ভয়ংকর চাহনি,( পর্ব-০৩)

0
1509

ভয়ংকর চাহনি,( পর্ব-০৩)
লেখক- Riaz Raj

মেহেদি একটা ছুরি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ প্রচণ্ড লাল।মুখ পচাগলা হয়ে আছে।মেহেদির চোখ গুলো খুবি ভয়ংকর। এক ভয়ংকর চাহনি তার চোখে।শুভও জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠে।

এদিকে মেঘা ওয়াশরুমে আকাশকে দেখে পিছু দৌড়াতে চেষ্টা করলো।আখির গলার কন্ঠে আকাশ কিভাবে ডাকতে পারে।মেঘা পালাতে চেয়েও পারেনি যেতে।পা দুটো যেনো কেও শক্ত করে বেধে দিয়েছে।মেঘা জোরে এক চিৎকার দেয়। মেঘার চিৎকারে জেগে যায়, সাদিয়া,রশনী,আর সুমাইয়া।ওরা বিছানা ছেড়ে সবাই ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে আসে।ওয়াশরুমে আসতেই ওরা দেখে মেঘার বুকে কেও শতশত ছুরির আঘাত করে রেখেছে।কেও যেনো মেঘার বুকে ছুরি মেরে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে মেঘার বডি। মেঘার এমন অবস্থা দেখে রশনী,সাদিয়া আর সুমাইয়া চিৎকার দিয়ে উঠে।তাদের চিৎকারের শব্দ পুরো গার্ল হোস্টেল কাপিয়ে দেয়।সবাই বরাবরের মতো তাদের দরজার সামনে চলে আসে। ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দহীন নেই। দরজায় বাহির থেকে আঘাত করতেই দরজা খুলে যায়। সবাই রুমের ভিতর ঢুকে দেখে,সবাই ফ্লোরে পড়ে আছে। কারো হাত-পা কাটা।কারো শরীর থেকে মাথা আলাদা। কারো বুকের উপর এলোপাথাড়ি ছুরির আঘাত।

এদিকে শুভ দরজার বাহিরে মেহেদিকে দেখে আবার দৌড়ে রুমে ঢুকে যায়। এরপর রাকিবকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে টেনে নামায়। শুভ কিছু বলার আগেই রাকিব বলল,
– আরেহ,গার্ল হোস্টেল থেকে কিসের হৈচৈ আসছে? চল জলদি গিয়ে দেখি।
শুভ আর কিছু না বলে রাকিবের কথায় সায় দেয়।রাকিব দরজা খুলে বের হয়।শুভ খেয়াল করে দরজায় মেহেদির আত্মা নেই।ওরাও সবার মতো দৌড়ে যায় গার্ল হোস্টেলে। রাকিব আর শুভ হোস্টেলে যেতে যেতে ওখানে লোকের ভিড় জমে গেছে। শুভ আর রাকিব লাশগুলো এক পলক দেখে আবার ফিরে আসে।এতো ভয়ংকর আর হিংশ্র কে হতে পারে।প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।পুলিশ হাজারো তদন্ত চালিয়ে ফলাফল শূন্য পাচ্ছে। কেস বন্ধ হয়ে যায় প্রমানের অভাবে। এইটা নতুন কিছু নয়। এরকম হাজার কেস বন্ধ হয়ে এসেছে।কেও টাকার জোরে বেচে যায়,কেও পাওয়ার খাটিয়ে স্বাধীন হয়ে যায়। সঠিক বিচার পায়না অনেক অসহায় মানুষ।ধর্ষণের বিচার হয়না কোটিপতি বাবার ছেলেদের।খুনের বিচার হয়না পাওয়ার হাতে থাকা লোকদের।আদালত যেনো মনে মনে বলে,” বিচার চাহিয়া লজ্জা দিবেন না”।

তাদের জন্য এরকম কেও নিশ্চয় দরকার।যারা অদৃশ্য, যারা ঝাপসা হয়ে থাকে।যাদের স্পর্শ করার সুযোগ থাকে কিন্তু করতে পারেনা।তারা ছায়া।তারা অন্ধকার জগতে কালোমানব।হোক তার সাইকো।বিচার তো করবে সঠিক।
– এই রাখ তো? কিসব বলে যাচ্ছিস। কথার আগামাথা কিছুই নেই তোর।তোর এই রহস্যময় কথাগুলো সব সময় আমার মাথার কোনদিক দিয়ে যেনো যায়।
– কেন। খারাপ কি বললাম।তোর হোস্টেলে মেহেদির সাথে যে কাজটা হয়েছে।হতে পারে সেটা কোনো এমনি মানব।যে আড়াল থেকে বিচার করে। মেহেদি অপরাধী ছিলো।সাথে তোরাও অপরাধী। তোদের সাহায্য করলে তো আমিও ফেসে যেতে পারি।
– রিয়াজ, এইভাবে কেনো বলছিস। তোকে গ্রাম থেকে এখানে এনেছি এসব বলার জন্য? আমরা মানছি আমাদের ভুল হয়েছে।কিন্তু মেহেদি তো ভুলের মাশুল দিয়েছে।আমার মনে হয় তুই আমাদের বাচাতে পারবি।
– আচ্ছা? আজ অব্দি আমাকে কোনো ভূত প্রেত বশ করতে দেখেছিস? আমি কি করে তোদের বাচাবো? এখানে এসে তো এখন আমার নিজেরি ভয় হচ্ছে।আমি জীবন নিয়ে যেতে পারবো কিনা কে জানে।
– তোকে ছোট বেলা থেকে চিনি আমি।খুবই সহজ সরল, কিন্তু রহস্যময়।তোর ছোটবেলার কথা মনে আছে? একটা পাখি তোর সাথে কথা বলেছিলো? তুই তোর আম্মুকে বলিস নি। সে পাখি তোকে বলেছিলো দরকার হলে ডাক দেওয়ার জন্য। আজ তো আমরা বিপদে।তাকে একটু স্বরণ কর ভাই প্লিজ।
– ওহ শিট! এই কথা আমার মাথায় আগে কেনো আসেনি। তাহলে তো সেদিনের রহস্য খুজে পেতাম।
– কিসের রহস্য?
– কয়দিন আগে আমার সাথে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে।খুব অদ্ভুত ঘটনা। একটা অদ্ভুত মেয়ের সাথেও দেখা হয়।মেয়েটি অনেক রহস্যময়ী। ( সম্মানিত পাঠক বৃন্দ।রিয়াজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে একটা গল্প আছে।যেটা এই গল্পের সিজন-১ নামে পরিচিত।যারা পড়েনি। তারা গল্পের লিংক গ্রুপ গুলোতে গল্পটার নাম লিখে চেয়ে নিন।গল্পের নাম “ইভিল মিস্ট্রি
“। লেখক আমি নিজেই)

– তো আমাকে খুলে বল? কি হয়েছিলো?
– বাদ দে না। এখন শুন। তোদের ঝামেলাটা নিয়ে কথা বল। গুগোল সার্চ করি চল।কোনো এক কবিরাজের কাছে গিয়ে আমরা মেহেদির আত্মাকে হাজির করাবো।এরপর তাকে জিজ্ঞেস করবো তার ইচ্ছে কি।সে কেনো ফিরে এসেছে।আর কেনো এসব করছে।
– এরকম কবিরাজ আদৌ কি আছে?
– আলী বাবা নামক এক জ্যোতিষী আছে।আমি উনার পেজ ফলো করি সব সময়।চল উনার কাছে যাই।যতদূর জানি গাজীপুর চৌ-রাস্তার উত্তরে উনার বাসা। গিয়ে কাওকে জিজ্ঞেস করে নিবো।
– তো এখুনি চল?
– কি বলিস। রাত ৮ টা বাজে এখন।
– এদিকে জীবনের ১২ টা বাজতে চলছে। চল।
– ওকে।

রিয়াজ, রাকিব আর শুভ রওনা হয় গা
জীপুর। যানজট অতিক্রম করে প্রায় ৩ ঘন্টা পর তারা গাজীপুর পৌঁছায়। রাত ১১:৪৭ মিনিট। অনেক কষ্টে তারা আলী বাবার ঠিকানা বের করে।বাসায় ঢুকতেই আলী বাবার এক কর্মচারী দরজা খোলে। এরপর রিয়াজ আলী বাবার সামনে গিয়ে বলল,
– ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এতো রাত বিরক্ত করার জন্য।আসলে আমি চাইনি এতো রাতে আসতে।কিন্তু পরিস্থিতি বাধ্য করছে।ক্ষমার চোখে দেখবেন।
– তোমার আসার কথা আমি আগেই জানতাম। ১০টায় ঘুমিয়ে যাই আমি।কি হয়েছে তোমাদের সব জানি আমি। বসো নিছে।
রিয়াজ, শুভ আর রাকিব ফ্লোরে বসে পড়ে।অবাক হয়ে যায় তারা। এই আলী বাবা মিছে কোনো জ্যোতিষী নয়,তা বুঝা যাচ্ছে।কর্মচারী একটা মোমবাতি জ্বালায়।এদিকে লাইট অফ করে দেয় আরেকজন।রুম অন্ধকার। একটা মোমবাতির আলোয় রুমটা কোনোভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে। উনি চোখ বন্ধ করে রিয়াজদের উদ্দেশ্যে বলল।
– মোমবাতি নিভে গেলে পুরো রুম অন্ধকার হয়ে যাবে। এই রুমে মোট ৩ টা আত্মা আসবে।
উনার কথা শুনে রিয়াজ বলল,
– ৩টা কেনো? আমরা তো শুধু মেহেদির আত্মার সাথে কথা বলতে চেয়েছি।
– আত্মারা আসলে বুঝে যাবে তোমরা। এখন সবাই সবার হাত ধরো শক্ত করে। আর হ্যা,আত্মার সাথে যেকোনো একজন কথা বলবে।
– আমি নিজেই বলবো সমস্যা নেই।
– ঠিক আছে।

আলী বাবা বিড়বিড় করে কিছু পড়তে শুরু করে।রিয়াজ, শুভ আর রাকিব আলী বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।রুম ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করেছে।পরিস্থিতি বদলানো শুরু হয়েছে। এইবার সবার ফোকাস হচ্ছে মোমবাতি। মোমবাতি যেকোনো সময় নিভে যেতে পারে।আর রিয়াজের প্রশ্নের ঝুড়ি ছুড়তে হবে তখন।দেখতে দেখতে টুপ করে মোমবাতি নিভে যায়। রিয়াজ কিছুই দেখতে পায়না।তখনি রুমের কোনো কোনা থেকে মেহেদির গলার আওয়াজ ভেসে আসলো।
– আমাকে ডাকা হয়েছে কেনো?
রিয়াজ মেহেদির গলা শুনেই উত্তর দিলো,
– আপনার সাহায্য দরকার আমাদের।যদি আপত্তি না থাকে তাহলে বলবো?
– বলতে পারো।
– আপনি তো মারা গেছেন।তবে ফিরে এলেন কিভাবে?
– তোমরা ডেকেছো তাই।
– কিন্তু শুভ আর রাকিবকে বিরক্ত কেনো করেছেন?
– ওটা আমি নই।আমি কাওকে বিরক্ত করছিনা। মৃত্যুর পর কেও ফিরে আসতে পারেনা।আত্মাদের ডাকতে হয়।তারপর তারা হাজির হয়।
– তবে ওরা কাকে দেখেছে?
– তা একটা রহস্য। তোমাকে খুঁজতে হবে সেটা।
– আত্মাদের আমি কিভাবে খুঁজবো।
– তারা আত্মা নয়। মৃত মানুষ কখনো ফিরে আসেনা। যারা আমাদের রুপ নিয়ে এসব করছে,তাদের খুঁজতে হবে তোমাকে।একটা কথা বলি তোমাকে।এই সব কিছু কারো ইশারায় হচ্ছে।আমাদের মাথায় ধর্ষনের চিন্তাটা আমাদের ইচ্ছেতে নয়।তা কারো ইশারায় হয়েছে।এখন যা কিছু হচ্ছে,সব তার ইচ্ছেতে হচ্ছে। আর আসল কথা এইটাই।তোমার জন্ম সাধারণ ভাবে হয়নি,আর তুমি সাধারণ কেও নাহে।তুমি এমন একজন লোক,যে ছদ্মবেশী এক ছায়া।
– আমি আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না।
রিয়াজের কথায় আর মেহেদি উত্তর দেয়নি।এইবার একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।
– আমাকে কেনো ডাকা হয়েছে।
– আপনি কে আবার।
– আমি আখি।কয়দিন আগে মৃত্যু হয়েছে আমার।
– আপনি এসেছেন কেনো? আপনাকে দিয়ে কি করবো।
– কারণ তোমার সাথে জড়িত আমরা। তোমার সূত্র থেকে আমাদের জন্ম।
– কিসের সূত্র?
– তোমার মুখে কোন কথাটা বেশি বিরাজ করে?
রিয়াজ কিছু বলতে চেয়েও,বলতে পারেনি।অটোমেটিক তার মুখ থেকে সেই প্রবাদটা বের হয়ে যায়।
– কিছু মুহূর্তে এমন কিছু ঘটনা সামনে ভেসে উঠে,তা বুঝে নিতেই লাগে রহস্য। রহস্য দিয়ে শুরু কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে রহস্য দিয়েই।আবার রহস্য দিয়ে চলতে থেকে,হটাৎ রহস্য নিয়েই শেষ হয়। রহস্য নিয়ে শেষ হওয়া ঘটনা কোনো একদিন আবার রহস্যরুপে শুরু হয়। আবার চলতে থাকে রহস্য।নিয়তি এমনই।শেষ থেকে শুরু আর শুরু থেকে শেষ করে।তার অস্তিত্ব নামক একটা শব্দ হচ্ছে রহস্য।
– এইটাই।এই সূত্র থেকে আমাদের জন্ম।আর সূত্রের জন্মদাতা তুমি নিজেই।এই সব কিছু আমাদের নয়, বরং কারো ইশারায় হচ্ছে।
– কিন্তু সে কে? কে এমন ইশারা করছে।নাম কি তার?
আগের মতো এইবারও মেয়েলী কন্ঠে অন্য আত্মা জবাব দিচ্ছে।
– আমাকে ডাকা হয়েছে কেন?
– আপনি কে আবার।
– আমি মিম। মেহেদি, শুভ আর রাকিব আমাকে ধর্ষণ করেছিলো।
– ও আচ্ছা! তারমানে সব আপনার ইশারায় হচ্ছে?
– না। আমার ধর্ষণটাও কারো ইশারায় হয়েছে। প্রতিশোধ আমি নিতে পারবোনা।কারণ আত্মারা প্রতিশোধ নিতে আসেনা। তুমি এগিয়ে যাও। তোমার বাড়িতে সব রহস্য লুকিয়ে আছে। তুমি চেষ্টা করো। আমাদের সাথের ঘটনা কিছু নয়।এইটা ছোট একটি নমুনা। সব কিছু তোমাকে ইঙ্গিত করে হচ্ছে। তুমি মানুষ নয়। মানুষ রুপী এক ছায়া।
– কিন্তু কার ইশারায় হচ্ছে বলবেন তো।

আর কোনো জবাব আসেনি। হটাৎ আলী বাবা এক চিৎকার দেয়। সাথে সাথে কর্মচারী লাইট অন করে। লাইটের আলোয় রিয়াজ,রাকিব আর শুভ যা দেখেছে,তা কাল্পনাতেও ছিলোনা তাদের। আলী বাবার দেহে কেও নখের আছড় দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।উনার নাক থেকে রক্ত ঝরছিল। অনেক কষ্টে উনি বলল,
– রিয়াজ,তুমি জাগাও তোমার ভিতরের সত্বা টাকে।সে ঘুমিয়ে আছে। যতদিন সে ঘুমিয়ে থাকবে,ততদিন বিপদ বাড়তে থাকবে। বাচাতে হবে সবাইকে।তুমি জগিয়ে তোলো।জাগিয়ে তোলো তাকে।
বলেই আলী বাবা ফ্লোরে পড়ে মারায় যায়। ওরা তিনজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।কর্মচারী রিয়াজের উদ্দেশ্যে বলল,
– আলী বাবা আজ সন্ধ্যা ৭ টায় মৃত্যুবরণ করেছে। কবর দেওয়ার সময় তিনি জেগে উঠেন হটাৎ করে।আর বলেছে আপনারা আসবেন,আর আপনাদের কাজ করে সে আবার মৃত্যুবরণ করবে।
– কিহহ,কেও জানেনা এইটা?
– না।উনি নিজেই বলেছিলো।উনি মোট দুইবার মৃত্যুবরণ করবে।আর প্রথম মৃত্যুর সংবাদ যেনো আমরা কর্মচারীরা ছাড়া কেও না জানে।তাই গোপন রেখেছিলাম আমরা।

চলবে………….

ঘটনামূলক মন্তব্য করবেন।আপনারা গল্প পড়ে মজা নেন,আর আমি কমেন্ট পড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here