হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২২)

0
1959

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২২)
#নাহার
·
·
·
দুপুর সাড়ে বারোটা। আজকে শুক্রবার তাই দেড়টায় জুমার নামাজ শুরু হবে। গদখালী বাজার থেকে বেরিয়ে তারা সিএনজিতে উঠে গেছে। বাজার থেকে কেশবপুর যেতে পয়তাল্লিশ মিনিট লাগবে। সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রাফিন এবং নিরা সামনের দিকে হাটতে থাকে। রাফিন আশেপাশে দেখছে নিরাকে কোথায় বসাবে। একা রেখে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না। অনেক ভাবনা চিন্তার পর রাফিন কৌশিককে ফোন দেয়। রিং হওয়ার একটু পরই কল রিসিভ হয়,
— হ্যালো।

— হ্যাঁ বল। কোনো সমস্যা হয়েছে?

— না তেমন না। আসলে আমি নামাজ পড়তে যাবো। এখন নিরাকে কোথায় রেখে যাবো সেটাই বুঝতে পারছি না। একা রাস্তায় রেখে তো যেতে পারি না। আবার মসজিদেও নিতে পারবো না। কি করবো বুঝতেছি না। তাই তোরে কল দিলাম।

— ওহ এই ব্যাপার। তো এখন কোথায় আছিস?

— কেশবপুর জামে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

— আচ্ছা ওয়েট কর। আমার বন্ধুর বাসা ওইদিকে। মসজিদের সামনের বিল্ডিং-এ বউ নিয়ে থাকে। ওরে ফোন করে বলছি কিছুক্ষণ নিরাকে ওখানে ওদের কাছে রাখতে।

— ওকে।

কল কাটার পর কৌশিক তার বন্ধু নাদিমকে কল করে সব বলে। পাঁচ মিনিট পর একজন আটাশ উনত্রিশ বছর বয়সি ছেলে এসে রাফিনের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
— আপনি রাফিন?

— জ্বী।

— আমি নাদিম। কৌশিকের বন্ধু। আমার বাসা ওইযে সামনের বিল্ডিং-এ। চলুন আপনারা।

রাফিন এবং নিরা হাটছে নাদিমের পিছন পিছন। তারা এসেই ঘরে ঢুকে। নাদিম রাফিন এবং নিরাকে বসার ঘরে বসিয়ে ভেতরে যায়। ভেতর থেকে নাদিম তার বউ তিনাকে নিয়ে আসে। সবাই কিছুক্ষণ কথা বলে তারপর নাদিম এবং রাফিন দুইজনে বেরিয়ে যায় মসজিদের উদ্দেশ্যে। নিরা এবং তিনা দুজনে মিলে কথা বলছে। তিনা বললো,
— আপু আপনি হাত-মুখ ধুয়ে নিন।

নিরাকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দেয় তিনা। নিরা হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে। তারপর তিনা আর নিরা দুইজনে মিলে গল্প করে। এরমধ্যেই রাফিন এবং নাদিম চলে আসে। রাফিন একগ্লাস পানি খেয়ে নিরাকে নিয়ে বের হয়ে আসতে চাইলে নাদিম আটকায়। তাদের একটাই কথা দুপুরে লাঞ্চ করে যেতে হবে। রাফিন চায়নি এসব। কিন্তু নাদিম কিছুতেই আসতে দিবে না। তাই বাধ্য হয়ে সেখানে লাঞ্চ করে নেয়। খেয়েদেয়ে একটু রেস্ট নেয়। নিরা সেখানেই ঘুম। সাড়ে তিনটার দিকে রাফিন নিরাকে ডাক দেয়,
— নিরা উঠো আমাদের যেতে হবে।

নিরা ঘুমঘুম চোখে বললো,
— না যাবো না। ঘুমাই আরেকটু।

— এভাবে বললে হবে না নিরু। আমাদের ঝুলন্তু ব্রীজও যেতে হবে। সূর্য ডুবার দৃশ্য কিন্তু মিস হবে। তাড়াতাড়ি উঠো।

নিরা কিছুতেই উঠছে না। তাই রাফিন একপ্রকার জোর করে টেনে উঠে বসাতে নিরা রাফিনের হাতে কামড় বসায়। নিরার হুশ ফিরতেই চোখ বড়বড় করে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিন রেগে তাকিয়ে আছে। নিরা এবার কাদো কাদো চেহারা করে মাথা নিচু করে বসে আছে। রাফিন হুংকার দিয়ে বলে,
— ঘুমানোর এতো ইচ্ছা থাকলে আসার কি দরকার ছিলো। না আসলেই পারতে। আমিতো আসতে বলিনি। তুমি নিজেই জোর করেছো।

নিরার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই রাফিন ফিক করে হেসে দেয়। রাফিনের এহেম কান্ডে নিরা বোকা বোকা চেহারা করে তাকিয়ে আছে। রাফিন পেটে হাত দিয়ে হাসছে। হাসি থামিয়ে নিরার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো,
— ওরে আমার নিরুপাখি। এখন তোমাকে দেখতে একদম পাঁচ বছরের বাচ্চাদের মতো লাগছে। ইশ্ কি ডোজটাই না দিলাম। নাহলে তোমাকে ঘুম থেকে উঠাতে আমার ঘাম ছুটে যেতো। জংলী বিল্লিদের মতো কামড় দিয়ে দেখো হাতে দাগ বসিয়ে দিয়েছো।

নিরা গাল ফুলিয়ে উঠে গেলো। হাত মুখ ধুয়ে এসে রাফিনের সামনে দাঁড়ালো। রাফিন এখনো মিটিমিটি হাসছে। নাদিম আর তিনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা বেরিয়ে গেলো। একটা রিকশা নেয় হনুমান গ্রাম যাবার উদ্দেশ্যে। নিরা সারা রাস্তা গাল ফুলিয়ে রেখেছে। রাফিন আড়চোখে নিরাকে দেখতে আর মিটিমিটি হাসছে। নিরা মনে মনে বললো,
— হাসতে থাকেন যত পারেন। আমিও এর শোধ তুলবো ডাক্তার সাহেব। অপেক্ষা করুন। হুহ!
——————————————————————————–
যোশরের কেশবপুরে রয়েছে ভবঘুরে প্রজাতির প্রায় ৪০০ কালোমুখী হনুমানের আবাস, আর তাই এলাকাটি কেশবপুর হনুমান গ্রাম নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ধারণা করা হয় কয়েকশ বছর ধরে কেশবপুরের ১০-১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে বিরল প্রজাতির হনুমানগুলোর বিচরণ। নৃ- তত্ত্ববিদদের মতে প্রায় ৪ কোটি বছর আগে কালোমুখী হনুমান প্রজাতির জন্ম হলেও নানা ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে অল্পসংখ্যক হনুমান টিকে আছে। বর্তমানে কেবল বাংলাদেশের কেশবপুরে এবং ভারতের নদীয়া জেলার আচরণ এবং বুদ্দিমত্তায় উন্নত কালোমুখ ভবঘুরে হনুমানের এই প্রজাতিটি দেখতে পাওয়া যায়।

পৌর শহরের মোহনপুর, বিজয়রামপুর, হাকোবা, গাংড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় হনুমান পালের আনাগোনা রয়েছে।

রাফিন এবং নিরা রিকশা থেকে নেমে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দেয়। কিছুদূর এগিয়ে এসে কলা এবং বন কিনে নেয়। নিরা রাফিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— আপনার এতো তাড়াতাড়ি ক্ষিদা লেগে গেছে? আরো বেশি করে খেয়ে নেননি কেনো? নাকি লজ্জায় ক্ষেতে পারেননি? দেখুন খাওয়ার সময় এতো লজ্জা পেতে নেই। খাওয়ার সময় মন প্রাণ খুলে খে

নিরা ভয়ে ঝাপটে ধরে রাফিনকে। রাফিন এক হাতে একটা কলা নিরার পেছনে এগিয়ে দেয় আরেক হাত দিয়ে নিরাকে ধরে। রাফিনের হাসির আওয়াজে নিরা আরো খামছে ধরে শার্ট। কানের কাছে মুখ এনে রাফিন বললো,
— রোমাঞ্চ করার ইচ্ছা থাকলে নাদিম ভাইয়া বাসায় বলতে সেখানে না হয়। কিন্তু এভাবে রাস্তায় রোমান্স করলে মানুষ খারাপ ভাববে। দেখো মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

নিরা একহাতে গলা জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে রাফিনের বুকের শার্ট খামছে ধরে ফিসফিস করে বলে,
— ডাক্তার কে যেনো আমার পা জড়িয়ে ধরেছে। আমার ভয় লাগছে। প্লিজ ওকে বলুন আমার পা ছেড়ে দিতে।

— হনুমান গ্রামে এসেছো হনুমানরা তোমাকে খাতিরযত্ন করছে এই আরকি। পা ধরে সালাম করছে তোমাকে। দেখো একটু।

নিরা পেছন ফিরে হনুমান দুইটাকে দেখে তারপর হাফ ছেড়ে বাচলো। কি ভয়টাই না পেয়েছিলো সে। রাফিন হনুমান গুলোর সামনে বসে কলা আর বন দিচ্ছে। নিরা রাফিনের পাশে বসতে বসতে বললো,
— ওহ তার মানে এই বন কলা ওদের জন্য নিয়েছেন।আমাকে আগে বলেননি কেনো? আর আমি ভেবেছি আপনি।

— তোমার এই পিচ্চি মাথায় এইসব চিন্তা ছাড়া আর কিছু ঘরে?

— হুহ!

নিরা রাফিনের হাত থেকে কলা বন ছো মেরে নিয়ে ওদের খাওয়াতে লাগলো। রাফিন একটু দূরে দাড়িয়ে এইসব দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করছে। কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে নিরাকে নিয়ে সামনে হাটতে থাকে। আরো সামনে যাওয়ার পর একটা দিঘি দেখতে পায়। নিরা রাফিনকে জিজ্ঞেস করে,
— এই ডাক্তার আপনি সাঁতার পারেন?

— হ্যাঁ। তুমি পারো না?

নিরা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
— না।

দিঘির পাড়ে বসে দুইজন। তখন আশপাশের ডাল থেকে কয়েকটা হনুমান নেমে আসে। রাফিন এবং নিরা দুইজনেই তাদের বন কলা দেয় খেতে। রাফিন একটা ছেলে ডাক দিয়ে বলে কয়েকটা ছবি তুলে দিতে। তাদের দুইজনের এই ছবিগুলোও ক্যামেরা বন্দী করা হয়। তারপর ছেলেটা ক্যামেরা দিয়ে চলে যায়। নিরা একটা বাচ্চা হনুমানকে আদর করছে। আর রাফিন সেগুলোও ক্যামেরা বন্দী করে। তারপর রাফিন বাচ্চা হনুমানের মাকে বন কলা দেয়।

কেশবপুরের হনুমান এখন প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখানে খাবারের সংকটের কারণে হনুমানরা মানুষের বাসা বাড়িতে হামলা দেয়। ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে দেয়।

এরপর আরো কয়েকটা বাচ্চা হনুমানসহ মায়েরা ডাল থেকে নেমে আসে। নিরা বাচ্চাগুলোকে আদর করে। বাচ্চাগলো দেখতে খুব কিউট। নিরা দুষ্টামি করে ওদের গাল টেনে দেয়। বাচ্চা হনুমানের একটা মা এসে নিরারও গাল টেনে দেয়। রাফিন হাসে। সেই হনুমানটা গিয়ে রাফিনের গালও টেনে দেয়।

——————————————————————————–
যোশরের মনিরামপুরের ঝাঁপা বাওড়ের উপর প্রায় ১৩০০ ফুট দীর্ঘ এবং ৯ ফুট প্রস্থের একটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভাসমান সেতু নির্মাণের ফলে কপোতাক্ষ নদ এবং ঝাঁপা বাওড়ে ঘেরা মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কিছু অবসান ঘটলো। প্রায় ৮৩৯ টি নীল রঙের ড্রামের উপর স্টীলের পাত ফেলে তৈরি করা সেতুর দুপাশে নিরপত্তা রেলিং দেয়া হয়েছে।

পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের হালকা লাল আভা আকাশে দেখা যাচ্ছে। নিরা এবং রাফিন ঝুলন্ত বীজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এখানের পরিবেশটা অসম্ভব সুন্দর। এই ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত দেখতে খুবই ভালো লাগে। তবে এখনো সূর্য অস্ত যায়নি। নিরার খোলা চুল বাতাসে উড়ছে। নিরা ব্রীজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে যতদূরে চোখ যায় সেদিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন রেলিং-এর সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিরার চুল উড়ে এসে বারবার রাফিনের মুখে পড়ছে। চুলের ঘ্রাণ, প্রিয় মানুষটা পাশে, নদীর মাঝ বরাবর ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে দুজনের মনে। নিরা শীতের চাদরটা ভাজ করে হাতে নিয়েছে। রাফিন জ্যাকেটের চেইন খুলে দিয়েছে।

সূর্য ডুবে যাওয়ার সাথে অনেকগুলো ছবি তুলেছে দুইজন মিলে। নিরা রাফিনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সূর্য প্রায় ডুবে গেছে। আকাশ সম্পূর্ণ রক্তিম আভায় লাল হয়ে আছে। নিরা তার ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকায়। রক্তিম আভা রাফিনের চেহারায় পড়ায় চোখ দুটো জলজল করছে। ফরসা মুখটা দেখতে কমলা রঙের মনে হচ্ছে। গোলাপি ঠোঁট দুটো আরো গোলাপি দেখাচ্ছে। নিরা এক ভালোলাগার অনুভূতি মনে নিয়ে তাকিয়ে আছে রাফিনের দিকে। রাফিন নিরার দিকে তাকিয়ে চোখ মারে। দুইজনেই হেসে দেয়। এক অদ্ভুত ধরনের ভালো লাগা কাজ করছে দুজনের৷ রাফিন জ্যাকেট খুলে নিরার হাতে দিয়ে দেয়। এখন শীত পড়তে শুরু করেছে। সাথে কুয়াশাও পড়ছে। গ্রাম এরিয়া তাই তাড়াতাড়িই যেনো কুয়াশা পড়ছে। নিরা চাদরটা গায়ে জড়ানোর আগেই রাফিন ছো মেরে নিয়ে নেয়। নিরা ভ্রু কুচকে রাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
— জ্যাকেট আমাকে ধরিয়ে দিয়ে চাদরটা নিয়ে নিলেন কেনো? আমার ঠান্ডা লাগছে। আপনার ঠান্ডা লাগলে জ্যাকেট পড়ুন। আমাকে আমার চাদর দিন।

রাফিন চাদরটা গায়ে জড়িয়ে বললো,
— কতটা আনরোমান্টিক তুমি। হাহ! কপাল আমার জীবনে একটা প্রেম করতে পারলাম না। যা একটা প্রেম শুরু করেছি হায় আল্লাহ মেয়েটা একদম আনরোমান্টিক মিলিয়ে দিলা।

আকাশের দিকে তাকিয়ে ন্যাকা সুরে কথাগুলো বলে নিরার দিকে তাকায়। নিরা এখনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। এবার নিরা বললো,
— এখানে রোমান্টিকতার কি আছে আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।

— বাচ্চা মেয়ে তো তাই। কিভাবে বুঝবে বলো।

নিরা গাল ফুলিয়ে সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। রেলিং-এ নখ দিয়ে আঁচড় কাটছে। রাফিন মুচকি হাসে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিরাকে। একই চাদরে দুজন শীত পোহাচ্ছে। নিরা কিছু বললো না। চুপ করে আছে। রাফিন খোচাখোচা দাড়ি দিয়ে নিরার গালে নিজের গাল ঘষে দেয়। নিরা বিরক্ত নিয়ে আড়চোখে তাকায়। রাফিন মুচকি হাসে। কাধে থুতনি রেখে বলে,
— একই চাদরে শীত পোহাচ্ছি দুজন। এর চেয়ে রোমান্টিক দৃশ্য আরকি হতে পারে বলো?

নিরা এতক্ষণে খেয়াল করলো ব্যাপারটা। আসলেই ব্যাপারটা খুব সুন্দর। একই চাদরে শীতবিলাস। এই মুহুর্তটা নিয়ে কত ভেবেছে নিরা। নিরা আনমনে হেসে দেয়। রাফিন দাড়ি দিয়ে আবার নিরার গালে ঘষে দিয়ে বলে,
— দেখেছো পিচ্চি এইটা আমার মাথায় এসেছে। তোমার এই পিচ্চি মাথায় শুধু কিভাবে ঝগড়া করবে সেটা ছাড়া আর কিছুই ঘরে না। কি আনরোমান্টিকরে বাবা। তবে সমস্যা নেই। তোমার এই ডাক্তার সাহেব ভারি রোমান্টিক।

কথাটা বলেই নিরার কানের লতিতে কামড় বসায়।নিরা শব্দ করে হেসে দেয়। দুজনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছে। বাতাসটা ছিলো মাতালকরা। সাথে নিরার চুলের ঘ্রাণ। রাফিন একদমই মাতাল হয়ে গেছে প্রেমের নেশায়। নিরা হুট করেই বলে,
— এই ডাক্তার আপনাকে একটা কবিতা শোনাই?

— হ্যাঁ আমার নিরুপাখি শোনাও।

নিরা কবিতা শুরু করে,,,

“এই হাড় কাপানো শীতে
কুয়াশা ভরা সকালে
হাটবো দুজন পাশাপাশি
কাছাকাছি,

এই হাড় কাপানো শীতে
একই চাদরে,
আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে তুমি।।

তোমার বুকে মাথা রেখে
শুনবো তোমার হৃদস্পন্দন,

তোমার গলা জড়িয়ে ধরে
তোমার গাল ভর্তি খোচা দাড়িতে দেবো চুমুর পরশ।।

তোমার চোখে চোখ পড়তেই
লজ্জায় লুকাবো মুখ তোমার বুকে,
এই কুয়াশা ভরা রাতে
আমায় জড়িয়ে রেখো,
তোমার বাহুডোরে।।”(-নাহার।)

কবিতা বলার পর নিরা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিরাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সূর্যের আভা আকাশ থেকে সরে গেছে। আস্তে আস্তে অন্ধকারেরা নেমে এসেছে। দূর থেকে লাইটের মৃদু আলো ভেসে আসছে। নদীতে নৌকা, সাম্পান নিয়ে যাচ্ছে মাঝিরা। নৌকা এবং সাম্পানের থেকেও লাইটের আলো এসে অন্ধকারকে কমিয়ে দিয়েছে।

দুজনের মনেই অন্যরকম অনুভূতি। অন্যরকম এক শিহরণ বয়ে চলেছে রক্তে রক্তে, শিরা উপশিরায়। হৃৎপিন্ড -এর ধুকপুকানি বেড়ে গেছে দুজনেরই। রাফিন সরে আসে নিরার কাছ থেকে। নিরা কিছুক্ষণ সেভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হুট করেই রাফিনকে জড়িয়ে ধরে। নিরা শর্ট হওয়ায় নিরার মাথা রাফিনের বুক বরাবর পড়ে। রাফিন মৃদু হেসে চাদর দিয়ে নিরাকেও ঢেকে দেয়। রাফিনের বুকের ধুকপুকানি সম্পূর্ণ শুনতে পাচ্ছে নিরা। সত্যি প্রিয় মানুষটার হার্টবিট শুনতে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। যেটা এখন নিরার মনে কাজ করছে। রাফিন হালকা হেসে বলে,
— আর বেশিক্ষণ এভাবে ধরে রেখো না। আমি মাতাল হচ্ছি। পরে কিছু করে দিলে আমাকে দোষ দিবে। তাই এখন উঠুন নিরুপাখি।

নিরা লজ্জা পায়। তাই সরে আসে। মাথা নিচু করে অন্যদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন চাদরটা নিরার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে,
— চলো লজ্জাবতী। এবার ফেরা যাক। তবে ফেরার আগে “জনি কাবাব” এবং “মালাই চা” খেয়ে যাবো।

ঝুলন্তু ব্রীজ থেকে রাস্তায় এসে রিকশা নেয়। রিকশায় বসে নিরা রাফিনে কাধে মাথা রাখে। ঘুমে চোখ দুটো ঢুলুঢুলু হয়ে আছে। রাফিন নিরাকে শক্ত করে ধরে রাখে যাতে পড়ে না যায়।
·
·
·
চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here