Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ২০
লেখাঃ Israt Jahan
.
আবেশে বেশিক্ষণ জড়িয়ে থাকতে পারলোনা ফালাক।মেহের সেই সুযোগটা দিতে চাইলোনা। কোনো দ্বিধাবোধ কাজ করার জন্য মেহের সরে চলে আসলো ওর থেকে।ওর দিকে একনজর অশ্রুভেজা চোখে তাকিয়ে কক্ষে বাহিরে চলে গেল। ফালাক শুয়ে থেকেই সেই যাওয়া দেখছে।
ফালাকঃ এতদ্রুত আমি হার স্বীকার করবোনা মেহের।তুমি আজ যেমন পারোনি মনকে বেঁধে রাখতে এরপরও আর পারবেনা।আজকে হয়তো নিজেই বুঝে গেছো তুমি ফালাককে ছাড়া কতোটা কষ্টে থাকো।তাকে ছাড়া তোমার ঘুমও যে অসম্ভব।
বাহিরে কিছুসময় বসে নিজের ইচ্ছামত কেঁদে তারপর মেহের কক্ষে আসলো।ফালাক পুরো ঘুমে কাদা।
মেহেরঃ আজ কতগুলো দিন পর উনি শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন।দিনশেষে রাত নামলে যখন লুকিয়ে লুকিয়ে এই শান্ত ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম মুহূর্তের মাঝে সব রাগ, অভিমান, ঘৃণা, অভিযোগ সব ভুলে যেতাম।এই ঘুমন্ত মুখটাই যে আমার সর্বনাশ হয়ে দাঁড়াল। অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হতো মনের মাঝে, ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করতো আপনাকে, কাছে টানতো খুব।
কখনো সেই অনুভূতি সামাল দেওয়া খুব দুষ্কর হয়ে পড়তো।আর তখন আপনি আমাকে কাছে টানলে আর বাঁধা দিতে পারতাম না।আর আজ চেয়েও পারছিনা আপনার কাছে নিজের সর্বস্বটুকু উজার করে দিতে।আপনি জানেন আপনার ওই চোখে হিংস্রতা থাকলেও আপনার ওই বুকে কত শান্তি আছে? আমার অভ্যাসটা আপনি একদমই অসার করে দিয়েছেন।ঘুমই আসতে চাইনা ওই বুকটার মাঝে মাথা না গুজলে।আপনি জানেন আমিও কতগুলো রাত ঘুমাতে পারিনা?হ্যা, আপনি জানেন।আর জানেন বিধায় আপনি ওভাবে বসে অপেক্ষা করেন আমার জন্য।কিন্তু কিভাবে জানেন আপনি? আমি তো কখনো আপনাকে বলিনি বা আপনি কখনো এসে আমাকে নির্ঘুম দেখেনওনি।তাহলে কি এ আমাদের কোনো আত্মিক সম্পর্ক নাকি শুধুই আমার কল্পনা?
ফালাকের মুখটার দিকে তাকিয়ে হাজার ধারার চিন্তা করে মেহের খুব নিরবে কেঁদে গেল আরো কতসময় ।অবেশেষে মাথা যন্ত্রণায় আর চোখ পোড়ার কষ্টে খুব সচেতন ভাবে ফালাকের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল।পারলোনা দূরে সরে থাকতে। নিদ্রারত ফালাকের বুকের মাঝে মাথা আর মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়লো।ইচ্ছা ছিল ফালাক জেগে যাওয়ার পূর্বেই ও ওর বুকের মাঝ থেকে সরে আসবে।কিন্তু তা আর হলোনা।বুকের মাঝে ফালাক তার মেহেরের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে পেরে কিছুসময়ের মাঝেই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল।আর তখন মেহের ঘুমিয়ে কাদা।কি যে আনন্দ হচ্ছিল ফালাকের তা না দেখলে বলা মুশকিল। মেহেরের মুখটার দিকে তাকিয়ে পৃথিবী জয় করা হাসি ফুটে উঠল ফালাকের ঠোঁটের কোণে।খুশিতে আত্মহারা হয়ে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল যে মেহেরের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার মত অবস্থা।তাই দ্রুত ছেড়ে দিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরল।আজ কতগুলো দিন পর দুজন এক কাঁথার নিচে ঘুমিয়ে আছে।দেখলে মনেই হবেনা যে এই দুটো মানুষের মাঝে কত দূরত্ব।যেনো মনে হবে পৃথিবীর আরো একটি সুখী দম্পতি।অনেক বেলা হয়ে গেছে। মেহেরকে জাগান্বিত হতে না দেখে কক্ষের ওপাশে এক যুদ্ধ শুরু করার মত পরিবেশ হয়ে গেছে।বাহিরে ডাকাডাকির আর দরজাতে কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনে মেহের একটু একটু করে চোখ মেলে তাকাল।
ফালাকের বুকের লোমগুলোর মাঝে ওর চুলগুলো জড়িয়ে আছে।মুখটা উঁচু করে ফালাকের দিকে তাকাতেই ফালাকের নিঃশ্বাস মেহেরের সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ছে।সেটাও মেহেরের কাছে খুব অনুভূতির।কিন্তু বেশিক্ষণ সেই অনুভূতি নিতে পারলোনা।বেশি দেরী করলে পরে দরজাটিই ভেঙ্গে ফেলবে হয়তো ওরা।মেহের এলোমেলো চুলো গুলো ওড়নার আড়ালে ঢেকে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলল।
ওর চোখ মুখের অবস্থা খুবই খারাপ।দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারাটা রাত কেঁদেছে খুব।
মাতাঃ এত সময় নিলি কেন দরজা খুলতে?আর তোর এ কি অবস্থা চোখ মুখের?মহারাজ আপনি দেখতে পাচ্ছেন আপনার কন্যার চেহারা?
পিতাঃ নিশ্চই ওই শয়তান তোর উপর রাতে খুব অত্যাচার করেছে?এরজন্যই ও সাতদিন তোর সঙ্গে থাকতে চেয়েছে।ও একটু একটু করে তোকে আঘাত করে মেরে দেবে।সেই পরিকল্পনা আমি ওকে কিছুতেই পূরণ করতে দেবোনা।ওকে আজই আমি……
শেষের কথাটি বলে পিতা মেহেরের কক্ষে ঢুকতে যাচ্ছিল।মেহের ঢুকতে বাঁধা দিল।
মেহেরঃ না পিতা।আমার সাথে উনি এমন কিচ্ছু করেনি যার জন্য আমি অত্যাচারিত হবো। রাতে শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল আর তাই ঘুমাতে দেরী হয়েছিল।এর জন্যই এমন দেখাচ্ছে।আপনারা নিশ্চিন্তে কক্ষে যান আমি ঠিক আছি।
পিতা আর কথা বাড়ালোনা।পিতাসহ অন্যান্য সবাই চলে গেল কিন্তু মেহেরের মাতা গেলোনা।গম্ভীরস্বরে কন্যাকে প্রশ্ন করল-“ও কোথায়?”
মেহের মাথা নিচু করে কিছুটা সংকোচবোধ করে উত্তর দিল-“উনি…. উনি আমার কক্ষে।”
মাতা মেহেরকে অতিক্রম করে কক্ষে ঢুকে গেল। ফালাককে মেহেরের বিছানাতে ঘুমাতে দেখে উনি কন্যার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন।
মাতাঃ গোসল সেরে আমার কক্ষে এসো।
এই বলেই উনি চলে গেলেন।
মেহের কক্ষে ঢুকে বেশকিছুক্ষণ ফালাকের মুখটা দাঁড়িয়ে দেখলো।তারপর গোসল করেই মাতার কক্ষে গেল।
মাতাঃ তোমার সঙ্গে আমি এই প্রথম এমন বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছি যা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধছে।এই এতকিছুর পরও তুমি তার সঙ্গে রাত্রিযাপন করতে পারলে কি করে?
মেহেরঃ না আম্মাজান।আপনি যা ভাবছেন তার এমনকিছুই হয়নি।মাটিতে ওনার ঘুমাতে খুব কষ্ট হয় ঘুমাতে পারেনা।তাই আমি ওনাকে শয্যাতে ঘুমাতে বলেছিলাম।
আম্মাজানঃ আমার তো তার বিপরীত কিছুই মনে হচ্ছে।গতকাল সে শেরপুর রাজ্যবাসীর সামনে চিৎকার করে বলল যে তাকে আটক করার পরও তুমি তার কারাগারে তার কাছে গিয়েই থাকতে। আর গতকাল সকালে তার প্রমাণ ও আমি পেলাম।
কেন তুমি এমন করছো?
মেহের মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।
আম্মাজানঃ আমি তোমার পিতার উপর যতোটা ভরসা করি ঠিক ততোটাই তোমার উপরও করি। আশা করছি তুমি এমন কিছু আমাদের দেখাবেনা বা বোঝাবেনা যা আমাদের মেনে নেওয়া অসম্ভব। তুমি খুব বুদ্ধিমতী।ওর ফাঁদে তুমি কখনোই পা দেবেনা।ও তোমাকে ওর মিথ্যা প্রেমে ফাঁসাতে চাইছে, ও ছলনা করছে তোমার সঙ্গে।ওর আর উপায় নেই এখান থেকে রক্ষা পাওয়ার।তাই তোমার সামনে ও ভালো রূপ ধারণ করছে তোমার মন পাওয়ার জন্য।আর একবার ও যে কোনোভাবে মুক্তি পেলে ও আমাদের কারো ছেড়ে দেবে ভেবেছো?নৃশংসভাবে হত্যা করবে আমাদের।আর ও সেই সুযোগেই আছে।তাই তোমার কাছে অনুরোধ নিজেকে সামলাও।তোমার দ্বারা যেনো ও কোনোমতেই মুক্তি না পায়।
মেহের ভাবতে পারেনি মাতার কাছ থেকে সে এমনধরনের কথা শুনবে।চুপচাপ কথাগুলো শুনে কক্ষ থেকে বেরিয়ে এল।কাল যখন মাতা ফালাককে কক্ষে ঢুকতে দেখল তখন সে দরজার মুখে দাঁড়িয়ে ছিল।ওর বলা সমস্ত কথা সে শুনেছে।আর তাই সে এমনধরনের কথাগুলো বলল।মেহেরের মাথা কাজ করছেনা।একে তো ফালাককে সামনে দেখলে ওর থেকে দূরে সরে থাকা খুব কষ্টকর বিষয় তারউপর আবার মাতার বলা এমন নির্দেশ যা মেহের কখনো অগ্রাহ্য করতে পারবেনা।কোনদিকে যাবে, কোন পথ বেছে নেবে, কি করবে ও সেইসব দুশ্চিন্তায় ওর মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা।ফালাকের মৃত্যুর কথা ভাবলেই মেহেরের পুরো শরীর অসার হয়ে আসে।মুখে বললেও ভাবতে ওর অন্তরআত্মা কেঁপে উঠে।মেহের প্রাসাদের ভেতর কোনো এক কক্ষের এব কোণে দাঁড়িয়ে চুপি চুপি কাঁদছে।
মেহেরঃ হে আল্লাহ্ তুমি এমন মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা জাগালে যাকে বাঁচিয়ে রাখাই বড় দুঃসাধ্য।এমন অবিচার কেন করলে আমার সাথে?ঘৃণা থেকে আরো তীব্র প্রেম সৃষ্টি করেছো আমার মাঝে তার প্রতি।তার সাথে কখনও আমার সুখের সংসার সম্ভব না।কিন্তু তাকে মরতেও দেখতেও পারবোনা আমি।এখন আমি কি করে তাকে বাঁচাবো?
কাঁধের উপর মেহের কারো হাতের স্পর্শ পেলো। পেছন ঘুরে তাকাতেই ফালাকের আব্বাজানকে দেখতে পেল।মেহেরকে তার কক্ষে নিয়ে এল।
আব্বাজানঃ আমি জানতাম না। আমি ছাড়া আমার ফালাককে আরো কেউ একজন এত ভালোবাসে।কেনো লুকিয়ে রাখছো তোমার এই ভালোবাসা?বলো মা আমাকে।
মেহের কেঁদে কেঁদে ওর সব আবেগ, সব মনের কথা বলে দিল আব্বাজানকে।এও বলে দিল ও কেনো পারছেনা ফালাককে কাছে টানতে।
আব্বাজানঃ ফালাকের মনে তুমি যে ভালোবাসার জন্ম দিয়েছো তা ওর মন থেকে কোনোদিনও মুছে যাবেনা।আর তোমাদের ক্ষতি তা ও করতে পারবেনা।ও তোমাদের ক্ষতি করার জন্য সাতদিন তোমার সময় নেইনি।
মেহেরঃ পিতা আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।ওকে আমি এখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারিনা। কিন্তু ওর মৃত্যু ও আমি চাইনা।
মেহেরের চোখের পানি ওর বলা কথাগুলো শুনে পিতা বুঝতে পারল কতোটা অসহায়ত্ববোধ করছে মেহের।ওর থেকে বড় কষ্টের মাঝে আর কেউ নেই। এত ভালোবাসা থাকা সত্তেও ও পারছেনা সেই ভালোবাসার মানুষটার সামনে গিয়ে বলতে যে “আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি” এই কথাটি বলতে।পারছেনা তার হাতটি ধরে তার রাজ্যের রানী হয়ে তার স্ত্রী হয়ে তার সঙ্গে সুখের সংসার করতে।আর সব থেকে বড় কষ্ট আজ সেই মানুষটার মৃত্যু ঘটবে ওর রাজ্যে ওর-ই সামনে।পিতা মেহেরের মনকে শান্ত করার জন্য মেহেরের সাথে গল্প জুড়ে বসল।এত কষ্টের মাঝেও মেহের সেই গল্পগুলো মন দিয়ে এক মনে সেই গল্পগুলো শুনছে। কারণ সেই গল্পগুলো ছিল ফালাকের সুন্দর শৈশবের গল্প, ফালাককে বড় করে তোলার গল্প। এর মাঝেই ফালাক কক্ষের দ্বারের সামনে এসে দাঁড়াল। মেহেরকে এভাবে পিতার সাথে বসে কথা বলতে দেখে দরজায় কড়া নাড়ল।ওকে দেখে মেহের দ্রুত কক্ষ থেকে বেরিয়ে এল।আর আসার আগে পিতারকে আল্লাহর কসম দিল এই মুহূর্তে বলা এই কথাগুলো যেনো ফালাক জানতে না পারে।পিতাও সেই কসম দিতে বাধ্য হলো।
ফালাকঃ আব্বাজান ও কি বলছিল আপনাকে?
পিতাঃ নিশ্চই তোমার সম্পর্কে।
ফালাকঃ হ্যা কি বলছিল?
পিতাঃ সে কথা থাক।তুমি আমার কাছে এসে বসো তো একটু।
সারাদিনে ফালাক মেহেরের কক্ষে যায়নি।পিতার কক্ষে শুয়ে বসে দিন কাটাল।এর মাঝে যে কতবার মেহের সেই কক্ষের সামনে এসে উঁকি দিয়েছে। নিজের কক্ষে তার মন বসছেনা।একবার বসছে আবার শুচ্ছে, কক্ষের বাহিরে হাঁটাচলা করছে, আবার লুকিয়ে পিতার কক্ষে গিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।সকাল দুপুর কোনো বেলাতেই মেহেরের কক্ষে আসেনি ফালাক।মেহেরের মন ছটফট করছে ওর জন্য।কথা না বলুক কিন্তু সামনের উপর তো দেখতে পাবে ওকে।এত অপেক্ষার পরও যখন ফালাক কক্ষে এলনা তখন মেহের বিরক্ত হয়ে গেল।
মেহেরঃ কি হয়েছে আমার?এত অস্থিরতার কি আছে?ও ওর পিতার কাছে গিয়ে রয়েছে তাতে আমার এত অস্থিরতা কেন?
ফালাক যে ইচ্ছা করেই আজ মেহেরের চোখের আড়াল হয়ে আছে।ও দুপুরে খাওয়ার সময় দেখতে পেয়েছে যে মেহের পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে।ও দেখতে পেয়েও মুচকি হেসে খাওয়ার খাচ্ছিল।ও বোঝাতে চাই যে মেহের ওকে সত্যিই চোখে হারায়।মেহেরের মাঝে সবরকম গুণ থাকলেও ধৈর্যশীলতার গুণটি একেবারেই নেই। আর পারলোনা অস্থিরতা ধরে রাখতে। রাতে খাওয়ার সময়ে ও নিজে গেল পিতার কক্ষে খাওয়ার নিয়ে। কিন্তু শুধু পিতার খাওয়ারটা নিয়ে গেল।ফালাক সেটা খেয়াল করল।
ফালাকঃ আব্বাজান আমারও খুদা পেয়েছে।
পিতাঃ আচ্ছা অসুবিধা নেই তাজ।আমরা একই থালাতেই খাবো।মেহেরুন মা আমাদের জন্য একই থালাতে খাওয়ার নিয়ে এসেছে।
মেহেরঃ কে বলেছে আব্বাজান?আমি এখানে শুধু আপনার খাওয়ার নিয়ে এসেছি।
আব্বাজানঃ ও আচ্ছা।কিন্তু…..
ফালাকঃ আমার সমস্যা নেই আব্বাজান।আমার অতোটাও খুদা পাইনি।
মেহেরঃ আমার একদম খেয়াল ছিলনা যে এই কক্ষে আরো একজন আছে।আমি দুঃখিত।আপনি কষ্ট করে যদি আমার সঙ্গে আসতেন তাহলে একটু সুবিধা হতো।
ফালাকঃ কি সুবিধা হতো?
মেহের চোখ পাকিয়ে ফালাকের দিকে তাকালো। যেনো ফালাক ইচ্ছে করেই না বোঝার ভান করছে। মেহের বিব্রতভাব নিয়ে উত্তর দিল-“আমি ভেবেছিলাম আপনি রাত্রে কক্ষে আসবেন তাই আপনার খাওয়ারটা দাসী আমার কক্ষেই রেখে গিয়েছিল।
ফালাকঃ তাহলে আমাকে তোমার কক্ষে গিয়ে খেতে হবে?
মেহেরঃ আচ্ছা আপনি বসুন আমি খাওয়ার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ফালাকঃ না না এত কষ্ট করতে হবেনা আমার জন্য। আমি যাচ্ছি আপনার সাথে, চলুন।
গতকালের মত ফালাক আজও ধীরে ধীরে খাওয়াগুলো খাচ্ছে।আজ আর মেহের না বলে পারলোনা।
মেহেরঃ খেতে বেশি কষ্ট হলে আমি সাহায্য করতে পারি।
ফালাকঃ (………..)
ফালাক চুপচাপ খেয়ে নিল মেহেরের কথার উত্তর দিল না।খাওয়া শেষে কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় একটা কথা বলল-“যন্ত্রণা শুধু আমার হাতে নয়। আমার শরীরের ভেতরে বাহিরে সর্বস্তরে।”
কথাটা বলে ফালাক কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল। মেহেরের উত্তরের আশা করলনা।এদিকে মেহের ফালাককে বাঁধা দিতে গিয়েও পারলোনা।বালিশে মুখ গুজে চিৎকার করে কাঁদছে মেহের।ও বুঝতে পেরেছে ফালাক কি বোঝাতে চেয়েছে।শুধু হাতের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করে কি হবে।ব্যথা তো পুরো শরীরের ভেতর বাহির মিলে।সেই ব্যথা কমানোর দায়িত্ব তো আর মেহের নিতে পারলোনা।
আব্বাজান ঘুমাচ্ছে। ফালাক জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফালাকঃ আমার শরীরের প্রতিটা কোণায় কোণায় যে ব্যথা তুমি দিয়েছো তা কি তুমি সারাতে পারবে? আচ্ছা শরীরের ব্যথা না হয় ভুলেই গেলাম।অন্তরে দেওয়া ব্যথাটা কি মুছে দিতে পারবে?যদি পারতে সবকিছু ভুলে শুধু তোমাতে হারিয়ে যেতাম। সেই সুযোগটাও তুমি আমাকে দিলেনা।তবে আমি মরি বা বাঁচি আমি প্রমাণ করে দেব যে তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো।মাঝেমাঝে দূরত্ব খুবই জরুরি কাছের মানুষের প্রতি টান বোঝানোর জন্য।
মেহের বিছানার এক পাশে হেলান দিয়ে বসে আছে।
মেহেরঃ আপনি দূরে থাকলেও আমার কষ্ট আর কাছে আসলেও কষ্ট।এমন একটা পরিস্থিতিতে আমায় কেন ফেললেন, কেন আমার এমন অবস্থা কেন করলেন?আমি তো ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি।আজ সারাটাদিন আপনার মুখটা আমি দেখতে না পেরে বাধ্য হয়ে আপনাকে দেখার জন্য কৌশলে নিজের কক্ষে নিয়ে এলাম।কেন নিয়েলাম সেটাও বুঝতে পারলেন না?বুঝতে পারলেন না যে আপনাকে ছাড়া আমার থাকতে কষ্ট হচ্ছে?এত দূরে সরে যাচ্ছেন প্রতিদিন?ভালোই তো হচ্ছে।আমি কেন এত কাঁদছি?আমার তো এটাই চাওয়ার ছিল যে আপনি আমার থেকে দূরে সরে যান।
ফালাক কক্ষ থেকে বেরিয়ে দূর থেকে মেহেরের কক্ষটা লক্ষ্য করলো।দরজাটা এখনো খোলা।
ফালাকঃ আমি জানি মেহের তুমি আজ আমার আশাতে আছো।আজ তুমি আমার স্থানে কিছুদিন আগেও আমি যে অবস্থানে ছিলাম।
ফালাক চোখের নজর সরিয়ে পিতার কক্ষে ঢুকতে যাবে ঠিক তখন মেহের কক্ষের বাহিরে এসে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল।ফালাককে দেখে খুশিতে চিৎকার করে ডাকতে গিয়েও থেমে গেল।
মুখটা মলিন করে দাঁড়িয়ে রইল।ফালাক কক্ষে ঢুকতে গিয়ে থেমে গেল।কক্ষের দিকে ঘুরে একপাশ থেকেই দেখতে পাচ্ছে মেহের বাহিরে বেরিয়ে এসেছে।এবার দুজনের চোখে দুজনের চোখ পড়ল। সেই আগের মত পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ফালাক চাইছে মেহের নিজে এগিয়ে আসুক ওর পানে।আর মেহের আশাতে আছে ফালাক নিজেই আসবে ওর কাছে।কিছুসময় পার হয়ে গেল ফালাক আসলোনা মেহেরের কাছে।মেহের যেতে গিয়েও গেলোনা সেই দ্বিধাবোধ করে।কক্ষে ঢুকে গেল।
ফালাকের আশাভরা বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।ও সত্যিই ভেবেছিল মেহের আসবে ওর কাছে ছুটে।
কক্ষে দ্বার বন্ধ করে দিল মেহের।
ফালাকঃ এভাবেই মনের দ্বারটা বন্ধ করে রাখলে তুমি।
ফালাক মাথাটা নিচু করে চোখদুটো এঁটে আছে। শেষ কেঁদেছে বিশ বছর আগে।আর আজ সেই কান্না। তবে ফালাক চেষ্টা করছে চোখের পানিটুকু আটকে রাখতে।মাটিতে পড়তে দিতে চাইনা ও।
মেহেরের কক্ষের দিকে না তাকিয়ে কক্ষে ঢুকে যেতে লাগল।এবার খুক কাছ থেকে মেহেরের পায়ের আওয়াজ পেল ও।যখন আওয়াজটা থামল তখন ফালাক ঘুরে তাকাল।
ফালাকঃ আমার মেহের, হ্যা আমার মেহের আমার খুব কাছে একদম আমার সামনে।আস্তে আস্তে আমার খুব কাছে এসে আমার দিকে তাকিয়ে আমার বুকের মাঝখানটাতে হাত রাখলো।
মেহেরঃ এই জায়গাটুকু আমার খুব প্রয়োজন।
আপনি কি কিছুসময়ের জন্য হলেও দিতে পারবেন?
ফালাকঃ আমি ওর কথার কোনো জবাব দিলাম না।ওর কোমড়টা ধরে টেনে আনলাম আমার কাছে।
ফালাক কান্নাভেজস্বরে আর রাগের ভঙ্গীতে বলল-” আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয়না?আমি কি পাথর আমার কোনো ব্যথা নেই?কি শান্তি পাচ্ছো আমাকে এভাবে যন্ত্রণা দিয়ে?ভালোবাসা চাইলেও আমি কষ্ট পাই আর না চাইলেও কষ্ট পাই।কেনো আমার কি ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই? আমার কি শুধু কষ্ট পাওয়ার জন্য জন্ম হয়েছে?”
মেহেরঃ আমি ওর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ওর হাতটা টেনে ধরে ওকে আমার কক্ষে নিয়েলাম। দরজাটা বন্ধ করে ওর কাছে এসে দাঁড়ালাম।আজ আমি পারবোনা আমার অনুভূতি আমার আবেগ লুকিয়ে রাখতে।আজ আমি ওকে আমার সর্বাধিক প্রেম দিতে চাই।
মেহেরের মনের মাঝে সব বাঁধা উড়ে গেছে।ভুলে গেছে ও ওর মাতার বলা সব কথা।ফালাক দাঁড়িয়ে আছে শয্যার কাছে।মেহের ওর কাছে গিয়ে ওর শরীর থেকে জামাটা খুলে নিল।ওর সারা শরীরে থাকা চাবুকাঘাত গুলোর উপরে হাত বুলাচ্ছে।বুকের মাঝে থাকা লম্বা দাগটার উপর ওর ঠোঁট এগিয়ে নিল।খুব আদরে সেখানে ছুঁয়ে দিল।মেহেরের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে ফালাকের শরীর শিউড়ে উঠল, চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল।
Continue…..