বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১০
#আনিশা_সাবিহা
আঁধার রাত। ঐশানীর পাশে ঐশী ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। ঘুমানোরই কথা! হলুদ থেকে মেহেদী শেষ হতে রাত প্রায় একটা বেজে গিয়েছিল। সবাই ক্লান্ত অবস্থায় শুয়েছে। ঘুম নেই শুধু ঐশানীর। কথায় বলে, বিয়ের আগে টেনশনে কোনো ছেলে বা মেয়েরই ঘুম আসে না। কারণ পরেরদিন থেকে এক নতুন জীবনের সূচনা হওয়া কি কম বড় কথা? পাশে ঘুমিয়ে থাকার জন্য একজন মানুষ চলে আসবে ঐশানীর জন্য। আদোও লোকটা তার পাশে ঘুমোতে দেবে কি না তার ঠিক নেই। এক অনিশ্চয়তায় ভুগছে সে। এই দ্বন্দ্ব নিয়ে সে বিয়ে করতে চায় না।
চোখ বুজে থেকে থেকে ঘুমানোর এক্টিং করে করে বিরক্ত এসে পড়ে ঐশানীর চোখে পাতায়। উঠে বসে পড়ে সে। জানালার দিকে তাকায়। অতিরিক্ত গরম থাকায় জানালা খোলা। দমকা হাওয়ায উড়িয়ে দিচ্ছে জানালার সাথে লাগানো পাতলা পর্দা। উঠে দাঁড়ায় ঐশানী। দুই পা বাড়াতেই দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়। চমক খেয়ে থতমত হয়ে তাকায় দরজার দিকে। রাত প্রায় আড়াইটার কাছাকাছি।
–“ইয়া আল্লাহ, এই হোটেলে ভূত-প্রেতের উৎপাত আছে জানতাম না তো। ভূতের তো বেশ ম্যানার্স আছে। নক করে ঢুকতে চাইছে।”
বিড়বিড়িয়ে নিজের আপনমনে কথাগুলো বলতেই আবারও ঠকঠক আওয়াজ হয়। ঐশানীর হাঁটু কাঁপতে শুরু করে ভয়ে। এখন তার সবকিছু ভূতুড়ে মনে হচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকলেও যেন কেউ পা টেনে নিয়ে যাবে। ঝড়ের গতিতে দৌড়ে নিয়ে লাফিয়ে বসে পড়ে বেডে। সাদা চাদরটা টেনে নিজের মুখচোখ ঢেকে ফেলে। ঠকঠক আওয়াজ হয়েই যাচ্ছে। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে ঐশানী পিছাতে শুরু করে বেডে। ঐশী ঘুমের মাঝে বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে সরে যায়। ঐশানী ধাক্কা দিয়ে ঐশীর উদ্দেশ্যে বলে…..
–“ঘুমের মধ্যে তোর পেনসিল মার্কা বফরে দেখা বন্ধ করে একটু বাস্তবে আয়। ভূত ঢু…ঢুকতে চাচ্ছে।”
ঐশী চোখমুখ জড়িয়ে পিটপিট করে তাকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায় আবারও চোখবুঁজে ঘুমিয়ে পড়তেই ঐশানী এক ঠেলা মারে তাকে।
–“উফফ…আপু এমনি গাল ব্যাথা করছে তোর জন্য। চড় খেতে হলো কত জোরে। দাঁত নড়েছে কি না চেক করতে হবে। আর তুই রাতেও কান্ড বাঁধাচ্ছিস?”
–“আরে আমি না ভূত!!”
ঐশী এবার চোখ খোলে। চোখ থেকে ঘুম উড়ে যায় তার। চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসে। হাই তুলে বলে….
–“বিয়ে ভাঙার চিন্তায় কি পাগল হয়ে গেলি নাকি আপু?”
ঐশানী কিছু না বলতেই দরজায় আবারও নক করার শব্দ হয়। ঐশী এবার নিজেও চমকে তাকায়। দুজনে চোখাচোখি করে ঐশী সাহস নিয়ে বলে….
–“হতে পারে কেউ দরকারে এসেছে। যা খুলে দে।”
–“আমি পারব না। যদি আমাকে সাথে করে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। আমি শ্যামলা ঘোড়াকে বিয়ে করতে রাজি বিশ্বাস কর। তবুও ভূতের সাথে যাব না।”
এক পাহাড় সমান ভয় নিয়ে বলে ঐশানী। ঐশী ভেংচি কেটে ল্যাম্পশিট জ্বালিয়ে উঠে যায়। ঐশানী পেছন থেকে বলে….
–“তোর পেনসিল মার্কা বয়ফ্রেন্ডের কি হবে রে? সব থেকে বড় কথা আমাদের কি হবে যাস না।”
ঐশী জবাব না দিয়ে খুলতেই এবার সেও ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে। অপ্রস্তুত হয়ে বলে….
–“অভয় ভাইয়া, আপনি?”
অভয় গম্ভীর ভাবভঙ্গি নিয়ে বলে ওঠে….
–“আসলে তোমার বোনের সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল আমার। অনেক ভাবলাম তবে বুঝতে পারলাম যে কথাগুলো না বললেই নয়।”
–“আচ্ছা ঠিক আছে ভেতরে আসুন।”
অভয় ভেতরে ঢোকে। অভয় থেকে ঐশানী চাদর ফেলে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে। ফুঁসে উঠে বলে….
–“আপনার কি কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই হ্যাঁ? কত ভয় পেয়েছি জানেন? হার্ট অ্যাটাক হতে হতে বেঁচে গেল।”
অভয় ঐশানীর কথায় পাত্তা না দিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে ঐশীকে বলে….
–“একটু বাহিরে যাবে? কথাগুলো পারসোনাল। জাস্ট টেন মিনিটস।”
ঐশী কি বুঝল তা কেউ জানে না। শুধু মুখ টিপে হেসে ‘সিউর’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
অভয় গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিতেই ঢক গিলে ঐশানী। ভয়ে মিনমিন করে নিজেকে বলে….
–“এ কেমন ছেলের পাল্লায় পড়লাম আমি? ক্যারেক্টারের সমস্যা আছে মনে হচ্ছে। এখন কি আমি যা ভাবছি তাই হবে?”
ভয়াতুর মুখ নিয়ে তাকায় ঐশানী অভয়ের দিকে। অভয়কে এগিয়ে দেখে পিছাতে থাকে সে।
ভয়ের কারণে ঐশানীর ঠোঁটজোড়া শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। অভয় ঐশানীর পিছুতে দেখে আগাতে থাকে। ভ্রু নাচিয়ে বলে….
–“পিছচ্ছ কেন? ভয় লাগছে?”
ঐশানী মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। চেষ্টা করেও পারছে না কিছু বলতে। অভয় তা দেখে আবারও বলে….
–“অন্য সময় তো কথার ঝুড়ি নিয়ে বসো। আজ কি হলো? সম্মান যাওয়ার ভয় করছে?”
–“দে…দেখুন আপনি কিন্তু ঠিক ক….করছেন না। সরে যান।”
অভয় সরে না। আরো এগিয়ে এসে ঐশানীর ওড়নায় হাত ছোঁয়াতেই চোখজোড়া হাত দিয়ে ঢেকে জোরে বলে….
–“আজ আমি শেষ।”
বেশ কিছুক্ষণ পরেও যখন ঐশানী অনুভব করে তার সঙ্গে মোটেও কিছুই হয়নি হাত সরায় চোখ থেকে। অভয় তার থেকে বেশ কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অভয় দাঁতে দাঁত চেপে বলে….
–“ঠিক এভাবেই ভয় পেয়েছিলাম তোমার জন্য। যখন তুমি জ্বরের ঘোরে আমার সাথে……”
মাঝপথে আর বলতে পারে না অভয়। ঐশানী মুখ বেঁকিয়ে বলে….
–“এমন ভাব ধরছেন যেন আপনার সাথে ইচ্ছে করে এসব করেছি। আপনার সাথে শাহরুখ খানকে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। নয়ত আপনার সাথে? ছি! আমার চয়েস এতোটা খারাপ না।”
অভয় তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে ঐশানীর শেষ কথায়। মানে টা কি? সে কি এতোটাই খারাপ? ঘায়েল করা চোখজোড়া, প্রসারিত দেহের অধিকারী, খাঁড়া নাক, লম্বাচওড়া সব থেকে পারফেক্ট। ওর সৌন্দর্য আরেকটু বেশি বেড়েছে থুঁতনি দুটো ভাগ হওয়ায়। থুঁতনির নিচের দিকে মাঝে একটা ভাঁজ আছে অভয়ের। যা থুঁতনিকে দুটো ভাগ করে ফেলেছে। যার কারণে তাকে আরেকটু বেশি আলাদা সুদর্শন লাগে। দেওয়ালে জোরে হাতটা রেখে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে….
–“এই মেয়ে এই! তুমি কি মিন করতে চাইলে? আমি বাজে দেখতে? আমেরিকান কিছু কিছু মেয়েরা অবধি আমার পেছনে ঘুরেছে টাকা এবং আমি সুর্দশন সেকারণে। আর তুমি বলছো আমি খারাপ দেখতে?”
–“আমার চোখে আপনি কেমন মানুষ, আপনি কেমন দেখতে সেসব জেনে আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেন?”
অভয় ঐশানীর এই প্রশ্নে নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়। চোখ নামিয়ে নেয়। সত্যিই তো! ঐশানীর চোখে সে কি তা জেনেই বা কি হবে? ঐশানীকে তো একদিন তার জীবন থেকে দূর হয়ে যেতেই হবে। হালকা কেশে অভয় বলা শুরু করে….
–“আসলে আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে এসেছি।”
–“কি এমন কথা যে মাঝরাতে আমাকে একান্তে এসব কথা বলতে হবে?”
–“তোমাকে আমি কোনোকালেই বিয়ে করতে চাইনি ঐশানী। তোমার প্রতি আমার একটা চাপা ক্ষোভ রয়েছে সেটা কি জানো?”
–“না জানার কি আছে? আপনার প্রতিটা কাজকর্মেই টের পাই আমি। এটা নিশ্চয় ওই সেদিনের ডেয়ারের কারণে। যার কারণে আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে ভুল বুঝেছিল তাই না?”
অভয়ের দিকে অদ্ভুত চাহনি নিক্ষেপ করে বলে ঐশানী। অভয় হ্যাঁবোধক মাথা নাড়াতেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ওঠে ঐশানী।
–“আজও আপনার গার্লফ্রেন্ড এর রাগ এবং সন্দেহ ভাঙাতে পারেননি? একটা প্রেমিকাও জুটিয়েছেন! যে কিনা পান থেকে চুন খসলেই সন্দেহ করে। আপনার বিরক্ত লাগে না? আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না এতো সন্দেহ নিয়ে আপনাদের ভালোবাসা হয় কি করে? ভালোবাসা ঠুনকো বিশ্বাসের ওপর তৈরি হয় না। ভালোবাসার মূল মন্ত্র হচ্ছে বিশ্বাস। যেই বিশ্বাস যখন একে অন্যের ওপর না থাকে সেটাকে ভালোবাসা নয় মোহ বা ভালোলাগা বলে। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি ওই মেয়ে আপনাকে ভালো টালো বাসে না।” (কিটকিটিয়ে হেসে)
–“শাট আপ! আমি তোমার কাছে কোনো ভালোবাসার সার্টিফিকেট চাইতে আসিনি। নিজে তো কখনো কাউকে ভালোবাসো নি। আবার ভালোবাসার সংজ্ঞা ঝাড়ছো?”
অভয়ের ধমকানিতে হাসি থেমে যায়। নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেঝের দিকে। অভয় তিক্ত মেজাজ নিয়ে বলে ওঠে…..
–“আমি তোমায় বিয়ে করব না বলে চাকরি খুঁজতে গিয়েছিলাম। যাতে চাকরি পেলে বিয়েতে না করতে পারি আর সায়রার সাথে অন্যকোথাও বিয়ে করে থাকতে পারি। কারণ বাবা বলেছিল, সায়রাকে বিয়ে করলে আমায় ত্যায্যপুত্র করে দেবে। মনে আছে সেদিন তুমি আমার বাইকের সাথে এক্সিডেন্ট করেছিলে ইচ্ছে করে? ওইদিন ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মনটা সায় দিল না। যতই হোক পরিবারকে আমি ভালোবাসি। তাই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ইন্টারভিউটা দিতে পারিনি। কিন্তু এটা নয় যে সায়রাকে আমি ভালোবাসি না।”
ঐশানী খেয়াল করে অভয়ের কন্ঠস্বর কাঁপছে সায়রাকে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলতে গিয়ে। দাঁত কেলিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে সে অভয়কে।
–“ভালোবাসি বলতে কন্ঠস্বর যখন কাঁপে। তখন যেই কন্ঠস্বর দিয়ে জোর করে ভালোবাসি না বলাই ভালো।”
অভয়ের নিরবতার সুযোগ নিয়ে ঐশানী আবারও প্রশ্ন করে……
–“আমাকে কি করতে বলছেন এখন? বিয়েতে না করতে? আগেই বলে রাখি এটা আমার দ্বারা সম্ভব না। আপনি যেমন আপনার পরিবারকে ভালোবাসেন তেমন আমিও আমার পরিবারকে ভালোবাসি। বিশেষ আমার বাবার অপমান হবে এই বিয়ে ভাঙলে। উনার মাথা নিচু হবে। সেটা আমি চাই না।”
–“বিয়ে ভাঙতে বলছি না তোমায়। জাস্ট বিয়ের পর দূরে দূরে থাকবে।”
ঐশানী তেতিয়ে উঠে বলে….
–“আহা, আমার যেন হার্ট নাগিন ড্যান্স দেই উনার কাছে যেতে। আজকে শুধু শাহরুখ খানকে আপনার মাঝে দেখেছিলাম তাই। নয়ত আপনার ছায়াও মাড়ায় না। হুহ। শ্যামলা ঘোড়ার আর শাহরুখ খানের নামের মাঝে একটা মিল আছে না? দুটোই ‘শ’ দিয়ে শুরু হয়। তাই গুলিয়ে ফেলেছিলাম।”
অভয় কটমট করে তাকায় ঐশানীর দিকে। ধীরে ধীরে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে….
–“কি বলছি আর ফাজিলের মহারানী কি বুঝছে! জাস্ট টু মাচ!”
দরজায় নক পড়ায় ধ্যান ভাঙে দুজনের। বাহির থেকে ঐশী ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে ওঠে….
–“আরে অভয় ভাইয়া, কালকে থেকে তো আপু পারমানেন্টলি তোমার বাড়িতেই শিফট হবে না? তখন যত পারসোনাল, পাবলিক, কনফিডেনসিয়াল কথাবার্তা বলে নিও। এখন তো ঘুমোতে দাও প্লিইইইজ!”
অভয় গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে ঐশীকে ছোট্ট করে ‘সরি’ বলে চলে যায়।
ঐশী হেলেদুলে এসে বেডে গা এলিয়ে দেয়। ঐশানীও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এসে শুয়ে পড়ে। রাতটা এভাবেই কেটে যায়।
সকাল হতেই চারিদিকে বিয়ে নিয়ে হইহই পড়ে গেছে। ব্যস্ত মানুষেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বর-কনেকে মিলিয়ে দিতে। কথায় আছে, যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই। এখানেও ঠিক তেমন। যেই দুই মানুষকে তারা বিয়ের বন্ধন আবদ্ধ করতে যাচ্ছে তারা নিজেই একে অপরের ওপর উদাসীন! অন্যদিকে ঐশী সহ ঐশানীর বান্ধবী ও ঐশানীর কাজিনদের চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে এই নিয়ে যে, তারা বরপক্ষ আসার পর গেট ধরে টাকা আদায় করতে পারবে না। কারণ বিয়েটা একই হোটেলে হচ্ছে। তার ওপর অভয়ের না রয়েছে কাজিন আর না রয়েছে বন্ধুবান্ধব। বন্ধুরা সব আমেরিকার। সবাই দেবদাসের মতো সেজেগুজে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
–“ঐশানী তোর হলো? অভয়ের হয়ত ওদিকে হয়ে গেছে।”
মিসেস. দিশার কথায় কোনো হেলদোল হলো না ঐশানীর। পাশে থাকা দুজন মেকআপ আর্টিস্ট এতোক্ষণ ধরে কি সাজিয়ে চলেছে কে জানে! বোর হয়ে হাই তুলে মায়ের দিকে তাকায় সে। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বলে…..
–“মা আমি ঘুমাবো! ঘুমানোর সময় হবে?”
অবাক আকাশের সর্বসীমায় ওঠেন মিসেস. দিশা। চোখ আকাশে তুলে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলেন….
–“একদম না। বিয়ের দিন আর তুই ঘুমাবি? আমার মাঝে মাঝে চিন্তা হয় তোর উদ্ভট কাজকর্ম আর কথাবার্তা নিয়ে। শ্বশুরবাড়ি যাবি কোনো পার্কে বেড়াতে যাবি না।”
–“ওটা পার্ক নয় মা। ওটা চিড়িয়াখানা। একটা সুন্দর শ্যামলা ঘোড়া আছে দেখো না?”
–“আবার?”
ধমকে বলেন মিসেস. দিশা। ঐশানী ঠোঁট উল্টে আয়নার দিকে তাকায়। লাল রঙের ভারি কাজ করা বেনারসি বইতে পারবে কি করে এতোক্ষণ ভাবছে সে। তার ওপর হাত ভর্তি চুড়ি। হাতটা নাড়াতে পারবে তো? গলায় লাগানো মোটা সোনার হার। মাথায় টায়রা পড়ানো। নাকে আবার মোটা নথ! বিয়ের সাজে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে ঐশানীর মাঝে। অনন্য লাগছে তাকে। তার এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা যেন গ্রাস করে দেবে সবাইকে। বেশ কিছুক্ষণ নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বকতে বকতে চলে গেলেন মিসেস. দিশা।
অভয় আয়নায় নিজেকে ভালোভাবে দেখে নেয়। তার পরনে সাদা শেরওয়ানি। সাদা শেরওয়ানির ওপর সোনালি কাজ করা। তা উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ে বেশ মানিয়েছে। মাথায় সাদা পাগড়ি। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রেখে দিয়েছে গালে।
–“আজ বর তো সেজেছি কিন্তু অন্য জনের জন্য!”
বলেই একটা শ্বাস নেয় অভয়। দরজা খুলে ঢুকে আসেন রাহাত সাহেব। দূরন্ত কন্ঠে বলেন….
–“হলো তোর?”
–“হুমম।”
অভয়কে সাথে করে নিয়ে যান রাহাত সাহেব। বসে পড়েন বিয়ের আসরে। কাজি সাহেব উপস্থিত রয়েছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর কাজি সাহেব বলেন কনে কে নিয়ে আসতে। ঐশীসহ বেশ কয়েকজন মিলে উঠে যায় সিঁড়ি দিয়ে ঐশানীকে নিয়ে আসার জন্য। বেশ খানিকক্ষণ পরে যখন তারা আসে না ঐশানীকে নিয়ে সন্দেহ হয় অভয়ের। এই মেয়েটা কি পালিয়ে গেল নাকি? মনে মনে খুশি হয় সে। পালিয়ে গেলে ভালোই হবে। বিয়ে করতে হবে না।
হন্তদন্ত হয়ে নেমে আসে ঐশী। অভয় এবার সিউর ঐশানী পালিয়েছে। যাক মেয়েটার দ্বারা একটা ভালো কাজ তো হলো! মিসেস. দিশা চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করেন….
–“কিরে? তোর আপু কোথায়?”
ঐশী এবার যা বলল এর জন্য মোটেও কেউ প্রস্তুত ছিল না।
–“আপু! আ…আপু তো ঘুমিয়ে পড়েছে।”
চলবে…..
[বি.দ্র. সবাইকে অভয়-ঐশনীর বিয়ের দাওয়াত থাকল। হাহাহাহা! ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]