শিশির ধোয়া গোলাপ পর্ব ৯

0
1030

#শিশির_ধোয়া_গোলাপ

#ইভান_ডালী

#পর্বঃ০৯

আরোহী সবে নিজের কাজ সেরে ঘরে বসে আয়নার সামনে গুন গুন করে গান গাইছিলো।আদনান ঘরে ডুকেই নিজের কাবার্ড এর সবকিছু এলোমেলো করতে লাগলো।আরোহী বলল,

– আদনান আপনি কি কিছু খুঁজছেন? আমাকে বলুন।

আদনান কোনো কথা না বলে একমনে শুধু খুঁজতে লাগলো। আরোহী এবার বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠেই বলল,

– আপনি কি খুঁজছেন আমাকে বলুন।আমি খুঁজে দিচ্ছি।

– আমার একটা ইম্পরট্যান্ট ফাইল।যেটা না পেলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।শুনেছো তুমি এবার প্লিজ আমার সামনে থেকে যাও।

আরোহী বিছানার পাশে ছোট্ট টি টেবিল থেকে একটা ফাইল দেখিয়ে বলল,এইটা খুঁজছেন কি?

আদনান ফাইলটা খুলে দেখলো সেই ফাইলটি।ফাইলটা নিয়ে আদনান দ্রুত বাসা থেকে আবার এলিজার অফিসের দিকে রওনা হলো।

এলিজা তার নিজের বাবার সামনে বসে ছিলো।মিস্টার ভাস্কর তার মেয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন, ওয়েল মাই ডটার।যেটা আমি পারিনি সেটা তুমি পেরেছো।আই ফিল প্রাউড ফর ইউর সাকসেস।

– অফিস থেকে ফাইলটা নেওয়া অনেক টাফ ছিলো।সকালে মিস্টার আদনান ডেস্ক চেক করতে গিয়েছিলেন ঠিক তখনি সুযোগ বুঝে ফাইলটা কেবিন থেকে আমি নিয়ে এসেছি।

-তুমি আমার যোগ্য সফল মেয়ে।এখন ওই আদনান চোধুরি জেলের ভাত খাবে ভাবতেই ভালো লাগছে।
অতঃপর,এলিজা এবং মিস্টার ভাস্কর সমস্বরে হেসে দিলো।

মুহূর্তেই কেবিনে হন্তদন্ত ভাবে প্রবেশ করলো আদনান।কিছু গাটস্ বাধা দিলোও আদনান কেবিনে ডুকতেই মিস্টার ভাস্কর এবং এলিজা দাড়িয়ে যায়।আদনান মিস্টার ভাস্করের মুখের ওপর ফাইল ছুঁড়ে মারলো।

– এই নিন ফাইল।নেক্সট থেকে একটু সাবধানে দেখে শুনে চুড়ি করবেন।চোর চুরি করলে প্রমান ঠিকই রেখে যায়।মিস এলিজা আপনার হাতের ব্রেসলেট টা কি এটা?

এলিজা আমতা আমতা করে বলে,
– ন না,তো।এএ টা আ মার না।

– ভুল পথে হাঁটছেন।আপনাকে আপনার বাবার থেকে ডিফরেন্ট ভেবেছিলাম।তবে কথায় আছে, বাঁশের গোড়া থেকে তো বাঁশই হয়।সো বিলিভ করা টা ভুল হয়েছে।আসলে ভুলটা আমারই।ম্যানেজার ওনাদের টাকা রিটার্ন করো কারন ওনাদের দিলটা ক্যানসেল করে দিলাম।কথাটি বলেই আদনান চলে গেলো।

ম্যানেজার টাকা দিয়ে ফাইল নিয়ে ফিরে আসলো।

এলিজা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কেবিন থেকে চলে গেলো।মিস্টার ভাস্কর রাগে টেবিল থেকে সব ফেলে দিলেন।এখন তাকে অন্য কিছু ভাবতে হবে।
_____________________________________________

ফ্লাশবেকঃ

আদনান সেদিন তুষার আর আরোহী কে একসাথে দেখে বাসায় এসে টি টেবিলের ওপর ফাইল রেখে ছিলো।পরের দিন সকালে আসার সময় কাভার্ড থেকে ফাইল নিয়ে এসেছিলো। ফাইলের ওপরের মলাট এক থাকায় ওইটাই আসল ফাইল ভেবে আদনান অফিসে নিয়ে চলে আসে।

_____________________________________________

আরোহী ঘরে মন খারাপ করে শুয়ে আছে।দুপুরে আদনান ঝাঁঝালো ভাষায় কথাগুলো বলেছে যা আরোহীর হৃদয়ে তীরের মতো আঘাত হেনেছে। আরোহী খুব সুন্দর করে হালকা সেজেছিলো আদনানকে দেখাবে বলে। কিন্তু মানুষটি এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে কেউ তার জন্য সেজেছে সেটাই বুঝতে পারেনি।দরজা খোলার আওয়াজে আরোহী চোখ বন্ধ করে নেয়।

আদনান ঘরে এসে দেখে আরোহী ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে।আদনান কাভার্ড থেকে টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

আরোহী চোখ খুলে এদিন ওদিন তাকায় আদনান কে দেখতে না পেয়ে ভাবলো হয়তো ফ্রেশ হতে গিয়েছে। তাই আবার চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।আদনান ওয়াশ রুমের ওপাশ থেকে বলল,

– রুহি বেবি আমার টাওয়ালটা একটু দেও।

আরোহী অভিমানে আগের ন্যায়ই শুয়ে আছে।

– চোখ পিটপিট করে ঘুমের ভঙ্গি দেখানো তাই না।আমি যদি বাহিরে আসি কি হবে তা তো বুঝতেই পারছো।

– যা ইচ্ছা করে নিন।আমি দিব না।

– এমন মিষ্টি সাজ সেঁজে কেউ এভাবে কথা বলে।প্লিজ টাওয়ালটা দেও।

আরোহী এবার টনক নড়ে, তার মানে সে যে সেজেছে সেটা আদনানের চোখে পড়েছে।আরোহী একটা টাওয়াল নিয়ে আদনান কি দিতে হাত বাড়াতেই আদনান আরোহী কে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ঝড়না থেকে পানি এসে আরোহী আদনান দুজনেই ভিজতে লাগলো।আদনান আরোহীর কমর জড়িয়ে বলে,সরি রুহি বেবি আমি দুপুরে ওইভাবে বলতে চাইনি। তুমি জানোনা ফাইলটা না পেলে আমার কতো বড় ক্ষতি হতো।
আরোহী অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,আমি কারো ওপর রাগ করিনি।

আদনান হঠাৎ বলে উঠলো, ভালোবাসো আমায়?

আদনানের এরকম প্রশ্নে আরোহী হকচকিয়ে ওঠে।কি বলবে সে আদনান কে।তবে ভালোবাসি কথাটা বলতে যেন আরোহীর ঠোঁট কাপতে লাগলো।আরেহী মুখটা নিচু করে ফেলল লজ্জায়।আদনান আরোহীর মুখটা উঁচু করে বলে, তাকাও আমার দিকে। আরোহী আদনানের দিকে তাকায়।আদনান আরোহীর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আদনান বলল,

– এই চোখ জোড়া বলে দিচ্ছে আমার জন্য হাজারো অভিমান জমে আছে।আর অভিমান তো তার ওপরই করা যায় যাকে ভালোবাসা যায়।

– অভিমান টাই শুধু দেখতে পেলেন আর কিছু না।

– দেখেছি আরও অনেক কিছু দেখেছি শুধু বলতে ভয় হয় যদি ছেড়ে যাও।

– আপনার আর আমার বন্ধন হচ্ছে জ*ন্ম জ*ন্মা*ন্তরের। এবং যে ভালোবাসে সে কখনো ছেড়ে যায় না।

– ভালোবাসি তোমায় খুব ভালোবাসি।তুমি কি ভালোবাসবে আমায়।

আরোহী দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। এই অশ্রু হচ্ছে আনন্দের অশ্রু। নিজের ভালোবাসা কে নিজের করে পাওয়ার অশ্রু।
আদনান আরোহীর দু চোখে গভীর ভাবে চুম্মন করে।আরোহী ও আদনানকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
– আমি ভেবেছি হয়তো আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন।

– ভুল ধারনা মাথায় আনার আগেই নূর আর তুষার আমাকে সবটা বুঝিয়ে বলে।

______________________________________________

ফ্লাশবেকঃ
আদনান সবে মাএ সবার ডেক্স ভিজিট করছিলো ঠিক তখনি নূরকে দেখে আদনানের ভিতরটা ধুক করে উঠলো।আদনান ভেবে ছিলো হয়তো নূর বলবে তুষার আর আরোহীর সম্পর্কের কথা বলবে।আদনান কে অবাক করে দিয়ে নূর তুষার কেও সাথে নিয়ে এসেছে।তারপর পুরো ঘটনা বিস্তৃত করে। শেষে তুষার শুধু এটাই বলেছে,
-আরোহী আপনাকে খুব ভালোবাসে।এটা ও নিজে আমাকে বলেছে। আর আমি জানি আপনি ওকে আমার থেকেও আগলে রাখবেন।ভালো থাকবেন।

তারপর তুষার আর নূর দুজনেই চলে যায়।

______________________________________________

সবটা শুনে আরোহী বলল,

– তার মানে আপনি আমাকে ভুল বুঝতেন যদি নূর আর তুষার ভাই না বলতো।

– ভালোবাসা জোড় করে হয় না। আর যে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে সে সর্বদা চায় তার ভালোবাসার মানুষটা খুশি থাকুক। তবে তুমিও তো বলো নাই সত্যি টা।

– বলার সুযোগ দিয়েছেন।

আর কিছু বলতে নিলেই আদনান আরোহীর ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়।

কেটে যায় আরো একটি রাত দুই দম্পতির। প্রতিটি ভালোবাসা এমন হওয়া উচিত। আদনানও পুরোনো সবকিছু ভুলে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিচ্ছে।

————————————————————————
এদিকে,
নূর বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে ছিলো।কিন্তু আজ যেন তুষারের কথা মাথা থেকে বের করতেই পারছে না। প্রিয় জনের একটু কাছাকাছি থাকতে পারলে যেন তার কাছেই রয়ে যেতে ইচ্ছে করে।কি অদ্ভুত ভালোবাসা তুমি যাকে ভালোবাসো সে অন্য কাউকে ভাভোবাসে। আর তোমাকে যে ভালোবাসে তুমি তাকে বাসো না। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই নূর ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে। পিছনে তাকিয়ে দেখে নূরের মা মিসেস শালেহা বেগম দাঁড়িয়ে আছে।

– নূর মা আমার আমি কিছু বলতে চাই তোকে?

– তুমি আমাকে কিছু বলবে তা আবার আমার কাছে অনুমতি নিতে হবে।তুমি শুধু বলে যাও।

মিসেস শালেহা বেগম, নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,
-আমি যাবার আগে তোকে বিয়ে দিয়ে মরতে চাই। জানি তুই আমাকে একা রেখে যেতে চাস না। তবে তোকে বিয়েটা করলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবো।

বিয়ে শব্দটা শুনতেই নূরের ভিতরটা আৎকে উঠলো। তাহলে কি তুষার ভাইকে নিজের মনের কথা জানাতেও পারবে না। আরো কয়েকটি ভালোবাসার মতো কি আমার ভালোবাসাও অপূর্ণ রয়ে যাবে।

#চলবে

ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

হ্যাপি রিডিং🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here