হিংস্রপ্রেম পর্ব ১৭

0
406

Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ১৭
লেখাঃ Israt Jahan

মেহেরঃ বেশরম, নির্লজ্জ এতকিছুর পরও আপনার আমার নেশা কাটেনি?ছাড়ুন আমাকে।
মেহের ফালাকের হাত ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে উঠে এল ওর বুক থেকে।
ফালাকঃ তাহলে ফালাক তাজের ঘোরও তোমার বুঝি কাটেনি?
মেহেরঃ কি বোঝাতে চাইছেন?
ফালাকঃ নিজের আরামদায়ক শয্যা ছেড়ে সেই ফালাকের বুকের মাঝে শোয়ার ইচ্ছা হল?এত সুখ পেয়েছো তাজের বুকে?
মেহেরঃ চুপ করুন নকৃষ্ট মানুষ কোথাকার। এত উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই।এইটুকু দয়া দেখিয়েছি বলে বিরাট কিছু ভেবে নিবেন না।ভেবে নিবেন না যে মেহেরুন আপনার মত ঘৃণ্য জীবের সঙ্গ পাওয়ার জন্য উতলা।দয়া পেয়েছেন তার কারণ আপনার দুঃখের সময় শুরু।সুখের মুখ তো আর দেখতে পাবেন না।আর দুঃখ কি তা তো অচেতন হয়ে পড়ে থাকলে অনুভব করতে পারবেন না
ফালাকঃ অচেতন হয়ে পড়ে থাকলে তোমার মায়া, প্রেম এগুলো দেখতে পাবোনা তাই জলদি জলদি আমাকে সেবা দিয়েছো।
মেহেরঃ বেহায়া পুরুষ কোথাকার…..।
মেহের রেগে কারাগার থেকে বেরিয়ে এল।এদিকে মেহেরের কক্ষে দরজার ওপাশে সবাই কড়া নারতে শুরু করেছে।প্রায় দরজা ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা চলছে ওর কোনো সাড়া না পেয়ে।মেহের কড়া নারার শব্দ শুনে দ্রুত গিয়ে দ্বার খুলে দিল।
জাভেদঃ মেহেরুন?এত সময় নিলি কেন দ্বার খুলতে?
মেহেরঃ মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম পিতা।
আরবঃ আমরা সবাই কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ওই জানুয়ারটা তোর কাছে আসতে পারেনি তো?
মেহেরঃ (………….)
মেহের নিশ্চুপ হয়ে গেল।কি বলবে কি উত্তর কিছুই বুঝতে পারছেনা আবার মিথ্যাও বলতে পারছেনা। তাই কথা ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল।
মেহেরঃ আমার কোনো অসুবিধা হয়নি চাচাজান। আমি ঠিক আছি।
আরবঃ ওর কি চেতনা ফিরেছে?দেখেছিস?
মেহেরঃ জ্বী চাচাজান দেখেছি।ও এখন জাগ্রত।
মাতাঃ ওর কক্ষে সর্বদা তালা দিয়ে রাখবে।ভুলেও ওই কক্ষের ভেতর যাবেনা তুমি।
মেহেরঃ হুম।
মেহের ফালাকের পিতার কক্ষে গেল তিনি এখন কেমন আছেন তা দেখার জন্য।কাল রাতে অনেকসময় ধরে মেহের তার পাশে বসে তাকে সেবা করেছে।আর তারপরই ফালাকের কাছে এসেছিল।কক্ষে ঢুকে দেখে তিনি বসে আছেন।
মেহেরঃ কেমন বোধ করছেন আব্বাজান?
আব্বাজানঃ মেহেরুন….আমার তাজ কেমন আছে মা?ও বেঁচে আছে তো, ওকে তোমরা কোনো ক্ষতি করোনি তো?আমি ওর কাছে যেতে চাই।আমি ওকে না দেখলে সুস্থ হবোনা।
মেহেরঃ হ্যা আমি তার কাছে আপনাকে নিয়ে যাব। আপনি আগে খেয়ে নিন তো।আসুন আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
আব্বাজানঃ কাল থেকে এ পর্যন্ত ওর পেটে কি কিছু পড়েছে?
মেহেরঃ (………..)
মেহের মাথাটা নিচু করে আছে।উত্তরটা দিতে পারলনা।আব্বাজান ওর নিরাবতার মাঝেই উত্তর পেয়ে গেলেন।চোখ বন্ধ করে ফেললেন।তবুও চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারলেন না।এই দৃশ্য দেখে মেহের নিজেও না কেঁদে থাকতে পারলোনা।চোখে পানি চলে এসেছে।
মেহেরঃ আমি জানি আব্বাজান আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে।আপনি হয়তো আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন না।ও যে অপরাধী অনেক বড় অপরাধী। ওর কি শাস্তি প্রাপ্য নয়?আমরা অপরাধ না করে ওর থেকে সাজা পেয়েছি আর ও এতগুলো মানুষকে দিনের পর দিন নির্মম ভাবে অত্যাচার করেছে, অন্যায়ভাবে এই রাজ্য দখল করেছিল।তার শাস্তি কি ও পাবেনা?
আব্বাজানঃ বাঁচিয়ে রাখবে তো তোমরা ওকে? নাকি সারাজীবন ওই অন্ধকার কারাগারে ফেলে রাখবে?
মেহেরঃ জানিনা পিতা।আমি কিচ্ছু জানিনা।শুধু এইটুকু জানি ও যা করেছে তার শাস্তি অনেক ভয়াবহ।
আব্বাজানঃ আমাকে একবার নিয়ে চলো ওর কাছে। আমি ওর মুখটা দেখতে চাই।একবার নিয়ে চলো আমাকে।
মেহের আব্বাজানের এমন করুণ সুরের অনুরোধ আর ফেলতে পারলোনা।মেহের তার নিজের কক্ষে নিয়ে এল।
আব্বাজানঃ তুমি যে বললে ও তোমাদের কারাগারে?
মেহেরঃ হ্যা কারগারটা আমার কক্ষে।আসুন আমার সঙ্গে।
ফালাকের সারা শরীর এখন অবদি ব্যাথা।এখনো সে শুয়ে আছে।নড়ার ক্ষমতা তার এখনো নেই। পুত্রকে এই অবস্থায় দেখে ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল।
ফালাকঃ আব্বাজান! কেমন আছেন আপনি?ওরা আপনার সাথে কোনো দুর্ব্যবহার করেনি তো?
আব্বাজান শুধু ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে। কোনো কথা বলতে পারছেনা।এভাবে আব্বাজানের কান্না করা দেখে মেহের এগিয়ে এল।
মেহেরঃ আব্বাজান আপনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বেন এভাবে কান্নাকাটি করলে।
আব্বাজানঃ তোমরা তো সেই ব্যবস্থায় করে রেখেছো।কিভাবে ওর সমস্ত শরীর আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে ফেলেছো।হাত পায়ের সমস্ত গিরা ফুলে আছে।ও তো এভাবেই মরে যাবে। অন্য কোনো উপায়ে তোমাদের আর মারতে হবেনা।
ফালাকঃ আপনি এভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন কেন আব্বাজান?আপনি কি আপনার তাজের ক্ষমতা সম্পর্কে ভুলে গেছেন?আব্বাজান আপনি যান। এখানে আর আপনি আসবেন না।সময়মত আপনার তাজ তার ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
আব্বাজানকে মেহের একরকম জোর করে তুলে নিয়ে গেল তার কক্ষে।তারপর তাকে কোনোরকমে কিছু খাইয়ে নিজের কক্ষে এল।ফালাক এখন পর্যন্ত বুঝতে পারেনি যে ও এখন মেহেরের কক্ষের ভেতরেই।দুই রাত পার হয়ে গেল ফালাক এক ফোটা পানিও খেতে পারেনি।মেহের নিজে খেতে গিয়ে এই কথা ওর মন পড়ে গেল।
মেহেরঃ আম্মাজান…..আমার শরীরটা একটু দুর্বল লাগছে।আমার খাওয়ারটা দাসীকে বলে একটু কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
আম্মাজানঃ খুব খারাপ লাগছে?রাজচিকিৎসককে একবার আসতে বলি?
মেহেরঃ না আম্মাজান তেমন কিছু নয়।একটু বিশ্রাম নিতে পারলে সুস্থবোধ করব।
মেহের কক্ষে পায়চারী করছে।দোটানার মাঝে আছে।
মেহেরঃ ভালো লাগছেনা।মন চাইছে একবার গিয়ে দেখে আসি কি খাচ্ছে কি করছে।আবার ওর কাছে গেলেই তো…….।কি যে যন্ত্রণা অসহ্য লাগছে।মন যে বাঁধা মানতে চাইছেনা।নাহ্ একবার গিয়ে দেখা উচিত কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে।ওর প্রাসাদে থাকতে ও কখনো না খাইয়ে রাখার চেষ্টা করিনি আমাদের।
যেহেতু আমি-ই ওকে পাহাড়া দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি তাই ওর দেখাশোনা করার দায়িত্বটাও আমার নেওয়া উচিত।
মেহের কক্ষে ঢুকে দেখল একটা থালাকে দুটো রুটি আর একটু তরকারি। কিন্তু ও নির্জীব হয়ে পড়ে আছে।উঠে বসে খাওয়ারটা খাওয়ার শক্তি ওর মাঝে নেই।আর থাকলেও ওই হাত দিয়ে ও এই মুহূর্তে খেতে পারবেনা।গতকাল লোহার মোটা শিকল কারাগারের শিকে পেঁচিয়ে যেভাবে টানছিল তাতে হাতের তালুর নরম মাংস জায়গায় জায়গায় থেঁতলে গেছে।মেহের অবশ্য রাতে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু সেবন করার জন্য যে পথ্য দেওয়া হয়েছে যা খেলে ও পুরোপুরি সুস্থ হবে সেই পথ্যগুলো ও এখন পর্যন্ত খেতে পারেনি।মেহের ওকে দেখে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে যে এই অবস্থা থেকে সেড়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে যদি ঠিকমত সেবা-শুশ্রুষা পায়।মেহেরের ঠিক মনে আছে ও যখন নিজের মুখ নিজে ক্ষত করেছিল তখন টানা মাসখানেক ফালাক-ই ওকে দেখভাল করেছে।আর তাই মেহের ও পারছেনা ওকে চোখের সামনে এভাবে মৃত লাশের মত পড়ে থাকতে দেখতে।
মেহেরঃ কক্ষে ঢুকে দেখি ও খুব কষ্টে পানপাত্রটুকু(গ্লাস) ধরে পানি পান করছে।হাত প্রচন্ড কাঁপছে ওর।
ফালাকঃ এসে গেছো।আমার তৃষ্ণা মিটেনি।আরো পানি চাই।জলদি নিয়ে এসো।
মেহেরঃ আমি কক্ষ থেকে বের হয় পানিপাত্র(জগ) নিয়ে এলাম।ওর কাছে গিয়ে পানপাত্রে পানি ভর্তি করে ওর সামনে এগিয়ে ধরলাম।হাত থেকে পানপাত্র টা ধরে নিতেও কষ্ট হচ্ছে দেখে আমি ওকে বললাম-“আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
কথাটি শুনে ফালাক প্রচন্ড খুশি হল।পানপাত্রের সামনে নিজেই মুখটা এগিয়ে নিয়ে এল।মেহের খুব যত্নের সাথে ওকে পানি পান করিয়ে দিচ্ছি।এমন করে আরো তিনবার ফালাক পানি খেল।এভাবে পানি খেতে দেখে মেহেরের বড্ড খারাপ লাগছে।
মেহেরঃ আর কত পানি পান করবেন?খাওয়ারটা তো খেতে হবে।
ফালাকঃ তোমার হাতে পানি পান করছি তো তাই খুব মিষ্টি লাগছে।শুধু মনে হচ্ছে খেয়েই চলি।
মেহের বুঝতে পেরেছে দুইদিনের অনাহারী ও।
হয়তো আরো খিদে পেয়েছে।মেহের ওর কোনো কথার উত্তর না দিয়ে কক্ষে এসে নিজের খাওয়ার থালাটা নিয়ে এল ফালাকের সামনে।
ফালাকঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ বোঝার জন্য। সত্যিই প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।দ্রুত খাইয়ে দাও তো।
মেহেরঃ আমি খাইয়ে দেব?
ফালাক উত্তরে ওর হাতদুটো মেহেরের সামনে মেলে ধরল।মেহের হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলোনা।ধীরেধীরে পুরো খাওয়ারটা ফালাক খেয়ে নিল মেহেরের হাত থেকে।ফালাক কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহের দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করল একরকম পালিয়ে যাওয়ার মতই।
ফালাকঃ হা হা হা…..ফালাকের ভালোবাসাও বুঝি হিংস্র।তাই এভাবে পালিয়ে গেলে।মেহের যত দ্রুত পারো আমাকে সেবা করে সুস্থ করো।তোমাকে যে বেশিদিন আমার থেকে দূরে রাখতে পারবোনা। খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে যে।
সারাদিনে মেহের শুধু দুবার ওর কক্ষে প্রবেশ করেছে।সকালের খাওয়ার খাওয়াতে আর দুপুরের খাওয়ার সময়।এরপর মেহের আর ভুলেও ওর কক্ষের দিকে যাইনি।রাতে মেহের রাজচিকিৎসককে নিয়ে এল ফালাকের কক্ষে।তিনি এসে বেশ কিছু সময় ফালাকের চিকিৎসা করলেন। আরো কিছু ঔষধ পথ্য এগুলো দিয়ে গেল।যেগুলো নিয়মিত সেবন করলেই ফালাক অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।এভাবেই প্রায় এক সপ্তাহ পার হতে চলল ফালাকের সুস্থ হতে।
আরবঃ মহারাজ মেহেরুন এসব কি শুরু করেছে?ও ওই শয়তানটার সেবা-শুশ্রুষা কেন করছে?
রাজচিকিৎসক কে ডেকে তাকে দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে।কি চাই কি ও?ও কি ওই জানুয়ারটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে?
জাভেদঃ তুমি ভুলে যাচ্ছো আরব যে মেহেরুন-ই ওকে আটক করে নিজের রাজ্যে বন্দী করে নিয়ে এসেছে। ওর মাঝে তুমি ফালাক তাজের প্রতি দুর্বলতা দেখলে কোথায়?
আরবঃ তাহলে এগুলো কেন করছে ও?যার শাস্তিই হবে মৃত্যুদন্ড তাকে এত সেবা-যত্ন করার কি প্রয়োজন?
জাভেদঃ আরব আমি এখনো কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি।আদৌ ওর মৃত্যুদন্ড কার্যকারী হবে কিনা জানিনা।
আরবঃ ওর সাথে আপনার কন্যার সংসার ও দেখতে চাইবেন না নিশ্চই?
জাভেদঃ আরব…!!
আরবঃ ওর মত জানুয়ারের শাস্তি একমাত্র মৃত্যু। ও আপনাদের উপর যে অত্যাচার করেছে তা আপনারা ভুলে যেতে পারলেও আমি পারবোনা। ও আমাকে যেভাবে মেরে আহত করেছে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তার শাস্তি আমিই ওকে দেব।
জাভেদঃ বিশ্বাসঘাতকতা?তোমার সঙ্গে কি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ও?
আরব কোনো কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেল মেহেরের কক্ষে।তখন মেহের কক্ষে নেই।পাশে তার পিতামাতার কক্ষে বসে মাতার সাথে কথা বলছে।আর আরব আজই ফালাককে হত্যা করবে বলে ঠিক করেছে।তলোয়ার হাতে নিয়ে ফালাকের কক্ষে প্রবেশ করল।ফালাক তখন ঘুমিয়ে আছে। কেউ হন্তদন্ত হয়ে ওর কক্ষে এসেছে তার পায়ের আওয়াজ পেয়ে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল।ও চোখ খুলে যখনি তাকালো তখনি আরব ওর বুকে তরোয়ার এর আঘাত বসাতে চেষ্টা করল।ফালাকের বুকে তরোয়ারের আঘাত লাগার আগেই ও শোয়া অবস্থাতেই আরবের বুকে লাথি মেরে দিল।এবারও আরব ছিটকে গিয়ে লোহার দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেল।আজ ফালাকের রাগও চরমে উঠে গেছে। সেদিন আরব ওকে যেভাবে মেরেছে তার শোধ আজ ফালাক তুলবে।আরবের কাছে আসতেই আরব তরোয়ারের আঘাত বসিয়ে দিল ফালাকের বাহুতে।তবুও ফালাক থেমে নেই।নিজের কৌশলে ওর হাত থেকে তরোয়ার ফেলে দিল।আরবের ঘাড় এক হাত দিয়ে ধরে আর অন্য হাত দিয়ে আরবের মাথা চেঁপে ধরেছে দেয়ালের সঙ্গে।দুজনের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।মারামারির এক পর্যায়ে ফালাক আর আরব কারাগারের বাহিরে চলে এল।তখন ফালাক বুঝতে পারল এটা মেহেরের কক্ষ।আর সেই কক্ষের মাঝে এই কারাগার তৈরি করা হয়েছে।আরবের
মাথাটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা দেওয়ার চিন্তাভাবনা ফালাকের।আর ঠিক সেটাই করল।এক ধাক্কা খেতেই আরবের কপাল ফেটে রক্তে মুখ ভেসে যাচ্ছে।এর ভেতরে আরবের আর্তনাদ শুনে জাভেদ খান,মেহের সবাই কক্ষে চলে এসেছে।কয়েকজন রক্ষী মিলে ফালাককে আটকে ধরেছে।নিজের ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে জাভেদ খান আর মাথা ঠিক রাখতে পারলোনা।
জাভেদঃ জানুয়ারের বাচ্চা তোর এত বড় সাহস তুই আমার প্রাসাদে আমার ভাইকে মেরে রক্তাক্ত করেছিস?
ফালাকঃ ওর জান নেব আমি।
জাভেদঃ তার পূর্বেই আমি তোর জান নেব।
জাভেদ খান তরোয়ার নিয়ে ফালাকের কাছে আগাতেই পেছন থেকে মেহের ডেকে উঠল।
মেহেরঃ পিতা জলদি রাজচিকিৎসক কে ডেকে পাঠাতে হবে।আপনি এদিকে আসুন ওর ব্যবস্থা পরে করা যাবে।
তারপর আরবকে চিকিৎসা দিতে রাজ্যের দুই তিনজন চিকিৎসককে আনা হল রাজমহলে। আরবের চিকিৎসা চলছে।মেহের নিজের কক্ষে এল।
রাগে পুরো শরীর মেহেরের জ্বলে যাচ্ছে।ফালাকের কক্ষের সামনে কয়েকজন প্রহরী বসে আছে।
মেহেরঃ কক্ষের দ্বার খোলো।
রক্ষীঃ জ্বী রাজকন্যা।
মেহের কক্ষে ঢুকে দেখল ফালাক একপা ভেঙ্গে মুড়িয়ে আর অন্য পা খাড়া করে তার উপর এক হাত রেখে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।
ফালাকঃ এসেছো? আমি তোমার অপেক্ষাতে বসে আছি।
এই বলে ফালাক উঠে দাঁড়াল।
মেহেরঃ আপনি কি মানুষ?
ফালাকঃ পশু।
মেহেরঃ আপনি সত্যিই হিংস্র পশু।চাচাজানের কিছু হয়ে গেলে আপনার অবস্থা আমি করুণ করে ছাড়বো।
ফালাকঃ এখনো মরেনি?ওর শরীর কি দিয়ে গঠিত? আমার হাত থেকে এত বড় বড় আঘাত পেয়েও ওর মরণ আর হয়না।
মেহেরঃ চুপ করুন।নিজের মৃত্যুর চিন্তা করুন এখন থেকে।
ফালাকঃ আমার মৃত্যু তো তোমার চোখে অনেক আগেই হয়ে গেছে।
কথাটা বলেই ফালাক মেহেরের কোমড় ধরে একদম ওর বুকের কাছে নিয়ে এল।
ফালাকঃ কে মারবে আমাকে?জাভেদ খান নাকি তার কন্যা?
মেহেরঃ কি মনে হয় আপনার?আমরা কি সেই সাহস রাখিনা নাকি আপনার মৃত্যু নেই?
ফালাকঃ আমার মৃত্যু তো আছেই।তুমি ফালাক তাজকে মারতে পারবে?কতোটা চোখে হারাও আমাকে তুমি যে নিজের কক্ষের মাঝে কারাগার তৈরি করে আমাকে বন্দী করে রেখেছো।কিন্তু আমি তো সেই কবে থেকেই তোমার মনের কারাগারে বন্দী হয়ে গিয়েছি।এটা তুমি কবে বুঝতে পারবে?আর প্রাণে মারতে তুমি কখনোই পারবেনা আমি তা জানি।তার শরীরে আঘাত করতে পারবে তুমি কখনো?সেই শক্তি তোমার মাঝে আছে? নিজের অজান্তেই ফালাকের ঠোঁটে,মুখে,বুকে সবজায়গায় এই ঠোঁটের ছোঁয়া পড়েছে।পারবে সেই ফালাকের শরীরে আঘাত করতে?
মেহের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল ফালাককে।ও আজ বোঝাতে চাই যে ওর মনে ফালাকের জন্য কোনো দুর্বলতা সৃষ্টি হয়নি।ফালাকের দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে রক্ষীদের ডাকল মেহের।
মেহেরঃ রক্ষী?
রক্ষীঃ জ্বী রাজকন্যা।
মেহেরঃ ওকে এমন ভাবে চেঁপে ধর যাতে ও এতটুকু নড়তে না পারে।
বলার সঙ্গে সঙ্গে দশ বারো জন রক্ষী ফালাককে গিয়ে চেঁপে ধরল।ফালাকের সেদিকে হুশ নেই। ও মেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ও ঠিক কি করতে চাইছে সেটা দেখার জন্যই ফালাকের মন ব্যাকুল হয়ে পড়েছে।কিছুক্ষণ পর মেহের হাতে চাবুক নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করল।তবে চাবুকটা সাধারণভাবে আনেনি।চাবুকের পুরো গা তৈলাক্ত আর সার গায়ে ধারাল পাথরের চূর্ণিকা আর লবণ মিশ্রিত।ফালাক এবার সত্যিই খুব অবাক হল যখন দেখল মেহেরের হাতে এমন চাবুক আর তার পিছে জাভেদ খান দাঁড়িয়ে আছে।ফালাক আর মেহের দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।ফালাক মেহেরের চোখের গভীরে গিয়ে ওর মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে।মেহের এক পা দু পা করে ফালাকের কাছে আসল।চোখের ইশারায় এক রক্ষীকে বোঝাল ফালাকের শরীরের পোশাকটা খুলে দিতে।একটানে ফালাকের শরীরের কাপড় টেনে ছিড়ে ফেলল প্রহরী।সঙ্গে সঙ্গেই মেহেরের চাবুকাঘাত পড়তে শুরু করল ফালাকের শরীরে। এবার ফালাকের চিৎকার শোনে কে।এক একটা ঘা তে সেই জায়গায় কেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে।কেটে সেখানে লবণ জড়িয়ে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফালাকের চিৎকারে সারা প্রাসাদের মানুষ এক হয়ে গেছে।চিৎকিরে মাঝে যখন ফালাক “মাগো” বলে চিৎকার করে উঠল তখন মেহের থেমে গেল।এ যেন সেই কাশেমের অত্যাচার চলছে ফালাকের উপর।বিশ ঘা এর মত চাবুকাঘাত পড়েছে ফালাকের শরীরে।
জাভেদঃ থেমে গেলে কেন? ওর শরীরর এক অংশ ও যেন সাদা না থাকে।
মেহের ফালাকের রক্তে রাঙা ছিন্নভিন্ন শরীর আর সহ্য করতে পারছেনা।রক্ষীদের সবার বেরিয়ে আসতে বলে ও নিজেও বেরিয়ে এল কক্ষের দ্বার বন্ধ করে।
মেহেরঃ আপনার চাবুক পিতা।আমি ওর ক্ষত বিক্ষত শরীরের রক্ত আর সহ্য করতে পারছিনা।
জাভেদ খান চাবুক নিয়ে চলে গেল।এর মধ্যে ফালাকের পিতা মেহেরুনের কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করছে।এই আর্তনাদ তান কানেও গেছে।মেহের বিছানায় বসে হাঁপাতে আছে।জোরপূর্বক পিতা কক্ষে ঢুকল।
আব্বাজানঃ কক্ষের দ্বার খোলো।আমি আমার তাজের কাছে যাব।কক্ষের দ্বার খোলো বলছি।
কিছু রক্ষী এসে আব্বাজান কে ধরে কক্ষ থেকে বের করতে চাইল।মেহের তাদের ধমক দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দিল।ভয়ে আব্বাজানের চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা মেহের।তার আদেশ মোতাবেক কক্ষের দ্বার খুলে দিল।ফালাককে দেখার মত অবস্থা ছিলনা।আব্বাজান সারা শরীরের রক্ত মুছে দিল ঠিক ই কিন্তু ক্ষত স্থানের জালা পোড়া কমাতে পারছেনা। ফালাক আধমরার মত হয়ে গেছে।কখনো আব্বাজান কখনো আম্মি।এই দুইজনকে বারবার ডাকছে ও। চেতনা হারালেও এত কষ্ট টের পেতে হতোনা।কিন্তু চেতনা থাকা অবস্থাতে পারছেনা এই অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে।আব্বাজান কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নত হয়ে পড়ল মেহেরের পায়ের কাছে।
আব্বাজানঃ তোমার পায়ে পড়ি আমার তাজকে বাঁচাও।ওকে একটু চিকিৎসা দাও।ও মরে যাবে।
মেহের নিচু হয়ে পা থেকে আব্বাজানের হাত সরিয়ে তার হাত জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারলোনা।আব্বাজান বারবার মেহেরের কাছে ফালাকের চিকিৎসার ব্যবস্থা চাইছে।তার কথা ফেলতে না পেরে মেহের রাজচিকিৎসককে আনতে বাধ্য হল।ওদিকে অন্যান্য চিকিৎসকগণ আরবের চিকিৎসায় ব্যস্ত। সবাই আরবের সুস্থতা কামনা করছে ওর পাশে দাঁড়িয়ে।রাজচিকিৎসকের নিজের চোখেও পানি চলে এসেছে ফালাকের শরীরের এমন অবস্থা দেখে।
সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে রাজচিকিৎসক ফালাকের চিকিৎসা দিয়েই চলেছে।চিকিৎসা দেওয়া শেষ হলে রাজচিকিৎসক কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।কিন্তু আব্বাজান যেতে চাইছেন না।মেহের তাকে নিতে আসলে মেহেরকে উদ্দেশ্য করে আব্বাজান বলল-“আমাকে মেরে ফেলো তারপর আমার তাজকে মারো।তবু আমার চোখের সামনে ওকে এভাবে মেরোনা।তোমাদের কাছে আমি আমার মৃত্যু ভিক্ষা চাইছি।আমাকে মেরে ফেলো।আমি আর আমার পুত্রের কষ্ট দেখতে পারছিনা।” ফালাক এখন কিছুটা সুস্থ।তাই ভাঙ্গা কন্ঠে পিতাকে বলল-” আব্বাজান আপনি কক্ষে যান।আমি ঠিক আছি। আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।আপনার অসুস্থতা যে আমি দেখতে পারবোনা।আপনি দয়া করে আপনার কক্ষে যান।”
আব্বাজানঃ কিছু আহার ভিক্ষা দাও আমার তাজের জন্য।আমি ওকে একটুখানি খাইয়ে দিয়ে তারপর চলে যাচ্ছি।
ফালাকের এই করুণ দশা আর পিতার এই কান্না জড়িত এমন আকুল কন্ঠ মেহেরের ভেতরটা ভেঙ্গে চুরে দিচ্ছে।
মেহেরঃ হায় আল্লাহ্….এ আমি কি করলাম কিভাবে করলাম?নিজের জিদ,কঠোরতা দেখাতে গিয়ে এই প্রথম কারোর উপর পাশবিক অত্যাচার করলাম।কি নির্দয়ভাবে ওকে মেরেছি।
মাঝরাত, মেহের সারা বিছানা এপাশ ওপাশ করে চলেছে শুধু।পিতা যাওয়ার পর থেকে মেহের আর ফালাকের কক্ষে যায়নি।আজ রাতে কিছুতেই আর মেহেরের চোখে ঘুম নামছেনা।ওর শুধু মনে হচ্ছে কেউ ওর দিকে রক্তরাঙা চোখে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে বারবার তাকিয়ে দেখছে আবার ফালাকের কক্ষের দ্বারের দিকে তাকাচ্ছে।
মেহেরঃ না না….ওর কক্ষের দ্বার তো বন্ধ করে রেখেছি আমি।ও কিভাবে আমার কক্ষে আসবে? কিন্তু আমার এমন কেন মনে হচ্ছে?ও আমার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে আর সেই চোখ রক্তরঞ্জিত হয়ে আছে।এরকমটা কেন মনে হচ্ছে আমার?
মেহের এমন বেশকিছুক্ষণ বিছানাতে ছাটাছাটি করল।কিন্তু কোনোরকমে চোখ বন্ধ করতে পারলোনা।বাধ্য হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল।মন টানছে ফালাকের কক্ষের দিকে।ও দেখতে চাইছে ফালাক জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে গেছে।অন্ধকার কক্ষ।কক্ষের নকশার ফাঁক দিয়ে যতটুকু আলো এসে পৌঁছেছে তাতে ও নিজের কক্ষের আশপাশ ভালো করেই দেখতে পাচ্ছে।হাতে আলো নিয়ে মেহের গুটি গুটি পায়ে কক্ষের দ্বার খুলে ঢুকল। কক্ষের কিছুটা ভেতরে ঢুকেই মেহের যা দেখতে পেল তাতে ভয়ে ওর শরীর কেঁপে উঠল।হাত থেকে আলোটা পড়ে গেল।পিছুপা হতেই ফালাক ওর পায়ে নিজের পা দিয়ে আঘাত করে ফেলে দিল। মেহের পড়ে যেতেই ফালাক ওকে একরকম টেনে হিঁচড়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এল।মেহের আসলেই কক্ষে ঢুকে দেখতে পেল ফালাক দেয়ালে হেলান দিয়ে এক পা ভেঙ্গে মুড়িয়ে অন্য পা খাড়া করে বসে আছে।আর রক্তরাঙা চোখটা সত্যি দ্বারের দিকে ছিল।যে চোখের কোনো পলক পড়ছিল না। মনে হচ্ছিল সত্যি ও মেহেরের দিকে তাকিয়ে ছিল। ও জানতো মেহের এই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে তাই ও এক দৃষ্টিতে ওই দ্বারের দিকে তাকিয়েছিল। এমনটাই মনে হচ্ছিল ওর চাহনি দেখে।
মেহেরঃ ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন বলছি।আমি কিন্তু রক্ষী ডাকব।
ফালাকঃ রক্ষী কেন জাভেদ খানকে ডাকো সকলকে ডাকো।তোমাকে যে আজ আমার হাত থেকে বাঁচায় কে আমি তাই দেখব।
মেহেরকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে কক্ষের দ্বার ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল।এক পা দু পা করে এগিয়ে আসছে মেহেরের দিকে।
ফালাকঃ স্বামীকে ছাড়া বিছানাতে ঘুম আসছিল না বুঝি।স্বামীর পরশ নিতে চলে এসেছো।আমিও তো অপেক্ষাতে ছিলাম কখন দ্বার খুলে আমার প্রিয়তমা আমার বাহুডোরে আসবে।সেই কখন থেকে দ্বারের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।আর এখন আসার সময় হল বুঝি তোমার?
ফালাক কথাগুলো স্বাভাবিক কন্ঠে নয় ভারী কন্ঠে বলছিল।কখনো মনে হচ্ছিল দাঁতে দাঁত চাঁপে রাগীস্বরে বলছে।এই মুহূর্তে ভয়ংকর শোনাচ্ছে ওর কন্ঠের আওয়াজ।আর মেহেরের তখন ওর রক্তরাঙা চোখ দেখে পিলে চমকে ওঠার মত অবস্থা। আলো টা মিনমিন করে জ্বলছে মাটিতে পড়ে।
মেহেরঃ পিতা…..।
ফালাকঃ আরো চিৎকার করে ডাকো।এই লোহার কক্ষ ভেদ করে তোমার পিতার কক্ষে তোমার ডাক পৌঁছানো খুবই কঠিন।ফালাকের শরীরে যে কষ্ট দিয়েছো তুমি আজ।ফালাক আজ সারা রাত সেই কষ্ট লাঘব করবে তোমার শরীরে অত্যাচার করে।
মেহের প্রানপণ চেষ্টা করছে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার।ফালাক আবারো মেহেরকে টেনে ধরে নিজের কাছে এনে ওর শরীরের উপর থেকে পাতলা চাদরটা টেনে ফেলে দিল।মেহের ফালাকের উন্মুক্ত শরীরে আচড় কাটছে তবুও ফালাক মেহেরকে শক্ত করে জাপটে ধরে আছে।মেহেরের শরীরে জামা টেনে ছিড়ে ফেলছে।ওর চিৎকারের আওয়াজ আর কারো কানে যাচ্ছেনা কারণ মুখটা বেঁধে ফেলেছে ফালাক।

***গল্পটা খুব পেইনফুল হবে শেষ পর্যন্তই।তাই কেউ মেহেরের জন্য দুঃখে কাতর হবেন না আবার ফালাকের দুঃখে কাতর হবেন না।দুজনই সমানভাবে ব্যথিত হবে।আর হ্যা গল্পটা পড়ে ভালো লাগলে একটা লাইক কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ভুলগুলো কষ্ট করে বুঝে নিবেন।*share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here