প্রেমানুরাগ পর্ব ৯

0
606

#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-৯

সকালের মুগ্ধকর আলো চোখে পরতেই পিটপিট করে তাকালো শশী। বাহিরে স্নিগ্ধ হাওয়া। গাছে ফোটা সদ্য কচি পাতার ঘ্রানে ম-ম করছে পরিবেশ। আড়মোড় ভেঙ্গে শশী। গতকাল রাতের মতো বিছানায় নিজেকে একা আবিষ্কার করে সে। পুরো ঘরে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে রবি নেই। শুয়া থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। রবির দেওয়া স্কাই ব্লু কালার টি-শার্ট বদলে তার নীল কুর্তি টা পরে নিলো। চুল গুলো হাত দিয়ে পিছে ঠেলে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। আশেপাশে ভালো করে খোঁজে রবিকে কোথাও পেলো না শশী। হঠাৎ তার মনে জেগে উঠলো একরাশ ভয়। রবি তাকে ফেলে চলে গেলো? এটা কিভাবে হতে পারে?? শুকনো ঢুক গিললো শশী। চোখ লাল হয়ে এলো। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো। এমন সময় কাধে কারোর স্পর্শ পেয়ে পিছে তাকিয়ে রবিকে দেখলো। রবি শশীর চোখে পানি দেখে অস্থির হয়ে উঠলো। দুই হাত গালে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে চোখের পানি মুছে বললো, ‘কাঁদছ কেন? কি হয়েছে?’

শশী কান্না আটকে অভিমানী গলায় বলে উঠলো, ‘কোথায় ছিলেন? আমি ভেবেছি আপনি আমাকে ফেলে চলে গেছেন।’

ভ্রুঁ জোড়া উঁচিয়ে তাকালো রবি। বললো, ‘আগলে রাখার জন্য যখন হাত টা ধরেছি। তখন সারাজীবনের জন্য ধরে রাখবো। কেঁদো না বোকা মেয়ে।’

বান্দরবন বাস কাউন্টার.
চারপাশ কোলাহলপূর্ণ হয়ে আছে। মানুষ জনের আনাগোনা চলছে। ট্রোরিস্টরা কাউন্টার থেকে টিকেট কাটছে। আবার কোনো কোনো ট্রোরিস্টরা বাস থেকে নেমে বান্দরবন ঘুড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সকলের মাঝেই শশী আর রবি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। রবির কাধে তার ট্রাভেল ব্যাগ। হাতের ঘড়িতে সময় দেখে শশীর উদ্দেশ্যে বললো, ‘তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি টিকেট কেটে আসছি।’

শশী বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। রবি এগিয়ে কাউন্টার থেকে ঢাকা যাবার টিকেট কাটে দুইটা। ফিরে আসার সময় দোকান থেকে কিছু শুকনো জাতিয় খাবার আর পানি কিনে নেয়। শশী আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে মানুষের আনাগোনা দেখছে। কিছুসময় পর খেয়াল করে দুইজন ছেলে তার দিকে কুদৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। গা ঘিনঘিন করে উঠলো শশীর। ছেলে গুলোকে পিছ দিয়ে দাঁড়ালো। মিনিট পাঁচেক পর রবি আসে। শশী তাকে দেখেই বললো, ‘এতো দেড়ি হলো কেন?’

রবি শশীর হাতে পানির বোতল দিয়ে বলে, ‘খাবার কিনছিলাম তাই। নাও পানি খাবে?’

শশী সম্মতি দিয়ে বোতল হাতে নিয়ে পানি খেলো। শশীর পাশে দাঁড়ানো ছেলে গুলোর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে শশীর এক হাত শক্ত করে ধরলো রবি। বাস আরো ত্রিশ মিনিট পর ছাড়বে। তারই কিছু দূরে সোহরাবরা গারিতে বসে ছিলো। গাড়ির সামনের কাচ দিয়ে রবি আর শশীকে পাশাপাশি হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফেলে সোহরাব। মাত্রারিক্ত রাগান্বিত হয় সে। তাৎক্ষনাৎ গাড়ি থেকে নেমে যায় সে। সোহরাব কে নামতে দেখে ইকবালও নেমে যায়। সোহরাব দ্রুততার সাথে পা বাঁড়ায় শশীর দিকে। ‘কোথায় যাচ্ছিস?’ বলে পিছু ডাকতে থাকে ইকবাল। সোহরাব দৌড়ে এসে শশীর হাত থেকে রবির হাত ছাড়িয়ে নেয়। আকস্মিক ঘটনায় শশী আর রবি দুই জনই অবাক হয়। সোহরাব হাত সরিয়েই রবির শার্টের কলার চেপে ধরে বলে, ‘তোর এতো বড় সাহস তুই আমার মেয়ের হাত ধরেছিস? তোকে তো আজকে.!’ বলেই রবিকে ঘু’ষি দেয় একটা। পরপর কয়েকবার এলোপাথারি মারলো রবিকে। শশী এগিয়ে এসে সোহরাবের হাত টেনে দূরে সরিয়ে বলে উঠে, ‘পাপা কি করছো তুমি? রবিকে মা’র’ছো কেন?’

সোহরাব এগিয়ে আবার মা’রতে যাবে তখনি ইকবাল এসে তাকে ধরে ফেলে। মুখ বরাবর ঘু’ষি পরায় রবির ঠোঁট কে’টে রক্ত এসে পরে তার। গাল লাল হয়ে থেঁতলে গেছে প্রায়। শশী এগিয়ে রবিকে ধরে উঠায়। আবারো রেগে যায় সোহরাব। চেঁচিয়ে উঠে , ‘ এই ছেলের থেকে দূরে থাক শশী। নয়তো এই ছেলে কে আমি মে’রে ফেলবো।’

রবি ঠোঁটের পাশে থাকা রক্ত বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছতে মুছতে ফিশফিশ করে শশীকে বললো, ‘এটা তোমার বাবা? কেমন সাইকো সাইকো লাগছে।’

শশী কটমট চোখে রবির দিকে তাকালো। তারপর এগিয়ে সোহরাবকে ধরে বললো, ‘পাপা রবি খুব ভালো ছেলে। আমার ক্ষ’তি করবে না। তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো।’

শান্ত হলো না সোহরাব। শশীকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘কোথায় ছিলি তুই? জানিস কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আর এমন করবি না। আমাকে ছেড়ে যাবি না।’

শশী তাকে শান্ত করতে আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘কোথাও যাবো না। তুমি টেনশন নিও না।’

রবি এখনো দাঁড়িয়ে বাপ বেটির কাহিনী দেখছে। তার বুঝে আসছে না তাকে মা’রা হলো কেন? বিনা অপরাধে কয়েকদফা মা’র খেয়ে নিলো। ইকবাল রবির পাশে দাঁড়িয়ে বললো, ‘সোহরাবের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। কিছু মনে করো না। আসলে সোহরাবের ম্যান্টলটি একটু প্রবলেম আছে। তুমি শশীর হাত ধরায় রেগে গেছে।’

রবি সে সবে পাত্তা না দিয়ে বললো, ‘আচ্ছা আঙ্কেল। শশীর বাবা কি তাহলে এখন আমাদের লাভ স্টোরি তে ভিলেন রুপে এন্ট্রি নিবে নাকি?’

খুকখুক করে কেশে উঠলো ইকবাল। রবির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। বললো, ‘তোমাদের লাভ স্টোরি মানে?’

রবি বললো, ‘আঙ্কেল আশা করি এবার আপনিও আমাকে বিনা দুষে মা’র’বেন না। এমনিতেই সাইকো শ্বশুড়ের মা’র খেয়ে আমার চাপা ভেঙ্গে গেছে।’

ইকবাল মনে মনে হাসলো। রবিকে কিছু বলার আগে সোহরাব ডাক দিয়ে বললো, ‘তাড়াতাড়ি আয় ইকবাল। শশীকে পেয়ে গেছি। এখানে থাকার মানে হয় না। বাড়ি যাবো আজই। শশী চল।’

বলেই শশীর হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো সোহরাব। রবি এখনো দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়। শশী পিছু ফিরে একবার রবির দিকে অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকায়। তারপর গাড়িতে উঠে বসে। হঠাৎ রবির খেয়াল হলো শশীর নাম্বার তো নেওয়া হয় নি। তাছাড়া শশী বনানীর কোথায় থাকে সেটাও জানে না সে। তাহলে? ভাবতে ভাবতেই শশীদের গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়। রবি গাড়ির কাছে দৌড়ে আসতে আসতে গাড়ি ছুটে চলে যায়। অশ্রাব্য ভাষায় একটা গালি ছুঁড়লো। পাক্কা তিন দিন এক সাথে থেকে একটা নাম্বার নিতে পারলো না? ধ্যাৎ!
______________

নিস্থব্ধ রাত! চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন। সোডিয়ামের কৃতিম হলুদ আলোতে চারপাশ আলোকিত। পিটপিট পায়ে দরজা অতি আস্তে ঠেলে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো রবি। খুব সাবধানতার সাথে মেইন দরজাটা লাগিয়ে দিলো। পিছে ঘুরে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই পুরো ড্রয়িংরুম আলোকিত হয়ে উঠে। হতভম্ব হয়ে যায় রবি। বুঝতে বাকি নেই এখন তার কপালে তারই নামের মতো শনি রবি আছে। শুকনো ঢুক গিলে পিছে ফিরে তাকালো। নিজের মা কে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে জুরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো রবি। বললো, ‘আসসালামু আলাইকুম আম্মু। কেমন আছেন?’

তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন রোজিনা। ভড়াট কন্ঠে উত্তর দিলেন, ‘ওয়ালাইকুম সালাম। এখানে বসো।’

রবি এক হাতে মাথা চুলকে তার অপজিটে বসলো। রোজিনা ছেলের মুখ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো। ঠোঁটের পাশে কাটা, গাল লাল হয়ে থেঁতলে আছে দেখে রেগে গেলেন। বললেন, ‘মুখের এই অবস্থা কেন? মা’রা’মা’রি করেছো তুমি?’

হতাশ হলো রবি। এইজন্য তিন ঘন্টা দেড়ি করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো রবি। ভেবেছিলো মা ঘুমিয়ে গেলে রুমে চলে আসবে। যেই ভয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেলো সেটাই হলো। কিভাবে মিথ্যে বলা যায় ভাবছে সে। মাথায় কিছু একটা আসতেই বলে ফেললো, ‘আসলে রাস্তায় আমার ব্যাগ চুড়ি হয়ে যায়। ব্যাগ বাঁচাতে গিয়ে চুরের সাথে একটু মা’রা’মা’রি হয়।’

রোজিনা কিছু বলতে নিলেও বললেন না। ছেলের এই অবস্থা দেখে মন বিষন্ন হলো তার। সার্ভেন্টকে ডেকে ফাস্ট এন্ড এইড বক্স এনে সযত্নে মেডিসিন লাগিয়ে দেয়। পুরো টা সময় একটা কথাও বলেনি রোজিনা। রবি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সকালে নাহয় মায়ের রাগ ভাঙ্গানো যাবে। আপাতত এখানেই ব্যাপার টা স্থগিত করা যাক।

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here