হিংস্রপ্রেম পর্ব ৩১

0
428

#Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ৩১
লেখাঃ Israt Jahan
.

ফালাকঃ যতদিন আমার আয়ু আছে ততদিন আমার পূর্বের পাপের জন্য ক্ষমাভিক্ষা চেয়েই যাব। দিবারাত্রি আমার আল্লাহ্ কে স্মরণ করে পার করে দিবো।দিন দুনিয়ার সুখ সমৃদ্ধি যা উপভোগ করার করেছি আর প্রয়োজন নেই আমার।আমার যে ধর্ম তা পৃথিবীর শান্তির ধর্ম নামে পরিচিত।যুগে যুগে তা প্রমাণ ও হয়ে এসেছে।আর সেই ধর্মকে আমি যে’কটা বছর অবজ্ঞা করে কাটিয়েছি সে’কটা বছর তো আর ফিরে পাবোনা।তাই যতদিন আমার আয়ু রেখেছেন আল্লাহ্ পাক ততদিন তার ইবাদাত এ মশগুল থাকতে চাই।আপনারা আল্লাহভীরু
আমাদের প্রিয় নবীজি তার উম্মত।তার নির্দেশনা অনুযায়ী আপনারা রাজ্য পরিচালনা করবেন তা আমি বিশ্বাস করি।তাই আপনাদের উপর আমার এই রাজ্য রাজ্যের প্রজার দায়িত্ব দিতে কোনো সংশয় কাজ করছে না।
আহমদ খানঃ আমাদের নবীজি কিন্তু তার পরিবার পরিজন কে ছেড়ে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকেন নি সম্রাট।
ফালাকঃ মাওলানা সাহেব আমার কোনো পরিবার নেই।পালক পিতা ছিলেন বছর হলো ইন্তেকাল করেছেন।একজন বিবি ছিলেন, ছিলেন বলতে এখনো আমার বিবি’র পরিচয়ে আছেন।তবে তাকে আমি ত্যাগ করব।তিনি আমার সন্তান হত্যাকারীদের সহায়ীকা ছিলেন।অপরাধী হিসেবে তারও মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত ছিল।কিন্তু আমি পারি নি তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করতে।বলতে গেলে এখনো আমি তার প্রতি দুর্বল।কিন্তু আমার সন্তান হত্যার কথা মনে পড়লেই তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে ইচ্ছা হয়।আমি যাদেরকে কারারুদ্ধ করেছি তাদের পুনর্বিচার করবেন আপনারা।আমার বিবি’র বিচার আমি তুলে নিয়েছি।তাকে নিয়ে আমি আপনাদের নিকট কোনো বিচার করব না।কিন্তু তাকে ক্ষমাও করব না।তাকে এই প্রাসাদে এক কোণে জায়গা দিবেন বসবাস করার জন্য এটা আমার অনুরোধ কোনো আদেশ নয়।আমার পরিবর্তে সিংহাসনে আপনারা যোগ্য কাউকে বেছে নিতে পারেন আর সে যেন আল্লাহভীরু হয়।তবে অনুরোধ বিচারক্ষমতা আপনারা আপনাদের নিকট রাখবেন।
ফালাক আল্লাহ্ পাকের গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকার জন্য রাজ্য ও সিংহাসন ত্যাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।রাজ্য, রাজনীতি এসবের মাঝে একান্তভাবে আল্লাহ্ পাকের ইবাদাতে মশগুল থাকা অসম্ভব।বিচার, ফাতওয়া, মীমাংসা, সমাধান, ইজমা ও কীয়াসের জন্য কাজী, মুফতি, আল্লামা ও উলামাদের নিয়ে একটি সংগঠন প্রস্তুত করেছে। আর রাজ্যের সিংহাসন পদে যোগ্য কাউকে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তাদের।তবে তাকে আল্লাহভীরু হতে হবে, নিজের ধর্মকে ছাড়াও অন্য ধর্মের প্রজাদের ও নিজ ধর্মের প্রজাদের মত সমান চোখে দেখবে।এমন গুণাবলী তার মাঝে থাকতে হবে।সবার সঙ্গে আলোচনা করে ফালাক দশদিনের মাথায় রাজ্য ও সিংহাসন ত্যাগ করবে।রাজসভা থেকে উঠে এসে কক্ষে আরাম কেদারায় এসে বসল। মাথার মুকুটটা খুলে হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে গভীর ভাবে তাকিয়ে কিছু ভাবতে শুরু করেছে।অশ্রুতে চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে।বলছে,
-” তোমাকে আমি দ্বিতীয়বারের মতো ত্যাগ করছি।তবে তা চিরতরের জন্য।এর যোগ্য পূর্বে আমি ছিলাম না। তবে এখন হয়েছি তা আমি জানি।কিন্তু তোমার থেকে এখন আমার প্রয়োজন ইবাদাত, নেক আমল পরকাল পারি দেওয়ার পথ পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আশা করছি তুমি আমার থেকেও যোগ্য কারো মাথার উপর থাকবে।”
মুকুট হাতে নিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে বর্ণনা করল কথাগুলো।দরজার সাথে পিঠে হেলান দিয়ে মেহের কেঁদে চলেছে।শেষবারের মতো গতকাল রাত্রে ফালাক কে বোঝাতে চেয়েছিল যে ও কোনোভাবেই জড়িত ছিল না ওর সন্তান হত্যাকারীদের সাথে। কিন্তু ফালাকের একটায় জবাব,
-“যে শক্তি আর বুদ্ধি দিয়ে তুমি আমাকে বন্দী করতে পেরেছিলে সেই শক্তি তুমি ওদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারো নি কেনো? নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে তার মাতা প্রাণ পর্যন্ত বিলিয়ে দেয় সেখানে তোমার কোলের মাঝ থেকে কি করে পারে তোমার সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে? কিভাবে বিশ্বাস করতে বলো তুমি এ কথা আমাকে? তোমার যে সাহস, যে বুদ্ধি, যে ক্ষমতা যার কাছে আমি নিজেও পরাজিত হয়েছিলাম।আর ওরা তা উপেক্ষা করে তোমাকে সন্তানহারা করেছে? এ কি বিশ্বাসযোগ্য?”
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে মেহের আর কোনো যুক্তি স্থাপন করতে পারে নি।বোঝাতে অক্ষম হয়েছে ও।
ঠিক নয়দিনের মাথায় মেহের আর ফালাকের সম্পর্কের বিচ্ছিন্ন পর্ব ঘটবে।নয়দিনের দিবাগত রাত্রে-ই ফালাক রাজ্য ছাড়বে।কারো থেকে নতুন করে বিদায় সে গ্রহণ করবে না, কোনো পিছুটানে ঘুরে তাকাবে না, কাউকে সঙ্গে নিবে না।ফালাক আরাম কেদারাতে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বলছে,
-” আমার মাতৃভূমি খুব ভালোবাসি তোমাকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমার সৃষ্টিকর্তাকে, আমার সৃষ্টিকর্তাকে।তাকে ডাকার মাঝেই আমি চরম শান্তি অনুভব করি, আত্মার তৃপ্তি পাই।”
মেহেরঃ পরম আত্মার শান্তির জন্য পৃথিবীর সমস্ত জীব যে কোনো উপায় অবলম্বন করে।আপনি আপনার আত্মার তৃপ্তির জন্য সবকিছু বর্জন করবেন।এই ব্যাপারে আমার বাঁধা দেওয়ার কোনো কথাই আসে না।তবে আমিও আমার আত্মার তৃপ্তি চাই।যেদিন থেকে এই কক্ষ আপনিহীন হবে সেদিন থেকে এই কক্ষ কেবল আমার অস্তিত্ব-ই পাবে।অন্য কারো অধিকার আমি দিবো না এই কক্ষে প্রবেশ করার।হ্যা, আমি এই কক্ষের চারদেয়াল হবে আমার ইবাদাতগার।এই কক্ষের বাহিরে আমার পদার্পণ বন্ধ হয়ে যাবে।
নিজের মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো মেহের।
ফালাকঃ আগামী নয়দিন আমি শুধৃু তোমাতে বিচরণ করব।যাতে আমার শেষদিন আমার হৃদয়ের আঁখি তোমাকে কল্পনা করতে পারে।কথা দিয়েছিলাম তোমার ভূমিতে আমি আর কোনো অন্যায়ের ফসল বুনবো না।জানিনা কতটুকু পেরেছি সেই কথা রাখতে।আজ তোমার ভূমির যোগ্য বাদশাহ হয়েও আমি তোমার মাঝে থাকতে পারবোনা।এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে?
মেহেরঃ সম্রাট?
ফালাক চোখ খুলে মেহেরের দিকে না তাকিয়ে জবাব দিলো,
-” বলো।”
মেহেরঃ আপনার রাত্রের খাবার প্রস্তুত।এখানে আনি?
ফালাক ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
-” এ দায়িত্ব আজ থেকে তোমার শেষ।”
মেহেরঃ কেনো?
ফালাকঃ দাসীত্ব জীবন তোমাকে আর বহন করতে হবে না।
মেহেরঃ রমণী, আগামী নয়দিন আপনার রমণীর জায়গা পাওয়ার আবদার করছি।
ফালাকঃ আকুলতা, বিনয়ী সুর, দুঃখী মনোভাব শেষ মুহূর্তে আমি এগুলো দেখতে চাইছিনা। যে যে স্থানে যেভাবে আছে আগামী ন’দিন সে ঠিক সেই স্থানে সেভাবেই থাকবে।
মেহেরঃ তাহলে আমি আগামী ন’দিন এর জন্য আপনার স্ত্রীরূপে আছি।
ফালাক কোনো উত্তর করলো না।
মেহেরঃ আমি আমার স্বামীর সেবাতে নিয়োজিত থাকতে চাইছি এ ক’দিন দাসীরূপে নয়।
ফালাকের কোনো উত্তর না পেয়ে মেহের রাতের খাবার আনতে চলে গেল।ওর সামনে খাবারগুলো রেখে ওর পাশে বসে পড়ল।ফালাক প্রশ্নসূচক ভঙ্গীতে তাকালে মেহের বলল,
-” আমি যখন আপনাকে ঘৃণ্যতম জীব ভেবে দূরে সরে থাকতাম তখন আপনার হাতে খাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল।কিন্তু সেই দিনের মূল্য আমি বুঝিনি।আজ তার মর্ম বুঝছি।আমি বলছিনা আপনি আমাকে খাইয়ে দিন।আমি শুধু আপনার থালার এঁটো অংশটুকু খেতে চাই।এই সুযোগটুকু আমাকে দয়া করে দিন সম্রাট।”
ফালাকের খুব অসহ্য লাগছে মেহেরের এই দুর্বল করা কথাগুলো শুনে।কিন্তু ও আর মেহেরের সঙ্গে কোনো কঠোরতা, কোনো ক্ষিপ্ত ব্যবহার দেখাতে চায় না।খাওয়া শেষে কিছু অংশ খাবার থালাতে রেখে উঠে গেল।খাওয়ার সময় চোখের পানি ফেলতে নেই বলে মেহের খুব কষ্টে চোখে পানি ধরে রেখে খাওয়ার গুলো মুখে তুলছে।ফালাক জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আড়চোখে ওর সেই খাওয়া দেখছে।ফালাকের চোখদুটো আবারও ভিজে আসছে।মেহেরের খাওয়া শেষ হলে ফালাক কক্ষ অন্ধকার খুব দ্রুত শুয়ে পড়ল মেহেরের জায়গা ফাঁকা রেখে।রাত গভীর হতে চলল মেহের এখনো কক্ষে আসেনি।শেষরাতে ঘুম ভাঙ্গতে ফালাক সেটা টের পেলো।কক্ষের বাতি জ্বালাতে মেহেরের বালিশের উপর একটি চিরকুট পেল।চিরকুটে লেখা,
-” রাতের শেষভাগে আমি কক্ষে ফিরব।পূর্বে আমার থাকার জন্য যে কক্ষটি আপনি নির্ধারিত করেছিলেন আমি সেই কক্ষটিতে আছি।অনুগ্রহ করে এই অর্ধরাত্রি তে এই কক্ষটিতে আপনি আসবেন না।”
ফালাকঃ কী করছে ওখানে এখন? আমাকে আসতে বারণ করা হলো কেনো?
ফালাকের মন ব্যাকুল হয়ে আছে ওখানে মেহের কী করছে তা দেখার জন্য।ব্যাকুলতা সামলাতে না পেরে দরজা খুলতেই মেহের কে দরজার সামনে দেখতে পেল।মেহের কক্ষে ফিরছিল।ফালাকের একবার মনে হলো জিজ্ঞেস করবে সেখানে কী করছিল।তারপর আর জিজ্ঞেস করেনি।দুজনে নিশ্চুপ হয়ে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পড়ল।মেহের ফালাকের জাগ্রত অবস্থাতেই ওর বুকের মাঝে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” আমাকে দূরে সরিয়ে দিবেন না।আর তো মাত্র আটদিন আপনার মুখটা দেখতে পাবো।”
ফালাকঃ তুমি কী আমাকে দুর্বল করতে চেষ্টা করছো?
মেহেরঃ আপনি কি তা আদৌ হচ্ছেন?
ফালাকঃ (…………)
মেহেরঃ এই ব্যর্থ চেষ্টা করে আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনা।এটা আমার মাত্র চাহিদা।
ফালাক আর একটি কথাও বলেনি।দিনগুলো এভাবেই পার করছিল।আর প্রতিটা রাত্রি মেহের শেষভাগের সময় ফালাকের কক্ষে এসেছে।ফালাক তা একবারও জানতে চাইনি যে মেহের রাতের অর্ধ সময়টুকু আলাদা কক্ষে কী করে।অষ্টমদিন আসতেই ফালাক যেন নিজেকে সবার মাঝ থেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।দিনের সম্পূর্ণ সময়টুকু তার রাজ্য বিচরণ করে কাটিয়ে দিয়েছে।সেদিন সন্ধ্যা নামতেই ফালাক কক্ষে ঢুকে আর কক্ষ থেকে বের হয়নি।সবাইকে বলে দিয়েছে তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে।সন্ধ্যা হতেই এশা’র নামাজ আদায় করে আরাম কেদারাতে শুয়ে আছে।
শাহজাদী ফারজানাঃ তাজ? চোখ খুলে দেখো আব্বুজি কত প্রজাপতি!
ফালাক মিটিমিটি করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে একটি বিশাল গাছ যার পাতাগুলো সবুজ হলেও হিরার মতো চিকচিক করছে।আর গাছের অঙ্গ সোনালী রূপ ধারণ করা।আর সেই গাছটার সঙ্গে হেলান দিয়ে ফালাক ঘুমিয়ে আছে।চারপাশ দেখতেই ফালাক বুঝতে পারে এটি কোনো বাগান। তবে যে সে বাগান নয়।এমন বাগান সে কোনোদিন দেখেনি।হয়তো পৃথিবীর কোনো রাজ্যতেই এমন বাগান নেই।কারণ এই বাগানে বড় বড় পাথরের মাঝ থেকে ঝর্নাধারা প্রবাহিত হচ্ছে।বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি যার গায়ের রঙটাও ফালাক চিনতে পারছে না।এই প্রজাপতি গুলো আকারে বেশ বড় আর অজস্র প্রজাপতি এলোমেলো ভাবে উড়ছে। বাগানের ফুলগুলো হেলছে দুলছে।মনে একে অপরের সাথে কথা বলছে।পাখিগুলোর কিচিরমিচির নয় তাদের কথা শুনতে পাচ্ছে ফালাক।ওরা সবাই খেলছে আর একে অন্যের নাম ধরে ডাকাডাকি করছে।ফালাক উঠে দাঁড়িয়ে সামনে তাকাতে একজন তরুণীকে দেখতে পায় যে যার পোশাকের রঙ ও ওই গাছের মত।সবুজ আর সোনালী রঙের মিশ্রণ।ফালাক তাকে দেখে তার কাছে এগিয়ে যায়।ফালাক তার পিছে এসে দাঁড়াতে তরুণীটি এক গাল হাসিমুখে ওর দিকে ঘুরে তাকাই।
ফালাকঃ আম্মিজান?
শাহজাদি ফারজানার চোখদুটো চিকচিক করছে। তবে তা খুশিতে।
ফালাকঃ এ কোথায় আম্মিজান?
ফারজানাঃ এ তো আমার ছোট্ট তাজের অন্তরে আঁকা রাজত্ব।যেখানে আমার তাজ শুধু ফুল,পাখি, প্রজাপতি, ঝর্না আর খোলা আসমান দেখতে চাইতো।তুমি চিনতে পেরেছো?
ফালাকঃ জ্বী আম্মিজান চিনতে পেরেছি।আমার কল্পনা যে আজ সত্যি হয়েছে।আমি এখানেই থাকব আম্মিজান।আর আপনার কাছেই থাকব।
ফারজানাঃ তুমি যে এখানে থাকতে পারবেনা তাজ।
ফালাকঃ কেনো?
ফারজানাঃ সেই সময় তো হয়নি।
ফালাকঃ আপনি তো এখানেই আছেন।তাহলে আমিও এখানেই থাকব।আর আপনি তো আমাকে এখানে থাকতেই ডেকেছেন।না হলে আমি তো ঘুমিয়ে-ই ছিলাম।
ফারজানাঃ তোমাকে যে এক বিশেষ উপহার দিতে ডেকেছি।
ফালাকঃ কী উপহার?
ফালাকের মাতা ওর কোলে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান তুলে দিলেন।তারপর আর কোনো কথা না বলে উনি বাগানের পশ্চিম দিকে হেঁটে চলে গেলেন।ফালাক এক নজর তার মাতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে রইল।প্রচন্ড বাতাস আসছে।ফালাকের সারা শরীর শীতে কাঁপুনি দিয়ে উঠছে।মনে হচ্ছে ঝর উঠে আসছে।লোহার সাথে আঘাত লাগার প্রকট শব্দ শুনতে পাচ্ছে ও।শব্দের বেগে ও ঘুম থেকে জেগে যায়।জানালার দিকে চোখ পড়তেই বুঝতে পারে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে আর জানালার পাল্লা একটি অপরটির সঙ্গে ধাক্কা লাগছে।আর অনেক শব্দ তৈরি হচ্ছে তাতে।এই শব্দটি-ই ফালাক ঘুমের মধ্যে শুনতে পাচ্ছিল।উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করে ওখানে দাঁড়িয়ে ভাবছে,
-” এটা স্বপ্ন ছিল।আম্মিজান বহুবছর পর আমার সঙ্গে কথা বলেছে।তাকে আমি দেখতে পেয়েছি। সে ওই বাগানটাতে হাঁটছিল।আমাকে বলল ওই বাগান আমার অন্তরে আঁকা রাজ্য।হ্যা আমি তো ছোটসময়ে আম্মিজান কে বলতাম, আমার এমন একটা বাগান হবে যেখানে শুধু প্রজাপতি, পাখি, ফুল আর অনেক অনেক ঝর্নার সৃষ্টি হবে।আর প্রজিপতি আর পাখিগুলো আমার সাথে কথা বলবে।কিন্তু আমি তো সেখানে কোনো শিশু চাইনি।তাহলে আম্মিজান আমাকে ওই শিশুটি কেনো উপহার দিলো।ওই শিশুটিকে কোলে নেওয়ার পর আমার মাঝে এক অনুভূতি কাজ করছিল।আমার মনে হচ্ছিল যে এখন আমি পরিপূর্ণ।আমার মাঝে আর কোনো শূণ্যতা নেই। ওকে আমার খুব প্রয়োজন।আর আম্মিজান ওকে আমার ভরসাতে আমার কাছে রেখে গেল।তবে কী……
ফালাক পাশে ঘুরে দেখে মেহের দরজা ঠেঁলে কক্ষে ঢুকছে।কক্ষের মাঝে কিছুদূর আসতেই ফালাক মেহেরের দিকে এগিয়ে গেল।ফালাক কে এগিয়ে আসতে দেখে মেহের ওখানেই থেমে যায়।মেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে ফালাকের মনে হয় ওর চোখ দুটোতে খুশির জোয়ার বইছে।যা দেখে ফালাকের হৃদয় ছোটখাটো একটা ধাক্কা খাই।ওর ধারণা কি তবে বাস্তবের আভাস দিচ্ছে?ফালাক আচমকা মেহেরের পেটের দিকে তাকিয়ে ওইখানটাতে হাত রাখে।ফালাকের দৃষ্টি মেহেরের পেটের দিকেই। মেহের পুরো হতভাগ নয়নে চেয়ে আছে ওর দিকে। ফালাক ও ওর দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এর মাঝে কক্ষের দ্বারে কড়া পড়ল।
প্রহরীঃ সম্রাট মাফ করবেন।বাধ্য হয়ে বিরক্ত করতে হলো আপনাকে।
প্রহরীর ডাকে ফালাক মেহেরের কাছ থেকে দরজার সামনে গেল।
ফালাকঃ কি সমস্যা?
প্রহরীঃ জাভেদ খান আজ সকাল থেকে পাগলের ন্যায় প্রলাপ করছে আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য।ছুটে বেরিয়ে আসতে চাইছে আপনার কাছে। ওনাদের আঘাত করা নিষেধ বা খারাপ আচরণ করা নিষেধ তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে বলতে এলাম।
ফালাকঃ চলো।
ফালাক প্রহরীর সঙ্গে জাভেদ খানের কক্ষে যেতেই জাভেদ খান ওকে দেখে ছুটে এসে ওর হাত জড়িয়ে ধরে।
জাভেদঃ ফালাক তাজ তুমি এই রাজ্য ত্যাগ করছো?
ফালাক কিছুসময় জাভেদের দিকে তাকিয়ে চুপ থেকে বলল,
-” কী প্রয়োজন? বলুন।”
জাভেদঃ অনেক প্রয়োজন।শেষবারের মতো আমাকে কিছু বলার সুযোগ দাও।
ফালাক বিরক্ত হয়ে বলল,
-” সেই এক-ই কথা আর…..
জাভেদঃ একবার সুযোগ দাও।
ফালাকঃ বলুন।
জাভেদঃ আমার কন্যা কী এখনো তোমার হেফাজতে? নাকি সে কারারুদ্ধ?
ফালাকঃ দুটোই তো এক হলো।কারাগারটা ও আমার হেফাজতে।
জাভেদঃ আমার কথার অর্থ সে কী তোমার সঙ্গে বসবাস করছে?
ফালাকঃ হুম।
জাভেদঃ আমি শুনেছি সে কথা।
ফালাকঃ তাহলে আবার প্রশ্ন করে আমার সময় নষ্ট করছেন কেনো?
জাভেদঃ কারণ আমি জানতে চাই তুমি তাকে স্ত্রীরূপে নিজের হেফাজতে রাখলে তাকে ছেড়ে এই রাজ্য ছেড়ে কেনো যেতে চাইছো?
ফালাকঃ আমি আপনার এমন প্রশ্নে বিরক্তবোধ করছি।আপনি হয়তো আমার সময় নষ্ট করছেন। আর আপনার কন্যাকে আমি স্ত্রীরূপে নিজের হেফাজতে রাখলেও স্ত্রী এর অধিকার সে আমার থেকে পায়নি আর পাবে ও না।কাল আপনার কন্যাকে আমি ত্যাগ দিচ্ছি।আমি যাওয়ার পরও সে এখানে আশ্রয় পাবে কেবল একজন আশ্রিতা হিসেবে।
জাভেদঃ এমন করোনা ওর সঙ্গে।ও কী অপরাধ করেছে? ও তো আমাদের কথামতো বাধ্য হয়ে তোমাকে ছেড়েছিল।
ফালাকঃ সেটা অপরাধ হলেও সেই অপরাধের শাস্তি আমি তাকে মওকুফ করেছি।
জাভেদঃ তাহলে কোন অপরাধের শাস্তি তুমি তাকে দিচ্ছো?তোমাকে বন্দী করেছিল বলে?
ফালাক এবার রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
-” আপনি কী আমাকে এইসব জেরা করার জন্য দেখা করতে চেয়েছেন?”
জাভেদ অনুনয়য়ের স্বরে বলল,
-” ক্রোধান্বিতা হইয়ো না ফালাক তাজ। একটু কথা বলার সুযোগ দাও আমাকে। কিসের শাস্তি পাচ্ছে আমার কন্যা?”
ফালাকঃ আপনি এমন ভঙ্গীমা করছেন কেনো? আপনি কী জানেন না সে কিসের শাস্তি পাওয়ার যোগ্য?
জাভেদঃ আমার জানামতে সে তোমাকে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ছাড়া আর কোনো অন্যায় সে তোমার সঙ্গে করেনি।
ফালাকঃ কোনো অন্যায় করেনি?
জাভেদঃ তুমি-ই বলো না সে কিসের শাস্তি ভোগ করছে?
ফালাকঃ হত্যা।যে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য আপনারা বন্দী সেই অন্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সে ও……
জাভেদঃ মস্তবড় ভুল।এটা মস্তবড় ভুল তোমার। নিজের কন্যার সুখের জন্য সুপারিশ করছি না। সে তোমার শরীরে আঘাত করে দিনরাত না খেয়ে কেঁদে ভাসিয়েছে, আমার পায়ের সামনে পড়ে তোমার মুক্তকামনা করতেও বাদ রাখেনি।আমি-ই তাকে কঠোরতা দেখাতে বাধ্য করেছি।তোমার প্রতি যে তার প্রেম ছিল তা আমরা জানতাম।কিন্তু তোমাকে আমাদের বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি বিধায় তোমাদের সম্পর্কের পরণতি ঘটতে দিইনি।তুমি কী করে বিশ্বাস করলে যে সে তোমার সন্তানকে হত্যা করতে পারে?সে তো তাঁর গর্ভ থেকেই জন্ম নিয়েছিল।
ফালাকঃ আর সেই গর্ভে আমার সন্তান ছিল।তাঁর শরীরে আমার রক্ত বইছিল। তাই সে ঘৃণাবোধে সেই সন্তান হত্যা করেছে।আমার প্রতি তাঁর প্রেম ছিল না।
মেহেরের মা এগিয়ে এসে বলল,
-” তাহলে সে তোমার সন্তানকে সাতদিন বাঁচিয়ে রাখতো না।জন্ম হওয়ার সঙ্গে তাঁর মুখে হত্যা করার উপদেশ দিতো বা নিজেই করতো।তার যদি এতোই ঘৃণাবোধ থাকত তাহলে সে অন্য কারোর সহযোগীতা নিতোনা। সে নিজেই হত্যার ব্যবস্থা করতো।”
ফালাক কিছুটা চিন্তার মাঝে ডুবে থেকে কিছুক্ষণ পর বলল,
-” তাহলে যে ওই দাসী বলল মেহেরের আদেশে সে আমার সন্তানকে আমিন আর আরবের হাতে তুলে দিয়েছিল?”
মাতাঃ যে দাসী তোমার সন্তানকে চুরি করেছিল সেই দাসী বলেছে এ কথা? তুমি সেই দাসীকে চিনলে কী করে?তোমার সন্তান চুরি করার পর তো তাকে আমরা রাজ্যের কোনোখানেই খুঁজে পাইনি।
ফালাকঃ পাবেন কী করে? সে যে রাতে সমুদ্র পারে এসে আমার সন্তাকে তুলে দিয়েছিল ওদের হাতে সেই রাতে আমার সহযোগী দস্যুবাহিনীর এক যুবক তাকে দেখতে পেয়েছিল।আর তার পরের দিন-ই তাকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছিল।সে নিজে বলেছিল যে তার হাতে মেহের নিজে আমার সন্তান তুলে দিয়েছে।
জাভেদঃ তুমি কী করে বিশ্বাস করতে পারলে এ কথা?সে তো তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য এই কথা বলেছিল।সে জানত যে মেহেরুন তোমাকে স্বামী বলে স্বীকার করে না আর তার সুযোগ নিয়েই এ কথা বলেছিল।তোমার কাছে একবার মনে হলো না যে মেহের তোমাকে একবার দেখার জন্য সেইরাতে ছুটে গিয়েছিল তোমার কক্ষে সেই মেহের তোমার সন্তানকে কীভাবে হত্যা করতে পারে? তুমি মৃত ভেবে তার অবস্থা পাথরের ন্যায় হয়েছিল, নিজের সন্তান কে হারিয়ে সে উন্মাদ প্রায় হয়ে গিয়েছিল এই তথ্যগুলো তুমি আমার প্রাসাদের দাসীদের কাছ থেকেই নিতে পারো।এক সামান্য মিথ্যাবাদী দাসীর কথা বিশ্বাস করে তুমি তোমার স্ত্রীকে অবিশ্বাস করছো।একটাবার গোড়া থেকে মেহেরের সব ব্যবহার চিন্তা করে দেখো।তারপর বিচার বিবেচনা করো।
ফালাক শুরু থেকে শেষ অবদি ঠান্ডা মাথায় জাভেদ খানের কথাসহ সব ভেবে
ওর কাছে একটা কথা পরিষ্কার হলো যে মেহের ওর সন্তানকে না চাইলে জন্ম হওয়ার পরই হত্যা করতে পারতো।আর সেই দাসীর নিকট থেকে সত্যতা যাচাই করবে আর কী করে? তাকে তো সেই দিন-ই মিরাজ হত্যা করেছিল।
ফালাকঃ যত যা-ই রাগ থাক আমার উপর।সেই রাতে মেহের নিজে এসেছিল আমার কাছে।সেদিন তো আমি ওকে জোর করিনি।আর মেহেরকে বিবাহের পূর্বে ওর ব্যাপারে যতটুকু তথ্য জেনেছিলাম তাতে ও খুব শিশু ভালোবাসতো। সেখানে সত্যিই তো নিজের সন্তানকে হত্যা করা অসম্ভব।আর হত্যা করার কথা ভাবলে ও নিজেই তা করতে পারতো।অন্যদের সাহায্য কেনো নিবে? আমি এতদিন কোন যুক্তি দিয়ে ওকে অপরাধী বানিয়ে রেখেছি।আর আমার জানামতে মেহের কখনো মিথ্যা ও বলেনা।রাগের মাথায় কোনোকিছু ঠিকমত বিচার বিবেচনা করে দেখিনি আমি।
ফালাক আর ওদের একটা কথাও না শুনে দ্রুত নিজের কক্ষে চলে এল।মেহের তখন ওর কক্ষে নেই।সেখান থেকে দ্রুত গতিতে মেহেরের পূর্বের কক্ষে চলে গেল।দরজা ধাক্কা দিতেই ভেতর থেকে তা বন্ধ পেল।ফালাক দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে ওকে ডাকতে শুরু করল।
ফালাকঃ মেহের?
মেহের জায়নামাজ থেকে উঠে ফালাকের কন্ঠে তাগিদ আভাস পেয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিলো। ফালাক দেয়াল থেকে একটি তড়োয়ার বের করে নিয়ে ওর সামনে হাঁটু ভেঙ্গে বসে মাথা নিচু করে ওর দিকে এগিয়ে ধরল।
মেহেরঃ কী করছেন সম্রাট?
ফালাকঃ ভুল বুঝে যে অন্যায় আমি তোমার সঙ্গে করেছি সেই অন্যায়ের শাস্তি তুমি আমাকে দিতে পারো।
মেহেরের দু চোখ বেয়ে এবার সত্যি খুশির জোয়ার বইতে শুরু করেছে।টপ টপ করে পানি পড়ছে নিচে। আল্লাহ্ পাক ওর দোয়া কবুল করেছেন।এতদিন রাত জেগে আল্লাহর নিকট অশ্রু বিসর্জন করে যা ও চেয়েছে তা ওকে দিয়েছে আল্লাহ্ পাক।ফালাক সেভাবেই মাথা নত করে আছে।মেহের ওর হাত থেতে তড়োয়ার টা নিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে ও নিজেও ওর সামনে হাঁটু ভেঙ্গে বসে বলল,
-” শাস্তি তো একটাই।আপনি পারবেন না আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে।”
ফালাক ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল মেহের ওর পেটের মাঝখানে রেখে কথাটা বলল।ফালাকের স্বপ্ন যে বাস্তবে পূরণ হতে চলেছে তা তো ও তখন সেই স্বপ্ন দেখার পর মেহেরে হাস্যজ্জল চোখ দেখে আন্দাজ করতে পেরেছে।আর এখন সে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হলো।
ফালাকঃ শুধু এইটুকু শাস্তি?
মেহেরঃ আপনি আরো শাস্তি পেতে চান?
ফালাক চুপ থেকে হ্যাসূচক ভঙ্গীতে মাথা নাড়াল।
মেহের ওর উত্তর পেয়ে ওর হাত ধরে নিজেদের কক্ষে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।মেহের চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।ফালাক ওর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল,
-” আমার শাস্তি?”
মেহের ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর বুকের মাঝে হাত রেখে বলল,
-” এই জায়গাটা আমাকে দিবেন চিরকালের জন্য?”
ফালাকঃ ব্যাস এটুকু-ই?
মেহেরঃ আরো শাস্তি চান?
ফালাক সেই পূর্বের ন্যায় মাথা নাড়িয়ে হ্যাসূচক উত্তর দিলো।
মেহেরঃ এই মুহূর্ত থেকে চিরটাকালের জন্য আপনার সর্বস্ব আমাকে উজার করে দিন।পুরো আপনিটাকেই আমাকে দিয়ে দিন।
ফালাকঃ আমার মালিকানা?
মেহেরঃ হ্যা।
ফালাক খুব কাছে এসে ওর কানেকানে ফিসফিসিয়ে বলল,
-” বহন করতে পারবে তো।?”
মেহেরঃ অর্ধেক বহন করে নিয়েছি।
ফালাক মেহেরের পেটের দিকে তাকিয়ে মুখে মৃদু হাসি টেনে মেহেরকে কোলে তুলে নিলো।
ফালাকঃ কোলে তুলে নিলাম কেনো জানেন?
মেহেরঃ কেনো?
ফালাকঃ আজ সে আমার কোলেই ছিল।
মেহেরঃ মানে?
ফালাকঃ আপনাকে নয় তাকে কোলে তুলে নিলাম।
মেহেরঃ কিন্তু কোলে তো আমিই আছি।
ফালাকঃ হুম।কারণ আপাদত সে এখন আপনার মাঝেই আছে।
মেহেরঃ তাহলে তার আদরটুকু আপাদত এখন আমিই পাবো।
ফালাক ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকাতেই মেহের লজ্জাতে ওর বুকের মাঝে মুখ লুকাল।
ফালাকঃ আগে মালিকানা বহন করার যোগ্যতার প্রমাণ দিন।
মেহেরঃ প্রস্তুত।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here