ভালোবাসার সাত রং(সিজন-২) পর্ব ৩

0
1090

#ভালোবাসার_সাত_রং?? ((সিজন-২))
#Yanur_Akter_Eanya
#পাঠ-৩
– ফারাজ আলো কে কোনোভাবে শান্ত করাতে পারছে না।কোনো রকম ইনজেকশন পুশ করে কেবিনে বসে আলো সকল ডিটেইলস দেখছে।আর আলো সহ আরো পাচঁজনের চিকিৎসা দায়িত্ব হসপিটাল কমিটি ফারাজকে দিলো! আর আলো সহ এই পাচঁ জনের মধ্য আলো সব থেকে বেশি দুষ্টু।ওকে সামলানো অনেক কষ্ট হবে।তবু ফারাজ আলো সব চিকিৎসা নিজে করবে।বাংলাদেশে আলো ফারাজের এর প্রথম রোগী ওকে দিয়ে চিকিৎসা শুরু।

ফারাজ সব ডিটেইলস দেখে চেয়ার সাথে পিঠ এলিয়ে মনে মনে ভাবলো আলো পরিবারের সাথে একান্তে কথা বলে জানতে হবে!কি এমন ঘটনা ঘটেছিলো যে আলো মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গেলো।ফারাজ গভীর চিন্তায় মগনো।হঠ্যাৎ কারো চিৎকার আওয়াজ আসলো কানে কি হয়েছে দেখার জন্য বের হলো।আওয়াজ অনেক দূর থেকে আসছে কিন্তু কোথা থেকে সেটা খুজার চেষ্টা করছে।

ফারাজ নিচতলা ৩০৩নং কক্ষের সামনে এসে দাড়ালো সেখানে থেকে আওয়াজ আসছে।রুমটা বেশ পুরনো এখানে কোনো কাজ হয় না বন্ধ পড়ে আছে অনেকদিন হলো।তাহলে এতরাতে কে এখানে আছে কেউ তো আসে না এখানে।

ফারাজঃকে ভিতরে!আমি বলছি ভিতরে কে আছো? বাহিরে বের হওয়া না হলে আমি ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকবো। রুমের ভিতরে গোঙানো আওয়াজ ছাড়া কিছু আসছে না।ফারাজ দেড়ি না করে দরজা ধাক্কাচ্ছে।বেশ কয়েকটা ধাক্কায় দরজা ভেঙে গেলো।

রুমের ভিতর অংশ দেখে চমকে গেলো কয়েকটা পুরুষ মিলে একটা মেয়ে কে ঘিরে ধরেছে।রেপ করার চেষ্টা করছে।ফারাজ আর দেড়ি করলো না ভিতরে ঢুকে সব কয়টাকে ধরা চেষ্টা করলে ফারাজ কে ধাক্কা মেরে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। মেয়েটা ফ্লোরে পরে গোঙাচ্ছে। চুল দিয়ে মুখটা ঢাকা থাকায় বুঝতে পারলো না কে মেয়েটা।জামার হাতার সাইট টা ছিঁড়া,কোমড় দিক দিয়ে ছিঁড়ে গেছে টানাটানিতে।

খয়েরি কালার গোল ফোরাক পড়া মেয়েটা। ফারাজ তাড়াতাড়ি নিজের শার্ট খুলে মেয়েটা গায়ে জড়িয়ে দিলো। হাত, আর পায়ের বাধন খুলে দিলো। মুখের সামনে থেকে চুল সরাতে চমকে গেলো এটাতো আলো।আলো এখানে কি করে সম্ভব।আমি একঘণ্টা আগে ইনজেকশন দিয়ে এসেছি।ফারাজ মাথা হাজার প্রশ্ন ঘুরছে।ওরা কারা যারা আলো সাথে অস্যভতামি করতে চেয়ে ছিলো।ফারাজ হাজার ভাবনার মাঝেই কেউ দুম করে এসে বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে ফুফাতে লাগলো।হয়তো আলো এখন ফারাজ কে নিরাপদ জায়গা আশ্রয় মনে করে মুখ লুকালো।বুকের মাঝে মুখ লুকানো ব্যাক্তির শরীর মৃদু কাঁপছে সেটা বুঝতে পারলো।আলো চোখের পানিতে ফারাজ খালি গায়ে থাকা বুকটা ভিজে উঠলো।আলো কে শান্ত করার জন্য হাত বাড়াতে শুনতে পেলো আলো মুখের বাক্যগুলো।

—–ওরা খুব পচাঁ,আমাকে ব্যাথা দিয়েছে। আমি ওদের সাথে খেলবো না আমাকে মেরেছে।দেখ কিভাবে কামড়েছে। আলো কাধঁ থেকে জামাটা সরিয়ে ফারাজ কে দেখালো।

সত্যি অনেক খামচি আর কামড়ে দাগ রয়েছে। জামা উঠিয়ে পেট দেখালো সেখানে কুকুর মতো কামড়িয়েছে।আলো গায়ে শার্ট কখন ফেলে দিয়েছে আলো হুস নেই।সুস্থ থাকলে কি এটা করতে পারতো একটা পুরুষের সামনে জামা সরিয়ে গলা,কাধঁ,পেট দেখাতো।মনে হয় না, আলো এখন কি করছে তা সঙ্গ জ্ঞানে থাকলে কখনো বুলি বুলাতো না।বরং এই পুরুষটার থেকে দশ হাত দূরে থাকতো।

*****
আলো কে কেবিনে নিয়ে এসে নার্স কে ফোনে কথা বলে ডেকে ড্রেস পাল্টে দিতে বলে চলে গেলো।
ফারাজ যা ভাবার ভেবে নিয়েছে এখন প্রমানসহ ওদের কে হাতেনাতে ধরে শাস্তি দেওয়ার ব্যাবস্থা করা।তার আগে আলো ওষুধ আর ইনজেকশন চেক করতে হবে।এখানে কিছু গোলমাল আছে ফাইল ওষুধপাতি নাম ঠিক থাকলে ওহ।ওষুধপাতি ইনজেকশন ঠিক আছে কি না চেক করতে হবে।একঘণ্টা আগের ইনজেকশন ময়লা ডাস্টবিন ফেলেছি সেটা তুলে হাতে নিলো।যে বোতল থেকে ইনজেকশন মাধ্যমে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করাতো সেটা খুজে পেলো না।তাই হাতের ইনজেকশন নিয়ে ল্যাবে টেস্ট করাতে দিলো।এবার দেখা যাক ইনজেকশন আতো আলো সুস্থ হওয়া ওষুধ ছিলো নাকি অন্য কিছু।

নার্স এসে জানালো আলো চিতকার করে কাঁদছে তাকে কিছুতে ঘুম পাড়ানো যাচ্ছে না।ফারাজ নার্সকে চলে যেতো বলো সে দেখছে ব্যাপারটা।আলো কেবিন এসে দেখলো সব নিচে ছুড়ে ফেলেছে সামনে যা পাচ্ছে ফেলছে।বিছানার চাদর নিচে পড়ে আছে।সব লণ্ডভণ্ড করে রেখেছে।

আলোঃ সব শেষ করে দিবো! সব নষ্ট করে দিবো।আমাকে মেরেছে ওরা পচাঁলোক। (চিৎকার করে)

ফারাজঃকে মেরেছে তোমাকে তার নামটা বলো তাকে আমি সুলে চড়াবো।এত বড় সাহস কার? আমাদের আলোমনি কে মেরেছে।

—-তুই!তুই দেখেছিস তো আমাকে মেরেছে।ওদের আচ্ছা করে পিটুনি দে। টিকটিক লেজ ভেজে খাওয়া,ইদুর শিক কাবাব খাওয়া,বাদরে নাক খাওয়া,কয়লা খাওয়া,বমি খাওয়া।খাইয়ে পাছায় সুই পুশ করে ঢুকিয়ে দে ২০ টা।

ফারাজঃবেশ তাই হবে।তুমি যা যা বলেছো আমি তাই করবো।

আলোঃকরবি তো। তাহলে এখনই আমার সামনে কর।আমি দেখবো।ওদের পিটুনি দিবি আমি মজা করবো।হিহিহি কি মজা হবে তাই না বল।

ফারাজঃ হুম মজা হবে তো। কিন্তু এখন না পরে। এখন তুমি ঘুমাও। আমি দুষ্টু লোকদের ধরে শাস্তি দিবো এই যে তোমাকে ছুয়ে প্রমিজ করলাম।

আলোঃপ্রমিস সত্যি তো।পাক্কা ওয়ালা প্রমিজ বল।

ফারাজঃহুমম! পাক্কা ওয়ালা প্রমিজ।এখন লক্ষী মেয়ের মতো ঘরটা গুছাও।সব কিছু দেখো নষ্ট করে ফেলছো।চলো আমি তোমার সাথে পরিষ্কার করব। দুইজন মিলে কাজ করলে তাড়াতাড়ি হবে।প্রথমে বিছানা চাদর বিছানায় রাখো।

আলোঃমাথা চুলকে, আচ্ছা। বিছানার চাদর বিছানায় রাখলো।ফারাজ চাদরের এক মাথা ধরে দেখালো অপর পাশের চাদর মাথা ফারাজ মতো করে ধরতে।আলো ফারাজ দেখাদেখি তাই করলো।
তারপরে আস্তে আস্তে সব গুছিয়ে রাখলো।আলো বিছানায় ধপাস করে বসে বলো আমি আর পারবো না।বুকটা কেমন ধপাস ধপাস করছে।

ফারাজ মুচকি হাসলো আলো শরীর ক্লান্ত থাকায় বসে পড়েছে।

ফারাজঃতুমি ক্লান্ত, এখন ঘুমা তাহলে দেখবে ভালো লাগবে।

আলোঃকিন্তু আমার তো ঘুম আসছে না।আমাকে তুই ঘুম পাড়িয়ে দিবি আমার কলিজার মতো।আমি আমার কলিজাকে বুকে নিবো।আর তুই আমাকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিবি।আলো ফারাজকে বসতে বলো বিছানায়।ফারাজ বিছানায় বসলে আলো ফারাজ কোলে মাথা রাখে ইশারা বলে মাথা হাত বুলিয়ে দিতে।ফারাজ তাই করলো আলো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।একটুপর খেয়াল করলো আলো ঘুমিয়ে গেছে বুকের ওপর পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে।ফারাজ আলো কে বিছানার বালিশে আস্তে করে সুয়ে দিয়ে নার্স কে বলে গেলো আলো প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে।কোনো সমস্যা হলে যেনো ফারাজকে ডাকে। আজকে ফারাজ বাসায় যাবে না হাসাপাতালে থাকবে কিছু কাজ বাকি আছে তাই।অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করে দম নিবে ফারাজ।

ফারাজ হাসাপাতালে সব সিসিটিভির ফুটেজ চেক করার জন্য কন্ট্রোল রুমে গেলো।সেখানে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব যারা আছে তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে সিসিটিভির সামনে বসলো।৩০৩ রুমে কক্ষে সিসিটিভির ফুটেজ বের করলো।লোকগুলো মুখ তখনই দেখে ছিলো ফারাজ।কিন্তু প্রমান ছাড়া কে বিশ্বাস করবে দুই দিনের ডাক্তার কে।তাই ফারাজ প্রমান কালেক্ট করতে এসে একটা জিনিস দেখে অবাক হলো এবং শিয়র হওয়ার জন্য সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে আনলো।সিকিউরিটি গার্ড থেকে যা শুনলো তাতে কাজটা কঠিন হবে। ফারাজ জন্য রিক্স আর এতে আলো বিপদ বাড়বে।তাই সাবধানে পা ফেলার সিন্ধান্ত নিলো।ফারাজ ঠাণ্ডা মাথায় সবটা হিসাব কষাতে লাগলো।কিছু ফুটেজ নিজের ফোনে নিয়ে নিলো প্রমান হিসেবে সাথে আরেক জায়গায় একই ফুটেজ টান্সাফার করলো।বলাতো যায় না কখন কোথায় কিভাবে কাজে লেগে যায়।সিকিউরিট গার্ড আর কন্ট্রোল রুমের লোকদের অনুরোধ করলো ফারাজ এখানে আসা আর ওদের কিছু জিজ্ঞাসা এসব কেউ জেনো জানতে না পারে এটা ফারাজ রিকুয়েস্ট। ফারাজ যা করছে হাসাপাতালে সম্মান আর আলো জীবন বাঁচাতে করছে।তারা ওহ ফারাজ কথা মেনে নিয়েছে হাসাপাতালে কাজ করে নুন খেয়েছে বেইমানি করবে না।

চলবে……

আরেকটা পর্ব বাড়িয়ে দিলাম আর দুই পর্বে শেষ করে দিবো।

ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here