অবন্তর আসক্তি পর্ব ১১

0
520

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১১
#Sharmin_Akter_Borsha
___________
দেখতে দেখতে দিন কিভাবে পার হয়ে যায় ভাবাই যায় না। কয়েকদিন আগেও যার সাথে কথা বলার জন্য আমি হম্বিতম্বি করতাম, আজ তার সাথে কথা বলার জন্য আমার কোনো হতচকিত করতে হয় না।
আমার অভ্র ভাইয়ের উপর একটা অধিকারবোধ জন্মে গেছে সেটা আমি ঢের বুঝতে পারি, কিন্তু অধিকার টা কিসের সেটা অজানা। তবে তার সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে তার সাথে সময় ব্যয় করতে আমার ভালোলাগে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে। সে যখন কথা বলার মধ্যে ফিক করে হেঁসে ফেলে তখন সে হাসি দেখতে আমার ভালোলাগে। সে ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে তাকায় তখনও আমার তাকে দেখতে ভালো লাগে। সে যখন হুট করেই আমার অতি কাছে এসে দাঁড়ায় তখন আমার হৃৎস্পন্দন তিব্র গতিতে বিট করে।
সে যখন কথা বলার মাঝে কথা হারিয়ে ফেলে কপাল চুলকায় তখনও তাকে আমার ভালো লাগে।
মোট কথা সম্পূর্ণ মানুষ টাকেই আমার ভালো লাগে। সময়ের সাথে সাথে সে জেনো আমার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে, ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমার চোখ শুধু তাকেই দেখতে চায়, আমার মন শুধু তার কথাই ভাবে, আমার কান জেনো শুধু তার শীতলাকন্ঠই শুনতে চায়।
________
সাত দিন পর,
নিজের প্রশংসা কিভাবে আদায় করে নিতে হয় অভ্র ভাইয়া খুব ভালো করেই জানে…

পুরো ৩ঘন্টা গাড়িতে ঘুরার পর যখন খিদে লেগেছে প্রকাশ করলাম তখন Slow motion এ গাড়ি ব্রেক করল মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে চোখ দু’টো গোলগোল করে মুখে হাল্কা মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল…

” বর্ষা তোর পেট ভরাতে কি আমার বেশি টাকা লাগবে বল? কত টাকাই বা খাবি! তুই বল তোকে কখনো খাওয়ার জন্য বারণ করছি যখন যা বলছিস তাই তো এনে খাইয়েছি বল আমি কি কিপ্টা কখনো কিপ্টামি করছি? ”

বেশ কিছুক্ষণ চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম ভেতর থেকে এক দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসল।

এখন কারো চোখের দিকে তাকিয়ে এত মানুষের সামনে তাকে কি আর কিপ্টা বলা যায়। চোখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম জানালা দিয়ে বাহিরে এক নজর তাকিয়ে আবারও ওর চোখের দিকে তাকিয়ে জিব দিয়ে হাল্কা ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বললাম।

” নাহহহ… তুমি কিপ্টা হতে যাবে কেন তুমি তো উদার! ”

কথাটা বলে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
আরও ২ঘন্টা ঘুরলাম কিন্তু আমার অভ্র উদার ভাইয়া খাওয়ানোর সময় পায় নাই….!
সবার হাতে চিপস আর আইসক্রিম ধরাই দিছে

নিজের প্রশংসা নেওয়া শেষ কিপ্টামি দেখানো শুরু করল।

অভ্র ভাইয়ার মতো এমন কিছু প্রশংসা বাদী মানুষ থাকে যারা নিজেদের প্রশংসা নিজেরাই করে।
কিপ্টুস…..৪ঘন্টা পেটে খিদে নিয়ে ঘুরলাম আর নিজেকে কিপ্টা দাবি করেন না তিনি…

অতিরিক্ত রাগ নিয়ে নিয়ে গাড়ির ডোর খুলে বের হলাম। ঠাসস করে লাগিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলাম। আমার চেহারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ম্যাজাজ টাই পুরো খারাপ করে দিয়েছে। রুমে এসে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলাম বাথরুমে ফ্রেশ হতে, দীর্ঘ সময় শাওয়ার নেওয়ার পর টাওয়াল দিয়ে চুল পেচিয়ে রুমে চলে আসি। সারাদিনের ক্লান্তি ভোড় করেছো ঘুম পাচ্ছে খুব, ঘুমের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

ঘুম ভাঙ্গলো ঠিক সন্ধ্যায়, আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন জানালার থাই খোলা ছিল বলে রুমে সূর্যের আলো আসছিল, এখন সন্ধ্যা হওয়ায় রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিছানায় উঠে বসে এক হাত দিয়ে চোখ ঢলছিলাম। তখনই নজরে পরল রুমের মধ্যে সাদা সাদা কি জেনো একটা হাঁটছে, ভয় পেয়ে দিলাম এক ইয়া জোরে চিৎকার।
‘ আল্লাহ গো মা গো বাবা গো ভূত ‘
চেঁচাতে চেঁচাতে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামলাম। আমার চেচামেচি তে সেও দৌড়াতে শুরু করল সাথে আমিও লাফাচ্ছি এক পর্যায়ে সে আমার পায়ের উপর এসে পরল, আমি তো চিৎকারে জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা এত জোরে চিৎকার দিয়েছি যে বাড়ির সকলে ছুটে এসে দরজায় কড়া নাড়ছে৷ আমি অন্ধকারে দৌঁড়ে দরজা খুলে দেই৷ সামনে কে ছিল না দেখেই তার আষ্টেপৃষ্টের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি। ভয়তে আমার হাত পা কাঁপা-কাঁপি করছে। আমি যে প্রচুর ভয় পেয়েছি তা সকলে আমাকে দেখেই বুঝতে পারছে। সকলে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে? প্রতিত্তোরে কাঁপা কাপা গলায় বলি, ‘ রুমে ভূত ‘

সকলে রুমের মধ্যে উঁকি দেয়, পুরো রুম অন্ধকার তাই আম্মু গিয়ে রুমের লাইট অন করল। বিছানার উপর একটা সাদা বিড়াল বসে রয়েছে। লাইট অন হতেই, ‘ মেউ মেউ ‘ করে ডেকে উঠল।

বিড়ালের ডাক শুনে পেছনে ঘুরে দেখলাম। মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। আচমকা তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাতে গিয়ে নিজেই মেঝেতে পরে গেলাম। দাঁড়িয়ে থাকা আমার পরহেজগারি বোন ও ভাইরা ফিক করে হেঁসে দিলো। অস্ফুটস্বরে কোমড়ে হাত রেখে বলে ফেললাম, ‘ মরার বিড়াল ‘

রাগ দেখিয়ে উঠে দাঁড়ালাম সকলকে উপেক্ষা করে নিজের রুম থেকেই বেরিয়ে গেলাম।
পানি পিপাসায় গলা কাঠ হয়ে যাচ্ছিল। ছুটে আসলাম ফ্রিজের সামনে, নরমালে হাত না দিয়ে দিলাম ডিফে আহহ ইহা কি অবাক করা কান্ড একটা কোন আইসক্রিম দেখে প্রচুর হাসি পেলো। আইসক্রিম টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে আবারও জায়গা মতো রেখে দিলাম।

বুঝতে বাকি নেই রাগ কমানোর জন্যই আইসক্রিম এনেছে, যখনই রাগ অভিমান করি টুক করে আইসক্রিম এনে ফ্রিজে রেখে দেয়। কখনো আমি দেখি আবার কখনো দেখি না। যখন না দেখি তখন সামনে সামনে ঘুরবে আর ফ্রিজ নিয়ে কথা বলবে হুহহ।

কিন্তু এইবার আমি গলবো না সারাদিন ঘুরাইছে কিছুই খাওয়ায় নাই হার কিপ্টা বেডা একখান।
জীবনেও বিয়া হইবো না হুহহহহ, আমার অভিশাপ সবসময় কাজে লাগে।

বলার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ কি বললি তুই ‘

চোখ বড়সড় করে পেছনে তার মুখোমুখি হয়ে ঘুরে থমথমে হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে বিবৃত করতে করতে বললাম, ‘ আহহহ কখন আসছো তুমি ভাইয়া? ‘

‘ তুই যখন বদদোয়া করছিলি। কি বলছিলি আমার জীবনে বিয়ে হবে না? ‘

‘ এই রে আল্লাহ রে শুনে ফেলছে রে। ‘ (মনে মনে)

তারপর অভ্র ভাইয়া যা করলেন সবটা আমার ভাবনার অতিক্রম! সে একহাত দিয়ে আমার

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here