অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_৩৬

0
5983

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_৩৬

মুখোমুখি বসে আছেন জাহানারা বেগম আর অনি। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রিশাদ আর জয়। রিশাদকে বেশ হাসিখুশই মনে হচ্ছে। জয়ের কোন প্রতিক্রিয়া নেই।

অনিকে সব কিছু খুলে বলেন জাহানারা বেগম। পরীক্ষা দিতে পারবে না ভেবে আগে থেকেই তার কিছুটা মন খারাপ ছিল। এধরনের কিছু তার সাথে ঘটবে তা একেবারেই তার কল্পনাতীত ছিল। এখনো যেন সে বিশ্বাস করতে পারছে না। সবচেয়ে আরো বেশি অবাক হওয়ার ব্যাপার হলো রিশাদ তার জন্য এত কিছু করেছে। রিশাদ তার ফিউচারের কথা ভেবেছে ভাবতেই তার মনে প্রশান্তি হাওয়া বয়ে যায়।নামহীন এক বিরল অনুভূতির আবিষ্কার করে সে রিশাদের প্রতি। আবেগে দুফোঁটা অশ্রু বেরিয়ে আসতে চাইলে অনি তা কৌশলে আটকে নেয়। এই ঘটনায় কিভাবে সে রিয়্যাক্ট করবে তা বুঝে উঠতে পারছে না।

জাহানারা বেগম ব্যতীত অনির জন্য আর দ্বিতীয় কেউ এতটা চিন্তিত হয়নি যতটা রিশাদকে হয়েছে। অনির কাছে আস্তে আস্তে সব স্পষ্ট হয়ে যায়। বিগত দিনগুলোতে রিশাদের এত কাজের ব্যস্ততা অনির সাথে লুকোচুরি এই জন্যেই হয়তো ছিল। আর সে ভেবেছিল রিশাদ তাকে ইগনোর করছে। কত উলটা পালটা ভাবনা তার মাথায় এসেছে। কথাগুলো ভাবতেই অনি আনমনে মুচকি হেসে দেয়।

সবার তীক্ষ্ণ নজর অনির উপরেই ছিল। সবার এভাবে তাকানোতে কিছুটা লজ্জা পায় অনি। জাহানারা বেগম বাহানা দিয়ে জয়কে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রিশাদ অনিকে পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কিছু ডিটেইলসে বুঝিয়ে দেয়। অনি যদিও এক্সাম দেয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল না। রিশাদ তাকে সব কিছু ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেয়। শুধুমাত্র ফর্মালিটিস হিসেবে ভারসিটি অথোরিটি এই এক্সামের এরেঞ্জ করেছে। রিশাদের কথা অনি কিছুটা আত্মবিশ্বাস পায়।

টুক টাক আলোচনা শেষে রিশাদ ওয়ারড্রব থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করে অনির হাতে ধরিয়ে দেয়। অনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রিশাদের দিকে তাকায়। রিশাদ ইশারায় তাকে হাতে নিতে বললে অনি শপিং ব্যাগটা হাতে নেয়। রিশাদ তাকে শপিং ব্যাগে থাকা ড্রেসটা পড়ে রেডি হতে বলে।

অনি শপিং ব্যাগটা খুলে অবাক হয়ে যায়। অনি ভার্সিটিতে যে ধরনের ফুল বডি গাউন পড়ে ক্লাস এটেন্ড করতো ঠিক সেরকমই হোয়াইট কালারের একটা গাউন। সাথে ম্যাচিং করা হিজাব। অনি ভাবতে থাকে রিশাদ কিভাবে জানলো যে সে এধরনের ড্রেস পরে। কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই তার মনে হয় যে হয়তো তার দিদা জাহানারা বেগমই রিশাদকে এসব বলেছে।

রিশাদ অনিকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।তার জীবনযাপন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে। অনন্যময়ী নামক বইটাকে সে আস্তে আস্তে জানতে শুরু করেছে। তার ভালো মন্দ বিষয়গুলোর উপর নজর রাখছে।

রিশাদের একের পর পর এক কাণ্ডগুলো অনিকে আজ অবাক করে দিচ্ছে। এ কোন রিশাদকে দেখছে সে। রিশাদকে নিজের প্রতি এতটা কেয়ারিং হতে দেখে অনি খুব বেশিই অবাক হয়। এই মূহুর্তে তার অনুভূতিটা সংজ্ঞায়িত করা মুশকিল তবে যা হচ্ছে তাতে যেন অনির বিন্দুমাত্র বিরক্তি বা অস্বস্তি বোধ নেই। বরং এই ছোট ছোট বিষয়গুলো যেন অনির মন ভালো করে দিচ্ছে।

রিশাদ আর জয় মিলে স্টাডি রুমে ভিডিও কনফারেন্সিং এর ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রেখেছিল। যথাসময়ে কনফারেন্সিং স্টার্ট হয়ে যায়। অনি ভার্সিটি অথোরিটির সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে কমিউনিকেট করে। রিশাদ অনির বিপরীতেই বসে ছিল। জয় পুরোটা সময় খেয়াল রাখছিল যাতে কোন বিঘ্ন না ঘটে।

রিশাদ এক ধ্যানে ভিডিও কনফারেন্সিং এ ব্যস্ত অনির দিকে তাকিয়ে আছে। অনির ঠোঁট নাড়ানো থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা অঙ্গভঙ্গি রিশাদ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রিশাদ আজ নতুন অনিকে আবিষ্কার করেছে। যে কিনা নিজ কর্মক্ষেত্রে দুরন্ত,পারদর্শী। অনির বাচনভঙ্গিতেই যেন তার কাজের প্রতি একাগ্রতা ফুটে উঠেছে। অনির এই নতুন রূপ দেখে রিশাদ আরো একবার অবাক হয়। মনে মনে কামনা করে অনি যেন তার জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করতে পারে। সৃষ্টিকর্তা যেন তার সহায় হয়।

প্রায় এক ঘন্টা পর কনফারেন্স শেষ হয়ে যায়। কনফারেন্স শেষ করে অনি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। রিশাদের উপর তার একটু রাগও হয়। তাকে যদি আগে থেকে জানাতো তাহলে হয়তো সে আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারত। তবে কনফারেন্সটা সে ভালোভাবেই পার করতে পেরেছে ভেবেই সে আর রাগ করে থাকতে পারে না।

কনফারেন্স শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রিশাদ অনির সামনে এক গ্লাস জুস তুলে ধরে। অনি রিশাদের দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জুসের গ্লাসটা হাতে নেয়। গ্লাসে চুমুক দিয়ে পুরো জুসটা ঢক ঢক করে খেয়ে নেয় অনি।

–“কেমন হলো আপনার কনফারেন্স?”(রিশাদ)

–“আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে।”(অনি)

–“রেজাল্ট কবে দিবে?”(রিশাদ)

–“এখনো জানায়নি। তাড়াতাড়িই হয়তো দিবে।”(অনি)

–“যাক অবশেষে তাহলে এক্সামটা দিতে পারলো।আজ থেকে তাহলে আমার ছুটি বাপু। শান্তিতে রাতে ঘুমাতে পারবো। মাঝরাতে আর এই হারামিটা আমার সুখনিদ্রা ভঙ্গ করবে। উফফ বাঁচলাম।(জয়) অনি আর রিশাদের মাঝখানে ঢুকে কথাগুলো বলে জয়।

জয়ের কথা শুনে অনি হালকা শব্দ করে হাসতে শুরু করে দেয়। জয়ও অনির সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে শুরু করে দেয়। অন্যদিকে রিশাদ জয়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। রিশাদের দিকে তাকাতেই জয় একেবারে চুপ হয়ে যায় যেন ভূত দেখে ফেলেছে। জয় বিষম খাওয়ার ভঙ্গি করে কাশতে থাকে।

জয় মিন মিন করে বলে;

–” আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।আমি আসছি তাহলে। এখান থেকে এখন না কেটে পড়লে আমার কপালে দুঃখ আছে। শেষের কথাগুলো বিড় বিড় করে বলে জয়।

অনি জয়ের কথা পুরোপুরি শুনতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অনি জয়ের কথাগুলো বুঝতে না পারলেও রিশাদ ঠিকি বুঝতে পারে। তিবে অনির সামনে সে কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায় না।

–ভাইয়া এখনি চলে যাবেন? লাঞ্চ করে তারপর যান।”(অনি)

–“আরেক দিন এসে লাঞ্চ করে যাবো।আজকে আসছি।”(জয়)

–“না না ভাইয়া।আজকে আপনার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। লাঞ্চ করে তারপর যাবেন।”(অনি)

–“লাঞ্চের এখনো অনেক সময় বাকি আছে। কাজটা শেষ করে আসছি।”(জয়)

–“কোন কাজ নেই ওর। সব বাহানা।”(রিশাদ) জয়কে ভেংচি দিয়ে কথাগুলো বলে রিশাদ।

অনির জোরাজুরিতে জয় আর কোথাও যেতে পারেনা। অনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলে রিশাদ জয়ের ক্লাস নেয়। জয় কোনমতে রিশাদের হাত থেকে বেঁচে যায়।

অনি রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে একেবারে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেয়। মনটা আজ বেশ ফুরফুরে লাগছে তার। যার কারণ কারোরই অজানা নয়। অনেক দিন ধরেই সে প্রস্তুতি নিচ্ছিল আজকের দিনটার জন্য। দেশে আসার পর সে তার লক্ষ্য হতে বিচ্যুত হয়ে যায় ঠিকি কিন্তু রিশাদের জন্য সে তার স্বপ্ন পূরণের দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে।

পরীক্ষা দিতে না পারলে তার খুব বেশি আফসোস ছিল না কেননা সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা যা করবে তা তার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। তবুও কোথাও না কোথাও তার মনটা খারাপ ছিল। আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে সে এক্সাম এটেন্ড করতে পেরেছে।

রিশাদের কথা ভেবে আনমনেই মুচকি হাসে অনি। হাসিতে তার ঠোঁট দুটো প্রশস্ত হয়ে যাচ্ছে। দরজায় নক পড়ার শব্দ শুনে ধ্যান ভাঙে অনি।

অনি পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং জাহানারা বেগম।জাহানারা বেগমকে দেখে উঠে দাঁড়ায় অনি।

–“দিদা তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে নক করছো কেন?ভেতরে আসো না।”(অনি)

জাহানারা বেগম ভেতরে প্রবেশ করলে বিছানায় বসে অনিকে তার পাশে বসান।

–“এক্সাম কেমন হলো দিদিভাই?”(জাহানারা বেগম)

–“আলহামদুলিল্লাহ! খুব ভালো হয়েছে দিদা।”(অনি)

জাহানারা বেগম অনির সাথে আরো টুকটাক কথা বলেন। গভীরভাবে অনিকে পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। রিশাদের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে অনিকে বেশ মলিন দেখাত। আজ তাকে বেশ উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। চোখমুখ চকচক করছে। অনিকে হাসিখুশি থাকতে দেখে মানসিক শান্তি পান জাহানারা বেগম।

জাহানারা বেগম দ্বিধায় ছিলেন অনির সাথে রিশাদের বিয়েটা ঠিক হয়েছে কিনা। রিশাদ অনি একে অপরের সাথে ভালো থাকবে কিনা তা নিয়ে বেশ শঙ্কিত ছিলেন তিনি।

ধীরে ধীরে তার সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব, শঙ্কা দূর হয়ে যাচ্ছে। জাহানারা বেগম সর্বদা অনির জন্য রিশাদের মতোই কাউকে আশা করেছিলেন। তিনু হয়তো কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেন নি এই বিয়েটা দিয়ে। সৃষ্টিকর্তার কাছে জাহানারা বেগমের একটাই আকুল আবেদন তার ছোট্ট পরী অনন্যময়ী যেন রিশাদের সাথে সুখী হতে পারে। তাদের সম্পর্কটা যেন আর সবার মতো স্বাভাবিক হতে পারে।

নানান ধরনের জটিলতার মধ্যে দিয়ে জন্ম হয়েছে অনির। জন্মের পরেও যেন সেই জটিলতা গুলো তার পিছু ছাড়েনি। বরং বেড়েই গেছে। আজ এত বছর পরে সে খানিক সুখের মুখ দেখেছে। এটা যেন চিরস্থায়ী হয় অনির জীবনে।

দুপুরে সবাই একসাথে লাঞ্চ করে নেয়। রায়হান সাহেব অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাই তিনি আসতে পারেন নি। জয় খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়।

বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে অনি জয়কে ধন্যবাদ জানায় তার জন্য এত কষ্ট করার জন্য।জয় অনির সাথে টুক টাক কথা বলে বেরিয়ে যায়। রিশাদ তাকে কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে আসে। অন্যদিকে জাহানারা বেগম চলে যেতে চাইলে রিশাদ অনিসহ পরিবারের সবাই তাকে জোর করে থাকার জন্য। বাধ্য জাহানারা বেগম ঠিক করেন আজকের রাতটা থেকে তারপর বাড়ি ফিরবেন। আরো কিছু সময় পেলেন নিজ চোখে তার অনন্যময়ীকে সুখে থাকতে দেখার।

দুপুরের খাবার শেষ করে অনি রুমে রেস্ট নিচ্ছিল। রিশাদও রুমে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

শুয়ে থাকতে থাকতে বোর লাগছে অনির। বিছানা থেকে নেমে রিশাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রিশাদ সোফায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ফাইলগুলো গুছিয়ে নিয়ে অনিকে বসার জায়গা করে দেয়। অনিকে ইশারায় বসতে পড়লে অনি কিছুটা দূরত্বে বসে পড়ে। হাঁটুর উপর কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে রিশাদের ল্যাপটপের দিকে চোখ বুলায় অনি।

কিসব গ্রাফ চার্ট দেখা যাচ্ছে। যার মাথামুণ্ড কিছুউ বুঝছে না সে। তবুও বেশ আগ্রহ নিয়ে সে রিশাদের কাজ করা দেখছে। মাঝে মাঝে রিশাদের দিকে একবার তাকচ্ছে তো একবার ল্যাপটপের দিকে।

কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর রিশাদ বলে;

–“আপনি আমার দিকে এভাবে তাকালে আমি কাজ করবো কিভাবে বলুন তো?কিছু বলবেন?”(রিশাদ)

অনি কিছুটা লজ্জা পায় রিশাদের কথা শুনে।

–“না তেমন কিছু না। আপনার কাজ কখন শেষ হবে বলুন তো।”(অনি)

–“এইতো আরো কিছুক্ষণ লাগবে।”(রিশাদ)

–“ওহ আচ্ছা”(অনি)। শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয় অনি।

–“কাল থেকে অফিস জয়েন করতে হবে। একটা নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি তাই আজ থেকেই সব কিছু ঠিক ঠাক করে রাখছিলাম”(রিশাদ)

–“অফিস যাবেন?আমি বাসায় বসে বসে কি করবো?এমনিতেই আমি বোর হয়ে যাই সারাদিন কিচ্ছু করার থাকেনা। “(অনি)

–“তো মিস অনন্যময়ী আপনিও কি আমার সাথে অফিস যেতে চাচ্ছেন। ইফ ইউ ওয়ান্ট ইউ ক্যান কাম উইথ মি। আই হ্যাভ নো প্রবলেম।(রিশাদ)

অনি রিশাদের কথায় কোন উত্তর না দিয়ে ভেংচি কাটে। রিশাদ মুচকি হাসে।

–“বাসায় তো মামনি আছে, মিথিলা, রিশা, আন্টি, বাবা সবাই আছে। তাহলে আপনি বোর হবেন কেন?”(রিশাদ)

–“মিথিলা, রিশা দুজনই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।মামনির সাথে আর কতক্ষণ গল্প করবো। বাবাও বাসায় থাকেনা। কি করবো আমি বলুন তো।”(অনি)

–“হুম বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাকেও তো অফিস যেতে হবে মিস। কয়েকটা দিন ম্যানেজ করে নিন। আর কিছুদিন পরে তো চলেই যাবেন। আমি টাইম বের করে আপনাকে আস্তে আস্তে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখাবো। বাট নেক্সট দুদিন আমি খুব ব্যস্ত থাকবো। বিয়ে,অসুস্থতায় অনেক কাজ পেন্ডিং হয়ে আছে। ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কাজ করতে করতে কথাগুলো বলে রিশাদ।

অনি রিশাদের কথাগুলো কান পেতে শোনে। অনির মস্তিষ্কে রিশাদের একটা কথা গেঁথে যায়”আর কিছুদিন পরে তো চলেই যাবেন”।

কথাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে অনি। সবার মাঝে থেকে সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল কদিন বাদেই তাকে নিজের অবস্থানে ফিরে যেতে হবে। কয়েকদিনের জন্য আপন করে পাওয়া এই শহরকে,এই শহরের মানুষগুলোকে ছাড়তে হবে। সাথে করে নিয়ে যাবে শুধু অনেক অনেক ভালো কিছু স্মৃতি।

রিশাদের কথার জবাবে ক্ষীণ কণ্ঠে “হুম” বলে উঠে যায় অনি। অনির রৌদ্রজ্জ্বল আকাশটা নিমিষেই যেন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়। মেঘাচ্ছন্নতার কারণ তার অজানা। সবকিছু কেন স্বাভাবিক নয় তার জীবনে। যদি কখনো সুযোগ হতো তবে সে তার রবের কাছে জানতে চাইত কেন তার কাছে সবকিছু থেকেও কিছু নেই?কেন?

পার্থিব জটিলতা যেন সবখানেই তার পিছু পিছু ছুটে চলে। তবুও তার কোন অভিযোগ নেই। সে তো তার নামের মতোই অনন্য এক অনন্যময়ী।

অনন্যময়ীর হঠাৎ এমন নীরবতায় কিছুটা অবাক হয় রিশাদ। তার হঠাৎ বৃষ্টি,হঠাৎ রোদ্দুরের কারণটা আজও সে সঠিকভাবে ঠাওর করতে শেখেনি। তবে এই মূহুর্তে সে অনির বিষয়ে না ভেবে কাজে মনোযোগ দেয়।

অনি রুম থেকে বেরিয়ে বাইরের দিকে যায়। করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল সে। অন্যমনস্কভাবে হাঁটছিল সে। মিথিলার রুমের সামনে এসে থেমে যায় সে। কিছু একটা পড়ার শব্দ তার কানে ভেসে আসে। শব্দটা একটু জোরেই হয়।তাই অনির কাছে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়।

অনি কিছুক্ষণ যাবত মিথিলার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। কয়েকবার সে মিথিলার নাম ধরে ডেকে দরজা নক করে। কোন সাড়াশব্দ পায় না।

বাধ্য হয়েই সে দরজা ঠেলে প্রবেশ করে। রুমটা কেমন অন্ধকার হয়ে আছে। এখনো সন্ধ্যে হওয়ার অনেক বাকি আছে। জানালার পর্দা মেলানো।হালকা আলো আসছে তবে তা পর্যাপ্ত নয়। আবছা আবছা রুমের আসবাব পত্র গুলো দেখা যাচ্ছে।

অনি সাবধানে পা বাড়িয়ে রুমের ভেতরে যায়। পায়ের সাথে কিছু একটা লেগে পড়ে যেতে নেয়। অন্ধকারে দেয়াল ধরে সে নিজেকে সামলে নেয়। হাতের কাছেই সুইচ টিপে সে লাইট অন করে।

লাইট অন করতেই পায়ের সামনে ফুলদানি পড়ে থাকতে দেখে। বেডসাইড টেবিল থেকে কোনভাবে পড়ে গিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে এদিকে চলে এসেছে।

অনি নিচু হয়ে ফুলদানিটা হাত দিয়ে তুলে ফুল গুলো গুছিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রাখে। ফুলদানিটা রেখে পিছনে ফিরে তাকাতেই অনি যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

চলবে……….

আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকে পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন। ধন্যবাদ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here