হিংস্রপ্রেম পর্ব ৩০

0
435

#Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ৩০
লেখাঃ Israt Jahan
.

.
কিছুটা বেলা হলে মেহেরের ঘুম ভাঙ্গে।ফালাক তখন কক্ষে কবিরাজের সঙ্গে ওর শারীরির অসুস্থতা নিয়ে কথা বলছে।
ফালাকঃ আমি দাগ থেকে যাওয়ার চিন্তা করছিনা। আমি ভাবছি যতখানি পুড়েছে তা পুরোপুরি শুকিয়ে উঠতে কত সময় লাগবে?
কবিরাজঃ সম্রাট, পোড়া টা খুব গভীর ছিল না। উপর থেকে চামড়ার অংশই বেশি পুড়েছে।এখন পুরোপুরি সেড়ে উঠতে তা তো পনেরো দিনের মতো লাগবে।
ফালাকঃ এর মাঝে ও কোনো হাঁটা চলা করতে পারবে না?
কবিরাজঃ এখন তো পারবেই না।যদি কিছুদিনের মাঝে ব্যাথা কমে যায় তাহলে হাঁটা চলা করতে সমস্যা হবেনা।কিন্তু সাবধানে থাকতে হবে যাতে ক্ষত স্থান কোনোক্রমে নোংরা আবর্জনা জাতীয়’র সংস্পর্শ না পায়।তাতে আরো সমস্যা বাড়বে।
মেহের বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ওর ওঠার শব্দ পেয়ে ফালাক ছুটে ওর কাছে এসে ওকে ধরে বলল-” শয্যা ছেড়েছো কেনো?তোমাকে কি উঠতে বলা হয়েছে?”
কবিরাজঃ মহারানী আপনি এখন হাঁটতে পারবেন না।আপনাকে আরো কিছুদিন চিকিৎসার মাঝে থাকতে হবে।
মেহেরে’র সত্যিই দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বিছানাতে বসেই পড়ল। পা টা বিছানার উপরে উঠিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।
ফালাকের কাছে এটা খুব বিরক্তকর লাগল।
মেহেরে’র হাতের মাঝ থেকে ওর পা ছাড়িয়ে নিয়ে হাঁটু দুটো ধরে সোজা করে পা দুটো বিছানার উপর মেলে দিলো।মেহের ওর দিকে তাকিয়ে থেকে শুয়ে পড়ল।
ফালাকঃ কবিরাজ সাহেব আপনি চলুন।
প্রাতঃভোজন সেড়ে তারপর বাড়ি ফিরবেন।
কবিরাজঃ জ্বী চলুন সম্রাট।আর আমি দুপুরের আগ দিয়ে এসে আবার এসে দেখে যাব।
ফালাকঃ ঠিক আছে।
ফালাক যাওয়ার পর-ই কক্ষে পদ্মা আর হিরা নামে দুজন দাসী হাতে খাবারের থালা নিয়ে কক্ষে এল।
পদ্মাঃ কেমন আছেন রানীসাহেবা?
মেহেরঃ আল্লাহ্ পাকের করুণায় এখন একটু সুস্থ। তবে পায়ে খুব ব্যাথা আছে এখনো।
পদ্মাঃ তা তো থাকবেই।পুড়ে গেছে যে।আর পুড়ে যাওয়ার জ্বালা তো অনেক।সম্রাট পাঠালেন আমাদের।আপনাকে সাহায্য করতে এলাম।
মেহের পদ্মা আর হিরার সঙ্গে খুব কষ্টে হেঁটে গিয়ে হাত মুখ ধৌত করে এসে বিছানায় বসে সকালের খাবার খাচ্ছে।খাওয়া শেষে মেহের ওদের সঙ্গে বসে গল্প করছিল।ফালাক কে কক্ষে ঢুকতে দেখে দাসী দুজন কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।খাওয়া শেষে যে পথ্য আর ঔষধ ছিল পায়ের পোড়া স্থানে লাগানোর জন্য।সেগুলো হাতে নিয়ে ফালাক মেহেরের কাছে এগিয়ে আসল।পথ্যগুলো ওর হাতে দিয়ে বলল-” এর সবগুলোই প্রতি বেলা খাওয়া শেষে সেবন করতে হবে।ধরো, খেয়ে নাও।”
মেহের চুপচাপ সেগুলো খেয়ে নিলো আর ফালাক ওর পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখছে ওকে।পায়ে লাগানোর ঔষধ হাতে নিয়ে মেহেরের পায়ের কাছে বসে পোড়া অংশে ঔষধ লাগাতে গেল তখন মেহের ওর হাত আটকে ধরল।হাত আটকে ধরলে ফালাকের ওর দিকে তাকাকেই ঔষধ ওর হাত থেকে নিয়ে পায়ে নিজেই সেগুলো লাগাতে শুরু করল।
ফালাক একবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে আবার ওর পায়ে ঔষধ লাগানো দেখছে।দিনের সময়গুলো ফালাকের থেকে টুকিটাকি সেবা পেয়ে গেল পার হলো মেহেরের।রাতে ফালাক চুপচাপ এসে মেহেরের পাশে শুয়ে পড়ে।যদিও মেহেরের ইচ্ছা হয় নিচে গিয়েই ঘুমাতে।কিন্তু বৃথা চেষ্টা না করা-ই ভালো।কারণ ও জানে ফালাক তাকে কখনোই এখন নিচে থাকতে দিবেনা।তবে মেহের দুজনের মাঝে দুটো ছোট ছোট কোলবালিশ সোজা করে বেড়ার মতো করে দিয়ে রাখে।ফালাকের কাছে এটা খুব বাড়াবাড়ি বলে-ই মনে হয়।কিন্তু মেহেরের অসুস্থতার জন্য আর কিছু বলা হয়ে ওঠেনা।ফালাক এর দিকে মুখ করে শুয়ে কোলবালিশ দুটো জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকে মেহের।আর ফালাক তা চেয়ে চেয়ে দেখে।কি প্রয়োজন ফালাকের কোলের মাঝে গিয়ে ঘুমানোর?সবসময় দাসী বান্দীদের মতো ব্যবহার আর একটু অসুস্থ হলে তখন করুণা দেখিয়ে সেবা-যত্ন করা।কোনো প্রয়োজন নেই এমন করুণা নেওয়ার।অভিমান এবার মেহেরের খুব ভালোভাবে-ই হয়েছে।পায়ের ব্যাথা সেড়ে গেলেই যেখানে ঘুমানোর ছিল সেখানে গিয়েই ঘুমাবে ও।
সুস্থ হওয়ার সময়গুলো যেন কাটতে-ই চাইছিল না মেহেরের।ব্যাথা কমে যেতেই মেহের হাঁটাচলা করতে শুরু করে দিলো ফালাকের বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে।ফালাকের এসব দেখে ইচ্ছা করে ওকে হাত পা বেঁধে বিছানার উপর ফেলে রেখে দিতে। বিছানায় এসে ঘুমানোর কথা বললে মেহের বলে-” আবার অসুস্থ হই তারপর ঘুমাব।”
মেহেরের কথার উত্তরে ফালাক আর কিছু বলতে পারেনা।সেদিন যখন ফালাক চোখ গরম করে মেহেরকে বিছানায় আসতে বলছিল তখন তো মেহের বলেই ফেলল-” নতুন রানী এলে তো এই কক্ষেই জায়গা হবে না।তাহলে বিছানার ওই একটু জায়গা ক্ষণিকের জন্য দখল করে কি হবে? সে এসে তো বাগান দখল করেই নিয়েছে।এখন শুধু এই কক্ষটা-ই বাদ আছে।”
ফালাকঃ কী বললে?
ফালাকের প্রশ্নের উত্তরে মেহের শুধু ইরানির রেখে যাওয়া গোলাপগুলোর থেকে একটা গোলাপ ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিচে শুয়ে পড়ল।সেদির সন্ধ্যাই ইরানি এসে কয়েকগুচ্ছ গোলাপ ফুল দিয়ে গিয়েছিল ফালাক কে।মেহের শুয়ে বিড়বিড় করে বলছে-” কবে যে আমার সতীন করে নিয়ে আসবে কাকে আল্লাহ্ পাক-ই জানে।কপাল এভাবে-ই পুড়িয়ে ছাড়লেন আমার?সত্যি সত্যি যদি এই কক্ষে আমার সতীন ঢুকে যায় তাহলে আমার যে কি হবে কোথায় যাব আমি?”
এভাবেই প্রায় দেড় মাস কেটে গেল ওদের মাঝে। বিকালে মিরাজ ফালাকের সঙ্গে ছাদে বসে ইরানির বিবাহ নিয়ে আলচোনা করছিল।
মিরাজঃ আমি খুব ভীত ছিলাম যে আপনি আমার এই কথাগুলো কিভাবে নিবেন।
ফালাকঃ তুমি আমাকে কি ভাবো বলো তো? আমি তো বলেইছি যে তোমাদের যা প্রয়োজন তা আমার সাধ্যের মধ্যে হলে আমি উজার করে দিবো। তোমার বোন যে কোনো রাজকন্যার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।তার জন্য রাজপুত্র সবসময় প্রস্তুত।
মিরাজঃ আপনি আমাকে যে কতবড় দুশ্চিন্তার হাত থেকে বাঁচালেন।
ফালাকঃ ধরে নাও আগামীকাল থেকেই বিবাহের কার্য শুরু।
সপ্তাহখানিক পর থেকেই ইরানির বিবাহের তোরজোড় শুরু হয়েছে।আশেপাশের বহু রাজা এসেছে ফালাকের নিমন্ত্রণে।রাজমহল এখন একদম জমজমাট হয়ে আছে।প্রাসাদের সবাই এখন খুব ব্যস্ত।মেহের সন্ধ্যার পর পাকঘরে গেল।তখনো মেহমানদারদের জন্য পাক চলছে।
নূরিঃ রানীসাহেবা আপনি এখানে?
মেহেরঃ কেনো? বারণ ছিল নাকি?
নূরিঃ জ্বী রানীসাহেবা।সম্রাট বারণ করে দিয়েছেন। বলেছেন আজকে যেন আপনাকে আর পাকঘরে ঢুকতে দেওয়া না হয়।
মেহেরঃ কারণ কী?
পদ্মাঃ রানীসাহেবা আজকে প্রাসাদে প্রচুর বাহিরের মানুষ এসেছে।প্রাসাদের সবাই এখন কোনো না কাজে ব্যস্ত।পাক করা শেষ হলে খাবার বহনকারীরা বারবার আসছে খাবারগুলো নিয়ে যেতে।তাছাড়া বাহিরের মেহমান ও ঘোরাফেরা করছে এদিকে সেদিকে।
মেহেরঃ তো কী হয়েছে?
নূরিঃ রানীসাহেবা আপনি কি সত্যি বুঝতে পারছেন না সম্রাট কেনো বারণ করেছে?
মেহের রেগে গিয়ে বলল-” হ্যা পারছি তো।সবার সামনে বিবি আর আড়ালে বান্দী।তো আমি এখন কি করব?”
নূরিঃ ঘুমাতে বলেছেন।
মেহেরঃ মস্কারা করছো আমার সঙ্গে?
নূরিঃ না রানীসাহেবা।সত্যি এ কথা বলেছেন সম্রাট।বলেছেন কক্ষের বাহিরে ঘোরাফেরা না করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে যেন কক্ষে ঘুমিয়ে থাকেন।
মেহের অবাক হয়ে গেল ফালাকের এমন কথা শুনে।আজকাল কি মেহেরের সঙ্গে মজা করতে ইচ্ছা হয় নাকি ওর?মেহের রেগে কক্ষে চলে এল। কক্ষে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করে তারপর সত্যি সত্যি দরজাটা হালকা আটকে রেখে কক্ষ অন্ধকার করে নিচে শুয়ে পড়ল।এদিকে ফালাক সব বাহিরের রাজ্যের রাজাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় করছে।মিরাজ এসে ফালাক কে আস্তে করে বলল-” সম্রাট কবুল পড়ানোর সময় হয়ে গেছে।”
ফালাকঃ ও আচ্ছা চলো তাহলে।
কবুল পড়ানোর জন্য যে কক্ষটি নির্ধারিত করা হয়েছে সেই কক্ষে প্রবেশ করল ওরা।কক্ষের মাঝে একটি সবুজ পর্দা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।পর্দার দুই বিপরীত পাশের এক পাশে ইরানি তার ভাবী আর কিছু দাসী, কিছু বাহিরের অতিথি।আর অন্য পাশে ইরানির রাজপুত্র অর্থ্যাৎ তার বরপক্ষ।দুজনের কবুল পড়ানো শেষে মোনাজাত শেষ করে সবাই মুলাকাত করছে।মিরাজ খুশিতে ফালাক কে জড়িয়ে ধরল।ফালাক আর মিরাজ মুলাকাত করছে।মুলাকাত শেষে মিরাজ বলছে-” সম্রাট আপনি যে কতবড় মহৎ মনের অধিকারী তা আপনি জানেন না।”
ফালাকঃ এসব কেনো বলছো তুমি?
মিরাজঃ আপনি আমার বোন কে নিজের বোনের পরিচয় দিয়ে কতবড় রাজ্যের রাজপুত্রের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন করেছেন।আমার বোন এখন সেই রাজ্যের রাজরানী হয়ে থাকবে।ওর এতবড় সৌভাগ্য যে আপনার চেষ্টাতেই হয়েছে।
ফালাকঃ তুমি যেদিন থেকে আমার প্রাসাদে এসেছো সেদিন থেকে তোমার পরিবারকে আমি নিজের পরিবার-ই মনে করেছি।আর ইরানিকে ও আমি সবসময় বোনের মতোই ভেবে এসেছি। ভেবেছি আজ আমার যদি সত্যি কোনো বোন থাকত তাহলে আমি তো তার জন্যও এগুলো করতাম।ইরানি-ই না হয় আমার সেই বোন হলো।
মিরাজঃ সম্রাট ওনারা তো আজ রাত্রেই বিদায় নিতে চাইছেন।
ফালাকঃ হ্যা জানি।তুমি ওদের সঙ্গে কথা বলো আমি আসছি।
মিরাজঃ ঠিক আছে সম্রাট।
ফালাক জলদি হেঁটে কক্ষে গেল।ইরানি আর তার স্বামীর জন্য একটি উপহার রেখেছে কক্ষে।দরজা খুলেই ভেতরে তাড়াহুড়ো করে ঢুকতে মেহেরের পায়ে বেঁধে নিচে পড়ে গেল ফালাক।মেহের দ্রুত উঠে বসলো।ফালাক উপুর হয়ে পড়ে মাটিতে দু হাত দিয়ে ভর করে ছিল।উঠে গিয়ে কক্ষে আলো জ্বালিয়ে দেখে মেহের নিচে শুয়ে ছিল আর এখন বসে আছে।
ফালাকঃ এমন সময়ে শুয়ে থাকার কোনো মানে হয়?
মেহেরঃ আমাকে বলা হয়েছে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে।
ফালাক কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল।ও তো এটা কথার কথা বলেছিল।মেহেরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর উপহার টা নিয়ে দরজা আটকে বেরিয়ে গেল।ইরানিকে বিদায় দিয়ে খুব ক্লান্ত শরীর নিয়ে কক্ষে ঢুকল।নিজের বিবাহে তো এত কষ্ট হয়নি। অন্যের বিবাহের দায়িত্ব নেওয়াটা আসলেই খুব কষ্টকর।মেহের এখন ঘুমিয়ে পুরো কাঁদা।ফালাকের একবার ইচ্ছা করল ওকে ডেকে একটু মাথাটা টিপে দিতে বলবে।তাহলে ক্লান্তি কিছুটা কমবে আর দ্রুত ঘুম ও চলে আসবে। কিন্তু ইচ্ছাটা আর পূরণ করল না। হাঁটুর মধ্যে একটু ব্যাথা অনুভব করছে ও।সারাদিন তো আজ হাঁটাহাঁটি’র মধ্যেই ছিল।হাঁটুর মধ্যে ব্যাথা হওয়ার কারণে আরো বেশি অস্বস্তি হচ্ছে ।শুয়ে থেকে বসে থেকে কোনোভাবেই শান্তি পাচ্ছে না।হঠাৎ ঘুমের মধ্যে মেহের মুখে পানির ছিটা পেয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসল।তাকিয়ে দেখে ফালাক হাতে পান পাত্র নিয়ে বসে আছে।মেহের রাগীস্বরে বলল-” এটা কি ধরনের আচরণ ছিল?”
ফালাকঃ তিন বার ডাকা হয়েছে।কোনো সাড়া আসেনি।
মেহেরঃ তাই বলে ঘুমের মধ্যে এভাবে পানির ছিটা দিতে হবে?
ফালাকঃ পানি ছিল না।ওটা শরবত ছিল।
মেহের মুখে হাত দিয়ে আঙুলগুলো নাকের কাছে নিয়ে শুকে দেখে যে এটা সত্যিই শরবত ছিল।
ফালাকঃ উঠে এসো।
মেহেরঃ কেনো?
ফালাকঃ কন্ঠস্বর উচ্চ হয়ে যাচ্ছে না?
মেহের রাগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে বলল-” কি করতে হবে?”
ফালাকঃ টিপে দিতে হবে।পুরো শরীর, মাথা থেকে পা অবদি।
মেহেরঃ ঠিক আছে যান।আমি মুখ ধুয়ে আসছি।
ফালাকঃ মুখ ধুতে হবে না।অতো সময় নেই আমার।বড্ড ক্লান্ত খুব দ্রুত ঘুম প্রয়োজন।
মেহেরঃ মুখ শুকিয়ে তো আঁঠা…..
ফালাক ঠোঁটের উপর শাহাদাত আঙুল রেখে চুপ করে থাকতে ইশারা করল।কথা আর শেষ করতে পারলোনা মেহের।ফালাক শরীরটা আলগা রেখে পরনে একটা ঢিলেঢালা পাজামা পড়ে বুকে ভর করে শুয়ে আছে মাথাটা একপাশ করে।আর মেহের ঘাড় থেকে মাজা অবদি টিপে চলেছে।দাসী বান্দীর অবস্থা বুঝি এমন-ই হয়।আদর সোহাগের বালাই নেই খালি হুকুম।একে তো আর পত্নী বলা চলে না দাসী-ই বলে।ফালাক তা বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে মেহেরকে।ঘাড়, পিঠ, মাজা টেপা হলে ফালাক এখন পিঠে ভর করে বুকের উপর দুহাত জড়ো করে শুয়ে আছে।আর একটি পা খাড়া করে রাখা অন্যটি সোজা করে আছে।হাঁটুর ওপর নিচ টিপে চলেছে মেহের।শেষমেষ বসে কপাল টিপছে।ফালাক বলল-” সেদিন যেভাবে চুলে বিলি কেটেছিলে সেভাবে চুল গুলো নেড়েচেড়ে দাও।”
মেহেরঃ হুম।শুধুমাত্র পতীসাহেব বলে এতকিছু করা।না হলে আমাকে দাসী বানিয়ে রাখা কার সাধ্যি?
নিজ মনে মেহের কথাগুলো বিড়বিড় করছে। এভাবে টিপতে বসলে এমনিতেও ঘুমের ঝিম লেগে আসে।আর সময় তো কম হয়নি।সেই কখন থেকে টিপেই চলেছে হাত-পা, পিঠ, মাজা, মাথা।এতক্ষণে তো ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার কথা।আজকে কেনো ঘুম আসছে না ওনার কে জানে?মেহের ইচ্ছা করে চুলে বিলি কাটা বন্ধ করে বিছানার সঙ্গে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।যাতে মনে হয় ও ঘুমিয়ে পড়েছে।কিছুসময় পর ফালাক চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মেহের বসে থেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে পা দুটো নিচে ঝুলিয়ে।উঠে বসে ওর পা দুটো ধরে বিছানার উপর আস্তে আস্তে উঠিয়ে সোজা করে মেলে দিলো। কোনো কথা না বলেই ফালাক ওর কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।ঠিক সেই রাতটার মত যেই রাতে মেহের ওর বুকের মাঝখানটাতে জায়গা চেয়েছিল।বুকের উপর ভর করে মেহেরের পেটের সাথে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়ল।মেহের তা অপলক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।চোখ ফেটে লোনা পানি বেরিয়ে আসছে ওর।জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে ফালাক কে।এতই যদি টান থেকে থাকে তাহলে দূরে কেনো সরিয়ে রাখে?টান থাকলে তা মুখ ফুটে বললে কি হয়?মেহেরের ভেতরে ভেতরে খুব রাগ হচ্ছে।
মেহেরঃ আমি অসুস্থ হলে ঘুমিয়ে থাকলে আপনার যত অনুভূতি, প্রেম সব উতলে উঠে।আর অন্যসময়….?ভালোবাসা থাকলে তা সবসময় প্রদর্শন করতে হবে আমার আড়ালে নয়।
মেহের কথাগুলো ভেবে কোলের উপর আগে একটি বালিশ রেখে তারপর ফালাকের মাথাটা বালিশের উপর এনে ও উঠে চলে এল।ফালাকের ঘুমটা তখন-ই ধরেছিল।ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে চোখ খুলে মাথা উঁচু করে দেখে মেহের উঠে গেছে।ফালাকের মেজাজ বিগড়ে গেল।বিছানা থেকে নেমে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে মেহের মুখে পানি নেওয়ার জন্য হাতে পানির পাত্র নিয়েছে।ফালাক কে উঠে আসতে দেখে ওখানেই দাঁড়িয়ে যায়।ওর চোখ দেখে বুঝতে পেরেছে যে মেহের কেঁদেছে।তাই মেজাজ আর দেখালোনা।ওর হাত থেকে পানির পাত্রটা নিয়ে আসবাবের উপর রেখে ওর হাত ধরে বিছানায় নিয়ে আসতে গেল।মেহের ওর হাত টেনে ধরে বলল-” আর কি করতে হবে?”
ফালাকঃ কিছুনা।
মেহেরঃ তাহলে?
ফালাক ওর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর আসবাবের উপর থেকে শরবতের পান পাত্রটা নিয়ে তার মধ্যে যতটুকু শরবত ছিল পুরোটা ওর মুখ আর শরীর মিলিয়ে ঢেলে দিলো।বলল-” এগুলো মুছে দিবো।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here