Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ১৮
লেখাঃ Israt Jahan
.
ফালাকঃ এত তুচ্ছ মনে করো আমাকে?আমি ফালাক চাইলে আজ সারাটা রাত তোমার সাথে কি করতে পারি, তোমার কি অবস্থা করতে পারি তা তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো। একবারের জন্যও তোমার হাত কাঁপলোনা আমাকে আঘাত করতে?
এই আমার চোখের দিকে তাকাও।আমার চোখের দিকে তাকাও বলছি….।
ফালাক ধমকের সুরে মেহেরকে তাকাতে বললে মেহের খুব ভয়কাতর চোখে ওর চোখের দিকে তাকাল।
ফালাকঃ এই চোখে কি শুধুই হিংস্রতা?অন্যকিছু দেখতে পাওনা তুমি…বলো?এই রক্তরঞ্জিত চোখে যেমন হিংস্রতা আছে তেমন প্রেম ও আছে।আর সেটা শুধু তোমার জন্য।তুমি চাওনা আমার কাছে থাকতে?এই উত্তর দাও।চাওনা থাকতে?
ফালাকের প্রতিটি ধমকের সুর মেহেরের আত্মা কাঁপিয়ে দেওয়ার মত।চোখ জোড়া বন্ধ করে মেহের খুব আস্তে স্বরে উত্তর দিল-“না”।
ফালাকঃ কেনো চাওনা?
এবার মেহের উচ্চকন্ঠে বলল-“হিংস্রমানবকে শুধু ভয়-ই পাওয়া যায় ভালোবাসা যায়না।আমি আপনার সাথে প্রতিটা মুহূর্ত উঠতে বসতে সর্বদা আতঙ্কে থেকেছি।সবসময় মনের মধ্যে ভয় কাজ করে।এই বুঝি আমাকে তছনছ করে দেবে আমার কোনো ভুলের জন্য।আর আপনার অন্যায় অবিচার, প্রতিটা নির্দোষ মানুষদের কঠোর শাস্তি যা আমার আপনার প্রতি শুধু ঘৃণা-ই সৃষ্টি করেছে।
এসবের মাঝে আপনার এই ঠুনকো প্রেম দেখে আমার এতটুকু ইচ্ছা জাগ্রত হয়না আপনার কাছে থাকার।
ফালাকঃ ঠুনকো প্রেম?আমার ভালোবাসা তোমার কাছে ঠুনকো?
মেহেরঃ হ্যা।
ফালাকঃ তোমার মাঝে আমার প্রতি কোনো মায়া, কোনো টান, কোনো দুর্বলতা এসব কিচ্ছু অনুভব হয়না?
মেহেরঃ একদমই না।আপনি সবকিছু আপনার মত করে ভেবে নিয়েছেন।আমার মাঝে আপনার প্রতি এইসবের ছিটেফোঁটা ও নেই।
ফালাক আর কোনো কথা বলছেনা।মাটির দিকে তাকিয়ে হাজার রকম চিন্তা করছে।অনেকক্ষণ এমনভাবে নিরব হয়ে রয়েছে ফালাক।মেহের ওর খুব কাছেই ছিল।ওকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে মেহেরও আর কোনো কথা বললনা।ওর কাছ থেকে উঠে আসতে চাইল।তখন ফালাক মাটির দিকে তাকিয়েই ওর হাত টেনে এক ঝটকাতে নিজের কোলের কাছে নিয়ে এল।
ফালাকঃ কোথাও যাবেনা।এইখানেই এইভাবে থাকবে আমার কাছে।
মেহেরঃ আমার অস্বস্তি লাগছে আপনার শরীরের সাথে জড়িয়ে থাকতে।
ফালাকঃ এত ঘৃণা! হোক, অস্বস্তি হোক। আমি এই মুহূর্তে তোমার বলা কোনো কথাই বিশ্বাস করছিনা।
মেহেরঃ আর কি দেখতে চান আপনি?আর কি করলে আপনার বিশ্বাস হবে যে আমি সত্যিই আপনাকে আমার জীবনে চাইনা?
ফালাকঃ মৃত্যু।
মেহেরঃ কি?
ফালাকঃ আমার মৃত্যুদন্ড যদি তুমি সত্যি ঘোষণা করতে পারো আর সেই ব্যবস্থা তুমি যদি নিজে করতে পারো তাহলে আমি বিশ্বাস করবো।
মেহের নিশ্চুপ হয়ে গেল।এর উত্তর ও কি দিবে আর আদৌ কি ও এই কাজ কখনো করতে পারবে? অনেক বড় একটা চক্রের মাঝে পড়ে গেল।যেই চক্রটা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ ও খুঁজে পাচ্ছেনা।আর ফালাক ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে ও কি উত্তর দেয় তা শোনার আশায়। কিন্তু মেহের একদম চুপ হয়ে গেছে।এভাবে চুপ থাকতে দেখে ফালাকের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠল।হাসিটা অবশ্য মেহের দেখতে পায়নি। কারণ মেহের এখন অনেক বড় চিন্তার মাঝে ডুবে গেছে।মেহের কোনো উত্তর দিলনা আর ফালাক ও দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করলোনা।ওর উত্তর ও মেহেরের নিরাবতাতেই পেয়ে গেছে।
মেহেরঃ আচ্ছা আপনি কি আমাকে এভাবে ধরে বসে থাকবেন?
ফালাকঃ হুম।
মেহেরঃ আমার ঘুম পাচ্ছে।আর পিতা যদি কোনোভাবে বুঝতে পারে যে আপনি আমাকে এভাবে আটকে রেখেছেন তাহলে আপনার পরণতি আরো কত খারাপ হবে তা নিশ্চই বুঝতে পারছেন।
ফালাকঃ তাজকে খাঁচায় আটকে রেখে পুরো বংশ মিলে তাকে আঘাত করছো।এমন ভীরুতার পরিচয় দিতে তোমাদের লজ্জা করছেনা?আমার হাত পা মুক্ত করে রাখলে তোমার পরিবার পরিজনদের কি অবস্থা করতে পারি তার প্রমাণ তো পেয়েই গেছো।
মেহের সত্যি পারবে তো আমার মৃত্যুর সাজা প্রদান করতে?না পারলে কিন্তু তোমাকে কেউ আর আমার থেকে দূরে রাখতে পারবেনা।জাভেদ খান, আরব খান, শেরপুর রাজ্যের যত সৈন্য আছে কারো ক্ষমতা হবেনা তোমাকে আটকে রাখার।আর বাঁধা প্রয়োগ করতে আসলেই জাভেদ খানের শির ও কেটে নিতে পারি।কাউকে মানবোনা।
মেহের খুব ভয় পাচ্ছে।ও কথা শুধু ফালাকের মুখের কথা নয়।ও যা বলেছে তা ও নিশ্চই করে ছাড়বে। কিন্তু মেহের তো কোনো সিদ্ধান্তেই আসতে পারছেনা।আজ ফালাকের শরীরে চাবুকাঘাত করে ওর ভেতরটা যেভাবে পুড়ে জ্বলে যাচ্ছে আর সেই হাতে ওর মৃত্যুদন্ডের ব্যবস্থা করবে তা ওর পক্ষে অসম্ভব। আবার এদিকে এমন কিছু করে না দেখাতে পারলে ও সত্যিই ওর বলা কথা ও ঠিক পূরণ করবে। অতিরীক্ত চিন্তাভাবনা মানুষের ঘুম কেড়ে নেই। কিন্তু মেহেরের ব্যাপারে সম্পূর্ণ তার উল্টোটা হলো।কিছুক্ষণ ফালাকের কাছ থেকে উঠে আসার ব্যর্থ চেষ্টা করে তারপর কখন যে ওর কাছে ঘুমিয়ে পড়েছে তা ও নিজেও বুঝতে পারেনি।ফালাক বসেই আছে ওর পাশে।সারাটা রাত ফালাক মেহেরকে বুকের মাঝে নিয়েই বসে থাকলো। কি ভেবে মেহেরকে ঘুমন্ত অবস্থাতে কোলে তুলে দ্বার খুলে বেরিয়ে এল মেহেরের কক্ষে।এত আস্তে করে মেহেরকে বিছানাতে শুইয়ে দিল যে মেহের একটুও বুঝতে পারলোনা।ফজরের আজান ভেসে আসছে ফালাকের কানে।মেহেরের কাছে বসে ফালাক ঘুমন্ত মেহেরের সঙ্গেই কথা বলছে।
ফালাকঃ খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলে না তখন এভাবে তোমার শরীরের কাপড় ছিড়ে খোলার চেষ্টা করছি বলে?ওই সময় শুধু তোমাকে এটুকুই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে আমি চাইলে তোমাকে কিভাবে কষ্ট দিতে পারি।অনেক কঠোরতার পরিচয় দিয়েছো কাল।যা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।তোমার ওই কঠোরতার মাঝেও যে তোমার চোখে ফালাকের প্রতি টান দেখেছি।তুমি আমাকে ভালোবাসো তা তুমি কেনো বুঝতে চাইছোনা,কেনো স্বীকার করতে চাইছোনা?আমার প্রেম হিংস্র হলেও তোমাকে আমি কখনো আঘাত করতে পারবোনা।আচ্ছা? সবার প্রেম তো একরকম না।আমার প্রেম টা না হয় সবার থেকে ভিন্ন।আর তা তোমার মেনে নিতে এত সমস্যা কেনো হচ্ছে?এটা তো প্রেমই অন্য কিছু নয়।হোক তা হিংস্র বা অহিংস।
ফজরের নামাজ পড়ে মেহেরের মাতা মেহেরের কক্ষের সামনে এল।দরজা হালকা নাড়া দিতেই দরজা খুলে গেল।গতকাল রাতে ফালাককে নিয়ে অতিরীক্ত চিন্তাভাবনার কারণে কক্ষের দ্বার আটকাতে ভুলে গিয়েছিল মেহের।মেহেরের মাতা দরজা খুলেই ভেতরে ঢুকে দেখতে পেল ফালাক মেহেরের মুখের উপর কিছুটা ঝুঁকে আছে।আর মেহেরের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখতে পেল ওর শরীরের কাপড় ঠিক নেই।সমস্ত জায়গায় কাপড় ছিড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ দেখা যাচ্ছে।
বিপরীত কিছু কল্পনা করে মেহেরের মাতা চিৎকার করে উঠল।
মাতাঃ মেহের……..।জানুয়ার তুই শেষ পর্যন্ত আমার কন্যাকেও রক্ষা দিলিনা?
ওনার কন্ঠের আওয়াজ শুনে ফালাক উঠে দাঁড়াল। আর মেহের ও জেগে গিয়ে কক্ষে মাতাকে দেখে দ্রুত শরীরে চাদর টেনে নিল।ফালাকের দিকে চোখ পড়তেই ও চমকে উঠল।ও কি করে বিছানাতে এল? আর ফালাক-ই বা কিভাবে ওর বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে?ওর মনে করকে আর সময় লাগলোনা যে ও তখন ফালাকের কক্ষেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।মেহেরের মাতার চিৎকারে কক্ষে জাভেদ খান ও চলে এল।ফালাককে কারাগার বাহিরের দেখে মাথা পুরো বিগড়ে গেল।মেহেরের মা কান্না করে বলছে-” মহারাজ ও আমাদের কন্যাকেও নিস্তার দিল না।ওকে এখান থেকে নিয়ে যান।ওর মৃত্যুর ব্যবস্থার করুন।” জাভেদ খানের মাথায় রক্ত উঠে গেছে।রক্ষীদের ডাক দিল।
জাভেদঃ ওকে প্রাসাদের কারাগারে নিয়ে যাও। আজ ই ওর বিচারকার্য শুরু হবে।
ফালাক আজ কোনো রক্ষীকে বাঁধা দিল না ওর কাছে আসতে।সেই সময়টা চলে এসেছে।মেহেরের ভালোবাসা পরীক্ষা করার সময়। ওকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে রক্ষীগুলো।যতক্ষণ পর্যন্ত কক্ষ থেকে বেরিয়ে না যাচ্ছিল ততক্ষন অবদি ফালাকের নজর মেহেরের দিকেই ছিল।ওর চোখের চাহনিতে মেহের বুঝতে পেরেছে ফালাক আজ কেন নির্দ্বিধায় রক্ষীদের সঙ্গে চলে গেল।আর কেউ জানুক বা না জানুক মেহের জানে যে আজ ফালাকের মৃত্যুদন্ড নয় হয়তো তার বিপরীত কিছুই হবে ওদের সঙ্গে।
বিচারসভাতে সিংহাসনে জাভেদ আর তার পাশে নিজের কন্যাকে বসিয়েছেন। নিচের সাড়িতে প্রাসাদের অন্যসব কর্মীগণ।আরব ও এসে বিচারসভাতে বসেছে অসুস্থ শরীরেই। আর পাশে পর্দার আড়ালে মেহেরের মাতা আর চাচিআম্মা।
জাভেদঃ গত চার মাস পূর্বে আমার নয়শত সৈন্যকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে আমার রাজ্যদখল করেছিল এই অত্যাচারী সম্রাট ফালাক তাজ। আমার কন্যাকে জোড় করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে তাকে বিবাহ করে এবং তার সাথে দিনের পর দিন নোংরা ব্যবহার করতে থাকে।আমাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে এই রাজ্য দখল করে রাজত্ব শুরু করে। আর আমার ভ্রাতা আরব খানকে নির্মম ভাবে আঘাত করে তাকে প্রায় মৃত বানিয়ে ফেলেছিল। তাকে কৌশলে রাজকন্যা মেহেরুন বন্দী করে করে নিয়ে আসে আমাদের রাজ্যে।বন্দী হওয়ার পরও সে অন্যায় অনাচার করতেই আছে।আমার প্রহরীকে হত্যা,আমার ভ্রাতাকে ও আবার হত্যা করার চেষ্টা আর আজ সর্বশেষ সে অন্যায় করেছে তাই তার শাস্তি আমি আজই কার্যকর করতে চাই।
মেহেরঃ পিতা।
জাভেদঃ বলো মেহেরুন।
মেহেরঃ একটা ব্যাপার আপনাদের কোথাও ভুল হয়েছে।
জাভেদ খান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নের ভঙ্গীতে কন্যার দিকে তাকাল।
মেহেরঃ গতরাতে আমাকে সে কোনো অসম্মান করেনি।
জাভেদঃ কি বলছো তুমি?তোমার মাতা কি ভুল দেখেছে?
মেহেরঃ না পিতা।আম্মাজান ভুল দেখেনি।আমি নিজেই ওর কক্ষে প্রবেশ করেছিলাম।ও চেয়েছিল আমার উপর অত্যাচার করতে কিন্তু তারপর ও নিজেই থেমে যায়।আর ভোর হলে আমাকে আমার শয্যাতে….
জাভেদঃ চুপ করো।আমি আর শুনতে চাইছিনা এসব।তুমি কিরূপ শাস্তি প্রদান করতে চাও তা কি বিবেচনা করেছো?
মেহেরঃ (………..)
জাভেদঃ কথা বলছোনা যে?
মেহেরঃ আগে সকলের কাছে শুনুন তারা কি মতামত দেয়।তারপর না হয় আমি বলি?
জাভেদঃ হুম।
জাভেদ রাজসভাতে উপস্থিত কিছু কর্মী আর প্রজাদের কাছে জানতে চাইল ওর কিরূপ শাস্তি হলে সবাই খুশি হবে।সবার আগে আরব মতামত দিল-” ওর শাস্তি একমাত্র মৃত্যু কাম্য।” প্রায় সবার মুখে একই মতামত ফালাকের মুত্যু।জাভেদ সর্বশেষ তার কন্যার কাছে জিজ্ঞেস করলো-” তুমিও কি একই শাস্তি প্রদানে একমত?”
মেহেরঃ পিতা আপনি কি চান?
জাভেদঃ সকল প্রজা আর কর্মীবৃন্দ যে শাস্তিতে খুশি আমিও তাতেই খুশি।
মেহেরঃ পিতা সবকিছু বিবেচনা করে বলছেন তো?
জাভেদঃ কিরূপ বিবেচনা?
মেহেরঃ আমাদের সাথে ওর অত্যাচারটা কতটুকু ছিল আর আমাদের প্রতি ওর কোমলতা কতটুকু ছিল?
জাভেদ কন্যার কথা শুনে কিছুসময় স্তম্ভিত হয়ে থাকল।তার মনে পড়ল যে ফালাক যতটুকু অত্যাচার করেছে তার রাজ্যে নিয়ে গিয়ে তার বিপরীতে সে অধিকাংশ সেবা প্রদান ও করেছে তাদের প্রতি।তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ,বাসস্থান, খাওয়া এই ব্যাপারগুলোতে সে যথেষ্ট পরিমাণ নজর দিয়েছে।এমনকি আরবের ছোট্ট বাচ্চাকে সে তাদের থেকে দূরে রাখলেও তাকে পরিপূর্ণ দেখভাল করার ব্যবস্থা করেছিল ফালাক।আজ এই অন্যায়গুলোর জন্য তার তুচ্ছ পরিমাণ পুণ্য আড়ালে থাকতে পারেনা।কিন্তু এই অন্যায়ের ক্ষমাও হয়না।জাভেদ কে চুপ থাকতে দেখে মেহের বলল-” পিতা কি চিন্তা করছেন?”
জাভেদঃ আমি সম্রাট ফালাক তাজের অন্যায় আর তার পাশাপাশি কিছু সৎকর্মের দিক বিবেচনা করে তার সাজা আমি মৃত্যুদন্ড নয়, আজীবন কারাদন্ডের হুকুম জারি করলাম।
জাভেদ ফালাকের সৎকর্মগুলো সকলের সামনে তুলে ধরল।তা শোনার পর বিচারসভার প্রত্যেকে জাভেদের বিচার মেনে নিল।এদিকে শিকলে বাঁধা ফালাক রাজসভার আসরের মাঝে দাঁড়িয়ে সবকথা শুনছে।কিন্তু ওর দৃষ্টি শুধু মেহেরের চোখের দিকে। মেহের এতসময় ফালাকের চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাইনি।আচমকা ফালাকের চোখের দিকে চোখ পড়তে দেখল ফালাক এক অদ্ভুত হাসি দিচ্ছে।যে হাসিতে আজ শেরপুর বাসীর সর্বনাশ ভেসে উঠছে।সেই হাসি মেহেরের চোখে পড়তেই মনে পরে গেল ফালাকের বলা গতরাতের কথা।যে কথাগুলো মেহের রাজসভাতে আসার পূর্বেও ভাবছিল।অথচ রাজসভাতে বসে সবার মুখে ফালাকের মৃত্যুদন্ডের কথা শুনে ওর সেইসব চিন্তাভাবনা উড়ে গিয়ে শুধু এই চিন্তায় মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করল যে ফালাকের মৃত্যু ও চোখের সামনে দেখতে পারবেনা।অসম্ভব, যেভাবেই হোক ওর বাঁচানোর উপায় খুঁজতে হবে।ও বসে বসে নিজের মনকে বৃথা শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে-” ও যা বলেছে ও তা কিছুই করতে পারবেনা।” কিন্তু না, ফালাক যে ভেবে নিয়েছে এমন কিছুই করার কথা। কিভাবে করবে তা শুধু ও আর আল্লাহ্ পাক-ই জানে।
ফালাকঃ হুহ…..মৃত্যুদন্ড।তুমি নিজে মরতে প্রস্তুত তবু আমাকে মরতে দেখতে পারবেনা।আর তা ফালাক তাজ তোমার থেকেও ভালো করে জানে। এরপরেও তুমি বোঝাতে চাও?তুমি আমাকে চাও না?হায়রে মন! প্রস্তুত থাকো মেহের।
ফালাক মেহেরের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আরবের দিকে তাকাল।আরবের তো শরীর নিশপিশ করছে ওকে জীবিত থাকতে দেখে।রাজসভা থেকে যখন ফালাককে নিয়ে যাওয়ার জন্য রক্ষী পা বাড়ালো তখন আরব সামনে এসে দাঁড়াল ফালাকের। ফালাক ওকে দেখামাত্রই এমন একখানা হাসি দিল যে হাসিতে আরবকে বিদ্রুপ করার ভাব ফুটে উঠেছে।
ফালাকঃ মেহেরবান, আল্লাহ্ পাক তোকে আমৃত্যু দান করেছে নাকি?ফালাকের হাতের আঘাত পেয়েও তোর মৃত্যু নিশ্চিত হলোনা।আশ্চর্যের বিষয়! আঘাতটা বোধহয় কম হয়ে গিয়েছিল রে। আর একখানা ধাক্কা দিলেই তোর মৃত্যু অনিবার্য ছিল। ভুল হয়ে গেল।
আরবের মেজাজ এমনিতেই তুঙ্গে ছিল তারউপর ফালাকের এমনসব কথা শুনে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে মাথা পুরো বিগড়ে গেছে।ফালাকের গলা চেঁপে ধরে ওকে ঠেলে দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে ধরল। আর ফালাক এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল।ও জানত যে আরব ওর এমন সাজাতে খুশি না হয়ে ওর সামনে আসবেই।আর ও এমনকিছু বলবে যা শুনলে আরবের নিয়ন্ত্রণ থাকবেনা নিজের মেজাজের উপর।আর সেই সুযোগ-ই ও গ্রহণ করবে।ওদের দুজনের সংঘর্ষ দেখে জাভেদ সিংহাসন থেকে নিচে নেমে আসছে।আর ফালাক সে যে এই মুহূর্তে এমনকিছু করতে পারবে তা সকলের ভাবনার বাহিরে ছিল।আরব ফালাকের গলা চেঁপে ধরেছে ঠিকই কিন্তু ফালাকের পায়ের শক্তি সম্পর্কে ওর ধারণা এখনো হয়নি।শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থাতেও হাঁটু উঁচু করে আরবের তলপেট বরাবর গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি মেরে বসল।ব্যাথায় কুকড়ে উঠে আরবের ওর গলা ছেড়ে দিল আর তখনই ফালাক ওর হাত বেঁধে রাখা শিকলের দ্বারা-ই আরবের গলা এমনভাবে প্যাঁচাল যে একটু আঁট দিলেই হলকুম ফেটে যাবে।
জাভেদঃ ফালাক তাজ ওকে ছাড় বলছি।
ফালাকঃ রক্ষীদের আদেশ করুন আমার হাত পায়ের শিকল খুলে দিতে।না হলে আজ আর আরবকে বাঁচানো সম্ভব হবেনা আমার হাত থেকে।
প্রথমে জাভেদ রাজি না হলেও পরবর্তীতে ভাইয়ের মৃতপ্রায় মুখ দেখে দ্রুত রক্ষীদের আদেশ করল বাঁধন খুলে দিতে।বাঁধন খুলে দিলেও ওর হাত থেকে এখনো রেহাই পায়নি আরব।ওকে ওভাবে ধরেই এক রক্ষীর কোমড় থেকে একহাত দিয়ে তরোয়ার টা কেড়ে নিল আর অন্য হাত দিয়ে আরবের গলার শিকলের বাঁধন ধরে রেখেছে।কেউ ওর কাছে এগুনোর সাহস পাচ্ছেনা।কোনো রক্ষী কাছে আসলেই আরবের গলার বাঁধন আঁট করে ধরে।আর আরবের অবস্থা দেখেই ওরা দূরে সরে যায়।সবাই ভয়ে একপাশে জড়সড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আরবকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েই দ্রুত পায়ে মেহেরের কাছে যাচ্ছে।মেহেরে এক পা দু পা করে পিছু হাঁটছে। ওর কাছে পৌঁছানোর আগে জাভেদ খান বাঁধা দিতে আসল।তখন ফালাকের মাথায় মেহেরের পিতামাতা নাকি অন্যকেউ এমন কোনো চিন্তাবোধ হচ্ছিলনা।জাভেদ ফালাকের শরীরে আঘাত করতে এলেই ফালাক তরোয়ারের আঘাত বসিয়ে দিল জাভেদের কাঁধে।জাভেদকে আঘাত করতে দেখে মেহের দৌড়ে এসে ফালাককে এমনভাবে ধাক্কা দিল ও তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেল।ও দেখতে পাইনি মেহের ওর দিকে দৌড়ে আসছে।ওর নজর তখনও জাভেদের দিকে ছিল।আর দেখতে পেলে মেহেরকে ধাক্কা দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে উল্টে ধরে গলাতে তরোয়ার চেঁপে ধরে প্রাসাদের বাহিরে চলে আসত আর জাভেদকে বাধ্য করতো ওর রাজ্যের সমস্ত সৈন্যকে মুক্ত করে দিতে।কিন্তু সেই পরিকল্পনা মেহের নিজেই ব্যার্থ করে দিল।ফালাক পরে যাওয়ার সাথে সাথেই সমস্ত রক্ষী আর সেনাপতি আমিন এসে ওকে ঘিরে ফেলল।মেহের ওর পিতাকে ধরে কেঁদে চিৎকার করে বলল-” সেনাপতি ওই শয়তানের মৃত্যুদন্ডের ব্যবস্থা করো।ওকে বেঁচে থাকার আর সুযোগ দিতে চাইনা আমি।”
সেনাপতিঃ আপনার ইচ্ছা রাজকন্যা। রক্ষীগণ ওকে উঠাও।আপাদত কারাগারে বন্দী করো।
ফালাক শুধু চেয়ে রইলো মেহেরের দিকে।ও ভাবতে থাকল-” তুমি সত্যি আমার মৃত্যুকামনা করলে মেহের?এই বাক্য তুমি সত্যি মন থেকে উচ্চারণ করলে?”
ওই রাত ফালাককে কারাগারে রাখা হলো।ও শুধু মেহেরের শেষের বলা দুই বাক্য মনে করছে।রাতটা মেহের আর ফালাক দুজনেরই না ঘুমিয়ে কাটল। জাভেদের আঘাতটা গুরুতর ছিলন।কাঁধের উপরের মাংস কেটে গেছে।কিন্তু নিজের পিতাকে এভাবে আঘাত করতে দেখে মেহেরের মাথা আর ঠিক ছিলনা।সকালেই ফালাককে প্রাসাদের বাহিরে ফাঁকা ময়দানে আনা হল।ময়দানের চারপাশে রাজ্যের সমস্ত প্রজা দাঁড়িয়ে আছে ফালাকের মৃত্যু দেখার জন্য।মেহের সহ ওর পুরো পরিবার সেখানে হাজির।তিরবিদ্ধ করে ওকে হত্যা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।ফালাকের পিতা কিছু বলতে এসেছে জাভেদ খানের কাছে।
আব্বাজানঃ চোখের সামনে নিজের পুত্রের মৃত্যু দেখার ক্ষমতা আমার নেই।যদি পারতাম নিজেকে নিজে মেরে দিতাম।আমি আজীবন দেখে এসেছি মৃত্যুপথযাত্রীর শেষ ইচ্ছা থাকলে তা পূরণের সুযোগ করে দেওয়া হয়।ওর কোনো শেষ ইচ্ছা আছে কিনা জানিনা।তবে আমার একটা শেষ ইচ্ছা আপনি পূরণ করবেন?
জাভেদঃ বলুন।
আব্বাজানঃ আমি ওকে কিছুসময় আমার কোলে শোয়াতে চাই।দশ বছর বয়স থেকে এই কোলের মাঝে ঘুমিয়ে ও বড় হয়েছে, ওই কোল-ই ওকে নতুন করে বাঁচিয়ে তুলেছিল।আমি চাই ওর মৃত্যু হওয়ার পূর্বে আমার এই কোলে একটু শোয়ার অনুমতি দিন।
জাভেদঃ মৃত্যুপথযাত্রীর শেষ ইচ্ছা আমিও পূরণ করার সুযোগ দিয়ে থাকি।সম্রাট ফালাক তুমি বলো তোমার শেষ ইচ্ছা কি?তোমাদের দুজনেরই শেষ ইচ্ছা পূরণ করবো আমি।
আরবঃ মহারাজ ওর কোনো ইচ্ছা পূরণ করার দায়িত্ব আপনি নিবেন না।ঝুঁকি নিবেন না আপনি। ও খুবই ধূর্ত।
জাভেদঃ যতবারই ধূর্ত হোক।আমি পূর্বেও যেমন প্রত্যেক অপরাধীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করেছি আর আজও করবো।
ফালাকঃ খুবই খুশি হলাম আমি আপনার উদারতা দেখে।আমার শেষ ইচ্ছার পূর্বে কিছু অভিযোগ আমি আপনার সামনে তুলে ধরতে চাই।যদিও আমি অপরাধী তবুও আমার সাথে কোনো অবিচার হলে তা দেখার দায়িত্ব নিশ্চই আপনি নিবেন?কারণ আপনি ন্যায়বিচার এর প্রতীকী।
জাভেদ কিছুটা থতমত খেয়ে গেলেও ওর অভিযোগ শুনতে রাজি হল।
জাভেদঃ বলো কি অভিযোগ আর কার বিরুদ্ধে?
ফালাকঃ আপনার কন্যার বিরুদ্ধে।
জাভেদঃ কি?
ফালাকঃ আমার পুরো বাক্য শুনে তবেই আপনি বক্তব্য পেশ করবেন।তার সঙ্গে আমার যেভাবেই বিবাহ হোক সে আমার স্ত্রী।তার সঙ্গে এখনো আমার তালাক কার্য হয়নি।আমি মারা যাওয়ার পর সে নিশ্চই বিধবা হবে?
ফালাকের এই কথা শুনে সবাই চমকে উঠল।এই বিষয়টা সবার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে।কিন্তু এই দোহাই দিয়ে ফালাক কি বলতে চাচ্ছে?সবাই তাই ভাবছে।
ফালাকঃ সে বিধবা হলেও আপনি তাকে আবার বিবাহ দিতে পারেন।সে তার নতুন স্বামী,সংসার নিয়ে তার শখ, আহ্লাদ মেটাতে পারবে।কিন্তু আমি তো তার থেকে কিছুই পাইনি।আর আমার বক্তব্যের মূল বিষয় সে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
মেহেরঃ কি বলতে চাইছে ও?
জাভেদঃ যা বলার তা স্পষ্ট করে বলো।
ফালাকঃ আপনার রাজ্যে এমন কোনো নীতি আমি শুনিনি যে নিজের স্বামীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে অথচ সেই বিশ্বাসঘাতকাতার শাস্তি সে পায়নি।আপনি অবশ্যই তাকে শাস্তি প্রদান করেছেন।আপনার কন্যা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকা করে আমাকে বন্দী করেছে।
হতে পারে সে এই রাজ্যের রাজকন্যা।তেমনি সে আমার রাজ্যের রানী অর্থ্যাৎ আমার স্ত্রী।আমার রাজ্যে বিশ্বাসঘাতকার শাস্তি আমি এক হাত কর্তন করে ফেলি।আপনার রাজ্যে কেমন শাস্তি তা আমার জানা নেই।কিন্তু আমি শুনেছি আপনি আপন পর ভাবেন না।অপরাধীকে তার শাস্তি প্রদান করে থাকেন।রাজকন্যা মেহেরুন আমার স্ত্রী হওয়া সত্তেও আমাকে অসুস্থ অবস্থাতে আটক করেছে। আর আমি তার স্বামী হওয়া সত্তেও সে কোন শরীয়াতের নিয়ম অনুসারে আমার শরীরে চাবুকাঘাত করেছে?তার কার্যধারা একরকম পেছন থেকে ছুড়ি মারাই বলে তাকে।আর তার পূর্বে সে আমাকে তার প্রেম ভালোবাসার জালে আটকে ফেলেছে যদিও তা ছলনা কিনা তা আমি এখনো নিশ্চিত নই। এমনকি গত কয়েকরাত সে তার কক্ষে নয় আমার কক্ষে আমার সঙ্গে থেকেছে।বিশ্বাস না হলে তার কাছেই প্রশ্ন করতে পারেন।আমি তাকে আমার কক্ষে ডেকে আনিনি বা ধরে আনিনি।সে নিজে যেচে এসেছে। আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম।সে সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেনি।আপনার রাজ্য অন্যায়ভাবে দখল করার জন্য আমি যেমন শাস্তি পাচ্ছি তেমন আপনার জামাইরাজা হয়ে আপনার কন্যার থেকে আমি ঠঁকেছি।এর বিচার কি হবেনা?
জাভেদ সহ রাজমহলের অন্যান্য বক্তিবর্গ সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে।এমনকি প্রজারাও একে অন্যের সাথে কানাকানি করছে।এটা সত্যি জাভেদ কখনো কারো সাথে অন্যায় হওয়া ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান না করে থাকেনি।আর ফালাক যা যুক্তি দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ যথার্থ।সে অপরাধী হলেও তার সাথে কোনো অন্যায় হলে তা জাভেদ স্বীকার করে। আর তার সাথে অন্যায়কারীর শাস্তি সে প্রদান করে।কিন্তু এখন মেয়ের ক্ষেত্রে সে কি শাস্তি প্রদান করবে আর তা কিভাবে?জাভেদ কেনো কেউ আশার করেনি এমন কোনো যুক্তি খাড়া করবে ফালাক।একরকম নির্বোধ,নিরুপায় হতে বাধ্য করেছে ফালাক।
ফালাকঃ চুপ আছেন যে সম্রাট জাভেদ?নিজের কন্যা বলে কি সে শাস্তি পাবেনা?নাকি আমার সাথে হওয়া অবিচার আপনি মেনে নিবেন আমি আপনার চোখে অপরাধী বলে?
ফালাক চিৎকার করে বলছে-” সমগ্র শেরপুরবাসী আপনাদের সাথে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে আপনারা কি সেই অভিযোগ নিয়ে আসেননি রাজা জাভেদের কাছে?বিচার পাননি আপনারা?চুপ করে থাকবেন না বলুন।
প্রজারা সব একসুরে বলল-” হ্যা পেয়েছি।”
ফালাকঃ তাহলে আমার ক্ষেত্রে তার বিপরীত কিছু হবে কেন?আমি কি সেই বিচার পাবোনা?
মৃত্যুপথযাত্রীর সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার সে দাবি করছে সম্রাট জাভেদের কাছে।
এবার জাভেদ মুখ খুলল।
জাভেদঃ আমার রাজ্যে বিশ্বাসঘাতকার শাস্তি পুরো এক দিন এব রাত তার শরীরে পাথর নিক্ষেপ করা।আমার কন্যাকে তুমি উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিবাহ করেছো আর…..
ফালাকঃ জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে বিবাহ করলেও সে আমাকে পূর্ণ স্বামী রূপে গ্রহণ করেছে।যার প্রমাণ আপনি আর মহারানী আজ ভোরে আপনার কন্যার কক্ষে পেয়েছেন।আমি কি তা খুলে বলব?
জাভেদঃ চুপ করো ফালাক তাজ।ঠিক আছে আমি আমার কন্যার শাস্তিপ্রদান করব।
ফালাকঃ আমার মৃত্যুর পূর্বেই।
জাভেদঃ ঠিক আছে।
ফালাকঃ এখন আমার শেষ ইচ্ছা আপনাকে পূরণ করতে হবে।
জাভেদঃ বলো।
ফালাকঃ আপনার কন্যার শাস্তি আমার মন মত হবে।বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড না তাই আমি তার মৃত্যুদন্ড চাইছি না।কিন্তু আপনাকে কথা দিতে হবে যে আপনি আমার কথামত তাকে শাস্তি প্রদান করবেন।তা না হলে আপনার ন্যায়বান গুণ ঘুচে যাবে আপনার নামের পাশ থেকে।মিথ্যা প্রমাণিত হবে যে আপনি সত্যি ন্যায়-নিষ্ঠার রাজা।
মন্ত্রীঃ মহারাজ এখন আপনি কি করবেন? রাজকন্যাকে শাস্তি প্রদান করবেন?
মেহের ভারী কন্ঠে বলল-” পিতা ওনাকে বলো উনি কি শাস্তি দিতে চাই আমাকে?ও যা শাস্তি প্রদান করবে আমি তা মাথা পেতে গ্রহণ করবো।”
জাভেদঃ মেহেরুন….?
মেহেরঃ পিতা আপনি আর চুপ থাকবেন না, মনে কোনো সংকোচ রাখবেন না।আপনি ওর কাছে শুনুন ও কি শাস্তি দিতে চাচ্ছে আমাকে?এটা তো সত্য সে আমার স্বামী।তার মৃত্যুর পর আমি আজীবন বিধবারূপেই থেকে যাবো।
জাভেদঃ বলো তুমি রাজকন্যার কি শাস্তি দিতে চাও?
ফালাকঃ আগামী সাতদিন তাকে আমার সঙ্গে ঘর করতে হবে।হ্যা, মাত্র সাতদিন।আর তা আপনার প্রাসাদেই।
জাভেদঃ তুমি কি আমাকে উন্মাদ ভাবো?আমি জেনে শুনে আমার কন্যাকে তোমার কাছে মরতে পাঠাবো?
মেহেরঃ পিতা আপনি মাথা গরম করবেন না। আমি তার সঙ্গে চারমাস বাস করেছি।সে আমাকে আর যাই হোক হত্যা করবেনা।এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
জাভেদঃ তোমার এই নিশ্চয়তা আমি মানতে পারছিনা।
মেহেরঃ গতকাল সারা রাত্রি আমি তার কক্ষে ছিলাম।সে চাইলে আমাকে তখনই হত্যা করতে পারতো।
continue…….