হিংস্রপ্রেম পর্ব ২

0
511

Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ০২
লেখাঃ Israt Jahan

-“থামুন সম্রাট জাভেদ। আপনার কন্যা নিজেই আমার সামনে আত্মসমর্পণ করেছে।সেখানে আপনি আর বাঁধা দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। রাজকন্যা মেহেরুন আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন যা অতুলনীয়।
চলুন তাহলে আমার সাথে। আর আপনার পিতা মাতার ব্যবস্থাও আমি করছি।
এর মাঝে ফালাকের সৈন্যরা গোটা রাজমহল দখল করে নিয়েছে রাজা জাভেদ খানের সৈন্যদের পরাজিত করে।সম্রাট ফালাক মেহেরুনের পিতামাতা কে ও আটক করে ফেলেছে।রাজা জাভেদ খানের সিংহাসনে বসেছে সম্রাট ফালাক তাজ।রাজকন্যা মেহেরুনের অনুরোধে তার পিতামাতার প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছে রাজা ফালাক।এদিকে ফালাক মেহেরুনের চাচা আরব খান কে যে কথা দিয়েছিল সে কথাও সে রাখেনি। তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকেও আটক করেছে। মেহেরুনকে সে নিজের রাজ্যে তুলে নিয়ে যায়। আর মেহেরুনের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সে কারাগারে নিক্ষেপ করে। মেহেরুন বুঝতে পেরেছে যে শুধু যুদ্ধের মাধ্যমে রাজা ফালাককে পরাজিত করা যাবেনা।তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন।তাই সে চুপচাপ সহ্য করে নিল রাজা ফালাকের সব অন্যায়। কিন্তু এখন সে ভাবছে কিভাবে রাজা ফালাকের থেকে তার সম্মান রক্ষা করবে।
★রাতের ঘটনা★
-“মন্ত্রিসাহেব আমি বড়ই ক্লান্ত।শেরপুর রাজ্য দখলের খবরটি আপনি রাজসভায় গিয়ে ঘোষণা করে দিন। আর ঘোষক কে বলে দিন রাজ্যে সব অঞ্চলে খবরটি পৌঁছে দিতে।(ফালাক)
-“আপনার ইচ্ছা মহারাজ। আসছি।
-“মহারাজ আপনার রাতের খাবার প্রস্তুত। (দাসীবৃন্দ)
-“এই মহলে আজকে একজন নতুন অতিথি এসেছে সেটা তোমরা নিশ্চই জানো?
-“জ্বী মহারাজ।
-“তার খাবারের ব্যবস্থা কি হয়েছে?
-“আজ্ঞে না মহারাজ।
সম্রাট ফালাক দাসীবৃন্দর না বোধক উত্তরে প্রচন্ড আকারে রেগে গেল। বিছানা থেকে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাড়িয়ে দাসীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল,
-“চাবুকাঘাতে তোমাদের শরীর জর্জরিত করে ফেলব।অনেকদিন পিঠে চাবুক পড়েনা তোমাদের। রাজমহলে অতিথি আসলে তাদের সেবাযত্ন,দেখভাল করতে হয় তা কি তোমরা ভুলে গেছ?
-“মহারাজ আমাদের মাফ করুন।এমন ভুল আর কক্ষনো হবেনা। আসলে এর আগে যাদের আপনি এভাবে নিয়ে এসেছেন কখনো তাদের দেখভালের কথা বলেননি।তাই আমরা……..
দাসী তার কথা আর শেষ করলোনা।দাসীর কথা শুনে রাজা ফালাক ও কিছুটা বিস্মিত হলো।
-“সত্যিই তো।এর আগে আমি যেসব রাজকন্যাদের তুলে নিয়ে এসেছি তাদের খেয়াল রাখার কথা আমার একবারও মনে পড়েনি। তাদেরকে শয্যাসঙ্গী বানানোর পর দ্বিতীয়বার তাদের কথা আর মনে পড়েনি।এখন তারা আমার রাজমহলে কি অবস্থাতে আছে সেই খবরটুকু আমি নিইনা।দাসীবৃন্দ, প্রহরী, সেনাপতি তাদের উপর ওদের ছেড়ে দিয়েছি।তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন আমার দাসীতে পরিণত হয়েছে।কিন্তু রাজকন্যা মেহেরুনকে দেখার পর থেকে তার চিন্তা আমি আমার মাথা থেকে এক মুহূর্তের জন্য ও সড়াতে পারছিনা।আর এখন নিজের খাওয়ার কথা শুনে তার খাওয়ার কথা আমার মনে পড়লো।কি আছে রাজকন্যা মেহেরুনের ভেতর?কেনো তার প্রতি আমি এত আকৃষ্ট হচ্ছি? শুধু কি তার সৌন্দর্যের জন্যই?
-“মহারাজ?আমরা তাহলে রাজকন্যা মেহেরুনের জন্য কি খাবারের ব্যবস্থা করবো?
দাসীদের কথা শুনে সম্রাট ফালাক তার ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এল।
-“আমার জন্য যা ব্যবস্থা করেছ তার জন্য ও তাই ব্যবস্থা করো।খাওয়া শেষে তার বিশ্রাম পর্ব শেষ হলে তাকে আমার কক্ষে নিয়ে আসবে।
-“ঠিক আছে মজারাজ।
-“আর হ্যা।রাতের খাবার খাওয়ার পূর্বে তাকে নিশ্চই গোসল করে পবিত্র হতে বলবে।
দাসীগুলো রাজা ফালাকের কক্ষ থেকে বিদায় নিয়ে রাজকন্যা মেহেরুনেকে যে কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই কক্ষে চলে গেল খাবার নিয়ে।রাজকন্যা মেহেরুন তখন বসে ভাবছিল কি করে রাজা সম্রাটের থেকে তার পরিবার আর তার রাজ্যকে রক্ষা করবে। আসলে রাজকন্যা মেহেরুন ঠান্ডা মস্তিষ্কের অধিকারী ছিল।সে খুব সহজে ভেঙ্গে পড়ার মত মেয়ে নয়।
বিপদে মস্তিষ্ক ঠান্ডা রেখে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হয় সে সেই শিক্ষায় গ্রহণ করেছে তার পিতার থেকে। মেহেরুন ভাবছে সে যেহেতু এখনো অক্ষত আছে তাহলে এত সহজে তার কোনো ক্ষতি করবেনা রাজা ফালাক।তাই যা করার অতি শীঘ্রই করতে হবে।দাসীদের প্রবেশে মেহেরুন ভাবনার জগত থেকে বাস্তব জগতে ফিরে এল।রাজা ফালাকের আদেশ মোতাবেক গোসল করলেও দাসীর আনা খাবার সে গ্রহণ করলোনা। এতক্ষণ মেহেরুনের মনে সাহস সঞ্চারিত হলেও দাসীদের কথা শুনে সেই সব সাহস এক নিমিষে ভয়ে পরিণত হল।রাজা ফালাক তার কক্ষে মেহেরুনকে নিয়ে যেতে বলেছে।মেহেরুন ভাবছে এখন নিশ্চই রাজা ফালাক তার ভয়ানক হিংস্র রূপ বের করবে মেহেরুনের সামনে।হিংস্র পশুর ন্যায় মেহেরুনের দেহ ছিড়ে খাবে সে।ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিবে তার শরীরকে।দাসীবৃন্দ মেহেরুনকে ফালাকের কক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে।
-“রাজকন্যা!সম্রাট আমাদের আদেশ করেছেন তার কক্ষে আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
-“না।আমি যাবোনা। তোমাদের সম্রাট কে গিয়ে বলো সে যদি আমার সম্মানের দিকে হাত বাড়ায় তাহলে আমি নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নিব।
-“রাজকন্যা আপনি সম্রাট ফালাকের অন্দরমহলে আছেন।সে না চাইলে আপনি মড়তেও পারবেন না।
-“মৃত্যু ঘটানোর মালিক। তোমাদের সম্রাট নয়। সে দেখতে চাই আমি নিজেকে শেষ করতে পারি কিনা?
-“মৃত্যু ঘটানোর মালিক যেমন আমাদের সম্রাট নয় তেমন আপনিও নন।
মাঝখানে শুধু শুধু আপনি নিজেকে কষ্ট দিবেন।
-“তোমরা কি নারী? কিভাবে সহ্য করতে পারো আর এক নারীর প্রতি এত অনাচার?তোমাদের শরীরের লোম শিউড়ে উঠেনা?
-“বোন!তোমাকে বোন বলেই ডাকলাম। আমি শ্যামনগর রাজ্যের ছোট রাজকন্যা ছিলাম।চোখের সামনে নিজের বুবুর মৃতদেহ দেখেছি। আর কিছু বলতে পারছিনা।
দাসীটি কথাগুলো বলতে গিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো।তারপর আবার বলতে শুরু করলো,
-“আমরা চাইলেও আপনার কোনো সাহায্য করতে পারবোনা।শুধু এটুকু বলতে পারি বেঁচে থাকতে চাইলে নিজেকে স্ব ইচ্ছায় তুলে দিতে হবে সম্রাট ফালাকের কাছে।
-“পতন ঘটবে।এতো অনাচার এতো অত্যাচার উপরওয়ালা বেশিদিন সহ্য করবেনা।তোমাদের সম্রাটের পতন ঘটবে।
এরপর রাজকন্যা মেহেরুন দাসীদের সঙ্গে ফালাকের কক্ষে প্রবেশ করলো।এই প্রথম রাজকন্যা নিজেকে অনেক অসহায় মনে করছে।নিজেকে রক্ষা করার মত কোনো উপায় সে খুঁজে পাচ্ছেনা।দাসীবৃন্দ মেহেরুনকে ফালাকের কক্ষে প্রবেশ করিয়ে তারা বাহিরে চলে গেল।
-“কাঠ দ্বারা নির্মিত একটি ছোট আসবাবের উপর কিছু ফল রয়েছে একটি পাত্রে। তার ভেতর একটি ছুড়ি।হ্যা ওটাকেই আমি আমার কাজে লাগাবো।হয় নিজেকে শেষ করে দিব আর না হয় রাজা ফালাককে।ছুড়িটা যখন নিতে যাব তখনই রাজা ফালাক কক্ষে প্রবেশ করলো।
-“কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখলাম মেহেরুন ফল কাটার ছুরিটির দিকে হাত বাড়িয়েছে।আমাকে দেখে সে থেমে গেল।সে যখন আমার দিকে ঘুরে দাড়ালো আমি তখন তার স্নিগ্ধ শীতল মুখটি দেখে আরো একবান সম্মোহিত হলাম। ভিজে থাকা চুলগুলো ছেড়ে আছে সে।কোনো সাজগোজ নেই।তারপরেও ওকে এতো আকর্ষণীয়
(আবেদনময়ী বোঝাতে) লাগছে যে পলক ফেলতে পারছিনা।হঠাৎ করে মেহেরুন ছুরিটি হাতে নিয়ে নিল।আমি সত্যি চমকে গেলাম।ও নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলবে না তো? আমি আমার নিজের স্থানেই দাড়িয়ে আছি ওর কাছে যাচ্ছিনা।এদিকে ও নিজেও আমার উপর আক্রমণ করছেনা। আমি ওকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করছি।রাজকন্যা মেহেরুনের দিকে অগ্রসর হলাম আমি। কারণ যে কোনো মুহূর্তে ও নিজের শরীরে আঘাত করতে পারে।
-“সম্রাট ফালাক আপনি আমাকে খুব অসহায় ভাবছেন তাইনা?আর সেই অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে চাইছেন।আত্মঘাতী করবো তবু আপনার মত নরপিশাচের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবোনা।ক্ষত বিক্ষত করে ফেলব নিজের শরীরকে। এই ক্ষত বিক্ষত শরীর ভোগ করতে পারবেন তো আপনি?
-“তুমি ভুলে যাচ্ছ যে তোমার পিতা মাতা এখনো জীবিত আছে।তোমার একটামাত্র ভুলের জন্য তাদের জান বিপন্ন হয়ে যাবে।
-“ঐ অন্ধকার কারাগারে তাদের বেঁচে থাকা সেই মরে যাওয়ার সমতুল্য।আমি বেঁচে থাকতে তাদের ঐ মরনাপন্ন অবস্থা দেখতে চাইনা।এর থেকে নিজের মৃত্যু হাজার গুণ উত্তম।
কথাগুলো বলেই মেহেরুন নিজেকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করলো।সেই মুহূর্তে রাজা ফালাক তাকে আটকানোর চেষ্টা করলো। একরকম ধস্তাধস্তি শুরু হলো ওদের মাঝে।এক সময় রাজা ফালাক মেহেরুনের নিকট থেকে ছুরিটা কেড়ে নিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। মেহেরুন নিজের ঝোক সামলাতে না পেরে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো।তাতে মেহেরুনের বুকের উপর থেকে পাতলা চাদর(ওড়না) সরে নিচে পড়ে গেল। তখন মেহেরুনের নিজের প্রতি নিজের খেয়াল না হলেও রাজা ফালাকের খেয়াল ঠিকই গেল তার উপর। তারপর রাজা ফালাক ছুরিটি নিচে ফেলে দিয়ে মেহেরুনের দিকে এগিয়ে গেল।মেহেরুনের চোখ দিয়ে তখন অনবড়ত পানি পড়ছিল।সে ধরেই নিয়েছে আজ বোধহয় তার নারীত্বটুকু এক হিংস্র নরপিশাচ ছিনিয়ে নিবে।
-“মেহেরুনকে বিছানার উপর থেকে তুলে আমার সামনে দাড় করালাম। সত্যি বলতে ওর আকর্ষণীয় শরীরের উপর আমার নজর গেলেও তার থেকে বেশি আকৃষ্ট হয়েছি আমি ওর রূপে।শারীরিক গঠন,ওর সৌন্দর্য ওর কণ্ঠস্বর সব মিলিয়ে আমি সত্যি ওর মোহে পড়ে যাচ্ছি। ওর প্রতি আমার উন্মাত্ততা শুধু বেড়েই চলছে।তা থেকে আমি কোনোভাবেই নিজেকে নিজের বশে আনতে পারছিনা। ও পবিত্র, ও দীপ্তিময়ী, মায়াবিনী। ঠিক যেন সদ্য ফোটা লাল গোলাপের মত পবিত্র সে। ওকে যে এভাবে আমার অপবিত্র করতে বিবেকে বাঁধা দিচ্ছে।মনে হচ্ছে ওকে শুধু এক রাতের সঙ্গিনী হিসেবে নয় আমার জীবনের শেষ রাত পর্যন্ত ওকে আমার সঙ্গিনী হিসেবে চায়।
ফালাক মেহেরুনের দুই বাহু চেপে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এমন চিন্তাভাবনা করছে।আর মেহেরুন ফালাকের কাছ থেকে ছুটে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।মেহেরুন যতই অস্ত্রচালনা জানুক কিন্তু একজন যোয়ান পুরুষের শক্তিবলের কাছে একজন নারীর শক্তিবল সর্বদাই তুচ্ছ হয়।মেহেরুন তার শরীরের সমস্ত শক্তি খরচ করেও ফালাকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছেনা।কাঁদতে কাঁদতে মেহেরুন ফালাককে বলল,
-“দয়া করে আমাকে আপনার স্পর্শ থেকে মুক্তি দিন।আমি আপনার মত ঘৃণ্য মানুষের অপবিত্র স্পর্শ সহ্য করতে পারছিনা।
পারছিনা আমি আপনার নারী দেহের প্রতি লোভী দৃষ্টি সহ্য করতে।এর থেকে আমাকে হত্যা করুন।আমি কোনোদিনও কোনো পর পুরুষের সামনে যাইনি।
কোনো পর পুরুষ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সেখানে আপনার মত নিকৃষ্ট মানবের স্পর্শে আমার পুরো দেহে আগুন জ্বলে উঠছে।ঘৃণা হচ্ছে আমার। দয়া করে আমাকে আপনার মত পাপিষ্ঠের হাত থেকে মুক্তি দিন।জীবিত থাকতে আমি দেখতে পারবোনা একজন পাপিষ্ঠ পর পুরুষ আমার শরীর ভোগ করছে। এর থেকে আমার মৃত দেহকে আপনি আপনার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করুন।আপনার কাছে এটা একটা মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ চাওয়া।
মেহেরুনের এমন ধরনের কথা শুনে ফালাক তার চাহিদার কথা ভুলে গেল। মেহেরুনের কথাগুলো এতটাই বিষাক্ত ছিল যে তার মত দয়া মায়াহীন এক হিংস্র পশুর সমতুল্য মানুষ হয়েও তার হৃদয়ে কথাগুলো আঘাত করেছে।সে বুঝতে পেরেছে যে সে কতটা ঘৃণ্যতম ব্যক্তি হলে কেউ তাকে এমন কথা বলতে পারে যে মৃতদেহ কে তার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করতে।কথাগুলো শুনে হিংস্র চাহনিতে মেহেরুনের দিকে তাকাল ফালাক। তারপর আপনা আপনি ই মেহেরুনের বাহুদ্বয় সে নিজের অজান্তে ছেড়ে দিল। কিছুসময় মেহেরুনের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইল।এই প্রথম সে কোনো নারীর থেকে তার প্রতি এমন ধরনের বাক্য(কথা) শুনলো।যা শোনার পর তার মনে হচ্ছে, আল্লাহর সৃষ্টি পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্টতম জীব শূকরের থেকেও সে বেশি নিকৃষ্ট জীব।ফালাকের মনে হচ্ছে সে তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।মেহেরুনের কথার উত্তর সে কি দিবে ভেবে পাচ্ছেনা বা এখন তার কি করা উচিত তাও ভেবে পাচ্ছেনা।কিছুসময় এভাবে চুপ থাকার পর ফালাক কথা বলল,
-“নিজের কক্ষে চলে যাও।
মেহেরুন ফালাকের কথা শুনে বেশ অবাক হল।সে যা জানে ফালাকের সম্পর্কে তাতে ফালাক এতক্ষণ চুপ না থেকে তার উপর আক্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে মেহেরুনকে নিজের কক্ষে চলে যেতে বলছে।তাই অবাক চোখে মেহেরুনের ফালাকের দিকে তাকিয়ে রইল।এদিকে ফালাক সেটা খেয়াল করল যে মেহেরুন এখনো তার স্থান ত্যাগ করেনি।তাই সে আবার বলল,
-“আমি যা বলেছি তোমার কি তা বোধগম্য হয়নি?
আমি এক কথা পুনরায় ব্যক্ত করা অপছন্দ করি।
ফালাকের কথা শুনে মেহেরুন আর এক মুহূর্ত সময় অতিবাহিত না করে দৌড়ে তার নিজের কক্ষে চলে গেল এবং খুব দ্রুত কক্ষে দরজা বন্ধ করে দিল। মেহেরুন ভাবছে ফালাক এখন তাকে ছেড়ে দিলেও পরে যদি আবার তার উপর আক্রমণ করে তাই সে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে রইলো।আজ রাতে মেহেরুন ঘুমাবেনা এমনটাই ভেবে নিয়েছে সে। এদিকে মেহেরুন যখন ফালাকের কক্ষ থেকে দৌড়ে চলে এল ফালাক সেই দৃশ্য খুব ভালো করে অবলোকন করলো।ওর কাছে ঐ দৃশ্য দেখে এটাই মনে হল যে সে একজন মানুষ হয়ে কতটা ভয়ংকর হলে তার থেকে কেউ এভাবে পালিয়ে যেতে পারে।কাঠের আরামদায়ক কেদারায় বসে ফালাক মেহেরুনের বলা কথা ভাবতে লাগলো।বারবার ওর কানে মেহেরুনের একটা কথাই বাজছে,” এর থেকে আমার মৃত দেহকে আপনি আপনার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করুন”।এই বাক্যটি ফালাককে অবাক করেছে।নিজের চরিত্রের ইতিহাস নিয়ে সে এখন নিজেই ভাবছে।এতকাল সে এটা ভেবে গর্বিত হতো যে বাঘের থেকেও সবাই তাকে বেশি ভয় পায়।আর আজকে তার এই চরত্রটাই বেশি ভাবাচ্ছে।কিছুসময় পর ফালাক তার কিছু দাসীকে ডেকে পাঠালো।
-“রাজকন্যা মেহেরুন শুধু এই রাজমহলের অতিথি নয়।তার থেকেও বেশি কিছু।
ফালাকের এই কথাগুলো শুনে দাসীগুলো একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে।প্রথমত তারা অবাক হয়েছে রাজকন্যা মেহেরুনকে তখন রাজা ফালাকের কক্ষ থেকে ঐ ভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে যে রাজা ফালাক তার কোনো ক্ষতিই করেনি।আর দ্বিতীয়ত তারা অবাক হল এই মুহূর্তে ফালাকের বলা কথাগুলো শুনে।তারপর ফালাক আবার বলা শুরু করলো,
-“তোমরা এভাবে একে অন্যকে দেখছো কেনো? আমি তোমাদের যে কথাগুলো বলার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি সেগুলো মনযোগ দিয়ে শোনো।তোমাদের মধ্যে কয়েকজন রাজকন্যা মেহেরুনের খাস দাসী হবে। সর্বদাই তার সাথে থাকবে। সামান্য পরিমাণ কষ্টও তার হতে দিবেনা।আর প্রতিটা মুহূর্তে সে কি করছে না করছে তার প্রত্যেকটা সঠিক তথ্য আমাকে জানাবে।বুঝতে পেরেছো তোমরা?
-“জ্বী মহারাজ।বুঝতে পেরেছি।
-“হুম।এখন তোমরা রাজকন্যার কাছে যাও। দেখো সে কি করছে,তার কি প্রয়োজন।
-“ঠিকআছে মজারাজ, আসছি।
-“ও হ্যা,আর একটা বিষয়। তার কক্ষে যতরকম ধারালো অস্ত্র বা বস্তু আছে সবকিছু সেখান থেকে সরিয়ে ফেলবে।এমন কোনো বস্তু তার কক্ষে রাখবেনা যা দ্বারা তার মৃত্যু ঘটতে পারে বা তার শরীরের কোনো ক্ষতি আর আঘাত হতে পারে।
তারপর কিছু দাসী মেহেরুনের কক্ষের সামনে গেল।বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু মেহেরুন কোনোভাবেই দরজা খুলছেনা।দাসীগুলো বাধ্য হয়ে ফালাককে এই খবর জানালো।ফালাক কক্ষের সামনে এসে বেশ কয়েকবার মেহেরুনকে ডাক দিল কিন্তু মেহেরুন তাতে কোনো সাড়া দিলনা। ফালাক রাগে যখন দরজা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত তাকে জানালো তখন মেহেরুন ভয় পেয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিল।তখন মেহেরুনের মুখসহ পুরো শরীর কাপড়ে ঢাকা।মেহেরুনের এমন ব্যবহারের জন্য ফালাক রাগে ফেটে পড়লেও মেহেরুনের কান্না মাখা চোখ দুটো দেখে আর কিছু বলতে পারলোনা।শুধু ভয়ানক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর সেখান থেকে ফালাক তার নিজের কক্ষে চলে এল দাসীদের মেহেরুনের সঙ্গে থাকতে বলে।দাসীগুলো মেহেরুনকে বলছিল,
-“রাজকন্যা!আল্লাহ্ পাক হয়তো আপনার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে দেখেছে। আপনিই প্রথম নারী যে রাজা ফালাকের কাছ থেকে নিজের সম্মানসহ অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরেছেন।
-“হাহ্…….কতখন আল্লাহর এই দয়ার দৃষ্টি থাকবে আমার প্রতি?
-“জানিনা।তবে মনে হচ্ছে সম্রাট ফালাকের মাথায় অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে।না হলে এতক্ষণে আপনার পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার কথা ছিল।কারণ সে একবার কারোর প্রতি রেগে গেলে তাকে অক্ষত রাখেনা।সেখানে আপনার উপর বিন্দুমাত্র শব্দ সে উচ্চারণ করলোনা। আচ্ছা রাজকন্য আপনি কি আবার গোসল করেছেন?
-“হ্যা।আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।তার মত নিকৃষ্ট,পাপিষ্ঠআর ঘৃণ্য মানুষের স্পর্শ আমার পুরো শরীরকে অপিবত্র করে ফেলেছে।আমার মনে হচ্ছে এখনো আমার শরীর ঘৃণাতে খসে পড়ছে।আমার পিতামাতা কি হালে আছে কি হচ্ছে তাদের সাথে আমি কিচ্ছু জানতে পারছিনা।
পিতামাতার কথাগুলো বলতে গিয়ে মেহেরুন চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। দাসীগুলো কথা বলা শুরু করলো,
-“রাজকন্যা!আপনার ভাগ্য ঐ সব রাজকন্যার থেকে সহস্য ভাগ ভালো। কারণ আপনি এখনো জানতে পারছেন তারা জীবিত আছে।আর এর পূর্বে যেসব রাজ্য দখল করেছে সম্রাট ফালাক সেইসব রাজ্যের রাজকন্যা বা রাজপুত্রদের সামনে তাদের পিতামাতাদের সে হত্যা করেছে আবার পিতামাতার সামনে তার সন্তানদের হত্যা করেছে।যখন পিতামাতার সামনে তার সন্তানদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে তখন ঐ সব পিতামাতার আহাজাড়ি দেখলে আমাদের নিজেদের প্রাণ বেরিয়ে আসার উপক্রম হত।
-“কতটা নিষ্ঠুর,কতটা হদয়হীন সে।একদিন সে ও পিতা হবে তার সন্তান জন্ম নিবে।আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে বলছি,সে ও একদিন সন্তানহারা হবে।সে ও বুঝবে সন্তানহারানোর কষ্ট কতটা তীব্রতর।
-“রাজকন্যা থামুন।এসব কথা বাহিরের কারো কানে গেলে সোজা সম্রাটের কানে পৌঁছে যাবে।
-“যাক।গেলে কি হবে?মৃত্যু নিশ্চিত করবে এই তো? আমিও তাই চাইছি।
সেদিন সারারাত কাটলো মেহেরুনের চোখের পানি ফেলে।এদিকে ফালাকের রাত কাটলো বিভিন্নরকম চিন্তাভাবনা করে।চিন্তার মূল বিষয়বস্তু ছিল মেহেরুনকে কেন্দ্র করে। অতঃপর সকালবেলা আলোচনাসভাতে বসলো রাজা ফালাক।
-“আমি সবসময় স্পষ্টভাবে কথা বলা পছন্দ করি।আর সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলেছি।তাই যা বলার সরাসরি স্পষ্টভাবেই বলে দিতে চাই আপনাদের সবাইকে।আজকে আলোচনাসভার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আমার বিবাহ।
রাজা ফালাকের মন্তব্য শুনে আলোচনা সভায় উপস্থিত সকল ব্যক্তিবর্গ হতভম্ব হলো।একে অন্যের সাথে কানাকানি শুরু হলো। যে রাজা আজীবন অন্যায়ভাবে নারীদের অসম্মান করে।আর তার চিন্তাচেতনা ছিল সে আজীবন এমনভাবেই নারীদের নারীত্ব স্বাদ গ্রহণ করবে সে কিনা আজ বিবাহ করতে চাইছে?আর সেটা কাকে?রাজা ফালাক আবার কথা বলতে শুরু করলো।
-“আপনারা আমার সিদ্ধান্তে কি খুশি হয়েছেন নাকি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছেন?
সেনাপতি এবার কথা বলে উঠলো,
-“সম্রাট আপনি যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তো আমাদের জানাননি?
-“কি বলতে চাইছো তুমি? আমার সকল সিদ্ধান্ত তোমার থেকে শুনে নিতে হবে?
-“না সম্রাট।আমি তা বলতে চাইনি।আসলে আপনি কখন কাকে আপনার সহধর্মিণী রূপে বেছে নিয়েছেন তা তো আমরা জানতে পারলাম না।তাই আর কি প্রশ্নটা করে ফেলেছি।
-“হুম জানতে পারবে এখন। আমি আপনাদের সবাইকে এই মুহূর্তে জানাচ্ছি যে শেরপুর রাজ্যের রাজা জাভেদ খানের একমাত্র রাজকন্যা মেহেরুনকে আমি আমার সহধর্মিণী রূপে তাকে পছন্দ করেছি।এবং অতি শীঘ্রই আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি।যদিও শেরপুর রাজ্যের রাজা এখন আমি তবুও আপনাদের চেনার খাতিরে এভাবেই রাজকন্যার পরিচয়টা দিলাম।
আলোচনাসভায় উপস্থিত একজন সদস্য প্রশ্ন করলো,
-“সম্রাট বিবাহের দিন তারিখ কবে?তা কি ধার্য হয়েছে?
-“না।বিবাহের দিন তারিখ ধার্য হবে আমার পালকপিতার সাথে আলোচনা করে।
মন্ত্রীসাহেব?
-“জ্বী মহারাজ।
-“আমার পিতাকে খবর জানান যে আমি তার কাছে আসছি।
-“ঠিকআছে মহারাজ। এক্ষণি জানাচ্ছি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here