হিংস্রপ্রেম পর্ব ১৯

0
326

Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ১৯
লেখাঃ Israt Jahan
.

জাভেদ কন্যার কথায় ভরসা করে ফালাকের দাবি মেনে নিল।সাতদিনের বাঁচার সময় পেয়ে ফালাক মুক্ত হলো।আব্বাজান ফালাকের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে অনর্গল কেঁদে চলেছে।
ফালাকঃ কাঁদবেন না আব্বাজান।আপনার তাজ এখনো মরে যায়নি।আপনি কক্ষে ফিরে যান।আমি আপনার পুত্রবধুর কক্ষে একবার যেতে চাই।
আব্বাজানঃ আল্লাহ্ পাক আমাকে যেনো এত বড় কষ্ট না দেই।আমি সেই মোনাজাত-ই করবো শুধু তার কাছে।
মেহেরের কক্ষে ফালাক প্রবেশ করেই ওর সঙ্গে যা করলো তা ওর ভাবনা চিন্তার বাহিরে ছিল। মেহেরের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।চিৎকার ও করতে পারছেনা।ওর গলা চেঁপে ধরে ঠেলতে ঠেলতে একদম বিছানার কাছে নিয়েসেছে।হঠাৎ করেই ফালাক গলাটা ছেড়ে দিয়ে দুহাত দিয়ে মেহেরের গাল ধরল।করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেরের চোখের দিকে।মেহের ওর কোনো কার্যকলাপ-ই বুঝতে পারছেনা।
ফালাকঃ ভয় পেয়ে গিয়েছিলে?এই বুঝি তোমার প্রাণটা আমি কেড়ে নিলাম?আমিও ঠিক এমনভাবেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম আজ-ই হয়তো তোমার সাথে আমার শেষ দেখা। তোমার সঙ্গে সুখে শান্তিতে, আদর সোহাগে, ভালোবাসাতে আর হয়তো সংসার করা হবেনা। আব্বাজানকে হয়তো আর দেখতে পাবোনা।সে হয়তো আমার মৃত্যু শোকে যে কোনো জায়গায় মরে পরে থাকবে।মেহের তুমি পারতে আমার মৃত্যু সহ্য করতে?
মেহের ভেজা চোখে আর ভারী কন্ঠে উত্তর দিল-” না পারার তো কিছু নেই।”
উত্তরটা শুনে ফালাক ওকে আরো বেশি শক্ত করে চেঁপে ধরল।মেহের একদম ফালাকের বুকের সাথে মিশে আছে শুধু মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে আছে।
ফালাকঃ ভালোবাসোনা আমাকে?সত্যি করে বলো।
মেহেরঃ আজকের পরও এই প্রশ্নটা করা নিছক বোকামির পরিচয় দেওয়া হয়ে যায় না?
ফালাকঃ তাহলে তুমি সারাজীবন বিধবারূপে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে কেনো?তোমার চোখে পানি এসেছে কেনো?তুমি তো আমাকে মন থেকে স্বামীর পরিচয় দাওনা।স্বামী-ই ভাবোনা। তাহলে আমার মৃত্যুর জন্য তুমি বিধবা থাকতে চাইছো কেন?প্রজাদের সামনে মহান সাজার জন্য বলেছো তাইনা?
মেহেরঃ মহান সাজতে যাবো কেনো আমি? শরীয়াত অনুসারে আপনি আমার স্বামী।তা আমি না মানলেও আমাদের ইসলামে তা গ্রহণযোগ্য। আর আমি আমার ইচ্ছা, শখ, আহ্লাদ আপনার সাথে বিবাহ হওয়ার পরই তা কবর দিয়েছি।আমার সম্মান আমার নারীত্ব যেভাবেই হোক আপনার কাছে সমর্পণ করতে হয়েছে।আর আপনার মৃত্যুর পর অন্য কাউকে বিবাহ করে তাকে আবার পুনরায় আমার সম্মানটুকু বিলিয়ে দিতে চাইনা।
ফালাকঃ কেনো চাওনা?তোমার মাঝে এখনো পূর্ণ যৌবনের ছাপ রয়েছে।
মেহের উচ্চস্বরে বলল-” তার উত্তর তো আমি দিয়েই দিয়েছি।”
ফালাকঃ না দাওনি।তার উত্তর আমি দিচ্ছি।কারণ তুমি আমাকেই ভালোবাসো।আর তাই অন্য কোনো পুরুষের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাওনা।
মেহেরঃ হায় আল্লাহ্! আর বলবোনা যে আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।আর তা এই সাতদিনেই একদম স্পষ্টভাবে বুঝে যাবেন।তার প্রমাণ আপনাকে আমি দেখাবো।
ফালাকঃ উহুমম।এই সাতদিনে আমি তোমাকে করে প্রমাণ করে দেখাবো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।আর ঠিক এই একটা কাজের জন্যই আমি এই সাতদিন সময় নিয়েছি।বুঝতে পেরেছো?
কক্ষে ফালাকের সাথে মেহেরর থাকা নিয়ে অনেক বড় দুশ্চিন্তার মাঝে পড়ে গেছে জাভেদ খান আর তার রানী।
রানীঃ মহারাজ আপনি আর আপনার কন্যা কিভাবে মেনে নিলেন ফালাকের এই ইচ্ছা?
মেহেরের সাথে থাকতে অনুমতি দিলেন কি করে আপনি?
জাভেদঃ তাছাড়া কি করতাম আমি?পুরো রাজ্যবাসী ওখানে উপস্থিত ছিল।তাদের সামনে আমি ফালাকের ওই অভিযোগের বিচার না করে তা এড়িয়ে গেলে পুরো রাজ্যবাসী আমাকে কি চোখে দেখতো?আমাকে আর রাজা বলে মানতো? আর মানলেও হয়তো আমার পূর্বের সম্মানটুকু আমি আর পেতাম না।মহারানী আমি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে সমঝোতা করিনি।আজ ফালাক যেভাবে ওর অভিযোগ গুলো উপস্থাপন করেছে তা ভাবতে গেলে সম্পূর্ণ যুক্তিসংগত।তার বিচার যে আমাকে করতেই হতো।বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তিস্বরূপ তোমার কন্যার শরীরে পাথর নিক্ষেপ তা কি তুমি সহ্য করতে পারতে?হয়তো সে নারী বলে অর্ধদিনের জন্য পাথর নিক্ষেপ হতো।কিন্তু হতো তো।
রানীঃ কিন্তু ওই শয়তানের কাছে যে আমার কন্যা নিরাপদ থাকবে তার নিশ্চয়তা কি?
জাভেদঃ তোমার কন্যা নিজে তার নিশ্চয়তা দিয়েছে।আর ওর কক্ষের সামনে সর্বদা রক্ষী ছড়িয়ে থাকবে।
রানীঃ ভেতরে তো আর থাকতে পারবেনা।
জাভেদঃ উফফ মহারানী এত বাড়তি চিন্তা দিওনা আমার মাথায়।আমি আর চিন্তা করতে পারছিনা।
ফালাক ওর আব্বাজানের কাছে গিয়ে শুয়ে আছে। আজ কতগুলো দিন ও একটু আরাম করে শুতে ও পারেনা আর ঘুমানো তো দূরে থাক।শুয়ে আছে ঠিকই কিন্তু চোখে ঘুম নেই।মাথায় নানারকম চিন্তা চলছে।কি করে সে প্রমাণ করবে যে মেহের ওকে কতোটা ভালোবাসে।আবার এ ও ভাবছে যে মেহের শিশু নয় যে সে তার মনের কথা বুঝতে পারছেনা। সে সবকিছু বুঝে শুনেও কেনো অস্বীকার করছে আর কেনোই বা ওর মৃত্যুর ব্যবস্থা করছে।এই প্রশ্নের উত্তরগুলোই ফালাক খোঁজার চেষ্টা করছে।কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে মেহের ওকে মনের গহীন থেকে অনুভব করে, ওকে ভালোবাসে।অনেক ভাবনা চিন্তার পর ফালাক ওর উত্তর পেয়েও গেল। মেহেরের এত কঠোর হওয়ার একটামাত্র কারণ ওর হিংস্ররূপ, ওর অন্যায় অত্যাচার।এইগুলোর জন্যই মেহের ওকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে হাজার প্রেম থাকার পরও।ফালাক জানে মেহের কোনোদিন অন্যায় অত্যাচার মেনে নেয়নি।সে যেই হোক তার শাস্তির ব্যবস্থা ও করেছে।ঠিক যেমন ওর পিতা নিজের কন্যা হওয়া সত্তেও তাকে শাস্তি দিতে পিছুপা হলোনা।অনায়াসে ফালাকের অভিযোগ মেনে নিয়ে তার বিচার করেছে।আর মেহের তারই কন্যা।
তার ন্যায়-নীতি তে মেহের বড় হয়েছে।একটা দিক থেকে ফালাক জাভেদের প্রতি মুগ্ধ।তার বিচারকার্যের ব্যবস্থার জন্য।এজন্য তখন ফালাক মেহেরের কক্ষে প্রবেশ করার আগে জাভেদের সামনে অনুতপ্ত হয়েছিল, তাকে মেহেরবানী জানিয়েছিল।ফালাক অনেককিছু ভেবে চিন্তে নিজের পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেছে।আজ রাত থেকে পরিকল্পনার ব্যবহারিক কার্য শুরু হবে।
মেহেরঃ আম্মাজান আপনি এত ভয় পাবেন না। ও আমার কোনো ক্ষতি করবেনা।আমি বলছি তো আপনি নিশ্চিন্তে কক্ষে যান গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
মাতাঃ তবুও তুমি কিন্তু সবসময় আত্মরক্ষার ব্যবস্থা রাখবে।ওকে একদম তোমার কাছে আসার সুযোগ দিবেনা।
ফালাক দরজার মুখে দাঁড়িয়ে মা মেয়ের সবকথা শুনছে।মেহেরের মা কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে তারপর বেরিয়ে গেল।
ফালাকঃ আমি খুব ক্ষুদার্থ।কিছু খাওয়ার হবে?
মেহের গম্ভীরকন্ঠে বলল-” হুম।এখানেই নিয়ে আসছি, বসুন।”
খাওয়ারগুলো আনার পর ফালাক অনেক সময় নিয়ে নিজ হাতে খাওয়ারটা খাচ্ছে।হাতের ক্ষত পুরোপুরি সেড়ে ওঠেনি।মেহের বিছানায় বসে আড়চোখে ফালাকের খাওয়ার সেই দৃশ্য দেখছে। কষ্ট লাগছে খুব।মনেমনে বলছে-” এতদিন বাধ্য করেছে খাইয়ে দিতে।আজ বললে কি এমন হতো? খাইয়ে দিতাম না বুঝি?”
ফালাকের গলাতে খাওয়ারটা আটকে গেল।কাশির শব্দ শুনে মেহের দ্রুত মুখের সামনে পানপাত্র এগিয়ে ধরল।পানিটুকু খেয়ে ফালাক বলল-” ধন্যবাদ।”
মেহেরঃ হুম। আর কিছু প্রয়োজন?
ফালাকঃ না।যথেষ্ট ছিল এখানে।
মেহের বিছানাতে একসাথে না শোয়ার চিন্তা করেছে।এ কথা ফালাককে জানানোর পূর্বেই ফালাক বলে উঠল-” মাটিতে শোয়ার অভ্যাস নেই। তাই আজ কতগুলো দিন ঘুমাতে পারিনা।একখানা মোটা চাদর আর একখানা বালিশ দিলে একটু উপকার হতো।মরেই তো যাবো।অনেক পাপ করেছি মৃত্যুর পরও শান্তি পাবোনা।তাই জীবনের শেষ কিছুদিন একটু শান্তিমত ঘুমানোর সুযোগ চাই।
ফালাকের এইসব কথাশুনে মেহের নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলোনা।চোখে পানি আসার সাথেই তা দ্রুত মুছে নিল যাতে ফালাকের চোখে না পরে।কিন্তু ফালাকের চোখ তা এড়ালোনা। ফালাক যে এই কথাগুলো ইচ্ছা করেই বলছে।ও দেখতে চাই এই কথাগুলোর শোনার পরও মেহের নিজের কঠোরতা কতক্ষণ দেখাতে পারে।আবেগ কে কতক্ষণ ধরে রাখতে পারে।
মেহেরঃ শয্যা গ্রহণ করুন।মাটিতে ঘুমাতে হবেনা।
এই বলে মেহের একটা বালিশ আর একটা কাঁথা নিতে গেল তখন ফালাক ওর হাত আটকে ধরে বলল-” এগুলো আমায় দাও।”
ফালাক কাঁথা আর বালিশ নিয়ে কারাগারের মাঝে চলে গেল।মেহের দেখে ভীষণ অবাক হলো।যে ফালাক মেহেরকে এক মুহূর্তের জন্যও কাছে পেতে ব্যাকুল হয়ে পড়তো, মেহের অন্য কক্ষে গিয়ে থাকলে সেখান থেকেই তাকে কোলে তুলে নিয়ে চলে আসতো আর আজ তাকে কাছে পেয়েও দূরে গিয়ে থাকছে।এ যে সত্যিই অবাক করার মত দৃশ্য।
ফালাক কারাগারে ঢুকে বলল-” ভয় পেলে বাহির থেকে কক্ষে তালা লাগিয়ে রাখো।”
মেহের কোনো কথার উত্তর দিল না।শুধু ওর কক্ষে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
ফালাকঃ আমার যে ঘুম আসবেনা তোমাকে ছাড়া। চারটামাস আমার তোমার শরীরের সাথে নিজের শরীর মিশিয়ে রেখে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে, অভ্যাস হয়ে গেছে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে তারপর চোখ বন্ধ করার, তোমার শরীরের গন্ধ না অনুভব করে যে ঘুমাতে পারিনা। আমি জানি তুমিও পারোনা এখন আমাকে ছাড়া ঘুমাতে।এই অত্যাচারী ফালাককেই যে তুমি ভালোবেসে ফেলেছো।তবে আজ থেকে তুমি অন্য এক ফালাককে দেখতে পাবে।যার মাঝে কোনো হিংস্রতা, কোনো বর্বরতা, কোনো জোর থাকবেনা তোমার প্রতি।আমি জানি তুমি এখনো চোখ বন্ধ করতে পারোনি, ঘুম তোমার চোখে নেই।ওই শয্যাতে তুমি শান্তি পাচ্ছোনা কারণ ওই শয্যাতে আমি নেই।তুমি এ ও বুঝতে পারছো যে ফালাক এখন তোমার দিকে চেয়ে আছে। তোমার অপেক্ষাতে আছে।তুমি আসবে আমার কাছে। তোমার যে আমার বুকের মাঝে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে।জোর করে হলেও তোমাকে সেই অভ্যাসে পরিণত করতে আমি বাধ্য করেছি।
ফালাক চোখ বন্ধ করে মনের মাঝে মেহেরের মুখটা কল্পনা করে কথাগুলো বলছে।ও বসে আছে মেহেরের অপেক্ষাতে।আর মেহের সে তো শয্যাতে বসে থাকতেও পারছেনা।এত অসহ্য লাগছে ওর।
মেহেরঃ উহ্ এ কেমন অনুভূতি? যেদিন ওকে ছাড়া নিজের কক্ষে ঘুমাতে আসি ঠিক সেদিনই যেনো মনে হয় ও আমার অপেক্ষাতে আছে।চেয়ে আছে আমার দিকে।চোখ বন্ধ করলেও মনে হয় ও আমাকে দেখছে।এমন কেনো মনে হয় আমার? ও তো ওই কারাগারে আছে।যে কারাগারে একটু ছিদ্র আর একটা দ্বার যা বন্ধ থাকে তাছাড়া আর কোনো জানালা নেই, কোনো ফাঁক নেই।তাহলে ও আমাকে দেখে কি করে?গতকাল রাত্রেও তো এমন মনে হয়েছিল।তখন নিজের মনের অস্থিরতা কাটানোর জন্য ওর কক্ষে ঢুকে যা দেখলাম তা তো আমার মনের ভাবনার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে গিয়েছিল।আজও কি তাই হবে?
মেহের বিছানার একপাশে বসে ভাবছে।কক্ষে কিছুসময় পায়চারী করে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পড়লো।একই অনুভূতি হওয়াতে আবারও বিছানা ছেড়ে উঠে বসল।এমন করতে করতে সেই মাঝরাত হয়ে গেল।এখন মেহেরের চোখ ফালাকের কক্ষের দ্বারের দিকে।
মেহেরঃ কক্ষটার একটা বড় ছিদ্র রাখা উচিত ছিল। তাহলে সেই ছিদ্র থেকে দেখতে পেতাম ও কক্ষের ভেতরে কি করছে।সত্যিই কি আমার অপেক্ষাতে দ্বারের পানে চেয়ে বসে আছে?
হাজার চিন্তার পর মেহের আজও পারলোনা নিজের মনকে বেঁধে রাখতে।ও দেখতে চাই সত্যি কি আজও ফালাক গতকাল রাত্রের মত ওর অপেক্ষাতে জেগে আছে।মেহের উঠে দ্বারের সামনে গেল কিন্তু আজ হাতে কোনো আলো নেই।নিজের কক্ষের আলো জ্বালিয়ে রেখেছে।
ফালাকঃ আস্তে আস্তে আমার কক্ষের দ্বার খুলে গেল।আমার মেহের আমার অপেক্ষার অবসান ঘটালো।
মেহেরঃ কক্ষের দ্বার খুলতেই সোজা ওর দিকে তাকালাম।ইয়া আল্লাহ্ ও আজও সেই গতকাল রাত্রের মত একইভাবে বসে আছে।চোখজোড়া ঠিক এই দ্বারের দিকে ছিল।যে চোখের দৃষ্টি দেখলে মনে হবে ও জানতো আমি আসবো তাই সেই অপেক্ষাতেই ও বসে আছে।তবে আজকের চোখের চাহনি যে অন্যরকম।ওই চোখে আকুতি দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু কিসের আকুতি?
মেহেরের হৃদস্পন্দন বেড়েই চলেছে।দুজনের চোখের দৃষ্টি দুজনের প্রতি কিন্তু পলকহীন।মেহের আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা।দৌড়ে নিজের কক্ষে চলে এলো।অঝোরে পানি ঝরছে চোখ থেকে ওর।
মেহেরঃ কেনো আপনার প্রতি আমার এমন অদ্ভুত টান সৃষ্টি হলো?কেনো আমি আপনাকে ছাড়া নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারিনা, আমি চোখ বন্ধ করতে পারিনা?কি আছে আপনার মাঝে যা আমাকে টানে?আমি পারছিনা এই অসহ্যকর যন্ত্রণা সহ্য করতে।ও আমার আশেপাশে থাকলেই আমি পারিনা ওকে ছেড়ে দূরে থাকতে।আর ও মরে গেলে……
মেহের কথাটা বলে নিজের মুখ নিজে আটকে ধরল।হঠাৎ মেহের ওর ঘাড়ের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছে।ও ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে ফালাক ওর খুব কাছে।
ফালাকঃ আমি কক্ষের বাহিরে চলে যাচ্ছি।তুমি ঘুমাও।
এই বলে ফালাক কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল। মেহের ওর দিকে না ঘুরেই ওর হাতটা টেনে ধরল।
মেহেরঃ যদি আমাকে সত্যি ঘুমাতে দিতে চান তাহলে এই শয্যাতে আমার পাশে ঘুমান।
ফালাকঃ তুমি……
মেহেরঃ আর কোনো কথা বারাবেন না।
ফালাক আর মেহের দুজন পাশাপাশি শুয়ে আছে মাঝে কিছুটা দূরত্ব রেখে।মেহের এপাশ ওপাশ করেই চলেছে।ফালাক মেহেরের দিকে উল্টোপাশ করে শুয়ে আছে।ও বুঝতে পারছে মেহের এখনো ঘুমাতে পারেনি।ঘুমাবে কি করে?চোখজোড়াতে যে অশ্রুরসাগর দখল করে আছে।মেহের ও ফালাকের দিকে উল্টোপাশ করে শুয়ে আছে।ফালাক বেশকিছুক্ষণ ধরে মেহেরের চাঁপা কান্নার আওয়াজ শুনছে।আর সহ্য করতে না পেরে ওর দিকে পাশ ফিরে ওকে আচমকা টেনে নিয়ে নিল ওর বুকের মাঝে।একদম শক্ত করে ধরেছে ওকে।
ফালাকঃ এত কষ্ট পাচ্ছো, কেনো?ভালোবাসো? বলো।
মেহের কেঁদেই চলেছে।একবারও চেষ্টা করছেনা ওর থেকে দূরে আসার।
ফালাকঃ নিজেও কষ্ট পাচ্ছো আর আমাকেও কষ্ট দিচ্ছো।মেহের? একবার বলো শুধু। তুমি আমাকে ভালোবাসো, তুমি আমার কাছে থাকতে চাও, আমার এই বুকের মাঝে থাকতে চাও।বলো না মেহের তুমি আমাকে ভালোবাসো।
মেহের ফালাকের বুকের মাঝ থেকে সরে আসল। তারপর কড়া গলায় বলল-” না, ভালোবাসা নয়। শুধু দয়া।”
ফালাকঃ আবার বলো।
মেহের এবার কান্না আর থামাতে পারলোনা। কান্নামাখা কন্ঠে বলল-” বলছি তো শুধুই দয়া।”
ফালাকঃ বলো ভালোবাসিনা।
মেহের কান্নাকন্ঠে তুতলিয়ে তুতলিয়ে বলল-” ভালো…বাসিনা, ভালোবাসিনা।
তৃতীয়বারের মত যখন ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলতে গেলো তখন ফালাক ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ছিল। ও দেখছিল কি পরিমাণ কাঁপছে ওই ঠোঁটজোড়া। কোনো কিছু না বলেই মেহেরের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে চেঁপে ধরল।অনেক আবেশে সেই ঠোঁটজোড়া ফালাক নিজের ঠোঁটের মাঝে রেখেছে। আর মেহের, সে ও বাঁধা দিলো না।পরম সুখে চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল।মেহেরের চুলের মাঝে ফালাকের হাতটা ডুবে আছে।

Continu……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here