ভয়ংকর চাহনি ( পর্ব-০৪ ও শেষ)

0
2100

ভয়ংকর চাহনি ( পর্ব-০৪ ও শেষ)
লেখক- Riaz Raj
———————-
– রিয়াজ,তুমি জাগাও তোমার ভিতরের সত্বা টাকে।সে ঘুমিয়ে আছে। যতদিন সে ঘুমিয়ে থাকবে,ততদিন বিপদ বাড়তে থাকবে। বাচাতে হবে সবাইকে।তুমি জগিয়ে তোলো।জাগিয়ে তোলো তাকে।
বলেই আলী বাবা ফ্লোরে পড়ে মারায় যায়। ওরা তিনজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।কর্মচারী রিয়াজের উদ্দেশ্যে বলল,
– আলী বাবা আজ সন্ধ্যা ৭ টায় মৃত্যুবরণ করেছে। কবর দেওয়ার সময় তিনি জেগে উঠেন হটাৎ করে।আর বলেছে আপনারা আসবেন,আর আপনাদের কাজ করে সে আবার মৃত্যুবরণ করবে।
– কিহহ,কেও জানেনা এইটা?
– না।উনি নিজেই বলেছিলো।উনি মোট দুইবার মৃত্যুবরণ করবে।আর প্রথম মৃত্যুর সংবাদ যেনো আমরা কর্মচারীরা ছাড়া কেও না জানে।তাই গোপন রেখেছিলাম আমরা।

হাজার রহস্য মাথায় নিয়ে চলে আসে রিয়াজ,রাকিব আর শুভ। বাসায় বসে রিয়াজ ভাবতে লাগলো পিছনের ঘটনাগুলো। গ্রামে হয়েছিলো এক অদ্ভুত ঘটনা। এর উপর রশনী নামক মেয়েটির সাথে দেখা।আবার সব ঠিক হলো। এসেছে ঢাকায়,এখানেও একই রহস্য।সব রহস্য যেনো রিয়াজকে ঘিরেই হচ্ছে। এখানে থাকলে শুভ আর রাকিবের বিপদ হতে পারে।আলী বাবার ওখানে একটা কথা তো স্পষ্ট। সব খুন সেই আত্মারা করছেনা। তবে করছে কে। দ্বিতীয় কোনো দল আছে এখানে? এমনও তো হতে পারে তৃতীয়, চতুর্থ দলও আছে।যতই থাকুক তাদের বের করতে হবে।রিয়াজ এইবার জেদ ধরেই বসেছে। কে বা কার ইশারায় সব ঘটে আসছে,সব জানবে রিয়াজ।তাকে জানতেই হবে। যেকোনো মূল্যে।

রাত ০৩:৩২ মিনিট। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রিয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রাতটা যেনো এই শেষ হতে লাগলো। লাইট অফ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয় রিয়াজ।বিছানা ছেড়ে উঠে যখনি লাইট অফ করবে,তখনি রিয়াজ আন্দাজ করে দরজার বাহিরে কেও আছে। সুইচের উপর আঙ্গুল রেখে আছে।সুইচ অফ না করে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। দরজা ভিতর থেকে লক করা।কিন্তু দরজার নিচ দিয়ে কারো পা দেখা যাচ্ছে। রিয়াজ বুদ্ধি করে সুইচ অফ করে দেয়।পুরো রুমে অন্ধকার। চাঁদের আলো চুঁইচুঁই করছে।চাঁদের আলো জানালা বেধ করে রুমে আসছে।কিন্তু বাহির থেকে পায়ের ছায়া এইবার স্পষ্ট রুমে আসছে। রিয়াজ ছায়ার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগুতে থাকে। ছায়াটা নড়াচড়া করছেনা। একই জায়গায় স্তবক হয়ে আছে। রিয়াজ দরজার কড়ায় হাত দিয়ে ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বাহিরে যা আছে থাকুক, রিয়াজ হুট করে দরজা খুলে ফেলে। দরজা খুলে বাহিরে তাকিয়ে দেখে কেও নেই। নেই ছায়া,আর নেই কোনো মানুষত্ব অস্তিত্ব। রিয়াজ দৌড়ে দরজার বাহিরে আসে।এসে দেখে এখানেও কেও নেই। হোষ্টেল মাঠের ওপাড়ে একটা বটগাছ আছে। রিয়াজের চোখ আকর্ষণ করে সেই বটগাছ। রিয়াজ ভালো করে বটগাছের দিকে তাকিয়ে দেখে যান্ত্রীয় একটা মেশিন দেখা যাচ্ছে। লাইটের আলোয় যান্ত্রীয় মেশিনটা স্পষ্ট দেখা যায়। দেখতে গোল,কিন্তু অনেক বড়। রিয়াজ বারান্দায় এসে আরো খেয়ালী চোখে তাকায়। আর তখনি সেকেন্ডের মাথায় একটা সবুজ আলো রিয়াজের দিকে ধেয়ে আসতে লাগলো।রিয়াজ নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার আগেই আলোটা রিয়াজের গায়ে লেগে যায়।রিয়াজ উপলব্ধি করে তার দেহ অবশ হচ্ছে। শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। লুড়িয়ে পড়ে রিয়াজ বারান্দায়। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এসেছে। নিশ্বাস যেনো এখনি বন্ধ হয়ে যাবে। রিয়াজ অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। চোখ তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বন্ধ হয়ে আছে। রিয়াজ অনেক কষ্টে বিন্দুধারণ চোখ মেলে।আর ঐটুকু খেয়ালে রিয়াজ দেখে দুইজন যান্ত্রীয় মানব তার দিকে এগিয়ে আসছে।তাদের হাতে দুইটা অদ্ভুত যন্ত্র।পুলিশের হাতে যেমন রাইফেল থাকে,তেমনি কোনো অস্র।তবে তা ভিন্ন ধরণের। এইটুকু দেখে রিয়াজের চোখ আবার বন্ধ হয়ে যায়। আর কিছু মনে থাকেনা তার।

– আহহ কি ব্যাথা,ও মাগো।
– লিসেন মিষ্টার রিয়াজ।আপনি এখন কেমন অনুভব করছেন?
রিয়াজ চমকে উঠে।তার হাত পা বেধে শুইয়ে রেখেছে একটা বেডে। রুমের চারদিক বিভিন্ন ওষুধপাতি। সামনে আছে একজন অদ্ভুত লোক।সবাই চশমা পড়ে চোখে।উনার চশমা নাকের ডগায়।গায়ে সাদা একটা জামা।দেখতে ডক্টরের মতো। রিয়াজ উনাকে বলল,
– কে আপনি? আর আমি কোথায়?
– বিচলিত হবেন না। আগে বলুন আপনি এখন কেমন অনুভব করছেন।ঠিক আছেন আপনি?
– রাখুন আপনার অনুভব। ব্যাথায় গলা জ্বলে যাচ্ছে। কি খাইয়েছেন আমায়?
– ওহহ,আপনাকে ড্রেপিক্সটন দেওয়া হয়নি।ওয়েট,ওষুধটা খেয়ে নিন।গলা ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে।
– এই ভাই দাঁড়ান। না না,আপনি তো বয়সে আমার দাদুর সমান।ভাই বলছি কেন।দেখুন,এসব পরে করুন,আগে বলুন আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন?
– দয়া করে ক্ষিপ্ত হবেন না মিষ্টার রিয়াজ। একটু পরে আপনাকে সব ক্লিয়ার করা হবে। নিন,এই ড্রেপিক্সটন টা খেয়ে নিন।আগে আপনার সুস্থ হওয়া জরুরী।
– কোরবানির গরুর মতো হাত পা বেধে রাখলে ওষুধ কিভাবে নিবো?
– ও সরি। দাঁড়ান আমি এখনি খুলে দিচ্ছি।
লোকটি রিয়াজের হাত পা খুলে ফেলে। রিয়াজ তাকিয়ে দেখে ডক্টরের যন্ত্রপাতির বক্সে একটা ধারালো ছুরি দেখে যাচ্ছে।সুযোগ বুঝে রিয়াজ লাফ দিয়ে উঠে ছুরিটা নিজের আয়াত্তে নিয়ে আসে।এরপর ডক্টরের মুখের সামনে ছুরি ধরে বলল,
– আগে বলুন আমাকে এখানে কেনো এনেছেন।উদ্দেশ্য কি আপনার?
ডক্টর মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
– মিস্টার রিয়াজ।এই সামান্য অস্র আপনার হাতে মানায় না।আপনার হাতে থাকবে আরো শক্তিশালী অস্র।এই অস্রের থেকে তো আপনার দাত আরো মজবুত।
– মানে কি?
– ছুরিটা একটু জোরে চাপ দিন তো? দেখুন ছুরির কি হাল হয়।
রিয়াজ ডক্টরের কথায় ছুরিটা মুঠের মাঝে আরো শক্ত করে ধরে।আর অদ্ভুতভাবে ছুরিটা হাতের মধ্যেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।অদ্ভুত ঘটনা। রিয়াজ ছুরিটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে অবাক হয়ে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে রইলো।ডক্টর এইবার আরেকটা ছুরি নিয়ে হুট করে রিয়াজের বুকে ঢুকিয়ে দেয়।রিয়াজ চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে ডক্টরের দিকে। ডক্টর হেসে যাচ্ছে।রিয়াজ আবার তার বুকের দিকে তাকিয়ে দেখে ছুরিটা ভেঙ্গে নিছে পড়ে গেছে।অথচ রিয়াজের বুকে একটুও ক্ষত চিহ্ন হয়নি। নিজের দেহের চামড়া এতো মজবুত কখন হলো রিয়াজ নিজেও বুঝতে পারেনা।ডক্টর বলল,
– দেখলেন? আপনার শরীর কতটা মজবুত? এসব ছুরি চাপাতি আপনার দেহের কাছে কিছু না।
– আপনি আমার শরীরকে কি করেছেন? আমার শরীর এতো শক্ত কিভাবে হয়েছে?
– ঠান্ডা হোন মিস্টার রিয়াজ।বসুন,আপনাকে সব বলা হবে।
রিয়াজ পাশ থেকে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ডক্টর বলল,
– আপনার গলা ব্যাথার জন্য এই ড্রেপিক্সটনটা খেয়ে নিন।
– আমার কোনো গলা ব্যাথা নেই।হাতের বাঁধনি খোলার জন্য বাহানা ধরেছিলাম।
– আরেহ,আপনি তো আসতে না আসতেই ট্রেনিং এ জীতে গেলেন।শয়তান মারতে হলে শয়তান হতে হয়।
– তারমানে কি আপনিও শয়তান? আমি তো আপনার সাথেও শয়তানি করলাম।
– হাহাহা,আপনি ভালো জোক্স বানাতে পারেন।
– কোন এঙ্গেল থেকে জুকার দেখাচ্ছে আমাকে?
– না,তা কবে বললাম?
– তো আমার কথায় দাত কেলাচ্ছেন কেনো।
– হাহাহা,আপনার সাথে কথা বললেই হাসি পায়। যাইহোক, বাদ দিন। এইবার শান্ত গলায় বলুন আপনার কি কি জানতে ইচ্ছে।
– আগে বলুন আমি কোথায়।
– ডিওএমএম এর ল্যাবে!
– কি বললেন,ডিওমেম?
– আরে না,ডিওএমএম।
– হুম,ডিয়াইওমওম।
– বাদ দিন।ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।
– এইটা কিসের ডিওমেম? এমন অদ্ভুত নাম কেনো এইটার?
– এই ল্যাব হচ্ছে অশুভ শক্তির বিনাশ কারির বাসা। তুমি এখন ল্যাবে আছো। এই রাজ্য অনেক বড়। সব ঘুরে দেখাবো পরে।
– মাথায় ঢুকছেনা একটা বিষয়। আমাকে কেনো এখানে এনেছেন।আর আমার দেহ এতো মজবুত হলো কিভাবে?
– শুধু তুমিই নও।তোমার মতো অনেক এজেন্ট আছে এই ডিওএমএম গ্রুপে।
– ডিওমেম গ্রুপের এজেন্ট হলাম কবে?
– আপনি নামটিও ঠিকমতো বলতে পারছেন না। আপনাকে আসল রহস্য বলি। এই ডিওএমএম মানুষের উপকারে কাজ করে। অন্যায়ের বিচার করে। আইন আদালত কিছুই মানেনা ডিওএমএম। আমাদের এই গ্রুপ অনেক শক্তিশালী।
– তারমানে মেহেদি, মেঘা,রশনী, সুমাইয়া আরো কে কে জেনো,তাদের আপনারা মেরেছেন?
– হুম,রাকিব আর শুভও কাল রাতে মৃত্যুবরণ করেছে।ওরা পাপ করেছে,আমরা শাস্তি দিয়েছি।
– ও আচ্ছা? তাহলে আপনাদের ইশারায় হচ্ছিলো সব?
– না,পাপ মানুষ নিজের ইচ্ছায় করে।আর শাস্তি আমরা নিজের ইচ্ছায় দেই। আপনার বন্ধুরা আপনাকে ডেকে আরো বড় ভুল করেছে। আপনাকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছিলো। কিন্তু ওদের জন্য আপনি আমাদের খুব কাছে চলে এসেছিলে।যার জন্য আপনার ট্রেনিং পুরোপুরিভাবে দেওয়া হয়নি।এখন থেকে আপনাকে এখানে ট্রেনিং দেয়া হবে।
– ট্রেনিং দিচ্ছিলেন আমাকে? তারমানে আমাকে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার রহস্যটা এই ডিওমেম করেছে?
– আপনি আবারো ভুল নাম উচ্চারণ কেনো করছেন?
– জিলাপির মতো একটা নাম দিয়েছেন।এইটা মুখ দিয়েও বের হয়না।আর কোনো নাম খুঁজে পাননি?
– হাহাহা,আচ্ছা বাদ দিন।হ্যা,আপনাকে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়াটা আমাদের ইশারায় হয়েছিলো।ট্রেনিং ছিলো।যেখানে আপনি সফল হয়েছেন।
– আর রশনী নামক সেই মেয়েটি?
– সেও আমাদের এজেন্ট। মিথ্যে বলেছিলো আপনাকে।সে এখানেই আছে।তাকে আপনার সাথে পাঠিয়েছিলাম যাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।কিন্তু মিশন শেষে সে নিজেই অবাক হয়ে এসেছে।আপনার দানবীয় রুপ দেখে।
– অর্থাৎ আমি সত্যি সত্যি দানব হয়েছিলাম?
– ল্যাবে আপনার পুরো শরীরের কাজ হয়েছে।আগে আপনি দানব হলে,সে অবস্থায় কি ঘটে না মনে রাখতে পারতেন না।এখন আপনি সব মনে রাখতে পারবেন? আপনার দেহ গ্রিণু ধাতু দ্বারা কাজ করা হয়েছে। যাতে সহজে দেহ ক্ষত না হয়।
– আপনার নাম কি?
– ডক্টর এস্টুম্যান।
– একেক নামের চেয়ে একেক নামের কি বাহার।
– হাহাহা।
– আমি রাজ্য ঘুরে দেখতে চাই।

রিয়াজকে ডক্টর এস্টুম্যান ল্যাবের বাহিরে নিয়ে আসেন। রিয়াজ রুম থেকে বের হয়ে দেখে,একটা দ্বীপের পাড়ে এই রাজ্য। পিছনে ইয়া বড় পাথরের পাহাড়।পাথরের সাথে মিশ্রণ এই রাজ্য।সামনে হচ্ছে সাগর। রিয়াজ চারপাশে দেখতে দেখতে খেয়াল করে সাগরের মাঝে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। তৎক্ষণাৎ রিয়াজ ডক্টর এস্টুম্যানকে বলে।
– দেখুন, সাগরের মাঝে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনার চোখে ধ্রুবুল্যান্স লাগানো হয়েছে।দূরের বস্তু একমাত্র আপনিই দেখতে পারবেন স্পষ্ট। আমাদের সাধারণ চোখে দেখা যাবেনা। দাঁড়ান আমি যন্ত্রটা নিয়ে আসি। দেখি আপনি কাকে নোটিশ করলেন।

ডক্টর ল্যাবে গিয়ে বের হয় ২ মিনিট পর। এরপর হাতে করে একটা যন্ত্র নিয়ে আসে। একটা ক্যামেরা। লাঠির মতো তার আকার। ডক্টর এস্টুম্যান তা চোখের সামনে এনে দেখতে লাগলেন। হুট করে তিনি রিয়াজের হাত ধরে বললেন,
– ও মাই গড । আমাদের ডিওএমএম এর লোকেশন পেয়ে গেছে সে। জলদি চলুন।তাকে আটকাতে হবে। আর আপনাকেও লুকাতে হবে। আপনার ট্রেনিং শেষ হয়নি এখনো। পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত না আপনি।
ডক্টর এস্টুম্যান রিয়াজের হাত ধরে দৌড়াতে লাগলো রুমের দিকে। রিয়াজও উনার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে। দেওয়ালের একটা লাল সুইচে চাপ দিলেন ডক্টর এস্টুম্যান। তখনি দেওয়াল দুই ভাগ হয়ে একটা সুরঙ্গ তৈরি করে। রিয়াজকে নিয়ে ভিতরে নামতে লাগলো ডক্টর এস্টুম্যান। পুরো রাজ্যে একটা রেড সিগন্যাল দিচ্ছে। রাজ্যের বাকিরা প্রস্তুতি হচ্ছে যুদ্ধের জন্য। রিয়াজকে নিয়ে ডক্টর এস্টুম্যান রাজ্যের নিছে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটায় অনেক কম্পিউটার। বাহিরের সিসিটিভি ফুটেজের সকল ইনফরমেশন এখানে জমা হয়। ডক্টর এস্টুম্যান সব কম্পিউটার চালু দিয়ে চেয়ারে বসে।কম্পিউটারে রিয়াজ দেখতে পায়,রাজ্য থেকে একটা যান্ত্রীয় রোবট, অর্থাৎ তাকে যারা হোস্টেল থেকে এনেছিলো।তারা উড়ে উড়ে যাচ্ছে সাগরের দিকে।কিছুক্ষন পর পর সাগরে বিস্ফারণ হয়। অর্থাৎ ডিওএমএম এর রোবট গুলো পেতে উঠেনা অদ্ভুত সেই মানবের সাথে। কিছুক্ষন পর সাগরে থাকা সেই মানব দ্বীপে চলে আসে। গায়ে কালো একটা সুট।বুকের মধ্যে যান্ত্রীয় একটা মেশিন।যার দ্বারা সে বুলেট নিক্ষেপ করে। রাজ্যের সামনে দ্বীপের উপর লড়াই শুরু হয়। ডিওএমএম এর অনেক সদস্য আহত আর নিহত হচ্ছে। রিয়াজ ডক্টর এস্টুম্যান এর দিকে তাকিয়ে আছে।উনাকে বেশ চিন্তিত দেখা যাচ্ছে। রিয়াজ আবার কম্পিউটারে তাকায়।দেখতে পায় রশনী এগিয়ে যাচ্ছে শত্রুর দিকে। রশনীর গায়ে অদ্ভুত পোষাক।লাল রঙ্গের টাইট একটা জামা। দেখতে তাকেও যান্ত্রীয় মানব মনে হয়। শত্রুর কাছাকাছি গিয়ে রশনী একটা তলোয়ার বের করে। সোজা গিয়ে শত্রুর বুকে তলোয়ারের চিহ্ন বসিয়ে দেয়। যান্ত্রীয় মানবটা তলোয়ার থাকা অবস্থায় বুক থেকে আগুনের একটা গোলা ছুড়ে দেয় রশনীর দিকে। ফায়ার বুলেটের আঘাতে রশনী ছিটিকে পড়ে দ্বীপের পাশে। ডক্টর এস্টুম্যান কপালে হাত দিয়ে উহ করে শব্দ করে। এরপর রিয়াজকে কিছু বলার জন্য তাকিয়ে দেখে,রিয়াজ রুমে নেই।

ডক্টরর এস্টুম্যান ভয় পেয়ে যায়।রিয়াজ গেলো কোথায়।উনিও রুম ছেড়ে ছুটে আসে উপরে। রাজ্যের সামনে আসতেই যান্ত্রীয় মানবটা দেখে ফেলে ডক্টর এস্টুম্যানকে। ডক্টর এস্টুম্যান শত্রুর নাগালে চলে এসেছে।যান্ত্রীয় মানবটার বুক লাল হয়ে আসছে। সম্ভবত ফায়ার বুলেট ছুড়বে এখন ডক্টর এস্টুম্যান এর দিকে। ডক্টরর এস্টুম্যান ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শত্রু হুট করেই ফায়ার বুলেট ছুড়ে মারে ডক্টর এস্টুম্যান এর দিকে। ফায়ার বুলেট ঝড়ের গতিতে ছুটে আসছে এস্টুম্যানের বরাবর। এস্টুম্যান চোখ বন্ধ করে ফেলে।মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। বুলেট এস্টুম্যান এর কাছে আসতেই গায়েব হয়ে গেলো।এস্টুম্যান চোখ মেলে দেখে ফায়ার বুলেট নেই। শত্রু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এস্টুম্যান নিছে তাকিয়ে দেখে,রিয়াজ পড়ে আছে। অর্থাৎ ফায়ার বুলেট রিয়াজ তার বুকে নিয়ে নিয়েছে। ডক্টর এস্টুম্যান আর শত্রু রিয়াজের দিকে তাকিতে আছে। বুলেটের তাপে রিয়াজের শার্ট ছিড়ে যায়। শুয়া থেকে রিয়াজ আবার এক লাফ মেরে দাঁড়ায়। ডক্টর এস্টুম্যান আর রশনী রিয়াজের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। রিয়াজের হাতের পেশিকোষ ভাজ হয়ে গেছে। দেহের পরিবর্তন এসেছে অনেক। দেখতে কোনো শক্তিশালী ফাইটারের মতো দেখাচ্ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে রিয়াজের। মুখ খুলে রিয়াজ বলল,
– আমি বেচে থাকতে ডিওএমএম এর এক ফোটা ক্ষতি হতে দিবোনা।
ডক্টর এস্টুম্যান চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল,
– সাব্বাস,নামটা ঠিক উচ্চারণ করেছেন।
– আগে বলুন আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
– একেবারে হিরো। চলুন লেগে পড়ুন যুদ্ধে।

রিয়াজ এক ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে শত্রুর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কাছাকাছি যেতেই শত্রুটা ঘনঘন ফায়ার বুলেট ছুড়তে লাগলো রিয়াজের দিকে।রিয়াজ ফায়ার বুলেটের আঘাতে উড়ে এসে দ্বীপে পড়ে। রশনী মাথায় হাত দিয়ে বলল, পুরান পাগলের ভাত নেই, নতুন পাগলের আমদানি।
রিয়াজ শুয়া অবস্থায় রশনীর দিকে তাকিয়ে বলল,” খেলা এখনো বাকি”।
রিয়াজ আবার শত্রুর দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। চোখটা বন্ধ করে রিয়াজ ভাবতে লাগলো। যান্ত্রীয় মানবটাও রিয়াজের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রিয়াজের দেহের ঘটন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো।শরীর থেকে লোম গজাচ্ছে। আকারে বড় হতে লাগলো সে। দানব রুপে পরিণত হতে লাগলো রিয়াজ। হুট করে চোখ মেলে রিয়াজ এক ভয়ংকর গর্জন আর ভয়ংকর চাহনি নিয়ে ছুটতে লাগলো শত্রুর দিকে। শত্রুটা রিয়াজের এমন দানবীয় দেহ দেখে নিজেই ভয় পেয়ে যায়।রিয়াজের ভয়ংকর চাহনি যেনো শত্রুটাকে ঘায়েল করে ফেলছে।শত্রুটা ফায়ার বুলেট ছুড়ে মারে রিয়াজের দিকে। রিয়াজ দানবীয় হাত দিয়ে বুলেটে উল্টো ঘুষি মারতে লাগলো। বুলেট ছিন্নভিন্ন হয়ে আশেপাশে ছিটকে পড়ছে।
এক লাফ দিয়ে রিয়াজ যান্ত্রীয় মানবটার মুখে ঘুষি মারে। উড়ে গিয়ে শত্রু দ্বীপের কিনারায় ছিটকে পড়ে।এরপর রিয়াজ আবার এক লাফে তার কাছে চলে যায়। শত্রুটা ভয়ের চোখে ভয়ংকর চাহনির দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ শত্রুর বুকে এক ঘুষি দিয়ে যন্ত্রটা ভেঙ্গে ফেলে। নষ্ট হয়ে যায় মেশিন। শত্রু ধীরে ধীরে স্থির হতে লাগলো। রিয়াজ এক হাতে শত্রুর মাথা ধরে,অন্য হাতে শত্রুর পা ধরে এক টানে দুই টকরো করে ফেলে। শেষ হয়ে যায় শত্রু। রিয়াজ উপরের দিকে তাকিয়ে এক ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে বসে পড়ে। আবার দেহ ধীরে ধীরে মানুষের রুপে ফিরে আসতে লাগলো। কিছুক্ষন পর নিজের রুপে এসে হাটু গেড়ে বসে পড়ে রিয়াজ।

– আহ কি ব্যাথা, মাগো।
– কেমন অনুভব করছেন মিস্টার রিয়াজ?
– ক্লান্ত লাগছে।
– ট্রেনিং এর আগে যুদ্ধে নেমেছেন। ভালোই যুদ্ধ করেছেন ট্রেনিং ছাড়া।
– রশনী কোথায়?
– অন্য ল্যাবে চিকিৎসা চলছে। আমাদের ৩৬ জন এজেন্ট আহত আর ৭ জন নিহত হয়েছে।সবাই আপনার তারিপ করছে।
– তাদের সাথে দেখা করতে চাই আমি।
– এখন আপনার বাড়ি ফেরার সময়।আপনার মা খুব চিন্তিত আছে।তিনি আপনার অপেক্ষায় আছেন।
– সত্যিই তো? মায়ের সাথে দেখা করা জরুরী আমার।
– আমাদের আকাশযান যন্ত্র দিয়ে আপনাকে দিয়ে আসবো একটু পর।আগে বিশ্রাম নিন।
– আমি ঠিক আছি। চলুন রওনা দেওয়া যাক।
– আপনার মর্জি।

ল্যাব থেকে বের হয়ে ডক্টর এস্টুম্যান রিয়াজকে ছাদে নিয়ে যায়। এরপর উনার পকেট থেকে একটা খেলবা প্লেন বের করে। রিয়াজ বলল,
– বাচ্চাদের মতো খেলতে ভালোবাসেন নাকি।
ডক্টর এস্টুম্যান মুচকি হেসে প্লেনটার উপরে একটা সুইচে চাপ দেয়।সাথে সাথে প্লেনটা শব্দ করতে লাগলো। এস্টুম্যান প্লেনটা ছুড়ে মারলো সামনে।আর সাথে সাথে প্লেনটা গোল একটা প্লেনের মতো হয়ে যায়। ডক্টর এস্টুম্যান বলল,
– চলুন,যাত্রা শুরু করা যাক।
– আরো কতো কি যে দেখবো।

প্লেনে উঠার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ডক্টর এস্টুম্যান বলল,
– নামুন।
– কেনো।যাবেন না?
– চলে এসেছি।
– কোথায়।
– আপনার বাসার ছাদে।
– এ! এতো তাড়াতাড়ি?
– ডিওএমএম আপনাকে আরো অনেক কিছু দেখাবে।আর হ্যা,আপনি প্রস্তুতি নিন পরবর্তী মিশনের জন্য।
– কিসের মিশন?
– আমাদের ডিওএমএম এর হাত অনেক লম্বা। কিছুক্ষন আগে খবর এসেছে মালদ্বীপ থেকে আমাদের ৬ জন এজেন্ট নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা অনেক অদ্ভুত যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারে।আর আমি জানি কে নিয়েছে তাদের। ডিওএমএম এর একজন শত্রু আছে। যে গত ৩২ বছর ধরে আমাদের শেষ করতে চায়। আমরা অশুভ রহস্য( evil mystery) বিনাশ করি। আর তারা শুভ শক্তিকে বিনাশ করতে চায়। তাদের মেইন লিডারকে আজ অব্দি কেও দেখেনি। সে কোথায় থাকে,তাও কেও জানেনা। তার নাম ব্লাক ডেভিল। আজকে যার সাথে যুদ্ধ করেছেন,সে তার একজন পহরি।এইবার বুঝুন সে কতটা শক্তিশালী। ৫ দিন পর আপনাকে আবার নিয়ে যাবো আমরা। ডিওএমএম এর মেইন সদস্যরা মিলে মিটিং বসাবে সেদিন।তখন আপনাকে সকলের সাথে পরিচয় করানো হবে। আর আমাদের সেই ৬ জন নিখোঁজ হওয়া এজেন্টকে উদ্ধার করতে যেতে হবে আপনাকে।
– আমি পারবো?
– আপনার বাবা কে ছিলো জানেন?
– জন্মের পর আমি কোনোদিন বাবাকে দেখিনি।
– উনিও আমাদের ডিওএমএম এর সদস্য ছিলো।
– মানে?
– পরের বার সব জেনে যাবেন।নামুন,অনেক্ষন কথা বলে ফেলেছি।

রিয়াজ প্লেন থেকে নামতেই প্লেনটি চোখের পলকে হারিয়ে যায়। রিয়াজ রুমে এসে দেখে তার আম্মু ঘুমাচ্ছে। মায়ের পাশে গিয়ে রিয়াজ উনার কপালে একটা চুম্বন একে দেয়। এরপর নিজের রুমে চলে আসে।

৫দিন পর….
ছাদে রিয়াজ সিগারেট জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । হটাৎ চারপাশে বাতাস বইতে লাগলো। রিয়াজ বুঝতে পেরেছে ডক্টর এস্টুম্যান চলে এসেছে।কিছুক্ষন বাদেই ছাদের কিনারা থেকে এস্টুম্যান এর আওয়াজ।রিয়াজ সিগারেট ফেলে এস্টুম্যান এর দিকে এগিয়ে যায়।এরপর সোজা প্লেনে উঠে পড়ে। বের করতে হবে ব্লাক ডেভিলকে।উদ্ধার করতে হবে ৬জন এজেন্টকে।নিজের এই শক্তি আর তার বাবার ব্যাপারেও জানতে হবে। এই ৫ দিনে মেঘা রিয়াজকে অনেক কিছু বলেছে। ডক্টর এস্টুম্যান সুইচ চাপ দিতেই একটা যান্ত্রীয় মেয়ের ভয়েজ শুনা গেলো,

Now it’s time to fly, get ready 3…2…1… go…..

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here