হিংস্রপ্রেম পর্ব ৮

0
434

গল্পের লিংক(রিভিউ)+আলোচনা

#হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ০৮
লেখাঃ Israt Jahan

.

ফালাকঃ মুখের উপর আলোর তেজ পড়ছে খুব। চোখ খুলে তাকাতেই বুঝতে পারলাম অনেক বেলা হয়ে গেছে।অলসতা কাটিয়ে উঠে বসবো তখন খেয়াল হলো আমার শরীর পোশাক নেই।বিছানার চারপাশ তাকিয়ে দেখি খুব অগছালো অবস্থা বিছানার।এমন অবস্থা কেনো?আর আমি তো কখনো পোশাক খুলে ঘুমাইনা।
ফালাক বসে কাল রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করছিল।মস্তিষ্কে চাঁপ প্রয়োগ করতেই ওর মনে পড়ে গেল মেহেরের সাথে কাটানো অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো।
এর মাঝে মেহের কক্ষে প্রবেশ করলো।মেহেরকে দেখে ফালাক ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও বোঝার চেষ্টা করছে মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে কাল রাত্রের ঘটনার পর এখন ওর মনের অবস্থাটা ঠিক কেমন।আর মেহেরও ফালাকের দিকে চোখ রাঙিয়ে দাড়িয়ে আছে।
ফালাকঃ এমন ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেনো মনে হচ্ছে এক কোপে আমার ধর থেকে মাথা আলাদা করে দেবে।
মেহেরের এমন দৃষ্টি দেখে ফালাক মেহেরকে প্রশ্ন করে উঠল।
ফালাকঃ আশ্চর্য তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো যে?কিছু বলবে?
মেহেরঃ জ্বি।শয্যা থেকে উঠে পাক পবিত্র হয়ে খানা খেতে আসতে বলেছে।
ফালাকঃ আচ্ছা।ও হ্যা,তুমি হয়েছো?…….পাক পবিত্র?
ফালাকের প্রশ্নে মেহেরের শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে।
তবু কিছু বলতে পারছেনা।
ফালাকঃ আচ্ছা শোনো, শয্যা থেকে উঠে পাক পবিত্র হয়ে খানা খেতে আসতে বলেছে কে?
মেহেরঃ আব্বাজান।
ফালাকঃ কি? পাক পবিত্র হওয়ার কথা আব্বাজান কেনো বললেন?
মেহের বিরক্তিকর ভঙ্গিতে ফালাকের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল।
মেহেরঃ আপনাকে সে অপবিত্র অবস্থায় থাকতে দেখেছেন হয়তো।তাই বলেছেন।
কথাটি শেষ করে মেহের কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।
ফালাকঃ হুম।পূর্বে যত নারীর সংস্পর্শে গিয়েছি কখনো নিজেকে পবিত্র রাখার প্রয়োজনবোধ করিনি।এমনকি লজ্জাবোধ ও করিনি আব্বাজানের সামনে যেতে।আজ বিবাহ করেছি।সংসার করছি স্ত্রীর সঙ্গে।কিন্তু আশ্চর্যান্বিত হলাম আব্বাজানা কিভাবে বুঝলেন?ভাবতেই তো লজ্জাবোধ হচ্ছে আজ আমার।আচ্ছা….তাহলে অনেক বেলা অবদি ঘুম আর মেহেরের ভেজা চুলের কারণেই আব্বাজান বুঝতে পেরেছেন।
ফালাক, মেহের আর পিতা তিনজন একসাথে আজ সকালের খাবার খেতে বসেছে।
পিতাঃ তাজ?তুমি নাকি আজ মধুপুর রাজ্যে যাচ্ছ?
ফালাকঃ জ্বি পিতা।
পিতাঃ তো কি কারণে যাচ্ছ?কোনো সমস্যা?
ফালাকঃ হ্যা।অনেকদিন যাবৎ ওই অঞ্চলটাতে ঢোকা হয়না।খাজনা আদায়ের ব্যাপারেও ঝামেলা হচ্ছে।চাষাগুলো ঠিকমত খাজনা পরিশোধ করছেনা।ওদের একটা ব্যবস্থা করার জন্যই ওখানে যাব।
পিতাঃ তোমার ব্যবস্থা মানেই তো শরীরের রক্ত ঝরানো।
পিতার কথার কোনো উত্তর দিল না ফালাক।
মেহেরঃ খাজনা আদায়ের পরিমাণটা যদি স্বাভাবিকের তুলনায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় তাহলে চাষারা তা কিভাবে পরিশোধ করবে? আবহাওয়ার দিকটাও দেখতে হয় যে এই আবহাওয়াতে কে কত ভাগ ফসল উৎপাদন করতে পেরেছে?শুধু চাঁপিয়ে দিলেই হয়না।ক্ষতি কি….. যখন এভাবে অনৈতিকভাবে অত্যাচার করতে করতে চাষাগুলো যখন শেষ হয়ে যাবে তখন এইসব বেপরোয়া আর অত্যাচারী রাজাদের পেটে অন্ন জোগায় কারা তা তো দেখার জন্য আমি উৎসুক হয়ে আছি।
ফালাক রেগে গিয়ে খাবারের থালা রেখে উঠে পড়ল।মেহেরের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।কিন্তু মেহেরের তাতে একটুও ভীতি কাজ করছেনা।চলে গেল ফালাক নিজের কক্ষে।
পিতাঃ মেহেরুন মা তুমি যা ভেবেছো ঠিক তা নয়।
অন্যায়ভাবে রাজ্যগুলো দখল করেছে ঠিকই। কিন্তু রাজ্যের চাষাদের উপর ও কখনো জোড় জুলুম করে খাজনা আদায় করেনা বা অস্বাভাবিকরূপে খাজনার পরিমান বাড়িয়ে ও দেয়না।যখন কৃষকেরা খাজনা দিতে দেরী করে বা যা পরিমাণ তার থেকে কম দেওয়ার চেষ্টা করে তখন ও খুব রেগে যায় আর ওর রাগ মানেই তাদেরকে পাশবিকভাবে আঘাত করা।রেগে গেলে ও ওর মনুষত্য হারিয়ে ফেলে। আসলে কৃষকেরা ওর উপর এত ক্ষিপ্ত হতোনা যদি ও গ্রামের যুবতী নারীদের সাথে অন্যায় না করতো।
নারীদের সাথে অন্যায় করার কথা শুনতেই মেহেরের মনে পড়ল কাল রাত্রে ফালাকের ঘুমের মধ্যে বলা কথাগুলো।কথাগুলোর মাঝে একটা অনেক বড় ইতিহাস লুকিয়ে আছে তা মেহের খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।খাবার খাওয়া শেষ করে মেহের পিতাকে ধরে তার কক্ষে নিয়ে এল।
মেহেরঃ আব্বাজান, কাল মাঝ রাত্রে আপনার পুত্রের শরীরে অসম্ভব জ্বর এসেছিল।
পিতাঃ তাই?রাজচিকিৎসক কে জানিয়েছিলে?
মেহেরঃ না। আমি নিজেই ওনার সেবা করেছিলাম কপালে পানিপট্টি দিয়ে।তাতে কিছুসময় পর জ্বর কমে গিয়েছিল।আর যখন শরীরে জ্বর ছিল তখন উনি ঘুমের মাঝে নানারকম বিলাপ করছিল।
পিতাঃ হ্যা।এটা ফালাকের শৈশব থেকেই হয়ে আসছে।শরীরে জ্বর থাকলে ঘুমের মধ্যে বিলাপ করে।
মেহেরঃ উনি তখন চিৎকার করে ওনার আম্মিকে রক্ষা করার কথা বলছিলেন।
পিতা কিছুটা বিস্মিত হয়ে মেহেরের দিকে তাকালেন।
পিতাঃ আর কি বলেছে ও?
মেহেরঃ কেউ ওনার আম্মির উপর খুব অত্যাচার করছে।ওস্তাদ নামে কাউকে ডাকছিলেন আর……
শেষের কথাটা বলতে গিয়ে মেহের থেমে গেল।
পিতাঃ আর কি মেহেরুন?
মেহেরঃ আমি ওনার পায়ের তালু দেখে চমকে গিয়েছিলাম।উনি এ কথাও বলছিলেন ওনার খুব কষ্ট হচ্ছে, জ্বলে যাচ্ছে ওনার পা।ওনার পায়ের তালুতে অসম্ভব কালো দাগ ।মনে হচ্ছিল লোহা জাতীয় কিছু দিয়ে পায়ের তালুতে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে।
কিছুসময় পিতা নিচে তাকিয়ে চুপ করে রইল।চোখে পানি টলমল করছে।মেহের মনে করল ওর কথাতে উনি হয়তো কষ্ট পেয়েছে।
মেহেরঃ ক্ষমা করুন আব্বাজন।আমি বুঝতে পারিনি আপনি কষ্ট পাবেন।আমি বিশ্রাম করুন আমি আসছি।
পিতাঃ দাড়াও মা।ভেবেছিলাম আরো অনেক পরে এই ঘটনাগুলো বলব।কিন্তু তুমি যখন কিছুটা জানতে পেরেছো।তখন আর দেরী করে লাভ নেই।
ফালাকের জীবনের সব থেকে দুঃসহনীয় মুহূর্ত। যা মনে পড়লে আজও আমার শরীরে লোম দাড়িয়ে যায়।ফালাকের দুই বছর বয়সে ওর পিতা মারা যায়।ফালাকের পিতা মারা যাওয়ার পর তার ভাই জোরপূর্বক সিংহাসনে বসে আর ফালাকের মাতাকে রাজ্য থেকে বের করে দেয়।তখন থেকে ফালাকের নানাজি ওদের দায়ভার নেয়।বিধবারূপেই উনি ফালাককে নিয়ে দিন পার করতে থাকে।শত চেষ্টা করার পরও ওনাকে অন্য কোনো রাজা বা রাজপুত্র বিবাহ করতে রাজি হচ্ছিলনা।অতঃপর ফালাকের নানাজি এমন প্রস্তাব দিল যে তার কন্যা এবং কন্যার পুত্রকে সহ গ্রহণ করবে তাকে রাজত্ব দিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ রাজ্যের সিংহাসনে তাকে বসাবে। এদিকে ফালাকের একজন মামা ছিলেন অবশ্য আপন নয় সৎ-মামা।যার চরিত্র খুব খারাপ ছিল আর অত্যাচারী ছিল।সবসময় লোভ করতো।রাজ্য তার হাতে তুলে দিলে রাজ্যের প্রজারা শান্তিতে থাকতে পারবেনা।তাই ফালাকের নানাজি চাইতনা তার হাতে রাজ্যের শাসনভার তুলে দিতে।কিন্তু ফালাকের মামা ওনার এমন সিদ্ধান্ত শুনে ক্রোধে পশুর মত হয়ে যায়।ফালাকের নানাজির শত্রু কাশেম সিকদারের সঙ্গে হাত মেলায়।রাজ্য দখলের জন্য তারা এক ষড়যন্ত্রের জাল তৈরি করে যার সাথে যুক্ত হয় কাশেমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজগর। আজগর নানাজির প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার কন্যাকে বিবাহ করে সিংহাসনে বসে।কয়েকবছর খুব ন্যায়-নীতির সাথে রাজ্য পরিচালনা করে।নানাজি বার্ধক্যজনিত রোগে মুত্যুবরণ করার পরই তার আসল রূপ বেরিয়ে আসে।তখন ফালাকের দশ বছর বয়স।বিভিন্নভাবে ফালাকের মাতার উপর অত্যাচার শুরু করে।তার সামনে অন্য নারীর সাথে রাত কাটাতো।একদিন সে কোনো এক বাইজিকে বিবাহ করে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসে।সে পর্যন্ত রানীমা কে অত্যাচার করতো।আমি তখন ফালাককে আরবী শিক্ষা আর অস্ত্র শিক্ষা দিতে আসতাম রাজপ্রাসাদে।খুব ভালোবাসতাম ওকে।ওস্তাদ বলে ডাকতো।প্রাসাদে ফালাকের মাতা আর আমি ছাড়া কেউ ওকে আদর সোহাগ করতোনা।খুব খারাপ ব্যবহার করতো আজগর আর ওর মামা।তাই মাঝে মাঝে আবদার করতো আমাকে আব্বাজান বলে ডাকবে।কিন্তু আমি বারণ করতাম।সামান্য আরবী শিক্ষকের কি অধিকার রাজপুত্রের মুখে পিতা ডাক শোনার?এত সাহস আমার ছিলনা।সব থেকে বড় বিপদ হলো সেদিন রাতে যেদিন কাশেম এই রাজমহলে এল।তখন রানী ফালাকের মাথায় পানিপট্টি দিচ্ছিল কক্ষে বসে।ওর খুব জ্বর ছিল সেদিন রাতে।হঠাৎ করেই কক্ষে কাশেম ঢুকে পড়ে।রানীর ইজ্জতের উপর হামলা চালায়।রানী নিজের সম্মান বাঁচাতে চিৎকার করে আজগর কে আর তার ভাইকে ডাকে।তখন তার ভাই আর আজগর ওই বাইজিকে সঙ্গে করে কক্ষে প্রবেশ করে।কিন্তু রানীকে বাঁচানো তো দূরে থাক।ওরা নিজে সহযোগীতা করে কাশেমের পাপ কাজে।কাশেম আর বাইজি সুলতানা রানীকে বেঁধে দেয়।তারপর শুরু হয় রানীর সাথে পাশবিক অত্যাচার।ছোট্ট ফালাক তখন চিৎকার করছিল মাতাকে রক্ষা করার কথা বলে।ফালাকের সামনে রানীকে এভাবে অত্যাচার করছিল ওরা।কারো কোনো লজ্জাবোধ ছিলনা।দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল শুধু।বাইজি সুলতানা আর আজগর দুজন দুজনকে ধরে হাসছিল।কি ভয়ংকর দৃশ্য ছিল যা ফালাক নিজে চোখে দেখেছিল।অত্যাচার শেষে রানী কাশেমকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে সেই তলোয়ারের আঘাতে রানীর জান কেড়ে নেয় কাশেম।এ সব কিছুই ফালাক নিজের চোখে দেখেছিল।রাজপ্রাসাদে রাজ করতে থাকে আজগর, কাশেম সবাই।ফালাককে দেখার মত আর কেউ থাকলোনা।এমনকি আমাকেও ওরা আর আসতে দিতনা রাজপ্রাসাদে। কথায় ফালাক কে মারধোর করতো ওদের স্ত্রীগণ।একদিন ফালাক খু্ব রাগান্বিত হয়ে ফুলের দানি ছুড়ে মারে কাশেমের স্ত্রীর কপালে।তাতে ওর কপাল কেটে গিয়ে রক্ত বের হয়। আর সেই কাজের শাস্তিস্বরূপ ফালাককে খুব মাড়ে আর ওর পায়ের তালুতে লোহার শিক আগুনে গরম করে তা চেঁপে ধরে। রাজচিকিৎসক এই দৃশ্য আর সহ্য করতে পারেনা।একমাত্র উনি রাজপ্রাসাদে ছিল যে ফালাককে ভালোবাসতো কিন্তু ওদের ভয়ে তা দেখাতে পারতোনা।নিরুপায় হয়ে উনি আমাকে খবর জানায়।অনেক চিন্তাভাবনার পর আমি রাতের আঁধারে রাজচিকিৎসকের সহায়তায় রাজমহলে ঢুকি।খুব সাবধানে সেদিন আমি ফালাককে ওর অসুস্থ শরীরেই ওকে চুরি করে নিয়ে চলে আসি।এক অন্য রাজ্যে চলে যায় ওকে নিয়ে।
ওখানেই বসবাস করতে শুরু করি।সময়ের সাথে সাথে ওকে অস্ত্রশিক্ষাতে পারদর্শী করে তুলি।কিন্তু তখন ফালাকের ব্যবহার, কথাবার্তা, চলাফেরা সবকিছুতে পরিবর্তন লক্ষ্য করি।কেমন একটা গাম্ভীর্য ভাব থাকত সবসময় ওর মাঝে।ওর বয়স যখন সতেরো হয় তখন বুঝতে পারলাম ওর মনের মাঝে এখনো সেই ঘটনাগুলো পুষে রেখেছে।ভেবেছিলাম ছোট্ট ফালাকের হৃদয়ে অতো ছোট সময়ের ঘটনা আস্তে আস্তে মুছে যাবে।কিন্তু ও যে এতো নিঁখুতভাবে ঘটনার প্রতিটা মুহূর্ত বর্ণনা করেছিল যা শুনে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠেছিল।ও নিজেকে অস্ত্রশিক্ষায় এমনভাবে নিজেকে পারদর্শী করেছিল যাতে ওকে খুব সহজে হেরে যেতে না হয়। কিন্তু নিজের অধিকার আদায়ের জন্য শুধু অস্ত্রশিক্ষা নয় চাই প্রখর বুদ্ধি।যা ওর মাঝে ছিল। ও আমার থেকে জেনে নিয়েছিল ঠিক কিভাবে ওরা ওর রাজ্য দখল করেছে।আর সেই মোতাবেক ও সেই পরিকল্পনাতেই ওর রাজ্য হামলা করে। তখন ওর বয়স একুশ চলে। কিন্তু সেদিন ও ওর পরিকল্পনার মাঝে ওর মাতাকে যেভাবে সম্মানহানী করা হয়েছিল ঠিক সেইভাবে কাশেম সিকদারের কন্যার সম্মানহানী ঘটাবে তা আমার জানা ছিলনা।কাশেমের সামনে ওর কন্যাকে কক্ষে নিয়ে কক্ষের দরজা আটকিয়ে সেই আর্তনাদ শোনায় যে আর্তনাদ ওর মাতা করেছিল। সবশেষে কাশেম কে ও হত্যা করে ওই সিংহাসনে বসে।
মেহেরঃ কার সহায়তায় রাজ্য আক্রমণ করেছিল?
পিতাঃ রাজীব তালুকদার যে ছিল কাশেমের শত্রু। তার সঙ্গে পরিকল্পনা করে তার সৈন্যসামন্ত কে ও নিজে অস্ত্রশিক্ষা দান করে।কথা ছিল তার কন্যাকে ওকে বিবাহ করতে হবে।কিন্তু সে কথা ও রাখেনি। পরবর্তীতে তার সাথে ও ওর একদফা যুদ্ধ হয়ে যায়। পরাজিত হন তিনিও।অবশেষে সেই রাজ্য ও দখলে নিয়ে নেয়।তবে সেটা বহু পরে।যতদিন ওনার সাথে সম্পর্ক ভালো ছিল ততদিন উনি ওকে এমন পরামর্শ দিতেন আশেপাশের রাজ্য বহাল করতে পারলে কেউ ওকে আর সিংহাসনচ্যুত করতে পারবেনা।বেপরোয়াভাবে তাকে সাথে নিয়ে ফালাক একের পর এক রাজ্য আক্রমণ করতে থাকে।তার মাঝে কিছু রাজ্য ছিল ওর হেফাজতে আর কিছু ছিল রাজীবের হেফাজতে। কাশেমের কন্যার ঘটনা জেনে উনি ওকে খুশি রাখার জন্য বিভিন্ন নারী ওর সামনে উপস্থিত করত।আর এভাবেই ওর অধঃপতন হতে থাকে। দাদাজির রাজ্য ও আজ ওর দখলে।ভেঙ্গে পড়ি আমি।দিন দিন নতুন করে ওকে আমি চিনতে থাকি।
এতকিছু শোনার পর মেহের আর পিতার মাঝে কিছুক্ষণ নিরাবতা চলল।তারপর পিতা-ই নিরাবতা ভেঙ্গে কথা বলল।
পিতাঃ ওকে কখনো আমি শাসন করতে পারিনি। গায়ে হাত তুলতে পারিনি।মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে পড়লেই ফালাক ওর নিয়ন্ত্রণ হারায়,জ্ঞান হারিয়ে মূর্ছা ও যায় কিছু কিছু সময়।অনেক বছর এই জন্য ওর চিকিৎসা চালায় রাজচিকিৎসক কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি।
ছোটতেই মাঝে মাঝে এভাবে জ্ঞান হারাত।তখন আমি বুঝতাম না পরে এসে জানতে পারলাম ওর এমন অবস্থা হয় কেনো।
মেহেরঃ নিজের অধিকার আদায়ের পরেও কেন অন্য রাজ্য দখলে আনবে সে?কেন অন্য নারীদের সম্মানহানী ঘটাবে?ওনার সাথে যা হয়েছিল তার প্রতিশোধ তো উনি নিয়েছেন। তাহলে…..?
পিতাঃ রাজীব তালুকদার এটা ওর অভ্যাসে পরিণত করে দিয়েছিল।শিকারীর শিকার করা যেমন একটা নেশা হয়ে দাড়ায় তেমনি নারী ও ওর কাছে শিকার সমতুল্য হয়েছিল।মেহেরুন সবসময় একটা দিকেই খেয়াল রাখবে তুমি ওকে আর যে কোনো উপায়ে ওর হৃদয়ে আঘাত করো কিন্তু মাতাকে নিয়ে নয়।
মেহের নিজের কক্ষে এসে অনেক কিছু ভাবতে থাকে।রাত হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই ফালাক মধুপুর থেকে চলে এসেছে।কক্ষে মেহের জানালার কাছে দাড়িয়ে ছিল।ফালাকের পায়ের আওয়াজ শুনে সামনে ফিরে তাকায়।ফালাক চোখে মুখে তখন প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ।মেহের শুধু তাকিয়েই আছে কোনো কথা বলছেনা।ফালাক মেহেরকে দেখে থমকে গেল।অবাক নয়নে দেখছে মেহেরকে। এক পা দু পা করে আস্তে আস্তে মেহেরের দিকে আগাচ্ছে।কিন্তু মেহের বুঝতে পারছেনা ফালাক এভাবে কেনো ওর দিকে আগাচ্ছে।একসময় মেহেরের একদম কাছে চলে এল।
মেহেরঃ কি হয়েছে?কিছু বলবেন?
ফালাকঃ (……)
ফালাক কোনো কথা বলছেনা।ফালাক মেহেরের এতটায় কাছে চলে এসেছে যে মেহের মাঝে দূরত্ব রাখার জন্য জানালার পাশে দেয়ালের সাথে মিশে গেছে।কিন্তু ফালাক তাতে আরো কাছে এগিয়ে এসেছে।
মেহেরঃ কি সমস্যা?আপনার সবসময় কি নারীর সংস্পর্শ চায়?
ফালাক মেহেরের এমন কথায় একটু রেগে গেল। দুই বাহু ধরে মেহেরকে কাছে টেনে নিল।মেহের ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেছে।

চলবে…..

(মেহেরের চোখে নেমে আসছে ফালাকের সর্বনাশ খুব শিঘ্রই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here