#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৪
আধুনিক্তার বাবাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো৷ মাশরাত দাঁড়িয়ে ভাবছে আধুনিক্তাকে কল দিয়ে বলবে কি না৷ মাশরাতের বস ফর্মালিটি পূরণ করছে। আধুনিক্তার বাবার চেহারায় পানির ছিটে দেওয়ার পরও জ্ঞান ফিরেনি৷ মাশরাতের বেশ টেনশন হচ্ছে। সে ভাবলো দাদাই কল দিলে ভালো হয়৷ উনি বিষয়টা ভালো মতো সামলাতে পারবেন। মাশরাত আধুনিক্তার দাদাইকে কল করলো৷ রিং হচ্ছে কিন্তু কেও ধরছে না। হয় তো ব্যস্ত আছে, মাশরাত আর কল করলো না। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলল উনার প্রেশার খুব লো৷ আর কম শক্তি তাই জ্ঞান হারিয়েছে। মাশরাত নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। বড়ো কোনো সমস্যা হয় নি ভেবেই তার ভালো লাগছে। আধুনিক্তার বাবা নিজেই হেটে বাহিরে আসলেন। চারপাশে চোখ বুলিয়ে নাক মুখ কুঁচকে বলল-
“এটা হসপিটাল না-কি আরো কিছু?”
মাশরাত লম্বা নিশ্বাস ফেলল। শুরু হলো উনার বড়োলোকি। বাবা আবার বলল-
“তুমি জানো সেই বেডগুলো কত নোংরা? সেখানে আমি শুয়ে ছিলাম ভাবতেই শরীর শিরশির করছিল করছে।”
“স্যার পাশে একমাত্র এই হসপিটালই ছিল৷ তাই আমরা এইখানেই আপনাকে নিয়ে এসেছি৷”
“আরো অনেক হসপিটাল আছে। এইখান থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে যেতে৷ আমি কি মরে যেতাম এই ২০ মিনিটে।”
মাশরাত জবাব দিলো না। তার এখন ইচ্ছে করছে না এসব প্রশ্নের জবাব দিতে। তখনই বস আসলো।
“স্যার আপনি আসলেন কেন? আপনাকে স্যালাইন দেওয়া হবে। গিয়ে শুয়ে পরুন।”
“না আমি ঠিক আছি। বাসায় গিয়ে রেস্ট নিব। আমার স্যালাইনের প্রয়োজন নেই।”
“কিন্তু স্যার…”
“প্লিজ জোর করবেন না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি বাসায় যেতে চাই।”
“আচ্ছা স্যার চলুন আমরা আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।”
আধুনিক্তা বাবা ধীরেপায়ে হাঁটা ধরলো। মাশরাত বিরক্ত চেহারা বানিয়ে বসে আছে। আধুনিক্তা বাবা গাড়িতে উঠে বসলেন। মাশরাত ড্রাইভ করবে। বস তার পাশের সিটে বসতেই উনার নাম্বারে কল আসলো। উনার ছোটো ভাই এর এসেছে। কল রিসিভ করে কথা বলে জানতে পারলেন উনার স্ত্রীর শরীর হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
“মাশরাত আমার বাসায় যেতে হবে।”
“এনি প্রবলেম বস?”
“হ্যাঁ তোমার ভাবীর শরীর না-কি অসুস্থ হয়ে পরেছে হঠাৎ। তুমি স্যারকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসো।”
“আপনি বাসায় কী করে যাবেন?”
“তুমি নিশ্চিন্তে থাকো আমি যেতে পারবো। স্যার টেক কেয়ার আমি আসি।”
আধুনিক্তা বাবা বলল-
“আপনি সাবধানে যান। আর আমাকে জানিয়েন আপনার ওয়াইফ কেমন আছে।”
“জি স্যার নিশ্চয়ই।”
বস গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলেন। মাশরাত লুকিং গ্লাস দিয়ে আধুনিক্তার বাবাকে দেখলো। বাবা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। মাশরাত গাড়ি স্টার্ট দিলো৷ কিছুক্ষণ দুজনই চুপচাপ বসে ছিলো। মাশরাতের মনোযোগ ড্রাইভিং-এ। তখনই মাশরাতের মোবাইল বেজে উঠল৷ আড়চোখে মোবাইল দেখলো। দাদাই কল দিয়েছে। মাশরাত গাড়ির স্পিড কম করে কল রিসিভ করলো। দাদাইকে সব খুলে বলতেই উনি ব্যস্ত হয়ে পরলেন। উনি চেয়ারম্যান অফিস গিয়েছিলেন। ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে তারাতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিলেন।
“কার সাথে কথা বললে?”
“চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে।”
“না বুঝে কাজ কেন করো? কি দরকার ছিল আব্বুকে বলার? আমি তো সুস্থ আছি। বাসায় গিয়ে একদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যেতাম।”
মাশরাত এই কথার জবাব না দিয়ে পাল্টে প্রশ্ন করলো-
“স্যার আপনি কী ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেন না?”
“সেটা জেনে তুমি কী করবে?”
“ডাক্তার বলেছে আপনার কম শক্তি খুব। প্রেশারও লো, আপনার ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করার প্রয়োজন।”
“আমার জন্য টেনশন করতে হবে না।”
“টেনশন করছি না, আপনি আধুনিক্তার বাবা৷ আপনার কিছু হলে ও ভীষণ কষ্ট পাবে।”
“আর ও কষ্ট পেলে তুমিও কষ্ট পাবে তাই তো?”
“এমনটাই ভাবতে পারেন।”
“ইশশ আর টুরু লাভ দেখাতে হবে না। চুপচাপ গাড়ি চালাও।”
মাশরাত নিঃশব্দ হাসলো। তার মনে হয় আধুনিক্তার বাবা বেশ মজাদার মানুষ৷ কিন্তু কাজের মধ্যে থাকতে থাকতে এমন হয়ে গিয়েছে। নিরবতা ভালো লাগছে না বাবার। উনার হঠাৎ মন চাচ্ছে মাশরাতের সাথে কথা বলতে। কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে বলল-
“এসি বন্ধ?”
“না স্যার”
“গরম লাগছে কেন?”
“স্যার আপনার প্রেশার লো হয় তো তাই গরম লাগছে।”
“হুম বুঝলাম, আমি হয় তো কিছুদিন অফিস আসতে পারবো না। প্রজেক্ট সুন্দর মতো পুরো করবে।”
“জি স্যার চেষ্টা করবো।”
“চেষ্টা না সুন্দর মতো করতে হবে তোমার।”
“ওকে স্যার”
আবার নিরবতা কাটলো। বাবা চুপচাপ বসে আছে। মাশরাত লুকিং গ্লাস দিয়ে আবার বাবাকে দেখে বলল-
“স্যার আপনার কি বেশী খারাপ লাগছে?”
“না আমি ঠিক আছি।”
“নিজের জন্য না হলেও। পরিবারের জন্য নিজের খেয়াল রাখবেন প্লিজ।”
“তুমি কী জানো যতদিন আমি বেঁচে আছি তুমি কোনোদিন আধুনিক্তাকে পাবে না।”
“হ্যাঁ স্যার জানি।”
“তো তুমি কেন চাচ্ছো আমার কিছু না হোক? আমি মরে গেলে তুমি সহজ ভাবে আধুনিক্তাকে পেয়ে যাবে। কারণ আমার পরিবারের প্রত্যেক মানুষ তোমাকে খুব পছন্দ করে।”
“যদি আধুনিক্তাকে পাবার পথ আপনার মৃত্যু ডেকে আনে আমি এমন ভাবে আধুনিক্তাকে চাই না।”
“আর ভালো সাজতে হবে না। আমি জানি তুমি চাও আমার কিছু হয়ে যাক যাতে তুমি আধুনিক্তাকে পেয়ে যাও।”
“এমনটা ভুল ভাবছেন স্যার। বাবা ছাড়া জীবন খুব কষ্টকর। যার বাবা নেই সে বুঝে। প্রতিটা মুহূর্ত বাবার স্মৃতি তাড়া করে। আপনার কিছু হয়ে গেলে আধুনিক্তার জীবন আমার মতো হয়ে যাবে। প্রতিটা মানুষ মৃত্যু গ্রহন করবে। কিন্তু আমি চাই আপনি আরো বহু বছর বেঁচে থাকুন যাতে আধুনিক্তা সুখে থাকে।”
“তোমার বাবা নেই? ওহ! মানে আমি শুনেছিলাম আর কি। কী হয়েছিল উনার?”
“আর্মি ছিলেন, যুদ্ধে গিয়েছিলেন আর ফিরে আসে নি। উনাকে সেখানেই কবর দেওয়া হয়েছে।”
আধুনিক্তার বাবা নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। উনি শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না কিছু বলার জন্য।
বাসায় পৌঁছে মাশরাত তারাতাড়ি গাড়ি থেকে নামলো। দ্রুত হেটে গিয়ে পেছনের দরজা খোলার আগেই আধুনিক্তার বাবা দরজা খুলে বলল-
“লাগবে না তোমার সাহায্য আমি পারবো।”
মাশরাত হাসলো, গাড়ি থেকে বের হয়ে দাঁড়াতেই বাবা মাথা ঘুরে গেল। উনি তারাতাড়ি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। মাশরাত তারাতাড়ি উনাকে ধরে বলল-
“দেখলেন নিজের অবস্থা? এখন তো নিজের কথা ভাবুন। আসুন আপনাকে ভেতরে নিয়ে যাই।”
তখনই আর একটা গাড়ি এসে প্রবেশ করলো। আধুনিক্তার দাদাই গাড়ি থেকে বের হয়ে দ্রুত হেটে আসলেন।
“কি হয়েছে ওর মাশরাত?”
“হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন। ডাক্তার বলেছে প্রেশার লো আর কম শক্তির কারণে এমন হয়েছে।”
“কত বলি ছেলেটাকে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া কর। সারাদিন অফিস এর কাজ নিয়ে বসে থাকে।”
বাবা বিরক্ত হয়ে বলল-
“আহা আব্বু এখন আবার শুরু হলে? আমি ঠিক আছি তো।”
“এখন বিরক্ত হচ্ছিস বাবার কথায়।যেদিন আমি মরে যাব সেদিন বুঝবি।”
“আব্বু প্লিজ নিজের মৃত্যুর কথা বলো না। আমি বুঝে গিয়েছি বাবা ছাড়া জীবন কেমন হতে পারে।”
বলেই বাবা আড়চোখে মাশরাতকে দেখলেন। মাশরাত উনার দিকেই তাকিয়ে আছে। মাশরাতের চাহনি দেখে তারাতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিলেন। উনাকে ধরে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। দাদী আরমানকে খাইয়ে দিচ্ছিলেন। এমন পরিস্থিতি দেখে প্লেট রেখে তারাতাড়ি এগিয়ে এসে বললেন-
“একি! ছেলের কি হলো?”
“তোমার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করো।”
বাবা বলল-
“আম্মু নিশ্চিন্তে থাকো আমি ঠিক আছি। আমাকে একটু বসতে দাও।”
“আয় আয় বস তুই।”
বাবা সোফায় বসানো হলো। মাশরাত চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে৷ আধুনিক্তাকে দেখা যাচ্ছে না। হয় তো ভার্সিটিতে আছে। ছুটি হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে হয় তো। তখনই আধুনিক্তার না আসলেন। স্বামীর এমন অবস্থা দেখে কেঁদেই দিলেন। বাবা বিরক্ত হয়ে বলল-
“এই ছেলে সব দোষ তোমার। কি দরকার ছিল বাবাকে বলার? আমাকে তুমি-ই নিয়ে আসতে পারতে৷ আর আমি এসে কোনো মতো পরিস্থিতিটা সামলে দিতাম। সবাই তোমার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলো।”
“স্যার এতে আমার কি দোষ?”
মাশরাত হতবাক, বাবা আর কিছু বলল না। উনি নিজেই কনফিউজ মাশরাতের উপর কেন দোষ দিলো অকারণে। তখনই আধুনিক্তা আসলে। মাশরাতকে ড্রইংরুমে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে খুশীতে লাফিয়ে উঠলো। দ্রুত গিয়ে মাশরাতের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু বলার আগেই মাশরাত ইশারায় বলল সামনে তাকাতে৷ আধুনিক্তা সামনে তাকিয়ে দেখে বাবা বসে আছে। মুখটা বেশ শুকনা লাগছে না। আধুনিক্তা বলল-
“কি ব্যাপার মিস্টার মজুমদার? একটু আগে ফোনে আমাকে বকলেন এখন বাংলার পাঁচের মতো চেহারা করে রেখেছেন কেন?”
মাশরাত ধমকের স্বরে বলল-
“আধুনিক্তা এটা কি মজা করার পরিস্থিতি?”
“কেন কি হয়েছে?”
“আঙ্কেল এর প্রেশার খুব লো। মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন৷ হসপিটাল নিয়ে যেতে হয়েছে।”
“কি? আব্বু তুমি..”
আধুনিক্তা কাঁধের ব্যাগ মাটিতে ফেলেই দ্রুত গিয়ে বাবার পাশে বসলো। বাবার শার্ট ভিজে আছে ঘাম দিয়ে৷ আধুনিক্তা ফুপাতে শুরু করলো বাবার অবস্থা দেখে। বাবা হেসে আধুনিক্তাকে বলল-
“কাঁদে না আম্মু আমি একদম ঠিক আছি। মাশরাত তো সবসময় বেশী বেশী বলে।”
“একদম না, ও সবসময় সত্যি কথা বলে৷ তুমি হাজার হাজার মিথ্যে কথা বলো। কিছুদিন আগেও জ্বর এসেছিল হসপিটাল যাও নি চেকআপ করাতে৷ সকালে না খেয়ে বের হও আর সারাদিন কাজ করো৷ বলছি যে নিজেকে কি তুমি রোবট ভাবো?”
বাবা শব্দ করে হেসে আধুনিক্তার গাল ধরে টানলেন। মাশরাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে বাপ মেয়েকে দেখছে। হঠাৎ কাঁধে কারোর হাতের ছোঁয়া পেল। পাশ ফিরে দেখে দাদাই দাঁড়িয়ে আছে।
“ধন্যবাদ তোমাকে।”
“চেয়ারম্যান সাহেব প্লিজ, এটা আমার কর্তব্য। আপনারা উনার খেয়াল রাখবেন আমি আজ আসি।”
“না তুমি আজ খাওয়া দাওয়া করে যাবে।”
“না চেয়ারম্যান সাহেব এটা সম্ভব না। আমি বস এর বাসায় যাব। উনি স্ত্রী গর্ভবতী। হঠাৎ করে না-কি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ আমি গিয়ে দেখি সেখানকার পরিস্থিতি কেমন।”
“তাহলে তোমার ওয়াদা করতে হবে আর একদিন আসবে।”
“নিশ্চয়ই, আজ আসি আল্লাহ হাফেজ।”
মাশরাত সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলো। আধুনিক্তার বাবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মাশরাতের যাওয়ার পথে। জীবনে প্রথম মাশরাতের প্রতি স্নেহ জমছে উনার মনে।
রাতেরবেলা…..
মাশরাত হসপিটাল থেকে বাসায় আসলো। বস এর স্ত্রী আজ কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে৷ আজ ভীষণ ক্লান্ত মাশরাত। বস খুব ইমোশনাল উনার স্ত্রীকে নিয়ে। অপারেশনের পর রক্তের প্রয়োজন ছিল। মাশরাতের ব্লাড গ্রুপের সাথে ম্যাচ হওয়ায় সে রক্ত দিয়ে এসেছে। মা দরজা খুলে দিলো। মাশরাত ভেতরে ঢুকে তার ক্লান্ত শরীর সোফায় এলিয়ে দিলো।
“নাওয়াল মালিহাকে কল দিয়ে বলেছে তার ভাবীর মেয়ে হয়েছে। তুই আমাকে কল দিয়ে কিছুই বললি না। আমিও হসপিটাল যেতাম। উনাদের পরিবারে কোনো মহিলা নেই। দুজন মাত্র পুরুষ আছে। উনারা পারবে কিছু সামলাতে?”
“বস আমাকে বলেছে তোমাকে কল দিতে না। তোমার শরীর অসুস্থ থাকে তাই। সকালে গিয়ে দেখা করে এসো।”
“সেটা তো যেতেই হবে। তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। রক্ত দিয়েছিস ক্লান্ত হয় তো তুই।”
“হ্যাঁ আমার মাথাটা বেশ ভার লাগছে। বেশী করে ভাত বাড়ো। আজ লাঞ্চ করি নি প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে।”
মা জবাব না দিয়ে মুচকি হেসে মাশরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মাশরাত উঠে ঘরে চলে গেল। মোবাইল পকেট থেকে বের করে দেখে মোবাইল বন্ধ। হয় তো সার্চ শেষ। মোবাইল চার্জে বসিয়ে বাথরুমে চলে গেল গোসল করতে। গোসল এসে খাওয়া দাওয়া করে ঘরে ফিরে আসলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আধুনিক্তার মেসেজ। প্রায় ২৫ টার মতো মেসেজ। মাশরাত হাসলো, প্রথম কয়েকটা মেসেজে ধন্যবাদ কথাটা আছে। শেষের দিকে হুমকি। মাশরাতের মোবাইল বন্ধ বলছে তাই। মাশরাত আধুনিক্তাকে কল করলো। হয় তো মোবাইল আধুনিক্তার হাতেই ছিল। সাথে সাথে রিসিভ হয়ে তুফান শুরু হলো।
“কোথায় ছিলে তুমি? বাসায় পোঁছে মেসেজ দেয়া যেত না? আমি টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছি নবাবজাদা মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। এখন কী মুখে তালা মেরে রাখার ইচ্ছে আছে? জবাব দাও না কেন?”
“তোমার তুফান শেষ হোক তারপর আমি বলছি যা বলার।”
“হ্যাঁ আমি বকছি বলে পাগল ভাবছো আমাকে তাই তো?”
“একদম না, তোমার যে এতগুলো রূপ আছে আমি তা আগে জানতাম না।”
“এতগুলো রূপ মানে?”
“এই মানে, এক সময় এক রূপ ধরো। এক সময় শান্তশিষ্ট হয়ে যাও। এক সময় দুষ্টুমি করো। আবার আমাকে বকাঝকাও করো।”
“তুমি তো ভালো মানুষ না। দিন দিন বুড়ো হওয়ার সাথে সাথে কেয়ারলেসও হচ্ছো।”
“একদম আমার বয়স নিয়ে কিছু বলবে না।”
“হ্যাঁ তোমার বয়স ত্রিশের বেশী তাই না?”
“ঠিক আছে আমার মতো বুড়োর সাথে কথা বলতে হবে না। রাখো এইবার।”
“সরিইইইই, আই লাভ ইউ।”
মাশরাত মুখ টিপে হাসলো। এই মেয়ে পুরো তার বাবার মতো হয়েছে। মাশরাত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল-
“এখন এক্টিং করতে হবে না। আঙ্কেল কেমন আছে?”
“ভালো আছে, আর জানো আজ প্রথমবারের মতো আব্বু তোমার প্রশংসা করেছে। জানো আমার মনে হচ্ছে আব্বু তোমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। তার মানে এই বছরেই আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে।”
“এত শখ কেন তোমার বিয়ে করার? পিচ্চি মানুষ, যাও পড়তে বসো।”
“শুনো আমার ৪ বছরের পড়া পিছিয়েছে। আমি মোটেও বাচ্চা নই। দাদাই চেয়ারম্যান ছিলেন বলে সেকেন্ড ইয়ারে উঠিয়ে দিয়েছে আমাকে।”
“তার ঘুষ দিয়েছো।”
“একদম না, দাদাইকে বেশ সম্মান করে উনারা। আর এমনিতেও আমি ভর্তি হওয়ার সময় ফাইনাল এক্সামের প্রশ্নের কিছু উত্তর সঠিক দিয়েছিলাম।”
“যাক ভালো লাগলো শুনে। জানো আমার বস এর মেয়ে হয়েছে। বাবুটা মাশা আল্লাহ খুব কিউট। তার ছোটো ছোটো হাত পা গুলো একদম টকটকে লাল৷ আর ও খুব ছোটো। আমি অফিসে যে ব্যাগটা নিয়ে যাই সেটাতে তাকে ভরা যাবে এত ছোটো।”
“সত্যি? আমি দেখবো বাবুকে।”
“আচ্ছা আমি কাল ছবি তুলে তোমাকে দেখাব।”
“না না আমি ফেস টু ফেস দেখতে চাই বাবুকে।”
“তোমার আব্বু যদি বাবুকে দেখতে আসে তুমি উনার সাথে এসো।”
“ঠিক আছে ঠিক আছে আমি আব্বুকে মানাবো। তুমি কিন্তু সেদিন হসপিটালে থাকবে আমি যেদিন যাব।”
“৪ দিন পর বাসায় চলে যাবে তারা।”
“আমি কালই আসছি।”
“আঙ্কেল অসুস্থ আধু।”
“আব্বু জানলে নিজের অসুস্থতার কথা ভুলে যাবেন। আব্বু কাল আসলে আমিও আসবো।”
“ঠিক আছে, আসার আগে আমাকে নিশ্চয়ই বলে দিও। প্রজেক্ট এখন আমাকেই সামলাতে হবে। রাত গভীর হচ্ছে। এখন ঘুমিয়ে যাও গিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
পরেরদিন…..
আধুনিক্তা যা বলেছিল তাই হলো। বাবা বস এর বাচ্চার কথা শোনার পর বলেছে আজই দেখতে যাবে। আধুনিক্তা আজ ভার্সিটি যায় নি। বাবাকে সকাল থেকে মানানোর পর বাবা রাজি হয়েছে। আধুনিক্তা মাশরাতকে মেসেজ দিয়ে বলে দিয়েছে তারা হসপিটাল আসছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বার বার নিজেকে দেখছে আধুনিক্তা। মাশরাত কখনো তার পছন্দ অপছন্দের সম্পর্কে বলে নি। কিন্তু আধুনিক্তা এইটুকু বুঝতে পেরেছে মাশরাত তাকে ফুল হাতা ওয়ালা ড্রেসে পছন্দ করে৷ হালকা গোলাপি রং এর ফুল হাতা ওয়ালা নর্মাল থ্রি পিস পড়েছে আধুনিক্তা। তৈরী হয়ে বাহিরে গেল। বাবা বিরক্ত চেহারা বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“এতক্ষণ লাগে তৈরী হতে?”
“তোমার এত তাড়া কিসের বলো তো। উনারা তো হসপিটালেই আছে। রিলাক্স থাকো।”
“রাস্তা জ্যাম থাকে আজকাল জানো না? চলে এখন বেশী কথা না বলে।”
আধুনিক্তা মুখ বাঁকা করে হাঁটা ধরলো। বাবাও তার পেছন পেছন যাচ্ছে।
“আব্বু একটা কথা বলি?”
“বলো”
“মাশরাত যদি হসপিটালে থাকে তখন কি করবে?”
“ফিরে এসে তোমাকে বাসায় দিয়ে আবার হসপিটাল চলে যাব।”
“তোমার মন বলতে কী কিছু নেই? মেয়ের মনের খবর কবে জানবে?”
“এত জানতে হবে না চুপচাপ বসো।”
আধুনিক্তা মুখ গোমড়া করে চুপচাপ বসে রইলো। বাবা আড়চোখে মেয়েকে দেখে মুচকি হাসলো। উনি মেয়ের জন্য সারপ্রাইজ রেডি রেখেছেন। এখন অপেক্ষায় আছেন মাশরাতের সাথে দেখা হওয়ার। কি সারপ্রাইজ জানতে চাইলে আগামী পর্বের অপেক্ষা করুন।?
চলবে……