শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-০৯

0
2467

শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-০৯
#আমিনা আফরোজ

ক্যাফের এক কোনের টেবিলে বসে আছে ওরা চারজন। ক্যাফেতে লোকজনের সমাগম দেখেই একটু কোনার দিকে টেবিলে এসেছে ওরা। এদিকটাই একটু সমাগম কম। ক্যাফের ভেতররে লাল-নীল আলোক বাতি জ্বলছে। সন্ধ্যার কাছে এসব নতুন। এতসব নতুনত্ব দেখে সন্ধ্যা বেশ অবাক। সেই সাথে অসস্তিও কাজ করছে ওর মধ্যে। তবুও রোদের সাথে চুপচাপ বসে আছে ও। কাউকে কিছু বুঝতে দিচ্ছে না। ওকে দেখে মনে হচ্ছে এসব ওর কাছে নিত্য পরিচিত। শ্রাবণ অর্ডার দিয়ে এসে বসে পড়লো সন্ধ্যাদের অপর পাশে। শ্রাবনকে বসে দেখে নিহাও শ্রাবণের পাশের চেয়ারে বসে পড়ল। নিহা শ্রাবনকে ছোটবেলা থেকে পছন্দ করে। শ্রাবণকে যে নিহা পছন্দ করে তা শ্রাবণ জানে। তবে শ্রাবণ ওকে না করে দিয়েছে বহু আগেই। তবুও নিহা শ্রাবণের পিছু ছাড়ে নি।

সন্ধ্যার কাছে নিহা নামের মেয়েটাকে খুব একটা সুবিধা মনে হচ্ছে না ওর। মেয়েটার পোশাক-আশাক আর স্বভাব কেমন যেন উশৃংখল মনে হচ্ছে ওর কাছে। ক্যাফের এতো মানুষের সামনে কেমন অসভ্যের মত শ্রাবনকে জড়িয়ে ধরে আছে, এইটা সন্ধ্যার কাছেই রীতিমতো অস্বস্তি লাগছে। সন্ধ্যাকে ওদের দিকে এমন ভাবে তাকানো দেখে নিহা বলল,

–“আরু এই মেয়েকে তো চিনলাম না? কে ও?”

নেহা ছোটবেলা থেকেই শ্রাবনকে ভালোবেসে আরু বলে ডাকে। শ্রাবণ অনেকবার নিষেধ করার পরেও নিহা শোনে নি। নিহা এখনো শ্রাবনকে আরু বলেই ডাকে।

নিহার প্রশ্ন শুনে শ্রাবণ বলল,

–“ও আশরাফ আঙ্কেলের মেয়ে সন্ধ্যা।”

–” ও।আগে তো দেখিনি কখনো?”

–“দেখবে কেমন করে ও তো এই প্রথম আমাদের বাসায় এলো।”

এসব কথার মধ্যেই ওয়েটার এসে ওদেরকে কফি দিয়ে গেল। কফি খেতে খেতে সবাই গল্প করছে। কিন্তু সন্ধ্যা বরাবরের মতোই চুপচাপ। সন্ধ্যার কাছে সবকিছু কেমন ফিকে লাগছে।ওর কেবলই মনে হচ্ছে ওর জীবন থেকে সব রং হারিয়ে গেছে, বিবর্ণ হয়ে গেছে ওর জীবন।

ক্যাফে থেকে বেরোতে বেরোতে রাত নয়টার কাছাকাছি বেজে গেল। শ্রাবণ বলল,

–“নিহা তুমি কি গাড়ি এনেছো?”

–“হ্যা এনেছি। কেন বলতো?”

–“তাহলে তুমি তোমার গাড়ি করে বাড়ি চলে যেও। দুঃখিত আমি তোমাকে আজ তোমার বাসা অবদি ড্রপ করতে পারছি না। অলরেডি নটা বেজে গেছে। তুমি তো জানোই আম্মু কেমন। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ।”

–” it’s ok aru. don’t worry. আমি কিছু মনে করি নি।”

–“thanks. see you later.”

–“sure.”

নিহার থেকে বিদায় নিয়ে শ্রাবণ গাড়ি নিয়ে চলে গেল নিজ গন্তব্যের দিকে। আর এদিকে নিহাও চলে গেল ক্লাবে। এইটা ওর নিত্যদিনের কাজ। নিহা সারাক্ষণ ক্লাব, পার্টি নিয়েই ব্যস্ত থাকে।

শ্রাবনদের গাড়িতে পিনপতন নীরবতা চলছে। রোদ ও চুপ করে আছে। শ্রাবণ গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিয়েছে। গাড়ির গ্লাস নামানোর কারণে অবাধ্য হাওয়া এসে দোল দিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যার চুলে। হওয়ার কারণে সন্ধ্যার চুলগুলো বারবার মুখে এসে পড়ছে । সন্ধ্যার বার দুয়েক হাত দিয়ে চুলগুলো সরালেও এখনো সড়াচ্ছে না। চুপচাপ বাহিরে অন্ধকারের দূর সীমান্তে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারকে আজ বড় আপন মনে হয় ওর। সন্ধ্যা যখন আপন খেয়ালে মগ্ন ঠিক তখনই রোদ চিৎকার করে উঠলো,

–“ভাইয়া গাড়ি থামাও।”

রোদের এমন চিৎকারে সন্ধ্যা হতচকিয়ে ওঠে পাশে তাকালো। শ্রাবণ ও সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে রোদকে বলল,

–“এভাবে চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বললি কেন?”

–“ভাইয়া দেখ ফুচকা।চল না ফুচকা খাই।”

রোদের এমন ছেলেমানুষি কথা শুনে শ্রাবণ রেগে বলল,

–“ফুচকা খাওয়ার জন্য তুই এভাবে গাড়ি থামাতে বললি?”

–“আর কি করতাম বলো? তোমাকে আগে বললে তো আর গাড়ি থামাতে না। তাই এভাবে চিৎকার দিলাম। চল না ভাইয়া।”

অগত্যা শ্রাবণ রোদ আর সন্ধ্যাকে নিয়ে ফুচকার দোকানে গেল। রোদ তিনজনের জন্যে তিন প্লেট ফুচকার অর্ডার দিতে নিলে শ্রাবণ বলল,

–“আমি এসব অখাদ্য খাই না। তোরা খা।”

–“ভাইয়া তুমি তো মানুষ না এলিয়েন তাই এসব খাও না।”

রোদ শ্রাবনকে মুখ ভেঙ্গিয়ে দু-প্লেট ফুচকার অর্ডার দিল। তারপর সন্ধ্যার সাথে গল্প করতে লাগলো। একটু পর দোকান দু-প্লেট ফুচকা এনে ওদের দিল। রোদ তো ফুচকা পেয়ে একের পর এক খেয়েই চলেছে। এদিকে ফুচকাতে বেশি ঝাল দেওয়ার জন্য সন্ধ্যা খেতে পারছে না। তবুও কষ্ট করে খেতে লাগলো ও।বেশি ঝাল এ কারণে শ্রদ্ধার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ওর কাছে মনে হচ্ছে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। শ্রাবন সন্ধ্যার এমন অবস্থা দেখে ওকে ধমক দিয়ে বলল,

–“ঝাল খেতে না পারলে আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিল? এভাবে কষ্ট করে কে খেতে বলেছে তোমায়?”

সন্ধ্যা কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে রইল। রোদ সন্ধ্যার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,

–“পানিটুকু খেয়ে নাও আপু, ঝাল কমে যাবে।”

সন্ধ্যা ঝটপট রোদোর হাত থেকে পানি নিয়ে খেতে লাগলো কিন্তু পানি খেয়েও সন্ধ্যার মনে হচ্ছে ঝাল কমছে না। শ্রাবণ তখন সন্ধ্যার এমন অবস্থা দেখে ওর জন্য আইসক্রিম আনতে গেল। একটু পর শ্রাবণ দুটো আইসক্রিম এনে একটা রোদকে একটা দিল আর সন্ধ্যার হাতে আইসক্রিম দিয়ে বলল,

–“আইসক্রিমটা খেয়ে নাও,ঝাল কমে যাবে।”

সন্ধ্যা শ্রাবণের হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে খেতে লাগলো। ওদের আইসক্রিম খেতে দেখে শ্রাবণ বলল,

–“গাড়িতে ওঠ। অনেক রাত হয়ে গেছে । এত রাতে বাইরে থাকা নিরাপদ নয়।”

শ্রাবণের কথা শুনে রোদ ও সন্ধ্যা বিনাবাক্যে শ্রাবণের কথা মত ওর পিছু পিছু গাড়িতে গিয়ে বসলো। শ্রাবণও ড্রাইভিং এ মন দিল।

এদিকে নেহালের অবস্থা দিনকে দিন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার কোন খবর না পেয়ে ও যেন আরও পাগলের মত হয়ে গেছে। এখন তো সারা দিন-রাত নেশার মাঝেই কাটে ওর। আজও ব্যাতিক্রম হয়নি তার। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খোলা আকাশের নিচে মদের বোতল নিয়ে নেহাল আজ ও বসে আছে । বোতলে চুমুক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

–“কেন এমন করলে সন্ধ্যা? আমি তো তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবেসেছিলাম। তোমাকে নিয়ে সুখের সংসার সাজাতে চেয়েছিলাম ‌। নিজেকে বদলেও ফেলেছিলাম তোমার জন্য। তবে কেন আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিলে তুমি? কেন আমাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিলে? আমি তো এই শূন্যতা চাই নি। আমি তো তোমার সাথে পূর্ণ হতে চেয়েছিলাম। তোমাকে হারানোর ব্যথা আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। তবে এত সহজে তোমাকে হারাতে দেব না আমি। আমাকে কষ্ট দেওয়ার প্রতিটা মুহূর্ত গুলো তোমাকে শাস্তি হিসেবে ফেরত দিব। আমি তোমার জীবনে আবার কালো মেঘ হয়ে ফিরব। একটু অপেক্ষা করো তুমি।”

কথাগুলো বলে আপন মনে হাসতে লাগল নেহাল। তারপর হেলে-দুলে বাড়ির পথে যেতে লাগলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর শ্রাবনদের গাড়ি ওদের বাড়ির সামনে এসে থামল। শ্রাবণ হর্ন বাজাতেই দারোয়ান এসে গেট খুলে দিল। শ্রাবণ গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে ওরা তিনজনে এইসাথে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। মিসেস রাবেয়া বেগম তখনও জেগে ছিলেন। ওদের আসতে দেখে বললেন,

–“তোরা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোদের খাবার দিচ্ছি।”

মায়ের কথা শুনে রোদ বলল,

–“আমি ফুচকা খেয়ে এসেছি মা এখন আর কিছু খেতে পারব না।”

মেয়েদের কথা শুনে রাবেয়া বেগম রেগে বললেন,

–“তোকে না কতবার বলেছি বাইরের খাবার খাবি না। আমার একটা কথাও শুনিস না কেন?”

রোদ ভয়ে চুপ করে রইলো। মায়ের ওপর কথা বলার সাহস নেই। সন্ধ্যাও আর কোন কথা বলে নি। অবস্থা বেগতিক দেখে শ্রাবণ বলল,

–“মা বাদ দাও না।এ নিয়ে আর রাগ করো না তো। বাচ্চা মেয়ে ও। এসব করবে না তো বুড়ি হলে করবে নাকি?”

–“এই তোর প্রশ্রয় পেয়েই এমন বাঁদর হয়েছে ও।”

–“বুঝেছি মা। এই বয়সে এমন একটু বাঁদর করতে হয়। এই রোদ যা নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।”

ভাইয়ের এমন কথা শুনে রোদ খুশিতে আটখানা। রোদ শ্রাবনকে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

–“ধন্যবাদ ভাইয়া। তোমার জন্য এতগুলো ভালোবাসা রইল।”

–“থাক আর ধন্যবাদ দিতে হবে না তোকে। যা ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।”

রোদ ঘরে চলে যাবার পর সন্ধ্যা ইতস্তত করে বলল,

–“আন্টি আমিও খাব না। আসলে ফুচকা খেয়ে পেটে আর জায়গা নেই।”

মিসেস রাবেয়া বেগম মুচকি হেসে বললেন,

–“ঠিক আছে ঘরে গিয়ে ঘুমাও।”

সন্ধ্যা চলে যেতেই রাবেয়া বেগম শ্রাবণকে বললেন,

–“মেয়েটার মন আগের থেকে হয়তো একটু ভালো হয়েছে। তুই আর এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ঘরে যা আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”

–“তুমি কি করে বুঝলে যে আমি এখনো খাইনি?”

–“ও তুই বুঝবি না। মায়েরা সন্তানের মুখ দেখে এমনিতেই সবকিছু বুঝতে পারে। ঘরে যা । এসব তুই বুঝবি না।”

–“ঠিক আছে।”

শ্রাবন ওর মায়ের কথা মত নিজ ঘরের দিকে চলে গেল।

চলবে

(কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুল- ত্রুটি গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানি না। হয়তো অতটা গুছিয়ে লিখতে পারি নি, এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। যারা নীরব পাঠক আছেন তারা দয়া করে সাড়া দিবেন। আপনাদের সাড়া পেলে লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। ভাল থাকবেন সবাই আর “শ্রাবনসন্ধ্যা”গল্প নিয়ে আপনাদের মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন। হ্যাপি রিডিং ??)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here