অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_২২

0
6033

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_২২

আজ অনেক কয়দিন পর নিজের স্টাডি রুমে এসেছে রিশাদ। রিশাদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হলো এটি। বেশির ভাগ সময় সে এখানেই কাটায়। বিগত কয়েকদিন যাবত একবারও আসা হয় নি। এই রুমের প্রতিটা জিনিস রিশাদের অনেক বেশি পছন্দ। কাউকেই সে এখানে আসতে দেয় না খুব বেশি প্রয়োজন না হলে। নিজে হাতে সে সব কিছু গুছিয়ে রাখে। এটি তার ভালোবাসার ও ভালোলাগার জায়গা। ভালো খারাপ সব স্মৃতিই জড়িয়ে আছে এই রুমটার সাথে। রুমের প্রতি কোনায় রয়েছে তার স্পর্শ।

জাহানারা বেগম ও অনামিকা শেখকে বিদায় জানিয়ে উপরে যায় অনি। আজ তার মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। জাহানারা বেগমের আগমনে যেন সে পুনরায় সতেজ হয়ে যায়। তার বিষণ্ণ মনটা হাসিখুশি হয়ে যায়। মনে মনে গুনগুন করতে করতে উপরে যায়। রিশাদের রুমের দিকে যায় অনি।

স্টাডি রুম পার হতেই সে দেখতে পায় রুমের দরজাটা একটু খোলা। ভেতরে হালকা আলোও জ্বলছে। ভ্রু কুঁচকে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায় সে। মনে মনে ভাবতে থাকে কে ভেতরে।

দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছুটা ফাঁক করে মাথা ঢুকিয়ে ভেতরে উঁকি দেয় কে আছে তা দেখার জন্য। এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে কাউকেই দেখতে পায় না। পরক্ষণেই তার নজর পরে স্টাডি টেবিলের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা রিশাদের দিকে। রিশাদকে দেখে তার চেহারায় বিরাজ করে বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

অনি মনে মনে ভাবতে থাকে রিশাদ কিভাবে এই রুমে এলো। দুপুরে লাঞ্চ করার পর রিশাদকে সে রুমে নিয়ে শুইয়ে দেয়। তারপর সে ঘুমাচ্ছিল। আর রিশাদ তো একা চলতেও পারে না তাহলে কিভাবে এখানে আসলো? রিশা মিথিলা দুজনই কোচিং এ গেছে। মামনি সাবিনা আন্টি তো নিচে আমার সাথেই ছিল।তাহলে???

অনি কোন কিছু ভেবে পাচ্ছে না।বিরক্ত হয়ে মাথায় হালকা চাপড় দেয়। সকল চিন্তা ভাবনা কে দূরে ফেলে দিয়ে মিন মিন করে বলে; ভেতরে আসবো??

রিশাদ চেনা পরচিত নারীকণ্ঠ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকায়। অনিকে শরীরের অর্ধেক অংশ ভেতরে ঢুকিয়ে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকয়ে মাথা নাড়িয়ে অনিকে ভেতরে আসতে বলে।

অনি একটা বাচ্চা বাচ্চা হাসি দিয়ে রুমের ভেতরে যায়। অনি আজ অদ্ভুত মনে হচ্ছে রিশাদের। এমনিতে অনি সব সময় মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগে। চাপা বিষাদ রিশাদের চোখ এড়ায় না। তবে আজ তার কিছুই নেই বরং স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই হাসিখুশি লাগছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ তাকে অনেক বেশি স্নিগ্ধ মনে হচ্ছে। তার সৌন্দর্য আজ কয়েক গুণ বেশি মনে হচ্ছে।

রিশাদ বিড় বিড় করে বলে; মেয়েরা হাসিখুশি থাকলে কি তাদের সৌন্দর্য বেড়ে যায় নাকি??

অনি রিশাদের ঠোঁট নাড়ানো দেখে বুঝতে পারে কিছু একটা বলছে তবে শব্দ তার কান অবধি পৌঁছায় না বলে কৌতূহলী নয়নে রিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রিশাদ অনিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে; কিছু বলবেন??

অনি থতমত খেয়ে দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। শান্ত গলায় বলে; না তো কিছু না। আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখলাম রুমের দরজা খোলা। ভেতরে এসে দেখলাম আপনি এখানে। এখানে কি করে আসলেন আপনি তো রুমে ঘুমাচ্ছিলেন। এক পাশের ভ্রু বাঁকিয়ে রিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকে

-হ্যা একটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছি । রুমে একা একা বোর হচ্ছিলাম তাই এখানে এসে একটু বসলাম। (রিশাদ)

-আপনি একা আসলেন কিভাবে? আমাকে ডাকলেই পারতেন?(অনি)

-না না ঠিক আছে। আপনি এতী ব্যস্ত হবেন না। একটু একটু করে একা হাঁটার চেষ্টা করছি আরকি।বলেই রিশাদ একটা মুচকি হাসি দেয়।

প্রতি উত্তরে অনিও মুচকি হাসে। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে অনি রিশাদকে নিয়ে রুমে যায়। একটু পরেই আছরের আযান ভেসে আসে অনির কানে।

অনি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অযু করে বেরিয়ে আসে। রিশাদ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বাম হাতে ফোন টিপছিল। অনি কিছুটা সময় নিয়ে আছরের নামায শেষ করে। রুমে বসে রিশাদের সাথে টুকটাক কথা বলে অনি।

অনিকে হাসিখুশি দেখে রিশাদের মনটাও ভালো হয়ে যায়। সে মনে মনে ভাবে ;অনন্যময়ী আপনাকে হাশিখুশিই ভালো লাগে। সব সময় এরকম হাসিখুশি থাকবেন। কথা গুলো অনির কান অবধি পৌঁছায় না। রিশাদ তার ভাবনা গুলো নিজের মাঝেই সীমিত রাখে। মুগ্ধ নয়নে অনির দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের অজান্তেই মুচকি হাসি দেয়।

রিশাদকে এভাবে হুটহাট হাসতে দেখে অনি কিছুটা নড়েচড়ে বসে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। সাথে ভেসে আসে শায়লা বেগমের মমতাময়ী সুর।

শায়লা বেগম ভেতরে ঢুকে রিশাদকে বলে; ঘুম থেকে উঠে গেছিস!! এখন কেমন আছিস??পায়ের ব্যথাটা কমেছে??

-হ্যা আম্মু এখন ভালো আছি। ব্যথাটা কমে গেছে। বলে রিশাদ মুচকি হাসে।

নিচে থেকে সাবিনা বেগমের আওয়াজ পেয়ে অনির সাথে দুই এক কথা বলে শায়লা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে নিচে যায়। যাওয়ার আগে শায়লা বেগম অনিকে বলেন রিশাদকে নিয়ে নিচে যেতে।

শায়লা বেগম চলে গেলে অনি রুমটা একটু গুছিয়ে রিশাদকে নিয়ে বাইরে যায়। রিশাদকে এখন খুব বেশি ধরার প্রয়োজন হয় না। সে অনেকটাই একা চলতে পারে। রিশাদকে সুস্থ হতে দেখে অনির বেশ ভালো লাগে।

ড্রইংরুমে সোফায় বসিয়ে দেয় রিশাদকে। সেখানে আগে থেকেই বসে ছিলেন রায়হান সাহেব। রায়হান সাহেব মুখের সামনে থেকে পেপারটা সরিয়ে রেখে অনি রিশাদের সাথে টুকটাক গল্প শুরু করে। শায়লা বেগমও একবার এসে সবার সাথে কথা বলে তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরের দিকে যান।

একটু পরেই মিথিলা আর রিশা একে অপরের সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ির ভিতর ঢোকে। দুজনকেই বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।মুখটাও শুকিয়ে গেছে। রিশা ড্রইংরুমে সবাইকে বসে আড্ডা দিতে দেখে বলে; বাব্বাহ তোমরা তো দেখি আমাদের ছাড়াই আসর জমিয়ে ফেলেছো। এটা কিন্তু ঠিক না। বলেই রিশা মেকি রাগ দেখায়।

রায়হান সাহেব হেসে বলে; একদম না। কেউ তোমাদের ছাড়া আসর জমায় নি। তোমাদের জন্যই তো আমারা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। অনিও রায়হান সাহেবের কথার সাথে তাল মেলায়। মাঝখান থেকে রিশাদ রিশাকে খেপানোর জন্য বলে; আসছে আমার গরীবের রানী ভিক্টোরিয়া। ওর জন্য নাকি বসে থাকতে।

রিশা হু হা করে হাসতে হাসতে বলে; আপনি কে জনাব? আপনাকে তো চিনলাম না।আপনি কেন আমার জন্য বসে থাকতে যাবেন? আমার জন্য তো আমার বাবা আর ভাবী অপেক্ষা করছে।

রিশার কথা শুনে রিশাদ মুখ বাঁকিয়ে ভেংচি কাটে।অনি সেদিকে তোয়াক্কা না করে বিনুনি নাচিয়ে রুমে যায় ফ্রেশ হতে। মিথিলাও মলিন মুখে ফিকে হাসি দিয়ে রুমে চলে যায়। সে যথাসম্ভব চেষ্টা করে সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে। বিশেষ করে রিশাদের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে মিথিলার সর্বাত্মক চেষ্টা।তবুও রিশাদ আর অনিকে একসাথে দেখলে মিথিলার সব কিছু এলোমেলো লাগে। তাই সে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে।

একটু পরেই অনি উঠে রান্নাঘরে শায়লা বেগমের কাছে যায়। সেখানে সাবিনা বেগম চুলায় কিছু একটা ভাজছিলেন। শায়লা বেগম রান্নাঘরে না থাকায় অনি সাবিনা বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সাবিনা বেগম সজাগ হয়ে তার দিকে তাকায়।

অনিকে দেখে সাবিনা বেগম স্মিত হাসি দেয়।
-তুমি এখানে? তোমার কি কিছু লাগবে?? ( সাবিনা বেগম)

-না না আন্টি। আমার কিচ্ছু লাগবে না। ওখানে বসে বোর হচ্ছিলাম তাই রান্নাঘরের দিকে আসলাম। সারাদিন তো বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই আমার হাতে। (অনি)

সাবিনা বেগম হালকা হেসে বলে; এখন তোমাদের আরাম করারই সময়। কাজ করার জন্য আরো অনেক দিন পড়ে আছে। সবে মাত্র এবাড়িতে এসেছো মা। সবটাই তো তোমার সংসার।এখন সারাজীবন তো তোমাকেই সবটা সামলাতে হবে। একবার সংসারের মায়ায় পড়ে গেলে আর কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

সাবিনা বেগমের কথাগুলো অনির মস্তিষ্ক যেন চিন্তার ঘন্টা বাজিয়ে দেয়। সে তো এবাড়িতে কিছু দিনের অতিথি মাত্র। সবটাই তো অদ্রির বলে সে মনে করে। তাহলে এই সংসার ছেড়ে সে যেতে পারবে না কেন? সত্যিই কি এই সংসারটা তার?? যার মাধ্যমে অনির এই সংসারে আগমন তার জীবনেই তো অনির কোন বিশেষ কোনঅস্তিত্ব নেই। সেই মানুষটার থেকে দূরে থাকতে তার খারাপ লাগে না খারাপ লাগার কথাও না। তবে এই পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকার কথা ভাবলে অনির মনটা কিঞ্চিত খারাপ হয়ে যায়। সে কি এই সংসারের মায়ায় পড়ে গেছে?? এতো দ্রুত কি করে সম্ভব??

-কিরে কি হয়েছে? কখন থেকে ডাকছি কি এতো ভাবছিস?? অনির হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে কথা গুলো বলে শায়লা বেগম।

ঘটনার আকস্মিকতায় অনি কিছুটা হকচকিয়ে যায়। অনি নিজের ভাবনার জগতে এতটাই মশগুল ছিল যে শায়লা বেগমের ডাকে তার মস্তিষ্ক কোন সাড়া দেয় না। অনি আমতা আমতা করে বলে;

–কিছু বলছিলে তুমি মামনি??(অনি)

–আমি তো অনেকক্ষণ ধরেই ডাকছি তোমাকে মা। কি এতো ভাবিস যে বাপু তোরা ভালো জানিস। তোর আবভাব আমি কিছু বুঝি না বাপু। (শায়লা বেগম)

–তেমন কিছু না মামনি। বলো না কি বলছিলে তুমি? আমি কিছু করে দেব তোমাকে?? কি করতে হবো আমাকে বলো? (অনিল

–না মা তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না।তুমি চুপচাপ ওখানে গিয়ে বসো আমার স্ন্যাকস বানানো প্রায় হয়ে গেছে। (শায়লা বেগম)

অনি অসহায় মুখ করে বলে; এখানে থাকি না একটু মামনি প্লিয। ওখানে বসে বসে আমি খুব বোর হচ্ছিলাম বলেই তো রান্নাঘরে এসেছিলাম তোমার সাথে গল্প করতে।

শায়লা বেগম হালকা হেসে বলে; আচ্ছা ঠিক আছে।

অনি ফিক করে হেসে দিয়ে শায়লা বেগমকে জড়িয়ে ধরে। শায়লা বেগম আর সাবিনা বেগমের সাথে টুকটাক গল্প করে। হাতে হাতে জিনিস গুলো এগিয়ে দেয় অনি। শায়লা বেগম আর সাবিনা বেগম স্ন্যাকস বানানো শেষ করে রাতের খাবার বানানোর প্রস্তুতি নেয়।

এর মধ্যেই রান্নাঘরে রিশার আগমন ঘটে। সকলের সাথে রিশাও যোগ দেয়। একটু পর শায়লা বেগম রিশার হাতে স্ন্যাকস এর ট্রে পাঠিয়ে দেন। শায়লা বেগম, সাবিনা বেগম আর অনিও ড্রইংরুমে যায়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দের আসর জমে ওঠে। রিশা জোর করে মিথিলাকে ঘর থেকে বের করে আনে।সবার মন রক্ষার জন্য সেও সবার সাথে শামিল হয়। সবাই আনন্দে মজে ওঠে। এক কথায় বলতে গেলে খুব ভালো সময় কাটায় একে অপরের সাথে। অনির বেশ ভালো লাগে। ধীরে ধীরে এই পরিবারটা তার অভ্যেসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

—-

বিকেলবেলা হিমাদ্রী গুনগুনকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় গুনগুনের আবদার মেটাতে। সাথে নিরাকেও যেতে বলে। তবে তার গানের স্কুলের কিছু কাজ আছে বলে সে আর যেতে পারেনা রেহানা বেগমেরও শরীর খারাপ হওয়ায় তিনি যাননা। প্রত্যেকবার যখন হিমাদ্রী দেশে ফেরে গুনগুনকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়। গুনগুনও যেন অপেক্ষায় থাকে কবে তার চাচ্চু আসবে আর তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও গুনগুন মাঝে মাঝে ঘুরতে যায় তবে চাচ্চুর সাথে যেতে সে বেশি আগ্রহী। হিমাদ্রী ও গুনগুনকে চোখে হারায়। তাকে সব সময় মাথায় করে রাখে। গুনগুনের কোন কিছু মুখ ফুটে চাইতে দেরি হয় হিমাদ্রীর তা পূরণ করতে দেরী হয় না।

গুনগুনকে নিয়ে হিমাদ্রী শপিং মকে যায়। গাড়ি থেকে নামতেই ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্ক্রিনে রাফির নামটা দেখে হিমাদ্রী এক হাত দিয়ে ফোন কানে ধরে অপর হাত দিয়ে গুনগুনের হাতটা মুঠোয় নিয়ে নেয়। শপিং মলের দিকে পা বাড়ায়। গেট ক্রস করে ভেতরে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে হিমাদ্রীর হাতের ফোনটা পড়ে যায়। হিমাদ্রী রাগত দৃষ্টি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকায়। হিমাদ্রী কিছুটা অবাক হয়ে যায়। হিমাদ্রী কিছু বলার আগেই গুনগুন তার কোমল হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সামনের মানুষটাকে হাসিমুখে জড়িয়ে ধরে। গুনগুনকে কোলে তুলে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here