হিংস্রপ্রেম পর্ব ১১

0
352

Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ১১
লেখাঃ Israt Jahan

***আজকের পর্বটা বেশি সুন্দর করে সাজাতে পারিনি।সবাই ভুল গুলো একটু বুঝে নিও।কাল থেকে চেষ্টা করব সুন্দর করে সাজাতে।***

ফালাকঃ ওকে কিছু বলতে পারছিনা আমি।শুধু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।আর দু চোখের পাশ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।হাত চেঁপে ধরে আছি বলে-ই কি কষ্ট পাচ্ছে ও?কিছু না বলে হাতটা ছেড়ে দিলাম।হাতটা ছেড়ে দেওয়ার পর-ই চোখ খুলে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি ওর শরীরের উপর থেকে সরে আসার পর ও ওর কোমড়ের বামপাশে হাত দিতে গেল তার আগে আমি ওর হাতটা আটকে আমি নিজেই সেখানে হাত দিলাম।রক্তে জায়গাটুকু ভিজা হয়ে আছে।ধারাল চাকুটা ওর কোমড় থেকে বের করে নিলাম।এবার বুঝতে পারলাম তখন ওর কান্না করার কারণটা।ও আমার হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে যেতে গেল।আমি ওকে বললাম, “কোথাও যাবেনা এখানে এভাবেই শুয়ে থাকো।আমি আসছি।” আমি রাজচিকিৎসক এর কাছ থেকে কিছু ঔষধ নিয়ে এলাম।কক্ষে ঢুকে দেখি ও বিছানাতে বসে কোমড়ে কেটে যাওয়া অংশটুকু দেখছে।আমাকে দেখে জলদি কাপড় দিয়ে ঢেকে নিল জায়গাটুকু।আমি ওর কাছে যেতেই ও আমার থেকে দূরে সরে গেল।
ভয়কাতুর চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে।”মেহের তুমি এটা ভেবোনা যে আমি ঔষধ দিয়ে তোমাকে হত্যা করব।তা করতে চাইলে ওই চাকু দিয়ে তোমার শরীরে আঘাত করতাম।ঔষধ আনতে যেতাম না।” ও আমার ব্যবহার আর আমার কথাগুলো শুনে শুধু অবাক হচ্ছে।আমি ওর কাছে গিয়ে ওর দুই বাহু ধরে ওকে শয্যা গ্রহণ করতে বাধ্য করলাম।কোমড় থেকে কাপড় সরিয়ে নিতে গিয়ে ও আমার চেঁপে ধরল।

মেহেরঃ কি করছেন আপনি?
ফালাকঃ ঔষধ লাগাতে দাও।রক্ত বন্ধ করা জরুরি।
মেহেরঃ প্রয়োজন নেই।
ফালাকঃ অতিরীক্ত কথা বলো কেন? আমাকে আমার কাজটা করতে দাও।
মেহেরঃ আপনার উদ্দেশ্য কি?
ফালাক ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুকের বামপাশটাতে হাত দিয়ে উত্তর দিল।
ফালাকঃ তোমাকে বেঁধে রাখা, এখানে।আসলে আমি কোনোকিছু কখনো খুব সহজে পাইনি তো তাই সবকিছু জোর করে আদায় করে নেওয়াটাই আমার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর যে জিনিস খুব সহজে পাওয়া যায় তার প্রতি আমার চাহিদাটাও কম, আকর্ষণ ও কম।এবার তুমি বুঝে নাও তোমার প্রতি আমার এত টান কেন? ক্ষতস্থানটা বের করো।ঔষধটা লাগাতে হবে।
মেহেরঃ না।
ফালাকঃ না মানে?
মেহেরঃ আমাকে দিন আমি লাগিয়ে নিচ্ছি।
ফালাক কিছুক্ষণ মেহেরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে ঔষধটা ওর দিকে এগিয়ে দিল।
ফালাকঃ নাও।দেখি কিভাবে লাগাও।

মেহের ঔষধটা নিয়ে কোমড়ের বামপাশে লাগাতে চেষ্টা করছে।বেশ খানিক জায়গা জুড়ে ক্ষত হয়েছে বলে ঔষধ লাগাতে খুব কষ্ট পাচ্ছে।তাই ঠিকমত ঠিক জায়গায় লাগাতেও পারছেনা।সেটা দেখে ফালাক মেহেরের হাত থেকে ঔষধ নিয়ে নিল। তারপর ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে আবার শুইয়ে দিল।নিজে থেকেই মেহেরের কোমড়ের কাটা অংশে ঔষধ লাগাতে শুরু করল। আর এই দৃশ্য দেখে মেহের নিজের মনে লজ্জাতে নিচু হয়ে যাচ্ছে।যাকে ও আঘাত করার চেষ্টা করেছে আর সে ওর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে সেবা করছে।অনেক অবাক হচ্ছে মেহের।শুধু তাকিয়ে আছে ফালাকের চোখের দিকে।আর ফালাক ও যে মেহেরের চোখের দিকে তাকিয়েই ঔষধটা লাগিয়ে দিচ্ছে।

ফালাকঃ ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছি ধীরে ধীরে ব্যাথা কমে যাবে।আর সকালে রাজচিকিৎসক এসে কিছু পথ্য দিয়ে যাবে।এখন উনি ঘুমাচ্ছে তাই বেশি বিরক্ত করলাম না ওনাকে।এখন একটু কষ্ট করে ডানপাশে কাত হয়ে ঘুমাও।

ফালাক কক্ষের বাতি নিভিয়ে মেহেরের পাশে এসে শুয়ে পড়ল।ফালাকের দিকে ঘুরে শুয়ে আছে মেহের।হাজার প্রশ্ন ওর চোখে।ফালাক ঘুমিয়ে ছিল তাহলে কি করে বুঝতে পারল যে মেহের ওকে এখন আক্রমণ করতে যাচ্ছে?ফালাক অবশ্য মেহেরের দিকে আর না তাকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। এদিকে মেহেরের চোখজোড়া আর বন্ধ হতে চাইছেনা।আজকে রাতে নিদ্রা যে কেড়ে নিয়েছে ফালাকের অবাক করা ব্যবহার।কাল যেভাবে ফালাক মেহেরের ওপর রেগে গিয়েছিল আজ সম্পূর্ণ তার বিপরীত ব্যবহার পেল মেহের।এর কারণ কি?ফালাক আসলে কি চাইছে?এর কোনো কিছুই মেহের বুঝতে পারছেনা।ফালাক চোখ বন্ধ করেই মেহেরকে বলল, “এত চিন্তা করেও তুমি উত্তর খুঁজে পাবেনা মেহের।আমি কি করে বুঝলাম আর কেন তোমাকে এত যত্ন করছি এর উত্তর তুমি সেদিন পাবে যেদিন তুমি চোখ বন্ধ করেও আমাকে অনুভব করবে”।অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে আছে মেহের। ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।শুধু ফালাকের চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।ফালাক আর ওর মাঝে কিছুটা দূরত্ব থাকলেও দুজনের চিন্তা দুজনের মনের ভেতর সর্বক্ষণ চলছে।মেহের ফালাকের দিকে ঘুরে শুয়ে আছে।ওর কাছে মনে হল ফালাক ওর দিকে চেয়ে আছে এক পলকে, ওর মুখটা ছুঁয়ে দেখতে চাইছে।হাত বাড়িয়েছে ফালাক। হঠাৎ করেই মেহের চোখ খুলল।কিন্তু তখন দেখল ফালাক ওর দিকে এক পাশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে।আর ওর হাতটা মেহেরের খুব কাছে। কিন্তু মেহরকে স্পর্শ করে নয়।মেহের ওর মনের ভুল ভেবে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ল।

রাজচিকিৎসকঃ মহারানী! মহারানী!
মেহেরঃ রাজচিকিৎসক এর ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গল।চারপাশে তাকাতেই বুঝতে পারলাম অনেক বেলা হয়ে গেছে। এত বেলা অবদি ঘুমিয়েছি আজ?দরজায় বাহিরে চোখ পড়তে রাজচিকিৎসক কে দেখলাম।আমি দ্রুত আমার শোয়া উঠে থেকে মাথায় কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে বসলাম।
রাজচিকিৎসকঃ মহারানী মার্জনা করবেন।
ভেতরে প্রবেশ করতে পারি?
মেহেরঃ জ্বি আসুন।
রাজচিকিৎসকঃ ঘুম থেকে জাগাতে বাধ্য হলাম।মহারাজ বলল আপনার কোমড়ের ক্ষতস্থানে নাকি এখনো রক্তপাত হচ্ছে।আমাকে দ্রুত আপনার কাছে যেতে বললেন।
মেহেরঃ রাজচিকিৎসক এর কথা শুনে কোমড়ে হাত দিতে বুঝতে পারলাম এখনো রক্তপাত হচ্ছে তবে খুব কম।হয়তো রাতে শোয়ার সমস্যার কারণে আঘাতের জায়গাটাতে আবারো আঘাত লেগেছে। কিন্তু উনি জানলেন কি করে?তাহলে কি উনি আমার ক্ষতস্থান দেখে গেছেন?
রাজচিকিৎসকঃ আপনি একটু বলুন ওখানে কি খুব রক্তপাত হচ্ছে?
মেহেরঃ না।খুব সামান্য পরিমাণ।
রাজচিকিৎসকঃ আমি কিছু পথ্য দিয়ে যাচ্ছি যা আপনাকে সময় মত সেবন করতে হবে।
মেহেরঃ রাজচিকিৎসক কিছু পথ্য দিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমি শয্যা ছেড়ে দাঁড়াতেই কক্ষে পিতা প্রবেশ করলেন।আমার শরীরের খোঁজ খবর নিয়ে তারপর গেলেন।আমি রাজমহলে ওনাকে খুঁজছি কিন্তু কোথাও দেখছিনা।রাজসভাতে ও যাননি।তাহলে এত সকালে কোথায় গেলেন উনি?
ওনার অনুপস্থিতিতে আমার মনে হল যদি কোনো দাসীর মাধ্যমে রেশমির পিতামাতার খোঁজটা নিতে পারতাম আর সেই সাথে আমার পিতামাতার ও।কিন্তু ওরা যদি সম্রাটকে কিছু বলে দেয়?আমার জীবনের কোনো ঝুঁকি নেই যদি আমার পিতামাতার কোনো ক্ষতি করে বসে? তারপরও দেখি যদি কোনো দাসী আমাকে সহযোগীতা করে।

যে দাসীগুলো কারাগারে বন্দীদের খাওয়ার দিতে যায় মেহের তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলল। দাসীগুলোর সাথে কথা বলে বুঝতে পারল যে এরাও ফালাকের প্রতি ক্ষিপ্ত।তাই নিঃসংকোচে খবর এনে দিতে চেয়েছে ওরা।কিছুসময় পর দাসীগুলো খবর দিল, ” মহারানী! রেশমির পিতা কারাগারের মাঝেই কিছুদিন আগে মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যু আর কন্যার খোঁজ না পেয়ে রেশমির মাতা এখন উন্মাদ হয়ে গিয়েছে। উনি কিছুদিন আগেও কারাগারে ছিলেন।কিন্তু সম্রাট এখন তাকে কোথায় রেখেছেন তা কেউ বলতে পারেনা।আর আরো একটি দুঃখজনক কথা হচ্ছে আপনার পিতা অসুস্থ”।
মেহের কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল, “পিতা অসুস্থ? তাছাড়া সবাই সুস্থ আছে আমার চাচাজানের ছোট পুত্র?”
দাসীঃ আপনার চাচাজানের ছোটপুত্র তো কারাগারে নেই।
মেহেরঃ কি বলছো তোমরা?কি করেছে আমার ভাইকে?
দাসীঃ সম্রাট ছোট শিশুদের কখনো কারাগারে রাখেন না।শিশুকে সহ তার মাতাকে তিনি নিরাপদ স্থানে শুধুমাত্র ওই শিশুর জন্য রাখার ব্যবস্থা করেন।
মেহেরঃ ওহ্ আচ্ছা।অনেক অনেক শুকরিয়া আদায় করি আমাকে খবরগুলো তোমাদের এনে দেওয়ার জন্য।
মেহের কক্ষে এসে কক্ষের দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল।
মেহেরঃ আপনার মত হৃদয়হীন আর স্বার্থবাদী ব্যক্তিকে কেউ কোনোদিন ভালোবাসতে পারবেনা। আপনার শরীরে কতজন মানুষের অভিশাপ লেগে আছে তা আপনি নিজেও জানেন না।কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনার প্রতি আমার একটা আলাদা টান অনুভূত হয়েছিল।নিমিষে তা শেষ হয়ে গেল এই খবরগুলো শুনে।কি করে আমি আপনার থেকে সবাইকে রক্ষা করব? কি করে?

মেহের বেশকিছুক্ষণ বসে কাঁদতে কাঁদতে নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়তে শুরু করল।কোনো ভাবেই কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা।মেহের ফালাককে হত্যা করতে চেষ্টা করেছে তা জানা সত্তেও ফালাক ওকে ত্যাগ করতে সমর্থ নয়। তারমানে অতো সহজে মেহেরের মুক্তি নেই ওর হাত থেকে।এগুলো ভেবেই মেহের ভেঙ্গে পড়েছে। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেছে মেহের কক্ষের দরজা খুলছেনা।এদিকে ফালাক ও রাজকার্যে রাজ্যের বাহিরে গেছে খুব সকালেই।তাই দাসীরা বাধ্য হয়ে পিতার কাছে খবর পৌঁছে দিল মেহেরের দরজা বন্ধ করে থাকার কথা।তা শুনে পিতা মেহেরের দরজার এ পাশ থেকে ওকে ডাকতে শুরু করল।

পিতাঃ মেহেরুন? মেহেরুন মা?দরজা খুলো মা একবার।আমি তোমার পিতা।
মেহেরঃ পিতার কন্ঠের আওয়াজ শুনে আমি আর দরজা আটকে রাখতে পারলাম না।এই মানুষটাকে আমি কখনোই অসম্মান করতে পারিনা। তাই গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
পিতাঃ কি হয়েছে তোমার মা?তুমি এভাবে সারাদিন দরজা আটকে বসে আছো কেন?সেই সকাল থেকে নাকি কিছু খাওনি।কেন মা?কি হয়েছে বলো?
মেহেরঃ নতুন কিছু নয় পিতা।খুব খারাপ লাগছিল তাই।
পিতাঃ আমার থেকে কিছু লুকিওনা মা।আমাকে খুলে বলো।
মেহেরঃ কি করে আপনার পুত্রের নামে বিচার দিই আপনার কাছে?আপনি তো পারবেন না ওকে শাস্তি দিতে।কতগুলো মানুষের জীবন শেষ করে দিচ্ছে ও।আজ আমার পিতা অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে পরে আছে।কোরো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই তার। আর আমাকে সে রাজরানী করে রেখেছে।কিভাবে সহ্য করব আমি ওর এত অনাচার?
পিতাঃ চুপ করে আছো যে?
মেহের হঠাৎ করেই পিতার পা জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল।
মেহেরঃ পিতা আপনি-ই পারেন আপনার পুত্রকে বোঝাতে।আপনি ওকে বললেই ও আমার পিতামাতাকে মুক্ত করে দেবে।আমি ওকে কোনো ক্ষতি করবনা।ও যা চাইবে আমি তাই করব।তবু আমার পিতামাতাকে রক্ষা দিতে বলুন ওকে।
পিতাঃ মেহেরুন উঠো মা।তুমি কি ভেবেছো আমি ওকে বলিনি বা বলিনা এই ব্যাপারে?ওর পায়ে পড়তেই শুধু বাকি আছে।এসব ব্যাপারে ও কোনোদিনও আমার কথা গ্রাহ্য করেনি মা।
পর্যন্ত ও কখনো কারাগারের সামনে যেতে দেয়না। আমার সামনে আজ পর্যন্ত কখনো খুন করেনি। যা করে সব আমাকে আড়ালে রেখে করে।
মেহেরঃ কিছু মানুষের প্রতি এত সম্মান এত ভালোবাসা দেখিয়ে লাভ কি যদি বাকি মানুষের সাথে অন্যায় করে তাদের অভিশাপ কুড়ায়?
পিতাঃ ভালোবাসা! তুমি ঠিক-ই বলেছো মা। ভালোবাসা শুধু ও আমার থেকে পেয়েছে আর কারো থেকে পায়নি।যা পেয়েছে সব গায়ের জোড়ে। জোর করে সবকিছু ভোগ করেছে ও। আপনা আপনি কিছু পায়নি।আমি তোমাকে আজ নিজে বলছি মা ওকে আমরা এভাবে ধিক্কার দিয়ে, অবজ্ঞা করে, ঘৃণা করে ওকে আর ভালো করা যাবেনা। কারণ ওর পুরো জীবনটায় অবজ্ঞা আর ঘৃণাতে ভরা।তাই এখন এর বিপরীত কিছু প্রয়োজন।
মেহেরঃ ভালোবাসা দিতে বলছেন ওকে?
পিতাঃ হ্যা মা।ভালোবাসা প্রয়োজন।একবার দিয়ে দেখো।দেখো কোনো পরিবর্তন হয় কিনা। আমি তোমাকে জোর করবোনা।তোমার আর পিতামাতার সুরক্ষার পাশাপাশি একবার আমার তাজের চিন্তাও করো।

পিতা চলে গেল কান্না করতে করতে তার কক্ষে। মেহের কি বুঝতে পারবে ফালাকের মনের কথা? ভালোবাসতে পারবে ফালাককে?এসব চিন্তা গুলোই মেহেরকে বিপাকে ফেলেছে।মেহের অনেকক্ষণ বসে অনেক কিছু চিন্তা করে চোখ মুখ মুছে নিল। সারাদিন পার করে ফালাক প্রাসাদে ফিরল।আজ তার মেজাজ খুব চড়া কন্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে। হুংকার দিয়ে কথা বলছে মন্ত্রীর সঙ্গে।হয়তো নতুন রাজ্যের সাথে তার যুদ্ধ সংঘটিত হবে।তাদের বিরুদ্ধেই নানানরকম কথা বলছে।

মেহেরঃ রেগে গেলে ওর কন্ঠ অনেক তেজীয়ান হয়ে যায়।কক্ষে বসেই আমি ওর কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি।এই মানুষটা আমার স্বামী। স্বামীর উপর তার স্ত্রীর কতরকম দায়িত্ব কর্তব্য থাকে আর তা পালন প্রতিটা স্ত্রীকে-ই করতে হয়।আজ থেকে আমিও কাই করব।ভালোবাসা হৃদয় থেকে অনুভব না হলে কখনো তা কাউকে দেওয়া যায় না।আজ থেকে না হয় ভালোবাসার নাটকার্য চলবে তোমার সাথে।

মাথা খুব গরম হয়ে আছে ফালাকের।কক্ষে প্রবেশ করেই কক্ষ অন্ধকার দেখে চিৎকার করে উঠলো। দাসীকে চিৎকার করে ডাকল।কিন্তু কোনো দাসীর সাড়া পেলোনা।রাগে কক্ষে ভাঙ্গচুর শুরু করে দিয়েছে অন্ধকার কক্ষেই।
ফালাকঃ এত বড় স্পর্ধা আমার ডাকে কেউ সাড়া দিচ্ছেনা?প্রয়োজনের সময় যদি কাউকে না পায় তাহলে তাদের দিয়ে আমার হবে কি?আজ সবকয়টার প্রাণ নেব আমি।
ফালাক খুব রাগান্বিত ভঙ্গীতে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল দাসীদের উপর চিল্লাতে চিল্লাতে।তখন হঠাৎ করেই কক্ষের বাতি জ্বেলে উঠল।পিছু ঘুরে তাকাতেই দেখল মেহের দাঁড়িয়ে আছে।
মেহেরঃ ক্ষমা করবেন সম্রাট।আমার বাতি জ্বালতে একটু দেরী হয়ে গেছে।
ফালাকঃ আজ মেহের এত গহনা পড়েছে কেন? আর এত সেজেছে কেন?আমি তো চোখ ফেরাতে পারছিনা ওর থেকে।
মেহেরঃ দাসীদের আমি আসতে বারণ করেছি। তাই ওরা কেউ আসছেনা কক্ষে।
ফালাক কোনো কথা বলছেনা শুধু মেহেরকে দেখছে আর মেহেরের এত সাজার কারণ চিন্তা করছে।এমনিতেই মেহের অনেক বেশি সুন্দর। তার উপর এত গহনা পরে এত সেজেছে যে ওর থেকে চোখ ফেরাতে পারছেনা ফালাক।
মেহেরঃ আপনার কি প্রয়োজন আমাকে বলুন আমি এনে দিচ্ছি।
ফালাকঃ ঠান্ডা পানি।
ফালাক ওর দিকে চেয়ে শুধু ঠান্ডা পানি চাইল। মেহের পানি এনে ফালাকের সামনে ধরল।ফালাক পানির পাত্র হাতে নিয়ে পানি পান করে তা রেখে দিতে গেল আসবাবের উপর।কিন্তু তার আগেই মেহের ওর হাত থেকে নিয়ে তা রেখে দিল।এটা দেখেও ফালাক খুব অবাক হল।ফালাক বাহিরের পোশাক খুলতে শুরু করেছে আর মেহের ওর দিকে চেয়ে আছে।এই দৃশ্য দেখেও ফালাক খুব অবাক হল।আজ আর মেহের কক্ষের বাহিরে যায়নি। ফালাকের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।ফালাক গোসল সেরে রাতের খাওয়া খেয়ে কক্ষের বাহিরে গিয়ে সেনাপতির সাথে কিছু কথা বলছিল।কথা শেষ করে ফালাক যখন কক্ষে এল তখন মেহেরকে ও আয়নার সামনে বসে থাকতে দেখল। মেহের ওর শরীর থেকে সব গহনা খুলছে এক এক করে। আজকে মেহেরকে একটুও বিষন্ন দেখাচ্ছেনা। আর এটাই ফালাককে খুব অবাক করছে।অনেকটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ফালাককে।
মেহেরঃ সম্রাট! আপনি শুয়ে পড়ুন আমি আসছি।
ফালাকঃ কোথায় যাচ্ছ?
মেহেরঃ পিতার কক্ষে।
ফালাকঃ পিতার কক্ষ থেকে আমি মাত্র এসেছি। তার যা যা প্রয়োজন আমি সব দিয়ে এসেছি।
মেহেরঃ ও আচ্ছা
ফালাকঃ আমি শুধু ওকে তাকিয়ে দেখছি। ও কি সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে? আমি শুয়ে পড়ার পরই ও এসে আমার পাশে শুয়ে পড়ল। আশ্চর্যজনক ও আজ আর মাঝে কোনো দূরত্ব রাখেনি।কিছুসময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে ও। কিন্তু ওর এত পরিবর্তন দেখে আজ আমার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।আজকে এত কাজের মাঝে ওর শরীরের খোঁজটুকু নেওয়া হয়নি।আমি খুব সাবধানে ওর কাছে গিয়ে ওর কোমড়ের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে ক্ষতস্থানটুকু দেখলাম।কিভাবে কতটা জায়গা জুড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।ক্ষতটার ওপরে খু্ব আলতো করে স্পর্শ করলাম।আর ঠিক তখন ওর হাতটা আমার হাতের উপর পড়ল। আমি ওর দিকে তাকাতে দেখতে পেলাম ও ঘুমের মাঝে হাতটা আমার হাতের উপর রেখেছে।আমি হাতটা আস্তে সরিয়ে নিয়ে ওর মুখের সামনে এলাম। কিভাবে পাতলা চাদর(ওড়না) গলা মুখ ঢেকে আছে।কষ্ট হবে তো ঘুমাতে।আমার সামনে তোমাকে এভাবে আড়াল করে রাখার দরকার কি মেহের?আমি তো আর বাহিরের পুরুষ নই।আমি ওর ওই পাতলা চাদরটা ওর শরীরের উপর থেকে সরিয়ে দিলাম।কেন যেন ওর ঘুমন্ত মুখটা আমার কাছে টানে বেশি।নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হয়।
ঘুমিয়ে পড়েছে তো একটু ছোঁয়া দিলে বুঝতে পারবেনা হয়তো।বোঝার আগেই আমি সরে আসব। ওর ঠোঁটের খুব কাছে গিয়েও ওর ঠোঁটে স্পর্শ করতে পারলাম না।ঘুম ভেঙ্গে গেলে হয়তো আবার আমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করবে।আমি ওর থেকে দূরে সরে আসতে চাইলাম তখন মনে হল আমার বুকের মাঝে কেউ হাত রাখল।হাতটা আর কারো নয় আমার মেহেরের। হাতটা আমার বুকের মাঝে রেখেছে।আমি হাতটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মেহেরের মুখের দিকে তাকালাম।ওর চোখ দুটো আমার দিকে চেয়ে আছে।চোখ দুটো অশ্রুতে চিকচিক করছে।হঠাৎ করেই নিজের ঝোঁক সামলাতে না পেরে আমি ওর শরীরের উপর গিয়ে পড়লাম।আমার বুকের মাঝের কাপড়টুকু মেহেরের হাতের মুঠোর মাঝে।আমার ঘাড়ে ওর অন্য হাত।খুব কাছে টানার চেষ্টা করছে আমাকে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here