অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_৩৫

0
5836

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_৩৫

সৃষ্টিকর্তার নিষ্ঠুর বিধানে মানুষ কখনো কখনো হতাশ হয়ে পড়ে ঠিকি তবে যে ধৈর্য ধারণ করতে পারে জীবনযুদ্ধে সেই জয়ী হয়। একদিকে তার আদরের কন্যার করুণ দশা অপরদিকে সন্তান হারানোর অসহ্যকর মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে যেন তিনি অকুল পাথাড়ে পড়ে যান। দুর্ভাগ্য যেন তাদের পিছু ছাড়ার নামই নিচ্ছে না। নিয়তি যেন তাদের একের পর এক ধাক্কা দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বিপদের এই দুঃসময়ে এসে পাশে দাঁড়ায় আদনানের প্রিয় বন্ধু আশরাফ শেখ। মৃত্যুক্ষণে আওড়ানো প্রাণের বন্ধুর অস্পষ্ট শব্দগুলো তাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। ক্রমাগত কানে বাজতে থাকে বুকের ভেতর যেন চিন চিন ব্যথা অনুভূত হয় তার।

সবকিছুর মাঝে রাহাতের ব্যাপারটা সবাই প্রায় ভুলতেই বসেছে। রাহাত বাঁচলো কি মরলো তা নিয়ে কারো কোন ভাবনা নেই। এদিকে আশেপাশের লোকজনের আক্রমণাত্মক কথাবার্তায় তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। নানান জনের নানান কথার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল অনামিকাকে। এতদিন আদনান নামক প্রাচীর তাদের আগলে রেখেছিল। আদনান কিভাবে তাদেরকে এত অপমান লাঞ্চনার হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে।

আদনানের মৃত্যুর সাথে সাথে যেন তাদের পরিবারের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে যায়। আত্মীয় স্বজনরাও তাদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে নেয়। সবদিক দিয়েই একেবারে কোণঠাসা হয়ে যায় অনামিকার পরিবার।

প্রতিনিয়ত ভালো মন্দ সকল ধরনের কথাই শুনতে হচ্ছে তাকে। সবচেয়ে বেশি অপদস্থ হচ্ছে তার নবজাতক সন্তানের পিতাকে কেন্দ্র করে। আদনানের মৃত্যুর সাথে সাথে রাহাতের বিষয়টাও কিছুটা ধামাচাপা পড়ে যায়। রাহাতেরও আর কোন খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।

আশরাফ বেশ কয়েকবার রাহাতের খবর নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কোন সুরাহা করতে পারেনি। তবে পরবর্তীতে কারো কারো কাছে শুনতে পায় রাহাত মারা গেছে। পরবর্তীতে রাহাতের পুরো পরিবার দেশের বাইরে চলে গেছে বলে সে জানতে পারে। তবে আশরাফের কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয় বিষয়টা।

সেদিনের ঘটনাটা ঘটার সময় আশরাফ স্বশরীরে উপস্থিত ছিল না। তবে জাহানারা বেগমের মুখ থেকে যতটা শুনেছে তাতে পুরো ঘটনাটাই ছিল অনিচ্ছাকৃত। রাহাতের পরিবার এত সহজে যে ছেড়ে দেবে তা ভাবতে পারেনি আশরাফ। শহরের ক্ষমতাসীনদের কাতারে রাহাতের পরিবার অন্যতম। এ ব্যাপারে হয়ত তারা কোন কিছু করতেও পারত না। কেননা যদি আদনানকেই রাহাতের মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে করে হয় তবুও তাদের কিছু করার নেই। মানুষটাই যে আর পৃথিবীতে নেই।

অনামিকার অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হতে থাকে। ভাইয়ের মৃত্যুর পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রতিনিয়ত যেন তার নীরব মৃত্যু ঘটাচ্ছে। মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক ব্যাপার হলো সে নিজের সন্তানকেই সহ্য করতে পারে না। জাহানারা বেগম ভেবেছিলেন এই সন্তানের আগমনের সাথে সাথে বোধ হয় অনামিকা তার জীবনে আঁকড়ে ধরার মতো সম্বল পাবে। তবে এক্ষেত্রে একেবারে উলটো ঘটনা ঘটেছে।

অনামিকা যেন ধীরে ধীরে আরো বেশি নেতিয়ে পড়ছে। তার জীবনে যেন এক বিশাল ফুলস্টপ পড়ে গেছে। আশরাফ নানা ভাবে তাকে ভালো রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত তবে কিছুতেই পেরে উঠছে না। এত চেষ্টা করেও কোন উন্নতি হচ্ছে না। প্রতিদিন সে এবাড়িতে এসে একবার অনামিকাকে দেখে যায়। তার চেনা পরিচিত সদা চঞ্চল হাসিখুশি অনামিকাকে যেন আর খুঁজে পায়না। কতদিন হলো সে অনামিকাকে হাসতে দেখেনি ঠিকমতো কথা বলতে দেখেনি। অদ্রিকে নিয়ে পুরো বাড়িটা মাথায় করে রাখত। দেখতে মন্দ লাগতো না আশরাফের। অদ্রিও খুব সহজেই অনামিকার সাথে মিশে গিয়েছিল।

অনামিকার স্পর্শ পেয়ে যেন অদ্রির কিছুটা মাতৃ অভাব পূরণ হয়ে যায়। অনামিকার এই অবস্থায় অদ্রিও কিছুটা শান্ত হয়ে গেছে। আগের মতো আর দুষ্টুমি করেনা। সারাদিন অনামিকার পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়।তবে অনামিকার এই নীরবতায় ছোট্ট অদ্রি শুধুই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তার শিশুমনের ভাবনা গুলো আশরাফ বুঝেও যেন বোঝে না।

অদ্রি অনামিকার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। তবে এই সুযোগে সে এক নতুন সঙ্গী পায় অনিকে। সারাদিন অনির আশেপাশে ঘুর ঘুর করে। সুযোগ পেলেই সে অনির সাথে একা একা কিসব খেলতে শুরু করে দেয়। আধো আধো বুলিতে কথা বলে অনির সাথে। অনিও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ফোকলা হাসি দিলে অদ্রি টুপ করে তার গালে চুমু খায়। জন্মের পর থেকে জাহানারা বেগমই অনির যত্ন নেন। তাকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া সবকিছুই তিনি একা হাতে সামলান।

অনামিকা কোন প্রতিক্রিয়া দেখান না। মাঝে মাঝে শুধু দূর থেকে তাকিয়ে থাকেন অনির দিকে। তার দৃষ্টিতে শুধুই শূন্যতা বিরাজমান।

আস্তে আস্তে অনি বড় হতে শুরু করে। অদ্রি এখন অনিকে ছাড়া কিছু বোঝে না। অনিই যেন তার সর্বক্ষণ খেলার পুতুল।

অন্যদিকে অনিকে নিয়ে অনামিকার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেয়। অনির ক্ষেত্রে তিনি যেন একেবারেই অনুভূতিশুন্য।আশরাফ সাহেবের অবাধ যাতায়াত নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয়। নানান জন নানান কথা বলতে শুরু করে। অনামিকার দিকেও লোকে বাজে ভাবে তাকাতে শুরু করে কেউ কেউ তো বাজে ইঙ্গিতও দেয়। আশরাফ সাহেবের ভয়ে কেউ কিছু মুখ ফুটে বলতে পারেনা ঠিকি তবে পেছন পেছন কেউই ভালো চোখে দেখে না।

আশরাফ সাহেব বরাবরই মুগ্ধ হয়েছেন অদ্রির প্রতি অনামিকার টান দেখে। মুগ্ধতা কখন ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয় টেরই পাননি। তাইতো তিনি বার বার চেষ্টা করেন অনামিকার মেঘাচ্ছন্ন আকাশে খুশির বর্ষণ ঘটানোর। এক চিলতে হাসি ফোটানোর।

সময়ের সাথে সাথে অনামিকা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে অনির প্রতি তার মনোভাব কোনরূপ পরিবর্তন হয় না। বরং তিনি আরো বেশি দূরত্ব বজায় রেখে চলতে শুরু করেন। অদ্রির প্রতি তার আগের মতো কিছুটা সখ্যতা গড়ে ওঠে।

অনন্যময়ীর প্রতি অনামিকার এত অবহেলা দেখে মনে মনে বেশ কষ্ট পান জাহানারা বেগম। অনেক চেষ্টা করেও তিনি কোনভাবেই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারেননি। তবে আশরাফ অনিকে বেশ ভালোবাসে। অদ্রি যেমন তার নয়নের মণি অনিও কম নয়। অনিকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন তিনি। অনির প্রতি অনামিকার এই ব্যবহার দেখে তিনিও কষ্ট পান। অনামিকা এই বিষয়ে কখনোই কোন আলোচনা করে না কারো সাথে। সব সময় সে এড়িয়ে যায়।

আশরাফ সাহেব একটা বিষয় নিয়ে কয়েকদিন হলো বেশ দ্বিধায় ভুগছেন। সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে তিনি জাহানারা বেগমের সামনে অনামিকাকে বিয়ে করার প্রস্তাব রাখেন। জাহানারা বেগম আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলেন এমন কিছু। বিগত দিনগুলোতে আশরাফ যেভাবে অনামিকাকে আগলে রেখেছে তা দেখেই জাহানারা বেগমের কিছুটা খটকা লেগেছিল। তবে এই বিষয়টাকে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলেন। কেননা আশরাফের মধ্যে তিনি আদনানকে খুঁজে পান। আদনানের মতোই সে তার অনামিকাকে আগলে রাখতে পারবে।

সবটা বিচার বিবেচনা করে জাহানারা বেগম এই সম্পর্কে তার সম্মতি প্রদান করেন। তবে এক্ষেত্রে অনামিকার সম্মতিটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাহানারা বেগম সুযোগ বুঝে অনামিকার সামনে।

অনামিকা এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। প্রথমবারেই সে এই প্রস্তাব নাকোচ করে দেয়। মূলত সে চাইছিল না তার জীবনটা অন্য কারো সাথে জড়াতে। আশরাফের প্রতি যে সে কোন টান অনুভব করে না ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। আশরাফের প্রতি তার এই মূহুর্তে শ্রদ্ধা ব্যতীত আর কিছুই জন্মায় না। আশরাফের মতো মানুষের পাশে নিজেকে অযোগ্য বলে সে মনে করে।

আশরাফের প্রচেষ্টায় অনামিকার এই ভুল ধারণা ভেঙে যায়। কিছুটা সময় নিয়ে সে এই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। তার এই বিয়েতে রাজি হওয়ার পেছনে আরো একটা বড় কারণ হলো অদ্রি। অদ্রির সাথে সখ্যতা তার দিনে দিনে বেশ বেড়ে গেছে। হয়তো সে নিজেই অদ্রির সাথে সখ্যতাটা বাড়িয়ে নিয়েছে।বোধ হয় সে অনিকে নিয়ে ভাবতে চায়না তাই অদ্রিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায়। কতটা মানসিক যন্ত্রণায় থাকলে মানুষ নিজের পেটের সন্তানকে এভাবে দূরে রাখতে পারে!

মাঝে মাঝে এই বিষয়টা বেশ আঘাত দেয় জাহানারা বেগমকে। অনামিকার উপর তার চাপা অভিমান জমে। সবকিছুর মাঝে তো এই নিষ্পাপ শিশুর কোন দোষ নেই। জন্মের পর থেকেই বিনা দোষে শাস্তি পাচ্ছে সে। মুখ ফুটে বলতে শেখেনি হয়তো এখনো তবুও তার চাহনিতে যেন মায়ের অভাবটা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। জাহানারা বেগম তার চোখের জল আটকে রাখতে পারেন না। একই বাড়িতে মা মেয়ে থাকবে কিন্তু মা তার সন্তানের দিকে ফিরেও তাকাবে না এটা তিনি মেনে নিতে পারেন না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার ছোট্ট অনন্যময়ী এসব জটিলতাপূর্ণ সম্পর্ক বুঝে ওঠার আগেই অনেক দূরে চলে যাবেন।

মনে মনে আফসোস করেন অনামিকার জন্য। সন্তান সন্ততি সৃষ্টিকর্তার নিয়ামত। সেই নিয়ামতকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে অনামিকা। অবশ্যই একদিন তাকে আফসোস করতে হবে। নিজের সন্তানের অভাবটা সে হারে হারে টের পাবে। শুধু একটাই ভয় আজ অনামিকা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যদি কখনো অনন্যময়ী মুখ ফিরিয়ে নেয়??

নানান ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে অবশেষে আশরাফ অনামিকার বিয়ে সম্পন্ন হয়। বরযাত্রীকে বিদায় দিয়ে নিজেও সব ব্যবস্থা করে নেন। আগেই তিনি আশরাফের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে রেখেছিলেন। আশরাফ কোনমতেই রাজি নন জাহানারা বেগমকে চলে দিতে। জাহানারা বেগম অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করান আশরাফকে। তাদের দুজনের মনেই ক্ষীণ আশা বিরাজমান। দূরে থাকলে হয়তো অনির গুরুত্বটা উপলব্ধি পারবে।

অনামিকা তার সংসার জীবন নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জাহানারা বেগম কিছুদিনের মধ্যেই আশরাফের সহায়তায় ইংল্যান্ড যাওয়ার বন্দবস্ত করে ফেলেন। অনিকে নিয়েই তিনি তার শেষ জীবন কাটিয়ে দিতে চান। তাকে খুব সুন্দর একটা পরিবেশে মানুষ করতে যান। তাই তিনি অনন্যময়ী কে সত্যিকার অর্থে অনন্যময়ী করে তোলার উদ্দেশ্যে ভিনদেশে পাড়ি জমান। অনন্যময়ীকে নিয়ে এক নতুন যাত্রা শুরু করেন। এদেশে থাকলে হয়ত অনিকে প্রতিনিয়ত মানুষের কটু কথা,মায়ের অবহেলা,মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো। যা অনির দুরন্ত শৈশবকে তছনছ করে দিতো।

অনামিকা চেষ্টা করেছিলেন তার মা কে আটকানোর। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছিল তার মাকে আটকাতে। জাহানারা বেগম তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তিনিই অনির মা হয়ে ওঠেন। অনির পুরো দুনিয়া শুধু তাকে ঘিরেই।



সকালবেলা থেকেই রিশাদকে বেশ ব্যস্ত মনে হচ্ছে। জয়কে নিয়ে স্টাডি রুমে তখন থেকেই কিছু একটা নিয়ে পরামর্শ করছিল সে। শায়লা বেগমকে বলে কাজের লোককে দিয়ে রুমটাও সে পরিষ্কার করিয়ে নেয়। অনির সাথে কথা বলার সময়ই নেই যেন তার।

অনি কারণে অকারণে রিশাদের রুমের সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করছে। উঁকিঝুঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে পুরো ব্যাপারটা। কিন্তু কিছুতেই সে হদিস করতে পারছে না। রিশাদের এমন ব্যবহারে অনি খুব বিরক্ত। রিশাদের উপর চাপা অভিমান জমেছে তার। তাই সে কিছু জিজ্ঞাসাও করে না তাকে। তবে রিশাদ আর জয় মিলে কি ঘোটলা পাকাচ্ছে তা জানার জন্যেও মনটা আকুপাকু করছে অনির। এমনিতেই আজ তার মনটা খারাপ তার উপর রিশাদের এমন বিহেভিয়ার অনির মনটা আরো খারাপ করিয়ে দেয়।

অনি রুমে পায়চারি করছিল। কপালে তার চিন্তার ভাজ মুখে বিরক্তি ভাব। রিশাদকের ব্যাপারটা বার বার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে অনির। অনির ভাবনার ছেদ ঘটে যায় হঠাৎ বেজে ওঠা রিংটোনের শব্দে। চোখমুখ কুঁচকে যায় অনির।

বেড সাইড টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ইনবক্স চেক করে অনি। অন্যমনস্কভাবে মেসেজ চেক করে সে। প্রথমবারে মেসেজ তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কি অদ্ভুত কান্ড।

আরেকবার মেসেজ ভালোভাবে চেক করে সে । অনি আগে থেকেই জানতো আজ তার ফাইনাল সিলেকশনের ভাইভা টেস্ট। কিন্তু সে তো এক্সাম এটেন্ড করতে পারবে না। তাহলে এক্সাম শিডিউলে তার নামটা এলো কেন? মেসেজে অনির নাম মেনশন করে স্পষ্ট করে লেখা আর দুঘণ্টা পরেই তার ভাইভা টেস্ট।

অনি ভাবনায় পড়ে যায়। কিভাবে সম্ভব? সে তো সরাসরি নাকোচ করে দিয়েছিল। তাহলে কি ভুল করে তার নাম এড করা হয়েছে?এত বড় একটা ইন্টারন্যাশনাল ভার্সিটিতে এরকম ভুল তো হওয়ার কথা নয়।

ফোনটা রেখে বিছানায় বসে পড়ে অনি। কিছুতেই সে হিসাব মেলাতে পারছে না। কোনভাবেই সে বিষয়টা বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণ পর সে ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল লিস্ট থেকে জাহানারা বেগমের নাম্বারটা বের করে ডায়াল করার মূহুর্তেই অনির কানে ভেসে আসে জাহানারা বেগমের কন্ঠ। না ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসে না। সরাসরি ভেসে আসে।

–“অনি”(জাহানারা বেগম)

অনি পেছনে ফিরে তাকায়। জাহানারা বেগমকে দেখে কিছুটা অবাক হয় অনি। সকাল সকাল এবাড়িতে আসার কারণ তার কাছে স্পষ্ট নয়। আর রাতেও তো জাহানারা বেগমের সাথে তার কথা হয়েছে। কই তখন টো কিছু জানালো না। তাহলে কি কোন ইমারজেন্সি হয়েছে কি!!

অনির মনে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কিছুটা অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে জাহানারা বেগমের দিকে তাকায়। জাহানারা বেগম অনির জবাবের অপেক্ষা না করেই ভেতরে প্রবেশ করেন।

জাহানারা বেগমের পেছন পেছন রিশাদ আর জয়ও রুমে প্রবেশ করে। অনি ভ্রু কুঁচকে সবার দুকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। অনি বুঝতে পারছে না কাহিনী কি।

–আসসালামু আলাইকুম দিদা!কেমন আছো?(অনি)

–“ওয়ালাইকুমুস সালাম!আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো দিদি ভাই? (জাহানারা বেগম)”

–“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।দিদা তুমি আসবে আমাকে জানাও নি কেন? কাল রাতেই তো তোমার সাথে আমার কথা হয়েছিল?”(অনি)

–বাহ রে!আমার নাতনির শ্বশুর বাড়িতে আমি আসবো বলে আসতে হবে?দিদা কি এতোই পর হয়ে গেছে?”(জাহানারা বেগম)

–“এ মা তা কেন হবে! আচ্ছা এসব বাদ দাও তোমার সাথে আমার খুব ইম্পরট্যান্ট একটা কথা আছে “(অনি)

অনির কথা শুনে কোন উত্তর না দিয়ে জাহানারা বেগম মুচকি হাসি দেন। অনি ভ্রু বাঁকিয়ে চোখ দুটো কুঞ্চিত করে জাহানারা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে। সবকিছু যেন তার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।

চলবে….

আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকে পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন। ধন্যবাদ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here