“লক্ষ্মী সোনা জাদুমনি আলো আধারে বাতি যে তুই!তুই তো আমার সাত রাজার ধন। তুই তো আমার মানিক রতন।তুই ছাড়া বোঝে নাতো কেউ আলোমনি অবুঝ মন!
আলোমনি চোখের পানি অথেই নোনাজল।দুঃখের সাগরে ভাসে সে বোঝে না কেউ তার মন।”
আব্বু, আব্বু, আব্বুববব কথা বল…আমার সাথে কথা বলবি না। এই সোনা পাখি কথা বল নারে।এই যে আমি তোর আশায় পথ যে বসে থাকি!তোর মা যে কাদে শুনতে পাস না তুই।তুই ও আমায় পর করে দিলি!হ্যা পর তো করে দিবি আমি কে বল? আমি তো কারো আপন নই।আমি তো সবার পর!এই পৃথিবী আমার জন্য নয় মরে যাবো আমি! সবশেষ করে দিবো সব ধ্বংস করে দিবো ওরা খুনি আমাকে কাঁদিয়েছে!ওরা পাপী আমাকে আঘাত করেছে!ওর অমানুষ আমাকে মেরে ফেলেছে!
ছাড়বো না আমি কাউকে ছাড়বো না। আমার বুক থেকে আমার মানিক কেড়ে নিতে এসেছে।কাউকে দিবো না কাউকে না সবাইকে শেষ করে দিবো মেরে ফেলবো।আলো একটা একটা পুতুলকে বুকে ধরে নাচতে নাচতে কথাগুলো বলছে আর দৌড়াচ্ছে! যার ফলে আলো চুলগুলো দুই সাইটে বেনি করা শর্তে দুলছে কিছু চুল বেনি থেকে বেড়িয়ে খেলা করছে!আলো পিছনে পিছনে চার,পাচঁ পাগল মহিলা দৌড়াচ্ছে পুতুলটা কেড়ে নেওয়ার জন্য কিন্তু আলো দিচ্ছে না!
।।
।।
একদম আমাকে ধরবি না আমার কাছে আসবি না আসলে তোদের কামড় দিবো!আমার বাচ্চা কেড়ে নিবি তোদের সাহস তো কম নয়। মেরে দিবো তোদের!আমি এখন আমার বাচ্চা কে নিয়ে উড়ন্ত পাখি মতো ওই আকাশে উড়ে যাবো। মেঘের দেশে ঘুরে বেড়াবো! হা হা হা
আলো এমন পাগলামি দেখে দূর থেকে জাবেদ আহসান এর চোখ ভিজে এসেছে। আজ চার বছর দুই মাসের বেশি হবে এখানে আলো পড়ে আছে! আলো এখন মানসিক রোগী কাকে কি বলে কোন হুস নেই!কয়েকজন নার্স ওকে ধরার চেষ্টা করছিলো।আলো নার্সদের ধরা দেয় না বরং প্রানপণে ছুটতে থাকে! একটা সময় নার্স গুলো ধরে ফেলে আর কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয় আলো পিঠে!আলো ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে কান্না করে ওঠে!কাঁদতে কাঁদতে আবার হাসতে শুরু করে!আলো এভাবেই মার খায় কিন্তু কেউ দেখার নেই।জাবেদ আহসান আলো কে এখানে ভর্তি করিয়েছে। সুস্থ হওয়া নাম নেই।আলো পরে অনেকে এসেছে সুস্থ হয়ে চলে গেছে।কিন্তু আলো কোনো উন্নতি হয়নি বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে।একজন নার্স আলো কে জোর করে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করতে নিলে তার হাতে কামড় বসিয়ে দেয় দৌড়।
ইঁদুর গু খায়াবো,কালা ছাগলে গোল গোল বুটবুটি খাওয়াবো!গরু কান খায়াবো।গরু গোবর খাওয়াবো!খাবি, খা, খেয়ে মরে যা।সব খেয়ে শেষ করে দে ধ্বংস করে দে।গোটা পৃথিবীর সবকিছু খেয়ে ফেল…. হা হা হা হা।
ইমা নামের একজন নার্স এসে আলো সামনে দাঁড়ালো!আলো পালানো আগেই পুতুল কেড়ে নিলো ইমা।আলো ঠোট উল্টে কিছু বলার আগেই হাতে ইনজেকশন পুশ করে দিলো!
স্যার মেয়েটা তো কোনো উনতি হচ্ছে না চার বছর দুইমাস হয়ে গেলো পাবনা মেন্টাল হসপিটালে পড়ে আছে।আমি বলি কি স্যার মেয়েটা কে আলাদা নতুন ডক্টর কাউকে রেখে টিটমেন্ট করুন সুস্থ হলে ও হতে পারে।
তোমার কি মনে হয় ইমা আমি চেষ্টা না করে বসে আছি হাত, পা গুটিয়ে!সব জায়গা চেষ্টা করে ব্যর্থ জানি না এর পরিনতি সামনে কি হবে।আলো আতো সুস্থ হবে কি না জানা নেই।এখন সব কিছু উপর ওয়ালার কাছে ছেড়ে দিয়েছি এখন আল্লাহ ভরসাময়।
__________
সূর্যদোয় দেখিবার বাহানায় রাত্রির জ্যোৎস্না বিলিয়ে যায় ধরণী থেকে নিঃশব্দে।সকলকে জাগাবার বাহানায় চিরচেনা কালো কাকটিও তার স্বভাব সুলভ আচরণে বাদ্ধ হয়ে গাছের ডালে বসে উচ্চস্বরে চিৎকার করতে ভুলে না কখনো।শহরের ধূলি বালিময় পরিবেশে তো কোয়েল পাওয়া দূষ্কর।
সকালের মিষ্টি রোদ গল গলিয়ে জানালার স্বচ্ছ কাঁচ বেধ করে নিলয় চোখেমুখে উপচে পড়তেই বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে এলো।রাতে বেশ দেরি করে এসে ছিলো বাসায়।আর এসেই বিছানায় ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দেয়।নিয়ম করে চলা দিনগুলো আজকাল কেমন অনিয়মে পরিনত হয়ে চলছে ওর।যা কখনো নিলয় করেনি।
সিকদার বাড়ি থেকে আলো চলে যাওয়া পর সবাই আনন্দ খুশীতে আছে ভালোই আছে।ঘুম নেই নিলয় চোখে থাকবে কি করে তার ছোট মনটা আজো আলো জন্য কেঁদে উঠে!আলো সাথে যে বড্ড অন্যায় করে ফেলেছে!একটাবার মাফ যাওয়ার সুযোগটুকু পেলো না নিলয়!কি করছে আলো কোথায় আছে সে!এই ৫ বছরে নিলয় অনেক বার খুঁজে ফিরেছে।আজ ও আলো অবদী পৌছাতে পারেনি। তাই নিলয় একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করার সিন্ধান্ত নিয়েছে।আর এক সপ্তাহ পর ত্যাগ করবে বাংলাদেশ। এই সপ্তাহ চলে যেতো কিন্তু রজনী বিয়ে!ছোট বোনটা জন্য যেতে পারলো না!ভোর,রাত যেমন ভাই হিসেবে রজনী ওপর হক আছে তেমনি নিলয় হক রয়েছে।তাই নিলয় এই সপ্তাহ থাকবে।
_______নিশিপাখি আমার ফাইল কোথায়!আমার অফিসে লেট হচ্ছে তো।
বাবাই তোমাল পাইল।
____আম্মু তুমি এখানে আর ফাইল তোমার হাতে কেনো তোমার আম্মু কোথায়?
ফুফুবনির বিয়ে নিয়ে বেলহস্ত আম্মু তাই আমালে পাঠালো।
___ওহ আচ্ছা মহারানী এত ব্যাস্ত বর কে সময় দেওয়ার টাইম নেই উনার কাছে।ওকে আমি রাতে এসে দেখে নিবো তোমায় মহারানী ভিক্টোরীয়া! নিজের মনে বিড়বিড় করে অফিস চাওয়া পথে মেয়ে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো!
____জান্নাত, হূমায়রা,রুদাইফা তোমাদের আব্বু চলে গেছে!তিনটা মাথা নাড়িয়ে বোঝাল চলে গেছে আম্মু।
নিশি মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তিনটা মেয়ে যে কে কেউ একসাথে কিছু জিজ্ঞাস করলে এমনভাবে একসাথে মাথা দুলাবে, নয়তো একসাথে কথা বলে উওর দিবে।
ভোর,নিশি তিন কন্যা সন্তান মা,বাবা। তাদের ঘরে তিনটা হুর দিয়েছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তা নিয়ে বেশ আনন্দে যাচ্ছে তাদের সবার দিন।
আলো নামে কোনো মেয়ে সিকদার বাড়িতে ছিলো তা যেনো সবাই ভুলতে বসেছে।
সুখ ঘরে দুঃখে কাটা নেমে আধার অন্ধকার রাজ্যের পরিনতি যে একসময় হবে তা কি কেউ জানে।অন্যের সুখ কেরে কেউ কখনো সুখি হতে পারেনা।প্রকৃতি তার প্রতিশোধ শুধসমেত ফেরত নিবে একদিন সেঠা সবাই ভুলে গেছে।ভালো কাজের যেমন প্রুন্য মিলে সুখ মিলে!তেমনি খারাপে কাজের জন্য শূন্য মিলে দিন শেষে পাপের শাস্তিতে ভোগ মিলে।
মানুষ সৃষ্টি শ্রেষ্ঠ সেরা জীব হলে ও,আজব বটে।মানুষের স্বভাব বোঝায় বড় দায়।আজ ভালো তো কাল খারাপ হতে কতখন নিয়তি বলে তো একটা কথা আছে।
__________
আজ রজনী বিয়ে লাল শাড়িপরিহিতা নারী কে অপরূপ সাজে সাজিয়ে দিয়েছে দুই ভাবী।রজনী বধূসেজে বসে আছে ।কিছুটা ভয় আর কিছুটা লজ্জা এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ কাজ করছে এই মুহুর্তে ওর মাঝে।বুকের ভেতর ছোট মনটি কেমন ধুরু ধুরু করা শুরু করেছে।কিছুখন বাধেই ওর প্রিয় মানুষটি ওর হয়ে যাবে।একই সুতোর বাঁধনে বেধে দু’জন দু’জনার হয়ে যাবে চিরদিনের জন্য।এখন থেকে ওর প্রতিটি নির্ঘুম রাতের কারণ হবে সেই মানুষটি।সকালটা শুরু হবে প্রিয় মানুষটির বুকে নিশ্চিন্তে মাথা রেখে!ভাবতেই দেহ মনে শিহরণ বয়ে যায়।আর যখন মানুষটি সত্যি ওর এত কাছে থাকবে তখন!রজনী লজ্জায় লাজে রাঙা বউ হয়ে যেনো আরো নুইয়ে গেলো’!
।।
।।
যে সাজে সেজে ছিলো প্রিয় মানুষটা সাথে ঘর করবে বলে। সে মানুষটা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পাড়ি দিলো অজানা পথে।বর বেশে বিয়ের আসরে
যার আসার কথা ছিলো সে এসেছে ঠিকই।কিন্তু বর সাজে নয়।কফিনে করে সাদা কাপড়ে মুড়ানো শরীরে ঢেকে নিদ্রাহিতভাবে,তাকে ডাকলে যে আর কারো ডাকে সারা দিবে না।সে যে ঘুমিয়ে আছে নিদ্রায় চিরদিনের জন্য।একটু আগে যে বাড়িটি আলোকিত ছিলো সেই বাড়িটি এখন অন্ধকার ঢেকে গেছে।রুবীনা কোলে অজ্ঞান পড়ে আছে রজনী। স্বামী ঘরে পা রাখার আগেই রজনী সুখটা যেনো সারাজীবন জন্য হারিয়ে গেলো।রুবীনা মেয়ে করুন পরিনতি মানতে না পেরে মুখে আচল গুজে কাঁদছেন।
রাত,ভোর,নিলয় নির্বাক কি হয়ে গেলো এসব।একটু আগে তো সব ঠিক ছিলো হঠ্যা ধমকা হাওয়া মতো সব এখন লণ্ডভণ্ড।
#ভালোবাসার_সাত_রং?? ((সিজন-২))
#Yanur_Akter_Eanya
#সূচনা_পর্ব
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)