অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_২১

0
6459

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_২১

হিমাদ্রী আর গুনগুনের খুনসুটি দেখে নিরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। নিরাকে দেখে হিমাদ্রী মুচকি হেসে বলে; কেমন আছো ভাবী? বলেই সে গুনগুনকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে পড়ে।

নিরাও জবাবে হালকা হেসে বলে; এইত ভাইয়া ভালো আছি? তুমি কেমন আছো??

-এইত গুনগুনকে পেয়ে গেছি এখন আরো বেশি ভালো হয়ে গেছি! (হিমাদ্রী)

-তুমি আগে আসবে বলো নি কেন? বললে তো আমি আর যেতামই না। তুমি এসেছো শোনার পর থেকেই গুনগুন তো আমার মাথা খেয়ে দিচ্ছে চাচ্চুর কাছে যাব চাচ্চুর কাছে যাব বলে। আর থাকতে না পেরে চলেই এলাম। কোথায় গিয়েছিলে তুমি??(নিরা)

-এইত ভাবি অফিসে ছিলাম সেখান থেকে একটু কাজে বেরিয়েছিলাম রাফিকে নিয়ে। (হিমাদ্রী)

হাতের আঙুলে গাড়ির চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে প্রবেশ করে রাফি।রাফি গিয়ে সোফায় বসে গুনগুনের সাথে খুনসুটিতে মেতে ওঠে। গুনগুনের বেশ পছন্দ রাফিকে। রাফিও গুনগুনকে অনেক বেশি ভালোবাসে। চৌধুরী বাড়ির একমাত্র রাজকন্যা হলো গুনগুন।সবার চোখের মণি।

একটু পরেই রেহানা বেগম এসে সবাইকে লাঞ্চ করতে বলেন। সবাই মিলে একসাথে বসে লাঞ্চ করে। গুনগুনকে বসানো হয় রাফি ও হিমাদ্রীর মাঝখানে। দুজনে সমান তালে তুলে খাওয়াচ্ছে গুনগুনকে আর সেও খুব মজা পাচ্ছে বিধায় একটু পর পর খিল খিল করে হেসে উঠছে। তার হাসির জোয়ারে সবাই আজ আনন্দে মেতে উঠেছে।

গুনগুনের জীবনে পিতার অভাবটা সে যেন টেরই পায় না কখনো। হিমাদ্রী দেশের বাইরে থাকাকালীন সময় গুলোতে রাফি মাঝে মাঝেই এ বাড়িতে আসে গুনগুনের সাথে কিছু সময় কাটানোর জন্য।

হিমাদ্রী, রাফি,নিরা একি কলেজে পড়াশোনা করেছে। রাফি, হিমাদ্রী যখন ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট তখন নিরা তাদের এক ক্লাস জুনিয়র ছিল। হিমাদ্রী দের পরিবারের বেশ নাম ডাক পুরো শহর জুড়ে। প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট দের নবীন বরণের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হন হিমাদ্রীর বাবা নিহাল চৌধুরী আর তার বড় ছেলে কাব্য চৌধুরী।

কাব্য চৌধুরী সদ্য জেগে ওঠা এক অপরাজেয় তরুণ বিজনেসম্যান। বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেই বাবার বিজনেসে জয়েন করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিহাল চৌধুরীর বিজনেস ফুলে ফেঁপে দ্বিগুণ হয়ে যায়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। কাব্য চৌধুরীর সুচতুর দক্ষতায় ও অসাধারণ কৌশলী বুদ্ধিমত্তায় খুব দ্রুত সবটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেন। পুরো শহর ছাপিয়ে যায় কাব্য চৌধুরীর অসাধারণ সাফল্যে।

নবীন বরণ অনুষ্ঠানে কলেজের পুরাতন স্টুডেন্ট দের পাশাপাশি ছিল নবীনদের কিছু ইভেন্ট। নিরা বরাবরই লাজুক স্বভাবের মেয়ে। ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছে গান শেখা।সেভাবে কোনদিন রেওয়াজ করা হয়নি তবুও তার গলায় যেন এক অদ্ভুত রকমের সুরের মেলা। গানের প্রতিযোগিতায় সে সবার সেরা। তাই তারও বেশ নামডাক রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই স্টুডেন্টসহ শিক্ষকরা সবাই তাকে জেঁকে ধরে গান গাওয়ার জন্য। নিরা তার অনুরোধ ফেলতে না পেরে গান গাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।

মাইকে নিরার নাম ঘোষণা করতেই স্টেজে ওঠে নিরা। কাব্য চৌধুরী অন্যমনস্ক ভাবে ফোন টিপছিলেন। এসব অনুষ্ঠানে আসতে বরাবরই তার বেশ বিরক্ত লাগে। বাবার কথা ফেলতে না পেরে সে দায়সারাভাবে উপস্থিত হয়েছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কানে ভেসে আসে এক মিষ্টি সুর। কাব্য চৌধুরী ফোন থেকে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকায়। স্টেজের মাঝ বরাবর মাইক হাতে দাঁড়িয়ে আছে নীল শাড়িতে আবৃত এক তরুণী। সদ্য ফোটা ফুলের মতো সেও কৈশোরকাল পার করে সবে মাত্র যৌবনকালের দোরগোড়ায় পা দিয়েছে। বেশ সতেজ স্নিগ্ধ লাগছে তাকে। হাত নাড়িয়ে সুরের তালে হারিয়ে যাচ্ছে। কোমড় অবধি খোল চুল গুলো হালকা উড়ছে ফ্যানের বাতাসে,কানের বাম পাশে এক ঝাক গোলাপের মেলা। একগুচ্ছ অবাধ্য চুল কপালে এসে ভিড় জমিয়েছে। থেকে থেকে হাত দিয়ে সিল্কি চুলগুলো কানের পিঠে গোজার অব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কাব্য চৌধুরীর দৃষ্টি স্থির হয়ে গেছে। তার কানে ভেসে আসছে..

করতালির আওয়াজে কাব্য চৌধুরীর ধ্যান ভাঙে। সাময়িক ভালো লাগার এই বিষয়টিকে সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে এড়িয়া যাওয়ার চেষ্টা করে। চাইলেই কি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব?????

সেদিনের পর থেকে কাব্য চৌধুরীর মন ও মস্তিষ্কে নিরার গানের সুর যেন একবারে গেঁথে গেছে। সময়ে অসময়ে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। কাজের মধ্যে ডুবে থেকে সে সব সময় নিজের সুপ্ত অনুভূতি গুলো থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবুও পুরোপুরি ভাবে এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ধীরে ধীরে নিরার অস্তিত্ব কাব্য চৌধুরীর মাঝে বেড়েই চলেছে। শেষমেশ নিজের অনুভূতির কাছে পরাজিত হয় কাব্য চৌধুরী। তার মধ্যে কিছুটা বদল পরিলক্ষিত করেন রেহানা বেগম। ছেলের অস্বাভাবিক আচরণ গুলো তার নজর এড়ায় নি।

নিরার প্রতি ধীরে ধীরে তার ভালোবাসা বেড়েই চলেছে। তবে নিরা এখনো অনেকটাই ছোট ভেবে সে এই মূহুর্তে এই বিষয়টা নিয়ে এগোনোর কথা ভাবছে না। দূর থেকেই তার ভালোবাসাকে আগলে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সময় পেলেই চলে যায় তার প্রিয়তমা কে এক নজর দেখার জন্য।হিমাদ্রীর মাধ্যমে নিরার সাথে তার আলাপ হয়। মাঝে মাঝে দু একটা কথা হয়। নিরার সাথে কিছুটা সখ্যতা গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে তাদের ফোনালাপ বেড়ে যায়। কলেজের কোন অনুষ্ঠান এটেন্ড করতে সে ভোলে না শুধু মাত্র নিরার জন্য। বিষয়টা নিরার কাছেও বেশ ভালো লাগে।কাব্য চৌধুরীর সুপ্ত ভালোবাসার অনুভূতি গুলো নিরা আবছা আবছা বুঝতে পারে। এভাবেই দেখতে দেখতে দু বছর কেটে যায়। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে যায় নিরা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে বাসায় বসে এডমিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন সে। অন্যদিকে কাব্য চৌধুরী এখন চাইলেই নিরার সান্নিধ্য পায় না। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় খুব দ্রুত তার প্রেয়সী কে নিজের করে নেবে।

মানুষের পরিকল্পনা সব সময় সফল হয় না। সকল পরিকল্পনার উর্ধ্বে মহান সৃষ্টিকর্তা। যিনি আগে থেকেই সব কিছু নির্ধারিত করে রেখেছেন।

নিরার বাবা নাজমুল সাহেব। তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী। খুব সাধারণ পরিবার তার যেখানে আছে তার দুই মেয়ে নিরা নিধী আর স্ত্রী আয়েশা বেগম। রোজকার মতো একদিন সন্ধ্যাবেলা বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন নাজমুল সাহেব। তার হাতে ছিল ব্যাগ ভর্তি ফুচকা দুই মেয়ে নিরা আর নিধির জন্য। নিরা নিধি পিঠাপিঠি। দুই বছরের ছোট বড় একে অপরের।
আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মতোই হাসিখুশি পরিবার। মাঝে মাঝে আর্থিক সংকট দেখা দিলেও ভালোবাসার ঘাটিতি হয়না কখনো।

এক রাতের ব্যবধানে সবটা এলোমেলো হয়ে যায়। বসন্তের কোন এক রাতের কথা। সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে গেছে। নাজমুল সাহেব এখনো বাড়ি ফেরেনি। আয়েশা বেগম কিছুটা চিন্তিত হন। বার বার নাজমুল সাহেবকে ফোন দেন কিন্তু বার বার অপর পাশ থেকে একজন মহিলার আওয়াজ ভেসে আসে আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরে এই মূহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

রাত যত গভীর হয় আয়েশা বেগমের চিন্তা ততই বেড়ে যায়। নিরা নিধিও এখন ঘাবড়ে গেছে।আয়েশা বেগম একে তার সকল কলিগকে ফোন দিয়ে নাজমুল সাহেবের সন্ধান চায় তবে কেউই কোন কিছু জানে না বলে জানায়। সবাই তাকে শেষবার অফিসেই দেখেছিল।

আয়েশা বেগম হতাশ হয়ে সোফায় বসে পড়েন। অজানা বিপদ তার ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছেন। নিরা নিধি দুজনেই মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আয়েশা বেগমও কোন আশার আলো না দেখতে পেয়ে দুচোখের জল ছেড়ে দেন।

হাজার হাজার শঙ্কা অজানা ভয় নিয়ে তাদের রাতটা কেটে যায়। ফজরের নামাজ পড়ে সবেমাত্র মোনাজাত শেষ করেন আয়েশা বেগম। নিরা নিধি কাঁদতে কাঁদতে ভোরবেলার দিকে ঘুমিয়ে যায়। কলিং বেলের শব্দ শুনে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। তারা যেন আশার আলো দেখে নাজমুল সাহবের ফিরে আসার কল্পনায়। মেঘলা আকাশে যেন এক চিলতে রোদ্দুরের দেখা মেলে।

আয়েশা বেগম দ্রুত দরজা খুলে দেন। সামনের দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে তার হাসি হারিয়ে যায়। আশার আলো দপ করে নিভে গিয়ে ভিড় জমায় অজানা ভয়ের।

দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে ইউনিফর্ম পরিহিত চারজন পুলিশ। তাদের দেখে আয়েশা বেগম ভড়কে যান।

-এটা কি নাজমুল সাহেবের বাড়ি?(পুলিশ)

আয়েশা বেগম আমতা আমতা করে বল; হ্যা।

পুলিশ অফিসার নত মস্তকে বলে; আপনার স্বামী গতকাল রাতে একটা বাস এক্সিডেন্টে মারা গেছে।(পুলিশ)

পুলিশের কথা শুনে আয়েশা বেগমের মাথাটা ঝিম ঝিম করে ওঠে। সব শক্তি যেন আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছেন। চোখ জুড়ে আধার নেমে আসে। ধপ করে ফ্লোরে পড়ে যান। নিরা নিধি হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয়।

ভালো ভাবেই নাজমুল সাহেবের দাফন সম্পন্ন হয়। আয়েশা বেগম নিথর দেহে বিছানায় পড়ে আছেন। বার বার তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।
নিরা নিধির কোলে মাথা গুঁজে কেঁদেই চলেছে। নিরাও সমানে অশ্রুপাত করে চলেছে।

নিরার কলেজের স্যার ম্যাডামরা সবাই আসেন তাদের পাশে দাঁড়াতে। সাথে আসে রাফি হিমাদ্রী সহ আরো কিছু শিক্ষার্থী।

হিমাদ্রী ফোনে সবটা কাব্যকে জানায়। কাব্য চৌধুরী সবটা শুনে ঠিক থাকতে পারেননি। গাড়ি নিয়ে ছুটে যান নিরাদের বাসায়।বাসায় ঢুকেই নিরার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে তার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। দূর থেকে নিরাকে দেখে তার চোখেও জল চলে আসে। সে হিমাদ্রীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

জানাজার লোকজন দু একজন এখনো চলে যাননি। নিরা ফুপি শাহানারা বেগম নিরার মায়ের কাছে যান সাথে তার ছেলে সুমন। শাহানারা বেগমের স্বামী নেই। ডিভোর্স হয়ে গেছে তার। মানুষ হিসেবে খুব একটা সুবিধাজনক নয়। তাদের নজর সব সময়ই নাজমুল সাহেবের বাড়ির উপর। নিরাদের বাড়িটা আহামরি কিছু না হলেও বেশ সুন্দর। দশ কাঠা জমির উপর দোতলা মাঝারি আকারের ডুপ্লেক্স হাউজ। সামনের ফাকা জায়গায় কিছু অংশ জুড়ে ফুলেত সমাহার।

শাহানারা বেগমের ছেলে তার চেয়েও দশ পা এগিয়ে। এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা সে করে না। তার লোলুপ দৃষ্টি বরাবরই নিরার দিকে।

সুমন খুব বাজে ভাবে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে নিরার কোন ভ্রুক্ষেপ না থাকলেও কাব্যর নজর ঠিকি সব বুঝতে পেরেছে। তবে যথাসম্ভব নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করছে।

শাহানারা বেগম আয়েশা বেগমকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা কান্না জুড়ে দেয়।এতে আয়েশা বেগমের কোন ভাবান্তর হয় না। শাহানারা বেগম কৌশল করে সুমনের সাথে নিরার বিয়ের কথা বলে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও তার সাথে সহমত হয়। তাদের ভাষ্যমতে সুমনের সাথে বিয়ে হলে বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই থাকবে।

সুমন নিরার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে শয়তানি হাসি দেয়।কাব্য চৌধুরীর রাগ চরমে পৌঁছে গেছে। হিমাদ্রী সবটা বুঝতে পেরে তার ভাইয়ের হাত চেপে ধরে কিছু না বলতে ইশারা করে। অবস্থা বেগতিক দেখে নিরা কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে বাইরের দিকে যায়। কাব্য চৌধুরী নিরার কাছে যায়।

নিরার কাঁধে হাত রাখতেই সে একবার পিছনে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়। তার চোখ শুন্যে ভাসছে আর জীবনটা অনিশ্চয়তায়। এই পরিবারের লোকজন তাকে ভালো ভাবে বাচতে দেবে না সুমন এর সাথে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। ভাবতেই তার ভেতরটা হুহু করে ওঠে। নিরা কিছু একটা ভেবে কাব্যর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে; বিয়ে করবেন আমাকে?? ওই জঘন্য লোকটাকে বিয়ে করলে আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। বলেই সে মাটিতে বসে পড়ে হাটু ভাজ করে কান্না করতে থাকে।

কাব্য চৌধুরী দ্রুত নিরাকে তুলে দাঁড় করায়। নিরা কান্না কান্না করতে থাকে। কাব্য তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। এই মেয়েটাকে না বলার সাধ্য নেই। নিরাকে এই মূহুর্তে ছাড়া তার পক্ষে কোন মতেই সম্ভব না। নিরাকে, নিরার পরিবার কে সে সব সময় আগলে রাখবে।

নাজমুল সাহেবের মারা যাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে কাব্য নিরাকে বিয়ে করে। এতে শাহানারা বেগম খুব ভালোই ক্ষিপ্ত হয়। তবে কাব্য চৌধুরীকে টক্কর দেয়া সাধ্য নেই।তাই পরিবারের সবাই চুপচাপ সব মেনে নেয়। কাব্যর বাসায় কারো কোনো আপত্তি ছিল না। নিহাল চৌধুরীর কিছুটা আপত্তি থাকলেও ছেলের সুখ এবং নিরার অমায়িক ব্যবহারে তিনিও সবটা মেনে নেন। ছেলের কথাটাই তিনি আগে ভাবেন।খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হয় কাব্য আর নিরার বিয়ে।

একরাশ অনিশ্চয়তা, পরিবারের প্রতি অপ্রতিরোধ্য পিছুটান নিয়ে নিরা কাব্য চৌধুরীর হাত ধরে তার নতুন জীবনের দিকে পা বাড়ায়। একটা রাত তার জীবনের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। তার জীবনের গতি বদলে দিয়েছে।
সবকিছুর মাঝেও যেন সে এক কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে কাব্য চৌধুরী নামক মানুষটার জন্য। এই মানুষটা তার জীবনে যেন মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মাঝে এক চিলতে সোনালি রোদ। যে রোদের বিস্তার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে কালো মেঘের ঘুটঘুটে অন্ধকার।

তবুও যেন মনের কোণে এক রাশ ভয় এসে নিরাকে গ্রাস করে দিচ্ছে। নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশে সে কিভাবে সবটা মানিয়ে নেবে। সেই মানুষ গুলো কি তাকে আপন করে নেবে?? সে নিজেও কি পারবে সবাইকে আপন করে নিতে?? হাজার হাজার প্রশ্ন নিরার মাথায় এই মূহুর্তে দলা পেকে আছে। যার কোন উত্তর তার কাছে নেই। গাড়ির চাকা ছুটে চলেছে নিরার নতুন গন্তব্যের দিকে। তার নতুন জীবনের সূচনার দিকে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here