শিশির ধোয়া গোলাপ পর্ব ৬

0
1198

#শিশির_ধোয়া_গোলাপ

#ইভান_ডালী

#পর্বঃ০৬

আরোহী আর নূরের কথার মাঝে হঠাৎ মেসেজ টোন হলে নূর বলল,

– দেখ দুলাভাই আবার কি দিলো?

নূরের কথা মতো আরোহী মেসেজ ওপেন করতেই দেখলো কোনো অচেনা নাম্বার থেকে এসএমএস এসেছে।আরোহী দেখে ফোনটা রেখে দিলো।নূর বলল,
– কিরে দুলাভাই মিস করছে বুঝি?

– এটা তোর দুলাভাইয়ের ফোন নাম্বার না,অচেনা ফোন নাম্বার।

– দুলাভাই অচেনা ফোন নাম্বার থেকেও দিতে পারে দেখি তো কি লেখা।

– তোর দুলাভাই এতো রোমান্টিক না যে এগুলো আমাকে লিখে পাঠাবে।

– আচ্ছা, একবার পড় না শুনি কি লেখা।

আরোহী আবার এসএমএস টা পড়তে শুরু করলো,

আরু পাখি তুমি কি জানো,তুমি আমার কাছে কি? তুমি আমার কাছে অতুলনীয়। আমার স্বপ্নচারি,রোজ রাতে তোমাকে নিয়ে ভাবি। স্বপ্নে কল্পনাতে রোজ ঘর বাঁধি।তুমি আমার কাছে ঠিক একটা গোলাপের মতো।যখন কোনো কাঁচা গোলাপ আমরা পাই সেটা কোনো ডায়েরির ভাজে রেখে দেই।শুকিয়ে গেলেও ঠিক একি ভাবে যত্ন করে রেখে দেই।তাই নিজের কল্পনা তে নয় নিজের বাস্তবতায় শুধু তোমাকে চাই।আর খুব শীঘ্রই আমি আমার ভলোবাসার কথা তোমাকে জানিয়ে আমার কাছে যত্ন করে রেখে দিবো।

ইতি,
তোমার অতি কাছের শুভাকাঙ্ক্ষী।




বাপরে বাপ এতো ভালোবাসা;বলল,নূর।আর তোকে আমি ছাড়া কি আর কেউ আরু নামে ডাকে নাকি? দুলাভাই তো রুহি নামে ডাকে।

– আমি ও তো সেটাই ভাবছি।কে হতে পারে?

– এই তোর মনে আছে আমাদের কলেজের এক সিনিয়র ভাই তোকে এই নামে ডাককো,আরু সোনা,আরু পাখি বলে।

– সে আসবে কোথা থেকে। আর ওই ভাইয়া তো আমার বন্ধু হতে চেয়েছিলো।আমি তো উল্টো বললাম,আপনি আমার ক্লাসের না যে বন্ধুত্ব করবো।পরে উনি আমাকে বলেছেন,বন্ধুত্ব সিনিয়র জুনিয়র ও হয় না। মন থেকে চাইলেই হয়ে যায়।

– আরে সে ছাড়া তোকে কেউ আরু পাখি নামে ডাকে নাকি?

– আমি আর ভাবতে পারছি না নূর।কি যেন নাম ছিলো তার?

– তুষার নাম ছিলো,আমার স্পষ্ট মনে আছে।

– তোর ক্রাস খেলে আমারো মনে থাকতো।

– কি-সব- জাঁতা বলছিস,কি-সের ক্রা-স খেয়েছি?

– তাই বুঝি।শোন তোর মনের কথাই যদি আমি বুঝতে না পারি তাহলে আমি কিসের বেষ্ট ফ্রেন্ড।

– আরু…..

– হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না।দেখি ভাইয়ার সাথে কথা বলে।

– দেখ আরু সে তোকে পছন্দ করে।

– তাতে কি।আমার এখন বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তবে আমার বেষ্টু কি দেখতে কম নাকি?

– না,তা হয় না।তুই আমার কাছে প্রমিজ কর কোনো সময় এই কথা তাকে বলবি না।আর সবচেয়ে বড় কথা এক তরফা ভালোবাসা কখনো সফল হয় না।অপূর্ণ রয়ে যায়।

নূরের কথা শুনে আরোহীর মনটা কেমন যেনো ধুক করে উঠলো,কারন আদনানকে সে একটু হলেও ভালোবেসে ফেলেছে।
এটাই হয়তো আল্লাহর রহমত।কোনো অজানা অচেনা মানুষটি একসময় সবচেয়ে আপন হয়ে যায় এই বিয়ের মাধ্যমে। নয়তো আদনান কে আরোহী না আগে দেখেছে না তার সম্পর্কে কিছু জানে তাও তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য বন্ধন রয়েছে।

নূরের কথার শব্দে আরোহীর হুস ফিরে,মুচকি হেঁসে বলে।যদি আল্লাহ চায় তাহলে সবই সম্ভব।

তারপর দুজনে টুকিটাকি গল্প করে শুয়ে পড়লো।আজ সারাদিন দুই বান্ধবী একসাথে ছিলো,আরোহীর কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিলো সে হয়তো আগের দিনগুলোতে ফিরে এসেছে।নূর ও আজকে আরোহীর সাথেই ওদের বাসায় থেকে যায়।

সকাল হতেই আদনান চোখ পিটপিট করে তাকায়,বেড সাইটে ফোনটার দিকে তাকিয়ে ফোন স্কিনের তাকিয়ে দেখে একটা টেক্সট এসেছে।আদনান আরোহীর টেক্সট ভেবে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো জিপি ওফার।আদনানের মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।

– এই মেয়েটা মনে হয় আমাকে পাগল করে দিবে।ও নেই তো কি হয়েছে,তাই বলে ওর কথা আমাকে কেন ভাবতে হবে।আর ভাববো না,ওর একটা স্বাধীনতা আছে ওহ চাইলেই তখনি ওকে আনবো।

আনমনে কথাগুলো বলে আদনান ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের ঘরে আনো একবার চোখ বুলিয়ে নিলো,কোনো যেন এই ঘরটা নিস্তব্ধ হয়ে আছে।রুহি আসার আগেও তো আমি ছিলাম।কই তখন তো এরকম লাগে নি।

আদনান নিজের মাথা চেপে ধরে না, এইসব ভাবলে চলবে না। আমাকে স্ট্রং হতে হবে।রুহি আমার জাস্ট ফ্রেন্ড আর কিছু না।যে ভালোবাসা প্রতি বিশ্বাস ওঠে গেছে দ্বিতীয় বারের মতো আমি আর কোনো কিছুতে জড়াবো না।

আদনান একা একা এইসব বিরবির করছিলো,ঠিক তখনি বেড সাইট থেকে ফোনটা স্বশব্দে বেজে ওঠলো।আদনান ফোন স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো
এলিজা কল করেছে। আদনান ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে…

– শুভ সকাল মিস্টার আদনান চৌধুরি।

– সুপ্রভাত। এতো সকালে কি জন্য কল করেছেন জানতে পারি।অফিসে আসলেও কথা বলা যেতো নিশ্চই।

– কুল মিস্টার আদনান চৌধুরি। আমি কাজের কথা বলেই ফোন করেছি, প্রেমালাপ করতে নয়।

– তো কারনটা বলুন? আমি অহেতুক কোনো কথা পছন্দ করি না।

– আই নো মিস্টার আদনান চোধুরি।আজকে মিটিং প্লেজ টা আমার অফিসে রাখতে চাইছি, যদি কিছু মনে না করেন।আর আমি জানি এতে কোনো আপওি থাকাবে না আপনার।যেহেতু ডিল এ আছি।

– ওকে ডান।

– থ্যাংক ইউ সো মাচ।আই এম ওয়েটিং ফর ইউর কামিং।

কথাটা বলে এলিজা ফোনটা কেটে দিলো।

মুচকি হেঁ বলল,
-সেমিস্টার আদনান চৌধুরি আপনাকে তো আমার ফাঁদে পা দিতেই হবে তবে সেটা আপনি নিজেই আসবেন।

এদিকে আদনান রেডি হয়ে ম্যানেজার কে জানিয়ে দেয়।এবং তাদের যথেষ্ট এলার্ট করে দেয়।কারন এলিজা কে তার একটু অন্য রকম লাগছে।ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায়।গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে এলিজার অফিসের সামনে এসে দাড়ায়।

এলিজার কেবিনের দিকে অগ্রসর হয়।কেবিনে ডুকতেই এলিজা বলল,
-ওয়েলকাম টু মাই অফিস,টেক ইউর সিট।

– ওকে,, বাট আপনি কি বলবেন বলুন?

– হাতে কলমের কাজ তাড়াতাড়ি বললে কি আর হয়।একটু বসুন কতো দূর থেকে একা ড্রাইভ করে আসলেন।

– আমি এখানে বসে আপনার সাথে আড্ডা দিতে আসিনি। আর ম্যানেজার কে বলা আছে কাগজ রেডি আপনি সাইন করলেই ডিল ফাইনাল।

– এতো তাড়া কিসের দেখুন তো আজ আমাকে কি রকম লাগছে?

আজ এলিজা ব্লাক জর্জেট একটা শাড়ি পড়েছে সাথে হাতা কাটা ব্লাউজ, চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া।হালকা মেকাপে অসাধারণ লাগছে।আদনান একবার এলিজা কে পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠলো,
– আমাদের ফ্যাশন সো এর জন্য পারফেক্ট আছেন।

আদনানের কথায় এলিজা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।কর্কশ গলায় বলে,

– হোয়াট ডু ইউ সেয়িং?

আমি এক কথা বারবার বলা পছন্দ করি না।আপনি যেটা শুনেছেন ওইটাই।আর এবার আমি আসি, ম্যানেজার ফাইল রেখে যাবে সাইন করে পাঠিয়ে দিবেন।

আদনান চলে যেতেই এলিজা নিজের সামনের সবকিছু ফেলে দিলো। কেবিনে ভাঙার শব্দে কিছু গার্ডস কেবিনে প্রবেশ করতেই এলিজা হংকার দিয়ে উঠলো,
– তোমাদের সাহস কি করে হয় আমার কেবিনে প্রবেম করার।

– সরি ম্যাম।

– সরি মাই ফুট।তোমাদের যে কাজটা দিয়েছিলাম ওইটা ঠিকঠাক মতো করেছো?

– জ্বি ম্যাম।দুইদিন আগে বিয়ে করেছেন উনি?

– হোয়াট।তোমরা সেটা এখন আমায় বলছো।

কথাটি বলেই এলিজা একটা গার্ড কে থাপ্পর মারে।পাশ থেকে আরেকজন হার্ড বলে উঠলো, ম্যাম মেয়েটা গ্রামের। আবারার চৌধুরী নিজে পছন্দ করে এনেছেন। আদনান চোধুরি জাস্ট গিয়ে কবুল বলে চলে এসেছে।

– কি বললে। আদনান চৌধুরি কেন কবুল বলে চলে এসেছেন? এর পিছনে কি অন্য কোনো রহস্য রয়েছে।আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।

এদিকে,,

আরোহী সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আরেকটা টেক্সট দেখলো সেই একই নাম্বার থেকে।

– তুমি একটু কলেজের সামনে আসো,তোমার থেকে শুধু একটা কথা জেনে নিবো। আর আমি জানি তুমি আসবে।কারন তুমি না আসলে তোমার বাসায় যেতে পিছ পা হবো না। কারন এখন আর আমার কোনো বাঁধা নেই।শুধু লক্ষ্য একটাই ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের করে নেওয়া।

আরোহী ফোনটা বিছানায় ফেলে দিয়ে ভাবতে লাগলো তার কি করা উচিত।

অতঃপর……

#চলবে

( জানি না কি রকম হয়েছে।অনেক সমস্যায় ছিলাম তাও অনেক কষ্ট করে গল্পটা দিয়েছি।ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ🥰 )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here