শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-১২

0
2432

শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-১২
#আমিনা আফরোজ

তখন প্রায় মধ্যরাত। চারিদিক নিস্তব্ধ।
যানবাহনের শব্দগুলোও ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে দূর সীমান্তে। স্টাডি রুমে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। শুধু থেমে থেমে নিঃশ্বাসের ভারি শব্দ শোনা যাচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে অবশ্য চাঁদের আলো আসছে ঘরে তবে তা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না ঘরে বাতি জ্বালানোর কারণে।

শ্রাবণ এতক্ষন ল্যাপটপে অফিসের কিছু কাজ করছিল। কিছুদিন পরে ওর ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। তাই এখন যতটা পারে অফিসের কাজ করে রাখছে ও। কিছুদিন পর তো আর তেমন সময় পাবে না।শ্রাবণ কাজ শেষ করে সামনে তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা ইতিমধ্যে আবারও ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। ঘুমের মধ্যে সন্ধ্যার মুখটা অনেক নিষ্পাপ লাগছে শ্রাবণের কাছে। শ্রাবণ ল্যাপটপ টা বন্ধ করে সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ও যতবার সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকায় ততোবারই যেন ঐ মুখের মায়ায় আটকে যায়। একজনের মুখে এত মায়া কি করে থাকতে পারে এটাই ভেবে পায় না ও।

শ্রাবণের এইসব ভাবনার মাঝেই সন্ধ্যা হঠাৎ করে ওর চোখ ঢাকলো দুই হাত দিয়ে ‌।শ্রাবন বুঝতে পারল ঘরে বাতি জ্বালানোর জন্যই হয়তো সন্ধ্যার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে ‌। শ্রাবণ চটজলদি ওঠে ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে আবারো সন্ধ্যার সামনে এসে বসলো।

বাতি নেভানোর জন্য পূর্নিমার ঝলমলে আলো এসে ভীর জমালো ঘরের কোনে। সম্পূর্ণ ঘর ভরে গেল আলো-আধারিতে।সেই সাথে খোলা জানালা দিয়ে আসতে লাগল মৃদু মন্দ বাতাস।

শ্রাবণ আবারো ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সন্ধ্যার দিকে। কিছুক্ষণ এভাবেই তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ করে শ্রাবণের অস্বস্তি লাগল।ওর মনে হলো ও গুরুতর অপরাধ করছে। পরক্ষনেই মনে হল নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকাটা কোন অপরাধ নয়। কথাগুলো মনে মনে ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল শ্রাবণের। তারপর শ্রাবণ সন্ধ্যাকে কোলে তুলে রোদের ঘরের দিকে চলে গেল।

রোদের রুমের সামনে এসে দেখল দরজা বন্ধ।বার দুয়েক রোদকে ডাকল কিন্তু রোদের কোন আওয়াজ পেল না। পাবেই বা কি করো রোদ তো ততক্ষনে কানে হেডফোন গুঁজে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। অগত্যা শ্রাবণ সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। শ্রাবন সন্ধ্যাকে ওর বিছানায় শুয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো কি করবে এখন ও। এভাবে একটা মেয়ের সাথে এক ঘরে থাকা সম্ভব না। যদিও ধর্মীয় মতে সন্ধ্যা শ্রাবণের স্ত্রী।তবে একথা তো আর সন্ধ্যা জানে না। শ্রাবণ ও জানতো না যদি না সেদিন রশিদ সাহেব ওকে কথাটা বলতেন। রশিদ সাহেব চাচ্ছিলেন খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা আর শ্রাবণের আবারো বিয়ে দিতে কিন্তু শ্রাবণই সন্ধ্যাকে কিছুটা সময় দিয়েছে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। তাছাড়া হঠাৎ করে বিয়ে হলে হয়তো সন্ধ্যা সবকিছু মানিয়ে নিতে পারত না এসব কিছু ভেবে এই শ্রাবণ ওদের বিয়েটা আরো কিছুদিন পিছিয়ে দিয়েছে।

শ্রাবণ সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। আপাতত একটা শান্তির ঘুম দিতে চায় ও। সন্ধ্যার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল তা নিজেও বুঝতে পারল না ও।

আযানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল সন্ধ্যার।চোখ মেলে এদিক-সেদিক তাকিয়ে বুঝতে পারল এটা ওর নিজের ঘর না। কথাটা মাথায় আসতে চটজলদি উঠে বসে পড়লো ওর। ধীরে ধীরে কাল রাতের কথাগুলো মনে পড়তে লাগলো ওর।

গতকাল সন্ধ্যা শ্রাবনের দেওয়া শাস্তি গুলো শেষ করে পড়তে বসে ছিল। বেশ কিছুক্ষণ ভালোই মনোযোগ ছিল ওর। মনোযোগটা নষ্ট হয় রোদ ও ঘরে আসার পর। রোদ মূলত সন্ধ্যাকে রাতের খাবারের জন্য ডাকতে এসেছিল। কিন্তু শ্রাবণ সন্ধ্যাকে তো যেতে দিলোই না উল্টো সন্ধ্যাকে আরো কথা শুনালো। বেচারি রোদকে ও কথা শুনানো বাদ দেই নি শ্রাবণ।রোদ এক দফা বকা খেয়ে মুখ ফুলিয়ে চলে গিয়েছিল ওর রুমের দিকে।রোদ চলে যাবার পরেই আবারো কিছুক্ষণ বকা দেয় সন্ধ্যাকে। শ্রাবণের বকা খেয়ে আবারো পড়ায় মুখ গুঁজে সন্ধ্যা।পড়তে পড়তেই কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিল তা নিজেও জানেনা ও।

সন্ধ্যা বিছানা থেকে উঠে ঘুম জড়ানো চোখে চারিদিক অবলোকন করতে লাগলো। শ্রাবণ কে সোফায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল সন্ধ্যার। ততক্ষণে চোখ থেকে ঘুমঘুম ভাব উধাও হয়ে গেছে ওর।পুরো ঘটনা এতোক্ষণে বুঝতে পারল ও। তারমানে গত রাতটা ও এই গোমরা মুখো রাক্ষসটার ঘরে ঘুমিয়ে ছিল।ইস এই কথাটা ভাবতেই সন্ধ্যার কেমন যেন লাগছে।তাই শ্রাবণের ঘুম ভাঙ্গার আগেই ধীর পায়ে চলে গেল নিজ রুমের দিকে।

এদিকে আজানের শব্দে রোদের ও ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যার কথা মনে হতেই পড়িমড়ি করে ছুটতে লাগলো স্টাডি রুমের দিকে। কিন্তু স্টাডি রুমে কাউকে না পেয়ে নিজের ঘরে এসে ভাবতে লাগল ও।এমন সময় দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো সন্ধ্যা। সন্ধ্যার দিকে ভ্রূ-কুচকে তাকিয়ে রইল রোদ।রোদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সন্ধ্যাকে বলল,

–“এসো আগে নামাজ পড়ে নেই।বাকি কথা না হয় পড়ে হবে।”

রোদ আর কোন কথা না বলে সন্ধ্যার পিছু পিছু ওযু করতে চলে গেল।

এদিকে সকলে সোনালী রোদের ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল শ্রাবণের। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা নেই হয়তো অনেক আগেই ওঠে গেছে। শ্রাবণ ওঠে ফ্রেশ হতে গেল।

অন্যদিকে রোদ আজ ও কলেজে আসতে লেট করেছে। যদিও ও আসার মাত্র মিনিট পাঁচেক আগেই ক্লাসে ঢুকেছে নেহাল। রোদ এসে দেখল নেহাল ক্লাস শুরু করেছে ইতিমধ্যে।রোদ দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,

–“আসতে পারি স্যার?”

নেহাল রোদের কন্ঠ শুনেই রোদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো ‌। তারপর কিছু একটা ভেবে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল ওর। নেহালকে এভাবে হাসতে দেখে রোদ মনে মনে বলল,

–“এ ব্যাটা এভাবে হাসছে কেন? নির্ঘাত কোন ঘাপলা আছে। না জানি আজ কি শাস্তি দেয়?”

নেহাল রোদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

–“ক্লাস কয়টায় শুরু হয়?”

রোদ ভয়ে বলতে লাগল,

–“১০ টায় স্যার।”

–“তাহলে এখন কয়টা বাজে?”

রোদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

–“১০ টা দশ বাজে।”

–“তারমানে তুমি দশ মিনিট লেট করে এসেছে তাই তো?”

রোদ কথা না বলে মাথা নিচু করে রইল। রোদকে চুপ করে থাকতে দেখে নেহাল মুচকি হেসে বলল,

–“যেহেতু তুমি দশ মিনিট লেট করেছ তাই ক্লাসের সবার সামনে তুমি দশ মিনিট কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।”

নিহালের কথা শুনে রোদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।ওর অনুমান ই ঠিক এ ব্যাটা সত্যি সত্যি গতকালের বদলা নিচ্ছে।

রোদকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নেহাল ধমক দিয়ে বলল ,

–” কি ব্যাপার আমি যা বলছি শুনতে পাও নি নাকি? তুমি যত দেরি করবে শাস্তির সময় ততো বাড়বে, তাই দেরি না করে ঝটপট কান ধরে দাঁড়িয়ে পড়ো।”

অগত্যা রোদ ক্লাসের সবার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে রইল। মনে মনে রাখে ফুঁসছে ও।এই অপমানের শোধ ও তুলবেই তুলবে।এদিকে রোদ কে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নেহাল মুচকি হাসি দিল।তারপর আবারো পড়াতে লাগল।দশ মিনিট পর নেহাল রোদকে বলল,

–“যাও নিজের জায়গায় গিয়ে বসো। আর কাল থেকে যদি লেট হয় তবে আজকের থেকেও শাস্তি হবে।”

রোদ নেহালকে মুখ ভেংচিয়ে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড এর কাছে গিয়ে বসল আর ভাবতে লাগল নেহাল কে কিভাবে জব্দ করা যায়। নেহাল কে তো এত সহজে ছেড়ে দিবে না ও,কিছুতেই না। কলেজ ছুটির পর রোদ বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে পার্কিং এ নেহালের বাইক দেখতে পেল। বাইকটা চোখে পড়তেই রোদের মাথায় কু-বুদ্ধির উদয় হলো।রোদ মুচকি হেসে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সে দিকে।

চলবে
(কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আমি গত দু’দিন খুব অসুস্থ ছিলাম বিধায় গল্প দিতে পারি নি। এজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।নিরব পাঠকরা দয়া করে সাড়া দিবেন। আপনাদের সাড়া পেলে লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। ভালো থাকবেন সবাই। হ্যাপি রিডিং ???)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here