শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-১৩

0
2285

শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-১৩
# আমিনা আফরোজ

সুন্দর ঝকঝকে নীল আকাশ।নীল আকাশের মাঝে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। বর্ষার বিদায় উপলক্ষে আর শরতের আগমনে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সৌন্দর্যের রং ছড়াতে ব্যস্ত।

রোদ ধীর পায়ে নেহালের বাইকের সামনে এসে দাড়ালো। চারিদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো আশে -পাশে কেউ আছে কি না। চারপাশে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই।তারপর হেজাব বাঁধা পিন দিয়ে বাইকের দুইটি চাকাতেই বেশ কয়েকটা ফুটো করল আর মনে মনে বলতে লাগল,

–“আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসলে এমনই হবে বজ্জাত লোক।পুরো ক্লাসের সামনে আমাকে কান ধরে দাঁড়িয়ে রেখেছিলি না এবার তুই ও রাস্তায় সঙের মতো দাঁড়িয়ে থাকবি।”

মনে মনে কথাগুলো বলে আপন মনেই হেসে উঠলো রোদ। তারপর কাজ শেষ করে মুচকি হেসে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।মনে মনে ভাবতে লাগল আজ নেহালের কি অবস্থা হবে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ভাবনার রাজ্যে থেকে বেরিয়ে এলো ও।সামনে তাকিয়ে দেখল ধাক্কা খাওয়া লোকটি আর কেউ নয় স্বয়ং নেহাল। নেহালকে দেখে রোদের এতক্ষনের সাহস যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল আর সেখানে এসে ভর করল একরাশ ভয়।ভয়ের কারণে গলা শুকিয়ে উঠছে রোদের।রোদকে এমন হাঁসফাঁস করতে দেখে নেহাল ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করল,

–“এমন করছো কেন?কি হয়েছে তোমার?”

নেহালের প্রশ্ন শুনে রোদ নিচু স্বরে বলল,

–“কই কিছুই হয়নি তো স্যার।”

রোদের উত্তর শুনে এখন শতভাগ নিশ্চিত হলো নেহাল। নির্ঘাত এই তার ছেঁড়া মেয়ে আবার কোন কান্ড ঘটিয়েছে।এর দ্বারা কোন কিছুই অসম্ভব নয়। যখন যেখানে সেখানে যে কোন কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে এ মেয়ে। নেহাল এবার জোর গলায় বলল,

–“কি কান্ড ঘটিয়েছে সত্যি করে বল? আমি যদি ধরতে পারি তবে কিন্তু তোমার অবস্থা আজকের থেকেও খারাপ হবে বলে দিলাম।”

নেহালের কথা শুনে রোদ ঢোক গিলে মনে মনে বলল,

–“এ ব্যাটার সামনে কিছুতেই নার্ভাস হওয়া যাবে না। নার্ভাস বলেই ওর পরিকল্পনা সব ভেস্তে যাবে।এত কষ্ট করে ও কাজটা করেছে কিছুতেই তা পন্ড হতে দেওয়া যাবে না।”

রোদকে চুপ করে থাকতে দেখে নেহাল আবারো ধমক দিয়ে বলল,

–“মাথায় কি কুবুদ্ধির উদয় হচ্ছে বলবে কি?”

নেহালের কথা শুনে রোদ এবার জোর গলায় বলল,

–“আমাকে দেখে কি আপনার কুবুদ্ধির জাহাজ বলে মনে হয় যে যখন তখন সেখান থেকে কুবুদ্ধির উদয় হবে?”

–“তোমার দ্বারা কোনো কিছুই অসম্ভব না। আর তোমার মাথার তো তার ছেড়া। কখন কি করে বসো নিজেই জানো না?”

নেহালের কথাগুলো শুনে রোদ রেগে গিয়ে বলল,

–“আপনি আসলেই একটা ফাজিল লোক।”

তারপর নেহালকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওর পাশ কাটিয়ে চলে আসলো রোদ। নেহাল কে মুখের উপর কথা গুলো বলতে পেরে রোদ আজ অনেক খুশি হয়েছে। সেই জন্য মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ওর নিজ গন্তব্যের দিকে চলে গেল।

অন্যদিকে নেহাল এখনও বোকার মত রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা পিচ্চি মেয়ে ওকে এভাবে অপমান করবে তার কল্পনাতেও ভাবতে পারে নি। রোদের বলা কথাগুলো মনে হতেই আবার ও রোদের ওপর রেগে গেল। মনে মনে বলতে লাগল কোন কুক্ষণে যে এমন মেয়ের সাথে ওর পরিচয় হল কে জানে? আর এমন বজ্জাত মেয়েটাই বা কি করে ওর ছাত্রী হল? নিজেকে কোন মতে সামলিয়ে নিয়ে বাইক নিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাসার উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে সন্ধ্যা সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। সারাদিন প্রায় একা একাই কেটে যায়। এখন অবশ্য রোদ আসার কথা। রোদ আসলে আড্ডা দিতে দিতে কোন দিক দিয়ে সময় চলে যায় বুঝতেই পারে না ও।আজ অবশ্য ঐ রাগী লোকটার পড়াগুলো কমপ্লিট করে রেখেছো ও। সকাল বেলা যে ভাবে ধমক দিয়ে বলে গেছে সেই ভয়েই আজ আগেভাগেই সব পড়া শেষ করে রেখেছে সন্ধ্যা।

আজ সকালবেলা ভয়ে ভয়ে সন্ধ্যা যখন খাবার টেবিলের সামনে যায় তখন দেখে শ্রাবণ টেবিলের এর একপাশে বসে খাবার খাচ্ছিলো। শ্রাবনকে দেখেই গতকালের ভয়ানক শাস্তি গুলো আবারো সন্ধ্যায় চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সন্ধ্যাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিসেস রাবেয়া বেগম বললেন,

–” কি ব্যাপার সন্ধ্যা এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? খাবার খেতে এসো।”

সন্ধ্যা কোন কথা না বলে ভীরু পায়ে কোন রকমে টেবিলে বসে পড়ল ও। সামনে বসে থাকা ব্যাক্তিটাকে ভীষণ ভয় পায় ও। গতকাল থেকে তো আরো বেশিই ভয় পায়। শ্রাবণ অবশ্য সন্ধ্যার দিকে বেশ কয়েকবার আড় চোখে তাকিয়েছে।তবে সন্ধ্যা একবারের জন্যও শ্রাবনের দিকে তাকায় নি। খাওয়া শেষ করে শ্রাবণ সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলল,

–“আজ যেন পড়া সব কমপ্লিট হয়ে না হলে আজকে আরো কঠিন শাস্তি দিব।”

সন্ধ্যা শ্রাবণের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে বলল,

–“ঠিক আছে ভাইয়া।আজ সব পড়া কমপ্লিট করে রাখব।”

সন্ধ্যার মুখে ভাইয়া বাক শুনে শ্রাবণ রেগে বলল,

–“তোমাকে কত দিন বারন করেছি না যে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবা না।কোন জন্মের ভাইয়া হই আমি তোমার?”

শ্রাবণের এমন কথা শুনে সন্ধ্যা মনে মনে বলল,

–“ভাইয়া থাকব না তো কি সাইয়্যা বলে ডাকব তোকে। ব্যাটা রাক্ষস সব সময় আমাকে ধমক দেয়।”

কিন্তু মুখে বলল,

–“তাহলে কি বলে ডাকবো আপনাকে?”

–” যা খুশি তাই ডাকতে পারো তবে ভাইয়া ডাকা নিষিদ্ধ। বুঝতে পেরেছো আমার কথা।”

সন্ধ্যার সম্মতি সূচক মাথা নাড়াল। এই রগচটা রাগী লোকটার থেকে একটু দূরেই থাকতে চায় ও।

শ্রাবন সন্ধ্যার দিকে না তাকিয়ে সোজা অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেল। গাড়িতে বসে কপাল চাপড়িয়ে বলতে লাগলো,

–“তোর কি ভাগ্য রে শ্রাবণ। শেষমেষ কি না বউয়ের মুখে তোর ভাইয়া ডাক শুনতে হয়? তোর দ্বারা কিছু হবে না।তুই এমন পোড়া কপাল নিয়েই থাক।”

অন্যদিকে সন্ধ্যা মিসেস রাবেয়া বেগমের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। মিসেস রাবেয়া বেগম পরিস্থিতি সামলাতে বলে উঠলেন,

–“ওর কথায় কিছু মনে করো না তো ।ও একটু এমনি।”

–“আন্টি আপনাকে আমার কিছু বলার ছিল?”

–“কি বলবে বলো?”

–“আমি একা আর ওনার কাছে পড়তে চাই না। আপনি যদি রোদকেও আমার সাথে পড়ার অনুমতি দিতেন তাহলে আমার জন্য ভালো হতো‌”

–“আরে এইটা তো ভালো প্রস্তাব।আমি এমনটাই ভাবছিলাম। তুমি চিন্তা করো না আমি এই বিষয়ে শ্রাবণের সঙ্গে কথা বলব আজ।”

সন্ধ্যা আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।

ভাবনার রাজ্যে থেকে বেরিয়ে দেখে রোদ ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।রোদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সন্ধ্যা বলল,

–“এভাবে তাকিয়ে আছ কেন তুমি?”

–“আমি বিগত বিশ মিনিট হলো তোমার পাশে এসে দাড়িয়ে আছি। কিন্তু তোমার কোন পাত্তায় পাচ্ছি না। কার ভাবনায় এমন বিভর হয়ে ডুবে আছো তুমি।ভাইয়া কে নিয়ে ভাবছিলে নাকি?”

রোদের কথায় চমকে উঠলো সন্ধ্যা। তারপর নিচু স্বরে বলল,

–“আমার তো আর কোন কাজ নেই তোমার ঐ বদরাগি ভাইয়ের ভাবনায় বিভর হয়ে থাকব।”

–“তাই নাকি।”

–“হুম ।আর শুনো আজ থেকে তুমি ও আমার সাথে ঐ বদরাগি লোকটার কাছে পড়বে।”

সন্ধ্যার কথা শুনে রোদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কাদো কাদো স্বরে বলল,

–“এইটা তুমি কি বলছো?আমি শেষ।জানো পড়া না পাড়লে কেমন ভয়ানক শাস্তি দেয়?”

–“জানি বলেই তোমাকেও সাথে নিচ্ছি। গতকাল থেকে ওনাকে আমার ভয় করছে।একা একা পড়তে পারব না বলেই তোমাকে সাথে নিলাম।”

–“ঠিক আছে আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি এখন। তারপর তোমাকে একটা ঘটনা বলব।”

–” না বলে যাও ।না হলে আমার ভালো লাগবে না।”

অতঃপর সন্ধ্যাকে বিকেলে নেহালের সাথে ঘটা ঘটনা গুলো বলতে লাগল রোদ।রোদের কথা শুনে সন্ধ্যা হাসতে হাসতে বলল,

–“লোকটা যদি জানতে পারে তুমি এমন করেছো তবে এবার হয়ত কলেজের সবার সামনে কান ধরাবে তোমাকে।”

রোদ আর কোন কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল।মনে মনে সন্ধ্যার কথা শুনে ভাবতে লাগল ও।আসলেই তো এক কিছু ভাবে নি ও।এখন নিজ কৃত কর্মের জন্য খুব আফসোস হচ্ছে রোদের।

চলবে

(কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।নিরব পাঠকরা দয়া করে সাড়া দিবেন। আপনাদের সাড়া পেলে লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। ভালো থাকবেন সবাই।হ্যাপি রিডিং ??)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here