয়ে কলেজ ড্রেস শক্ত করে চেপে ধরি মুঠি বন্ধ করে নিয়ে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেই।
খানিক বাদ শুকনো এক ঢোক গিললাম। জোরে নিঃশ্বাস ফেলে চোখ জোড়া চট করে খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালাম। দাঁতে দাঁত চেপে কর্কশকন্ঠে চেচিয়ে বললাম,

‘ সমস্যা কি আপনার বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এসে চড় মেরে দিয়েছেন? পেয়েছেন টা কি? দুইদিন ধরে দেখছি আপনি আমার সাথে রুডলি বিহেভ করছেন কারণ কি তার? আপনি বিনা দোষে আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। দোষ করলে শাসন করার জন্য আমার বাবা মা জীবিত রয়েছে। আপনাকে তারা শাসন করার দায়িত্ব দেয়নি৷ আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে দুষ্টামি ফাজলামি করতেই পারি তার জন্য আপনি কোন আক্কেলে আমার গায়ে হাত তুললেন? ভাবেন টা কি আপনি নিজেকে? মুরাদ আমাদের ফ্রেন্ড অন্য দিক দিয়ে আহিতার বয়ফ্রেন্ড। ও আমার হাত থেকে চিরকুট টা ছিনিয়ে নিয়ে ছিল। আমি সেটাই ওর কাছ থেকে নিতে গেছিলাম। ও আমার থেকে লম্বা হওয়ায় আমি ওর হাত অব্ধি নাগাল পাচ্ছিলাম না। সে জন্যই লাফাচ্ছিলাম যাতে করে চিরকুট টা হাতে পেতে পারি। মোটেও আমি মুরাদের গায়ের সাথে কষাকষি করছিলাম না। আপনি যথেষ্ট শিক্ষিত আপনার মুখে এসব ভাষা সোভা পায় না৷ তাও সেটা নিজের ছোট বোনদের সাথে। চোখ দিয়ে কোনো কিছু দেখেই সেটা সত্যি মনে করবেন না। সত্য টা আগে যাচাই করবেন তারপর সিনক্রিয়েট করবেন। বড় ভাই বলে আমি কিছু বললাম না। অন্যথায় ইট মারার অপরাধে পাটকেল আমিও মারতে জানি মিস্টার আফনান আহমেদ অভ্র।

কথাগুলো বলে ক্যাম্পাস থেকে সোজা বেরিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য অডিটোরিয়ামে যাওয়া সেখানেই আড্ডা দিচ্ছে ও রিহার্সাল করছে আমার ক্লাসমেট গুলা সাথে আমার বোন ও বান্ধবী গুলাও। আমি মুরাদের সাথে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। জুনিয়র একটা মেয়ে এসে বলেছিল আমার জন্য ক্যাম্পাসে কেউ একজন অপেক্ষা করছে। আমি একাই যাচ্ছিলাম পেছন থেকে মুরাদ বলল সেও যাবে আমার সাথে। আমি, আহিতা, মাহিরা, নিঝুম, রিয়া, মুরাদ চারজন বেস্ট ফ্রেন্ড তবে জানি না কিভাবে আহিতা ও মুরাদ রিলেশনশিপে চলে গেছে তাও চার মাস হতে চলল।
হাঁটতে হাঁটতে আমি চিরকুটটার প্রসংজ্ঞ তুললাম। হাতে নিয়ে দেখছিলাম তখনই মুরাদ সেটা ‘ছ’ মেরে নিয়ে নেয়। আমিও হন্ন হয়ে পরি ওর হাত থেকে সেটা নেওয়ার জন্য লাফালাফির ফলে মুরাদের হাতের সাথে কয়েকবার আমার হাত টাচ লাগছিল। তখনই পেছন থেকে কেউ একজন আমার হাত ধরে হিচকা টান মেরে তার দিকে ঘুরায়৷ আমি কোনো কিছু বুঝার আগেই সে আমার গালে থাপ্পড় মারে। গালে হাত দিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। মাথা ঝিম মেরে আসছে দুনিয়া দাঁড়ি ঘুরছে। না আমি নিজেই ঘুরছি বুঝতে পারছি না। নিজেকে সামলে সামনে তাকালাম। মাটিতে শুধু দুইটা পা দেখতে পাচ্ছিলাম, এক হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলাম এখনো ঝিম মেরে আসছে। চড় টা যে মেরেছে তার মুখটা দেখার জন্য মাথা তুললাম সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুঠাম দেহের লোকটার দিকে তাকালাম। অভ্র ভাইয়া কে দেখে আমি অবাক হই বুঝতে পারছি না সে কেনো মারল আমাকে কি দোষ করেছি আমি?

অডিটোরিয়ামে আসতেই ভূত দেখার মতো ফেস বানিয়ে সকলে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তাদের মাঝখানে ধপ করে বসে পরলাম। তাদের মুখের দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে চেচিয়ে ধমকের স্বরে বললাম,

‘ কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? জীবনে দেখিসনি আমাকে? নাকি আসতো গিলে খাবি? ‘

তখনই সকলের দৃষ্টি গেলো আমার পেছনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটার উপরে সে তাদের সবগুলোকে চোখ ও হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলছে। ও যার যার মতো বসে থাকার জন্য ইশারা করছে। ভ্রু কুঞ্চিত করল সকলে, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। তারা জানতে ইচ্ছুক আমার গালে পাঁচ পাঁচ টা আঙুলের ছাপ কেনো?

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here