ভালোবাসার সাত রং(সিজন-২) পর্ব ২

0
1171

#ভালোবাসার_সাত_রং?? ((সিজন-২))
#Yanur_Akter_Eanya
#পাঠ-২
যে সাজে সেজে ছিলো প্রিয় মানুষটা সাথে ঘর করবে বলে। সে মানুষটা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পাড়ি দিলো অজানা পথে।বর বেশে বিয়ের আসরে
যার আসার কথা ছিলো সে এসেছে ঠিকই।কিন্তু বর সাজে নয় কফিনে করে সাদা কাপড়ে মুড়ানো শরীরে ঢেকে নিদ্রাহিতভাবে,তাকে ডাকলে যে আর কারো ডাকে সারা দিবে না।সে যে ঘুমিয়ে আছে নিদ্রায় চিরদিনের জন্য।একটু আগে যে বাড়িটি আলোকিত ছিলো সেই বাড়িটি এখন অন্ধকার ঢেকে গেছে।রুবীনা কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে রজনী। স্বামী ঘরে পা রাখার আগেই রজনী সুখটা যেনো সারাজীবন জন্য হারিয়ে গেলো।রুবীনা মেয়ে করুন পরিনতি মানতে না পেরে মুখে আচল গুজে কাঁদছেন।

রাত,ভোর,নিলয় নির্বাক।কি হয়ে গেলো এসব কি হলো?একটু আগে তো সব ঠিক ছিলো হঠ্যাৎ ধমকা হাওয়া সব এখন লণ্ডভণ্ড।

সুখ পাখি তার ডানা মেলে এপারে ডাল থেকে ওপারে ডালে উড়ে বেড়াচ্ছে।সুখ পাখিটা যে বড্ড দূরন্ত।এক ডালে বসে থাকা তার কাম্য নয়,সে খোলা আকাশে মাঝে হারাতে চায়,উড়তে চায় বহুদূর।সুখ পাখি তার এক মুঠোয় সুখের নীড় খুজে ফিরে।

তিন দিন পর নিলয় চলে যাবে তাই সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।রজনী এবং সিকদার পরিবারে কারো অবস্থায় ভালো না।আশিক সিকদার মেয়ে শোকে আহত। অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছেন।রজনী সাথে হওয়া কষ্টটা মানতে পারছে না নিলয়।সোফা বসে নিজের দুই হাতে নিজের মাথার চুল টেনে ধরেছে।আলো মুখটা ভেসে উঠছে বারবার।কি নিষ্পাপ মুখ,সহজ সরল মেয়েটা কেঁদে ছিলো একটু সুখের আশায়।আলো নামের মেয়েটা হয়তো চেয়ে ছিলো ভাঙ্গা সম্পকটাকে একবার জোড়া লাগাতে। কিন্তু নিলয়,ভোর তা হতে দিলো না।

কোথায় তুমি আলো?কোথায় খুঁজবো তোমায়?প্লিজ কাম ব্যাক আলো প্লিজ ফিরে আসো।নিলয় নিজের মনে বিড়বিড় করছে নিজের মাথা চুল শক্ত করে টেনে ধরছে। নিলয় ভিতরটা কুড়েকুড়ে খাচ্ছে।পোড়া দহনে জ্বলছে সে।

ভোর নিজের বোনের কষ্টটা মানতে পারছে না ভিতরে ভিতরে কষ্টে ভুগছে।আজ পাচ বছর পর আলো কথা স্মরণ হচ্ছে। আলো সাথে অন্যায় হওয়াটা কেমন কাঁটাতারের মতো বিঁধছে।সেইদিন আলো তো সিকদার বাড়ি ছেড়ে ছিলো।চোখেরজল নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল অন্য কোথাও।আলো হয়তো বাবাকে নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছে।কিংবা নতুন কারে সাথে ঘর বেধেছে,সুখে সংসার করছে।ভোর নিজের কথাগুলো নিজের মনেই আওড়াতে লাগলো। পিছনে নিশি কখন এসে দাঁড়িয়েছে ভোর সেই খেয়াল নেই।

______কি হলো ঘুমাবে না! সেই কখন থেকে দেখছি এখানে
দাড়িয়ে আছো।কি এত ভাবছো তুমি?

______নিশিপাখি একটা হিসাবে মিলানোর চেষ্টা করছি।বাট কিছুতে মিলাতে পারছি না।মনে হয় এই হিসেবে আমি বড্ড কাচা।

_____হিসাব!কিসের হিসাব কথা বলছো তুমি?কি হয়েছে তোমার?আর কোন হিসাব মিলাতে চাইছো তুমি? আমাকে বলো আমি চেষ্টা করে দেখি হিসাব মিলাতে পারি কি না?

_____তুমি পারবে না নিশিপাখি।এই হিসাব আমাদের তিন ভাইয়ের,এখানে তোমার কোনো ভুমিকা নেই।তুমি নির্দোষ। দোষী আমরা তিন ভাই যার কারনে আজ ভূগ-ভুগন্তি আমাদের আদরে একমাএ ছোট বোন।যে বোন কখন কারো মনে আঘাত দেওয়া তো দূর কাউকে কটু কথা বলেনি। সবাইকে সম্মান দিয়েছে ভরসা দিয়েছে রিসেপ্যাক্ট করেছে তার সাথে কেনো হলো? এগুলো তো আমাদের সাথে হওয়া প্রয়োজন ছিলো।আলো সাথে অন্যায় আমরা করেছি।শাস্তি পেতে হলে আমাদের পাওয়া উচিত।আমরা না পেয়ে আমাদের পরিবারে আরেক সদস্য কেনো পেলো?

*****

যেখানে থাকো ভালো থেকো সুখেই থেকো
পারলে আমায় ক্ষমা করো।তোমার জীবন নষ্ট করা শাস্তি,আল্লাহ আমাদের এভাবে দিবে কখনো ভাবতে পারিনি।তোমার মনে আঘাত দিয়ে আমরা কেউ ভালো নেই।রাত সিকদার সেই ব্যাক্তি যে তোমার মনে প্রথম আঘাত দিয়েছিলো।আর দ্বিতীয় আঘাত দিলো আমার ছোট ভাই ভোর সিকদার। তৃতীয় আঘাত শেষ আঘাত দিলো নিলয় সিকদার মাই কাজিন।আঘাতে আঘাতে তোমার মন, শরীর বিষাক্ত করে দিয়েছি।জর্জরিত করেছি তোমায়, যার কারনে আজ তুমি আমাদের মাঝে নেই।বিয়ের আসরে ফেলে চলে গিয়েছিলাম নিজের ভালোবাসার মানুষটা কে আপন করতে।

পিছনে ঘুরে তোমায় দেখিনি। একটা বার ভাবিনি তোমায় কষ্ট দিচ্ছি। তোমার স্বপ্ন, আশা সবটা নষ্ট করে আমি আমার সুখ খুজছি।যেইদিন চলে গেলে সেইদিন অশ্রু বির্সজন দিয়ে গেলে এই বাড়িতে।তখন ও ভাবেনি তোমার চোখেরজল এর মূল্য আমাদের সবাইকে একদিন দিতে হবে।আমার ছোট বোনটা বিয়ে ভেঙ্গে গেছে আলো।আমি বাবা হতে অক্ষম সেটা আজ জানলাম।আমি আমার আখিকে মা হওয়ার সুখ দিতে পারবো না।যখন পৃথিবী বুকে আধার নামে,তখন আমি মাঝ রাতে জায়নামাজে বসে কাদি আল্লাহ কাছে একটি সন্তানের আশায়।আমি আর আমার আখিঁ যে মা,বাবা হতে চাই। আল্লাহ কাছে ভিক্ষা চাই একটি সন্তানের মুখ থেকে বাবা ডাকটি শুনার জন্য।হয়তো তোমার সাথে প্রতিটা অন্যায় হওয়ার শাস্তি ভোগ করা শুরু হয়ে গেছে।রাত আকাশে দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো।রাতের চোখে পানি।ছেলে হয়ে মেয়েদের মতো চোখের পানি ফেলছে নিরবে।
_________
লক্ষ্মী সোনা জাদুমনি আয়রে কাছে আয়।
মা তোকে ডাকে কাছে,
শুনবি না তুই মায়ের বারন।
আকাশ তে উড়াল দিবি হেসে খেলে মাতোয়ারা হবি।

আলো দুই পাশে দুটো বেনি করে দিয়েছে ইমা নামের মেয়েটা।আলো পুতুলটা সাথে কথা বলছে আর খেলছে দৌড়ে দৌড়ে হঠ্যা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলো।
সামনে উপস্থিত থাকা মানুষটি আলোকে তারাতারি তুলে।আলো উঠে দাড়িয়ে সামনের লোকটি দিকে তাকিয়ে বলে,

ইঁদুর গু খাবি,কালা ছাগলে গোল গোল বুটবুটি খাবি!গরু কান খাবি।গরু গোবর খাবি,কুমির খাবি,
লেজ ছাড়া টিকটিকি খাবি, হাড্ডি ছাড়া ছাগল খাবি।

অপরিচিতঃ এসব পঁচা খাবার এগুলো খেতে হয় না।

আপরিচতঃ তা তোমার নাম কি?(মুচকি হেসে)

আলোঃআমার নাম কি?আমার নাম! আমার নাম হচ্ছে? আমার নাম হচ্ছে …. আমার নাম… আলো কথা আওড়াচ্ছে আর মাথা চুলকাচ্ছে।নিজের নাম তার মনে নেই। মা,বাবা দেওয়া একটা সুন্দর নাম ছিলো সেটা ভুলে গেছে।

ইমাঃ স্যার ওর নাম আয়েশা আক্তার আলো!আপনি আসেন স্যার আপনার কেবিনটা দেখিয়ে দেয়।

সেই অপরিচিত লোকটি হচ্ছে এখানকার নতুন ডাক্তার!রিদ আহমেদ ফারাজ!উনি একজন সাইকোলজিস্ট!তিন জন বড় বড় সাইকোলজিস্টের মধ্যে উনি একজন।আলোকে একজন নার্স নিয়ে গেল আর ইমা ফারাজকে নিয়ে ফারাজ কেবিন দেখাতে নিয়ে গেল।ফারাজ ওর কেবিনে ঢুকে চেয়ারে বসল।

আলো আছে একটা মানসিক হসপিটালে!আলো ভালো মন্দ বোঝার মত কোন সেন্স নেই।ফারাজ আজকেই এখানে এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে ডাক্তারী পাশ করে আজকেই পাবনা এসেছে এই হসপিটালে।ফারাজ উঠে দাড়াতেই দুই জন ডাক্তার এসে দাঁড়ালো ফারাজ সামনে!ওদের সাথে হাই হ্যালো করে পুরো হসপিটাল টা একবার ঘুরে দেখলো।এরমধ্যে জাবেদ আহসান সাথে দেখা হলো ফারাজের। দুইজন কিছুক্ষণ কথা বলার পর মিষ্টার জাবেদ আহসান ফারাজ হাতে আলো মেন্টালি টিটমেন্ট ওষুধপাতি যা যা ছিলো তার সব রির্পোট দিলো।ফারাজ আলো টিটমেন্ট করা দায়িত্ব নিয়েছে।প্রতি বছর ক্যাম বসে বিভিন্ন রোগীর টিটমেন্ট জন্য।এবার ফারাজ আলো টিটমেন্ট করবে আলো কে সুস্থ করা এখন ফারাজ উদ্দেশ্য।

ফারাজ আলো কে দেখার জন্য আলোর কেবিনে গেলো।ফারাজ কে দেখেই আলো চিৎকার করছে।

-; তুই কে?তুই আমার কলিজাটাকে মেরে ফেলছিস তাই না।এখন আমাকেও মেরে ফেলতে চাস? (হুট করে ভয়ে পিছিয়ে)

-; আমি তোমাকে মারতে চাই না আলো!আমি তো তোমার বন্ধু। বন্ধুরা কখনো বন্ধুকে মারে না।বন্ধু তো বেস্ট ফ্রেন্ড হয়।

-; বন্ধু কি?বন্ধু দিয়ে কি হবে?আমার বন্ধু লাগবে না।তুই চলে যা! চলে যা এখান থেকে…চলে যা বলছি তুইও দুষ্টু লোক… পচা লোক। তুই খুনি (চিৎকার করে)

– ফারাজ আলো কে কোনোভাবে শান্ত করাতে পারছে না।কোনো রকম ইনজেকশন পুশ করে কেবিনে বসে আলো সকল ডিটেইলস দেখছে।আর আলো সহ আরো পাচঁজনের চিকিৎসা দায়িত্ব হসপিটাল কমিটি ফারাজকে দিলো! আর আলো সহ এই পাচঁ জনের মধ্য আলো সব থেকে বেশি দুষ্টু।ওকে সামলানো অনেক কষ্ট হবে।তবু ফারাজ আলো সব চিকিৎসা নিজে করবে।বাংলাদেশে আলো ফারাজ এর প্রথম রোগী ওকে দিয়ে চিকিৎসা শুরু।

চলবে…….

কালকে লাস্ট পাঠ দিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here