#অবন্তর_আসক্তি
#৫ম_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_________
নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হাত চেপে ধরেছে বলে, হাতের কব্জি লাল হয়ে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে ব্যথায় কোঁকড়াবে তারও জো নেই, হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রেখেছে। আমার দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত কটমট করতে করতে কর্কশকন্ঠে বলল, ‘ আমার ডালের বাটিটা তে ইচ্ছে করে অতিরিক্ত লবণ মিশিয়ে ছিলি তুই যাতে আমি খেতে না পারি। কেন মিশিয়ে ছিস বলছিস না কেন? এখনও চুপ করে আছিস। ‘
ইচ্ছে করতাছে এখন উনাকে বিড়ালের ছাও এর মতোন ঘাঁড়টায় ধরে বারান্দা থেকে নিচে ফেলে দিতে, আজব ব্যাপার হাত দিয়ে মুখ চেপে রেখেছে অথচ উল্টো রাগ দেখিয়ে কথা বলতে বলছে। আজব না, মুখে হাত দিয়ে রাখলে কথা বলে কিভাবে মানুষ। আমি মানুষ ভূত পেত্নী তো নই না যে কথা বলবো৷ চোখ জোড়া খিঁচে ছোটো-ছোটো করে নিলাম। ইচ্ছে করছে হাতে তার কামড় বসিয়ে দিতে, কিন্তু ভয় হচ্ছে যদি উল্টো হাতে থাপ্পড় মারে। অভ্র ভাইয়া আমাকে অবাক করে দিয়ে আবারও বললেন, ‘ অসভ্য জংলী মেয়ে কথা বলছিস না কেন বেয়াদব৷ ‘
এতগুলা ফাউ কথা আমাকে বলল। যা কান দিয়ে শোনার পর আর ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। হাতির মতো একটা শরীর লম্বা তো লম্বাই ছয় ফুট তো হবেই আর নয়তো একটু বেশি হবে। গায়ের রং ফর্সা চোখ দুটো হরিণের চোখের মতো তবে চোখের মনি ব্রাউন কালার। চুলগুলো বেশ লম্বা লম্বা জুটি বাধা যাবে এমন। হাল্কা চাপ দাঁড়ি আছে, পরণে এশ কালারের শার্ট। শার্টের স্লিভ ভাজ করে কনুই পর্যন্ত উঠিয়ে রেখেছে। পুরো মুখ ভর্তি মায়া জুড়ানো এত কিউট সুদর্শন হ্যান্ডসাম ছেলে হয়। অভ্র ভাইয়াকে না দেখলে জানতামই না। আমি তো উল্টো ভাবতাম বাংলাদেশে কোনো কিউট পোলাই নাই। কিন্তু অভ্র ভাইয়া আমার ভাবনার থেকেও বেশি সুন্দর। তাকে প্রথম বার দেখে প্রেমে পরবে না এমন মেয়ে বোধহয় কমই আছে। মনের মধ্যে খুদখুদ করছে না জানি এর কত্তোগুলা গার্লফ্রেন্ড আছে। হুদ্দাই কি সব আজাইরা উদ্ভুত চিন্তা ভাবনা করছি আমি ভাবতেই নিজের উপর রাগ হচ্ছে। উনি ভাই ভাইয়ের মতো থাকুক না। এত সাহস হয় কি করে আমার এত কাছে আসার? বুঝাই যাচ্ছে ওনার শক্তির সাথে আমি পেরে উঠবো না। অতএব যা করতে চাইনি তাই করতে হবে। আমার খোলা হাত দিয়ে তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আমার দাঁত ঢাবিয়ে দিলাম। উনি মুখ দিয়ে ‘আহ’ শব্দটি উচ্চারণ করে আমাকে ছেড়ে দেয়। দুই পা পিছিয়ে গিয়ে এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে ঢলতে ঢলতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ডাইনি, রাক্ষসী জীবনে মাংস খাসনি নাকি? ‘
আমি ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে অপলক চাহনিতে চাহিয়া রইলাম। মনে মনে নিজেই নিজেকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়লাম, ‘ আজব ব্যাপার আমি কি করলাম? ‘
অভ্র ভাইয়া হাত ঢলাঢলি শেষ করে সামনে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো। পুরো রুমে চোখ বুলালো পরক্ষণেই নিজের মাথায় হাত দিয়ে অন্য মনস্ক হয়ে বলল, ‘ সত্যিই কি ভূত বা পেত্নী নয়তো গেলো কোই? ‘
রুমে কোথাও আমাকে দেখতে না পেয়ে সেও আর এক মিনিট আমার রুমে দাঁড়ালো না। উনি চলে যেতেই আমি আলমারির পেছন থেকে বেরিয়ে আসলাম। আমার রুমে আলমারির পেছনে অনেকখানি জায়গা ফাঁকা রয়েছে সেখানে অনায়াসে আমি ঢুকতে পারি আর বেরোতে পারি। অতিরিক্ত ফাজলামো করার পর লুকাতে হলে এখানেই লুকাই তৎপর কেউ খুঁজেও পায় না৷ আলমারির পেছন থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলাম রুমের বড় আয়নার সামনে আয়নাতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে ইচ্ছে করছে আয়না টাই ভেঙ্গে ফেলতে, আমার লিপস্টিক পুরো ছিদ্রে ফেলছে। কেমন ডা লাগে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক তার হাতের তালুতে তে উফফ। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ওয়ারড্রপের উপর থেকে টিস্যু বক্স টা হাতে নিয়ে নিলাম। এক এক করে তিনটা টিস্যু বের করে ঠোঁটে কষতে লাগলাম। পেছন থেকে রিয়া বলে উঠল, ‘ ঠোঁটের সাথে এত যুদ্ধ করছিস কেনো? ‘
আয়নাতে রিয়ার পানে এক নজর তাকিয়ে বললাম, ‘ দেখছিস না লিপস্টিক উঠাচ্ছি ‘
রিয়া বিছানার উপরে বসে পরল। বালিশের উপর থেকে হাত দিয়ে নিজের ফোনটা নিয়ে বলল, ‘ তা শুধু লিপস্টিক তুলতে এত প্যাড়া দিচ্ছিস তোর ওই নরম নরম গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট গুলোর উপরে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেললেই তো পারিস। ‘
রিয়ার কথা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। যা বলেছে মন্দ বলেনি। এখন নিজের উপর আরও রাগ হচ্ছে গষতে গষতে ঠোঁট গুলোর অবস্থা কি করেছি আমি ইশশ। ঠোঁট জোড়া ভাজ করে টিস্যু বক্স রিয়ার দিকে ছুঁড়ে মারলাম। আর আমি এক দৌড়ে চলে আসলাম ওয়াশরুমে। রিয়া ওয়াশরুমের দরজায় থাণ্থি মেরে বলল, ‘ তুই বের হবি না তখন দেখিস আমি তোর কি অবস্থা করি। ‘
আমি ওয়াশরুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চ স্বরে কতক্ষণ হাসতে লাগলাম। ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে আসি। বিছানার উপর ধপ করে শুয়ে পরলাম। শরীর বিনা কারণেই আজ অনেক ক্লান্ত লাগছে। বিছানার সাথে গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে পারি বসালাম। আমি ঘুমিয়ে গেলে আমাকে কেউ ভুলেও ডাকতে আসে না। আমার ঘুম যখন পরিপূর্ণ হবে তখন আমি নিজ থেকেই উঠি, আধঘুমা রইলে আমার মেজাজ প্রচুর খিটখিটে হয়ে যায়।
ঘুম ভাঙ্গে বিকেল পাঁচ টার দিকে এর মধ্যে কেউ আমাকে ডাকতে আসেনি। হয়তো বা এসেছিল ঘুমন্ত দেখে চলে গেছে। ঘুমের মধ্যে অনুভব করছি কিছু একটা আমার শরীরে হাঁটছে। স্বপ্ন ভেবে পাত্তা দেইনি কিন্তু সেটা এখন বেশি রকম অনূভব হচ্ছে। সইতে না পেরে চোখ খুলে তাকালাম আর এত্তো এত্তো জোরে চিৎকার দিলাম, ‘ ইন্দুররররর ‘ বলে।
বিছানার উপর থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে পরলাম। আমার একটু নাড়াচাড়াতেই ইন্দুর টা একটু দূরে চলে যায়। আর যখন চিৎকার দিয়ে খাট থেকে নিচে নামি তখন সেও মুখ দিয়ে শব্দ করতে করতে কোথায় জেনো চলে গেলো।
রুমের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছি। বুকের মধ্যে এখনো ধুকপুক করছে এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত বুকের উপর রেখে নিঃশ্বাস ফেলছি। কিছুক্ষণ নিরব থেকে পরে নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম। ‘ আল্লাহ, ভাগ্য ভালো কেউ দেখেনি আর নয়তো সবাই জেনে যেতো আমি সামান্য ইঁদুর দেখেও ভয় পাই। এত বছর ধরে নিজের সাহসীকতার ইমেজ এক মিনিটে নষ্ট হয়ে যেতো। ‘
বলতে বলতে চোখ গিয়ে আটকে পরল দরজার সামনে, বুঝি না এই উনার সমস্যা কি সবসময় আমার দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে কেন?
দরজার সাথে হেলান দিয়ে মিনমিন করে হেঁসে যাচ্ছে মনে হচ্ছে জেনো কোনো জোকার দেখছে। উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করতে যাবো এভাবে হাসছে কেন? পরক্ষণে মনে পরে গেলো। আমার নিজেরই করা উদ্ভুত কান্ডটি। গায়ে তখন ওড়না ছিল না। বিছানা থেকে নামার সময় গায়ের কাঁথা নিয়েই লাফ দিয়ে নেমে ছিলাম। কাঁথা টেনে নিজেকে ঢেকে নিলাম। কি বলবো বুঝতেই পারছি না। লজ্জায় ইচ্ছে করছে খাটের নিচে লুকিয়ে পরতে। অসভ্য ছেলে এখন শব্দ করে হেঁসে যাচ্ছে। সে হাসি থামিয়ে কোনোরকমে বলল, ‘ তুই ইঁদুর দেখে এভাবে চিৎকার করলি। ও মাই আল্লাহ,’ হাসতে হাসতে সে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে ফেলছে তবুও সে হাসছে। ইচ্ছে করছে, কি ইচ্ছে করছে সেটাও জানি না। দুই মিনিট পর সে বলল, ‘ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। সবাই মিলে বাহিরে যাবো’
কথাটা বলে সে চলে গেলো আমি তার দিকে না তাকিয়েই মুখে ভেংচি কাটলাম, গায়ে মুড়ানো কাঁথার দিকে চোখ পরলে আমার স্মৃতি শক্তি লোভ পায়। আমি শোয়ার সময় আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি কোনো কাঁথা নেইনি। তাহলে ঘুমানোর পর কাঁথা দিয়েছে কে? আম্মু নাকি রিয়া না অন্য কেউ? আর অন্য কেউ হলে সে অন্য কেউ টা কে? ভাবতে ভাবতেই কাঁথা টা বাজ করে বিছানায় পায়ের দিকটায় রেখে দিলাম। মাথার দিকটায় গেলাম আমার ওড়নাটা নেওয়ার জন্য, ওড়না টা হাতে নিতে যাবো তখন খেলাম ৪৪০ বোল্টের শকট। আমার বিছানায় আমারই বালিশের পাশে একটা ডেইরি মিল্ক চকোলেট রাখা। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে কে রাখল এই চকোলেট বাড়ির সবার জানা আমি চকোলেট মোটেও লাইক করি না। খাওয়া তো দূরের কথা। চকোলেট টা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলাম। তারপর বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। পাঁচ মিনিট লাগল আমার রেডি হয়ে নিচে আসতে, নিচে এসেই আমি চকোলেট টা সবার সামনে মরিয়মকে দিয়ে দিলাম। তাতে অবশ্য কেউ-ই আপত্তি জানালো না। আমার মাথায়ও ঢুকলো না আসলে চকোলেট টা কে এনেছে আর কার জন্য এনেছে?
চলবে?
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)
(ভুলক্রটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এতএত লেখার মাঝে ভুল হওয়া টাই স্বাভাবিক)