Mysterious Part 18

0
229

Mysterious
Part -18
Romoni

একজন ব্যাক্তি গার্ডেন এর মাঝামাঝি তায়াশার সামনের দিক থেকে পিছন দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে,পড়নে ব্ল্যাক জিন্স,আর রয়েল ব্লু জ্যাকেট।
জ্যাকেট এর সাথে থাকা হুডিটা পড়ে থাকার কারনে মুখ দেখা যাচ্ছে না, তাই বোঝা যাচ্ছে না কে সে?

হাতে একটা রিভলবার, রিভলবারটা তাক করে আছে সামনে থাকা এক ব্যাক্তির দিকে, সামনে থাকা সেই ব্যাক্তিটির মুখ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে না, কেনোনা তার মুখটা সম্পূর্ণ রক্তাক্ত।
আর সেই রক্ত মাখা মুখমন্ডল এর ব্যাক্তিটার ঠিক করে দাঁড়ানোর ক্ষমতা টুকুও নেই।

হঠাৎই করেই একসাথে কয়েকটা গুলি করার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে, এতোটা তীব্র শব্দের প্রখরতায় তায়াশা ভয়ে চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে ঘুরে যায়।

এরপর,কিছুক্ষণ পরে তায়াশা ফিরে আবার সামনের দিকে তাকায়।
আর তায়াশা দেখতে পায় সেই রক্তাক্ত ব্যাক্তিটি মাটিতে লুটিয়ে আছে, মাথার মাঝ বরাবর অংশ থেকে বাঁধাহীন ভাবে রক্ত ঝরছে।

হঠ্যাৎই চারিদিক কে যেনো নিস্তব্ধতার আবেশ এসে আবদ্ধ করে নিলো, জোনাক গুলো মিটমিট করে নিজের আলোর প্রতিফলন বিস্তার ঘটাতে লাগলো।
নিস্বদ্ধ পরিবেশটায় দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, আর তায়াশা অবাক চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।

তারপর সেই হুডি পরিহিত ব্যাক্তি গার্ডস দের হাতের ইশারায় বলে,এই লাশটাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে।
গার্ডসরাও তার কথা অনুযায়ী সেই লাশটাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
অতঃপর কিছুটা রহস্যের উন্মোচন করে সেই হুডি পরিহিত ব্যাক্তি তায়াশার দিকে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায় এবং হুডিটা ধীর গতিতে নামিয়ে দেয়।
তায়াশা বাকরুদ্ধ হয়ে সেই ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে আছে, তায়াশা নিজের চোখকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না।
একজন এর ঠিক কতোগুলো আড়ালকৃত মুখোশ থাকতে পারে,একজন নিজেকে ঠিক কতো প্রকারে উপস্থাপন করতে পারে এবং একজনের কতো গুলো অস্তিত্ব লুকায়িত থাকতে পারে?
এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর তায়াশার মস্তিষ্ক উদ্বিগ্ন হয়ে অনুসন্ধান করে চলেছে।

সেই ব্যাক্তিটি কিঞ্চিৎ বাঁকা হেঁসে বলে,আড়ালে অস্পষ্টতায় কেনো?
সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে বাঁধ কে টানলো?

সেই ব্যাক্তির কন্ঠ স্বর তায়াশার কর্নপাত হতেই তায়াশা বুঝতে পারো যে সেই ব্যাক্তির এই উক্তিদ্বয় তায়াশার উদ্দেশ্যই।
তারপর তায়াশা আড়াল থেকে ধীরে ধীরে সেই ব্যাক্তি সামনে এসে দাঁড়ায়।
একে অপরের চক্ষু কোনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে, দুজনের মস্তিষ্ক-ই ক্রোধেয় অনুভূতির জানান প্রদান করছে।
তবে দুজনের রাগ প্রকাশের কারন ভিন্ন ভিন্ন।

আর কতো গুলো মুখোশ এর আড়ালে নিজেকে আবৃত করে রেখেছেন?
আর কি নামে ডাকবো আপনাকে ইয়ান, আইহান নাকি S.R.?
তায়াশা কঠোর কন্ঠে প্রশ্ন করে।

আপনার যে নামে ডাকতে ভালো লাগবে। (S.R.)

–বিশ্ব কুখ্যাত আন্ডারওয়ার্ল্ড গ্যাংস্টার, যার খোঁজে সমস্ত বিশ্ব পুলিশ এবং গোয়েন্দা মরিয়া হয়ে উঠেছে, কিন্তু কেউ তার খোঁজ পায় নি।
অথচ সে এই সমাজের মধ্যেই নিজের আত্ম গোপন করে সমাজের মানুষগুলোর সাথে মিশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কেনো করছেন এসব?
মানুষ গুলোকে নৃশংস ভাবে কেনো হত্যা করছেন?
কি ক্ষতি করছে তারা আপনার?(তায়াশা)

–সেই সব আপনার না জানলেও চলবে, শুধু এই টুকু জেনে রাখুন, আপনাকে কেউ আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইলে বা আপনার কোনো ক্ষতি করতে চাইলে তাকে আমি ভয়ঙ্কর মৃত্যু উপহার দেবো, আর সেই ক্ষতিটা যদি আপনার মৃত্যু হয় তাহলে তো তার মৃত্যু এতোটাই জঘন্য হবে, যা সে ব্যাক্তির কল্পনারও অধিক। (S.R.)

–তাহলে ইফানকে কেনো ছেড়ে দিলেন?
ওকে তো আরো আগে মেরে ফেলার কথা ছিলো আপনার। (তায়াশা)

ইয়ান তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বলে, ইচ্ছে এবং উদ্দেশ্য তো তেমনই ছিলো, কিন্তু এক জনের কথা ভেবে ওকে আর মারতে পারিনি,আর সে হলেন আপনি।

আমি খুব ভালো করেই জানি ইফানকে আপনি অনেক বেশিই ভালোবাসেন, আর ওর কিছু হয়ে গেলে আপনি নিজেকে সামলাতে পারতেন না।
যদিও এতোটা ভালোসার পরেও ইফান আপনার সেই ভালোবাসার মূল্য দিতে পারে নি, তবুও আপনি ইফানকে ছাড়া এক একটা মূহুর্ত কিভাবে কাটান তা আমার অজানা নয়।
তাই তাকে এখনো জীবিত রেখেছি, অন্তত এটা ভেবে তো আপনি স্বস্তিতে থাকবেন যে, ইফান যেখানেই আছে অথবা থাকবে বেঁচে আছে।

ইয়ান কথা গুলো বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আর তায়াশাও আর কিছু না বলে সেখান থেকে নিজের ঘরে চলে যায়।
আর ইয়ান গিয়ে গার্ডেন এ থাকা একটা বেঞ্চ এর উপর বসে পড়ে।

ইয়ান তায়াশার বলা একটা কথা মনে করে আনমনেই হেসে বলে,
“বিশ্ব কুখ্যাত আন্ডারওয়ার্ল্ড গ্যাংস্টার”
সেটা তো সমাজ মনে করে, আমি কুখ্যাত গ্যাংস্টার।
যে নির্মম নৃশংস ভাবে হত্যাকান্ড ঘটায়, তবে এটা কি আসলেই সত্যি?
যারা সমাজের আর নিরীহ মানুষগুলোর ক্ষতি করে আমি তো তাদেরই সমাজ এবং পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে দেই, যেনো তারা আর কারোর ক্ষতি করতে না পারে।

আর যারা তোমায় আমার থেকে আলাদা করতে চাইবে বা তোমার ক্ষতি করতে চাইবে তাদেরকে আমি এই পৃথিবীতে থাকতে দেবো না।
যদিও তাদের মেরে ফেলাটা অন্যায়, তবুও আমি সেই অন্যায়টা করতে রাজি।
হয়তো বা আমার পথটা ভুল, তবে আমার ভালোবাসাটা মিথ্যা নয়।

ইয়ান কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে সেখানেই বসে থাকে।

তায়াশা ঘরে গিয়ে পুরো ঘর অন্ধকার করে বসে আছে, চোখ কর্নিয়ায় জমানো জলধারা অবাধ্যতাকে পরম যত্নে আগলে রেখেছে এই মুহুর্তে।
যাকে ভালোবেসে আজ এই চোখ ভিজেছে,তারই স্পর্শ বিহীন এই অশ্রুসিক্ত অক্ষি।
আর যার প্রতি কোনো অনুভূতিই নেই সে কিনা তায়াশার প্রতিটা অশ্রু ফোঁটাকে অনুভব করছে।

এই বিরহ কাতর রাএিদ্বয় আজ নির্ঘুম ছোঁয়ায় পালিত হতে থাকে, দুই ক্লেশ সহ্যায়মান এর।

ইয়ান কিছুক্ষণ সেখানে বসে থেকে সেখান থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে আসে।
তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে নিজের পায়ের গোড়ালির থেকে কিছুটা উপরে বাঁধানো থাকা নাইফটা বের করে এক হাতে নিয়ে, অন্য হাতের আঙুলে আলতো স্পর্শে গভীর ভাবে চালিয়ে দেয়।

রক্তিম রক্ত বিন্দুদ্বয় গুলো এক দু ফোঁটা করে নিচে গড়িয়ে পড়ছে,এরপর ইয়ান নিজের গলায় থাকা কিং লকেটটা বের করে নিজের মুখোমুখি তুলে ধরে, আর কাটা আঙুলটা লকেটটার উপর এনে স্থির রাখে।
আঙুল থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত ফোঁটা এসে পড়ছে লকেটটার উপর।
লকেট বরাবর লকেটের অপর পার্শ্বে স্পষ্ট রয়েছে অর্ধ চন্দ্রিমা।
সেই চন্দ্রিমার জোছনা এসে আলোকিত করে দিয়ে যাচ্ছে সেই কিং লকেটটাকে, অগ্নি শিখার ন্যায় জ্বলন্ত লকেটটার জোত্যি এবং অর্ধ চন্দ্রিমার জোছনার মিশ্রণ এ,গাছে উল্টো ভাবে ঝুলন্ত বাদুড় এর ঝাঁক গুলো উড়ে এসে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আর বিশাল আকার ধারন করতে থাকে।

একপর্যায়ে বাদুড় গুলো নিজের আসল রুপ অর্থাৎ ভ্যাম্পায়ার অনীক রুপ এ উড়ন্ত অবস্থায়রত ভাবে নিজেদের প্রতিস্থাপন করে।
ইয়ানের ধরে থাকা লকেটটার জোত্যি সেই অনীকদের লকেট স্পর্শ করতেই তাদের লকেটগুলোর থেকে উওপ্ত অগ্নি ধারা বইতে থাকে।
অগ্নিরাশি দ্বয় লকেট থেকে কিছুটা নিচ অব্ধি গড়িয়ে পড়ে নিমিষেই মিলিয়ে যাচ্ছে।

আর উড়ন্ত সেই ভ্যম্পায়ার ঝাঁক দুই হাত মেলে দিয়ে সেই অর্ধ চন্দ্রিমার আলোক জোছনা উপভোগ করতে ব্যাস্ত, আর ইয়ান চোখ বন্ধ করে আছে, ইয়ানের ঠোঁটের কোনে ঝুলে আছে এক বিষাদ সম্পূর্ণ রহস্যময় হাসি।
আর প্রত্যেকটি লকেট নিজের মধ্যে অধিক পাওয়ার আবদ্ধ করায় অতি দৃঢ়তার সহিত নিয়োজিত।

কিং লকেট এর উপর এসে পড়া চাঁদ এর জোছনা এবং কিং লকেট এর নিজস্ব জোত্যি মিলে যে রশ্নির প্রতিফলন ঘটায় সেই আলোক রশ্নি থেকে এবং চন্দ্রিমার আলোর থেকে ভ্যাম্পায়াররা এক আলাদা পাওয়ার অর্জন করতে পারে, যার ফলে তাদের পাওয়ার আরো অধিকতম বৃদ্ধি পায়।

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here