অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_০৬

0
8294

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_০৬

কাল থেকে না খেয়ে থাকায় অনি বেশ ক্লান্তবোধ করে।সোফায় দুপাতা তুলে হেলান দিয়ে বসে দুচোখ বুজে ফেলে অনি।তার চোখের কোণা দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরে।
কিছুক্ষণ পর আযানের শব্দ শুনে অনির ধ্যান ভাঙে। অনি উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে বেরিয়ে আসে। রিশাদের বেডের পাশেই অনি ব্যাগ থেকে মিনি জায়নামাজ বের করে ফ্লোরে বিছিয়ে দেয়। ইংল্যান্ড থাকাকালীন সময়ে সে এই জায়নামাজ টা কিনেছিল।তারপর থেকেই সে এটা তার ব্যাগে রাখে। ইংল্যান্ডে সব জায়গায় নামাজ পড়ার বিশেষ সুযোগ সুবিধা নেই।সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনিকে ভার্সিটিতে ক্লাস করায় তার নামাজ কাজা হত। তাই সে একটা মিনি জায়নামাজ ব্যাগে রাখত। ক্লাস ব্রেকে লেডিস রেস্টরুমে সে নামাজ আদায় করে নিত।অনি ব্রিটিশদের দেশে বড় হলেও সেখানকার কালচারে সে গা ভাসিয়ে দেয়নি। জাহানারা বেগমের ছত্রছায়ায় থাকার ফলে সে সব সময় ইসলামিক শিক্ষার ব্যাপারে বেশ সচেতন হয়।শহরের বেপরোয়া উশ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন তার কখনোই পছন্দ ছিল না।সে বরাবরই এসব থেকে দূরে থাকত।

অনি একটু সময় নিয়ে যোহরের নামাজ আদায় করে নেয়। নামাজ শেষ করে সে আবার সোফায় পা তুলে বসে পরে।সোফায় গা এলিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই তার দুচোখে তন্দ্রাভাব চলে আসে।

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেয়ে অনির তন্দ্রাভাব কেটে যায়। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেন অনামিকা শেখ আর জাহানারা বেগম।তাদের আগমনে অনি সোফার উপর থেকে পা নামিয়ে সোজা হয়ে বসে। অনামিকা শেখ রিশাদের কাছে গিয়ে দেখতে পান সে ঘুমোচ্ছে তাই তিনি কোন কথা বলেন না। রিশাদের করুণ অবস্থা দেখে অনামিকা শেখের চোখের কোণায় পানি জমে।দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলে তিনি তৎক্ষণাৎ তা মুছে নেন।
জাহানারা বেগম অনির পাশে বসে পরেন। অনিকে বলেন;
কাল থেকে তো তেমন কিছু খাসনি। এখন একটু কিছু খেয়ে নে দিদিভাই।না হলে তোর শরীর খারাপ করবে কিন্তু।
অনির এই মূহুর্তে কথা বলতে বেশ বিরক্ত লাগছে।তার উপর বোনাস হিসেবে মাথা ব্যথা শুরু হয়। সে এখন একটু একা থাকতে চাচ্ছে। তবে চাইলেই সে এখন এই মানুষগুলোকে এখান থেকে বের করে দিতে পারে না।অনি মনে মনে চাইছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে;তোমরা এখান থেকে চলে যাও।প্লিয আমাকে একা থাকতে দাও।কিন্তু সে এরকম কিছুই করতে পারবে না ভেবে নিজের ইচ্ছেটাকে নিজের মনের ভেতরেই দমিয়ে রাখে।আজকাল সবকিছুতেই সে বড্ড বেশি বিরক্ত হচ্ছে যার ফলে তার মন মেজাজও ভালো থাকেনা।সে এখন নিজের উপরেই বিরক্ত হচ্ছে।

জাহানার বেগম অনির কোন জবাব না পেয়ে পুনরায় বলেন;কিরে কথা বলছিস না কেন।কি হয়েছে বল তো। তোর শরীর ঠিক আছে তো??নিশ্চয় শরীর খারাপ লাগছে তাইনা।না খেয়ে থাকলে তো শরীর খারাপ লাগবেই।আমার কথা তো কেউ আমলে নেয় না।

অনি এবার বিরক্তির সাথে উত্তর দেয়; উহু… শরীর খারাপ লাগছেনা আমার আমি একদম ঠিক আছি।তুমি শুধু শুধু এত বেশি ভাবছো।কিচ্ছু হয়নি আমার।

-আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম কিছু হয়নি।কিন্তু যেভাবে না খেয়ে আছিস কিছু হতে বেশি সময় লাগবে না।তাই চুপচাপ আমার কথা শোন আর খেয়ে নে।

অনি জাহানারা বেগমের সাথে পেরে ওঠে না। জাহানারা বেগম তাকে কয়েক।লোকমা খাইয়ে দেয়।সে এক প্রকার বাধ্য হয়েই খেয়ে নেয়।অনামিকা শেখ রিশাদের বেডের পাশে বসে জাহানারা বেগম আর অনির কার্যক্রম গুলো দেখছিলেন।জাহানারা বেগমের এভাবে যত্ন নিয়ে অনিকে খাইয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখে অনামিকার চোখে পানি আসে।সবার অগোচরে সে তা লুকিয়ে ফেলে। ভেতরে ভেতরে অপরাধবোধের অনুতাপে দগ্ধ হতে থাকেন।নিজেকে সংযত করে নেন অনামিকা শেখ।

জাহানারা বেগম অনির সাথে টুকটাক কথা বলার মধ্যেই একজন নার্স। দরজা ভেদ করে সে ভেতরে প্রবেশ করে রিশাদের মেডিসিন গুলো চেক করে নেয়

তারপর বলে;একটু পর ডক্টর আসবেন চেকাপের জন্য।এত জন থাকা যাবে না।আপনাদের মধ্যে যেকোন একজন থাকুন।প্লিয।বলেই নার্স বেরিয়ে যায়।
জাহানার বেগম অনিকে রেখে অনামিকা শেখকে নিয়ে বেরিয়ে যান।কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন বয়স্ক ডক্টর কেবিনে প্রবেশ করেন।ডক্টর রিশাদের পালস চেক করে অনিকে উদ্দেশ্য করে বলেন;পেশেন্ট কি ঘুম থেকে উঠেছিল একবারও??

অনি জবাবে ছোট্ট করে হ্যাঁ বলে।ডক্টর অনির দিকে তাকান।অনিকে পুনরায় বলেঃতুমি কি রিশাদের ওয়াইফ??
অনি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
এরপর পুনরায় বলেন;
রিশাদের বাবার কাছ থেকে আমি সবটাই শুনেছি।আমি জানিনা সৃষ্টিকর্তা তোমাদের নসিবে কি রেখেছেন।রিশাদকে আমি জন্মের পর থেকেই চিনি।ছেলেটার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকত।ইমারজেন্সি থাকায় আমি তোমাদের বিয়েতে এটেন্ড করতে পারিনি। রাতে রায়হানের ফোন পেয়েই আমি ছুটে আসি হসপিটালে। তোমার শ্বশুর আমার স্কুল জীবনের বন্ধু ছিল।সেই সূত্রেই আমি রিশাদকে চিনি। দেখো মা তুমি আমার মেয়ের মতোই।রিশাদ আমাকে ডাক্তার আংকেল বলে তুমিও আমাকে তাই ডেকো।
আরেকটা কথা রিশাদ শারীরিক ভাবে যতটা না অসুস্থ তার চেয়েও বেশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।সে মানসিক ভাবে সুস্থ হতে না পারলে পৃথিবীর কোন ডাক্তারই তাকে সুস্থ করে তুলতে পারবে না।এই সময়ে রিশাদের মানসিকভাবে সুস্থ থাকা বেশি জরুরি।তুমি বেশ বুদ্ধিমতী বলেই আমি মনে করি।তাই তোমাকে আমার অনুরোধ তোমার সহায়তা ছাড়া রিশাদ এই ট্রমা টা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারবেনা।স্ত্রী হিসেবে না পারলেও বন্ধু হিসেবে রিশাদের পাশে থেকো।শুরুটা বন্ধুত্বের মাধ্যমে হলে তোমাদের এই অগোছালো সম্পর্ক নতুনরূপ লাভ করবে। বন্ধুত্বের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়।

ডাক্তারনআংকেল এর কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে অনি।সে মনে মনে ভাবে তার উচিত এই সম্পর্ককে একটা সুযোগ দেয়া। পরমূহুর্তেই সে অদ্রির কথা ভেবে পিছিয়ে যায়।তবে সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় রিশাদ কে সুস্থ করে তোলার।ডাক্তার আংকেল এর কথায় সম্মতি জানিয়ে সে রিশাদের পাশে বন্ধু হিসেবে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।ডাক্তার আংকেলকে বলে;
আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব বন্ধু হিসেবে সব সময় ওনার পাশে থাকার।ব্যাপার টা আমার পক্ষেও খুব একটা সহজ নয়।যে মানুষটা কে উনি ভালোবাসেন তাকে আমিও অনেক বেশি ভালোবাসি।তার জায়গায় আমি নিজেকে কখনোই বসাতে পারব না। তবে এই মুহূর্তে আমি ওনাকে ছেড়ে যেতেও পারিনা।
-চিন্তা করো না মা।একটু সময় দাও সব ঠিক হয়ে যাবে।তবে এই মূহুর্তে রিশাদের সুস্থতা বেশু জরুরি। আল্লাহ তোমাদের জন্য অবশ্যই ভালো কিছু রেখেছেন।একটু ধৈর্য ধরো।(ডাক্তার আংকেল)

অনি মাথা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ উনি এখন কেমন আছেন??
উত্তরে ডাক্তার আংকেল বলেন; এখন আর কোন সমস্যা নেই।মাথায় কোন জোরালো আঘাত লাগেনি।তবে হাত আর পায়ের ফ্র‍্যাকচার টা সারতে একটু সময় লাগবে।সব ঠিকঠাক থাকলে কালই ডিসচার্জ করে দিতে পারি। বলেই তিনি অন্য পেশেন্ট দের দেখার জন্য বেরিয়ে যান।

অনি রিশাদের পাশে গিয়ে বসতেই রিশাদ কিছুটা নড়েচড়ে ওঠে তাই সে সেখানে না বসে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।করিডোরে আশরাফ শেখ রায়হান খানের মুখোমুখি হয়। রায়হান সাহেব অনির সাথে কথা বলে কেবিনে প্রবেশ করেন।

আশরাফ সাহেব লক্ষ্য করেন অনির চোখমুখ কেমন যেন শুকিয়ে গেছে।তিনি তার এই মেয়েটাকে খুব অল্প সময়ের জন্য কাছে পেলেও বিদেশে থাকাকালীন নিয়মিত তিনি যোগাযোগ করেছেন।প্রতিবছর অনির জন্মদিনে অনির কাছে ইংল্যান্ডে চলে যেতেন।অনামিকা শেখ কখনো তাকে এ বিষয়ে বাধা দেননি।হয়তো বা তিনিও মনে মনে বেশ খুশি হতেন।অনিকে আশরাফ শেখ অসম্ভব রকম ভালোবাসেন।অদ্রির মতো অনিও যেন তার চোখের মণি।মেয়েটাও তেমনি হয়েছে বাবাকে সব সময় চোখে হারায় সে।বসে কখনো মায়ের ভালোবাসা অনুভব করতে পারে নি তবে বাবা তাকে দিয়েছে সীমাহীন ভালোবাসা।
আশরাফ সাহেব মেয়ের দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বলেন;অনি মা কিছু খেয়েছিস?তোকে কেমন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
অনি বলে; না বাবা আমি একদম ঠিক আছি একটু আগেই আমাকে দিদা খাইয়ে দিয়েছে।কাল থেকে ঘুম কম হয়েছে তো তাই এমন মনে হচ্ছে।তুমি একদম চিন্তা করো না।
আশরাফ সাহেব অনির কথায় আস্বস্ত হলেও তিনি অনির জন্য চিন্তিত হন।মেয়েটা বড্ড চাপা স্বভাবের নিজের কষ্টগুলো কাউকে কখনো বুঝতে দেয় না।তাকে দেখে তার ভেতরে কি চলছে আঁচ করাও দুষ্কর।

আশরাফ সাহেব অনিকে নিয়ে হস্পিটালের ক্যান্টিনে গিয়ে দুকাপ কফি নিয়ে ফাঁকা জায়গায় বসেন। এই মূহুর্তে অনির এক কাপ কফির খুব দরকার ছিল।আশরাফ সাহেব অনির মনের কথা বুঝতে পেরেছে এটা ভেবে অনির চোখটা ভরে যায়।অনি তার বাবার থেকে যতই দূরে থাকুক না কেন তাদের মধ্যে ভালোবাসার কোন কমতি নেই।অনিও এক সময় চাইত স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে তবে অনামিকা শেখের অবহেলা গুলোর কারণে তার মনের সুপ্ত বাসনাগুলো অতলে তলিয়ে গেছে।

কফি খেতে খেতে বাবা মেয়ে মিলে টুকটাক গল্প করে। অনি তার বাবার সাথে যতক্ষণ ছিল বেশ হাশিখুশি ছিল।তা দেখে অনির বাবার মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। অনিকে হাসিখুশি দেখে আরো একজন ব্যক্তির মুখ খুশিতে চকচক করে ওঠে।
কফি খাওয়া শেষ করে অনিকে নিয়ে আশরাফ সাহেব রিশাদের কেবিনের দিকে যায়।
কেবিনে ঢুকেই অনি দেখতে পায় রিশাদের ঘুম ভেঙে গেছে; রায়হান সাহেব রিশাদের পাশে বসে তার সাথে দু একটা কথা বলছেন। তার চোখে জলের কণাগুলো চকচক করছে।অনিদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেখে তিনি নিজেকে সামলে নেন।

আশরাফ সাহেব ভেতরে ঢুকে রিশাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে;এখন কেমন আছো বাবা তুমি??
রিশাদ আস্তে করে আওয়াজ দেয়;ভালো আছি আংকেল।আপনি কেমন আছেন??
আশরাফ সাহেব রিশাদের কথার জবাব দিয়ে রায়হান সাহেবের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান।যাওয়ার আগে অনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যান।
এদিক ওদিক ঘুরতেই রিশাদের চোখ পড়ে অনির উপর।শুষ্ক চোখমুখ মলিন চাহনি কিছুটা এলোমেলো হিজাব হাতের সাথে ওড়না পেচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনি।তাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক রাত সে ঘুমায় নি তবে আশ্চর্যজনকভাবে তার চোখেমুখে একটা নূরানি ভাব।
অনির উপর চোখ পড়তেই রিশাদের মনে আগের দিনের ঘটনাটগুলো নাড়া দিয়ে ওঠে।অদ্রির কথা মনে হতেই তার মনের ভিতর অস্থিরতা শুরু হয়।তার বুকের ভেতর যেন চিন চিন ব্যথা অনুভব করে।সামলানোর চেষ্টা করেও সে চোখের অশ্রুগুলোকে বাধ মানাতে পারেনি। গাল বেয়ে বালিশের উপর পড়ে যা অনির নজর এড়ায়নি।রিশাদকে এভাবে দেখে অনি নিজেও কষ্ট পায়।

রিশাদ নিজেকে সামলে নিয়ে ধীর গলায় অনিকে বলে;অনন্যময়ী আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?? সমস্যা না থাকলে আপনি এখানে এসে বসতে পারেন।

অনি রিশাদের কথা শুনে তার পাশে বসে পরে।রিশাদ চোখ বন্ধ করে শান্ত হয়ে শুয়ে থাকে।তার মাথায় হালকা ব্যথা হচ্ছে।বাইরে থেকে তাকে শান্ত মনে হলেও তার মনের ভেতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে যা শুধু তার ভেতরেই সীমাব্ধ হয়ে আছে।
সন্ধ্যা হয়ে যায়।সূর্য পশ্চিম আকাশের বুকে হেলে পরে। রায়হান সাহেব গেছেন ডাক্তারের সাথে কথা বলতে। অনি আযান শুনে রিশাদের পাশ থেকে উঠে গিয়ে অযু করে আসে।ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে রিশাদের নজর সেদিকে যায়।সে অনির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে হিজাবে আবৃত অনি বেরিয়ে আসে।তার ফুল হাতা জামা কনুই অবধি উঠানো। অনির মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে যা দূর থেকে মুক্তোদানার মতো চকচক করছে।কপালের দিকে দু একটা চুল বেরিয়ে এসেছে যা পানিতে ভিজে কপালের সাথে লেপ্টে আছে। অমায়িক সৌন্দর্য তার চোখেমুখে ফুটে এসেছে।তাকে দেখে বেশ স্নিগ্ধ ও পবিত্র লাগছে। রিশাদের সাথে অনির যতবার দেখা হয়েছে ততবারই সে অনিকে দেখেছে হিজাবে আবৃত ফুল হাতা জামা। হিজাব ছাড়া সে অনিকে কখনো বাইরে বেরোতে দেয়নি। এমনকি তাদের বাসায় ও সে অনিকে পর্দা ছাড়া দেখেনি। এসব ব্যাপারে অনি বেশ সচেতন। পশ্চিমাদের দেশে থাকা সত্ত্বেও অনির মধ্যে তাদের কোন নেতিবাচক প্রভাব দেখতে না পেয়ে রিশাদ বেশ অবাক হয় তবে সে এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না তখন সে।

তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে অনি রিশাদের দিকে তাকায়।রিশাদকে এভাবে আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনির কিছুটা অস্বস্তিবোধ হয় সে রিশাদকে বলে;
আপনি কি কিছু বলবেন আমাকে?? আপনার কি কিছু লাগবে??
রিশাদ কিছুটা আমতা আমতা করে বলে;
না না কিছু লাগবে না।

অনি ভ্রু কুঁচকে তাকায় রিশাদের দিকে।অনিকে এভাবে তাকাতে দেখে রিশাদ অন্যদিকে ঘুরে যায়।সে নিজেও বেশ অস্বস্তিবোধ করছে এভাবে অনির দিকে তাকিয়ে থাকায়।তবে সে নিজের অজান্তেই অনির দিকে তাকিয়ে ছিল।

অনি কিছু না ভেবে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে বসে পরে।নামাজের মধ্যে সালাম ফিরিয়ে অনি দেখতে পায় রিশাদ বাম হাত দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।নামাজ শেষ করে সে রিশাদের কাছে গিয়ে গ্লাসটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে;
পানি খাবেন আমাকে বললেই হতো।আপনি ব্যথা হাত নিয়ে এভাবে কষ্ট করছিলেন কেন?
রিশাদ মলিন ভাবে বলে; আসলে আপনি নামাজ পড়ছিলেন তো তাই আরকি।
অনি রিশাদকে ধরে বসিয়ে দেয়। রিশাদকে ধরতে তার মধ্যে অনেক সংকোচবোধ কাজ করছিল। রিশাদের ও বেশ অস্বস্তি লাগছে তাই সে কিছুটা অসহায় ভাবে বসে থাকে।অনি রিশাদকে বসিয়ে রিশাদের হাতে পানির গ্লাসটা দেয়। রিশাদ বাম হাতে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেতে নিলে অনি রিশাদকে বাধা দিয়ে বলে;
বাম হাতে পানি খেতে নেই। ডান হাতে ৩ ঢোকে পানি খাওয়া সুন্নত।আপনি আমার হাত থেকেই পানিটা খেয়ে নিন। আপনার ডান হাতটাতো প্লাস্টার করা।
অনির এই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এতো গভীর ইসলামিক মন মানসিকতা দেখে রিশাদ অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।সে অনির হাত থেকে পানি খেয়ে তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে।
রিশাদের তাকানোয় অনি গ্লাসটা রেখে অন্যদিকে ঘুরে অযথা রিশাদের ওষুধপাতি নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে দেয়।
রিশাদ তার নিজের কর্মকান্ডে লজ্জায় পড়ে যায়।
ঠিক সেসময় রিশাদের বাবা ডাক্তার আংকেলকে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করে।
ডাক্তার আংকেল বলেন; হেই ইয়াং ম্যান হাউ আর ইউ ফিলিং নাও?
– আই এম ওকে নাও।বাট একটু পেইন আছে।(রিশাদ)
-ডোন্ট ওয়ারি। কিছুদিনের মধ্যেই তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবে।(ডাক্তার আংকেল)
রিশাদ জবাবে কিছু বলে না শুধু মুচকি হাসে।

ডাক্তার আংকেল অনির সাথেও টুকটাক কথা বলে বেরিয়ে যায়।রিশাদের বাবা রিশাদের মা শায়লা বেগম ও রিশার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেন।শায়লা বেগম ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে কেঁদে দেন।তারপর তিনি অনির সাথেও কথা বলেন।অনি তার সাথে বিনীত ভাবে কুশল বিনিময় করে তাকে রিশাদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে বলেন।অনির কথায় শায়লা বেগম কিছুটা শান্ত হন।আরো কিছুক্ষণ অনির সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেন।

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here