প্রেমানুরাগ পর্ব ১৮

0
460

#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-১৮

আকাশ ঘোলাটে। বাহিরের তিমিরাচ্ছন্ন পরিবেশের সঙ্গে বিষন্নতায় ছেঁয়ে আছে মন। ঝিরঝির বৃষ্টি ছিল সকালে। এখন আকাশে মেঘ জমে পরিবেশ করেছে স্নিগ্ধ। ঘোলাটে আকাশের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে আবারো ফাইলে মন দিলো রবি। মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখেছে। কল আসছে বার বার কিন্তু জবাব দিচ্ছে না। এতোদিন তাকে যেভাবে নাকা-নিচুবানি খাইয়েছে ঠিক সে ভাবে শশীকেও খাওয়াবে ভেবে পণ করেছে তার মন। বুঝোক এবার হাহ্। সারাদিন কথা বলতে না পারায় মন ক্ষুন্ন হয়ে আছে তার। তাও কথা বলবে না সে। শশীর ভাবনায় এতোটাই বিলীন যে কাজে ঠিক ভাবে মন দিতে পারছে না।

‘মে আই কামিং স্যার?’

ধ্যান ভাঙ্গলো রবির। অল্প বয়সী এক যুবতী অফিসের এমপ্লয়ি দরজায় নক করলো। ভিতরে আসতে বললে সে। মেয়েটি এগিয়ে এসে রবিকে কিছু ফাইল দেখাতে লাগলো। কাজ নিয়ে আলোচনায় মশগুল হলো দুজন। বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা হলো তাদের মাঝে। তখুনি কেবিনে আসে শশী। এখানে রবিকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলো সে। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে আসলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। দুজনকে এক সাথে, একি কেবিনে দেখে রেগে উঠে সে।

‘ওহ আচ্ছা আচ্ছা! আমার কল না ধরে আপনি এখানে আড্ডা দিচ্ছেন?’

শশীর কথা কর্ণগোচর হতেই অবাক চোখে তাকায় দুজন। তাকে এখানে দেখে বিস্মিত হয় রবি। তাই ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্ন করে, ‘তুমি এখানে?’

তেঁতে উঠলো শশী। ত্যাচ্ছিল্য কন্ঠে বলে উঠলো, ‘কেন আমার এখানে আসা উচিত ছিল না? হাঁ হাঁ আড্ডা দিচ্ছো তো ডিস্টার্ব করলাম তাই না। পারসোনাল টাইপ স্পেন্ড করছো? ওহহো!’

পারসোনাল টাইম বলায় চোখ বড়বড় করে তাকায় মেয়েটি। একবার রবির দিকে তাকিয়ে শশীর দিকে তাকায়। রবি জিভ দিয়ে উষ্ঠধয় ভিজিয়ে নিশব্দে মুচকি হাসলো। রাগানোর জন্য উল্টো হলে উঠলো, ‘কেবিনে আসার আগে নক করে আসতে হয় জানো না?’

অবাক হলো শশী। মুখ তার হা হয়ে গেলো আপনা আপনি। অবাক কন্ঠে বলে উঠলো, ‘আমাকে নক করে আসতে বলছো? বাহ্! তোমরা ছেলেরা একই গোয়ালের গরু। একজন থাকতেও মন ভরে না। কাল একটু ঝগড়া হলো আর আজ নতুন একজন? বাহ!”

তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সাবধান বোইন, এই পোলা আস্তো লু’ই’চ্চা। দেখ একরাতের মাঝে নতুন একজন ঝুটিয়ে ফেলছে। পরে তোমাকেও ছেড়ে আরেকটা খুঁজবে। একে পারলে দুইটা..!’ বলে কটমট করে তাকালো রবির দিকে। তারপর গটগট পায়ে বেড়িয়ে গেলো। শশীর শেষ কথায় রবি আহাম্মক হয়ে রইলো। মেয়েটি ঠোঁট চেপে হেসে বললো, ‘স্যার, আমার মনে হয় আপুটার আপনার কাছে যাওয়া উচিত।’

ফ্যালফ্যাল চোখে তাকালো রবি। প্রতিক্রিয়া নেই তার। কি বলে গেল শশী? সে লু’ই’চ্চা? সিরিয়াসলি? শশীর পিছে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ায় রবি। কেবিনের দরজার কাছে গিয়ে পিছে ঘুড়ে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললো, ‘জীবনে যদি প্রেম করো তাহলে দয়া করে বয়ফ্রেন্ড বেচারাকে একটু রেহায় দিও। নাহলে বাত্তি জ্বালানোর আগে ভাইগ্না আমার পরপার হয়ে যাবে।’

বেড়িয়ে গেলো রবি। সে যেতেই উচ্চস্বরে হেসে ফেললো মেয়েটি । রবি বাহিরে এসে হাত ঘড়িতে সময় দেখে নেয় একবার। আশেপাশে প্রখর করে দেখে শশী নেই। এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো? মোবাইল বের করে কল দিলো। রিং হয়ে কেটে গেলো কিন্তু রিসিভ হলো না। শশী চলে গেছে ভেবে অফিসের ভিতরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠে শশী, ‘আরেহ্ সময় নেই আপনার। আমাকে খুঁজার সময় আপনার নেই। আশেপাশে একটু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ওই মেয়ের সাথে আড্ডা দিতে চলে যাচ্ছেন। বাহ বাহ!’

মৃদু হেসে ফেললো রবি। তার ধারনায় ঠিক। শশী যায় নি এখান থেকে। এক হাতে কপাল কুঁচকে উত্তর দিলো, ‘যাও নি তুমি?’

ঠোঁট উল্টালো শশী। চেহারায় কাদুকাদু ভাব এনে বললো, ‘তুমি কতো খারাপ। আমি রাগ করেছি তাও রাগ ভাঙ্গাচ্ছো না। ওল্টো জিজ্ঞেস করছো যাই নি কেন। তুমি আগের মতো আমাকে ভালোবাসো না। তুমি, আমি থাকবো না তোমার সাথে। ব্রেক’আপ। এবার ফাইনাল ব্রেক’আপ তোমার সাথে।’

রবি হাসি ধরে রাখতে পারলো না। ফিক করে হেসে উঠলো। তার হাসি দেখে শশীর রাগ তরতর করে বেড়ে গেল। ক্ষুন্ন হলো তার মন। চোখে পানি জমে গেলো। চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই রবি তার হাত ধরে নিল। রিক্সা ডেকে তাতে জুরপূর্বক শশীকে বসালো।

বর্ষাকাল মানেই এই মুষলধারের বৃষ্টি, এই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আর আকাশ মানেই মেঘলা। ঘন কালো-কালো মেঘে আবৃতকরণে মাতালো হাওয়া। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজে মুখরিত পরিবেশ। বাতাসের শীতলতায় শরিরের পশম কাটা দিয়ে উঠার উপক্রম। গরম গরম কফির কাপ থেকে ছড়াচ্ছে ধোয়া। কিছুসময় পরপর মৃদু চুমুক বসাচ্ছে তাতে শশী। জড়সড় হয়ে বসে আছে সে। পরনে কেবলমাত্র টপ-শার্ট আর জিন্স। আগে যদি জানতো বিকেলের দিকে এতো ঠান্ডা পরবে তাহলে সাথে শাল কিংবা হুডি নিয়ে আসতো। ফুঁশ করে নিশ্বাস ফেলে সামনে তাকালো। রবি এখনো গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা পেলো শশী। গাল লাল হয়ে এলো তার। তখন রবি তাকে জুর করে কফি হাউজে নিয়ে এসেছে। এখন দুজন একটা টেবিলে সামনা-সামনি বসে। রবি গালে হাত রেখেই আনমনে বলে উঠলো, ‘রাগ কমেছে?’

শশী ঠোঁট চেপে মুচকি হাসলো। প্রতিত্তুর করলো না। রবি সোজা হয়ে বসে বললো, ‘আমি কিন্তু পাহাড়ে কাটানো সময় গুলোকে অনেক মিস করি।’

শশী হেসে প্রফুল্লিত কন্ঠে বলল, ‘আমিও! ওই ঝর্না টা কিন্তু আরো সুন্দর। উফফ এতো কাছ থেকে কখনো ঝর্না দেখিনি আমি। পাপা কখনো কাছে যেতে দিতো না। আর ওইদিন? ঝর্নার পানিতে গোসল করেছি।

নিশব্দে হাসলো রবি। বললো, ‘ঘুরাঘুরি অনেক পছন্দ তোমার?

‘হ্যাঁ প্রচুর ভালোলাগে।

‘একবার বিয়েটা হতে দাও। তারপর পুরো বাংলাদেশ তোমাকে নিয়ে ঘুরবো।’

শশী খুশি হলো। তার খুশি দেখে রবি হাসলো। হঠাৎ তার মাথায় কিছু একটা আসতেই বলে উঠলো, ‘তুমি এতো সুন্দর কেন জানো?’

কপাল কুঁচকালো শশী। হেসে বলল, ‘কেন?’

‘কারন তুমি মেকআপ করো।’ বলেই ফিক করে হেসে ফেললো রবি। রাগে অপমানে রিনরিনিয়ে উঠলো শশী। কাটা চামচ শক্ত করে ধরলো। দাতে দাত চিবিয়ে বললো, ‘কি বললে?’

হাসির মাত্রা কিছুটা কমালো রবি। শশীর দিকে তাকিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, ‘আজকের ওয়েদার টা রোমান্টিক। আর কফিটা অনেক হট।’

শশী কিছুক্ষন ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো রবির দিকে। প্ররোক্ষনে রবির ইঙ্গিত বুঝে পেরে চোখ রসগোল্লার মতো করে তাকালো। দাত পিষে কড়া গলায় বললো, ‘অসভ্য।’

চলবে ??

নোট : হয়তো আজকের পর্বটা অগুছালো হয়েছে। ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। গতকাল অসুস্থতার জন্য গল্প দিতে পারিনি। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল ইতি টেনে দিবো। ভুলত্রুটি মার্জনীয়, কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ। হ্যাপি রিডিং ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here