শিশির বিন্দু পর্ব ১৩ +১৪

0
491

#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ১৩ & ১৪

সেই দেওয়াল ঘড়ির তিনটে বুলেট,
আমায় আনন্দ দেয়!
তারপরের সূর্যোদয়ে ঘুম আসে,
সপ্নের তিন চাকা চড়ে শহর ঘোরা যায়!

________ সৌরভ মাহামুদ

প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতায় ঋতুর পরিবর্তনকে আমরা সত্যি ঠিকমত ধরতে পারি না! কখন আশ্বিন আসে আর কখন যায় শহরে বসে থেকে তা বোঝা আরো কঠিন হয়ে দাড়ায় আমাদের জন্য! তবুও শরৎ আসে, আশ্বিন আসে! প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে শরৎ উন্মুখর হয়ে থাকে! শরতের শোভা বৃদ্ধির সাথে সাথে মনের শোভাও বৃদ্ধি পেতে থাকে! অবশ্য তার জন্য মন থাকা চাই, দুই চোখ মেলে দেখার দৃষ্টি থাকা চাই, দুই ডানা মেলে উড়াল দেবার স্বপ্ন থাকা চাই! এর শোভা উপভোগ করতে হলে প্রকৃতির সাথেই আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে! আমরা যদি সেটা না করতে পারি, তাহলে প্রকৃতির কোনো উন্নতি হবে না! কিন্তু তাকে যদি আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বলি তাহলে প্রকৃতি বিপর্যস্ত হতে বাধ্য,, সেই বিপর্যয় পরিণামেই আমাদের বিপর্যস্ত করে তুলবে!..

আজ সাতদিন পর শিশির বাড়ি ফিরেছে! মাথায় ব্যান্ডেস করা, খুব আঘাত লেগেছিলো সেদিন! নিজের বিধস্ত হবার দিনটা ছিলো খুবই ভয়ানক! শিশির কল্পনাও করতে পারেনি এমনটা হবে! আচ্ছা, প্রতিশোধ নেওয়াটা কি খুব বেশী জরুরি ছিলো? শিশিরেরও কি উচিৎ এখনি প্রতিশোধের পালটে জবাব দেওয়া? কিন্তু না শিশির সেটা করবে না! প্রতিশোধের উদ্ধৃতি রয়েছে যা অবশ্যই তোমাকে অনুপ্রাণিত করবে! তুমি যদি এখনই প্রতিশোধের কথা ভাবো তবে আরও একবার নয় দু’বার ভাবো! আর যদি তুমি তোমার ক্রোধের গভীরতার কথা ভাবো তাহলে খুব শীঘ্রই বিস্ফোরণ হবে! তবে, তুমি অপরিবর্তনীয় এমন কিছু করার আগে প্রথমে চিন্তা করো যা পরে তোমাকে অনুশোচনা করবে! জীবনকে করে তুলবে আরও দুর্বিষহ,, শিশিরও ঠিক সেই সময়ের অপেক্ষায় আছে, ধীরে ধীরে এর প্রতিশোধ তুলবে!..

হ্যাঁ,, শিশির এই সাতদিন হসপিটালের বেডে শুয়ে ছিলো! কারোর প্রতিশোধের কারণে তার আজ এই অবস্থা! শিশির এই চারদিনে রুহানের মাধ্যমে ইনফরমেশন নিয়েছেও কে তার এতো বড় ক্ষতি চায়! শিশির তার শত্রুদের মুখ চিনে রাখতে চায়, আর তার চেষ্টা সফলও হয়েছে! সে খুঁজে পেয়েছে কে কে এসবের সাথে জরিত ছিলো!..

সেদিন শিশির মিটিং শেষ করে রুহান কে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় আর বিন্দু, রুদ্রা, মেঘের জন্য শপিংমলে যায় সারপ্রাইজ গিফট কিনতে! কিন্তু কে জানতো তার সামনে শনী দাঁড়িয়ে আছে? শিশির যে ওভারে উঠেছিলো সে ড্রাইভার কিছুদূর যেতেই গাড়ি থামিয়ে, শিশিরের মুখে স্প্রে করে! সাথে সাথে শিশির জ্ঞান হারায় আর মুখ আড়াল করা কিছু গুন্ডা গাড়িতে এসে বসে! তারপর ড্রাইভার ওই মাস্তানদের দেখানো পথ অনুযায়ী গাড়ি চালায়! তারা শিশিরের ফোন, যাবতীয় সব ইম্পরট্যান্ট জিনিসগুলো নিয়ে নেয়! যেনো শিশিরকে গুম করে ফেললেও কেও না জানতে না পারে!

প্রায় ঘন্টা দু’য়েক পর শিশিরের জ্ঞান ফিরে আর তাকিয়ে দেখে সে একটা নিরিবিলি জায়গায় পড়ে আছে! আর শিশিরের চারপাশে কিছু মাস্তান টাইপের লোক তাকে ঘিরে বসে মদ-গাজা খাচ্ছে! শিশির উঠে বসে জিজ্ঞেস করলো তাকে এখানে কেনো আনা হয়েছে! এই কথা বলতেই গুন্ডারা সবাই হো হো হেসে বলতে থাকে, “তোকে তোর যমেরবাড়ি পাঠানোর অর্ডার এসেছে রে! কি করবো বল আমরা তো টাকায় কেনা গুন্ডা, তাই এমন মায়াবী মুখ বানিয়ে লাভ নেই! হা হা হা..” শিশির জিজ্ঞেস করে তাদের কে পাঠিয়েছে কিন্তু এ কথা যেনো তারা কানেই তুলছে না! তারপর এক প্রকার ধস্তাধস্তি চলে শিশিরের সাথে! শিশিরের শরীরের সব শক্তি যেনো কমে আসছে আসতে আসতে, নিজেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য! অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি! হঠাৎ করে পেছন থেকে কেও একজন এসে শিশিরের মাথায় বারি মারে! সাথে সাথে শিশির মাটিতে লুটিয়ে পড়ে! শিশিরের এই মুহূর্তে বিন্দুর হাসিজ্জ্বল মুখটা একবার ভেসে উঠে, আর সাথে সাথেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে! তারপর তাকে ওভাবেই ফেলে রেখে ওরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়! ওদের হয়তো শিশিরকে একেবারে মেরে ফেলার প্লান ছিলো কিন্তু কিছু মানুষের আনাগোনায় গুন্ডারা পালিয়ে যায়! ওরা ভেবেছিলো এমন নির্জন জায়গায় হয়তো কেও আসবে না, তাই এমন জায়গায় নিয়ে আসে! কিন্তু তাদের ভাবনাতেও ছিলো না এটা একটা গ্রাম, গ্রামের আনাচে কানাচে মানুষ যায়! শহর হলে না হয় গলিতে ফেলে রাখতো কেও না দেখার ভাণ ধরে চলে যেতো, কিন্তু গ্রামের মানুষ এমন না! গ্রামের মানুষেরা আর যাই হোক একটা মানুষকে এভাবে গুন্ডাদের হাতে ছেড়ে পালিয়ে যাবে না, তাকে রক্ষা করবেই! সেদিনও তাই ভাগ্যক্রমে শিশির বেঁচে গিয়েছিলো, নাহলে ও পরপারে সেইদিনই চলে যেতো! গ্রামের মানুষ-জনই তাকে নিয়ে ঐদিন সদর হসপিটালে ভর্তি করে! প্রায় তিনদিন পরে শিশির কে খুঁজে পাওয়া যায় কেরানীগঞ্জ এক সরকারি হসপিটালে থেকে! শিশিরের জ্ঞান থাকলেও ঠিকমতো কথা বলতে পারতো না, তাই কেও জানতোও না শিশির আদৌ কে? পুলিশদের সহযোগিতায় সেদিন শিশিরকে খুজে পায় করিম সাহেব! জানার পর সেখান থেকে সেদিনই আশরাফ আহমেদ ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে! আর তার চারদিন পর আজ শিশিরকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দিয়ে দেয়!

এই চারদিন বিন্দু সব-সময় শিশিরের সাথে হসপিটালে ছিলো! শিশিরেরও বিন্দুর প্রতি অনেকটা দূর্বলতা জন্মে গেছে ওর প্রতি যত্ন দেখে, হয়তো দশ বছর আগের ভালোবাসা আবারো কড়া নাড়ছে শিশিরের মনের দড়জায়! শিশির এতোদিন সবকিছু মেনে নেওয়ার চেষ্টা করতো, তাই বলে যে মেঘলা কে ভুলে বিন্দুর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিলো, সেটা না! তবে ভালো না বাসলেও বিন্দুর প্রতি মায়া ছিলো অনেকটাই, সে জানতে চেয়েছিলো কি কারণে বিন্দুর শিশিরের প্রতি এতো রাগ! কিন্তু বিয়ের এই এক মাসে চেষ্টা করেও শিশির বিন্দুর কাছে কিছু জানতে পারেনি, সব সময় ওদের কাছে কোন না কোন বাধা এসেই গেছে!

শিশির এখন বিন্দুর রুমে শুয়ে আছে! শিশিরের রুম দখল করে আছে শিশিরের বাবা আর তিয়াশ,, আর গেস্টরুমে শিশিরের মা, ইন্দু ও তার মা তন্দ্রাবতি! বিন্দুর বাবা আরো একদিন আগেই চলে গিয়েছে নারায়নগঞ্জ! এছাড়া বিন্দু আর শিশিরের মাঝে যে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক নয় সেটা শুধু ওদের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে চায় ওরা, এ নিয়ে ফ্যামিলিকে জানিয়ে তাদের কষ্ট দেওয়া কোন মানেই হয় না! রুদ্রাকেও বিন্দু না করে দিয়েছে, ওর বাবাই আর মাম্মা যে এক রুমে থাকে না এই কথা যেনো কাওকে না জানানো হয়! রুদ্রাও তাই মায়ের কথা রাখতে কাওকে কিছু বলে না! রুদ্র যেমন বিন্দুর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো রুদ্রের মেয়েও হয়েছে তাই, একদম বাবার কপি! বিন্দু রুদ্রকে তার মেয়ের মাঝে ফিল করে!..

বিন্দু হুট করে ওর রুমে আসে স্যুপের বাতি হাতে নিয়ে! শিশিরের দিকে বাতিটা বাড়িয়ে,,,

বিন্দুঃ গরম গরম এই চিকেন স্যুপটা খেয়ে নিন!..

শিশির বিন্দুর দিকে তাকালো ঠিকই কিন্তু কোন কথা বললো না,,,

বিন্দুঃ ( ভ্রু কুঁচকে) কি হয়েছে,, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

শিশিরঃ এই কয়েকদিন তো ভালোই স্বামী সেবা করলা, এখন তাহলে কি হলো?

বিন্দুঃ মানে?

শিশিরঃ স্যুপটা খায়িয়ে দাও!..

বিন্দুঃ আপনে এখন সুস্থ,, নিজের কাজ নিজে করতে পারবেন! তাছাড়া আমার কাজ আছে অনেক,, এই কয়েকদিন হসপিটালে থেকে বাড়ি-ঘরের অবস্থা খারাপ, পরিষ্কার করতে হবে! দুদিন হলো বুয়াও আসে তা, তার নাকি জ্বর এসেছে! এখন সব ক্লিন আমাকে একাই করতে হবে!..

শিশিরঃ যতক্ষন কথাগুলো বললে ততক্ষণে অর্ধেকের বেশি খাওয়া হয়ে যেতো! আর এতো টেনশন কিসের? আমার শালিকা তো আছেই, ওকে বলো ও না হয় তোমাকে হেল্প করবে!..

বিন্দুঃ ইন্দু, আর আম্মু কালকেই নাকি চলে যাবে!..

শিশিরঃ সেটা কি করে হয়? আমার শ্বাশুড়ি এই প্রথম মেয়ের বাড়ি আসলো আর এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে?

বিন্দুঃ আব্বুর খাওয়া অসুবিধে হচ্ছে! তাই আম্মু থাকতে চাচ্ছে না! ( শিশিরের মুখে এক চামচ স্যুপ দিয়ে)

শিশিরঃ তাহলে এক কাজ করো, ইন্দুকে কিছুদিন রেখে দাও এখানে! তুমি আর রুদ্রা তো সারাদিন বাসায় একা থাকো, আমিও ঠিক-ঠাক সময় দিতে পারি না! তাই ইন্দু থাকলে তোমাদের ভালো লাগবে! আর একদিন পর তো আম্মু-আব্বু নারায়নগঞ্জ যাবেই, মা না হয় আরো একদিন এখানে থেকেই আম্মুদের সাথেই যাবেনি! ( স্যুপ খাচ্ছিলো)

বিন্দুঃ হুম,, বলে দেখি ওকে!

শিশিরঃ হুম..

তারপর ওদের মাঝে নিরবতা চলে,, শিশির এক ধ্যানে বিন্দুকে পর্যবেক্ষন করতে থাকে!

শিশিরঃ বিন্দুবালা..

বিন্দু বিরক্ত চোখে তাকায়,,,

শিশিরঃ না সরি বিন্দু ( মন খারাপ করে)

বিন্দুঃ কি বলবেন বলেন..

শিশিরঃ তুমি এই কয়েকদিনে কিছুটা রোগা হয়ে গেছো!

বিন্দুঃ হসপিটালে ছিলাম, ঠিকমতো ঘুম হয়নি কয়েকদিন! এই জন্য মেবি এমন লাগছে,, ঠিক হয়ে যাবে!..

শিশিরকে খাওয়ানোর শেষে বিন্দু উঠে চলে যাচ্ছিলো, তখন শিশির আবার বলে ওঠে,,

শিশিরঃ মেঘ কোথায় বিন্দু?

বিন্দুঃ মায়ের কাছে মনে হয়!

শিশিরঃ আর রুদ্রা?

বিন্দুঃ কোথাও আছে হয়তো,, মেঘের সাথেই মনে হয় আম্মু আর মায়ের কাছে বসে আছে!

শিশিরঃ ওকে পাঠিয়ে দাও..

বিন্দুঃ হুম..
___________________

সন্ধার পর,,,,

ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে,, এখানে শুধু শিশিরের বাবা আশরাফ আহমেদ নেই! সে মাগরিবের নামায পড়তে বাহিরে গিয়েছিলো তারপর আসেনি এশারের নামায পড়ে একেবারে আসবে!..

বিন্দু আর ইন্দু মিলে পাস্তা আর বিফ রোল বানিয়ে এনেছে সবার জন্য! শিশিরও তখনি এসে বসে তিয়াশের পাশে! বিন্দু সবাইকে রোল নিতে বলে মেঘকে কোলে নেয় ওর আম্মুর কাছে থেকে,,,

বিন্দুঃ আব্বু, আপনে এখন কিছু খাবেন? কি খাবেন? হুম,,( মেঘের গালে চুমে দিয়ে) ইন্দু বোন একটু যা না ডায়নিং টেবিলে বাবুর ফিডার টা ঠান্ডা করতে দিয়েছি নিয়ে আয়!..

রুদ্রাঃ মাম্মা আমি যাই,, ( ওর দাদীমার কোলে ছিলো, দৌড়ে গিয়ে ফিডার নিয়ে আসে)

তিয়াশঃ আচ্ছা ভাইয়া, তুমি কিন্তু এখনো কিছু বললে না কিভাবে এক্সিডেন্টটা হলো?( পাস্তার বাতি হাতে নিয়ে)

শিশিরঃ ( রেগে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে) এক কথা কতবার বলতে হবে তোদের? বললাম না আমার গাড়িটা ব্রেকফেইল করেছিলো! (বিফ রোলটা হাতে নিয়ে)

ইন্দুঃ আচ্ছা জিজু,,, আপনে তাহলে কেরানিগঞ্জে কিভাবে গেলেন?

শিশিরঃ কাজ ছিলো ওইখানে!..

লায়লাঃ আমার ছেলেটা ফিরে এসেছে এটাই অনেক, আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া!..

তন্দ্রাঃ যা বলেছেন বেয়াইন,, শিশির বাবা তুমি কয়েকদিন অফিসে যেয়ো না, ছুটি নিয়ে নাও!..

শিশিরঃ হ্যা মা,, রুহানকে সবটা সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছি!..

লায়লাঃ ছেলেটা যা করলো আমাদের জন্য,, ওর ঋণ শোধ হবার নয়! রক্তের সম্পর্ক না থেকেও রুহান যে এতোটা ভালোবাসে তোকে ভাবতেও পারিনি!..

শিশিরঃ হ্যা আম্মু, রুহানের মতো ছেলে হাতে গোনা কয়েকজন আছে যাদের খুব সহজেই বিশ্বাস করা যায়!..

তন্দ্রাঃ রুহান কি বিয়ে করেছে? (শিশিরের দিকে তাকিয়ে)

শিশিরঃ না মা,, পাত্রী খুঁজছে! ওর মা বিয়ে করানোর জন্য পাগল হয়েছে কিন্তু রুহান স্বীকার হচ্ছে না! আরো দুই, তিন বছর সময় চায়!

তন্দ্রাবতী এবার ইন্দুর দিকে তাঁকিয়ে কিছু একটা ভাবে যা শিশিরের চোখ এড়ালো না! শিশির বুঝতে পেরেছে তন্দ্রাবতীর মনে কি চলছে!..

লায়লাঃ ছেলেটার খুব বুদ্ধিমান তাইনা শিশির,, ওর কাজ-কর্ম দেখলেই বোঝা যায়!..

শিশিরঃ বুদ্ধিমান হবে না? ওর কলিফিকেশন জানো? ঢাকা ইউনিভার্সিটি টপার স্টুডেন্ট ছিলো! স্কলারশিপ পেয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতো, পাসপোর্ট-ভিসাও রেডি ছিলো কিন্তু এক কালবৈশাখী ঝড় এসে ওর লাইফটা খন্ড-বিখন্ড করে দেয়!

তিয়াশঃ যদি এতোই ভালো স্টুডেন্ট হয় তাইলে তোমার এ্যাসিস্টেন্ট কেনো? (শিশিরের দিকে তাকিয়ে)

শিশিরঃ স্যাটআপ তিয়াশ,, যা জানিস না সেটা নিয়ে মাতামাতি করবিনা! ওর যতটুকু যোগ্যতা আছে একটা কোম্পানি চালানোর তার নূন্যতম যোগ্যতা হয়তো আমারও নেই!..

লায়লাঃ মানে?

শিশিরঃ মানে তো বললামই,, ওর অনেক ভালো ভালো জবের অফার এসেছে,,দেশে এমনকি বিদেশেও! অনেকগুলো পাবলিক ভার্সিটিতেও প্রফেসর হিসেবে জয়েন করতে বলেছে,, কিন্তু ও সব রিজেক্ট করছে! কেনো জানো?শুধুমাত্র আমার জন্য!..

বিন্দুঃ (অবাক হয়ে) আপনার জন্য কেনো?

শিশিরঃ সে অনেক কাহিনী, ওতো তোমাদের জানতে হবে না! শুধুমাত্র এতোটুকু জানো রুহান আমার কাছে অনেক বড় ঋণি, যার জন্য ও কোন মতেই আমাকে ছাড়বে না! আমি অনেক বুঝিয়েও লাভ হয়নি! আমাদের কোম্পানিতে আমিই তো ডিরেক্ট আর ওর পজিশন আমার নিচেই, ও চাইলে আমার পজিশন নিতে ওর এক মিনিটও টাইম লাগবে না,, কিন্তু ও সেটা চায় না! মজার ব্যাপার কি জানো, কোম্পানির বড় বড় ডিলগুলোতে আমি ওর কাছে পরামর্শ নেই! ও যেভাবে বলে সেভাবেই কাজ করি, এতে সাক্সেসও হই প্রতিবার!..

লায়লাঃ আচ্ছা বাবু, রুহান তোর কাছে ঋণি কেনো?

শিশিরঃ বললাম না, সেটা তোমাদের না জানলেও চলবে! রুদ্রা? এদিকে আসো আম্মু!..

রুদ্রা দৌড়ে গিয়ে ওর বাবাইয়ের কোলে যায়,,,

বিন্দুঃ রুদ্রা আসতে, তোমার বাবাই ব্যাথা পাবে!

শিশিরঃ কিছু কি মিস করছো?

রুদ্রাঃ কি? ( নিজেই নিজের দু গালে হাত দিয়ে)

শিশিরঃ আইস্ক্রিম?

রুদ্রাঃ ( দাত বের করে) হ্যা বাবাই,, অনেক খেতে ইচ্ছে করছে!

বিন্দুঃ এই না একদম না রুদ্রা!

শিশিরঃ আমার মেয়ে যা চায় তাই হবে, তাইনা মাম্মা!( মাথায় চুমু দিয়ে)

রুদ্রা শিশিরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দেয় আবার বিন্দুর দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না সম্মতি দেয়! ওর এমন কাজে উপস্থিত সবাই হেসে ফেলে!

শিশিরঃ তিয়াশ, নিচে যেয়ে দুইটা আইস্ক্রিমের বক্স নিয়ে আসবি আর কি কিছু খাবে রুদ্রা? ( রুদ্রার দিকে তাকিয়ে)

রুদ্রা আবারও মাথা নেড়ে না সম্মতি জানায়,,,

শিশিরঃ আচ্ছা,, বাকি কেও? ইন্দু কি খাবে আপু?

ইন্দুঃ না জিজু কিছু খাবো না!

শিশিরঃ ( তিয়াশের দিকে তাকিয়ে, ১ হাজার টাকার নোট দিয়ে) ওকে তাহলে, ২ টা বক্স আর ২ লিটারের সেভেন আপ নিয়ে আয়! মানে, ৫০০ টাকা খরচ করবি আর ৫০০ নিজের কাছে রাখ!

তিয়াশ কিছু না বলে টাকা নিয়ে যায় মেইন ডোর খুলতে! পেছন থেকে রুদ্রা ডাক দেয়…

রুদ্রাঃ তিয়াশ চাচ্চু, আমিও যাবো তোমার সাথে!

তিয়াশঃ না সোনা, তুমি থাকো! আমি যাবো আর আসবো!..

রুদ্রাঃ না, আমাকে নিয়ে যাও! (দৌড়ে যায় তিয়াশের কাছে)

বিন্দুঃ রুদ্রা, চাচ্চুকে যেতে দাও!..

তন্দ্রাঃ যাক না, নিচেই তো আইস্ক্রিম পার্লার!..

বিন্দুঃ না আম্মু, সন্ধার সময় আমি বাহিরে যেতে দিবোনা! ( মেঘকে নিয়েই ওঠে যায় রুদ্রাকে আনতে)

শিশিরঃ মাম্মা চলে আসো, চাচ্চু যাক! আমি, তুমি আর ভাই খেলবো এখানে এসো!..

রুদ্রা এবার চলে আসে,, আর বিন্দু ভেতরের রুমে গিয়ে একটা চিরুনি আর ব্যান্ট আনে রুদ্রাকে চুল বেধে দিবে জন্যে!..

বিন্দুঃ ইন্দু বাবুকে নে তো,,( মেঘকে দিয়ে)

শিশিরঃ আমার কাছে দাও মেঘকে!..

তারপর বিন্দু মেঘকে দিয়ে রুদ্রাকে টেনে নিজের কাছে বসায়! রুদ্রার চুলগুলো বিন্দুর চুলের মতো অনেক স্ফট, স্টেইট আর সিল্কি! রুদ্রার চুলগুলোও অনেক লম্বা! রুদ্রা দেখতেও একদম বাড়বি ডলের মতো,, ওর মুখের ফেইস রুদ্র আর বিন্দু মিলিয়েই হয়েছে, তবে গায়ের রঙ রুদ্রের মতো ধবধবে ফর্সা! বিন্দুর মতো ঠোঁটে নিচে একটা মাঝারি গড়নের কালো তিল! মোট কথা, রুদ্র আর বিন্দুর সংমিশ্রণে রুদ্রা হয়েছে! তবে বিন্দুর চেয়ে রুদ্রের সাথেই বেশি মিল পাওয়া যায় রুদ্রাকে! ওর স্বভাবও হয়েছে দুজন মিলে,, তবে রুদ্রের মতো অহংকারী আর বদ মেজাজি না, সে তার মায়ের মতো খুবই মিশুক হয়েছে আর বিন্দুর কিশোরী বয়সের চঞ্চলতা রুদ্রার মাঝে এখনি প্রকাশ পায়!

রুদ্রাঃ আহ মাম্মা ব্যাথা পাচ্ছি তো!.

বিন্দুঃ হয়ে গেছে..( পেছনে বেনী গেঁথে দিচ্ছিলো)

তন্দ্রাঃ ভাবছি ইন্দুকে বিয়েটা দিয়ে, আমরা মিরপুরে চলে আসবো! ওখানে বিন্দুর ফুপু থাকে,, সিফাতরা তো মিরপুরে ভাড়া থাকে তো আপনার বেয়াই ভাবছে সে আর তার বোন সুহেলী (বিন্দুর ফুপু আর সিফাতের আম্মু) দুজন মিলে ফ্লাট কিনবে!

লায়লাঃ আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো খুব ভালো খবর!..

শিশিরঃ না মা, আপনাদের কিনতে হবে না! সামনের বছরেই আমি উওরায় জায়গা কিনে আমার সপ্নের রাজপ্রাসাদ বানাবো! আর সেখানে আমি আমার দুই পরিবারকে নিয়ে আরামে থাকবো!..

বিন্দু উত্তরা শোনা মাত্রই হাত থেকে চিরুনি টা পড়ে যায়! কারণ উত্তরায় বিন্দু আগের শ্বশুর বাড়ি! হ্যা, রুদ্রদের বাড়ি উত্তরাতেই যেখানে বিন্দু দীর্ঘ চার বছর থেকেছে! রুদ্র মারা যাবার পরপরই বিন্দুকে ওর বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো ওর শ্বাশুড়ি তাই আর চায় না সেখানে যেতে! বিন্দু ওঠে চলে যায় ড্রয়িংরুম থেকে!

আর শিশির মনে মনে এতোক্ষণ ভাবছিলো রাজপ্রাসাদ টা হবে একদম মেঘলার মনের মতো! বিন্দুর বরাবরই চাওয়া ছিলো খুবই সামান্য কিন্তু মেঘলার আবার বেশি ছিলো,, হয়তো ছোট বেলা থেকে অভাব-অনটনে বড় হয়েছিলো তাই চাওয়াটাও বিশাল! শিশির ভেবেছে বাড়ি বানিয়ে মেঘলার বাবার বাড়ি মানুষকেও এখানে এনে, একসাথে থাকবে সবাই মিলে! এতে অবশ্য বিন্দু রাগ করবে না, বরং খুশীই হবে,, কারণ বিন্দুরকে সে অনেক বছর ধরে চেনে! আর মেঘলাদের অভাবের সংসারে আছেই শুধু মেঘলার মা, আর ওর ছোট ভাই! মেঘলার বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছে,, মেঘলার ভাইয়ের সমস্ত ভরণ-পষণ এখন পর্যন্তও শিশিরই চালাচ্ছে! মেঘলার ছোট বোনের বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব শিশির হাতে নিয়েছিলো,, মেঘলা মারা যাবার তিন মাস পরেই মেঘলার বোন মিহার বিয়ে হয়! শিশির তখন যাওয়ার পরিস্থিতে ছিলোনা,, তবে শুধু বিয়ের দিন এক ঘন্টার জন্য এটেন্ড করেছিলো আর সমস্ত দায়িত্ব রুহানের মাধ্যমে পালন করেছিলো! যাই হোক,, শিশিরের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে চিরুনি পড়ার আওয়াজে শিশির চমকে ওঠে,,,

শিশিরঃ বিন্দুর কি হলো?

আর কেও না জানলেও তন্দ্রাবতী আর ইন্দু ঠিকই বুঝেছে বিন্দু কেনো এভাবে উঠে গেলো! তন্দ্রাবতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্রা বলে ওঠে,,,,

রুদ্রাঃ উওরায় তো রোদ চাচ্চুদের বাসা, তাই মাম্মা চলে গেলো! মাম্মা তো ওই বাড়িতে যেতে চায় না!..

শিশিরঃ (ভ্রু কুঁচকে) রোদ কে?( রুদ্রার দিকে তাকিয়ে)

রুদ্রাঃ এ মা তুমি জানো না? সে তো আমার পাপার ভাই হয়! অনেক সুন্দর দেখতে, আমার পাপার মতো!

শিশিরঃ ওহ তাই? আর আমি বুঝি পঁচা দেখতে?

রুদ্রাঃ নাহ বাবাই, তুমিও অনেক সুন্দর দেখতে! ( গালে চুমু দিয়ে)

তখনই কলিং বেলের আওয়াজে ইন্দু যায় দরজা খুলতে! ইন্দু গিয়ে দেখে তিয়াশ এসেছে,,,

ইন্দুঃ তিয়াশ, কি হয়েছে? চোখ-মুখ লাল কেনো?

তিয়াশঃ আর বলোনা আপু,, এক ফাজিল মেয়ে দৌড়াতে গিয়ে এসে আমার ওপরে পরে যায়! পুরো মলের সবাই তাকিয়ে ছিলো আমাদের দিকে,, কি একটা ডিসগাস্টিং অবস্থা! মেয়েটা কে যদি আর একবার সামনে দেখি কি যে করবো ওর,, যত্তোসব! ( আইস্ক্রিমের বক্স ইন্দুর হাতে দিয়ে)

ইন্দু হাসতে হাসতে বলে…

ইন্দুঃ কেনো আজকে কিছু বলোনি?

তিয়াশঃ হ্যা, অপমানে করেছি অনেক!

শিশিরঃ আর মূলকে জায়গা পায় না, তোর ওপর এসে পড়ে সবাই! কই আমাদের ওপর তো কেও পড়ে না?( রুদ্রা কে কোল থেকে নামিয়ে ওঠে দাঁড়ায়)

লায়লাঃ আমার ছোট ছেলেটা এসব পছন্দ করে না ওর সাথেই বার বার এমন অদ্ভুত কাহিনী ঘটে!..

শিশিরঃ ইন্দু সবাইকে আইস্ক্রিম দাও! আর একটা বক্স যে ওইটা শুধু আমার রুদ্রার, ওইটাতে কেও হাত দিবে না! আর আমি খাবো না, তোমার আপু যদি খায় ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি!.( শিশির ভেতর ওদের রুমে গেলো).

বিন্দু চুপচাপ বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে রুদ্রের কথা ভাবছে! ছয় বছর আগে যখন রুদ্রের সাথে উওরায় প্রথম আসে সেদিন বিন্দু তার ফ্যামিলিকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে আসে! ভেবেছিলো একটা মা-বাবাকে হারালাম তো কি হয়েছে আরেকটা মা-বাবা তো আছেই! কিন্তু বিন্দুর ধারণা ছিলো ভুল,, শ্বাশুড়ি তো শ্বাশুড়িই হয় সে কি কখনো মা হতে পারে? স্বামী যতই ভালো হোক শ্বশুর-শ্বাশুড়িও ভালো হওয়া লাগে! প্রথমের দিকে তো বিন্দুর রুদ্রকে নিয়ে কোন সিরিয়াসই ছিলো না,, ও রুদ্রের সাথে অনেক রুডলি বিহেভ করেছে কিন্তু যখন বুঝতে পারলো রুদ্র শিশিরের মতো না, ওকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবাসে তখন থেকে রুদ্রকে ভালোবাসতে শুরু করে বিন্দু! কিন্তু তার স্থায়ীত্বকাল সল্প সময় ছিলো মাত্র চার বছর! রুদ্রের ভালোবাসাই পেরেছে রাগ, দূড়ন্ত মেয়ে থেকে এক শান্ত-শিষ্ট রমণীতে পরিণত করতে! তাইতো শিশিরের প্রতি আগের মতো আর কোন জেদ দেখায় না! তা না হলে এতোক্ষণে শিশিরের সাথে সংসার তো দূরের কথা ওর ছায়াও পাড়াতো না!

তবে শিশিরদের বাড়িতে এসে বিন্দুর শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সম্পর্কে কিঞ্চিত পরিবর্তন হয়েছে! সব শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এক হয় না,, রুদ্রের বাবা-মায়ের গর্ভে হয়তো শিশিরের জন্ম নেওয়া লাগতো আর রুদ্রের বিন্দুর এই শ্বশুর-শ্বাশুড়ি গর্ভে জন্ম নিলে, কি দারুণ হতো তাইনা? হঠাৎ কারোর ডাকে পেছনে তাকালো বিন্দু,,,

শিশিরঃ কি হলো বললে না যে?

বিন্দুঃ জ্বি কি বলেছেন শুনতে পাইনি!..

শিশিরঃ এক ধ্যানে মগ্ন থাকলে শুনতে পাবে কি করে? বললাম রুদ্র কে মিস করছো?

বিন্দুঃ না তবে,,,

শিশিরঃ তবে কি? রুদ্রের পিক আছে? আমি তো কখনো দেখিনি ওকে!..

বিন্দুঃ হুম আছে,,, রুদ্রার মতোই দেখছে ছিলো ওর পাপা! অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় দুজনের!..

রুমের ভেতরে এসে,,, শিশিরও পেছন পেছন আসে…

শিশিরঃ তাইলে নিশ্চই অনেক সুন্দর ছিলো সে? আমার রুদ্রা তো মাশাল্লা অনেক সুন্দর হয়েছে! আমি তো ভেবেছি তোমার মতো সুন্দর হয়েছে!..

বিন্দুঃ নাহ,, আমার সাথে কিছু কিছু মিল থাকলেও রুদ্রের সাথে ছিলো প্রগাঢ় মিল! ( আলমারি খুলতে খুলতে)

বিন্দুঃ রুদ্র অনেক সুন্দর ছিলো তার কাছে আমার নিজেকেই তুচ্ছ মনে হতো! আর আমাকে ভালোও বাসতো অনেক, একটা স্বামী যে তার স্ত্রী কে এতো ভালোবাসতে পারে রুদ্র আমার জীবনে না আসলে হয়তো বুঝতামই না!

শিশিরের কেনো যেনো কথাগুলো খারাপ লাগছে,, শিশির কে কি একটুও মিস করেনি বিন্দু? নিজের স্বামীর এতো বাহার,, অথচ শিশির প্রায়ই বিন্দুকে মনে করে চোখের পানি ফেলতো! কথায় বলে না, “দাত থাকতে দাতের মর্যাদা দিতে হয়”! শিশির যদি তখন মর্যাদা দিতো তাহলে হয়তো ওদের জীবন আরো সহজ হতো!

বিন্দু আলমারি থেকে খুব যত্নে একটা এলবাম বের করলো সাথে বড় ফ্রেমে বন্দি করা একটা ছবি- যেখানে ছিলো রুদ্র-বিন্দুর মাঝে এক বছরের একটা বাচ্চা! সম্ভবত ছবিটা ছিলো রুদ্রার জন্মদিনে! কিন্তু শিশির কেনো যেনো বিন্দুর পাশে রুদ্রকে মানতে পারছে না,, ওর ছবিটা দেখার সাথে সাথে কেমন হলো অস্থির লাগছে!..

বিন্দুঃ এইটা হলো আমার রুদ্র!.( এলবামের প্রথম পৃষ্ঠা দেখিয়ে)

শিশিরঃ “আমার রুদ্র” কথাটা শুনে একপলক বিন্দুর দিকে তাকিয়ে এলবামের দিকে নযর দিলো! সত্যিই কোন তুলনা হয় না রুদ্রের রূপের! শিশির প্রথমে ফ্রেমে বাধানো ছবিটা দেখে রুদ্রে চেহারা বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু এই ছবিটা তে স্পষ্ট রুদ্রেকে বোঝা যাচ্ছে! ছবিটা হয়তো এদেশের না,,, বাহিরের কোন দেশে গিয়ে উঠেছিলো! এখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রূপবান লম্বা এক যুবক টি-শার্ট পড়ে, হাতে কোর্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! যুবকটি যে নিঃসন্দেহে বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী সেটা তার শক্তিশালী জিম করা বডি মাসেল দেখেই বোঝা যাচ্ছে! যেকোন নারীর সৌন্দর্য কেও যেনো হার মানায়! শিশিরের এবার হিংসে হতে লাগলো রুদ্রকে দেখে,, তার কাছে মনে হচ্ছে শিশির যেনো রুদ্রের রূপের ধরা ছোয়ারও বাহিরে নেই! শিশির এবার বুঝতে পারলো রুদ্রার এতো সুন্দর হবার কারণ! এতোদিন ভাবতো বিন্দু সুন্দরের জন্য হয়তো রুদ্রা সুন্দর কিন্তু না বিন্দু ঠিকই বলেছে রুদ্রের কাছেও বিন্দুর সৌন্দর্য হার মানায়!..

পরবর্তী কয়েক পৃষ্ঠারে রুদ্রের ছোট বেলার আর রুদ্রার ছোট বেলার বেশ কয়েকটা ছবি ছিলো! তার পরের বিন্দুর শ্বশুর বাড়ির ফ্যামিলি! বিন্দু, তার এক পাশে রুদ্র আর বিন্দুর আরেক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি যুবক কে শিশির চিনলো না! এই ছেলেটিও রুদ্রের থেকে কোন অংশে কম না,, এই যুবকটিও অনেক সুন্দর রূদ্রের মতো! বিন্দুর দিকে তাঁকাতেই বিন্দু দেখিয়ে বললো,,

বিন্দুঃ এটা আমার দেবর, “রৌদ্দিক মাহবুব রোদ” আর আমার শ্বশুর- মিস্টার. রিশান মাহবুব আর এটা শ্বাশুড়ি- মিসেস. রণিতা মাহবুব!..

শিশিরঃ ওহ,,, তোমার শ্বশুর বাড়ির সবাই অনেক সুন্দর ছিলো!

বিন্দুঃ হুম,, মায়ের চেহারা তো অনেক সুন্দর কিন্তু বিহেবটা ততোটাই খারাপ!..

পুরো এলবাম জুরে বিন্দুর শ্বশুর বাড়ির ছবিতে ভরপুর,, বিন্দুর বাবার বাড়ির ছবিও ছিলো অনেক জায়গায় ইন্দু আর রোদের কাপল হিসেবেও কয়েকটা পিক ছিলো! তবে সেটা দেখে শিশির কিছু বললো না,, ওর আর ভালো লাগছে না এগুলো দেখে, কারণ প্রতিটা ছবিই বিন্দু ওর শ্বশুর বাড়ির ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে! কিন্তু লাস্ট মুহুর্তে কয়েকটা ছবি দেখে শিশির যেনো জ্বলে ওঠলো,, ওর চোখ-মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে ছবিগুলোর দিকে কারণ- ছবিগুলো ছিলো রুদ্র আর বিন্দুর বিয়ের ছবি আর বিয়ের পর বেশ কিছু কাপল ছবি! শিশির তো রাগে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না!

বিন্দুঃ এইটা হলো আমার আর রুদ্রের হানিমুনে প্যারিসের,,, ( আর বলতে দিলো না)

শিশিরঃ বিন্দু আমি এখন একা থাকতে যাই! লাইট অফ করে ড্রয়িংরুমে যাও, আমার মাথা ধরেছে,,, লিভ মি এলন প্লিজ!..( দাঁতে দাঁত চেপে)

বিন্দু বেশ বুঝতে পারছে শিশির রীতিমতো রাগে গজগজ করছে! ও তো শিশিরকে জ্বালাতেই এতো এতো ব্যাখ্যা করলো! আজকে যেনো বিন্দু এক অদ্ভুত শান্তি লাগছে! বিন্দু ফ্রেমের বন্দি করা ছবি আর এলবাম আলমারির ড্রয়ারে তালা দিয়ে রেখে রুমের লাইট বন্ধ করে নিঃস্তব্ধে শয়তানি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো! আজকে বেশ জব্দ হয়েছে শিশির!..

বিন্দু যাওয়ার পর শিশির কপালে হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো! এটা তো স্বাভাবিক বিন্দুর আর রুদ্রের কাপল পিক তো থাকবেই কিন্তু এতে শিশিরের এতো রাগ লাগছে কেনো? রাগে ওর কপালের রগ ফুলে ওঠে,,

শিশিরঃ বিন্দুবালা, তুমি আমায় চরম ঠকিয়েছো! আমি যখন তোমার শোকে কাতর ছিলাম তখন তুমি কিনা ওই রুদ্রের সাথে হানিমুন করেছো? আমি তো এতোদিন নিজেকে দোষ দিয়েছি, আমি হয়তো তোমায় ঠকিয়েছি কিন্তু না বিন্দু! তুমি আমায় ঠকিয়েছো! এতো বড়লোক শ্বশুর বাড়ি, এতো সুন্দর বর, তার ওপর ইস্টাবলিশ ছিলো, যা দেখে তুমি লোভ সামলাতে পারোনি তাইতো আমাকে ছেড়ে ওই রুদ্রকে বিয়ে করেছিলে! আমি তো তখন বেকার ছিলাম তাইনা? গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, আমার রূপও তেমন ছিলো না তোমার রুদ্রের মতো! তাইতো,,, ( আর কিছু বলতে পারলো না, ওর চোখ লাল হয়ে যায়, ওর পায়ের রক্ত রি রি করে মাথায় উঠছে)

#চলবে…

[ অনেকদিন হলো দুই পর্ব একসাথে দিতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ব্যাস্ততার কারণে লেখাই হয়ে ওঠে নি! আজকে লিখলাম অনেক কষ্টে,, এখানে মোট ৩৫৬১ অক্ষর আছে,, রিচেক করা হয়নি ভুলঅগুল ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here