শ্রাবন সন্ধ্যা অন্তিম পর্বের (২য় অধ্যায়)

0
3339

শ্রাবন সন্ধ্যা অন্তিম পর্বের (২য় অধ্যায়)
#আমিনা আফরোজ

কালো আঁধারের বুক চিড়ে শ্রাবনদের গাড়ি এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। ইমতিয়াজ সাহেবের গাড়িটি ফলো করেই এগিয়ে যাচ্ছে শ্রাবনদের গাড়ি। শ্রাবনের সাথে নেহালও সন্ধ্যাকে খুঁজতে এসেছে। সন্ধ্যার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা নেহালের থাকলেও নেহাল কখনোই সন্ধ্যার ক্ষতি চাই নি। কেন যেন এসবের পিছনে বারংবার নিজেকেই দায়ী ‌মনে হচ্ছে ওর । কি জানি হয়তো সন্ধ্যাকে খুজে বের করতে পারলে নিজের অপরাধের আত্নগ্লানি কিছুটা কমবে ওর।

ইমতিয়াজ সাহেবের গাড়ি ক্রন-ক্রিটের এই শহর ছেড়ে ছুটে চলেছে কোন এক অজানা গন্তব্যের পথে। ধীরে ধীরে দালানকোঠাগুড়ো মিলিয়ে গিয়ে আবছা অন্ধকারে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে সারি সারি গাছের বাহার। রাস্তার দু’পাশে মাথা উঁচু করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে তারা। যেন অতিথিদের সানন্দে বরন করে নিচ্ছে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক এর মাথায় ইমতিয়াজ সাহেবের গাড়ি এসে থামল একটি সাদা রঙের বাংলোর সামনে। শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরেই এই বাংলোটি। ইমতিয়াজ সাহেব নিজের একাকিত্বের অতিতের মধুর স্মৃতি মন্থন করতে আগে মাঝে মাঝেই এখানে আসতেন তবে বেশ কয়েক বছর হলো ওনার তেমন একটা আসা হয় নি এদিকে। বহু বছর পর আবারো নিজের সন্তানের জন্য আসতে হলো পুরোনো স্মৃতি বিজড়িত এই বাংলোতে। মেয়ের কথা মনে হতেই তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে বাংলোর ভেতরে চলে গেলেন তিনি। যে করেই হোক মেয়েটার কোন‌ ক্ষতি হতে দিবেন না তিনি।

এদিকে ইমতিয়াজ সাহেব বাংলোর ভেতরে চলে যাবার পর শ্রাবন ও নেহাল দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে এলো। শ্রাবন এই বাংলোর কথা আগে কখনো শুনে নি নেহার মুখে। সন্ধ্যার কথা মনে হতেই শ্রাবণ সাত-পাঁচ কিছু না ভেবেই বাংলোর ভেতরে ছুটে চলে যেতে লাগলে নেহাল আটকালো ওকে। নেহালের মতে নেহার মতো অতি চালাক মেয়ে বাংলোর চারপাশে সিকিউরিটি না রেখে সন্ধ্যাকে কিছুতেই এখানে রাখবে না। তাই যা করার খুব সাবধানে করতে হবে ওদের। ওদের কিঞ্চিৎ পরিমাণ ভুল সন্ধ্যার জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। নেহালের যুক্তি শোনে এবার পুরোপুরি বোধশক্তি ফিরে পেল শ্রাবন। সন্ধ্যার কারনে বোধশক্তি লোপ পেয়েছিল ওর। সেই যাই হোক।এখন আর অযথা সময় নষ্ট না করে দুজনে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল বাংলোর দিকে।

এদিকে বাংলোতে ঢোকাকালীন সময়ে ইমতিয়াজ খানের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলো বাবলু নামের এক ছেলের সঙ্গে। ছেলেটার বয়স আনুমানিক পঁচিশ হবে। অর্থ্যাৎ ইমতিয়াজ খানের সামনে নেহাতই ছোকরা সে। ইমতিয়াজ খান শেষ অব্দি জোরপূর্বক বাংলোর ভেতরে ঢুকলেন। তার বাংলো আর এ সেদিনের ছোকরা কি না তাকেই ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিল না। এ নিয়ে বেশ চটে আছেন তিনি। বাংলোতে ঢুকতেই চোখে পড়ল আতর মিয়াকে। আতর মিয়া এই বাংলোর বহু পুরাতন কেয়ার টেকার। বয়স ষাটের ঘরে। মাথা আর মুখ পাকা দাড়ি আর চুলে ভর্তি। আতর আলীকে এভাবে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইমতিয়াজ খান হুংকার ছেড়ে বলে ওঠলেন,

–“আমার বাংলোতে এসব কি অনাচার হচ্ছে আতর?”

নিজের মনিবকে দেখে এতক্ষণে যেন সাহস ফিরে এসেছে আতর আলীর। এতোক্ষণ মেয়েটার চিৎকার শুনে বড় ভয় হচ্ছিল ওনার। না জানি শয়তান দুটো মিলে কি করছে মেয়েটার সাথে। কিন্তু নেহার ভয়ে মেয়েটার কাছে যেতেও পারছেন না ওনি। তাই মনিব আসার অপেক্ষায় এখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। মন বলছিল ওনার মনিব আসবেই মেয়েটিকে বাঁচাতে। অনার মনের কথাটা সত্যি করে ইমতিয়াজ খান চলে এলেন এই নির্জন বাংলোটিতে।

–“কি হলো কথা বলছো না কেন?”

মনিবের ডাকে হুশ ফিরল আতর আলীর । তারপর তড়িঘড়ি করে বলে ওঠল,

–” ছোড মেডাম একডা মাইয়া লইয়া আইছে । হেই মাইয়াডারে ওপরের বা’দিকের ঘরে আটকাইয়া রাখছে। কাউরে যাইতে দিতেছেনা। তয় কিছুক্ষণ আগে দেখনু দুডা পোলা সেই ঘরের ভিত্তরে ঢুকলো। পোলা দুডা যাওনের পর থাইকাই মাইয়াডার চিৎকার শুনবার পারতাছি। আমার সেই ডর করতাছে বড় সাব।”

আতর আলীর কথা শুনে যেন ইমতিয়াজ সাহেবের নিঃশ্বাস আটকে যাবার উপক্রম হলো। নিজেকে যথাসম্ভব সামলিয়ে বলে উঠলো,

–“নেহা কোথায়?”

–“ছোড মেডাম তো ড্রয়িং রুমে বইসা কি সব লাল রঙের শরবত খাইতাছে আর কারে যেন গালি দিতেছে।”

আতর আলীর কথা শুনে ইমতিয়াজ সাহেব বিন্দুমাত্র দেরী না করে ছুটে চলে গেলেন সেদিকে। মেয়েটার কোন ক্ষতি হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না তিনি। ড্রয়িং রুমে পৌছে দেখলেন নেহা সোফায় বসে আরামচে ড্রিংস করছে। নেহাকে এই অবস্থায় দেখে আরো বেশি রেগে গেলেন ইমতিয়াজ সাহেব। দ্রুত নেহাকে সোফা থেকে দাঁড় করিয়ে গালে কষে চড় দিলেন আর হুংকার দিয়ে বলে ওঠলেন,

–“এতো অধঃপতন হয়েছে তোমার যে একটা মেয়েকে তুমি তার আপনজনদের কাছ থেকে নিয়ে এসে তাকে বন্দি করে রেখেছো। এত স্পর্ধা কোথায় পেলে তুমি?”

বাংলোতে বাবাকে অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখতে পেয়ে চমকে উঠল নেহা। আরো খানিকটা চমকালো বাবাকে রেগে কথা বলতে দেখে। ছোট থেকে আজ অবধি নেহাকে কখনো ওর বাবা ধমক দিয়ে কথা বলে নি। সেই বাবা কি না আজ ওকে ধমক দিল তাও ঐ সামান্য মেয়েটার জন্য।

নেহাকে চুপ থাকতে দেখে ইমতিয়াজ সাহেব আবারো বলে উঠলেন,

–” এই মুহূর্তে তোমাকে আমার বেধরোক পিটাতে ইচ্ছে করছে। এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোমায়? নিজের কাছেই নিজেকে ঘৃনিত বাবা মনে হচ্ছে। হায় নিজ সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে পারি নি আমি। তবে শুনে রেখো সন্ধ্যার যদি কিছু হয় তবে আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দিবো না।”

কথাগুলো বলেই দ্রুত শিড়ি বেয়ে ওপরের বাম দিকের ছোট্ট ঘরটির দিকে চলে গেলেন। ঘটনাটা এতটাই দ্রুত ঘটল যে বাবাকে কিছু বলারই সুযোগ পেলো না নেহা। তবে সম্ভিত ফিরে পেতেই বাবার পিছু পিছু ছুটে গেল ও। এই মুহূর্তে কিছুতেই বাবাকে ও ঘরে যেতে দেওয়া যাবে না।

এদিকে , শ্রাবন ও নেহাল বাবলুকে ফাঁকি দিয়ে বাংলোর ভেতরে ঢুকল আতর আলীর সাহায্য। শ্রাবন ও নেহাল যখন বাংলোতে ঢোকার বুদ্ধি আটছিল ঠিক তখনই দেখা মিলল আতর আলীর। শ্রাবনদের কথা শুনে বাবলুকে বোকা বানিয়ে ওদের দুজনকে ভিতরে নিয়ে এলো ও। তারপর সন্ধ্যাকে বন্দিরাখা ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে আবারো চলে গেল বাবলুর কাছে। আতর আলীর বলে দেওয়া পথ অনুসরণ করে যখন শ্রাবন আর নেহাল সেই ছোট্ট ঘরটিতে পৌঁছল তখন দেখতে পেল ইমতিয়াজ সাহেব নীল রঙের শাড়ি পরিহিত এক মেয়েকে ধরে কান্নার সুরে বিলাপ করে যাচ্ছেন। নীল রঙের শাড়ি পরিহিত মেয়েটির শাড়ি এলোমেলো হয়ে রয়েছে শরীরের সাথে। নেহাকে অবশ্য দোরগোড়ার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেল ওরা। শ্রাবণ ও নেহাল দুজনেই নেহাকে টপকিয়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। শ্রাবনদের আসতে দেখেই ইমতিয়াজ সাহেবের আহাজারি যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল। কি জবাব দেবেন ওনি সবাইকে? তার মেয়েটার যে সব শেষ হয়ে গেল? শ্রাবনকি এরপরেও ওনার মেয়েকে ফিরিয়ে নিবে ওর সংসারে?

এদিকে শ্রাবন সন্ধ্যার মাথাটি নিজের কোলে নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে রইল। সন্ধ্যার দুচোখের কাজল লেপ্টে গেছে চারিদিক, সেই সাথে ঠোঁটের লিপস্টিকও ঠোঁটের চারিপাশে ছড়িয়ে পড়েছে,গায়ের নীল রঙা শাড়িটিও এলোমেলো হয়ে আছে,সেই সাথে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে সন্ধ্যার শরীরের আঁচড়গুলো। শ্রাবনের আর বুঝতে বাকি রইল না কি অঘটন ঘটে গেছে সন্ধ্যার সাথে। সন্ধ্যার এই অবস্থা দেখে অশ্রুতে ভরে ওঠল শ্রাবনের দু-চোখ। শ্রাবন চিৎকার করে বলতে লাগল,

–“এই সন্ধ্যা ওঠো না। এভাবে চোখ বন্ধ করে আছো কেন তুমি? এই দেখো তোমার শ্রাবণ তোমার কাছে এসেছে । এখন আর কোন কিছুর ভয় নেই তোমার। তোমার শ্রাবন থাকতে আর কেউ কিছু করতে পারবো না তোমায় । এবার তো চোখ খুলে তাকাও আমার দিকে।”

কিন্তু শ্রাবনের এই আহাজারি বোধহয় কর্নগোচর হলো না সন্ধ্যার । তাইতো সন্ধ্যা এখনো চোখ বুজেই রয়েছে। শ্রাবনের এতো আহাজারিতেও কোন হেলদোল হচ্ছে না ওর। আর না হয় আজ ভীষণ অভিমান করেছে শ্রাবনের প্রতি। সেই অভিমানের দুয়ার হয়তো আর কখনো খুলবে না।

শ্রাবনের এমন আহাজারিতে চোখ মুছল নেহাল। ও নিজেও বুঝতে পেরেছে সন্ধ্যার সাথে কত বড় অন্যায় হয়ে গেছে। চোখ মুছে শ্রাবনকে ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠলো,

–” আর দেরি করা ঠিক হবে না শ্রাবণ। সন্ধ্যাকে এখনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।”

নেহালের কথা কানে যেতেই ইমতিয়াজ সাহেব নিজেই বলে উঠলেন,

–“তুমি ঠিক বলেছেন নেহাল এখন কিছুতেই সময় নষ্ট করা যাবে না। সন্ধ্যাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।”

তারপর অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা নেহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

–” বাকিটা না হয় পরে দেখা যাবে আগে সন্ধ্যাকে সুস্থ করা প্রয়োজন।”

অতঃপর ইমতিয়াজ সাহেব আর নেহাল সন্ধ্যা ও শ্রাবনকে ধরাধরি করে গাড়িতে উঠালেন। নেহা তখনও ঠায় দাঁড়িয়েছিল সেই ছোট্ট ঘরে দোরগোড়ায়। বাবার মুখ থেকে শোনা কথাগুলো এখনো বোধগম্য হচ্ছে না ওর। সত্যিই কি তবে প্রতিশোধের নেশায় ওর দ্বারা বড় কোন ভুল হয়ে গেল?

সাদা রঙের গাড়িটি আবারো ছুটে চলছে ইট-পাথরের কংক্রিটের গড়া ব্যস্ততম শহর ষটির পানে। নিকষ কালো অন্ধকার আরো যেন গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে আঁকড়ে ধরছে পুরো ধরনীকে। শ্রাবন তখনও তার প্রিয়সির হাত ধরে মনে মনে বলে চলেছে,

–“একবার ফিরে এসো বেলিফুল । তোমাকে আবারো শুভ্রতার চাঁদরে মুড়ে নেব আমি। তোমাকে নিয়ে চলে যাবো অচিন কোন এক দেশে। যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব আর থাকবে আমাদের টোনাটুনির ছোট্ট সংসার। শুধু ‌আরো একবার ফিরে এসো আমার কাছে, তোমায় আরো একবার আগলে রাখার সুযোগ দাও আমায়।”

অন্যদিকে নেহালও সন্ধ্যার মুখপানে তাকিয়ে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল,

–” যদি শ্রাবণ এ ঘটনায় সন্ধ্যাকে আর আপন করে না নেয় তবে নেহাল আবারো সন্ধ্যাকে নিজের করে নিবে। আবারো নতুন করে সাজিয়ে দিবে সন্ধ্যার জীবন।”

রাতের এই আঁধারকে সাক্ষী রেখেই ভিন্ন পথের দুটি মানুষ তাদের প্রিয়জনকে নিয়ে বুনে চলেছে ভবিষ্যতের আগামী দিনগুলোর কথা। হয়তো নিয়তি আবারো কাউকে সুযোগ দিবে প্রিয়জনকে ফিরে পাবার অথবা অন্য কারো সাথে জোড় লাগিয়ে দিবে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন।

কেটে গেছে আটটি বছর। বহু বছর পর আবারো এক হয়েছে কিছু চেনা – পরিচিত মুখ। নারিকেল গাছটার মাথার ওপর দেখা যাচ্ছে আষাঢ়ে পূর্নিমার মস্ত বড় রুপালি চাঁদ। চাঁদটাকে ঠিক গোল রুটির মতো গোল দেখাচ্ছে। রুপালি চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারিদিক। অদূরে নারিকেল গাছটির নীচে আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে বসে আছে গুটি কতেক ছেলে-মেয়ে। বয়ষ্ক ব্যক্তিরা উঠোনের একপাশে চেয়ার নিয়ে বসে গল্প-গুজব করছে তাদের মতো করে।

সেই তরুণ-তরুণীদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্যাম বর্ণের মেয়েটি। এই আট বছরে পরিবর্তন হয়ে গেছে সব কিছু। কেটে গেছে দুঃখ কষ্টে জর্জরিত সেই বিভীশিকাময় দিনগুলো। আট বছরের পূর্ণতা হিসেবে পেয়েছে চাঁদের মতো ফুটফুটে একটি মেয়ে। হাজারো ঝড়-ঝাপ্টার পরেও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে নিজের পরিবারকে। হঠাৎ পিছন থেকে শ্যামবর্নের মেয়েটির কমোর আঁকড়ে ধরল পরিচিত একটি বলিষ্ঠ হাত। পরিচিতি হাতের স্পর্শে হেসে ওঠল মেয়েটি। মেয়েটিকে হাসতে দেখে কপট রাগ দেখিয়ে গৌঢ় বর্নের ছেলেটি বলল,

–“এভাবে হেসো না বেলীফুল। তোমার ঐ হাসিতে পাগলপাড়া হয়ে যায় আমি। বেসামাল হয়ে পড়ি ক্ষনিকের মাঝেই। আমি বেসামাল হলে তখন কিন্তু আমায় কিছু বলতে পারবে না।”

ছেলেটির কথায় মেয়েটি আবারো হেসে বলে ওঠল,

–“চলুন সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।”

ছেলেটি শ্যাম বর্ণের মেয়েটির হাত ধরে এগিয়ে গেল সেই তরুণ-তরুনীদের দিকে। বিগত আটটা বছর তার বেলিফুলকে নিয়ে ভীনদেশে সাজিয়েছিল ছোট্ট একটি সংসার। একা সামলিয়েছিল সবটা তবুও প্রিয়সির হাত ছাড়ে নি। ওদেরকে দেখে কতগুলো পরিচিত মুখগুলো আবারো হৈচৈ এ মেতে ওঠল।রোদ আর নেহালও ওদের ছেলে নিভৃতকে নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেছে। অতিতের দিনগুলো ভুলে গিয়ে সবাই পা বাড়িয়েছিল ভবিষ্যতের উদ্দোশ্য।

আগুনোর উজ্জ্বল আলোতে খালি গলায় গান গাচ্ছে গৌঢ় বর্নের ছেলেটি। রাতের এই দ্বিপ্রহরে ছেলেটির গুন গুন সুরে জেগে ওঠেছে রূপগঞ্জ নামক ছোট্ট গ্রামটি। ধীরে ধীরে চাঁদ ঢলে পড়ছে পুব আকাশের কোলে। কিছু সময় গড়ালেই আগমন ঘটবে নতুন একটি দিনের। ছেলেটি এখনো তার বেশীফুলের দিকে তাকিয়ে গেয়ে চলছে গানটি। এভাবেই বেঁচে থাক পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন।

” তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে
নিরবে নিভৃত পূর্নিমা
নিশিথিনী সম”

সমাপ্ত

(আসসালামু আলাইকুম। অবশেষে শেষ হলো “শ্রাবন সন্ধ্যা” গল্পটি। গল্পটি শেষ করতে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় লেগেছে আমার। এতটা সময় লাগতো না যদি না আমি অসুস্থ হয়ে পড়তাম। আমি অনেক ব্যক্তিগত সমস্যার কারনে গল্পটি নিয়মিত দিতে পারি নি। এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত আমি। তবুও পুরো গল্প জুড়ে আপনাদের এতো এতো ভালোবাসা পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নই। এজন্য আপনাদের জন্য রইল অফুরন্ত ভালোবাসা। দোয়া করবেন যেন আরো ভালো ভালো গল্প আপনাদের উপহার দিতে পারি। গল্পটা নিছক একটা কল্পকাহিনী। তবে মাঝে মাঝে বাস্তবতার সাথে হয়তো কিছু দিক‌ মিলে গেছে। এইটা‌ আমার লেখা প্রথম উপন্যাস ছিল। তাই ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্পটি শুরুর সময় আমি নিজেও জানতাম না এর শেষ কি হবে বা‌ আদৌও উপন্যাসটি এতো বড় হবে। তবে আল্লাহর রহমতে ভালো ভালোই গল্পটি শেষ হয়েছে এতেই আলহামদুলিল্লাহ। পুরো গল্পটি পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে এই শেষ পর্বে এসে জানাবেন। সে হোক সমালোচনা বা আলোচনা। আমি আপনাদের থেকে পাওয়া দু-ধরনের মন্তব্য সাদরে গ্রহন করে নিবো। আপনাদের থেকে আজ কিছু গঠনমূলক মন্তব্য আশা তো করতেই পারি তাই না। তাই নাইস , অসাধারণ না লিখে দু-এক লাইনের হলেও গঠনমূলক মন্তব্য করার চেষ্টা করবেন। দু-একদিনের মধ্যেই নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here