অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_৩৭

0
5776

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_৩৭

জাহানারা বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে অনি। নিস্তব্ধ রাত;ঘড়ির কাটা ১২টার ঘরে ছুঁই ছুঁই করছে। চারপাশটায় কেমন মলিন নীরবতাপূর্ণ।

অনির আলগা করে বাঁধা চুলে মাঝে মাঝে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে জাহানারা বেগম। এক ঝাক অলসতা যেন অনির উপরে এসে ভর করেছে। তার খুব ইচ্ছে হচ্ছে অনন্তকাল এভাবেই কাটিয়ে পার করতে। কি অদ্ভুত ব্যাপার!

হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মিথিলা। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে এক বুক শঙ্কা নিয়ে ক্রমাগত দোয়া দরূদ পাঠ করতে ব্যস্ত অসহায় মাতা সাবরিনা বেগম। আর পাশেই বসে বৃথা সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত শায়লা বেগম।

তাদের মুখোমুখি বসা রিশাদ। তার চোখ দুটো সাবরিনা বেগমের উপর স্থির। এক অসহায় এক মাকে দেখছে সে। একমাত্র সন্তান ব্যতীত এই পৃথিবীতে তার আর কোন সহায় সম্বল নেই বললেই চলে। সেই মায়ের করুণ চাহনি দেখতে ব্যস্ত। অনুভব করার চেষ্টা করছে প্রতিটি মূহুর্তকে। খুব খারাপ হবে যদি আজ অসহায় মায়ের বুক খালি হয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা এত নিষ্ঠুর হতে পারে না।

অপারেশন থিয়েটারের দরজার উপরের দিকে লাগানো জ্বলন্ত লাল আলোটা নিভে যায়। সাবরিনা বেগমের মধ্যে ক্রমাগত তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। শরীরটা ক্রমাগত নেতিয়ে পড়ছে। নিজের শরীরের ভার বইতে যেন তার বেশ কষ্ট করতে হচ্ছে।

ভারী হয়ে আসা পা দুটোকে জোর করে টেনে নিয়ে সামনের দিকে যায়। কাঁপতে থাকা হাতটা একপাশ থেকে এসে আঁকড়ে ধরে রিশাদ। জলভরা নয়নে রিশাদের দিকে তাকায় সাবরিনা বেগম। তার চাহনিতে রিশাদ স্পষ্ট দেখতে পায় সন্তান হারানোর শঙ্কা রিশাদের বুকটা কেঁপে ওঠে। ছোটবেলা থেকেই তার প্রিয় মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম হলেন সাবরিনা বেগম। তার এই করুণ চাহনি রিশাদকে ভেতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়।

নিজের মনের ভেতরে থাকা অনুভূতিগুলোকে চাপা রেখে রিশাদ সাবরিনা বেগমকে ভরসা জোগায়। এতে সাবরিনা বেগম আস্বস্ত হন কিনা তা রিশাদের কাছে স্পষ্ট হয় না।

ভেতর থেকে মাস্ক পরিহিত একজন মাঝ বয়সী ব্যক্তি পেশেন্টের পরিবারের খোঁজ করলে রিশাদ সাবরিনা বেগমকে নিয়ে এগিয়ে যায়।

–“পেশেন্ট এখন আউট অফ ডেঞ্জার। তবে প্রচন্ড মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে। শি নিডস মেন্টাল সাপোর্ট। প্লিজ টেক কেয়ার অফ হার। (ডাক্তার)

ডাক্তারের কথা শুনে যেন প্রাণ ফিরে পান সাবরিনা বেগম। আবেগ সামলাতে না পেরে তিনি সেখানেই কেঁদে ফেলেন।

রিশাদ সামলে নেয় সাবরিনা বেগমকে। প্রয়োজনীয় কথাবার্তা শেষ করে নেয় ডাক্তারের সাথে।

ঘন্টাখানেক পর মিথিলাকে কেবিনে শিফট করা হয়। এখনো তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। তাই কাউকে তার কেবিনে এলাউ করা হচ্ছে না।

কেবিনের দরজার কাচের ভেতর দিয়ে অসহায় মা অশ্রুপাত করছেন তার শয্যাশায়ী সন্তান। কি অসহনীয় যন্ত্রণাময় মূহুর্ত!

মিথিলার বাম হাতের কব্জি থেকে অর্ধেক অংশ পর্যন্ত সাদা ব্যান্ডেজে আবৃত। ডান হাতে লাগানো স্যালানের সুঁচ।

গভীর ঘুমে মগ্ন সে। রুক্ষ চেহারায় বিষাদের ছাপ। কি নির্মম চাহনি তার। রিশাদের চোখ দুটো ঘোলা হয়ে আসে। কোনভাবেই সে হিসেব মেলাতে পারছে না। মিথিলার দ্বারা এমন একটা কাজ কিভাবে সম্ভব হতে পারে। এটা সত্যিই বাস্তব তো?নাকি ক্ষণিকের দুঃস্বপ্ন। ক্ষণিকের দুঃস্বপ্ন হলে ব্যাপারটা মন্দ হতো না। জীবনের তিক্তময় অভিজ্ঞতাগুলোর ভিড়ে আরো এক তিক্ত অনুভূতি যুক্ত হলো রিশাদের।

ভোরবেলার দিকে জ্ঞান ফেরে মিথিলার। পাশেই সাবরিনা বেগম। মিথিলার জ্ঞান ফিরতে দেখে তিনি দ্রুত গিয়ে ডাক্তারকে খবর দিতে যান। সেই মূহুর্তে কোন ডাক্তার ছিলেন না হসপিটালে। সাবরিনা বেগম এঘর ওঘরে ডাক্তারকে খুঁজতে থাকেন।

একজন ইন্টার্ন ডক্টর সবেমাত্র ডিউটি শেষ করে রেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছিলেন। সাবরিনা বেগম কাউকে খুঁজে না পাওয়ার পর রেস্ট রুমের সামনে থেকে তাকেই রিকুয়েস্ট করে সাথে নিয়ে যায়।

মিথিলার এখনো পুরোপুরি জ্ঞান ফেরেনি। তার মনে হচ্ছে এখনো সে যেন কোন ঘোরের মধ্যে পড়ে আছে। চোখ মেলে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিজের অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে।

আশেপাশে আসবাব ও যন্ত্রপাতি দেখে সে অনুধাবন করতে পারে হাসপাতালে আছে এখন। মাথাটা কেমন ভারী হয়ে আছে তার। হাতটা নড়াতেই ব্যথা অনুভব করে সে। ব্যথায় কিছুটা কুঁকড়ে যায় সে।

দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে ডাক্তার ইভান। আবছা দেখতে পায় মিথিলা। ডক্টর ইভানের পাশে নিজের মা সাবরিনা বেগমকে সে চিনতে পারে। কিছু একটা বলতে চায় সে। তবে শরীর এতটা দূর্বল যে কথা বলার আগ্রহ অথবা শক্তি কোনটাই এই মূহুর্তে তার মাঝে নেই।

ইভান মিথিলার কাছে গিয়ে তার ডান হাতের কব্জিতে দুটো আঙুল রেখে পালস চেক করে। ইভানের নজর আটকে যায় মিথিলার চোখের উপর। অস্বাভাবিক সুন্দর চোখ দুটো নিমিষেই ইভানের নজর কাড়ে। ঘোরলাগা চোখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে ইভান। মিথিলার সেদিকে কোন হুশ নেই।

ভোরবেলার দিকে চোখ লেগে যায় অনির। অন্ধকার ঘরটায় কোথাও আলোর ছিটেফোঁটা নেই। একটু পরেই কোথা থেকে যেন এক চিলতে আলো এসে ঘরের কিছু অংশ আলোকিত করে দেয়। অনির সামনে স্পষ্ট হয় এক রক্তাক্ত হাত। গলগল করে রক্ত পড়ছে। ফ্লোর ভেসে গেছে রক্তে। যত সামনের দিকে যায় ততই দূরে সরে যাচ্ছে মিথিলার অবয়ব। রক্তপাত যেন ততই বেড়ে যাচ্ছে।

কলিংবেলের শব্দ শুনে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ওঠে অনি। পুরো শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। পুনরায় কলিং বেলের শব্দ অনির কানে পৌঁছায়। কেউ হয়তো দরজা খুলে দিচ্ছে না। বিধায় অনি রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নামে।

দরজা খুলে দিলে দরজার ওপাশে রিশাদকে দাঁড়িয়ে থাকে। রিশাদকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। সারাদিন মিথিলাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে হয়তো বেশ ধকল গেছে।

–“মিথিলা কেমন আছে?”(অনি)

–“এখন ভালো আছে। বিপদ কেটে গেছে।”(রিশাদ)

–“ওহ আচ্ছা। জ্ঞান ফিরেছে?”(অনি)

–“একটু আগেই আম্মু কল করেছিল বললো তো জ্ঞান ফিরেছে।”(রিশাদ)

রিশাদ রুমে এস্ব ফ্রেশ হয়ে একটু জিরিয়ে নেয়। অনির সাথে টুকটাক কথা বলে। রিশাদকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।

আযান দিলে মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। অনিও অযু করে এসে নামাজ পড়ে নেয়।

নামাজ শেষ করে রান্নাঘরের দিকে যায় অনি। রান্নাঘরে গিয়ে সকলের জন্য ব্রেকফাস্ট বানাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। তাকে সাহায্য করে আমেনার মা। রিশাদ মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এসে অনিকে কোথাও খুঁজে পায় না। অবশেষে রান্নাঘরে এসে অনিকে খুঁজে পায়।

অনিকে রান্না করতে দেখে রিশাদ কিছুটা অবাক হয়। কিছুক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে থেকে রিশাদ নিজের রুমে চলে যায়।

দুদিন কেটে গেছে। এই দুদিনে মিথিলা অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছে। আজ তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার পালা। হসপিটালে ডক্টর ইভান মিথিলাকে বেশ কয়েকবার এসে দেখে গেছে। মিথিলার সাথে কথা বলে পরিচিতি বাড়ানোর চেষ্টা করলে মিথিলা খুব বেশি রেস্পন্স করে না বলে ইভান কিছুটা হতাশ হয় তবে হাল ছাড়ে না। তবে এর মধ্যেই সে সাবরিনা বেগম ও রিশাদের সাথে বেশ ভালোই সখ্যতা গড়ে তুলেছে। বিধায় সে মনে করছে মিথিলার সাথে ভালো পরিচিতি গড়ে তুলতে তাকে খুব বেশি কসরত করতে হবে না।

সকাল থেকেই অনি মিথিলার বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে আছে। অনির এধরনের একটা কাজ করার পরিবারের অন্য সবার কাছে স্পষ্ট না হলেও দুজন মানুষের কাছে তা একেবারেই স্পষ্ট। প্রথমজন হলেন সাবরিনা বেগম আর দ্বিতীয়ত হলো অনন্যময়ী।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মিথিলাকে নিয়ে বাড়ি ফেরে রিশাদ আর সাবরিনা বেগম। শায়লা বেগম আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন যাতে মিথিলার কোন সমস্যা না হয়। মিথিলার এমন একটা পদক্ষেপ নেয়ার পেছনের কারণটা কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করেনি। ডাক্তার আগে থেকেই নিষেধ করে দিয়েছিলেন অতীতের কোন কথা যেন তার সামনে না বলা হয়। মিথিলার মানসিক অবস্থানুযায়ী তাকে এখন সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে।

সাবরিনা বেগম আর রিশাদ মিথিলাকে ধরে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দেয়। মিথিলার শরীর এখনো কিছুটা দুর্বল। হাতের ক্ষতটা এখনো সারেনি। শায়লা বেগম মিথিলাকে জোর করে এক গ্লাস শরবত খাইয়ে দেন।

মিথিলা বাড়ি ফিরে আসায় সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এমন একটা কান্ড ঘটানোয় মিথিলা নিজেও কিছুটা লজ্জিত। অপরাধবোধ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার চেহারায়। তাই কেউ আর তাকে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করেনি। তবে মিথিলার এমন কাজের পেছনের কারণটা সবার কাছে রহস্যই থেকে গেছে। রিশাদের এ বিষয়ে কৌতূহল বেড়েই চলেছে।একটু সময় নিয়ে সে এব্যাপারে মিথিলার সাথে আলোচনা করবে। তবে একটু সময় দিতে হবে মিথিলাকে।

কিছুক্ষণ পর মিথিলাকে রুমে নিয়ে শুইয়ে দেন। সাবরিনা বেগমকে ইশারায় পাশে বসতে বলে মিথিলা। তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে মিথিলা। সাবরিনা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। মিথিলা চোখ বুজে থাকে। আপনা আপনি তার চোখ ভিজে আসে। নিজের কাজের জন্য সে অনুতপ্ত।

আত্মহত্যার মতো একটা জঘন্য কাজের চেষ্টা সে কিভাবে করতে পারল। সৃষ্টিকর্তার রহমতে সে নিজের ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পেয়েছে। আর কোন ভুল নয়। নতুন করে তাকে সব কিছু শুরু করতে হবে।

রিশাদ একেবারে গোসল শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। অনি হাঁটুর ভাজে থুঁতনি রেখে এক ধ্যানে বসে আছে। গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। রিশাদ অনির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তবে মনে হচ্ছে না অনির এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ আছে।

–“অনন্যময়ী! “(রিশাদ)

রিশাদের কণ্ঠে নিজের নাম শুনে ধ্যান ভাঙে অনির।

–“জি বলুন।”(অনি)

–“কি হয়েছে আপনার?কদিন ধরেই দেখছি আপনার কি মন খারাপ?”(রিশাদ)

–“কই না তো।”(অনি) নিষ্পাপ চাহনিতে রিশাদের দিকে তাকায় অনি। রিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অনির কথা তার বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। তবুও সে অনির কথায় সম্মতি জানিয়ে চোখ দুটো কুঞ্চিত করে অনির দিকে তাকায়।

–“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?কিছু বলবেন?”(অনি)

–“না তেমন কিছুনা। “বলেই রিশাদ চলে যেতে নেয়। পুনরায় পিছনে ফিরে অনিকে উদ্দেশ্য করে বলেঃ

–“আপনি যখন নিচে যাবেন আম্মুকে একটু বলবেন আমার জন্য একটু কফি পাঠিয়ে দিতে।”(রিশাদ)

অনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। রান্নাঘরে তখন শায়লা বেগম ব্যস্ত ছিলেন। কিছুটা সময় নিয়ে অনি নিজেই রিশাদের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসে।

কফি নিয়ে রিশাদের রুমে প্রবেশ করে অনি। রিশাদ বিছানায় বসে কিছু ফাইল চেক করছিল। অনির উপস্থিতি টের পেয়ে রিশাদ একবার মাথা তুলে তাকিয়ে পুনরায় কাজে মন দেয়।

অনি রিশাদের দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিলে সে সেদিকে না তাকিয়েই কফির মগটা হাতে নেয়। অনি সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলে না।

রিশাদ কফির মগে চুমুক দেয়ার কয়েক সেকেন্ড পর অনির দিকে তাকায়। কফির স্বাদ নিয়ে বুঝতে পারে এটা অনির হাতে বানানো কফি। এর আগেও সে দু একবার অনির বানানো কফি খেয়েছে তাই অনির বানানো কফির স্বাদের সাথে সে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত।

রিশাদ অনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেঃ

–“থ্যাংকস ফর দ্যা কফি। “(রিশাদ)

রিশাদের কথার জবাবে কোন উত্তর না দিয়ে অনি মুচকি হাসে। কোথাও না কোথাও সে মনে মনে চাইছিল যাতে রিশাদ বুঝতে পারে কফিটা সে নিজে হাতে বানিয়েছে। এমন অস্বাভাবিক ভাবনার কথা ভেবে অনি কিছুটা অবাক হয়। আজকাল যতসব আজগুবি ভাবনার মধ্যে দিয়ে বিচরণ করছে সে।

রিশাদের সাথে টুকটাক কথাবার্তা শেষ করে অনি রান্নাঘরের দিকে যায়। শায়লা বেগমের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে শায়লা বেগমকে সাহায্য করে রান্নার কাজে। মিথিলার জন্য নিজের হাতে স্যুপ বানায় অনি।

হাতের কাজগুলো শেষ করে একটা বাটিতে স্যুপ ঢেলে নিয়ে মিথিলার রুমের দিকে যায় অনি। মূলত সে যেতে চাইছিল না। শায়লা বেগম,আমেনার মা দুজনই মূলত কাজে ব্যস্ত ছিলেন তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকেই যেতে হয়। অনি মিথিলার ঘরে যেতে চাইছিল না কারণ সে বুঝতে পারছিল না মিথিলার মানসিক অবস্থা কেমন আছে। মিথিলার এমন সিদ্ধান্তের পেছনে যে কিছুটা হলেও তার অবদান আছে তা সে বুঝতে পেরেছে। সেদিন যদি অনি উপস্থিত না থাকতো তবে তো আর তার সাথে রিশাদের বিয়েটা হতো না। হতেও তো পারত অনির জায়গায় আজ মিথিলা থাকত। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হয়ত তা চাননি তাই আজ সে এবাড়িতে এসে রিশাদের বউ হয়ে।

মিথিলার রুমের দরজায় নক করবে এমন সময়ই দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন সাবরিনা বেগম। সাবরিনা বেগম অনিকে দেখে কিছুটা অবাক হন। তবে তার হাতে স্যুপের বোলটা দেখে তার উপস্থিতির কারণটা বুঝতে পারেন। সাবরিনা বেগমও অবশ্য মিথিলার জন্য খাবার আনতেই যাচ্ছিলেন।

সাবরিনা বেগমের হাতে স্যুপের বাটিটা দিয়ে চলে যেতে চাইলে পেছন থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বর শুনে অনি থেমে যায়।

–“ভাবী!”(মিথিলা)

হ্যা মিথিলাই তাকে ডাকছে। অনি পেছনে ফিরে দরজার বাইরে থেকে মিথিলার দিকে তাকায়।

অনির কোন সাড়া না পেয়ে মিথিলা পুনরায় বলেঃ

–“ভাবী,আপনি চলে যাচ্ছেন কেন? প্লিজ ভেতরে আসুন না!” ধীর গলায় কথাগুলো বলে মিথিলা।

রুমের ভেতরে প্রবেশ করে অনি। অনির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে মিথিলা। কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে সে।

চলবে…….

আসসালামু আলাইকুম?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here