অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_০৭

0
7998

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_০৭

হাসপাতালের পরিবেশটা কিছুটা থমথমে নীরব হয়ে গেছে।সোফায় বসে ঝিমুচ্ছিল অনি। হাসপাতালটা একেবারে নির্জন জনমানবহীন হয়ে পড়েনি এখনও দু একজনের আনাগোনা চলছে হাসপাতালের করিডোর দিয়ে। স্ট্রেচার টানার শব্দ হচ্ছে।কেবিনের বাইরে দিয়ে ধপ ধপ করে পা ফেলার আওয়াজ জোরালোভাবে অনির কানে প্রবেশ করছে।অনি ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখে ১২টা বেজে ১০ মিনিট। অজানা কারণে অনি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।রিশাদের ঘুমের অসুবিধা হচ্ছিল দেখে অনি লাইট অফ করে ডীম লাইট জ্বালিয়ে রাখে।ডীম লাইটের সোনালি আলোয় অনির মুখেও সোনালি আভা ফুটে উঠেছে।
ভয় পেয়ে সোফার এক কোণায় জড়সড় হয়ে বসে পড়ে।
রায়হান সাহেবকে জোর করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় অনি।সে এখন তার এই কাজের জন্য মনে মনে নিজেকে একশটা কথা শোনাচ্ছে।রায়হান সাহেব থাকলে হয়ত তাকে এতো ভয় পেতে হত না।

অনি এখন মনে মনে রিশাদকেও কথা শুনাতে থাকে।এই ব্যক্তিটার জন্য তাকে এতো কষ্ট করতে হচ্ছে। সে হতাশ হয়ে রিশাদের দিকে তাকায়।

কেবিনের বাইরে ঠাস করে কিছু একটা পরার শব্দে অনি ভয়ে কেঁপে ওঠে।সে এক লাফে সোফা থেকে উঠে রিশাদের পাশে গিয়ে গুটিমুটি হয়ে বসে পড়ে। যত দোয়া দরুদ জানত সব পড়ে বুকে ফুঁ দেয় অনি। ভয়, বিরক্তি, অস্বস্তি সব কিছু মিলে খুব বাজে একটা অনুভূতি হয় অনির।এই বাজে অনুভূতির কি নাম তা অনির জানা নেই। পৃথিবীর কোন ডিকশনারিতেই বোধ হয় অনি তার এই বাজে অনুভূতির নাম খুঁজে পাবেনা। তবে এসময় তার অসম্ভব রকম খারাপ অবস্থা।শিকারির ফাদেঁ পা দেয়া হরিণীও বোধ হয় এ ধরনের অনুভূতির অনুভব করে নি। চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ যবুথবু হয়ে বসে থাকে অনি।মুখটা তার হাড়ির মত হয়ে যায়। এসময় তার পেটে রাজ্যের ক্ষুধা নামে।দুপুর থেকে এককাপ কফি ছাড়া তার পেটে কিছু পরেনি।এই মূহুর্তে তার মনে হচ্ছে সামনে থাকা ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে ফেলে দিতে। এমন অদ্ভুত ইচ্ছের কথা ভেবে সে নিজের উপর বিরক্ত হয়।নিজেকে সংযত করে নিয়ে সে আগের মত করেই বসে থাকে।

আশ্চর্যজনকভাবে এত উদ্ভট কল্পনার মধ্যে দিয়ে তার ভয়টা দূর হয়ে গেছে।অনির মনে হচ্ছে পেটের ভেতরের নাড়িভুঁড়ি গুলো পেটের এপাশ থেকে অপর পাশে দৌড়ে বেড়াচ্ছে যেকোন মূহুর্তে বাইরে বেড়িয়ে আসবে। ক্ষুধার জন্য তার ঘুম আসছে না এখন।তাতেও তার বিরক্তির শেষ নেই।তবে এই মুহুর্তে সে চাইছেও না যে তার ঘুম ধরুক। তাই একদিক থেকে ভালোই হয়েছে।অনি বেড থেকে নেমে বোতলের মুখ খুলে বোতলের সব পানি ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।তারপর সে আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসে। এবার তার একটু আরাম লাগছে।

গভীর রাতে হাতের উপর ভারী কিছু অনুভব করে রিশাদের ঘুমটা ভেঙে যায়।ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে তার হাতের উপর মাথা নুইয়ে শুয়ে আছে।প্রথমে রিশাদ বুঝতে পারে না।পরক্ষণেই তার মনে পড়ে রাতে অনি তার সাথে ছিল।
অনির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে সোনালি আলো তার মুখে পড়ছে।আলোয় ডায়মন্ড এর ছোট্ট নাকফুলটা চকচক করছে।এতে করে অনির সৌন্দর্য আগের তুলনায় আরো বেড়ে গেছে।তাকে দেখতে রূপকথার কোন রাজকন্যার থেকে কম মনে হচ্ছে না।সে যেন কোন ঘুমন্তপুরীর এক ঘুমন্ত রাজকন্যা।ঘুমের মাঝেও অনির বিরক্তি ভাবটা স্পষ্ট ফুটে উঠছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে কপালটা কুঁচকে গেছে। হিজাবটা পুরোপুরিভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে।একগুচ্ছ চুল তার চোখের সামনে এসে পড়েছে।ফ্যানের বাতাসে চুলগুলো হালকা উড়ছে।যার জন্যই অনি ঘুমের ঘোরেও বিরক্ত হচ্ছে।সে চাইছিল অনির চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে।এক হাতের উপর অনি মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আরেক হাতে প্লাস্টার করা তাই রিশাদ তার ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখে।
অনির সোনালি মুখচ্ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিশাদ।তার স্থির দৃষ্টি অনির উপর থেকে সড়ছে না।মস্তিষ্ক তাকে বার বার জানান দিচ্ছে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে।অজানা আকর্ষণ তাকা বার বার বাঁধা দিচ্ছে। ঘুমের ঘোরে অনি রিশাদের হাত আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রিশাদ তার হাতটা নড়াতে পারছে না।

কিছুক্ষণ পর ফজরের আযানের শব্দে অনি সজাগ হয়।অনিকে সজাগ হতে দেখে রিশাদ দুচোখ বুজে ঘুমিয়ে থাকার অভিনয় করে। অনি ঘুম ঘুম চোখে তাকায়।রিশাদের হাত নিজের হাতের মধ্যে দেখে সে ভূত দেখার মতো চমকে যায়। দ্রুতগতিতে সে হাতটা সরিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।সবকিছু বুঝে উঠতে তার দুমিনিট সময় লাগে।ঘুমের ঘোরে সে রিশাদের হাতের উপর ঢলে পরে। এরকম কাজ করায় অনি মনে মনে বেশ লজ্জায় পড়ে যায়।লজ্জায় তার মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে।সে তার হিজাবটা ঠিকঠাক করে নেয়।রিশাদের উপর উপুড় হয়ে সে বোঝার চেষ্টা করছে সে ঘুমিয়ে আছে কিনা। অনি রিশাদকে চোখ বুজে থাকতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পায়।সে বিড়বিড় করে বলে;
যাক বাবা এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। ভাগ্যিস উনি জাগা পাননি। উনি যদি একবার জেগে যেতেন তাহলে কি এক অস্বস্তিকর ব্যাপার হত।লজ্জায় আমি আর ওনার সামনেই দাঁড়াতে পারতাম না।ভাবতেই সে অসহায় ভঙ্গিতে রিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

অনির কথাগুলো শুনে রিশাদের দমফাটা হাসি পাচ্ছে।সে খুব কষ্ট করে তার হাসি আটকে রেখেছে। অনি অযু করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে গেলে রিশাদ এবার হালকা শব্দ করে হেসে দেয়।
দুই দিন পর রিশাদ হেসেছে তাও অনির জন্য।ভাবতেই রিশাদ কিছুটা অবাক হয়। সে আর এই বিষয়ে মাথা ঘামায় না।মনে মনে ভাবে অনির থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

কিছুক্ষণ পর অনি অযু করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।সে জায়নামাজ বিছিয়ে নামায শেষ করে নেয়। জায়নামাজটা অনি ব্যাগে গুছিয়ে রেখে দিয়ে রিশাদের দিকে তাকায়।
রিশাদ তখন ঘুমিয়ে ছিল।

অনি এখন কি করবে ভেবে পায় না সকাল হতে এখনও অনেক দেরি আছে।বাসায় থাকলে না হয় এখন বাগানে যেতে পারত।এখানে সে এরকম কিছু কল্পনা করতে পারছে না।তাই সে সোফায় কিছুক্ষণ বসে থাকে। ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে।কিছুক্ষণ ফোন টিপেও তার সময় কাটছে না। সে মুখটা গোমড়া করে বসে থাকে। তারপর সে উঠে গিয়ে দরজাটা অল্প ফাঁক করে মাথাটা বের করে বাইরের দিকে উঁকি দেয়।ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখে নেয়।তেমন কাউকে দেখতে পায়না।দূরে সিঁড়ির পাশে একজন ইউনিফর্ম পরিহিত ওয়ার্ড বয় কে হাতে কিছু একটা ট্রে নিয়ে নামতে দেখে।সে পা টিপে টিপে করিডোর দিয়ে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে।

অনি কিছুক্ষণ উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটাহাঁটি করে।এসময় সে হাসপাতালে অনেকগুলো ফুলের গাছ দেখতে পায়।তার কিছু কিছু ফুল চিনলেও বেশির ভাগই ছিল অচেনা। ভোরবেলার ঘটনাটা নিয়ে অনি এখনও মনে মনে বেশ বিরক্ত তাই সে এখন ফুলগুলোর প্রতি কোন আকর্ষণ অনুভব করছেনা।শুধু একবার করে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে।
একটু পর অনি রিশাদের কেবিনের দিকে যায়।

কেবিনে ঢোকার আগেই অনির রায়হান সাহেব এর সাথে দেখা হয়ে যায়। তিনি ভোরবেলাই বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন ছেলে কাছে যাবার উদ্দেশ্যে। অনি রায়হান সাহেবকে দেখে মনে মনে আনন্দ পায়।তবে সে তা মুখে প্রকাশ না করে বিনীতভাবে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে। রায়হান সাহেবকে অনির বেশ ভালো লাগে।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অনিকে অনেক আপন করে নিয়েছে।সব সময় মা ডেকে কথা বলে। অবশ্য প্রথম পরিচয় থেকেই রায়হান সাহেব অনিকে মা বলে সম্বোধন করেন। শুরু থেকেই রায়হান সাহেবের অমায়িকতার জন্য অনির বেশ মনে ধরেছে।

রায়হান সাহেব আর অনি একসাথে রিশাদের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়।দরজা খোলার শব্দে রিশাদের ঘুম ভেঙে যায়। রায়হান সাহেব খাবারের ব্যাগ গুলো সাইড টেবিলের উপর রেখে রিশাদের পাশে বসে পড়েন।অনিকেও তিনি তার পাশে বসতে বললে সে কোন কথা না বলে বসে পরে। রায়হান সাহেব রিশাদের সাথে টুকটাক কথা বলে।অনি অলসভাবে বসে থেকে তাদের কথাগুলো শুনতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর একজন নার্স ভেতরে আসেন। তিনি অনিকে জিজ্ঞাসা করেন রিশাদকে ঠিকমতো ওষুধ গুলো খাইয়েছে কিনা না।
অনি তাকে বলে ঠিকঠাক মতো ওষুধ খাইয়েছে। এরপর নার্স তাকে আরো কিছু ওষুধ বুঝিয়ে দিয়ে যায়। তারপর বলে;
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে ওনাকে চেকাপ করবেন।সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজকেই ওনাকে রিলিজ দেয়া হবে। আপনি বাসায় ওনাকে নিয়মিত ওষুধ গুলো খাওয়াবেন।তাহলে উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।আমি এখন আসিছি।বলেই তিনি বেরিয়ে যান।

রিশাদ তার বাবা কে বলে তাকে ধরে উঠাতে।রায়হান সাহেব তাকে ধরে উঠে বসান। এরপর রায়হান সাহেবের কাঁধে ভর দিয়ে রিশাদ উঠতে গেলে কিছুটা ব্যথা পায়।ব্যথায় সে আহ শব্দ করে ওঠে।অনি দ্রুতগতিতে রিশাদের কাছে রিশাদের এক হাত তার কাঁধে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে রিশাদের কোমড় চেপে ধরে। খুব দ্রুত সবকিছু হওয়ায় প্রথমে বুঝতে পারেনি সে কি করছে।তার হুশ হতেই সে কিছুটা অস্বস্তিতে পরে এভাবে রিশাদকে চেপে ধরায়।এমন হুট হাট কাণ্ড অনির সাথে প্রায়ই ঘটছে।সে যেন মাঝে মাঝে নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে।সবকিছু যেন আপনা আপনিই হচ্ছে।অনি এখন মনে মনে নিজেকে হাজারটা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে এখন সে চাইলেও রিশাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছেনা রায়হান সাহেব সাথে থাকায়। খুব বাজে ভাবে ফেঁসেছে অনি এখন। মনে মনে সে খুব অসহায়বোধ করে। সেটা রায়হান সাহেব না বুঝলেও রিশাদ ভালোভাবেই বুঝতে পারে অনির অবস্থাটা।সে নিজেও বেশ অস্বস্তি তে আছে। তবে এখন তার জন্য কোন মানুষটার কাধে ভর দিয়েছে সেটা দেখার চেয়ে বেশি জরুরি ওয়াশরুমে যাওয়া না হলে তাকে এর চেয়েও আরো বেশি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরতে হবে।তাই সে সাতপাঁচ না ভেবে অনির কাঁধে নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে যায়।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে রিশাদ।রায়হান সাহেব তখন বেরিয়ে ডাক্তারের কেবিনের দিকে যায়। রিশাদ এক হাতে তোয়ালে দিয়ে মুখ মোছার চেষ্টা করে বার বার ব্যর্থ হয়।অনি কিছুটা দূর থেকে রিশাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে।রিশাদের থুতনি বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানি পড়ছে।সামনের সিল্কি চুলগুলো ভিজে কপালের সাথে লেগে আছে।এভাবে রিশাদের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকায় অনি মনে মনে বিব্রত হয়। একটু পর সে রিশাদের হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে গিয়ে যত্নের সাথে তার মুখটা মুছে দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দেয়।এবার অনি যা করেছে সেটা নিজের অজান্তেই করে ফেলেনি। সে সজ্ঞানে করেছে নিজের কর্তব্যবোধ থেকে।যে পরিস্থিতিতেই হোক না কেন রিশাদের সাথে তার বিয়েটা হয়েছে।শরিয়ত মোতাবেক এখন সে রিশাদের স্ত্রী। একজন আদর্শ স্ত্রী হিসেবে তার কর্তব্য অসুস্থ স্বামীর সেবাযত্ন করা তাই সে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে তার দায়িত্ব গুলো পালন করার।

মুখ মুছে দিয়ে অনি রিশাদকে ধরে ভালোভাবে বসিয়ে দেয়। একটু পর সে রিশাদের জন্য খাবার সাজিয়ে আনে।শায়লা বেগম অসুস্থ শরীর নিয়ে ভোরবেলা উঠে ছেলের জন্য খাবার রান্না করে পাঠান। অনি রিশাদ এর সামনে স্যুপের বাটিটা নিয়ে রিশাদের সামনে বসে পরে।সে রিশাদের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে একবার তার হাতের দিকে তাকায়। রিশাদ অনির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।

রিশাদ বলে; আমাকে দিন আমি একা খেতে পারব।আমার জন্য আপনাকে এত কষ্ট করতে হবে না।

অনি ঠান্ডা গলায় বলে;আমি কি আপনাকে বলেছি যে আপনি একা খেতে পারবেন না। তবে এই মুহূর্তে আপনাকে একা খেতে হবে না।কিছুদিন পর থেকে একা খাবেন কেও নিষেধ করবে না।এখন আমার হাত থেকে খেয়ে নিন।তবে আপনি যদি না খেতে চান তাহলেও এখন আপনাকে আমার হাতে খেতে হবে।নো অপশন।

অনির এমন সোজা সাপটা কথা শুনে রিশাদ কিছুটা অবাক হয়ে যায়। সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নেয়। খাওয়ার সময় আর একটা কথাও বলে না রিশাদ।খাওয়া শেষ করে অঞ্জ রিশাদকে তার মেডিসিন গুলো খাইয়ে দেয়।এরপর অনি নিজেও একটা স্যান্ডউইচ খেয়ে নেয়।শায়লা বেগমের বানানো স্যান্ডউইচ অনির বেশ ভালো লাগে।দেশি স্বাদে বিদেশি খাবার।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আংকেল কে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করেন রায়হান সাহেব।সাথে ছিলেন একজন নার্স। ডাক্তার আংকেল রিশাদের মাথায় ব্যান্ডেজ টা খুলে দিয়ে কাটা জায়গায় নরমাল টেপ লাগিয়ে দেয়।
এরপর তিনি বলেন; নাউ ইউ আর ওকে মাই সান।আজকে তুমি বাসায় যেতে পারবে।দুপুরেই তোমাকে ডিসচার্জ করে দেব।তবে তোমার হাত আর পা ঠিক হতে মাসখানেক সময় লাগবে। বাট ডোন্ট ওয়ারি।

রিশাদ ডাক্তার আংকেলের কথার জবাবে শুধু একটা মুচকি হাসি দেয়। উনি অনির সাথেও টুকটাক কথা বলে বেরিয়ে যান।

এরপর দুপুরের দিকে রিশাদকে ছেড়ে দেওয়া হলে রায়হান সাহেব অনি ও রিশাদকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেন।রায়হান সাহেব বসেছেন সামনের সিটে।পেছনের সিটে অনি ও রিশাদ একটু দূরত্ব রেখে পাশাপাশি বসেছে। রিশাদকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারায় রায়হান সাহেব এর মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। মনে মনে তার অপরাধবোধ কমে যায়।তবে ছেলের মুখের সেই পুরনো হাসিটা তিনি আর দেখতে পাননা ভেবে তার মনে হালকা খারাপ লাগা কাজ করে। তার সদা হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল ছেলেটার মখের মলিনতা তিনি মেনে নিতে পারেন না। তবে তিনি বিশ্বাস করেন একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। যেদিন সব কিছু ঠিক হবে সেদিন তিনি তার অপরাধবোধ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারবেন।

চলবে……………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here