হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৪৬)

0
2362

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৪৬)
#নাহার
·
·
·
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাফিন নিরাকে ডাক দিলো,
— নিরা আমার ওয়ালেট দিয়ে যাও।

নিরা এসে ওয়ালেট দিলো। রাফিন সেটা নিয়ে নিরার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। বললো,
— যেভাবে বলেছি সেভাবে কলেজে যাবে। রিকশা আমি ঠিক করে দিয়েছি। যথাসময়ে ফিরে আসবে।

রাফিন বেরিয়ে গেলো। নিরা নাস্তা শেষে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো। বোরকা নেকাবের সাথে হাত মোজা এবং পা মোজাও যুক্ত হয়েছে। নিরা রেডি হয়ে তনিমা খানম থেকে বিদায় নিয়ে কলেজে চলে গেলো। নুপুর, ঝুমুর এবং প্রভা নিরাকে দেখে অবাক হলো। তিনজনে জড়িয়ে ধরলো নিরাকে। প্রভা বললো,
— আমরা তো ভেবেছি তুই আর পড়ালেখা করবিই না।

নিরা বিরক্ত চেপে বললো,
— করতামই না। ডাক্তার সাহেবের মাথায় ভূত ঢুকেছে। কোথায় বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সংসার করবো সেটা না করে দেখ আমাকে কলেজে পাঠাচ্ছে। অসহ্য।

তিনজনে মুখ টিপে হাসলো। নিরাকে নিয়ে ক্লাসরুমে গেলো। ক্লাস শেষে নিরা বাড়ি ফিরে এলো। বোরকা খুলে ওয়াশরুমে এসে ফ্রেস হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। দুপুরে খেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিলো। আসরের সময় উঠে নামাজ পড়ে স্টাডি রুমে গেলো। কালরাতে এক গাদা পড়া দিয়েছে তার টিচারওরফে স্বামী । সেগুলো নিয়ে বসেছে।

সন্ধ্যায় রাফিন ফিরে এলো। নিরা ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কাজ করছিলো। রাফিন রুমে যেতে যেতে নিরাকে বললো,
— পড়া সব শিখেছো নিরা?

— হ্যাঁ চুমকি শিখেছি।

রাফিন থমকে দাড়ালো। নিরা নিজের মতো কাজ করছে। নিরা রাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কিছু বলবেন?

রাফিন সন্দেহের দৃষ্টিতে নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
— তুমি এই নাম কিভাবে জানলে?

— কেনো চুমকি?

— আগে বলো কিভাবে জানলে?

— মা জানিয়েছে চুমকি।

রাফিন বিড়বিড় করে বললো,
— উফ মা।

নিরাকে ধমকের সুরে বললো,
— নেক্সট টাইম থেকে যেনো এই নাম তোমার মুখে না শুনি।

— ঠিকাছে চুমকি।

— আবার।

ভেতর থেকে তনিমা খানম বেরিয়ে এসে বললেন,
— কিরে চুমকি এভাবে বউকে ধমকাচ্ছিস কেন?

রাফিন বেকুবের মতো তনিমা খানম এবং নিরার দিকে তাকাচ্ছে। তাদের এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে রাফিনের ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে মন চাচ্ছে। রাফিন তনিমা খানমকে বললো,
— মা তুমিও।

— কি চুমকি কি হয়েছে?

— ও বুঝেছি এখন। দুইজনে মিলে আমাকে খেপাচ্ছো।

নিরা এবং তনিমা খানম মুখ টিপে হাসছে। ভেতর থেকে রাফিনের বাবাও বেরিয়ে এসে বললেন,
— চুমকি এভাবে রাগিস না। যা ভেতরে যা। ফ্রেস হয়ে নে।

রাফিন অবাক হয়ে বললো,
— বাবা তুমিও ওদের দলে যাচ্ছো। আজিব তো।

নিরা রাফিনের দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটে। বউ, শ্বাশুড়ি এবং শ্বশুর তিনজনে হেসে হেসে কথা বলছে। রাফিন নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে এক ভালোলাগা কাজ করছে। মুহূর্তে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। মনে মনে বললো,
— আজ রুমে আসো। তারপর থেরাপি চলবে। হিহাহা।

রাফিন রুমে চলে গেলো। এদিকে তিনজনে শব্দ করে হেসে দিলো। নিরা সব পড়া শেষ করে রাতে খেয়ে রুমে গেলো। রুমে ঢুকে রাফিনকে পেলো না। মনে মনে বললো,
— এতো রাতে কই গেলো?

নিরা দরজা লাগিয়ে পিছনে ফিরতেই রাফিন নিরাকে দরজার সাথে চেপে ধরে। নিরা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে। চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়ে রাফিনকে বললো,
— এভাবে কেউ ভয় লাগায়? সরুন। ঘুমাবো। এভাবে চেপে ধরে রেখেছেন কেনো?

নিরাকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরে। সাথে আঁচলটাও সরিয়ে দেয়। নিরা মনে মনে ভয় পাচ্ছে। রাফিনকে সরাতে চাইছে কিন্তু রাফিন নড়ছেই না। ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে গলায় মুখ ডোবায়। গলায় বুকে কামড়ে কালশিরা ফেলে দেয়। কোলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিয়ে রাফিনও শুয়ে পরে। নিরাকে কালরাতের মতো পেচিয়ে ধরে। নিরা কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। এখনো বুক দুরুদুরু করছে। তাই কিছু না বলেই ঘুমিয়ে পরে।

——————————–
প্রায় তিনমাস হয়ে গেছে রাফিন নিরার বিয়ের। এর মধ্যে খবর এসেছে আফিয়া কনসিভ করেছে। কৌশিক নাকি খুশিতে আফিয়াকে কোলে নিয়ে নেচেছে কিছুক্ষণ। সব শুনে নিরা হেসে লুটপাট। নিরা আজ কলেজ থেকে দেরি করেই ফিরেছে। বান্ধুবিদের সাথে আড্ডা দিয়ে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেছে। তনিমা খানম গম্ভীর হয়ে রয়েছেন। তবে কিছু বলেননি। নিরা নিজেও ভয় পেয়েছে ঘরে ঢুকে। তাড়াতাড়ি করে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে পড়তে বসে গেছে। কিন্তু ঘুমের জন্য কিছু পড়তে পারেনি। টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেছে।

সন্ধ্যায় রাফিন বাসায় এলো। রাফিনের মুখে রাগ স্পষ্ট। ফ্রেস হয়ে স্টাডি রুমে এসে দেখলো নিরা টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ডাকলো না। নিরার পাশের চেয়ারেই বসে পরে৷ নিরার ঘুম ভাঙার পর চোখ মেলে তাকিয়ে রাফিনকে সামনে দেখে এক ঝটকায় সোজা হয়ে বসে। রাফিন বললো,
— হাত মুখ ধুয়ে আসো।

নিরা উঠে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এলো। হাত পা কাপছে। ভয়ে বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ করছে। রাফিনের শান্ত মেজাজ। নিরা চেয়ারে বসতেই রাফিন বললো,
— ফুসকা খেতে গেছো ভালো কথা ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলার কি প্রয়োজন ছিলো?

নিরা ভয়ে কেঁপে উঠে। কয়েকটা ঢোক গিলে নড়েচড়ে বসে। রাফিনের দিকে তাকানোর সাহস নেই। বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন আবার বললো,
— আমি মানা করিনি ছেলেদের সামনে নেকাব খুলতে?

রাফিনের স্বাভাবিক কথাবার্তায় নিরার মনে ভয় আরো বাড়ছে। নিরা আস্তে করে বললো,
— জ্বী।

— বাসায় কয়টায় এসেছো?

নিরা কিছু বললো না। এখন তার চুপ থাকাই শ্রেয় মনে হলো। রাফিনের হাতের বইটা জোরে শব্দ করেই টেবিলে রাখলো। নিরা ভয়ে কেঁপে উঠে। রাফিন বললো,
— খাওয়া দাওয়া করেছো?

— ন..না।

— নামাজ, কোর’আন?

— ন..না।

রাফিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
— আমার ভয়ে বোরকা পরার দরকার নেই। তোমার যদি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরতে ইচ্ছে হয় পরবে। আমি মানা করবো না। ছেলেদের সাথে ঘুরাঘুরি করার ইচ্ছে হলেও করতে পারো। তোমার তো স্বাধীনতা লাগবে তাইনা?

রাফিন উঠে দাঁড়ায়। দরজার সামনে এসে বললো,
— পড়ালেখা করার জন্য আমি জোর করবো না। তোমার ইচ্ছা। কাল থেকে তোমার ইচ্ছায় চলতে পারো।

রাফিন বেরিয়ে গেলো। তনিমা খানম চেচিয়ে ডাকলেন,
— চুমকি এসে ভাত খেয়ে যা। সারাদিন কিছুই খাস নি। তাড়াতাড়ি আয় আমি বসে থাকতে পারবো না। দেরি হলে চটকনা খাবি।

নিরা উঠে গেলো। ডাইনিং -এ বসে খাবার খেয়ে নিলো। স্টাডিরুমে এসে বইখাতা গুছিয়ে রুমে গেলো। রাফিন আগে থেকেই শুয়ে পরেছে। নিরা বাতি নিভিয়ে রাফিনের পাশে চুপচাপ শুয়ে পরলো।

——————————
আজ যথাসময়ে বাসায় ফিরলো নিরা। কাপড় পালটে নামাজ পড়ে নিয়েছে। আসরের পর সব পড়া শেষ করে শ্বাশুড়ি মাকে কাজে সাহায্য করলো। কলিং বেলের শব্দ হওয়ায় তনিমা খানম নিরাকে বললেন,
— চুমকি দেখতো কে এসেছে।

নিরা উঠে দরজা খুলে দেখলো পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা। নিরা সালাম দিয়ে বললো ঘরে আসতে। কিন্তু মহিলা আসলো না। নিরার সাথে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। তনিমা খানমও কয়েকবার বলেছে ভেতরে আসতে কিন্তু মহিলা ভেতরে আসলো না। সিড়ি দিয়ে একটা ছেলে কয়েকবার উঠছে আর নামছে আর নিরার দিকে তাকাচ্ছে। এমন সময় রাফিন এলো। নিরাকে এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রথমে নিরব থাকলো। একবার আশেপাশে তাকিয়ে নিরার দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুমে চলে এলো।

নিরা রাফিনের এমন চাহনিতে ভয় পেয়েছে খুব। রাফিন চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে ছিলো। নিরা মহিলাটাকে বিদায় দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। গুটিগুটি পায়ে রুমে এসে দাঁড়ালো। রাফিন নিরার দিকে একবার তাকিয়ে নজর ফিরিয়ে নিলো। এতে নিরা আহত হলো। রাফিন বেডে বসে চুল মুছতে মুছতে বললো,
— নিজের ফিগার অন্য ছেলেকে দেখাতে ভালো লাগে তোমার?

রাফিনের কথায় নিরা অবাক হলো। রাফিনের শান্ত চাহনি। এসে নিরার সামনে দাঁড়িয়েছে। নিরা জড়সড় হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিনের রাগ বাড়ছে। কপালের রগ ফুলে উঠছে। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। রাফিন বাজখাঁই গলায় বললো,
— ফিগার শো আপ করতে বেশি মজা লাগে? শান্তি পাও মনে? ওয়েস্টার্ন ড্রেস এনে দিবো? সেগুলা পরে ছেলেদের সামনে ঢ্যাং ঢ্যাং করে হাটবে দাঁড়িয়ে থাকবে। এনে দিবো?

নিরা ভয়ে কেঁপে উঠে। মুখে কোনো কথা নেই। রাফিন সরে যায়। নিরা সোফার পাশে পা ভাজ করে পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে। রাফিন বললো,
— কি দরকার ছিলো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রঙের আলাপ করার? সিড়ি দিয়ে ছেলেরা উঠছে নামছে সেটা চোখে পড়েনি? ওই পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটা তোমাকে চোখ দিয়েই ধর্ষণ করছিলো দেখোনি? নাকি মজা লাগে এসব?

নিরা শব্দ ছাড়াই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। সে জানে না এসব। কে তাকে কিভাবে দেখছিলো নিরা এসব খেয়ালই করেনি। রাফিন আবার বললো,
— নিরা আমার কি মনে হয় জানো? আমি মরে গেলে তুমি ভুলে যাবে তোমার জীবনে রাফিন নামের কোনো অস্তিত্ব ছিলো। ভুলে যাবে আমি তোমাকে কিভাবে চলতে বলি কিভাবে থাকতে বলি। সময়ের সাথে সাথে ভেসে যাবে। আমাকে মনেই থাকবে না।

রাফিন দম নিলো। আবার বললো,
— সমস্যা নেই। ভুলে যেও আমাকে। আমি কে এসব বলার? তোমার খুশি মতো যা ইচ্ছা করো আমি মরার পর।

রাফিন দপদপ শব্দ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। নিরা ঢুকরে কেঁদে উঠলো। তনিমা খানম এসে নিরার সামনে দাড়াতেই নিরা শ্বাশুড়ি মায়ের পা জড়িয়ে ধরে৷ কেঁদে কেঁদে বললো,
— মা আমি সত্যি জানতাম না ওইদিকে যে কোনো ছেলে ছিলো। আমি জানলে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতাম না। উনাকে আমি কষ্ট দিতে চাইনি মা। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।

তনিমা খানম নিরার সামনে বসে। নিরাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। কপালে চুমু দিয়ে বললেন,
— কাঁদিস না। রাফু ফিরুক আমি কথা বলবো। কেনো সে না বুঝেই আমার পিচ্চি বউমাকে এতো কথা শুনালো।

নিরা এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। এখনো একই কথা বলছে,
— মা আমি সত্যিই জানতাম না ওইখানে যে কোনো ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো।

——————————
রাত দশটার দিকে রাফিন ঘরে ফিরলো। তনিমা খানম ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,
— তুই না জেনে মেয়েটাকে এতো কথা শুনালি কেন? ওর তো দোষ নেই। মহিলাকে বার কয়েক বলেছে ভেতরে আসতে সে আসেনি। আর কোনদিকে ছেলেরা দাঁড়িয়ে ওকে দেখছিলো সেটাতো ও খেয়াল করেনি।

রাফিন একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— মা আমি জানি। ছেলেগুলো নিরার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকায় রাগ উঠে গেছিলো। মেয়েটা এতো বোকা কেন আমি এটাই বুঝি না। ওকে আমি ইচ্ছে করে বকেছি যাতে একটু হলেও সাবধান হয়।

তনিমা খানম বললেন,
— এতোক্ষণ কই ছিলি?

— মসজিদে ছিলাম। তুমি তো জানোই আমি রাগ সামলাতে না পারলে মসজিদে গিয়ে শুয়ে থাকি।

— হুম বুজেছি। যা রুমে যা।

— নিরা খেয়েছে?

— না। কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসেই ঘুমিয়ে গেছে।

— ওহ। একদম বোকা এই মেয়েটা। যে কেউ ওকে সহজে বোকা বানিয়ে দিবে। আমার ভয়টা এখানেই মা।

— ঠিকাছে৷ একটু আগলে রাখ। আমিতো আছিই।

রাফিন রুমে এলো। রুম অন্ধকার। বাতি জালিয়ে নিরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। চোখের উপর আলো পরায় নিরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। প্রথমে সামনে ঝাপসা দেখলো। পরে সব ক্লিয়ার হয়। সামনে রাফিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফিনের পা ঝাপটে ধরে। ডুকরে কেঁদে বললো,
— আমি সত্যিই জানতাম না তখন ওইখানে যে কোনো ছেলে ছিলো। আমি ওই আন্টিকে বলেছি ভেতরে আসতে উনি আসেননি। আপনি মাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। আমি আর কখনো এভাবে দরজার সামনে দাঁড়াবো না। আপনি আমাকে যত ইচ্ছা মারেন তাও এভাবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন না প্লিজ।

রাফিন নিরার সামনে বসে। নিরার হেচকি উঠে গেছে। কথা বলতে পারছে না। রাফিন একগ্লাস পানি এনে নিরাকে দেয়। নিরা ঢকঢক করে সব পানি শেষ করে। রাফিন দুইহাতে নিরার মুখটা ধরে বললো,
— তুমি আমার কোনো গৃহপালিত প্রাণী নও যে, আমার যখন রাগ উঠবে তোমাকে মারধর করেই রাগ মিটাবো। তুমি আমার ঘরে একটা জান্নাতের ফুল। আমি ঘরে এসেই যখন এই ফুলটাকে দেখি মূহুর্তেই সব ক্লান্তি, অবসাদ বিদায় নেয়।

— আমি আর কখনো এমন করবো না সত্যি বলছি।

— আমি জানি তো। আমিতো চিনি আমার নিরুপাখিকে।

রাফিন নিরার কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে। নিরা চুপ করে থাকে৷ চোখ বন্ধ করে নেয়। কিছুক্ষণ পর বললো,
— আপনি তখন কেনো বললেন আপনি মরে গেলে আমি আপনাকে ভুলে যাবো? আপনি জানেন তখন আমার কেমন লেগেছে? আমি কিভাবে আপনাকে ভুলে যাবো বলুন। কেনো এভাবে বললেন? আপনি জানেন না আমার অনেক কষ্ট হয় আপনি না থাকলে।

নিরা আবারো কেঁদে উঠে। রাফিন নিরাকে সামলে নেয়। রাতে রাফিন নিরাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। নিরা শুয়ে পরে। রাফিন এসে পাশে শুলেই নিরা আবার বললো,
— প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।

— নিরু তুমি এখনো এসব ভাবছো? বাদ দাও। আমি ভুলে গেছি। তোমার দোষ নেই।

— তাও আমার শান্তি লাগছে না।

— কেনো? আমিতো আদর দিয়েছে কপালে।

— আপনি প্রতিদিন রুমে এসে আমাকে দেখলে একটা মুচকি হাসি দেন। যেই হাসি দেখলে আমার ভেতরে তোলপাড় হয়ে যায়। সব ধরনের অভিমান চলে গিয়ে একটা ভালোলাগা আসে। কিন্তু আজকে সেই হাসি দেননি।

— আচ্ছা এই ব্যাপার। চলো তাহলে ভালোবাসার থেরাপি দি।

— এই না না।

— চুপ।

দুইজনে আবার ডুব দেয় ভালোবাসায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাফিন হসপিটালের উদ্দেশ্য তৈরি হয়ে নেয়। নিরা আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেস হয়ে আসে। রাফিন নাস্তা এনে নিরাকে খাইয়ে দেয়। নিরার হাতে ওষুধ দিয়ে বললো,
— এটা খাও। আর আজকে কলেজে যাবার দরকার নেই। বাসায় থাকো।

রাফিন বেরিয়ে যায় হসপিটালে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে ওয়ালেট রেখে যায়। দরজার সামনে এসে নিরাকে ডেকে বললো,
— নিরা আমার ওয়ালেট দিয়ে যাও।

নিরা ওয়ালেট নিয়ে যায়। রাফিন নিরার কপালে ঠোঁট ছুয়ে বেরিয়ে যায়।
·
·
·
চলবে…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here