শিশির ধোয়া গোলাপ পর্ব ৮

0
1251

#শিশির_ধোয়া_গোলাপ

#ইভান_ডালী

#পর্বঃ০৮

ওই ছেলে তোমার কোথায় কোথায় স্পর্শ করেছে, কোমড়ে হাত দিয়ে বলে, এখানে। এভাবে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করছে আর একি প্রশ্ন করছে। আরোহী ঠোঁটের উপর হাত রেখে বলে, তোমার এই খানে স্পর্শ করেছে তাইনা। বলেই আরোহী ঠোঁট দুটো হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বলে,তোমার স্পর্শ দরকার হলে আমাকে বলতে, আদনান আপনি নেশা করেছেন। তাই আমার থেকে দূরে থাকুন। আদনান ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,আমার স্পর্শ তোমার ভালো লাগছে না। কি ভাবে ভালো লাগবে বলো। সে ভাবেই স্পর্শ করবো।আজকে থেকে তোমার শরীরের প্রতিটি জায়গায় আমার স্পর্শ থাকবে।বলেই আরহীকে কোলে তুলে নিলো।

সকালের মিষ্টি রোদ চোখ পরতেই পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে আদনানের বাহুতে আবিষ্কার করলো। কাল রাতের কথা মনে করতেই লজ্জা মিয়ে গেলো।কাঁথাটা শরীরে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো। আয়নায় নিজেকে দেখে আৎকে উঠলো।কোন মতে গোসল শেষ করে বাহিরে আসলো। নিজের দিকে তাকাতেই আরোহী লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে বারংবার। আয়নায় সামনে বসে ভেজা চুলগুলো নাড়ছিলো। হঠাৎ আয়নায় আদনানের ঘুমন্ত চেহারা দেখে আরোহীর মনে একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো।আরোহী আস্তে আস্তে আদনানের সামনে আসলে,ঘুমন্ত আদনানের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেঁসে,, আরোহী নিজের চুলগুলো আদনানের মুখের সামনে নড়াচড়া দিচ্ছিলো।

আদনানের ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি। ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকালে আরোহীকে দেখতে পায়। আরোহী এবার নাক বরাবর সুরসুরি দিতে লাগলো চুল দিয়ে।আদনান বুঝলো আরোহী তাকে ইচ্ছে করে জ্বালাচ্ছে। তাই আদনান আরোহীর হাত ধরে টান দিতেই আরোহী তাল সামলাতে না পেরে আদনানের বুকের ওপর গিয়ে পড়লো।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। এক পর্যায়ে আরোহী উঠলে চাইলে আদনান শক্ত করে চেপে ধরে।অনেক্ক্ষণ চেষ্টার পরোও আরোহী ব্যর্থ হয়ে বুকেই নেতিয়ে পড়লো।
আদনান এবার হেঁসে বলল,

– তোমার মতো চঁড়ুই পাখিকে আঁটকে রাখা কোনো ব্যপার না এই আদনান চৌধুরীর কাছে।

– আমাকে চঁড়ুই পাখি বলবেন না।আপনি তো নিরামিষ, আনরোমান্টিক, ঢেঁড়স।

কথা গুলো আরোহী মুখ বাকিয়ে বলতেই আদনান হো হো করেন হেঁসে ওঠলো।আরোহীকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।আরোহী হাবলুর মতো এখনো ওই জায়গায়ই পড়ে রইলো,

– এখানে হাসার কি হলো,ওনি হাসলেন কেন?

আদনান ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আরোহী আদনানের কাছে প্রশ্ন ছুড়লো,

– তখন ওই ভাবে হেঁসে ওঠলেন কেন? মনে হয় কোনো জোক্স শুনেছেন?

– জোক্স ই তো।

– জ্বি না মশাই আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি।আপনার কাছে অবশ্য সেটা জোক্স হওয়াটাই স্বাভাবিক।

– কোনটা ঠিক বলেছো,আমি নিরামিষ, আনরোমান্টিক, ঢেঁড়স ওইটা?

– হুম।

– আমার মনে হয় তুমি কাল রাতের কথা ভুলে গেছো।অবশ্য আমি যে এগুলো না সেটার আর প্রমান দেওয়ার দরকার নেই।

আরোহী কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়।কারন কাল আরোহী চাইলেও আদনানকে বাঁধা দিতে পারেনি।আদনানের সরি বলা শব্দে আরোহীর ঘোর কাটে।

– সরি??কিসের জন্য?

– আসলে কাল রাগের মাথায় ওসব হয়ে গেছে।আমি তোমার সাথে এরকম কিছু করতে চাই নি।জানি সরি দিয়ে হয়তো কিছু না এই ভুলটার কাছে, আই এম এক্সট্রিমলি সরি।

আরোহী জানে এটা আদনান জেলাস থেকে করেছে।তাও আদনানের সাথে মজা করতে আরোহী বলল,

– আপনি কি করে পারলেন এমনটা করতে।তুষার ভাই আমাকে কখনো মেনে নিবে না।

তুষার নাম শুনতেই মুহূর্তে আদনানের চোখে মুখ রক্তিম হয় ওঠে। আদনান আরোহীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলতে লাগলো,

– এই ছেলের নাম আমি শুনতে চাইনা।কেন ভুলতে পারছো না ওকে।কি নেই আমার যার কারনে তুমি ওকে ভুলতে পারছো না।

– আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। তুষার ভাই আমাকে অনেক ভালোবাসে।

– রুহি একটা কথা কি জানো,ভালোবাসায় জোড় খাটে না। যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও। কথাটি বলে হনহন করে আদনান বাহিরে চলে যায়।

আরোহী ঠায় দাড়িয়ে আছে এখনো,মজা করতে গিয়ে আদনান আবার তাকে ভুল বুঝলো কি না।

______________________________________________

নূর কলেজ থেকে বাসার উদ্দেশ্যে যাবে,এমন সময় তুষারের সাথে নূরের দেখা হয়।তুষারের মুখের অবস্হা দেখেই বুঝা যাচ্ছে আরোহীর বিয়ে টা সে মেনে নিতে পারেনি।তুষার নূরকে দেখে হালকা হেঁসে জিজ্ঞেস করল,

– কেমন আছো নূর।

– আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?

– আসলে আমি খুব আনলাকি পারসন। যে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে পারেনা সে তো আনলাকি।

– এভাবে বলছেন কেন? ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন তো আর না।কিছু ভালোবাসা থাকুক না অন্তরালের চাদরে ঢাকা।

– হুম।তুমি বাসায় যাও তোমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

নূরের কাছে আজ মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থেমে যাক।তুষার এই প্রথম তার সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বলছে । ভালোবাসার বিধস্ত ছাপ দেখে আজ তুষার কে নূরের কাছে অন্য রকম লাগছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু তুষার কে পর্যবেক্ষণ করছে।তুষারের কাছে আজ আর কোনো জড়তা অনুভব করছে না। নূর হঠাৎ আকস্মিক ভাবে বলে উঠলো,

-আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই,যদি আপনি শুনেন।

– হুম। বলো

– আ- মি…

– তুমি?

– আ আ মি। আপ প নাকে……

তুষার নিরব চাহনি তে নূরকে দেখে যাচ্ছে । এই মেয়েটা সবসময় তাকে ভয় পেতো। আরোহী র কখনো জিঙ্গাসা করলে এড়িয়ে যেতো।
তুষার আজ নূরের মাঝে অন্য কিছু লক্ষ্য করলো।তুষারের ভাবনার মাঝেই নূর বলল,
– আমি আপনার সাথে বসে কফি খেতে পারি যদি আপত্তি না থাকে আপনার?

– হ্যা চলো।তবে আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে তুমি আমাকে অন্য কিছু বলতে চেয়েছিলে।

– না না।এ টাই বলললতে চেয়েছি।

– বাই দা ওয়ে লেটস গো।

______________________________________________

আদনান নিজের অফিসে বসে আরোহীর কথা ভাবছিলো।আচ্ছা আরোহী আবার তাকে ধোঁকা দিবে না তো।কারন ইফতির জন্য ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস নামক জিনিসটা না থাকলেও আরোহীর থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা অসম্ভব। মেয়েটা কি যাদু জানে?
আচ্ছা আরোহী কি আমাকে ভালোবাসে? ওর অনুমতি না নিয়ে আমার অধিকার দেখানো টা ঠিক হয়নি। এমন ও তো হতে পারে সে আমাকে ভালোবাসে না, ভালোবাসে তুষার কে।তাহলে কি আমি খুব বেশি ভুল করে ফেললাম।

আদনান আনমনে এগুলো ভাবছিলো।হঠাৎ তার সামনে এলিজাকে বসে থাকতে দেখে।

– আপনি এখানে কখন এলেন?

– আপনি আপনার চিন্তায় এতোটাই মগ্ন ছিলেন যে আমার উপস্থিতি আপনি টের পাননি।এনি ওয়ে আমাদের ডিল কমপ্লিট। ফাইল গুলো দিন।

– হ্যা সিউর।ম্যানেজার ওনাদের ফাইল দিয়ে দেও।

– সরি স্যার, ফাইলগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

– হোয়াট।তুমি কি বলছো? আমাকে আগে জানাও নি কেন?

– স্যার আমি আজ সকাল থেকেই খুঁজছিলাম কিন্তু পাইনি।আপনাকে জানানোর আগেই এলিজা ম্যাম চলে আসছে। এক্সট্রিমলি সরি স্যার।

এলিজা নিরবে হেঁসে যাচ্ছে। কারন সে তো এটাই চেয়েছিলো, আদনান অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হোক।এলিজা ভিতরে ভিতরে হাসলে ও বাহিরে প্রকাশ করছে না। এলিজা ইসট্রিকলি জিজ্ঞেস করলো,

– মিঃ আদনান চৌধুরি আমি জানতাম আপনি যত্ন সহকারে আপনাদের কাজ করেন।কিন্তু এসব কি?

– আপনি শান্ত হোন।আপনার ফাইল আপনারা কাল পেয়ে যাবেন।

– নাকি এতো টাকার লোভ সামলাতে পারেন নি।ভেবেছেন টাকাগুলো গুম করে দিবেন।

-ডোন্ট লিমিট ক্রস। টাকার লোভ সেটা আপনার বাবা ভাস্করের ছিলো আমার না।তাই সবাই কে নিজের মতো ভাবা বন্ধ করুন।

– টাকা নিয়ে এখন ফাইল রিটার্ন করতে পারছেন না।কালকের মধ্যে ফাইল না পেলে আপনাদের পুলিশে দিতে দ্বিতীয় বার ভাববো না। মাইন্ড ইট।

এলিজা চলে যেতেই আদনানের রক্তিম চেহারা ফুটে ওঠে।নিজের কেবিনের সবকিছু উলোটপালোট করে খুঁজতে লাগলো। আদনান বেশ বুঝতে পেরেছে এটা এলিজার কোনো চাল ছিলো।তাই কিছু একটা ভেবে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
বাসায় গিয়ে……………

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here