শিশির বিন্দু পর্ব ১৫

0
506

#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ১৫

আশ্বিন মাসে বৃষ্টির তেমন প্রভাব না থাকলেও হুট-হাট করেই এর আগমন ঘটে! কেনো ঘটে? সে কি কারো কারোর চোখের পানির বন্ধু হতে চায়? মনের কষ্ট কি দূর করতে চায়? আদৌ কি সে পারে, তার কি এরকম কোন ক্ষমতা আছে? মানুষ নামক জীবের প্রতিপত্তির সাথে পেরে ওঠা তার কাছে কি খুব সহজ মনে হয়? নাহ, পৃথিবীর সর্বোত্তম জীব হলো মানুষ নামক প্রাণি! যার সাথে পৃথিবীর অন্য কোন কিছুর পেরে ওঠা সম্ভব হয় না! বৃষ্টি যতই মানুষের চোখের পানি বিলীন করতে পারুক না কেনো, মানুষের মনের কষ্ট দূর করতে সক্ষম হয় না, সেই ক্ষমতা বৃষ্টির নেই! এই ক্ষমতা একমাএ তারই আছে যার জন্য মনের গহীনে কষ্টগুলো জরো হয়ে থাকে!

এমনই এক বৃষ্টি ভেজা বিকেলে এক রমনী ছাদের কর্ণিশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি বিলীন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে! সফলও হয়েছে কিছুটা,, কিন্তু বাহ্যিক বর্ষন দূর করতে পারলেও মনের বর্ষন কি বৃষ্টি দূর করতে পারবে? ওইযে বললাম না, বৃষ্টির হয়তো এতো বড় ক্ষমতা নেই! কাঁদতে কাঁদতে ইন্দুর চোখ ফুলে গেছে! এতোগুলো দিন ভালোবাসার মানুষটিকে না দেখে শক্ত হয়ে থাকলেও আজকে রোদকে দেখার পরে একদম ভেঙে যায়! আর সাথে মায়ের এমন আচারণ, সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না!

আজকে সকালের ঘটনা…
রুদ্রাকে আজকে ইন্দুই স্কুলে সাথে নিয়ে যায়! স্কুলে যাবার সময় জ্যামে পড়ে থাকে ইন্দুরা,, তাই ওভারের গ্লাস খুলে বাহিরের দিকে মুখ বাড়াতেই এক কাক্ষিত মানুষের চোখে চোখ পড়ে তার! রোদও ওর নিজের গাড়িতে বসে গ্রীন সিগন্যালের অপেক্ষায় ছিলো!হয়তোবা অফিস যাচ্ছিলো, কারণ তার ছিলো ফর্মাল গেটআপ! পরনে সাদা শার্ট ইং করা, হাতা কিছুটা ফোল্ট করা ছিলো আর হাতে নেভি ব্লু কালারের কোট! এক হাত গাড়ির স্টিয়ারিং এ আর এক হাতে কোট ছিলো! হাতে ব্লাক কালারের ওয়াচ, চোখে সানগ্লাস, চুলগুলো ভীষণ এলোমেলো,, ওর ঘামাক্ত কপালে এলোমেলো চুলগুলো একদম সেটে আছে! ফর্সা গালগুলো রোদের তাপে লাল হয়ে গেছে! সকালের দিকে বেশ গরম ছিলো! রোদ এসি চালানোর জন্য গাড়ির গ্লাস লাগাতেই ইন্দুকে দেখে! প্রথমে ওর ভ্রম মনে করে চোখ বন্ধ করে, কিন্তু দ্বিতৃয়বার তাকাতেই ক্লিয়ার হয় এটা ওরই ভালোবাসার মানুষ ইন্দু! রোদ গিয়ে ওভারের ভাড়া মিটিয়ে, জোর করে ইন্দু আর রুদ্রাকে নিজের গাড়িতে নেয়! তারপর রুদ্রাকে অনেক আদর করে, ওকে স্কুলে পৌছে দেয়! আর ইন্দুকে নিয়ে এক রেস্টুরেন্টে যায়! ইন্দু তো ভাবতেই পারেনি এতোদিন পর তার সেই কাক্ষিত মানুষটির সাথে আচমকাই দেখা হবে! রেস্টুরেন্টে যেয়ে,,,

রোদঃ কি খাবে?

ইন্দুঃ কিছু না!

রোদঃ আমি এক কথা দুইবার বলতে পছন্দ করি না সেটা ভালো করেই জানো! বলো কি খাবে?

ইন্দুঃ,,,,,,,, ( নিচের দিকে তাকিয়ে আছে)

রোদঃ ওকে ফাইন,, এক্সকিউজ মি ভাইয়া? (ওয়েটার কে ডেকে)

ওয়েটারঃ জ্বি স্যার বলুন?

রোদঃ বার্গার, পিজ্জা আর দুটা কোল্ড কফি দিবেন এখন! আর সাথে চিলি চিকেন উইথ ফ্রাইড রাইস ৩ টা, চিকেন উইনস, একটা আইস্ক্রিম বক্স, কয়েকটা ডেরি মিল্ক সিল্ক প্যাক করে দিবেন!..

ওয়েটারঃ ওকে স্যার একটু টাইম লাগবে!

রোদঃ হুম, যত ইচ্ছা টাইম লাগুক প্রবলেম নেই! নাউ ইউ ক্যান গো!..

ওয়েটার চলে যায়,,,

ইন্দুঃ এগুলো প্যাক করে কোথায় নিবে?

রোদঃ বাসায় আমার বউ আছে তো, তার জন্য নিয়ে যাবো! আমি এখানে বসে একা একা খাবো সে না খেয়ে থাকবে কেমন একটা দেখায় না?

ইন্দুঃ তু তুমি বিয়ে করেছো?( অবাক হয়ে)

রোদঃ হুম, করবো না কেনো! তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না, বিয়েও করবে না! আমকে ভুলে নাকি তুমি নিজেকে মুভ অন করেছো? তাহলে আমি কেনো পারবো না?

ইন্দু ছলছল চোখে তাকায় রোদের দিকে! আর মনে মনে ভাবে,, তুমি আমাকে একটুও বুঝলে না! তুমি শুধু আমার মুখের কথাটাই শুনলে রোদ, আর মনের কথা বুঝলে না! আমি মুখে যতই যা বলি, তোমাকে কোনদিন তোমাকে ভোলা সম্ভব না! কিন্তু তুমি ঠিক ভুলে গিয়ে নতুন বউকে নিয়ে সুখে আছো!..

ইন্দুঃ ( দাঁড়িয়ে) উঠতে হবে আমাকে, রুদ্রাকে একা রেখে আপু কোথাও যেতে নিষেধ করেছে! আসছি বাই! (গলা ধরে আসছিলো)

রোদঃ চুপচাপ বসো এখানে! এক পা ও আগাবে না ইন্দু! ( চোখ নাড়িয়ে)

ইন্দুঃ রুদ্রা একা আ,,,,

রোদঃ কি বলেছি বুঝতে পারোনি? বসো, নাইলে কিন্তু খুব খারাপ হবে!..

ইন্দুঃ ( বসে) তুমি তো বিয়ে করেছো, তাহলে আমার সাথে কি তোমার! তোমার বউ জানলে অনেক রেগে যাবে! তুমি তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আছো!..

রোদঃ সেটা আমার বিষয়,, আর তাছাড়া আমার বউ অনেক ভালো! আমাকে অনেক বিশ্বাস করে!..

ইন্দুঃ ভা ভালো,,( ভাঙা কন্ঠে)

রোদ মনে মনে ভাবে,, এখন কেমন লাগে ইন্দুরাণী? খুব তো বলেছিলে আমাকে ভুলে তুমি খুব ভালো আছো! আমি যেনো তোমায় ডিস্টার্ব না করি! ভাবী আমায় শাসায় তার বোনের থেকে সরে যেতে! কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব? আমার প্রাণ থাকতে কখনো আমি সরবো না আর না কখনো তোমাকে ছাড়বো! তুমি যতই বলো, আমি জানি তুমি আজও আমায় ঠিক কতটা ভালোবাসো!

রোদঃ তুমি বিয়ে করবে কবে?

ইন্দুঃ আমি কখনো বিয়ে করবো না! ( অন্যদিকে তাকিয়ে)

রোদঃ কেনো? ভাবী তো আমাকে বললো তোমার জন্য পাত্র খুঁজতে!..

ইন্দুঃ ( অবাক হয়ে) আপু বলেছে?

রোদঃ হুম,,, সেটাই তো বললাম! আর তুমি কিনা বলছো কখনো বিয়েই করবে না? বাড়ির লোক তো তোমার বিয়ে নিয়ে খুব এক্সসাইটেড,, ছোট মেয়ে বলে কথা!..

ইন্দুঃ আমি তোমার মতো বেইমান না! চুপ করে থাকো,, একটা কথাও বলবে না আর!..

রোদ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে থাকে…

কিছুক্ষণ পর,,,

ইন্দুঃ তোমার বউ কি খুব সুন্দর দেখতে?

রোদঃ হুম,, আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরি রমনী!

ইন্দুঃ তুমি আমাকে যেতে দিচ্ছো না কেনো? তুমি তোমার বউয়ের আচল ধরে ঘোরো, আমার কাছে কি? (চিল্লিয়ে)

রোদ কিছু বলে না,, ইন্দুর দিকে তাকিয়েই আছে! ইন্দু এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে,,,

ইন্দুঃ সব ছেলেই খারাপ,, কেও ভালো না, কেও না! কেও ভালোবাসতে জানে না, মুল্য দিতে জানে না! সবাই এক একম! তুমি খুব খারাপ রোদ, তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসোনি! ভালোবাসলে এভাবে বিয়ে করতে পারতে না! আমি থাকবো না, আমি এখনই চলে যাবো এখান থেকে! ( উঠে দাড়িয়ে)

ইন্দুর অনেক কষ্ট হচ্ছ ওর মেনে নিতে, যে রোদ আর কখনো ওর হবে না! ভাবতেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠছে,,দম আটকে আসছে!..

রোদঃ বারবার বলছি এক পা ও নড়বে না কথা কানে যাচ্ছে না? আমি তোমার সাথে অফিস বাদ দিয়ে এখানে কি খেলতে এসেছি? সব ম্যানারস ভুলে গেছো?

ইন্দু এবার কান্না করে ফেলে! রোদ ওঠে ইন্দুর পাশে গিয়ে বসে! ওরা এতোক্ষণ রেস্টুরেন্টের এক কেবিনে বসে থাকলেও দু’জন দুই সোফায় বসেছিলো! রোদ ইন্দুকে এক হাতে কোমড় জরিয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে ওর গালে হাত রেখে নিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে!

ইন্দুঃ ছাড়ো আমাকে, একদম ছুঁবে না! তুমি আমার জন্য নিষিদ্ধ,, কোন পরপুরুষের সাথে কথাও আমি বলি না! আর তুমি কি না আমাকে টার্চ করো? সাহস হয় কি করে? (কাঁদছিলো আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে)

রোদঃ আমি পরপুরুষ?

ইন্দুঃ হুম,,(মাথা ওপর নিচ করে নাড়িয়ে)

রোদ এবার ইন্দুর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর দু চোখে আলতো করে চুমু দিয়ে, ইন্দুকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়! আর ইন্দুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে,,,

রোদঃ রোদ কি পারে তার ইন্দু রাণীকে ছাড়া অন্য কাওকে বিয়ে করতে? রোদ তো শুধু এই ইন্দু রাণিরই,, “রোদের মনের শহরে এই ইন্দু ছাড়া অন্য কারোর প্রবেশ নিষিদ্ধ!” আমার বোকা রানীর শুধু মুখেই ফটর ফটর, একদম বুদ্ধি নেই!

ইন্দুঃ মানে? (রোদের বুক থেকে মাথা তুলে)

রোদঃ মানে আবার কি? মানে কিছুই না!..

ইন্দুঃ তুমি বিয়ে করোনি?

রোদঃ নাহ রে বাবা, তোমাকে ছাড়া আন্য কাওকে বিয়ে করতে পারবো? তবে, বিয়েটা করবো খুব তাড়াতাড়ি! আমার মিসেস কে খুব শীঘ্রই আমার বউ করে আমার সাথে তার নাম জরিয়ে নেবো, বুঝেছেন মিসেস মাহবুব? ( কপালে চুমু দিয়ে)

ইন্দুঃ( ইন্দুর মনে যেনো এবার অদ্ভুত এক শান্তি লাগছে) কিন্তু বাড়ির সবাই কি মেনে নিবে আমাদের?

রোদঃ সেটা আমার ওপর ছেড়ে দাও,, ভাবীকে যেভাবেই হোক আমি ম্যানেজ করবো! আর ভাবীকে দিয়েই আংকেল -আন্টিকে! ( ইন্দুর চুলের গহীনে হাত দিয়ে)

ইন্দুঃ আম্মু তো তোমাদের বাড়ির কথাই শুনতে চায় না!

রোদঃ একটু সময় দাও আমাকে, আমি সবকিছু ঠিক করে দিবো! শুধু এতোটুকু মনে রেখো, “তুমি শুধু আমার আর কারোর না!”

ইন্দুঃ তাহলে তুমি আমাকে মিথ্যে বলে কষ্ট কেনো দিলে? যে তুমি বিয়ে করেছো?

রোদঃ আপনে যে আমাকে ছয় মাস দিলেন, তার বেলায়? জানো এই ছয় মাস আমার কিভাবে কেটেছে? একটা রাতও আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি! সব-সময় তোমার কথা মনে পড়েছে, প্রচন্ড মিস করেছি তোমায়! মাঝে মাঝে কান্নাও করতাম,খুব বেশি কষ্ট হলে! তোমাকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিলেও তুমি ব্লক করে রেখেছো! কতটা পাষাণ হয়েছিলে তুমি, জানো? আমার মা তো দেখেও দেখে না, ছেলে মরলো কি বাচলো তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না!

ইন্দুঃ কি করবো,, আপুর কড়া নির্দেশ ছিলো! আম্মুও বলেছে তোমার সাথে যোগাযোগ রাখলে তার মরা মুখ দেখতে হবে, আমি কি করতাম বলো? তোমার ওপর কারোর রাগ নেই, তোমাকে আমাদের বাসার সবাই খুব ভালোবাসে কিন্তু তোমার মা-বাবার ওপর!

এরই মাঝে ওয়েটার খাবার নিয়ে আসে! তারপর ওরা খেয়ে সেখান থেকে একটা লেকের পাড়ে গিয়ে বসে! রোদ ইন্দুর ফোন নিয়ে ওকে সব জায়গা থেকে আনব্লক করে! আর বলে, নেক্স টাইম ব্লক করলে খবর আছে! ইন্দুর কাছেই শিশির আর বিন্দুর বিয়ের সব কথা শোনে! রুদ্রাকে শিশিরদের ফ্যামিলি কতটুকু মেনে নিয়েছে, রুদ্রাকে শিশির কতটুকু ভালোবাসে সব! রুদ্রার স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত ওরা দুজন একসাথেই থাকে,, তারপর রোদই ইন্দুকে সাথে নিয়ে রুদ্রার স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয় আর যে খাবার গুলো প্যাক করেছিলো সেগুলো ইন্দুর হাতে দিয়ে বলে, ভেতরে নিয়ে যেতে রুদ্রা আর বাকি সবার জন্য! কিন্তু ইন্দু ভাবতেও পারেনি ওর কপালে আজকে শনী আছে! ইন্দু মনে মনে ভেবেছিলো এই খাবারগুলো নিজের টাকায় কিনেছে বলবে,, রোদের নাম বলা যাবে না! কিন্তু কথায় আছে না, ভাগ্যে দুর্দশা থাকলে কেও আটকাটে পারে না! ঠিক তাই ই হলো, রুদ্রা দৌড়ে এসেই সবটা বলে দেয়, রোদের কথা! ওকে ওর রোদ চাচ্চু কতো আদর করেছে, ওকে কোলে নিয়েছিলো,,, ছোট মানুষ তো আর এতোকিছু বোঝে না তাই বলে ফেলেছে! বিন্দু সব শুনে রাগ করেছিলো ঠিকই কিন্তু ওর মা তন্দ্রাবতি এসে ইন্দুর গালে ২ টা কষিয়ে থাপ্পড় দেয়! আর বলে, সে নিষেদ করা শর্তেও কেনো ইন্দু আবার কন্টাক্ট করলো রোদের সাথে? ইন্দুর মা আরো একটা চড় মেরে বলে আজকেই সাথে করে নারায়নগঞ্জ নিয়ে যাবে, বিন্দু ওর মা কে শান্ত করার চেষ্টা করে! শিশিরের বাবা-মা চলে গেছে আরো দুদিন আগে,, তন্দ্রাবতীও চলে যেতো কিন্তু তার পা কিছুটা মোচকে যায়, যার কারণে শিশির যেতে দেয় না! বলেছে পা ঠিক হলে শিশির নিজে গিয়ে রেখে আসবে আর সে পর্যন্ত শিশিরের শ্বশুর কে ওদের বাড়িতে থাকতে বলেছে, কিন্তু করিম সাহেব তা কিছুতেই করবে না মেয়ের শ্বশুর বাড়ি গিয়ে পড়ে থাকবে তাও মেয়ের অবর্তমানে এটা খুব একটা শোভনীয় দেখায় না! তাই সে হোটেলের খাবার কিনে আনে নিজেও টুকটাক নিজে রান্না করে বর্তা-ছানা দিয়ে খায়, তাও মেয়ের বাড়ি যায় না! সেই দুপুর থেকেই ইন্দু কান্না করছে রুম আটকিয়ে আর বিকেলের দিকে বৃষ্টি আসলে দৌঁড়ে ছাদে চলে আসে!

আজকে বৃষ্টি হয়তো ইন্দুর জন্যই বিধাতা দিয়েছে! ওর চোখের সব কষ্ট বিলীন করতে বৃষ্টি তার সঙ্গ দিতেই বর্ষন হচ্ছে,, ওর চোখের পানির সাথে সাথেই বৃষ্টির পানি দূর হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু মনের কষ্ট কি দূর হবে? হয়তো না,, যার জন্য মনে বর্ষন হয় একমাত্র সেই পারবে এর প্রতিকার করতে আর হয়তো কারোর ক্ষমতা নেই! ইন্দুর ভাবলেই দম আটকে আসে, ও রোদকে ছাড়া সারাজীবন থাকবে কিভাবে? এই ছয় মাস যে রোদকে ভুলে গিয়েছিলো তা কিন্তু না, ও সবার সামনে দেখাতো ও ভালো আছে কিন্তু ও একটা জ্যান্ত লাশ হয়ে ঘুরে বেড়াতো সবার সামনে!..

______________________
সন্ধ্যার পর,,,

শিশির আজকে অনেকদিন পরে অফিস গিয়েছিলো, তাই বাড়ির থমথমে পরিবেশ সম্পর্কে সে অবগত নয়! এসে দেখে ড্রয়িংরুমে মেঘ,বিন্দু, রুদ্রা আর ওর শ্বাশুড়ি তন্দ্রাবতি বসে আছে সোফায় কিন্তু কোথাও ইন্দু নেই! তবে এতে বেশি মাথা ঘামালো না!..

শিশিরঃ কি ব্যাপার, সবাই এতো চুপচাপ কেনো?

তন্দ্রাঃ বাবা তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো,, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে!..

শিশিরঃ কি কথা মা? সিরিয়াস কিছু? ( জুতো খুলতে খুলতে)

তন্দ্রাঃ হুম,,,

শিশিরঃ আচ্ছা ঠিক আছে,, আমি আসছি!

শিশির রুমে চলে গেলো,, সে বিন্দুকে আবার ইগনোর করা শুরু করেছে! খুব প্রয়োজন ছাড়া কথাও বলে না! তবে এই কয়েকদিনে ওরা মেঘ-রুদ্রাকে নিয়ে এক রুমেই ছিলো,, কারণ ওদের পারসোনাল কোন ম্যাটার কারোর সামনে আসতে দিবে না! কিন্তু দুজনের মাঝে ছিলো বেশ দূরত্ব, কথাও খুব কম হতো! শিশির ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসে!..

শিশিরঃ ইন্দু কোথায়? একবারও তো দেখলাম না আসার পরে! ( মেঘকে কোলে নিয়ে)

রুদ্রাঃ বাবাই নানুপি ইন্দুমতী কে মেরছি! ( মন খারাপ করে)

শিশিরঃ মানে,,( ভ্রু কুঁচকে)

তন্দ্রাঃ ও কিছু না বাবা,, রুদ্রা সোনা তুমি যাওতো দেখো তোমার ইন্দুমতী কি করে?

রুদ্রাঃ ইন্দুমতী তো আমার সাথে কথাই বলছে না তখন থেকে! কতো ডাকলাম, শুনলো না আমার কথা! পাপ্পি দিলাম আর আমাকে বললো আমি যেনো তাকে ডিস্টার্ব না করি! ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)

শিশিরঃ কেনো বাবা? তুমি কাঁদছো কেনো? (মেঘকে বিন্দুর কাছে দিয়ে রুদ্রাকে টেনে পায়ের ওপর বসায়!) কার এতো বড় সাহস? আমার রুদ্রাকে বকে? ইন্দুমতী কে আমি অনেক বকা দিয়ে দিবো সোনা!

রুদ্রাঃ নাহ,,( ফুপিয়ে ফুপিয়ে) আ আমার জন্যই ইন্দুমতী নানুপির কা কাছে মার খেয়েছে! তুমি আর বকো না বাবাই! ( হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে)

শিশিরঃ তোমার জন্য মার খেয়েছে মানে?

রুদ্রাঃ আমি রো রোদ চাচ্চুর কথা বাসায় বলেছিলাম, তাই! (হেঁচকি তুলে)

বিন্দুঃ রুদ্রা,,, তোমাকে ভেতরে যেতে বলেছি না? ( ধমক দিয়ে)

রুদ্রা শিশিরের কোল থেকে নেমে কাঁদতে কাঁদতে ভেতরের রুমে চলে গেলো! শিশির রাগী চোখে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে…

শিশিরঃ এভাবে ধমক দিলে কেনো? কি সমস্যা তোমার? মেয়েটা কতটা কষ্ট পেয়েছে যানো?

বিন্দুঃ মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি? আমি ওর মা,, আমার চেয়ে আপনে ভালো বুঝবেন?

তন্দ্রাঃ এই বিন্দু চুপ কর তো! ঝগড়া করছিস কেনো?

শিশিরের প্রচুর মেজাজ খারাপ হয় বিন্দুর কথা শুনে,, কিন্তু ওর শ্বাশুড়ি এখানে বসে আছে তাই আর কিছু বলতে পারলো না!..

তন্দ্রাঃ বাবা, আমি আর ইন্দু কালকেই নারায়নগঞ্জ চলে যাবো! অনেকদিন হলো তো এসেছি, আর ক’দিন থাকবো? তুমি আর না করো না এবার!

শিশিরঃ কিন্তু মা আপনার পা,,,

তন্দ্রাঃ ও ঠিক আছে এখন! তুমি চিন্তা করো না! আর একটা কথা ছিলো,, কিভাবে যে বলবো!..

শিশিরঃ কি কথা মা? নির্দিধায় বলতে পারেন!..

তন্দ্রাঃ তোমার সাথে যে ছেলেটা থাকে কি যেনো নাম?

শিশিরঃ কে রুহান?

তন্দ্রাঃ হ্যা,, রুহানই! ওর ফ্যামিলি কেমন?

শিশিরঃ ফ্যামিলি খুব ভালো! মামা-চাচারা সব ইউএস, অস্ট্রিলায় থাকে তবে ওর আব্বুর অবস্থা ভালো ছিলো না! গ্রামের একটা স্কুলে চাকরী করতো! আর ওদের ফ্যামিলির যারা একটু ওপর লেভেলে আছে ওদের সাথে কেও যোগাযোগ করে না! আংকেল তিন বছর আগে মারা গিয়েছে!..

তন্দ্রাঃ ওহ, ছেলেটা অনেক ভালো তাইনা? ওরা ভাই-বোন কয়জন?

শিশিরঃ হ্যা, হাজারে একটা মেলে এমন ছেলে! ওর মতো এতো ভালো ছেলে খুব কম দেখেছি আমার জীবনে! আর হ্যা, ওরা দুই ভাই ছিলো! ওর বড় ভাই নিহান আমার বন্ধু ছিলো! ও দুই বছর আগে হার্ট এর্টাকে মারা গিয়েছে!..

বিন্দুঃ ( অবাক হয়ে) নিহান ভাইয়া মারা গেলো কবে? আর রুহান যে নিহান ভাইয়ার ছোট ভাই কখন তো বলেন নি?

শিশিরঃ ওভাবে বলার সময় হয়ে ওঠেনি!..

তন্দ্রাঃ সে যাই হোক,,, আমার বড়লোক শ্বশুর-বাড়ি লাগবে না, ভালো একটা ছেলে হলেই হবে! আমার বিন্দু কে তো অনেক বড়লোক দেখেই বিয়ে দিয়েছিলাম, কপালে সুখ কই থাকলো? তাই আমি ইন্দুকে একটা ভালো ছেলের হাতে দিতে পারলেই আমার শান্তি! ওর মা কেমন শিশির?

শিশিরঃ মামুনি মাশাল্লা অনেক ভালো মনের একজন মানুষ! আমার মায়ের চেয়ে আমি মামুনী কে বেশি বিশ্বাস করি! ছোট বেলা থেকেই মামুনীর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক! আগে আমি যখন বডিং এ থাকতাম ওরা তো ঢাকায় থাকতো,, আংকেল তখন ব্যাংকে জব করতো! তখন যাওযা আসা হতো ওদের বাড়ি,, পরে ঢাকা থেকে ওরা গ্রামে চলে যায়! তখন রুহান অনেক তো ছোট ছিলো!..

তন্দ্রাঃ ওহ,, আচ্ছা তুমি রুহানকে বলে দেখো রাজি হয় নাকি!

শিশিরঃ সে নিয়ে চিন্তা করবেন না! ও আমাকে ওর আপন বড় ভাই ভাবে! আমি যা বলবো ও তাই করবে! কিন্তু ইন্দু কি রাজি হবে? ওকে মেরেছেন কেনো মা কি হয়েছে?

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here