প্রেমানুরাগ পর্ব ১০

0
531

#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-১০

‘কিরে তোর মুখ লাল হয়ে আছে কেন? চি’পা থেকে কেউ চুম্মা থেরাপি দিছে নাকি?’

ভার্সিটির পাশে বড় কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছের নিচে কাঠের তৈরি ব্যাঞ্চিতে বসে ছিলো রাজিব আর বাবু। রবিকে আসতে দেখে ফাজলামোর স্বরে বললো রাজিব। রবি এগিয়ে চুপচাপ তাদের পাশে ব্যাঞ্চিতে বসলো। চোখে মুখে তার বিষন্নতা ভাস্যমান। রাজিবের পাশে বাবু বসে ছিলো। সে টেবিলে দুই হাত রেখে রবির দিকে একটু ঝুকে ভ্রুঁ জোড়া উঁচিয়ে বলে উঠে, ‘বাবাহ্ আজকার চিপা-চাপায় দেখছি ভালোই থেরাপি রেসিপি চলে। ভাই ভিজিট কত?’

রবি বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ জাতীয় উচ্চারণ করলো। কপালে বিরক্তির ভাজ ফেলে বললো, ‘থামবি তোরা? ফালতু প্যাঁ’চাল ছাড়া কথা নেই তোদের?’

রাজিব সিরিয়াস হলো এবার। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটিয়ে দাতে দাত চিপে বলে উঠে, ‘কোন শা:লা তোর গায়ে হাত দিছে? নাম বল। ব্যাটার মেশিন পাঞ্চার কইরা দিমু।’

রবি চোখ তুলে রাজিবের দিকে তাকালো। তারপর এক হাতের ইশারায় রাস্তার পাশে বসে থাকা চা ওয়ালা কে তিন কাপ কড়া লিগারের চা দিতে বললো। রাজিব আর বাবু সম্পূর্ণ ঘটনা শুনতে আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। রবি তাদের অবস্থা দেখে মনে হাসলো। তারপর দুজনের দিকে তাকিয়ে দুই হাতে চুল ঠিক করতে করতে বললো, ‘সাইকো শ্বশুরের কাছ থেকে হুদাই বিনা দুষে মা’ইর খাইলাম।’

অবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে তাকায় রাজিব আর বাবু। বাবু ত্যাঁছড়া ভাবে বলে উঠলো, ‘তোর এই জন্মে শ্বশুর? হাহ্!’

রাজিব সিরিয়াসলি বললো, ‘সাইকো শ্বশুর?’

রবি মাথা দুলিয়ে হ্যা বুঝালো। রাজিবের চোখ এখনো কোটর বেরিয়ে আসার উপক্রম। বাবু অবাক হল। অস্থির কন্ঠে বললো, ‘ভাই বিয়া করলি কবে? তোর না বান্দরবন যাওয়ার কথা আছিলো? তাইলে? আমাদের রাইখা বিয়া কইরা ফেললি? কামডা ভালা করলি না। পাক্কা হারামি, অপরাধী তুই।’

তপ্ত শ্বাস ফেললো রবি। দোকানী চা দিয়ে যাবার পর চায়ের কাপে চুমুক দিলো। তারপর জঙ্গলের সম্পূর্ণ ঘটনা খোলে বললো দুই জনকে। রাজিব চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বললো, ‘তুই যে এই পরিমানের আকামলা হইবি জানতাম না। নাম্বার চাইতে পারলি না? কমছে কম ভার্সিটির নাম জাইনা নিতি।’

হতবাক হলো রবি। নিজের বোকামো তে নিজেকেই শ’খানেক গালি দিতে মন চাইছে তার। এক হাতে মাথা চুলকে বললো, ‘আরে ইয়ার খেয়াল ছিলো না একদম’

বাবু বললো, ‘মেয়েটা যেহেতু বনানীতে থাকে তাহলে খুব সহজে বের করা যাবে। চিন্তা করিস না। ক্যাম্পাসে চল।’

অতঃপর উঠে দাঁড়ালো তিনজন। ঢাবির ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো তারা। রবির মন ক্ষুন্ন। শশীর সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে বুঝতে পারছে না। তাহলে কি হারিয়ে ফেললো শশীকে? এতো সহজে? না!
_____________

কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ। পুরো মাঠ জুড়ে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা চলছে। বনানীর প্রাইভেট ভার্সিটির লাইব্রেরির এক পাশে বসে নোট তৈরি করছিলো শশী আর তার বেষ্টফ্রেন্ড মায়ারা। মোবাইলের কর্কষ আওয়াজ পেয়ে শশী ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখে সোহরাব ভিডিও কল দিয়েছে। সোহরাব তাকে ঘন্টায় ঘন্টায় কল দিয়ে খোঁজ নেয়। সে কোথায় আছে কি করছে জানতে ভিডিও কল দেয়। নিজের বাবার মাঝে এমন অস্থিরতা দেখে কষ্ট হয় শশীর। লম্বা দম ফেলে কল রিসিভ করার পর মোবাইলের স্কিনে সোহরাবের হাসি মুখ ভেসে উঠে।

‘মামনি কোথায় আছো তুমি?’

শশী মুখে হাসি টেনে বললো, ‘ভার্সিটিতে আছি পাপা।’

বিশ্বাস হলো না সোহরাবের। সে যাচাই করতে বললো, ‘কোথায় দেখি তো তোমার ভার্সিটি টা। দেখাও।’

শশী ক্যামেরা ঘুরিয়ে পুরো লাইব্রেরি টা একবার দেখালো। তারপর নিজের দিকে ক্যামেরা ফিরিয়ে বললো, ‘পাপা আমি সত্যি ভার্সিটিতে আছি। টেনশন নিও না।’….

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে সোহরাবের সাথে। তাকে শান্ত করে কল কেটে মোবাইল রাখলো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো শশী। মায়ারা শশীর অসহায়ত্ব চেহারা দেখে প্রশ্ন করলো, ‘আঙ্কেল কে কি আবার ডক্টর দেখাবি?’

শশী চুপচাপ বসে ছিলো। খাতা টেনে নিরবে লিখতে লিখতে উত্তর দিলো, ‘জানি না। পাপা ডক্টর দেখাতে চায় না। ভালো লাগে না একদম।’

মায়ারা আবারো প্রশ্ন করলো, ‘কিন্তু আমার বুঝে আসছে না আঙ্কেল রবিকে মা’র’লো কেন?’

‘কারণ পাপা ভেবেছে রবি আমাকে তার থেকে দূরে নিয়ে যাবে। তাছাড়া কোনো বাবা যদি তার মেয়েকে অন্য ছেলের সাথে দেখে তাহলে মা’রবে এটাই স্বাভাবিক।’

মায়ারা মাথা দুলিয়ে হুম সম্মতি দিলো। তারপর আবার প্রশ্ন করলো, ‘রবির সাথে যোগাযোগ করার কোনো রাস্তা নেই? তুই নাম্বার চাইতে পারতি বোকা মেয়ে।’

ক্ষুন্ন মনে তাকালো শশী। চোখে মুখে ক্লান্তির ভাব এনে বললো, ‘তখন এতো কিছু মাথায় ছিল না।’

‘তাহলে এখন উপায়?’

শশী প্রতিত্তুরে ছোট করে বললো, ‘জানি না।’ মন ভালো নেই তার। থাকবেই বা কি করে? তিন দিন হলো এখনো রবির সাথে যোগাযোগ হয়নি তার। কিভাবে খুঁজবে রবিকে? আচ্ছা রবি কি আমাকে ভুলে গেছে? এতো সহজে??
____________

রাত্রীর প্রথম ভাগ। ডাইনিং টেবিলে সাজানো আছে হরেক রকমের খাবার। সার্ভেন্টরা টেবিলে খাবার সাজিয়ে চলে যায়। রোজিনা টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে রবির। দেয়ালে থাকা বিশাল ঘড়ি টার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে ৮:৩৮ বাজে। ক্রোধান্বিত হলো সে। এই বাড়িতে কিছু নিয়মকানুন জাড়ি করা হয়েছে। আর তার মাঝে একটি হলো রাত ৮:৩০ এ ডাইনিং টেবিলে সকলের উপস্থিত চায়। যদিও বাড়িতে সার্ভেন্ট বাদে রোজিনা, রবি আর মোর্শেদ থাকে। রবির বাবা গত হয়েছে প্রায় সাত বছর আগে। আর মোর্শেদ সম্পর্কে রবির মামা হয়। বেচারার কপালে হয়তো কোনো বউ নেই তাই অবিবাহিত। আরো কিছু সময় অপেক্ষা করার পর রবি ধড়ফড়িয়ে এসে চেয়ার টেনে বসে। মোর্শেদ আড় চোখে রবির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বুঝালো ‘তোমার কপালে দুঃখ আছে বাজান’। মামার ইশারা বুঝতে পেরে রবি ভয়ার্ত চোখে মায়ের দিকে তাকালো। রোজিনা তীক্ষ্ণ চোখে এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। রবি জুরপূর্বক ঠোঁটে হাসি টেনে বললো, ‘আসলে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম তাই লেইট হয়েছে। সরি মা।’

মিথ্যে বললো রবি। আসলে সে সন্ধ্যার পর থেকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলো। ভার্চুয়াল জগতে শশীর নাম সার্চ দিচ্ছিলো সে। আফসোস এতোক্ষণ বসে ঘাটাঘাটি করেও কোনো প্রকার হদিস পায়নি। খোঁজাখুঁজি তে এতোই মশগুল ছিলো যে কখন রাত সাড়ে আট টা পার হয়ে গেছে টের পায়নি। শুকনো ঢুক গিলে মায়ের দিকে তাকালো সে। রোজিনা ছোট করে ‘হুম’ বলে খাওয়া শুরু করলো। রবি আর মোর্শেদ ফুশ করে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

বেশ কিছু সময় পর রোজিনা মুখ খুললো, ‘সামনের সাপ্তাহ থেকে তুমি অফিসে যাবে।’

পানি খেতে নিলে থেমে যায় রবি। চটপট চোখে মোর্শেদের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই মোর্শেদ মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝায় সে কিছু জানে না। রবি হাতের গ্লাসটা টেবিলে রেখে নিচু গলায় উত্তর দিলো, ‘আম্মু আমার পড়াশোনা এখনো কমপ্লিট হয়নি।’

রোজিনা বললো, ‘আমি তোমার উপর সম্পূর্ণ কোম্পানির ভার দিচ্ছি না। আপাতত তুমি মোর্শেদের সাথে থেকে সব কিছু বুঝে নাও।’

উত্তর দিলো না রবি। দাতে দাত পিষে মামার দিকে তাকালো। মোর্শেদ রবির চাহনীতে হা হয়ে আছে। অর্থাৎ সে কিছুই জানে না। একদম নির্দোষ। রোজিনা খেতে খেতে বললো, ‘মোর্শেদের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। সে কিছুই জানে না। সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি।’

রবি অসহায় কন্ঠে বলে উঠে, ‘আম্মু আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও। প্রমিস খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করবো।’

রোজিনা গম্ভীর কন্ঠে শুধাল, ‘তুমি জানো খাবারের সময় বেশি কথা বলা পছন্দ করি না। একবার যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটাই হবে। চুপচাপ খাও।’

ক্ষুন্ন হলো রবি। ঠোঁট উল্টে খেয়ে লাগলো। খাবার গুলো এখন ঘাসের মতো লাগছে তার কাছে। কিছুই ভাল্লাগছে না। মোর্শেদের দিকে অসহায় চোখে তাকালে মোর্শেদও হতাশ হয়। এই ছেলের ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো টেনশন নেই। একদম ভবঘুরে, উড়নচন্ডালী। ঘুরাঘুরি ছাড়া কিছুই বুঝে না।

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here