#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২১)
#নাহার
·
·
·
চারিদিকে সবেমাত্র আলো ফুটেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনা যাচ্ছে। নিরার খুশিতে এমনিতেই রাতে ঘুম হয়নি। এখন পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে গেছে। লাফ দিয়ে উঠে বসে। আজ শুক্রবার। আজকে তাদের ঘুরতে যাওয়ার দিন। আজকে শুধু সে এবং তার ডাক্তার সাহেব মিলে ঘুরবে। পুরোটা দিন। নিরা খুশিতে গদগদ করছে।
বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়িয়েছে। খুশিতে যেনো আজকে তার শীত একদমই লাগছে না। ওয়াশরুমে গিয়ে গরম পানি দিয়ে শাওয়ার নিলো। বের হয়ে এসে রাফিনের কথা মতো নীল সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। দুইহাতে ছয়টা ছয়টা করে কাচের চুড়ি পড়েছে। শীতের চাদর নিয়েছে। কালো চাদর। চুল ছেড়ে দিয়েছে। সবকিছু নিয়ে বের হয়ে গেলো রাফিনের রুমে। রাফিন ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে বিছানায় বসেছে। নিরা রাফিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তুড়ি বাজিয়ে বললো,
— এই যে ডাক্তার সাহেব, এতো দেরি হলে কিভাবে হবে? তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিন। যান।
রাফিন চোখ কচলিয়ে নিরার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,
— আমার আগেই উঠে গেছো?
— শুধু উঠে যাইনি। একেবারে রেডি হয়ে এসেছি। এখন যান তাড়াতাড়ি। দেরি করলে খবর আছে।
— আরেহ বাবা! যাচ্ছি যাচ্ছি।
নিরা ঘাড় ঘুরিয়ে চলে যেতেই ভেজা চুলের ঝাপটা লাগে রাফিনের মুখে। সমস্ত ঘুম উবে গেলো তার। এতোক্ষণ খেয়াল করেনি এখন নিরাকে বেশ খেয়াল করছে। নিরা রাফিনের রুমের পর্দা সরিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুলের পানি চিপে নিচ্ছে। রাফিন মুগ্ধ নয়নে দেখছে নিরাকে। ভেজা চুল, হাতে কাচের চুড়ি, নীল কামিজ বাহ্ মন্দ নয়। বেশ দেখতে লাগছে। নিরা কপাল কুচকে কোমড়ে দুইহাত রেখে রাফিনের দিকে ফিরে বললো,
— এখনো বসে আছেন কেনো? আপনার জন্য যদি এক মিনিট দেরি হয় তাহলে ঝুলন্ত ব্রীজ থেকে পানিতে ফেলে দিবো।
কথাটা বলেই নিরা হনহন করে রুমে থেকে বের হয়ে গেলো। রাফিন হাসলো। মাথা চুলকিয়ে তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।
——————————————————————————–
নিরা-রাফিন ঘরের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। রাফিন নীল শার্ট এবং উপরে কালো জ্যাকেট পড়েছে। তখন সকাল সাতটা। খুব তাড়াতাড়ি বের হয়েছে তারা। প্রথমে যাবে গদখালী ফুলের রাজধানীতে। নিরাদের বাড়ি যশোরের অভয়নগরে। অভয়নগর থেকে প্রথমে যাবে গদখালী বাজারে। সেখানে গেলে ভ্যানে করে তারা ফুলের রাজধানীতে যেতে পারবে। গদখালী ফুলের রাজধানীতে যাওয়ার উপযুক্ত সময় জানুয়ারি। আর এখন যেহেতু জানুয়ারি মাস তাই নিরা ভেবে চিন্তেই বলেছে গদখালী যাবে। বাজার থেকে ভ্যান ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা। গাড়ি দিয়েও যেতে পারতো। কিন্তু গাড়ি নেয়নি। গদখালী বাজার পর্যন্ত টেক্সিতে করে যাবে।
সাড়ে সাতটার মধ্যেই তারা বাজারে পৌছে গেছে। রাফিন ভ্যান ভাড়া করেছে যশোরের বেনাপোল রোড পর্যন্ত। নিরাকে সাবধানে ভ্যানে বসিয়ে রাফিনও বসে নিরার পাশে। ভ্যান চলছে আপন গতিতে। নিরার ভেতরে এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে। ভ্যানে করে যাওয়াতে রাস্তার সবকিছু যেনো উল্টোদিক করে তাদেরকে ফেলে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যেই ভ্যান বেনাপোল রোড ছেড়ে ডানের গ্রামে ঢুকে পড়েছে। কিছুদূর যেতেই দিগন্ত জোড়া ফুলের মাঠ। রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওল্যাস, গোলাপ আর গাদা ফুলের চাষ করা হয় এসব গ্রাম গুলোতে।
ভ্যান খুব জোরে চলায় চারিদিক সবুজ, লাল, সাদা, নীল দেখাচ্ছে। শীতকালে সূর্যের প্রখরতা খুব কমই হয়। গ্রাম এরিয়ার দিকে সূর্য দেখা যেতে সাড়ে এগারোটা-বারোটা হয়। যেহেতু এখন আটটার কাছাকাছি তাই চারিদিকে কুয়াশা। তবে হালকা রোদের আলো ছড়িয়েছে। ফুলের উপর শিশিরের কণা জমে আছে। সূর্যের আলো শিশিরের উপর পড়ায় মনে হচ্ছে হিরার উপর রোদ পড়েছে এমন ঝিলিক মারছে। এরমধ্যেই তারা এসে গেছে ফুলের রাজধানীতে। ভ্যানের ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ফুলের বাগানে ঢুকে পড়ে।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া,মাটিকুমড়া,বাইসা,কাউরা ও ফুলিয়া গ্রামের প্রতিটি মাঠের চিত্রই এমন। শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওল্যাস, রজনীগন্ধা, জারজেবা, কসমস, ডেইজি, জিসপি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করা হয়। এখানে যাওয়ার পর মনে হবে সুন্দর বাংলাদেশের বুকে একটুকরো স্বর্গ। নিরা এখানে এসেই হারিয়ে গেছে। এদিক থেকে সেদিকে ছোটাছুটি করছে। একবার এই ফুল গাছের দিকে একবার ওই ফুল গাছের দিকে। নিরা নিজেই বুঝতে পারছে না কি করবে। হারিয়ে গেছে এই ফুলের রাজধানীতে। আর চারিদিকে রয়েছে ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। এখানে আসার পর যে কেউ ফুলের ঘ্রাণে মাতাল হবে। নিরারও একই অবস্থা।
এছাড়া ফুলের তীব্র সুগন্ধির পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য মৌমাছি-প্রজাপতি উড়ে যাওয়ার দৃশ্য। রং-বেরঙের প্রজাপতি নিরার মন কেড়ে নিচ্ছে। প্রজাপতিরা ফুলের উপর বসলেই নিরা খপ করে তাদের ধরতে চায়। কিন্তু ধরার আগেই তারা উড়ে যায়। নিরার মধ্যে বাচ্চা সুলভ আচরণ আগে থেকেই ছিলো। ফুলের রাজধানীতে এসে বাচ্চা সুলভ আচরণ আরো বেড়ে গেছে। কিছু ফুলের উপর নাক নিয়ে ফুলের সুগন্ধি নিচ্ছে। রাফিন ক্যামেরা বের করে অনেক ছবি তুলে নেয়। আসার সময় ক্যামেরা নিয়ে এসেছিলো। নিরা প্রজাপতিদের পেছনে ছুটতে ছুটতে প্রায় হাপিয়ে গেছে। রাফিন একপাশে বসে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছে সাথে তার প্রেয়সীর ছুটাছুটি দেখছিলো। নিরা হাপিয়ে যাওয়ায় রাফিনের পাশে এসে ধপ করে বসে পড়ে। রাফিন মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
— কি ব্যাপার আমার লাজুকলতা কি খুব হাপিয়ে গেছে?
নিরা মাথা নাড়িয়ে বললো,
— হু।
নিরা রাফিনের গায়ে ঢলে পড়ে। রাফিন ডান হাত দিয়ে পেছন থেকে নিরাকে বুকের সাথে আগলে ধরে। নিরা নিচু আওয়াজে বললো,
— ক্ষিদা লেগেছে আমার। আমি খাবো কিছু।
— আচ্ছা ঠিকাছে। উঠে দাড়াও। বাহিরে গিয়ে দেখি কিছু পাই কিনা।
— হুম।
রাফিন-নিরা দুজনেই উঠে দাঁড়ায়। নিরা রাফিনের ডান হাত জড়িয়ে ধরে হাটছে। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর সেখানে একটা টঙ দোকান দেখতে পেলো। দোকানি এই সকালে দোকান বন্ধ করে কোথায় যেনো যাচ্ছে। রাফিন দোকানিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— মুরব্বি এখানে আপনার দোকান ছাড়া আর কোনো দোকান নেই?
— না বাবা।
— আপনি চলে যাচ্ছেন যে?
— দোকানে খাবার আনতে হবে। বাড়ি থেকে নাস্তা আনতে যাই। এই সময়ে বাড়িতে বানানো নাস্তার পিঠা পর্যটকরা বেশি পছন্দ করে তো তাই।
— ওহ আচ্ছা।
রাফিন আশেপাশে খুজে কিন্তু কিছু পাচ্ছে না। দোকানি রাফিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— বাবা তোমার যদি কোনো সমস্যা না হয় তোমরা দুইজনেই আমার সাথে আমার বাড়িতে গিয়ে নাস্তা করতে পারো।
রাফিন কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর দোকানির সাথে হাটা শুরু করলো। নিরা হাটছে এবং আশেপাশে ভালোভাবে দেখছে। ছোট থেকেই তাদের বিল্ডিংয়ের ভেতরেই থেকেছে। বাহিরে বলতে স্কুল, কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও যায়নি। নিজেদের এলাকায় এতো সুন্দর জায়গা আছে সেটা এখানে না আসলেই বুঝতো না সে। গ্রামের পরিবেশ সে কখনো উপভোগ করেনি। এই প্রথম হাটছে গ্রামের রাস্তায়। হঠাৎ একটা অজানা ইচ্ছা ভর করলো নিরার মনে। নিরা থমকে দাঁড়ায়। রাফিনও দাঁড়িয়ে যায় নিরার সাথে। রাফিন নিরার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হলো?
— আমি জুতা খুলে হাটবো।
— জুতা খুলে হাটবে মানে কেমন কথা?
— প্লিজ ডাক্তার আমি জুতা খুলে হাটি? খুব ইচ্ছে করছে। আপনিও আমার সাথে জুতা খুলে হাটেন।
— জুতা খুলে হাটবো? ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?
— মোটেও না। অনেক ভালো লাগবে। প্লিজ ডাক্তার।
নিরার জোরাজুরিতে রাফিনও বাধ্য হয়ে জুতা খুলে হাতে নেয়। একহাতে জুতা হাতে নিয়েছে। অন্যহাতে নিরার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। দোকানি আগে আগে হাটছে। তবে একটু পর পর পেছন ফিরে তাদের দেখে মুচকি হাসছে। এককালে উনার যৌবনেও হয়তো প্রিয় মানুষটার সাথে এমন সময় পার করেছে তাই।
গ্রামের শিশির ভেজা মাটিতে খালি পায়ে হাটতে তাদের দুজনের সত্যি খুব ভালো লাগছে। মাঝে মাঝে রাস্তায় কিছু ঘাস পড়ছে। খালি পায়ে ঘাসের উপর হাটতেই এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে মনে। শিশিরের পানি যখন পা ছুয়ে দেয় তখন যে ভালোলাগা কাজ করে সেই অনুভূতি বা ভালোলাগা ব্যক্ত করা যায় না। না না কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করে বোঝানো যায় না। একদিকে শিশির ভেজা ঘাস এবং মাটি অন্যদিকে কুয়াশা ভেজা সকাল। প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে দুইটা প্রাণ।
আধ ঘন্টা হাটার পর দোকানির বাড়িতে এসে পৌছালো তারা। রান্নাঘরের পাশে দুইটা ছোট ছোট চৌকিতে বসতে দিলো দোকানি। তাদের দুইজনের পাশে আরেকটা চৌকিতে বসলো দোকানি। দোকানি তার বউকে ডেকে বললো,
— আকবরের মা নাস্তা নিয়ে আসো। সাথে দুই প্লেট বাড়িয়ে আনবে। নতুন অতিথিও এসেছে।
ভেতর থেকে পঁয়ত্রিশ বয়সের এক মহিলা মাথায় ঘোমটা টেনে বেরিয়ে এলো নাস্তার ট্রে নিয়ে। ভদ্রমহিলা ভেতরে যেতে নিলেই উনার স্বামী উনাকেও তার পাশে চৌকি নিয়ে বসতে বলে। তিনিও চৌকি নিয়ে বসেন। সবার হাতে হাতে নাস্তার প্লেট তুলে দেন। নিরার বেশ পছন্দ হয়েছে খাবার। তাই আয়েশ করে খাচ্ছে। রাফিনেরও ভালো লাগছে। সেও তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে আর আড় চোখে নিরাকে দেখছে। মনে মনে বললো,
— কিভাবে বাচ্চাদের মতো করে খাচ্ছে।
মুচকি হেসে নিজের খাওয়ায় মন দেয়। দোকানি এবং তার স্ত্রী এই ব্যাপার খেয়াল করেন এবং তারাও মুচকি হাসেন। দোকানি বললো,
— এই খাবার যশোরে খুব বিখ্যাত খাবার। জামতলার মিষ্টি, খেজুর গুড়ের প্যারা সন্দেস এবং ভিজা পিঠা প্রতিবার শীতকালে পর্যটকদের কাছে খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। শীতকালে এই খাবার খুব চলে।
ভদ্রমহিলা ভেতরে গিয়ে খেজুরের রস এবং ভাঁপা পিঠাও আনলেন। নিরা একটা ভাঁপা পিঠা তুলে নিলো এবং খেজুরের রসে ভরা ছোট বাটি তুলে নিলো। এক কামড় খাওয়ার পর গপাগপ করে দুইটা পিঠা খেয়ে নিলো। এটা দেখে উপস্থিত তিনজন হেসে দেয়। রাফিন মুগ্ধ নয়নে শুধু তার প্রেয়সীকেই দেখছে। রাফিনও একটা ভাঁপা পিঠা নেয় খেজুরের রসে ভিজিয়ে। খুব ভালোই লাগছে খেতে।
খাওয়া দাওয়া শেষে টাকা পরিশোধ করতে চায় রাফিন কিন্তু দোকানি খুব নারাজ। তিনি কিছুতেই তাদের কাছ থেকে টাকা নিবেন না। শেষ পর্যন্ত রাফিন হার মেনে নিলো। নিরা ঘুরে ঘুরে শুধু বাড়িটা দেখছে। টিনের চালে তোলা দৌচালা ঘর। উঠান খুব বড় নয় মাঝারি। কিছু দূরে পুকুর। পুকুরের পাড় বাধানো। অনেকগুলো সিড়ি। ঘরের পেছনে বিভিন্ন গাছগাছালি। নিজের ঘরের থেকে নিরার এখানে বেশ ভালো লাগছে। দূর থেকে যত দূর চোখ যায় শুধু বিল এবং ক্ষেত। নিরার চোখ জুড়িয়ে যায়। নিরা হাটতে হাটতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা দিঘির সামনে এসে দাঁড়ায়। দিঘির পানি কি স্বচ্ছ। কোনো ময়লা নেই। একপাশে কচুরিপানা। নিরা গায়ের চাদরটা ভালোভাবে টেনে দুইহাত বুকে ভাজ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই মনোরম দৃশ্য দেখছে আর মনে মনে ভাবছে,
— কেনো তার এই গ্রামে জন্ম হলো না? তাহলে সারাদিন বিলের পাড়, দিঘির পাড়, গাছগাছালির তলায় ঘুরে বেড়াতো। দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে কুয়াশায় আচ্ছন্ন এক মন্ত্রমুগ্ধকর পরিবেশ দেখতে পাওয়া যায়। আহ্ প্রাণ জুড়ানো এই পরিবেশ। কতটা সহজসরল জীবন জাপন।
নিরা একটা গভীর নিশ্বাস নেয়। পেছন থেকে রাফিন নিরার মাথার উপরে থুতনি রাখে। সেও এতোক্ষণ এই পরিবেশ উপভোগ করছিলো। প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে এমন পরিবেশ উপভোগ করা সত্যি অসাধারণ।
তারা ফিরে আসছে আবার ফুলের রাজধানীতে। নিরা খালি পায়ে হাটছে। রাফিনও জুতা খুলে খালি পায়ে হাটছে। দুইজন হাত ধরে হাটছে। খুব ভালো লাগছে।
ফুল বাগানে ঢুকে নিরা জুতা পায়ে দিয়ে আবার ছোটাছুটি শুরু করে। এই প্রজাপতি গুলোকে দেখে নিরা আর নিজের মধ্যে থাকে না। নিরার ছুটাছুটি দেখে রাফিন এসে নিরার কোমড় শক্ত করে ধরে। নিরা রাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
— এভাবে ধরেছেন কেনো?
— যাতে চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো তাই। নড়বে না একদম।
— হুম।
রাফিন সাদা এবং লাল রঙের দুইটা চন্দ্রমল্লিকা ফুল তুলে নেয় হাতে। সেই ফুল দুইটা নিরার ডান কানের পাশে চিকন ক্লিপ দিয়ে লাগিয়ে দেয়। তাদের কিছুটা দূর থেকেই একজন লোক রাফিনের ক্যামেরা দিয়ে এই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করছে। রাফিনই বলেছে লোকটাকে তাদের ছবি তুলে দিতে।
কিছুক্ষণ আরো ঘুরাঘুরি করে তারা বেরিয়ে পরে সেখান থেকে। এবার যাবে হনুমান গ্রামে। তবে প্রথমে গদখালী বাজারে যেতে হবে। এখান থেকে গরুর গাড়ি ভর্তি করে ফুল নিয়ে যায় বাজারে। নিরা বায়না ধরলো সে গরুর গাড়িতে চড়বে। রাফিন অনেক কষ্টে একটা আধখালী গাড়ি জোগার করেছে। সেটাতে অর্ধেক গোলাপ এবং চন্দ্রমল্লিকা তোলা হয়েছে। খালি জায়গায় নিরা এবং রাফিন বসেছে। গরুর গাড়ি চলছে। নিরা আশেপাশে দেখছে মন ভরে। হঠাৎ রাফিন নিরার হাত ধরে টেনে ফুলের উপর শুইয়ে দেয়।
নিরা কপাল কুচকে তাকায় রাফিনের দিকে। রাফিন আকাশের দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে ইশারায় দেখায় উপরের দিকে তাকাতে। নিরাও উপরের দিকে তাকায়। বেশ অবাক হয়েছে। এভাবে না শুয়ে দিলে হয়তো এই সৌন্দর্য কখনোই তার উপভোগ করা হতো না।
তাদের মাথার উপরে ঘাসফড়িং উড়ছে। দুইতিনটা ঘাসফড়িং গোলকরে উড়ছে। আবার একজন একজনকে ছেড়ে উড়ে যাচ্ছে। আবার দুইটা ঘাসফড়িং একসাথে খেলছে। একে অপরকে ধরার জন্য ছোটাছুটি করছে। তার চেয়ে মনোমুগ্ধকর হলো মাথার উপরে বিশাল আকাশ। গাড়ি চলাতে মনে হচ্ছে বিশাল আকাশ ফেলে তারা ছুটে চলছে অন্য কোনোদিকে।
·
·
·
চলবে………………………