অবন্তর আসক্তি পর্ব ৬

0
717

#অবন্তর_আসক্তি
#৬ষ্ট_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_______
তার দৃষ্টিতে বিস্ময় স্পষ্ট রিয়া কপাল চাপড় মেরে বর্ষার সামনে গিয়ে বলল,

‘ বাহ! এক জনের চকোলেট আরেকজনকে দিয়ে দিচ্ছিস। ‘

রিয়ার কথায় কুঞ্চিত ভ্রু কুঁচকালাম, অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম,

‘ চকোলেট তো আমি খাই না তাই মরিয়ম কে দিয়ে দিলাম। ‘

রিয়া এক শ্বাস ফেলে বলে উঠল,

‘ তোকে কে বলছো চকোলেট টা তোর খাওয়ার জন্য কেউ আনছে? ‘

‘ আমার রুমে বালিশের উপরে ছিল, ‘

‘ তোর রুমে ছিল মানে কি চকোলেট টা তোর জন্য রাখা? ‘

‘ যা বলবি সোজাসাপটা বল, কথা পেঁচাচ্ছিস কেন? ‘

‘ চকোলেট টা রিমার তুই জানিস রিমা যদি দেখে ওর চকোলেট তুই মরিয়ম কে দিয়ে দিছিস৷ তোর ১২টা রেখে ১৩টা বাজিয়ে দিবে! তুই ভালো করেই জানিস রিমা সবকিছু সবার সাথে শেয়ার করলেও চকোলেট কারো সাথে শেয়ার করে না। আর তুই ভাবলি কেমন করে তোর জন্য কেউ চকোলেট রাখবে? আমাদের বাড়ির বাহিরে পর্যন্ত সকলে জানে তোর আইসক্রিম পছন্দ। তারপরেও কি ভেবে মনে করেছিস চকোলেট টা তোর জন্য কেউ রাখছে? ‘

পাশ থেকে কেউ চেঁচিয়ে ধমকের স্বরে বলে উঠল,

‘ What the! তোরা এখনো গাড়িতে উঠছিস না কেন? ‘

চোখ দু’টো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে, রাগি চোখে পাশে লোকটার দিকে তাকালাম। সে আমাকে দেখে বলল,

‘ খবরদার আমার দিকে ওইভাবে তাকাবি না। তোর চোখ দেখলে মনে হয় তোর চোখ দুইটা বাহির করে গুলি খেলি। ‘

‘ What the ফাউ কথা ‘ তার মুখের উপর চেঁচিয়ে বললাম, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না, সে তার কথা শেষ করে হাঁটতে লাগল। পেছন থেকে আমি যে কিছু বলেছি আধোও শুনেছে কিনা সন্দেহ। তবে বয়ড়া না হলে ঠিক শুনেছে।

রিয়া পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার হাতে গুঁতো দিয়ে বলল,

‘ What the তো অভ্র ভাইয়ার ডায়লগ, সেটাতে তুই আবার ফাউ কথা জুড়ে দিয়ে তোর বানিয়ে নিলি তাকে ‘

‘ তাকে মানে? ‘

‘ না মানে ওই ডায়লগ টা কে? ‘ রিয়া বলল

‘ তোর মাথা ‘ রাগের মাথায় এইটুকু বলতেই হলো।

খুঁজতে লাগলাম মরিয়ম কে, চকোলেট পেয়ে না জানি কোথায় চলে গেছে, ‘ আল্লাহ মালুম। ‘

ও যদি প্যাকেট ছিঁড়ে খেয়ে ফেলে, তাহলে রিমা আমাকে কাচ্চা চিবিয়ে খাবে। আমার মাথায় কেন আসলো না। আমাদের বাড়িতে চকোলেট পাগলি আছে রিমা উফফ, আমার মাথায়ই তখন আসেনি। আর আমি জানতাম নাকি রিমা আজকে বাড়িতে আসছে, এক মিনিট রিমা আসছে মানে বৃষ্টি ও আসছে, কিন্তু দু’জনের একজনও আমার সাথে দেখা করেনি কেনো। ‘ ইহা একটি বিগ বিগ প্রশ্ন ‘
কাউকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। অবশেষে মাথায় আসল রিমাকে কল দেওয়ার কথা, ফোন হাতেই ছিল, ডায়ালে রিমার নাম্বার ছিল তাই খুঁজতে হয়নি। কল দিলাম দুই বার কেটে গেলো, তৃতীয় বার কল রিং হতে রিসিভ করলো, ফোনের অপরপাশে রিমার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম, হচ্ছে টা কি? রিমা বাজারে কি করছে?
_______
রিমার কথা শুনে শরীর খারাপ হয়ে গেলো। ইচ্ছে করছিল না তাদের সাথে আর বাহিরে যেতে তাই যাবো না বলে দিয়েছিলাম। এক বার বলছি যাবো না দ্বিতীয় বার আর কেউ সাধলো ও না তাদের সাথে যাওয়ার জন্য আজব না।

ঘন্টা খানিক পার হয়েগেছে তাদের আসার নামে খবর নেই। আমারও বাড়িতে বোরিং লাগছে, কেউ নেই বলতে আমার সমবয়সী একটাও নেই। আরও কিছুক্ষণ চুপটি মেরে বসে থাকার পর, বিছানার উপর থেকে হাত বাড়িয়ে স্মার্ট ফোনটা নিলাম। হোয়াটসএ্যাপে গিয়ে বাকিদুজন মাহিরা আনিতা দু’জনকে কল দিলাম। একে একে দু’জনেই কলে জয়েন্ট হল, তাদের সাথে কথা বলে বুঝলাম তারাও রুমে বসে থেকে বোর হচ্ছে। কি আর করার? তখন তাদের সাথে গেলেই ভালো হতো। তিনজনে মিলে প্লান করলাম বাহিরে ঘুরতে বের হবো। আধ ঘন্টার মতো৷ সময় লাগে আমাদের রেডি হতে। তারপর বাড়ি থেকে আম্মুর কাছে বলে বের হয়ে যাই। ওরা অনেক আগেই এসে বসে আছে আমাদের আঙিনায়। আমারই যা সময় লাগলো, আর সময় লাগবেই না কেন এত কষ্ট করে শাড়ি পরেছি সময় তো লাগবেই। তিনবার খুলেছি চতুর্থ বার গিয়ে ঠিকঠাক ভাবে পরতে পেরেছি।
নীল পাইরের শুভ্র সাদা রঙের শাড়ি, আঁচল একটু বড় হওয়ার জন্য মাটিতে হেঁচড়ে পরছে, শাড়ির সাথে হাই হিল না পরলে চলে? মোটেও না, দুই হাতে সাদা কাঁচের চুড়ি, চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছি। কারণ আমার খোলা চুলই ভালো লাগে।
আনিতার সামনে আসতেই একজন দূর থেকে আমার উপর থুথু দেওয়ার ভান করে বলল, ‘ কারো নজর জেনো না লাগে? ‘

সেইম কাজটা মাহিরাও করল কিন্তু কিছুটা ভিন্ন, মাহিরা আমার চোখের গাঢ় কাজলে আঙুলের তর্জনী স্পর্শ করে কানের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ কারো নজর জেনো না লাগে ‘

এই কাজল দিয়ে নজর না লাগে এই পক্রিয়া টা কিছুক্ষণ আগে আম্মু ও করেছিল, যখন চলে আসছিলাম পিছু ডেকে নিজের চোখের কাজলের থেকে কাজল হাতে ছুঁইয়ে আমার কানের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে বলে। পরপর তিনজনে বলেছে, নজর জেনো না লাগে। আমার তো মনে কুকু ডাকছে নিশ্চয়ই আজ কারো না কারো নজর লাগবে তো লাগবেই।

আর এক মিনিটও দাঁড়ালাম না দু’জনের কপালে টুকো দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা বাজারের দিকে চলে আসি। এখানে এসে জানতে পারি, উত্তর দিকে মেলা হচ্ছে।
আর কে পায় আমাদের, চলে আসলাম মেলায় কিন্তু যা ভিড় এতে গেলে নিশ্চিন্তে ঠেলা খেতে হবে। তাই মুখ ভাড়ি করে আশে পাশে হাঁটতে লাগলাম। বাহিরের দিক টা তেও অনেক কিছু বসেছে। মাটির তৈরি হরেকরকমের জিনিসপত্র, তার পাশে ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলনা। তার পাশে মেয়েদের জন্য কসমেটিক। এই রাক্ষসী দু’টো কে নিয়ে কোথাও গিয়ে শান্তি পাই না। কোথাও গেলেই খাইখাই করে, এখন তারা হালিম খাবে, উফফ।

দুজনে গরম-গরম হালিম ফু দিয়ে খাচ্ছে আর আমি দারওয়ান এর মতো দাঁড়িয়ে আছি। সবশেষে ওরা বলল, ‘ আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি চল ফিরে চল, মেলা তো তিনদিন পর্যন্ত থাকবে ‘

আমার আর হাঁটতে ভালো লাগছিল না। তাই তিনজনে বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। বাজারে এক দোকান থেকে তিনটা আইসক্রিম কিনে আনলাম। রাস্তা দিয়ে হাটছি আইসক্রিম খেতে যাবো তখন পেছন থেকে একজন এসে ধাক্কা মারে। সজোড়ে ধাক্কা খাওয়ায় আইসক্রিম গেলো মাটিতে পরে, আমিও পরে যেতাম মাটিতে কিন্তু আমি গিয়ে পরি মাহিরার উপরে, তার ফলে আমি তো বেঁচে যাই কিন্তু মাহিরার আইসক্রিম বাঁচে না। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। পাশ থেকে আনিতা বলল, ‘ ওই যে দেখ কালো শার্ট পরা ছেলেটা যাচ্ছে ওটাই তোকে ধাক্কা দিয়েছে। ‘

এক তো ধাক্কা মেরে অন্যায় করেছে আমাদের আইসক্রিম গুলা ফালাই দিছে। দ্বিতীয় তো সরিও বলেনি। শাড়ির কুঁচি এক হাত দিয়ে ধরে কিছু টা উঁচুতে তুলল।

বর্ষা ক্ষিপ্ত হয়ে যায় চোখ রাগে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। কোনো ভাবেই জানতো না নিয়তি কি ঠিক করে রাখছে। বর্ষাকে এখন ডাকাত রাণীর মতো লাগছে।

বর্ষা তেড়ে এসে ছেলেটার শক্তপোক্ত হাত ধরে নেয়৷ নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠাসস করে গালে এক চাটা মেরে বসে।

থাপ্পড় মারার পর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে দেখলে তার চোখ বড়বড় হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এখনই বের হয়ে আসবে। হাত পা কাঁপতে শুরু করে। ছেলেটা চোখে মুখে হাত বুলিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে সকলে প্রায় এদিকেই তাকিয়ে রয়েছে। রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে কটকট করে বলল, ‘ হয়েছে আপনার ম্যাডাম ‘

বর্ষার ভয়তে বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলছে, পেছন বর্ষার বান্ধবী আহিতা ও মাহিরা দু’জন পেছন থেকেই পালালো।

সামনে থেকে কোনো প্রতি উত্তর না পেয়ে আবারও ধমক দিয়ে বলে, ‘ কথা বলছিস না কেন? তুই এখানে কি করছিস? তাও শাড়ি পরে। ‘

আমি ভয়ে ভয়ে মাথা তুলে তার দিকে ভীত চোখে এক নজর তাকিয়ে আবারও চোখ নামিয়ে নেই৷ মাথা নত করে ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বললাম, ‘ বান, বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছিলাম ‘

ভ্রু কুঞ্চিত বাঁকা করে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ কোই তোর বান্ধবীরা? ‘

আমি আবারও তার দিকে এক নজর তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠি, ‘আমার পেছনে ‘

বলে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতে দু’জনের একজন কেও দেখতে পেলাম না। মানে স্পষ্ট, দুজনেই পালিয়েছে। এত রাগ হচ্ছে না আমার ওদের উপর কি বলব কত রাগ হচ্ছে। সিংহের সামনে আমাকে একা ফেলে গেছে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে জমে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছি ছুটে পালাবো কিন্তু তাও পারবো না। কপালের দিকে চুলের গোঁড়ায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জড় হয়েছে।

সামনে থেকে শীতলকন্ঠে কয়েকবার আওতায় দিয়ে তার সাথে যেতে বলল, কিন্তু তাতেও বর্ষার কোনো হেলদোল নেই, সে হয়তো শুনতেই পায়নি। আর উনার এক কথা দ্বিতীয় বলার অভ্যাস নেই৷ বর্ষাকে অবাক করে দিয়ে অভ্র, তারপর দু’জনে রাস্তার পাশে হাঁটতে লাগল। বর্ষা তার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা অনেকবার করেছে প্রতিবারই অভ্র আরও শক্ত করে হাত নিজের হাতের মধ্যে চেপে ধরে।

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here