ভয়ংকর চাহনি,( পর্ব-০২)

0
2181

ভয়ংকর চাহনি,( পর্ব-০২)
লেখক- রিয়াজ রাজ
———————-
সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আখি আর সাদিয়া চলে যায় নিজেদের হোষ্টেলে। আখি নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলে।এখন গোসলের সময়।শরীর নাপাক আছে। বাথরুমের দরজা খুলতেই আখি দেখে,আকাশ বাথরুমের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে।উলঙ্গ।

এদিকে মেহেদি গোসল করে বের হয়ে এসেছে। আর তখনি সে অনুভব করলো,তার লজ্জাস্থানে লিঙ্গ নেই।

মেহেদি চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে শুয়ে যায়।নিজের দেহের এমন পরিবর্তন কেও মেনে নেবার নয়। রুমমেট শুভ আর রাকিব দৌড়ে আসে তার কাছে। এসে দেখে মেহেদির গামছা নেই,সাথে সেটাও নেই। ওরাও ভয়ে চিৎকার দিতে লাগলো। ধীরে ধীরে মেহেদির দেহ পচা শুরু করে। হাত পা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। মেহেদি যেমন চিৎকার দিচ্ছে,তার সাথে শুভ আর রাকিবও চিৎকার দিতে লাগলো। হোস্টেলের বাকিরাও যার যার রুম থেকে দৌড়ে আসে। মেহেদি ফ্লোরে শুয়ে কাতরাচ্ছে।শরীর পচতে থাকে ওর। হাতের মাংস গুলো ধীরে ধীরে পচা শুরু করে। মেহেদি সহ্য করতে পারেনা। সবাই ভয়ে আতঙ্ক হয়ে আছে। পচতে পচতে অবশেষে মেহেদি স্থির হওয়া শুরু করেছে।মুখের মাংস ও ঝরতে লাগলো তার।কাঁপতে কাঁপতে পুরো স্থির হয়ে যায়।পুরো রুম নিস্তেজ। শুভ একটু একটু এগিয়ে মেহেদির দিকে আসে। এসে ওর পাশে বসে। এরপর পচা হাতের রগ স্পর্শ করতেই শুভ পিছু হাটতে লাগলো।সবাই আবার চিৎকার দিতে লাগলো।মেহেদি আর নেই।মারা গেছে সে।

অন্যদিকে আখি ওয়াশরুমে আকাশের জিন্দা লাশ দেখেই আবার ওয়াশরুম ত্যাগ করে।দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতেই আখি উপলব্ধি করে,হটাৎ দরজা বন্ধ হয়ে যায়।আখি চিৎকার দিতে যাবে,তখনি লাইট অফ হয়ে যায়।রুমের বাহিরের লাইটের আলোয় আখি বুঝতে পারে,তার রুমের কোনায় কেও দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন আগে যেহেতু আকাশকে দেখেছে, সেই হিসেবে এইটাও আকাশ হতে পারে। আখি বুঝতে পারেনা,মৃত ব্যাক্তি কিভাবে ফিরে আসবে।আখি ভয়ের মধ্যে বলতে লাগলো,
– আকাশ,যা হয়েছে হয়ে গেছে।আমি ক্ষমা চাচ্ছি।আমাকে মাফ করে দাও।আর করবোনা আমরা এমন।দয়া করে ছেড়ে দাও।
আখির কথার পর রুমের কোনায় থাকা লোকটি জবাব দিলো।তবে জবাবটা কোনো ছেলের নয়। একটা মেয়েলি কন্ঠে আসতে লাগলো।
– কিসের মাফ।আমি মারা গেছি।আমাকে তোমরা মেরে ফেলেছো।চলো,যে কারণে মেরেছো,সেই কাজটাই হোক।এদিকে আসো।আমার কাছে আসো।
– আকাশ,তোমার কন্ঠ মেয়েদের মত কেন? আর তুমি মারা গেলে এসেছো কিভাবে?

আর কোনো জবাব আসেনি। হটাৎ আখির জামা খোলে যায়।নিজে থেকেই জামা খোলা কোনো মামুলি কাজ নয়।আখি চিৎকার দিয়ে দরজার কাছে চলে আসে। এমন সময় আখির বাকি জামাও নিজে নিজে খুলে যায়।আখি আরো চিৎকার দিতে লাগলো।তখনি দরজা হুট করে খুলে গেছে।আখির চিৎকারে এতক্ষণে হোষ্টেলের সব মেয়েরা দরজার সামনে হাজির হয়ে গেছে। দরজা খুলতেই আখিকে খালি গায়ে দেখে সবাই হাসতে শুরু করে।আখি রুমের ভিতরেও আবার ঢুকার সাহস পায়নি। সবাইকে ঠেলে ভিড়ের ভিতর দিয়ে দৌড়াতে থাকে। সবাই আখির দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।কেও কেও ভিডিও করা শুরু করেছে।আখি না পেরে,দৌড়ে ছাদের দিকে চলে যেতে লাগলো। ভিড়ের ভিতর সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আর সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে।তারাও অবাক হয়ে গেছে।এমন অর্ধউলঙ্গ হয়ে আখি দৌড়াচ্ছে কেন। আখি সোজা সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়।আখির এমন দৌড় ফেসবুক লাইভে চলছে। কলেজের বাকি মেয়েদেরকে আখি কম জ্বালায় নি। প্রতিদিন একটা না একটা মেয়েকে আখি সহ বাকিরা র‍্যাগিং করাতো। জেদটা সবার মনেই ছিলো। সুযোগে সৎ ব্যবহার সবাই করে।ফেসবুক লাইভে আখির এই দৃশ্য অল্প কিছুক্ষনে ভাইরাল হয়ে গেছে। কেও লাইভ ভিডিও ডাউনলোড করে ইয়্যুটুইউবে আপলোড দিতে লাগলো।টাইটেল হচ্ছে,” একি করলেন কলেজের পড়ুয়া এক ছাত্রী”।

এদিকে সবাইকে এড়িয়ে আখি সোজা ছাদে চলে যায়। ছাদের দরজা বন্ধ করে দেয় আখি।আখির পিছন পিছন সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আর সাদিয়া চলে আসে। সাথে বাকিরাও আসতে লাগলো।সবাই ছাদের দরজা পেটাচ্ছে। আর এদিকে আখি দরজা খোলার নামই নিচ্ছেনা। ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় পাশের হোস্টেল থেকেও ছেলেরা দৌড়ে আসে। স্যার,দারোয়ান আর রাস্তার অনেক ছেলেরাও আসে। গাড়ির শব্দ শুনা যায় মাঠে,হয়তো সাংবাদিকও চলে এসেছে। আখি ছাদের দরজা বন্ধ করে আছে। সবাই ডাকছে,কিন্তু সাড়া নেই। ছেলেরা এসে দরজা ভাঙ্গার জন্য প্রস্তুতি নেয়।পিছনে শত শত ক্যামেরা প্রস্তুত, দরজা খোলার পর আখির অর্ধউলঙ্গ দেহ দেখানোর জন্য। লাইভ ভিডিও চলছে পুরো বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়াতে। ছেলে মেয়ে সবাই ঝট বেধে দেখছে কি হতে যাচ্ছে।এদিকে সাংবাদিকরা টিভিতে লাইভ শুরু করেছে।রাতারাতি এই ঘঠনাটাই ছড়িয়ে পড়েছে।
ছেলেরা দরজায় আঘাত করতে করতে ভেঙ্গে ফেলে।সবাই আগ্রহ নিয়ে ছাদের উপর উঠতে লাগলো।হাজার হাজার মানুষ সিড়িতে লাইন বেধেছে।ছাদের মধ্যে সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখে,ছাদের উপরে পিলারের যে রড গুলো দাঁড়িয়ে আছে।সেই রড আখির পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট দিয়ে বের হয়ে গেছে।পরনে গুধু ছোট ঝিমস।আর পুরো দেহে কিছু নেই তার। মৃত আখির এই দেহ, দেখে যাচ্ছে পুরো দেশ। মুখ দিয়ে রক্ত যাচ্ছে তার।গায়ের মধ্যে হাজারো নখের চিহ্ন।হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে।কিন্তু কে বা কারা মেরেছে,তা রহস্য রয়ে গেছে।

ছাদে কেও ছিলোনা।তবে কি এইটা আত্মহত্যা? কিন্তু নখের দাগ কার? আর আখিকে কে উলঙ্গ করেছে? একই সময়ে পাশের হোস্টেলে মেহেদি নামক ছেলেটা খুন। এই খুনের যোগসূত্র এক নাতো? এরকম হাজার হাজার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে স্ট্যাটাস হচ্ছে ফেসবুকে। কেও কেও পেজে আপলোড দিচ্ছে,” আখি হত্যার বিচার চাইতে হলে ডান পাশে লাইক দিন। এরকম সচরাচর কাহিনী তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু সুমাইয়া,মেঘা,রশনী,আর সাদিয়া ব্যাপারটা অন্যভাবে নেয়। সাদিয়া বলল,
– এইটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। আখির বডি পোস্টমর্টেম করার পর অবশ্যই বুঝবে সে সেক্স করেছিলো। আকাশের লাশ তখন এমনিতেই বের হয়ে যাবে। আকাশের সাথে তানিয়ার কি হয়েছে, তা জানার জন্য আকাশের তথ্য শুরু হবে।এতে আমরাও ধরা খেতে পারি।কারণ আমাদেরও ডিএনএ ধরা খেতে পারে।
মেঘা বলল,
– এইখানে সি আই ডি এর ডক্টর আবিশেক আছে বলে তো মনে হয়না।আর এইভাবে নাও হতে পারে।যদিও মানলাম হয়েছে।কিন্তু এতে কি হবে? আমরা আকাশের সাথে যৌনমিলন করেছি এইটাই তো।আখির মৃত্যুর অপবাদ তো আর পাবোনা।
– কিন্তু আকাশের মৃত্যুর অপবাদ তো পাবো।সেও তো মৃত।
-আকাশের লাশ ড্রেনে ফেলেছি।এতক্ষনে ভাসতে ভাসতে নদীতে চলে গেছে। কিছু হবেনা।কিন্তু সাদিয়া একটা ব্যাপারে কনফিউজড আছি। আখি হটাৎ এমন করলো কেন? তার রুমে কি কেও ছিলো?
– সেটাই তো মাথায় ঢুকছেনা আমার।
রশনী বলল,
– আচ্ছা আত্মার ব্যাপার নেইতো এখানে?
– তুই এই ভয় নিয়েই থাক।এসব কিছু হয় নাকি ভিতুর ডিম।
– আরেহ,হতেও তো পারে।চল গুগোল ঘেটে দেখি।আত্মা হাজির করাতে পারি কিনা। এতে উত্তরও পাবো,আর আত্মা আছে কি নেই সেটাও জানবো।
সুমাইয়া বলল,
– আচ্ছা শুন,আমার জানামতে এক জ্যোতিষী আছে। সে এসব ভূত প্রেতের কাজ করে।তাকে ডাকি চল।
– সে সব জানতে পারলে?
– কিছুই হবেনা। আমরা তার কাষ্টমার।প্রকাশ করবেনা।
– ওকে,কাল চলি।এখন গেলে সন্দেহ বেড়ে যাবে অনেকের।

কথাবলা শেষ করে সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। সুমাইয়া,মেঘা,রশনী,আর সাদিয়া আজ এক সাথেই ঘুমাচ্ছে।মেঘা সবার কিনারায় শুয়েছে।চোখ লেগে আসতে যাবে,তখন মেঘার কানে একটা শব্দ আসতে লাগলো।স্পষ্ট আখির কন্ঠ।ওয়াশরুম থেকে আখি কান্না করে বলছে,
– মেঘা,বোন আমার।এদিকে আয়না একটু।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। মেঘা বোন? আমাকে সাহায্য কর।আমি আর পারছিনা এই যন্ত্রণাময় কাজ করতে।
কথাটা শুনেই মেঘা লাফিয়ে উঠে যায়। পিছনে তাকিয়ে দেখে সবাই ঘুমে তলিয়ে গেছে।এদিকে ওয়াশরুম থেকে আবার শব্দ এলো,
– মেঘা আমাকে বাচা বোন।আমাকে মেরে ফেলবে এরা।
মেঘা আর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে যায় ওয়াশরুমে। দরজাটা খুলতেই মেঘা দেখে,আকাশ উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এইটা দেখেই মেঘা গলা ফাটিয়ে এক চিৎকার দেয়।

এদিকে শুভ আর রাকিব ভয়ের মধ্যে আছে প্রচুর। তাদের চোখের সামনে এতো বড় ঘঠনা ঘটেছে।শুভ অবশেষে চিন্তা করলো, গ্রামের বাড়িতে থাকা তার একটা ফ্রেন্ডকে জানাবে। সে রহস্য নিয়ে ব্যস্ত থাকে সবসময়। নাম রিয়াজ। ছোটবেলা তার সাথেই কাটানো।কিন্তু রিয়াজ গ্রামের এক কলেজে ভর্তি হয়।আর শুভ চলে আসে ঢাকায়।অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো,রিয়াজকে জানাবে এইটা।যদি সে তাদের বাচাতে পারে।কারণ মেহেদির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা যাতে তাদের সাথে না হয়।

এসব ভেবে শুভ রুমের বাহিরে আসে।এসেই দেখে, মেহেদি একটা ছুরি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ প্রচণ্ড লাল।মুখ পচাগলা হয়ে আছে।মেহেদির চোখ গুলো খুবি ভয়ংকর। এক ভয়ংকর চাহনি তার চোখে।শুভও জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠে।

চলবে………….

গল্প- ভয়ংকর চাহনি ( পর্ব-০২)

লেখক- Riaz Raj

[ আত্মা বলতে কিছু কি আছে? সাইন্স ফিকশন নিয়ে জানতে চাইলে এর অস্তিত্ব কি খুজে পাওয়া যাবে।আর প্যারানরমাল তো এর বিপরীত। আকাশ মৃত হলে ফিরে আসে কিভাবে। যদিও আকাশ হয়ে থাকে,তবে সে মেয়েলী কন্ঠে কথা বলে কেন? সে কি আসলেই আকাশ? নাকি অন্যকেও।মেহেদি মরেছে এক অলৌকিক ঘটনায়।সে ফিরে আসবে কেন? যদিও সে আত্মা হয়ে ফিরে আসে,তবে তার বন্ধুর সামনে কেনো? এইটাও কি আসলেই মেহেদি? নাকি অন্য কিছু।অন্য কিছু হলেও সেটা কি? রহস্য..? নাকি অন্য কোনো কারণ।জানতে হলে কমেন্ট করে জানান ]

ঘটনামূলক মন্তব্য করবেন।আপনারা গল্প পড়ে মজা নেন,আর আমি কমেন্ট পড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here