শিশির ধোয়া গোলাপ পর্ব ৭

0
1067

#শিশির_ধোয়া_গোলাপ

#ইভান_ডালী

#পর্বঃ০৭

আরোহির যদিও যাওয়ার ইচ্ছে ছিলোনা। তবুও যাচ্ছে কারণ এই তুষার ছেলেটা মোটেই সুবিধার নয়।না গেলে দেখা যাবে বাসায় এসে হাজির। অসহ্য একটা মানুষ। আরোহী কালো রংয়ের থ্রিপিস পরেছে। কানে ছোট দুটি টপ পরে নিয়েছে।নাকে আগে থেকেই হিরের নাকফুল পরা। গলায় লকেট সহ একটা চেন, হাতে দুটো স্বর্নের চুড়ি পরে নিয়েছে। সুন্দর করে হিজাব পরে বেরিয়ে পরলো। রিক্সা নিয়ে কলেজের ক্যামপাসে উপস্থিত হলো।

তুষারের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আরোহীর আগমন হচ্ছে তুষার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরোহীর দিকে। এতো অপরুপা কেন এই মেয়ে? আরোহি সামনে এসে কড়া গলায় বললো, কিছু বলবেন তুষার ভাই,

– বলতে কত কিছুই চাই তোমার শোনার টাইম আছে আরু পাখি?

– একদম বাজে কথা বলবেন না তুষার ভাই।

– ইশ এমন সুন্দরী মেয়ের মুখে ভাই ডাক শুনে মেরা দিল টুট গ্যায়া।

– আমার মনে হয় আপনার কোন দরকারী কথা নেই, সো আপনি থাকুন আমি চলে যাই।

– মেডাম অনেক দরকারী কথা আছে। আপনি কষ্ট করে একটু আমার সাথে সামনের ক্যাফেতে চলুন।

– যা বলার এখানেই বলুন।

– প্লিজ আরু আমি তোমাকে ক্যাফেতে আসতে বলছি, আমার বাসায় না।

– চলুন তবে মনে রাখবেন আপনার কাছে সময় মাত্র বিশ মিনিট।

______________________________________________
এলিজার অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে আরোহিদের বাসার দিকে যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর গাড়ী সাইটে রেখে একটা বুকে নিয়ে নিলো হলুদ আর লাল গোলাপের। আবার গাড়ি ড্রাইভা করতে লাগলো, স্লো মিউজিকে গান বাজছে, তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই,আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই।
খারাপ মুড-টা মুহূর্তেই ভালো হয়ে গেলো। একসময় প্রচুর গান গাইতো আদনান আজ তা অতীত। যদিও এই মুহূর্তে নিজেও গুন গুন করে গাইছে,তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই। আর কিছু বলতে বলতে সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলে আরোহী একটা ছেলের সাথে ক্যাফেতে ঢুকছে। সাথে সাথে হার্ট ব্রেক করে দিলো। গাড়ি পার্কিং এরিয়ায় রেখে চলে আসলো ক্যাফেতে।

আদনান প্রবেশ করবে এমন সময় দারোয়ান বললো স্যার এক ঘন্টার জন্য পুরো ক্যাফে বুক করেছে একজন। আদনান আশ্চর্য দৃষ্টিতে দারোয়ানের দিকে তাকলো, তারপর বললো, মানে?

– অতো মানে তো আমি জানিনা সাহেব।শুধু জানি যিনি বুক করেছেন তিনি নাকি কি ভালোবাসা প্রকাশ টোকাশ করবে।

মুহূর্তেই আদনানের চেহারার রং পাল্টে গেলো। এই কয়েকদিনে আরোহীর প্রতি অনেকটা দূর্বল হয়ে পরেছিলো আদনান। নিজেকে সংযত করে বলে, আসলে যে এটা বুকিং করেছে সে আমার ফ্রেন্ড। গাড়ি থেকে ফুলের বুকেটা এনে দারোয়ানকে দেখিয়ে বলে,এই যে দেখুন আমি এগুলোই আনতে গিয়েছিলাম।

দারোয়ান সরে দাঁড়িয়ে আদনানকে প্রবেশ করতে দিলো। আদনান যত সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ততি তার হৃদয়ের ধুকপুক শব্দটা বেড়ে যাচ্ছে।

আরোহী বেড় হওয়ার আগে নুরকেও বলেছে আসতে। নুরের একটু কাজ ছিলো তাই আরোহিকে বলেছিলো তুই যা আমি আসছি।

নুর নিজের কাজ শেষ করে আরোহীকে টেক্সট করলো। আরু তুই কোথায়?

আরোহী রিপ্লাই করলো। আর কিছু লিখবে তার আগেই কেউ তার চোখের উপর কিছু দিয়ে বেঁধে দিলো। আরোহী বললো,এসব কি হচ্ছে তুষার ভাই? খুলে দিন আমার চোখ।

– খুলে দেবো শুধু একটু সময় দাও। তোমার দেয়া বিশ মিনিটের মধ্যেই তোমাকে ছেড়ে দেবো।

– দেখুন আমি আপনাকে বিশ্বাস করে আপনার সাথে এসেছি। আশাকরি সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবেন।

– আরু পাখি তুমি কি উল্টো পাল্টা কিছু ভাবছো যাস্ট এক মিনিট। বলেই কাউকে ইশারা করে সব লাইট অফ করে দিতে বললো।

আদনান ভেতরে আসতেই সব কিছু অন্ধকার দেখতে পেলো। বুকের বা পাশে কেমন চিন চিন ব্যথা অনুভব করছে। মুখ ফুটে আরোহী বলে ডাক দেবে তার আগেই চারপাশ আলোকিত হয়ে গেলো।

কেউ একজন আরোহীর চোখের কাপড় সরিয়ে দিলো। সাথে সাথে আরোহীর শরীরে ফুলের বর্ষণ হতে লাগলো।আরোহী কিছু বলবে তার আগেই তুষার হাঁটু মুড়ে বসে আরোহীর সামনে একটা রিং বাড়িয়ে দিয়ে বলে, উইল ইউ মেরি মি? আরোহী মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো কড়া গলায় কিছু বলবে তার আগেই, তুষার আরোহী ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলে,প্লিজ আজ না শুনবো না।

এই দৃশ্য দেখে আদনান নিজের হাতের ফুলগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে আসে। বের হয়ে এসেই সামনের কাঁচের দরজায় স্বজোড়ে পাঞ্চ মারে। সাথে সাথে হাত কেঁটে রক্ত ঝড়তে থাকে। কিছু কাঁচের টুকরো হাতেি গেথে রয়।

আরোহীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে, আরোহী ঠাসসসসসসস করে তুষারের গালে চড় বসিয়ে দেয়। আদনান ফুলগুলো এসে পড়েছে আরোহীর পায়ের কাছে। কড়া গলায় আরোহী বলে,আপনি জানেন আমি বিবাহিতা। কারো সম্পর্কে না জেনে তাকে প্রপোজ করার সাহস হয় কি করে? আর কোন অধিকারে আপনি আমাকে টাচ করেছেন?

– আরোহীর কথা শুনে তুষার দু’পা পিছিয়ে যেয়ে বলে, তুমি মিথ্যে বলছো আরু পাখি?

– চুপ একদম চুপ আমি কারো আরু পাখি না আমি মিসেস আদনান চৌধুরী। আর এটাই আমার একমাত্র পরিচয়।

আদনান গাড়ির দিকে যাওয়ার সময় আদনানকে দেখে কয়েকবার ডাকলো,নুর। ড় আদনান দ্রুত পায়ে চলে আসলো।নূরের ডাক তার কান অব্দি পৌঁছেনি।

নুর আদনানের হাতের রক্ত দেখে ঘাবড়ে গেলো। তাড়াতাড়ি ভিতরে এসে বলে, আরু দুলাভাইয়েে কি হয়েছে।

আরোহী অবাক হয়ে বলে, সেখানে কোথা থেকে আসলো?

– আরু আমি মাত্র দেখলাম দুলাভাই বের হয়ে যাচ্ছে এখান থেকে। আর তার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।

– আরোহী রাগী দৃষ্টিতে তুষারের দিকে তাকিয়ে নিজের দিকে তাকাতেই হলুদ আর লাল গোলাপগুলো চোখে পরলো। আরোহী ফুলগুলো তুলো নিয়ে বলে,আপনি আমাকে ভুল বোঝেনি-তো আদনান।আরোহী ফুলগুলো জড়িয়ে ধরে বলে, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আরোহীও দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো।
তুষার আর নুর বোকার মতো দাঁড়িয়ে দেখলো।
আরোহী বাহিরে এসেই একটা সিএনজি নিয়ে আদনানের বাসার দিকে রওয়ানা দিলো। হাতের মুঠোয় ফুলগুলোর দিকে তাকাতেই চোখের কোনে অশ্রু জমা হলো। সেদিন আদনানকে একটু খোঁজা মেরে বলেছিলো,কখন আমাকে কোন কথা মানাতে চাইলে, হলুদ আর লাল গোলাপ নিয়ে আসবেন আমার জন্য দেখবেন আপনার কথা কিভাবে মেনে নেই।
______________________________________________
নুর তুষারকে উদ্দেশ্য করে বললো, মনে তো হচ্ছে সব গোলমাল আপনি পাকিয়েছেন।কি এমন করেছেন দুলাভাই এতোটা রেগে গেলো।

তুষার সবটা খুলে বললো নুরকে। সব শুনে নুর বলে, আপনার ছেলেরা এতো বেশি বুঝেন কেমনে।এতোদিন পর এসে সেই মেয়েটার সম্পর্কে না জেনে ডিরেক্টর প্রপোজ করতে চলে এসেছেন! এই বুদ্ধি নিয়ে আবার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন। আচ্ছা ফেল টেল করেন নি তো? নাকি টেনে টুনে পাস।

রাগের মধ্যে এমন কথা শুনে তুষার হেসে ফেললো,তারপর বললো,আসলে আমি ভাবতেই পারিনি আরোহীর বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি হবে।যাইহোক আমার কপাল থেকে আরোহী চলে গেলো।

– তাতে কি মিস্টার চাইলে নুর আপনার হবে।
– তুষার বললো,আপনার মাথায় সমস্যা ডাক্তার দেখান। একজন টেনে টুনে পাস ছেলের সাথে থাকতে চাইছেন। কথাটা শেষ করেই বেরিয়ে পরলো তুষার।

তার হৃদয়ের ঝড় সে কাউকে দেখাতে চাইছেনা।কতটা আশা নিয়ে এসেছিলো সব আশা মুহূর্তেই নিরাশায় রুপ নিলো।

______________________________________________
আরোহী বাসায় এসে আদনানকে খুঁজে পেলো না। আরোহী ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো তোমাদের সাহেব বাসায় ফেরেনি?

এক সার্ভেন্ট বললো,ম্যাম কোন সমস্যা?

-আচ্ছা তোমাদের স্যারের মন খারাপ থাকলে কোথায় যায় বলতে পারো।

– একজন বললো ম্যাম তানিন কুঞ্জ ফার্ম হাউসে।

আরোহী ঠিকানা নিয়ে সেখানে পোঁছে গেলো,।

আদনান মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে, আছে। হাতের রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে হাতেই।

এমন সময় দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনতে পেলে। উঠে যেয়ে আরোহী গলার আওয়াজ শুনতে পেলো আরোহী বলছে আদনান দরজাটা খুলুন।
আরোহীর শব্দ শুনে আদনান আবার এসে বসে রইলো।

#চলবে

(
ভুলক্রটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here