তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_২৫

0
2055

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৫

হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতেই বাবা দরজা খুলে বের হলো। আধুনিক্তা মন খারাপ করে রেখেছে। বাবা যদি সত্যি-ই মাশরাতকে দেখে তাকে বাসায় দিয়ে আসে? বাবা আড়চোখে আধুনিক্তাকে দেখলো। মেয়ে কথায় কথায় মুখ গোমড়া করে ফেলে। বাবা হেসে এগিয়ে গেল। আধুনিক্তা উনার পিছু পিছু যাচ্ছে। বাবা হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলল-
“কেবিন নং কত ভুলে গেলাম।”
“আব্বু এইখানে না দোতলায়।”
বাবা এক ভ্রু উঁচু করে মেয়ের দিকে তাকাল।
“এভাবে তাকানোর কি হলো? মাশরাত বলেছে আমাকে।”
“হ্যাঁ আমি জানি তোমাকে কে বলেছে।”
বলেই বাবা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে মাশরাতকে মেসেজ করে জিজ্ঞেস করলো সে এসেছে কি না। ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পর আধুনিক্তা রিপ্লাই পেল না। বাবা হঠাৎ ডাকতেই আধুনিক্তা দ্রুত উপরে বেয়ে উঠলো। বাবা বিরক্ত চেহারা বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“কোথায় ছিলে?”
“নিচে”
“তারাতাড়ি আসো সবাই ভেতরে।”
বলেই বাবা দরজা ঠেলে কেবিনের ভেতরে ঢুকে পরলো। আধুনিক্তা আঁচলের কোনা আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে এগিয়ে গেল৷ কেবিনে প্রবেশ করতেই আধুনিক্তার চেহারায় হাসি ফুটে উঠলো। মাশরাতের মা বসে আছে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে। আধুনিক্তা হেটে গিয়ে মাশরাতের মাকে সালাম দিলো। মাশরাতের মা দাঁড়িয়ে এক হাত দিয়ে আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটাকে দেখলেই উনার মন ভালো হয়ে যায়। মাশরাত বস এর সাথে দাঁড়িয়ে আছে। বাবার জন্য আধুনিক্তার দিকে ঠিক মতো তাকাতেও পারছে না। বাবা আর বস দাঁড়িয়ে কথা বলছে৷ এর সুযোগে মাশরাত গিয়ে আধুনিক্তার পাশে দাঁড়াল।
“কি ব্যাপার মুখ গোমড়া করে রেখেছো কেন?”
“আব্বু বলেছে তুমি থাকলে আমাকে বাসায় দিয়ে আসবে।”
“বস আছে মনে হয় না আঙ্কেল এমন কিছু করবে।”
“তাই যেন হয়”
“এখন মন খারাপ করো না। দেখ বাবু কত কিউট দেখতে।”
আধুনিক্তা মাশরাতের কোলে থাকা বাবুর দিকে তাকাল৷ সাদা রং এর নরম তোয়ালে পেঁচানো ছোট্ট একটা বাবু৷ শরীরে তার গোলাপি গোলাপি ছোপ। যেন এটা বাবু না একটা পুতুল। আধুনিক্তা লাফাতে লাফাতে বলল কোলে নিবে। মাশরাতের মা আধুনিক্তাকে চেয়ারে বসিয়ে বাবুকে আধুনিক্তার কোলে দিলো।
“আন্টি ও এত ছোটো কেন? আরমান তো খুব বড়ো হয়েছিল।”
“কিছু কিছু বাচ্চারা খুব ছোটো হয়ে জন্ম নেয়৷ তুমিও তো এমন ছোটো ছিলে।”
“হ্যাঁ আমি আমার ছোটোবেলার ছবি দেখেছি। মাশরাত কেমন হয়েছিল আন্টি?”
“ও তো কালো ছিল জন্মের সময়। তোমাদের মতো সুন্দর হয় নি।”
মাশরাত থতমত খেয়ে গেল মায়ের কথা শুনে। আধুনিক্তা ফিক করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে তার পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। মাশরাত আমতা আমতা করে বলল-
“পাবলিক প্লেসে এভাবে না বললেও হতো আম্মু।”
“আরে সত্যি বলতে লজ্জা কিসের? আধুনিক্তাকে সেদিন আমি তোর ছোটোবেলার ছবি দেখাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন তো সম্ভব হয় নি।”
আধুনিক্তা বলল-
“আন্টি প্লিজ ছবিগুলো আমাকে নিশ্চয়ই দেখাবেন। আমার দেখবে হবে জনাব আগে কেমন ছিল।”
“ঠিক আছে”
মাশরাত মুখ বাঁকা করে বলল-
“এত এক্সাইটেড হওয়ার কী আছে? আমি কি একা কালো হয়ে জন্মিয়েছিলাম? দুনিয়াতে আরো অনেক মানুষ আছে।”
“তাদের উপর আমার ইন্টারেস্ট নেই। তোমার উপর আছে তাই তোমার ছবি-ই দেখবো।”
বলেই আধুনিক্তা আবার হাসলো। মাশরাতের মা আর আধুনিক্তার মায়ের মধ্যে প্রথমদিন থেকে বেশ ভাব। তারা একসাথে হলে মাশরাত একা হয়ে যায়। বস আর আধুনিক্তার বাবা প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলছে। তার এখন ইচ্ছে করছে না ব্যবসার ব্যাপারে কোনো কথা বলতে। মাশরাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে একপাশে। হঠাৎ বস এর স্ত্রী মাশরাতকে ডাকলো। মাশরাত হালকা ঝুঁকে বলল-
“কিছু বলবেন ম্যাম?”
“মেয়েটা কি ইনভেস্টরের মেয়ে?”
“হ্যাঁ”
“বেশ সুন্দর দেখতে, আন্টি আর ও এমনভাবে কথা বলছে যেন অনেক আগে থেকেই চিনে।”
“ম্যাম, মনে আছে আপনাকে একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম?”
“কে তাবাসসুম?”
“না না আধুনিক্তা”
“ওহ হ্যাঁ নাম ভুলে গিয়েছিলাম। এটাই আধুনিক্তা?”
মাশরাত হেসে মাথা নাড়াল। ম্যাম হেসে বলল-
“তোমার চয়েজ তো দেখছি মাশা আল্লাহ।”
মাশরাত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কলার ঠিক করলো। যেন সে তার পছন্দ নিয়ে বেশ গর্বিত। হঠাৎ মাশরাত কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেল। পেছনে ফিরে দেখে আধুনিক্তার বাবা।
“ইয়েস স্যার”
“তোমাকে গত কালের জন্য ধন্যবাদ।”
“স্যার বার বার লজ্জিত করছেন।”
“মন থেকে বললাম লজ্জা পেতে হবে না। এনি ওয়েজ প্রজেক্ট তুমি সামলাচ্ছ শুনলাম।”
“জি স্যার, বস কিছুদিন ম্যামের সাথে সময় কাটাক৷ আমি প্রজেক্ট দেখছি।”
“যা করবে সব সাবধানে।”
“জি স্যার বিশ্বাস করতে পারেন।”
বাবা মাশরাতের মায়ের দিকে তাকালেন। মা আধুনিক্তার সাথে কথা বলছে। মেয়ের মুখে হাসি দেখে বাবার খুব ভালো লাগছে। উনি বুঝতে পারছেন আধুনিক্তা মাশরাত ও তার পরিবারের সাথে কমফোর্টেবল ফিল করে। বাবা পকেটে হাত রেখে এগিয়ে গেল আধুনিক্তার দিকে। আধুনিক্তার কোলে থাকা বাচ্চাকে দেখে মুচকি হেসে বলল-
“জানো আম্মু তুমিও ওর মতো একদম ছোটো হয়েছিলে।”
“হ্যাঁ আব্বু দাদী না-কি অনেক কান্না করেছিলেন আমার জন্মের সময়।”
“হ্যাঁ কারণ তুমি আমার আর তোমার আম্মুর বিয়ের ৬ বছর পর জন্ম হয়েছিলে। আমাদের পরিবারের প্রথম সন্তান তুমি। তাই তোমাকে নিয়ে আমরা অতিরিক্ত প্রটেক্টিভ।”
“আমি জানি তোমার আমাকে খুব ভালোবাসো।”
বাবা মুচকি হেসে মাশরাতের মায়ের দিকে তাকালেন। মা উনার চাহনি দেখে ভ্রু কুঁচকালো। উনার মন বলছে আধুনিক্তার বাবার মাথায় কিছু একটা চলছে৷ বাবা বললেন-
“গতকাল আপনার ছেলে আমার সাহায্য করেছে৷ ও না থাকলে …. কেও না কেও আমাকে হসপিটাল নিশ্চয়ই নিয়ে যেত। তবুও ধন্যবাদ দিচ্ছি।”
আধুনিক্ত কপালে হাত দিয়ে দিলো। এভাবে কে ধন্যবাদ দেয়? মাশরাতের মা হেসে বলল-
“আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন না? ধন্যবাদ আমার ছেলেকে দিন।”
“হ্যাঁ ওকে ধন্যবাদ দিয়েছি। ভাবলাম আপনাকেও দিয়ে দেই।”
“ঠিক আছে আমি আপনার ধন্যবাদ গ্রহন করলাম। এখন বলুন কি বলতে চান? আপনি যে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলছেন আমি বুঝতে পারছি।”
“বাহ আপনি তো দেখছি খুব বুদ্ধিমতী।”
“জি আমি জন্ম থেকেই এমন। এখন বলুন কি বলতে চান।”
“আমি আপনার ছেলেকে পছন্দ করি না। কিন্তু আমার পুরো পরিবার ওকে খুব পছন্দ করে৷ আমার স্ত্রী যখন জেনেছে মাশরাতের কারণে আমি সুস্থ আছি তখন থেকে আমাকে বার বার বলছে মাশরাত ও তার পরিবারকে যেন আমি ডিনার করতে ইনভাইট করি৷”
“হ্যাঁ তারপর?”
“তারপর মানে? আমি আপনাদের ডিনার করতে ইনভাইট করছি। আগামীকাল আমাদের বাসায় আপনারা যাবেন।”
“যদি না যাই?”
“আপনারা যাবেন, আসলে আপনাদের যেতেই হবে।”
“এভাবে কে ইনভাইট করে? আমার তো মনে হচ্ছে আপনি ইনভাইট না হুমকি দিচ্ছেন আমাকে।”
বাবা ভ্রু কুঁচকালো। উনি আজ পর্যন্ত কাওকে মুখে বলে ইনভাইট করেন নি। সবসময় স্পেশাল কার্ড করতেন। তাই তো পারে না কারো সাথে মিষ্টি করে কথা বলে ইনভাইট করতে। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে বলল-
“আব্বু তুমি আমাকে আগে বলতে। আমি আন্টিকে ইনভাইট করতাম। আমারো মনে হচ্ছে এটা ইনভাইট না হুমকি ছিলো।”
“আমি এইভাবেই ইনভাইট করি। বসো তুমি চুপচাপ।”
মা হেসে বলল-
“আপনি ছোটোবেলায় মধু খান নি? করলার মতো তেতো কেন আপনার কথা?”
“একটু বেশী বলছেন আপনি৷ ইনভাইট করলাম মন চাইলে আসবেন না চাইলে আসবেন না৷ আমার স্ত্রী বলেছিল তাই আপনাকে ইনভাইট করলাম।”
মা শব্দ করে হেসে উঠলো। বাবার রাগ হচ্ছে মাশরাতের মায়ের হাসি দেখে। মাশরাত দ্রুত এসে মা আর আধুনিক্তার বাবার মাঝে দাঁড়িয়ে বলল-
“স্যার ধন্যবাদ ইনভাইট করার জন্য। আমরা চেষ্টা করবো আসার।”
“চেষ্টা না তোমাদের আসতেই হবে।”
মা বলল-
“সুন্দর করে বলুন নাহলে আমরা আসবো না। আপনি তো এমনভাবে বলছেন যেন পুরো দেশে আপনার রাজত্ব।”
“পুরো দেশে না হোক পুরো এলাকায় আমার রাজত্ব।”
“হা হা হা, হাসালেন মিস্টার মজুমদার।”
বাবা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো আধুনিক্তা বাচ্চাকে আস্তে করে বস এর স্ত্রীর পাশে শুইয়ে বাবার হাত ধরে বলল-
“আব্বু প্লিজ মাথা ঠান্ডা করো। তুমি যদি এইভাবে কথা বলো যে কারোর খারাপ লাগবে।”
বাবা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করায় ব্যস্ত হয়ে পরলেন। মাশরাত ঘুরে মায়ের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল-
“কি দরকার উনাকে বার বার রাগানোর?”
“সত্য বলবেই উনি রেগে যান।”
মাশরাত আবার আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাশরাত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“স্যার, আপনি আমাদের ইনভাইট করেছেন ধন্যবাদ। কিন্তু আপনি যদি ভেবে থাকেন আমরা আপনাদের বাসায় যাওয়ার পর আপনি আমাদের অপমান করবেন তাহলে…”
“এই চুপ থাকো, তোমরা সবসময় আমাকে ভুল বুঝো কেন? বিশ্বাস না হলে আমার স্ত্রীকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করো। আর আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই কারণে তোমাদের অপমান করবো? তোমরা ভাবো আমি নিচু মস্তিষ্কের মানুষ। তাহলে তোমরা কি যে সবসময় আমাকে খারাপ ভাবো।”
“স্যার আমি সেটা বলি নি।”
“শাট আপ, আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না। ইনভাইট করে দিয়েছি গেলে গেলে না গেলে নেই। আমি কাওকে জোর করার মানুষ না। আধুনিক্তা তুমি যাবে না-কি আমি চলে যাব।”
“আব্বু তুমি…”
“ঠিক আছে আমি হেটে বাসায় যাই তুমি পরে ড্রাইভারের সাথে আসো।”
বলেই বাবা হনহন করে হেটে চলে গেল। কেবিনে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তার বেশ লজ্জা লাগছে। বস এগিয়ে এসে বলল-
“স্যার তো রাগ করলো। মাশরাত তোমাকেই উনাকে মানাতে হবে।”
“বস আপনি টেনশন করবেন না। উনার রাগ ভাঙানোর দায়িত্ব আমার। আপনি ম্যাম এর খেয়াল রাখুন।”
মাশরাতের মা বলল-
“দোষটা আমার, যেহেতু উনি নিজ থেকে কিছু বলেছিলেন আমার উচিত হয়নি উনাকে রাগানোর।”
আধুনিক্তা মায়ের হাত ধরে বলল-
“আন্টি প্লিজ নিজেকে দোষারোপ করবেন না। আব্বু এমনই, কিছুক্ষণ পরই সব রাগ ভুলে যাবে।”
“তবুও আধুনিক্তা আমি বুঝতে পারছি আমার এমনটা করা ঠিক হয় নি। আমরা আগামীকাল তোমার বাসায় নিশ্চয়ই যাব।”
“সত্যি বলছেন আন্টি?”
“একদম সত্যি।”
আধুনিক্তা হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। মাশরাতের মাথা কাজ করছে না। পরিস্থিতি হঠাৎ হঠাৎ এইভাবে বিগড়ে যায় কেন? আধুনিক্তা মাশরাতকে বলে চলে গেল। এখন তার উচিত বাবার সাথে থাকা। আধুনিক্তা বাহিরে এসে দেখে বাবা নেই। ড্রাইভার মামা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
“মামা আব্বু কোথায়?”
“স্যার বললেন আপনারে নিয়া বাসায় যাইতে। উনি তো বাড়িতে গেলোগা।”
“ঠিক আছপ বাসায় চলুন।”
আধুনিক্তা তারাতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো। কিছুটা রাস্তা এগিয়ে যেতেই আধুনিক্তাকে বাবাকে দেখতে পেল। বাবা ফুটপাত দিয়ে দ্রুত হেটে যাচ্ছে। আধুনিক্তাকে ড্রাইভার মামাকে গাড়ি থামাতে বলে গাড়ি থেকে বের হলো। দৌড়ে গিয়ে বাবার পথ থামালো। বাবা আধুনিক্তাকে দেখে বাবা পাশ কাটিয়ে হাঁটা ধরলো। আধুনিক্তা আবার দৌড়ে গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
“তুমি আমার সাথে রাগ করলে কেন বলো তো?”
“আমি তোমার সাথে রাগ করবো কেন? আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাই চলে যাচ্ছি।”
“আজ খুব রোদ গাড়িতে উঠে বসো। তুমি এমনিতেই খুব অসুস্থ।”
“আমি ঠিক আছি।”
“আব্বু প্লিজ।”
আধুনিক্তা অনুরোধ স্বর শুনে বাবা লম্বা নিশ্বাস ফেললেন। কিছু না বলেই উনি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন। আধুনিক্তাও গিয়ে বাবার পাশে বসলো। পুরো রাস্তা কেও কারো সাথে কথা বলে নি। বাসায় পৌঁছে বাবা গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত ভেতরে চলে গেল। আধুনিক্তা বুঝতে পারছে না। হঠাৎ এমন পরিস্থিতির শিকার তারা কেন হলো? আধুনিক্তা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে গেল। মা বলল তার বাবা সোজা ঘরে চলে গিয়েছে। আর বলেছে কেও যাতে ডিস্টার্ব না করে। আধুনিক্তা ভাবলো বাবাকে কিছুক্ষণ একা রাখা যাক। উনার মাথা ঠান্ডা হলে আধুনিক্তা কথা বলবে গিয়ে।

রাতেরবেলা……
বাবার সাথে আধুনিক্তা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। বাবার শরীর না-কি অসুস্থ লাগছে। তাই ঔষধ খেয়ে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছেন। আধুনিক্তা পড়ার টেবিলে বসে আছে গালে হাত দিয়ে। মাশরাত মেসেজ করে বলেছে সে ডিনার করার পর কল দিবে। আধুনিক্তা মাশরাতের কলের অপেক্ষায় আছে। কিছুক্ষণ পর মাশরাত কল করলো। আধুনিক্তার মন কিছুটা ভালো হলো মাশরাতের কল দেখে। রিসিভ করে কানে ধরলো-
“বলো”
“মন খারাপ?”
“উহু, এখন ঠিক আছি।”
“আঙ্কেলের রাগ কমেছে?”
“জানি না, আব্বুর সাথে কথা হয় নি। শুনেছি ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে।”
“আঙ্কেলকে রেস্ট নিতে দাও। আমি আগামীকাল আসার পর কথা বলবো নি আঙ্কেলের সাথে।”
“ঠিক আছে”
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে আধুনিক্তা কল কেটে দিলো৷ বাবার জন্য খারাপ লাগলেও মাশরাতের সাথে কথা বলে তার কিছুটা ভালো লাগছে। কিন্তু আধুনিক্তাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে একটা বিষয়। মাশরাত ও তার পরিবারকে বাবা হঠাৎ দাওয়াত কেন দিলো। কারণ আধুনিক্তা মাকে জিজ্ঞেস করায় মা বলেছে দাওয়াত দেওয়ার কথা সর্বপ্রথম আধুনিক্তার বাবা-ই বলেছেন। আধুনিক্তা বিছানায় এসে হেলান দিয়ে বসলো। টেনশনে তার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তারাতাড়ি তার ঔষধগুলো খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে আধুনিক্তা হারিয়ে গেল স্বপ্নের দুনিয়ায়।

পরেরদিন……
আধুনিক্তা আজও ভার্সিটি যায় নি। ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম গোসল করে নিলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিল তখনই দরজা খুলে আরমান প্রবেশ করলো। দরজা খুলতেই পোলাও এর ঘ্রাণ ভেসে আসলো। আরমান এসে বলল-
“মাম্মাম আজ কি মাশরাত ভাইয়া আসবে?”
“হ্যাঁ ছোটু, তোমাকে কে বলল?”
“আম্মু আর দাদী আজ অনেক কিছু রান্না করছে। আমি জিজ্ঞেস করায় দাদী বলল মাশরাত ভাইয়া আসবে।”
“ওও আচ্ছা, আব্বু কোথায়? আর তুমি নাস্তা করেছ?
“আব্বু ঘরে টিভি দেখছে। আমি তোমার হাতে খাব।”
“আচ্ছা চলো আমরা নাস্তা খাই গিয়ে।”
আধুনিক্তা আরমানকে নিয়ে বাহিরে চলে গেল। ডাইনিং টেবিলে দাদাই একা বসে চা পান করছেন। আধুনিক্তা গিয়ে দাদাইকে জড়িয়ে ধরলো। মা এসে আরমান আর আধুনিক্তার নাস্তা দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। আধুনিক্তা আরমানকে খাইয়ে দিচ্ছিল তখনই বাবা আসলো। বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে উনার মেজাজ খারাপ এখন। দাদাই বললেন-
“চেহারা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছ কেন কি হয়েছে?”
“খবরে দেখালো, স্ত্রী স্বামী পুড়িয়ে মারলো স্ত্রী বাপের কাছ থেকে টাকা এনে দেয় নি বলে।”
“দুনিয়ার মানুষ বড়ো-ই স্বার্থপর।”
“তাই তো দরিদ্র অপছন্দ আমার। টাকার জন্য তারা যে কিছু করতে পারে।”
আধুনিক্তা বিরক্ত হয়ে বলল-
“আব্বু সব দরিদ্র এক না। একজনের দোষ তুমি সবার ঘাড়ে চাপাচ্ছো।”
“তুমি প্লিজ আমাকে কোনো জ্ঞান দিও না এখন।”
আধুনিক্তা বিরক্ত হয়ে চলে গেল।
“তুই কেন সবসময় এমন করিস?”
“যা সত্য তাই বললাম। একটা বিষয় ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ এখন এমন নিউজ দেখে আমাকে দ্বিতীয়বার সিদ্ধান্ত নিতে ভাবাচ্ছে।”
“কি হয়েছে আমাকে বল”
“কিছু না আব্বু পরে বলবো।”

দুপুর ২ টার পর মাশরাত, মা আর মালিহা আসলো। বাবা তখন ঘরে ছিলো। আরমান বাবাকে এসে বলায় বাবা ঘর থেকে বের হলো। আধুনিক্তা মাশরাতের মাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বাবার জেলাস ফিল হয় এমন কিছু দেখলে৷ বাবাকে দেখে মাশরাত সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে রাখলো। বাবা আধুনিক্তাকে বলল সবাইকে সোফায় বসাতে৷ মাশরাতের বেশ অস্বস্তি লাগছে। আধুনিক্তার বাসায় আসলেই তার এমন লাগে। বর্তমানে সে যে বাসায় থাকে সে বাসা এই বাসার অর্ধেক থেকেও কম৷ বাবা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বলল-
“কি দেখছো মাশরাত?”
মাশরাত থতমত খেয়ে গেল। মাথা নাড়িয়ে জোরপূর্বক হাসি দিলো। বাবা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-
“৯ বছর, পুরো ৯ বছর লেগেছে আমার এই পর্যায়ে আসতে। আমি বেস্ট বিজনেসম্যান না। সবাই আমার উপর বিশ্বাস করে কারণ হচ্ছে আমার বাবা। বাবাকে সবাই সম্মান করে তাই অনেক মানুষ আমাকে বিল্ডিং এর প্রজেক্ট দিত৷ কিন্তু জানো মাশরাত? কষ্ট হয়েছে খুব। মানে পরিশ্রম কতটুকু করতে হয় তুমি তো বুঝো এখন।”
“জি স্যার বুঝি”
“তোমার মধ্যে আমি আমাকে দেখতে পাই। সব পরে কাজ আগে। আমি অফিস এ দেখেছি তোমাকে কাজ করতে। তুমি যখন কাজ করো মনে হয় সব ভুলে গিয়েছো। আমিও এমন ছিলাম। তাই তো আজ এই পর্যায়ে।”
“আমিও এমন পরিশ্রম করবো স্যার। যাতে আপনার থেকেও বড়ো অফিস খুলতে পারি।”
বাবা শব্দ করে হেসে উঠলো। মাশরাতের কথাটা উনার ভালো লেগেছে। অনেকক্ষণ বসে কথা বলার পর মা বললেন সবাইকে খাওয়া দাওয়া করে নিতে। সবাই একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসে পরলো। আধুনিক্তার বত্রিশ দাঁত বেরিয়ে আছে। কারণ সে আর মাশরাত পাশাপাশি বসেছে। খাওয়ার সময় আধুনিক্তা বার বার মাশরাতের পায়ে পা ঘষছিল। মাশরাত কোনো মতো পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। এই মেয়ে সবার সামনে গন্ডগোল পাকানোর ধান্দায় আছে। মাশরাত হাত ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে আসলো। তখনই আধুনিক্তার বাবা মাশরাতকে ডাকলো।
“জি স্যার?”
“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। স্টাডি রুমে আসো আমার সাথে।”
“ওকে স্যার।”
মাশরাত মালিহার হাতে তোয়ালে দিয়ে আধুনিক্তার বাবার পেছনে গেল। আধুনিক্তার বাবা মাশরাতকে সোফায় বসতে বলে হেটে আলমারির সামনে গেল। মাশরাত চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। চারপাশে বিজনেস বুক দিয়ে ভরপুর। মাশরাতের মুখে হাসি ফুটে উঠল। বাবা একটা বড়ো ব্রিফকেস নিয়ে এসে টি টেবিলের উপর রেখে সোফায় বসলেন।
“এটা তোমার জন্য”
“এটার মধ্যে কি আছে স্যার?”
“খুলে দেখো”
মাশরাত কিছুক্ষণ ভেবে ব্রিফকেস খুলল। ব্রিফকেস খুলে দেখতেই তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। এক হাজার টাকার অনেকগুলো বান্ডেল। মাশরাত দাঁড়িয়ে পরলো। তার ভ্রু কুঁচকে আছে। বাবা বলল-
“কি হলো? কম মনে হচ্ছে? সমস্যা নেই আমি আরো দিতে রাজি।”
“স্য..স্যার এ..এগুলো কি?”
“তোমার লাইফ সেট করার টনিক। দেখো মাশরাত এখানে ২ কোটি টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে তুমি আমার অফিস থেকেও বড়ো অফিস খুলতে পারবে। তারপর আমি তোমাকে আরো টাকা দিব। তুমি নানাভাবে ইনভেস্ট করতে পারবে অন্যান্য অফিসে। তুমি ১ বছরেই আমার থেকেও কোটিপতি হতে পারবে।”
“স্যার আপনি..আপনি আমাকে টাকা কেন দিতে চাচ্ছেন?”
“যাতে তুমি দেশ ছেড়ে চলে যাও। আর হ্যাঁ তুমি ভাবতে পারো আমি তোমার আর আধুনিক্তা ভালোবাসা কিনে নিচ্ছি।”

চলবে…….

[সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ? আমাকে কেও বকবেন না প্লিজ? সব দোষ আধুনিক্তার বাবার? ভুল ক্রুটি ক্ষমা করে দিয়েন? ইনজয় এভরিবডি?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here