হিংস্রপ্রেম পর্ব ৩ +৪

0
431

Sroty: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ০৩
লেখাঃ Israt Jahan

ফালাক দুইজন রক্ষীকে সাথে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে করে রওনা হল তার পালকপিতার কাছে।ফালাকের পালকপিতা ফালাকের কার্যসমূহে ক্ষুব্ধ,নারাজ তাই তিনি ফালাকের নিকট থেকে দূরে থাকেন।গ্রামের ভেতর ছোট্র একটা কুঁড়ে ঘরে তিনি বসবাস করেন। রাজমহল থেকে খাবার,পোশাক যত যায় কিছু দেওয়া হোক তিনি তা গ্রহণ করেন না।গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চাদের বিনা বকসিস এ আরবী শিক্ষাদান করে বলে গ্রামের মানুষগুলোই তাকে দেখা শোনা করে,তার যত্ন করে,আহারের ব্যবস্থা করে।ফালাক পালকপিতার ছোট্ট কুড়ে ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পেল তিনি শক্ত কাঠের একটি চৌকিতে মাদুর পেতে ঘুমিয়ে আছে।ঘরের চারপাশের অবস্থা দেখে ফালাকের বড্ড ঘৃণা হল। ছনের চাল ভেঙ্গে ঝুলে পড়েছে প্রায়।ঘাস পাতা দিয়ে বেড়া-জাল দেওয়া কাচাঘর আর পায়ের নিচের মাটিও কেমন বৃষ্টির পানিতে ভিজে ভিজে হয়ে আছে।ফালাক নিঃশব্দে ওনার মাথার কাছে গিয়ে বসল।পিতার মাথায় হাত রাখতেই তিনি চোখ খুলে তাকালেন।চোখ খুলে পালক সন্তানকে দেখে তিনি বড্ড খুশি হলেন কিন্তু খুশিটা ফালাকের সামনে আর প্রকাশ করলেন না।তিনি ফালাককে একটু দেখে কোনো কথা না বলে চোখদুটো আবার বন্ধ করে ফেললেন। ফালাক বলল,
-“আব্বাজান,আপনার এতুটুকু সেবাও কি আমাকে করতে দিবেন না?
-“আমি যথেষ্ট সেবাতেই আছি ফালাক তাজ।এরা আমাকে এতুটুকুও অ সুখে রাখেনি।
-“সে তো আমি দেখতেই পাচ্ছি গ্রামবাসী আপনাকে কত সুখে রেখেছে। চাল বেয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে মেঝে ভিজে হয়ে আছে।একটা শক্ত কাঠের চৌকিতে তুলাবিহীন বালিশের উপর মাথা রেখে কত কষ্টে শুয়ে আছেন আপনি।
-“তাজ?তুমি আমার কষ্ট বুঝো?
-“আব্বাজান এসব কথা রাখুন।আমি আপনাকে রাজপ্রাসাদে নিতে এসেছি। আমি আপনার আর কোনো বারণ ই শুনবোনা।এখান থেকে আমি আপনাকে আজই নিয়ে যাব।
-“আমাকে না দেখলে আমার ছোট ছোট প্রাণপাখি গুলো যে কষ্টে ছটফট করবে।
-“আমার কষ্টটা আপনার কাছে কিছুই নয় আব্বাজান?
-“তুমি কোনো কষ্টে নেই তাজ।তবে কষ্টের ক্ষণ আসতেও বেশি যে দেরী নেই।কারণ আমি পরলোকগমন করলে তোমার যে পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ থাকবেনা।কেউ তোমাকে আর তাজ বলে ডাকবেনা।অত্যন্ত কঠোর শব্দের বাক্য সম্রাট ফালাক বলেই সম্বোধন করবে সবাই।সেই ডাকে কোনো স্নেহ-মমতা, আদর-সোহাগ আর ভালোবাসা থাকবেনা।
-“আব্বাজান চুপ করুন আপনি।আমি যে আর এমন বাক্য শুনতে পাচ্ছিনা আপনার মুখ থেকে।দোহাই আপনার আপনার মৃত্যুর শব্দটি উচ্চারণ ও করবেন না।আপনি অসুস্থ তাই টম-টম নিয়েসেছি।চলুন,আমি আপনাকে কক্ষের বাহির অবদি কোলে চড়িয়ে নিয়ে যাব। পায়ে হেঁটে যেতে হবেনা আপনাকে।
-“আমি তো বলেছি তাজ!তোমার সেবা-শুশ্রূষা আমার কোনো প্রয়োজন নেই।বরংচ ইহা প্রজাদের উপর দেখাইলে আমি সন্তুষ্ট হবো।
-“আমার সেবা আপনি নিতে চান না,ঠিক আছে।পুত্রবধুর সেবা ও গ্রহণ করবেন না?
ফালাকের মুখে পুত্রবধুর কথা শুনে ফালাকের পিতা চমকে উঠলো।প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে তিনি ফালাকের দিকে তাকাল। ফালাক বলল,
-“আব্বাজান আমি বিবাহ করতে চাইছি।হ্যা…আপনার পুত্র শেরপুর রাজ্যের রাজকন্যাকে আপনার পুত্রবধু রূপে গ্রহণ করতে চাই।আপনার কি এ বিবাহে সম্মতি আছে?
পিতার চোখে পানি চলে এল।তার অনেকদিনের স্বপ্ন।ফালাকের জীবনে অপরূপ সুন্দরী এক রাজকন্যা ওর বিবি হয়ে আসবে।ওকে তার ভালোবাসা দিয়ে ফালাককে হিংস্ররূপ থেকে আবার সেই আগের মিষ্টভাষী,কোমল হৃদয়ের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।আজকে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।সেখানে তার সম্মতি না থেকে পারে?চোখভর্তি পানি, হাত দুটো ফালাকের দিকে এগিয়ে দিল ওকে জড়িয়ে ধরার জন্য।আঠারো বছর পর ফালাক ওর পিতাকে এমন খুশি দেখল।ছুটে গেল পিতাকে জড়িয়ে ধরার জন্য।পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষেরই কিছু না কিছু দুর্বলতা থাকে।ফালাকের ও আছে।তারমাঝে ফালাকের পালকপিতা একজন।ফালাত অতি আনন্দে তার পিতাকে রাজমহলে নিয়ে এলো।ওনাকে আলাদা কক্ষে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে খাবার আনতে পাঠাল।ফালাক নিজে হাতে করে তার পিতাকে খাইয়ে দিল।এই দৃশ্য যেন সবগুলো দাসীকে অবাক করে দিল।এত কোমলতা ফালাকের মাঝে কেউ কখনো আগে দেখেনি।পিতাকে খাইয়ে তার পাশে দুজন দাসীকে রেখে চলে গেল মেহেরুনের কক্ষে।কক্ষের দরজা সবসময় মেহেরুন বন্ধ করে রাখে।দরজার কড়া নাড়ল ফালাক।
-“রাজকন্যা মেহের দরজা খুলুন।আমি বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পছন্দ করিনা।
মেহেরুন শরীরসহ মুখ ঢেকে দরজা খুলে ফালাকের সামনে এসে দাড়াল।বলল,
-“এ কক্ষে কোনো মেহের বাস করেনা। আমি মেহেরুন।আপনি কি আমাকে ডাকছেন?
-“জ্বি।
-“কেনো?
-“আপনার কাছে কোনো খবর আসেনি?
-“না।
-“ঠিক আছে।আমার সাথে আসুন।
ফালাকের কথার পাত্তা না দিয়ে মেহেরুন ঠাই দাড়িয়ে রইল নিজের স্থানেই।
ফালাক সামনে কিছুটা এগিয়ে আবার থেমে গেল মেহেরুনের আসার শব্দ না পেয়ে।মেহেরুনের কাছে এগিয়ে এসে বলল,
-“সাথে তো অস্ত্র আছেই।ক্ষতি করতে চাইলে আঘাত করে দিবেন।আসুন আমার পিছু পিছু।
মেহেরুন কিছুটা অবাক হলো এটা ভেবে,ফালাক কি করে বুঝল যে ওর কাছে একটি ধারাল ছুড়ি আছে।ভাবনাটা থামিয়ে মেহেরুন হাঁটতে থাকল ফালাকের পিছু পিছু।ফালাক ওর পিতার কক্ষে নিয়ে এলো মেহেরুনকে।পিতাকে মেহেরুনের রূপ দেখাল,ওকে কথা বলিয়ে দিল ওর পিতার সাথে।মেহেরুন কিছু বুঝতে পারলোনা সম্রাট কেনো ওকে ওর পিতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।অবশেষে জানতে পারল যে,রাজা ফালাকের সাথে ওর বিবাহ ঠিক হয়েছে। এটা জানার পর মেহেরুনের মাথায় যেন পুরো আকাশটা ভেঙ্গে পড়ল।নিজের কক্ষে গিয়ে ভাংচুর শুরু করল।কোনো দাসী তাকে আটকাতে পারছেনা।কয়েকবার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টাও করেছে।কিন্তু দাসীগুলো থাকার কারণে সে কিছু করতে পারেনি।দাসীরা ওকে সামলাতে না পেরে ফালাককে খবর দিল।ফালাক রুমে প্রবেশ করল।তারপর দাসীদের উদ্দেশ্য করে বলল,
-“তোমরা সকলে বেরিয়ে যাও কক্ষ থেকে।
ফালাকের কথা শুনে সবাই কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।আর ওদিকে মেহেরুন ক্রোধে সাপের মত ফুসছে শুধু।ফালাক মেহেরুনের কাছে গিয়ে বলল,
-“নিজের পিতামাতাকে সুস্থ আর জীবিত দেখতে চাইলে বিবাহে সম্মতি দাও।যদিও আমি জোড় করেই তোমাকে বিবাহ করতে পারি।চাইলে তোমার সাথে এখন অনেক কিছু করতে পারতাম।কিন্তু তোমার সাথে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাইছি।
ফালাকের কথা শুনে মেহেরুন স্তব্ধ হয়ে গেল। ফালাক মনে মনে বলছে,
-“ঔষধ ঠিক জায়গায় লেগেছে।ওকে কব্জা করা মৌখ্য উপায় এটাই।
কাল সন্ধ্যা নাগাদ ফালাক মেহেরুনের বিবাহ সম্পূর্ন হলো।বিবাহের সময় মেহেরুনের পিতামাতাকে হাজির করা হয়েছিল।তারা শুধু কেঁদে আর্তনাদ করেছিল।আর কিছুই করার ক্ষমতা ছিলনা তাদের।সবশেষে অনেক রাতে যখন ফালাক ওর ফুলশয্যার কক্ষে প্রবেশ করল তখন দেখতে পেল মেহেরুন বিছানায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।বিশাল বড় এক ঘোমটা দেওয়া মুখের উপর।
-“বাহ্ দেখে খুব শান্তি পেলাম।তুমি অবশেষে আমাদের বিবাহটা মেনে নিতে পেরেছো। আসলে এই বিবাহ করার মত কোনো সাধ ই আমার এক কালে ছিলনা।বিবাহ ছাড়াই আমি নারীদেহ ভোগ করেছি আর তা শুধু একবারের জন্যই।দ্বিতীয়বারের জন্য আমি তাদের স্পর্শ ও করিনি।কিন্তু তুমি একমাত্র নারী যাকে আমার বিবাহ করার ইচ্ছা হয়েছে।আমার অর্ধাঙ্গিনী রূপে তোমার কাছে যাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে।তবে তা একবারের জন্য নয় বহুবারের জন্য।কথাগুলো বলে যখন মেহেরুনের কাছে গিয়ে ওর মুখের উপর ঘোমটা টা সরিয়ে দিল তখন ফালাক যা দেখতে পেল তা দেখে ফালাকের শরীর ভয়ে কেঁপে উঠল।

চলবে……

Story: #হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ০৪
লেখাঃ Israt Jahan

মেহেরুনের পুরো মুখ রক্তে লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ধারাল কোনো চাকু দিয়ে মুখটাকে বিভৎস করে কাটা হয়েছে।মেহেরুন বিছানার এক পাশে হেলান দিয়ে বসে আছে কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে ওর চেতনা যায় যায় অবস্থা।
ফালাকঃ মেহের!তুমি এগুলো কি করেছ?নিজের প্রাণের মায়া ও একবার করলেনা?
মেহের ভেজা আর কাঁপা স্বরে বলল,
মেহেরঃ আপনার মত হিংস্র দানবের কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার চেয়ে আমার মৃত্যু সর্বাপেক্ষা শ্রেয়।
ফালাক আর একমুহূতর্ত সময় নষ্ট না করে দ্রুত রাজচিকিৎসক কে খবর পাঠাল। ততক্ষণে মেহের চেতনা হারিয়েছে। রাজচিকিৎসক জলদি চলে এল।কক্ষে ফালাক,ফালাকরের পিতা আর রাজচিকিৎসক।
রাজচিকিৎসকঃ যথাসময়ে খবর পৌছাতে পারেন নি সম্রাট।অনেকক্ষণ আগে উনি নিজের এই অবস্থা করেছে।অনেক রক্ত ঝরে গেছে।আমি আমার যথাসম্ভব চেষ্টা করছি কিন্তু কোনো আশা দিতে পারছিনা।
পিতাঃ মেহেরুন এমন ক্ষতি কেনো করলো তাজ?
ফালাকঃ(……)
পিতাঃ কি হয়েছিল তোমাদের মাঝে,বলো?
কিছুসময় ফালাক চুপ থেকে ওর পিতাকে মেহেরুনের রাজ্য আক্রমণ থেকে শুরু করে ওকে তুলে নিয়ে আসা আর এখন অবদি যা যি ঘটেছে সবকিছু বর্ণনা দিল।এসব শুনে পিতা ফালাককে কোনো কিছু বললনা।শুধু ঘৃণিত মুখভঙ্গিতে ফালাকের দিকে চেয়ে রইল।ক্রোধে আর ঘৃণায় তিনি কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলেন।রাজচিকিৎসক মেহেরের চিকিৎসা কার্য চালিয়ে যাচ্ছেন।ফালাক কিছুসময় মেহেরের পাশে বসে থেকে তারপর পিতার কক্ষে গেল।
ফালাকঃ আব্বাজান?ভেতরে প্রবেশ করতে পারি?
পিতাঃ এসো।
ফালাকঃ আব্বাজান,আমার অন্যায় হয়ে গেছে।এসকল তথ্য আপনাকে আমার আগে দেওয়া উচিত ছিল।
পিতাঃ হ্যা,পূর্বেই দিলে আমি কখনো এই বিবাহে সম্মতি প্রকাশ করতাম না।
ফালাকঃ আমার মেহেরুনকে বড্ড বেশি পছন্দ হয়েছে।আমি ওকে আমার স্ত্রীরূপে গ্রহন করতে চেয়েছিলাম।
পিতাঃ তার ফলাফল কি পেলে তুমি?
ফালাকঃ(……)
পিতাঃ চুপ করে আছো কেনো?বলো কি পেলে?বুঝতে পেরেছো তো একজন নারীর সম্মান তার জীবনের থেকেও দামী বস্তু?তোমার হাতে নিজেকে তুলে দিবেনা বিধায় সে নিজের প্রাণ দিতে বসেছে।যে রূপ দেখে তুমি মুগ্ধ হয়ে তাকে গ্রহণ করতে চেয়েছিলে সেই রূপ সে কিভাবে ছিন্ন-বিছিন্ন করে দিয়েছে। একবার ওই কন্যার স্থানে নিজেকে বসিয়ে দেখো,কতো বেশি ঘৃণিত তুমি তার কাছে।তুমি আজ মুসলিম সন্তান হয়েও নিজ ধর্ম থেকে ছিন্ন।এই তাজকেই কি আমি তার শৈশবকালে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছিলাম? কোরআন তিলওয়াত শিখিয়েছিলাম? ন্যায়-নীতি শিখিয়েছিলাম?আজ আমার এসব ভাবতেই অবাক লাগে।যেই তাজ তার শৈশবে সামান্য আহত প্রজাপতিকে সেবা-শুশ্রুষা করতে ব্যস্ত হয়ে থাকত আজ সেই তাজের হাতে মানব সন্তান খুন হয়,নারী সম্মান বিনষ্ট হয়।ভাবতেই আমার হৃদয় কম্পিত হয়ে উঠে।হ্যা,এমন বহুবার তোমাকে আমি এসব কথা বলেছি।প্রতিবারই তুমি এভাবে চুপচাপ হয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে শুধু শুনেছো।
কিন্তু কোনো পরিবর্তন আনোনি নিজের মাঝে। আজও আনবেনা জানি।শুধু একটা কথায় শেষবারের মত বলে রাখছি।সময় আছে নিজেকে নতুন করে একজন ধর্মপ্রাণ,
আদর্শবান,ন্যায়-নিষ্ঠার প্রতীকী রূপে নিজেকে গড়ে তুলো।নতুবা তোমার ধ্বংস অনিবার্য।সেদিন তোমার পাশে তোমার কোনো শুভাকাঙ্খী থাকবেনা।কোনো সৈন্যবাহিনী তোমাকে রক্ষা করতে পারবেনা।ভালোবাসতে শিখ মানুষকে, মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে শিখ।
পিতার কথা শুনে আর মেহেরের এমন অবস্থা চোখের সামনে দেখে ফালাক আজ বড্ড চিন্তিত।চিকিৎসা চলছে মেহেরের।আর তার পাশেই ফালাক বসে আছে।ফালাক তাকিয়ে আছে মেহেরের মুখের দিকে। কি বিভৎসই না দেখাচ্ছে মেহেরকে।চেহারাটাই বদলে গেছে ওর।মুখের মাংসগুলো কেটে গেছে।তবুও ফালাক এক দৃষ্টিতে মেহেরকে দেখছে।রাজচিকিৎসক কে মেহেরের পাশ থেকে সরতে দিচ্ছে না।
রাজচিকিৎসকঃ সম্রাট!রাত তো গভীর হলো।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।আমি আছি মহারানীর পাশে।
ফালাকঃ অসুবিধা নেই।আমার কোনো কষ্ট হচ্ছেনা।আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি। আপনি পাশের কক্ষে গিয়ে বিশ্রাম করুন। আমি আছি ওর পাশে।
রাজচিকিৎসকঃ কিন্তু সম্রাট কিছুসময় বাদেই ওনার মুখে ঔষধ লাগাতে হবে।
ফালাকঃ কি ঔষধ দিতে হবে আমাকে চিনিয়ে দিন আমি লাগিয়ে দিব।
রাজচিকিৎসকঃ ঠিক আছে সম্রাট।আমি ঔষধটা তৈরি করে দিচ্ছি।কিছুক্ষণ পর আপনি মহারানীর মুখে লাগিয়ে দিবেন।
রাজচিকিৎসক যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ফালাক মেহেরের মুখে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে।ঔষধ লাগানো শেষে ফালাক মনেমনে চিন্তা করছে,
ফালাকঃ ও কি সুস্থ হবে?কবে ও চেতনা ফিরে পাবে?
ফালাক খুব অস্থিরবোধ করছে।অস্থিরতা দূর করার জন্য কক্ষের বাহিরে হাঁটাহাঁটি করছিল।তখন ওর পিতার কক্ষ থেকে আওয়াজ আসলো তিনি নামাজের পাটিতে বসে আল্লাহর কাছে কাঁদছেন আর মোনাজাত করছেন,
পিতাঃ হে দয়ালু!তুমি আমার তাজের প্রতি দয়া দৃষ্টিতে দেখো।ওর অন্তরে দয়া-মায়া সৃষ্টি করো,ওকে তুমি পূর্ণ হেদায়েত দান করো।হে রহমানের রহিম,তুমি ওর উপর রহমত বর্ষণ করো,ওর কঠোর হৃদয়কে মোমের ন্যায় গলিয়ে দাও,হৃদয়কে কোমল করে তুলো,ওকে ওর পাপের সাম্রাজ্য থেকে বের করো।
এই দৃশ্য দেখে ফালাকের আঁখিদ্বয় ওর মনের অজান্তেই অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল।হৃদয়ের আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে ফালাক আবার নিজের কক্ষে চলে এল।কয়েক মুহুর্ত ঠাই বসে রইলো ফালাক।ভোর হয়ে এসেছে প্রায়।আজানের ধ্বনি কানে আসছে ওর। রাতে আর ফালাকের চোখে আর ঘুম নেমে আসেনি।আজকে যেনো ফালাকের ইচ্ছা করছে আল্লাহর দরবারে নিজেকে সঁপে দিতে।দীর্ঘ পনের বছর পর ফালাক অযু করে জায়নামাজ এর পাটিতে দাড়াল।ফজরের নামাজ আদায় করে হঠাৎ ওর মনে হল,
ফালাকঃ কোরআন পাঠ কি আমি ভুলে গেছি?একবার যাচাই করে দেখি।
ফালাক কোরআন শরীফ নিয়ে বসল। আলিফ লাম মিম বলে কোরআন তিলওয়াত শুরু করলো।প্রথম অবস্থাতে হাফেজী কোরআন শরীফের পেঁচানো আরবি অক্ষর গুলো একটু চিনতে কষ্ট হচ্ছিল। কিছুসময় নিয়ে সেগুলো দেখে নিয়ে ফালাক স্পষ্টভাবে পড়তে শুরু করলো।কোরআন পড়তে পড়তে কখন যেনো ফালাকের কন্ঠ উচ্চ হয়ে গেল।কোরআন তিলওয়াতের সময় কন্ঠ ছেড়ে কোরআন তিলওয়াতের অভ্যাস ছিল ফালাকের।আজও তাই হল।ওর কন্ঠে কোরআন তিলওয়াত শুনে সব দাস-দাসী, রাজচিকিৎসক,রক্ষী সবাই একত্র হয়ে গেল। সবাই যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি মুগ্ধ হয়েছে ফালাকের কন্ঠে মিষ্টি কোরআন তিলওয়াত শুনে।কি মিষ্টিই না শোনাচ্ছে ফালাকের কন্ঠে।আজকে হয়তো ফালাক নিজের নামের মর্যাদা রাখল। পিতার কানে এই সুখবর পৌঁছে গেল তার পুত্র সেই আগের ন্যায় কোরআন পাঠ করছে। আকুল হৃদয়ে ছুটে এল তিনি ফালাকের কক্ষে।ফালাকের হুশ নেই যে ভোর হয়ে সকালের সূর্য উঠে গেছে।জানালা থেকে সকালের মিষ্টি রোদ এসে ফালাকের কোরআন এর উপর পড়লো।আল্লাহ্ পাকের ইচ্ছায় ঠিক ওই সময়ই মেহেরের জ্ঞান ফিরল।জ্ঞান ফিরতেই সে ফালাকের কোরআন তিলওয়াত শুনতে পেল।অসুস্থ শরীরেই সে ঘাড় ঘুরিয়ে ফালাকের দিকে চাইল।সে নিজেও হতভম্ব।অবাক নয়নে ফালাকের কোরআন পাঠ শুনছে।কোরআন পাঠ করতে করতে যখন ফালাকের গলা শুকিয়ে গেল তখন সে পাঠ করা থামালো। পানি পান করার জন্য জায়নামাজ থেকে উঠে পানি পান করে পিছু ঘুরতেই ওর দিকে তাকিয়ে থাকা এতোগুলো চোখ দেখে নিজেই ভড়কে গেল।ফালাকের পিতা ওকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না!
ফালাকঃ আব্বাজান,শান্ত হউন।কান্না বন্ধ করুন।
পিতাঃ আজই আমার অশান্ত হওয়ার দিন। আজই আমি প্রাণভরে আল্লাহর দরবারে কাঁদব।সুখের কান্না কাঁদব আমি।
ফালাকঃ আব্বাজানকে ছেড়ে পাশে তাকাতেই দেখতে পেলাম মেহের চেতনা ফিরে পেয়েছে।আমি ছুটে ওর কাছে গেলাম।
মেহের?তুমি কি সুস্থবোধ করছো?তোমার কিছু প্রয়োজন?
মেহেরঃ পানি!
ফালাকঃ ঠিক আছে একটু অপেক্ষা করো দিচ্ছি।
ফালাক দ্রুত পানপাত্রে পানি নিয়েলো।যে পানি কিছুক্ষণ আগে ফালাক নিজে খেয়েছিল।তার বাকি অংশটুকু মেহেরের মুখের সামনে ধরল।মুখের সামনে ধরতেই ফালাকের মনে পড়ল এই পাত্রে ও পানি পান করেছিল আর সেই বাকি অংশটুকু মেহেরকে দিচ্ছে।ও মেহেরের মুখের সামনে থেকে পানপাত্র সরিয়ে নিয়ে বলল,
ফালাকঃ সবুর করো মেহের।এ পাত্রে আমি পানি পান করে এঁটো করেছি।নতুন পাত্রে পানি নিয়ে আসছি আমি।
পিতাঃ না তাজ।ওই পাত্রেই তুমি মেহের মা কে পানি পান করাও এবং ওই পানিই পান করাও।
ফালাকঃ কেনো আব্বাজান?
পিতাঃ আল্লাহ্ পাক খুশি হবেন।আর ভালোবাসা উদয় হবে দুজনের মাঝে।
ফালাকঃ কিছু সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে তারপর মেহেরকে ঔই পাত্রেই পানি পান করালাম। মেহেরও তা বিনা দ্বিধায় তা পান করলো। এটা দেখে যেনো আমার ভীষণ ভালো লাগা কাজ করল হৃদয়ে।আজ থেকে আমিই মেহেরের সেবা যত্নের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।
প্রায় এক মাস মেহের শয্যাশয়ীনী ছিল। রাজচিকিৎসক আর ফালাকের থেকে সুষ্ঠু চিকিৎসা আর সেবা যত্ন পেয়ে মেহের ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠল।আগের রূপে ফিরে এল মেহের।এতোকিছুর পরও ফালাকের প্রতি মেহেরের টান বৃদ্ধি পেলনা।আর ফালাক এদিকে মেহেরকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছে।অনেক আশা নিয়ে আছে মেহের ওর ভালোবাসা গ্রহণ করবে।স্বামীর মর্যাদা দিবে মেহের ওকে।একদিন দুপুরে মেহের গোসলের জন্য গোসলাগারে যাচ্ছিল। ফালাক কক্ষে এসে তা দেখে মেহেরকে বাঁধা দিল,
ফালাকঃ মেহের?দাড়াও।
মেহেরঃ কেনো?
ফালাকঃ তুমি গোসল করতে যাচ্ছো আমাকে ডাকোনি কেনো?
মেহেরঃ আপনাকে কেনো ডাকতে হবে?
ফালাকঃ কারণ আমি তোমাকে গোসল করিয়ে দিব।কোনো দাসীর সহযোগীতার প্রয়োজন নেই।
মেহেরঃ কি বলতে চাইছেন আপনি?আমি কেনো আপনার সহযোগীতা নিয়ে গোসল করবো?
ফালাকঃ তুমি অসুস্থ থাকাকালীন আমিই তোমার গোসলের ব্যবস্থা করেছি।আসলে এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।আমি খুব আনন্দিত হই তোমার গোসল করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।
মেহেরঃ উপভোগ করেন আমার নগ্ন শরীর দেখতে?তা তো করবেনই।এতোদিন অসুস্থ থাকার কারণে আমাকে স্পর্শ করতে পারতেন না।গোসলের মাধ্যমে সেটা করতেন।আর আজ তো আমি সুস্থ।আজকে তো আপনার থেকে রেহায় পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা।যেকোনো সময় যে কোনো ভাবে আমাকে গ্রহণ করতে পারবেন,তাইনা।
ফালাকঃ মেহেরের এমন কথার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা।হৃদয়ে খুব আঘাত লাগল ওর এমন কথায়।
আজকাল ফালাক এই কষ্ট জিনিসটা অনুভব করতে পারে।আজ থেকে মেহেরুন হয়তো ফালাকের হাতে খেতেও চাইবেনা।এতোদিন ফালাকা মেহেরের খাওয়ানো থেকে শুরু করে ওর সবধরনের কাজ করে দিত।কিন্তু ফালাক কি মেহেরের এই দূরে সরে থাকাটা কি কখনো মেনে নিবে?না,ফালাকের একবার যে জিনিসের চাহিদা একবার অনুভব করে তা সে যেকোনো উপায়ে অর্জন করে।হয়তো মেহেরের ক্ষেত্রেও তাই করবে ফালাক।এতো সহজে ওর পুরোন সব অভ্যাস ধুয়ে যাবেনা।
ফালাক মেহেরকে একাই গোসল করতে যেতে দিল।খাবার খাওয়ার সময় ও দুজন একসাথে খেতে বসেছিল ঠিকই কিন্তু মেহের না খেয়ে উঠে চলে যায়।আজ মেহের সুস্থ তাই মেহের ভাবছে আজকে হয়তো ফালাক ওর থেকে স্ত্রীর অধিকার চাইবে।তাই ও খুব চিন্তিত হয়ে জানালার এক কোনে বাইরে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ করে পেছন থেকে ফালাক এসে মেহেরের কোমড় জড়িয়ে ধরল।মেহের চমকে গেল।
মেহেরঃ কে?
ফালাকঃ ভয় পেওনা প্রিয়তমা আমি তোমার স্বামী ফালাক তাজ।কেমন বোধ করছো তুমি?
মেহের ফালাককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
মেহেরঃ চলে এসেছেন অধিকারবোধ খাটাতে?এতোদিন তৃষ্ণার্ত ছিলেন আজ তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ব্যকুল হয়ে পড়েছেন। এই তো আপনার আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে।
ফালাকঃ হ্যা,আমি সত্যিই তৃষ্ণার্ত।
এতোদিন একজন নারীকেও আমি স্পর্শ করিনি কারো দিকে চোখ তুলে পর্যন্ত দেখিনি।কারণ তোমার ভালোবাসা উপলব্ধি করার জন্য আমি মরিহা হয়ে আছি।তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি।
মেহেরঃ আমার ভালোবাসা অর্জন করা আর ওই দূর আকাশের চাঁদকে হাতে পাওয়ার সমতুল্য।ভুলে গেছেন আপনি?আমি আমার মৃত্যু ঘটাতে প্রস্তুত কিন্তু আমার সম্মান কোনো নরপিশাচের হাতে বিলিয়ে দিতে আমি পারবোনা।
ফালাকঃ আহ্!আমি তোমার থেকে এই অপমান গুলো আর নিতে পারছিনা।সহ্য করতে পারছিনা এই পশুতুল্য নাম গুলো শুনতে।আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিচ্ছ তুমি। ক্রোধের সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেলে কুরুক্ষেত্র ঘটাতে আমি দ্বিতীয়বার ভাববোনা।
মেহেরঃ যা খুশি করে নিতে পারেন।পরোয়া করিনা আপনার ক্রোধের।
ফালাক ক্রোধান্বিত চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে রইলো।ক্রোধ সংবরণ করতে ও কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।মেহের কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।কিন্তু মেহের জানেনা ফালাক একবার রেগে গেলে কতটা ভয়ানক হতে পারে।রাতে মেহের আয়নার সামনে বসে চুল গুলো খুলে আচড়াচ্ছিল।এমন সময় ফালাক খাবারের পাত্র হাতে করে কক্ষে প্রবেশ করল।
ফালাকঃ মেহের?
মেহের পিছু ঘুরে তাকাল।
ফালাকঃ অনেক্ষণ আগে সন্ধ্যা অতিবাহিত হয়ে গেছে।দুপুরে ও তুমি খাবার গ্রহণ করোনি।আমি তোমার জন্য কক্ষে ই খাবার নিয়েসেছি।নাও,খেয়ে নাও।
মেহের ফালাকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে উঠে গেল আয়নার সামনে থেকে। ফালাকের কথার কোনো উত্তর দিলনা। ফালাক আবার বলল,
ফালাকঃ মেহের,খাওয়ার উপর কখনো রাগ দেখাতে নেই।খাবার ই মানুষকে জীবিত থাকতে সহায়তা করে।তাই মনে রাগ পুষে না রেখে খাওয়ারটা খেয়ে নাও।
মেহেরঃ(……)
ফালাকঃ মেহের আমি কিন্তু এক কথা বার বার বলা পছন্দ করিনা।এর আগে কোনোদিনও আমি কারো জন্য খাওয়ার হাতে করে দাড়িয়ে থাকিনি।
মেহেরঃ কে বলেছে আপনাকে দাড়িয়ে থাকতে?খাওয়ারটা নিয়ে দয়া করে এই কক্ষ ত্যাগ করুন নতুবা আমাকে যেতে দিন।
ফালাকঃ আচ্ছা তুমি কি চাইছো যে আমি আমার হিংস্র রূপটা তোমার সামনে ধারণ করি?তুমি কি জানো তুমি আমার ধৈর্য়ের পরীক্ষা নিচ্ছ?
মেহেরঃ জ্বী?কি বললেন?আপনার ধৈর্য়? এটা আপনার মাঝে আছে বুঝি?আমি সত্যিই অবাক হলাম আপনার এমন ধৈর্য় দেখে।যে সামনে খাদ্য পেয়েও ঠিক খেতে পানছেন না।কোনো শুভক্ষণের অপেক্ষায় আছেন নাকি?এ ও সম্ভব?বাঘ সামনে শিকার পেয়ে তাকে খাদ্যরূপে গ্রহণ না করে তার পরিচর্যা,সেবা-যত্ন করছে।সত্যিই আশ্চর্য হওয়ার মত বিষয়।ও আচ্ছা আমি বুঝতে পেরেছি।এই কয়দিনে আমি খুব শুকিয়ে গেছি।ভালো খাওয়ার খাইয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তারপর আমার শরীর ভোগ করতে চাইছেন।
মেহেরের এমন কথাগুলো শুনে ফালাক এবার সত্যি নিজের রাগ সংবরণ করতে পারলোনা।খাবারের পাত্রটা হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে মেহেরের কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে টেনে এনে বিছানার উপর ফেলে দিল।
মেহেরকে আচমকা আক্রমণ করাতে মেহের আত্মরক্ষার জন্য কোনো অস্ত্র নিতে পারলোনা।
মেহেরঃ ফালাক তাজ?কি করছেন আপনি? আল্লাহর কসম আমি নিজেকে শেষ করে ফেলব কিন্তু।
ফালাকঃ(……)
ফালাক শুধু মেহেরের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।তারপর মেহেরের কোনো কথার উত্তর না দিয়ে মেহেরের কাছে গিয়ে ওর বুকের উপর থেকে ওড়নাটা টেনে ফেলে দিল।মেহেরের দুহাত চেঁপে ধরে ওর মুখে,গলায় ফালাক স্পর্শ(ঠোঁটের)করলো। মেহেরের শক্তি দিয়েও ফালাকের নিকট থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা।এক পর্যায়ে মেহেরের জামার পেছনের ফিতা টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করল।মেহের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ফালাক ভীষণ রেগে গিয়ে টেনে ছিড়ে ফেলল মেহেরের জামার কিছুর অংশ।ফালাকের পিতা মেহেরুনের চিৎকার শুনে দরজার সামনে এসে ফালাকের এমন কর্ম দেখে দরজাতে অনেক জোড়ে শব্দ প্রয়োগ করল।ফালাক অতিরিক্ত ক্রোধের থাকার কারণে দরজা যে খোলা আছে তা ওর খেয়াল হয়নি।শব্দ শুনে ফালাক দরজার দিকে তাকাতেই ওর পিতাকে দেখে দ্রুত মেহেরের কাছ থেকে সরে আসল।পিতা পুত্রের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে গেল।তারপর ফালাক মেহেরের দিকে রেগে তাকিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।বাগানে যে সরোবর আছে তার পাড়ে গিয়ে বসল।
ফালাকঃ এতো বড় নির্বোধ এই কন্যা।এইটুকু বুঝতে পারলোনা যে ফালাক তাজ চাইলে সেই প্রথম দিনেই ওকে নিঃশেষ করতে পারতো।ওর শরীরের কিঞ্চিৎ পরিমাণ জায়গা ফাঁকা থাকতোনা ফালাকের হাতের স্পর্শ পড়তে।এতো পরিমাণ ক্রোধ উঠিয়ে দিয়েছিল?আজকেই হয়তো ওর শরীরে ফালাকের রাজ চলতো।শুধুমাত্র ওকে চরম শাস্তি দেওয়ার জন্য।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here