শিশির বিন্দু পর্ব ২০

0
468

#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ২০

শেখ বংশে যেনো আজকে থেকেই বিয়ের ধুম পড়েছে! বিকালের দিকে সবাই হলি খেলে পুরো ছাদে আবির দিয়ে মাখিয়েছে! সবাই যেনো অনেকদিন পরে এইরকম আনন্দ করছে,, কারন শিশির- বিন্দুর বিয়েতে তো অনুষ্ঠান হয়নি! ধরতে গেলে লাস্ট বার শিশির আর মেঘলার বিয়েতে সবাই এমন মজা করেছিলো! আর দুই বছর পর নীলের বিয়ে! সবাই আবীর খেললেও বিন্দু খেলেনি, তার এগুলো পছন্দ না! বিন্দু মেঘকে কোলে নিয়ে আলাদা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো, হঠাৎ করেই পেছন থেকে শিশির এসে খুব সাবধানে বিন্দুর গালে আবীর ছুয়িয়ে দেয়! কারণ বিন্দুর কোলে মেঘ ছিলো, ছোট বাচ্চার ত্বকে লাগলে ক্ষতি হতে পারে! বিন্দু রেগে পেছনে ঘুরতেই দেখে শিশির দাত বের করে হাসছে, বিন্দু কিছু বলার আগেই দূত হেটে ওর সামনে থেকে সরে যায়, নাইলে আজ ওর রক্ষা নেই!

সন্ধ্যার পর,,
ছাদেই হলুদের “থিম বেইজ স্টেজ” করা হয়েছে! বাড়ির বাহিরের দিকে ছোট ছোট মরিচ লাইটগুলো দিয়ে দোতলা বিল্ডিং পুরোই সাজানো! আর বাড়ির ভেতরের দিকে সাদা-গোলাপী ভেইল আর বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে! এই বাড়িটা নীলের বাবা মারা যাওয়ার দুই বছর আগে খুব শখ করে বানিয়েছিলো,, কিন্তু তার আর বসবাস করার সৌভাগ্য হলো না! দোতলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স, এতো বড় বাড়িতে শুধু নীলের মা আফসানা শেখ আর ওর বোন নীরা শেখ একাই থাকে! কারণ নীল এতোদিন ইতালিতেই ছিলো,, আর ওদের বাড়িতে কোন সদস্য নেই! তবে, একটা সার্ভেন্ট আছে এই বাড়িতে! এই বাড়ির ছাদটা বেশ বড়-সড়ই, তাই কারোর কোন অসুবিধে হলো না আর বাড়িটা বেশ সুন্দরও বটে!

বিন্দুকে দেখে শিশির জাস্ট স্তব্দ হয়ে গেছে,, পার্লার থেকে বাড়ির সব মেয়েরাই সেজেছে সাথে বিন্দুকেও শিশির জোর করে পাঠিয়েছে! এখন ওর মনে হচ্ছে না পাঠালেই ভালো হতো, কারণ ওর বউয়ের এমন রূপ দেখে ওর নিজেরই পাগল হবার অবস্থা, বাকিরা তাইলে কি করবে! ওর কাজিনদের সবার বউয়ের মধ্যে ওর বউই বেশি সুন্দর,, এটা ওর মনের কথা না বরং বিকেলে একটা সুন্দরী এওয়ার্ড প্রতিযোগীতা হয়েছে যার মধ্যে বাড়ির সব বউয়ের মধ্যে সুন্দরের প্রথম তালিকায় আছে বিন্দু আর মেয়েদের মধ্য নীলের এক কাজিন– রানী ( রানী সবার বড় এবং বিবাহিতও)! এখানে কেওই কারোর চেয়ে কম সুন্দর না,, তবে রানী আর বিন্দু একটু বেশিই সুন্দরের তালিকায় আছে! বাড়ির সব মেয়ে-বউরা মেজেন্টা কালারের সেইম শাড়ি পড়েছে,, সাথে সবার ফুলের ওর্নামেন্টস! কারোর কারোর চুল খোলা আবার কারোর খোপা বাধা আবার কারোর বেণীগাঁথা! সবাইকে বেশ মানিয়েছে বটে!

মেঘকে বিন্দুর মায়ের কাছে দিয়ে গিয়েছিলো, এখনও ওর আম্মু তন্দ্রাবতির কোলেই আছে মেঘ! বিন্দু একবার মেঘকে আদর করেই রুদ্রাকে খুজতে যায়,, হঠাৎ ওর হাত কেও টান দিয়ে ছাদের পেছনের দিকটা নিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে ওকে! ও কিছু বলার আগেই দেখে শিশির ওর খুব কাছে, ওদের মাঝে আর এক ইঞ্চি ফাঁকা হবে! বিন্দু বেশ ভয় পেয়েছিলো!

বিন্দুঃ ওহ আপনে, আমি তো বেশ ভয় পেয়েছিলাম! (বুকে হাত দিয়ে জোরে নিশ্বাস নিয়ে)

শিশিরঃ আমি ছাড়া এখানে আর কার সাহস আছে আমার বউকে টার্চ করার?

বিন্দুঃ নাহ মান,,

পুরোটা শেষ করার আগেই শিশির বিন্দুর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়!

শিশিরঃ শশশশ,,, আমার বিন্দুবালা কে একটু মন ভরে দেখি! (বিন্দুর চোখের দিকে তাকিয়ে)

বিন্দুর বেশ অসস্থি লাগছে শিশিরকে এতো কাছে দেখে,, কিন্তু বিন্দু আর আগের মতো রেগে যায় না শিশিরকে কাছে দেখে! শিশিরকে হয়তো মেনে নিতে শুরু করেছে তাই,,,

শিশিরঃ ইউ নো দ্যাট, ইউ আর দ্যা মোস্ট বিউটিফুল ফ্লাওয়ার বিন্দুবালা! অ্যান্ড আই এম সো প্রাউড দিস রিজন বিকজ দিস বিউটিফুল ফ্লাওয়ার
ইস আ গিফট ফ্রম গড টু মি! ইউ আর দ্যা মোস্ট ইম্প্রট্যান্ট পারসন ইন মাই লাইফ!

এই বলেই বিন্দুর কপালে ডিপলি কিস করল,, এতে বিন্দু যেনো কেঁপে ওঠলো! কপাল থেকে ডান গালে চুমু দিতেই বিন্দু অনেক জোরে ধাক্কা দিয়ে শিশিরকে সরিয়ে দেয় সামনে থেকে!

শিশিরঃ ( কপট রেগে) এটা কি হলো বিন্দু?

বিন্দু কিছু না বলে সেখান থেকে সরে যায়,, শিশির এখনো রেগে বিন্দুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে! আর বিন্দু মনে মনে একশো একটা বকা দিয়ে স্টেজের কাছে যায়! গিয়ে দেখে নীলকে হলুদ দেওয়া শুরু হয়েছে,, প্রথমে নীলের মা দেয় তারপর নীলের মামা- মামীরা দেয়, তারপর ওর চাচা-চাচী, ফুপু একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়ায়! রাত ৮:৩০ এর দিকে হলুদের পর্ব শেষ হতেই নাচ- গানের পারফর্মেন্স শুরু হয়! নীলকে ওর কাজিনরা স্টেজ থেকে নামিয়ে দিয়ে একদম ডান্সের স্টেজ বানিয়ে ফেলে! আর এর পুরো দায়িত্ব নেয় ইশা সাথে এনাউন্সমেন্টের ভারও নেয় ইশা তবে সেটা কিছুক্ষন পরে ইশার পারফর্মেন্স শেষ হলে,, তার আগে ভার দেয় আদনানের ওপর কারণ আদনান কোন পারফর্মেন্স করবে না! আর শিশিরকেও ভয়ে বলতে পারেনি! তারপর আদনান প্রথম ডান্সের এনাউন্সমেন্ট করে তৃষা-ইশার নাম! ওরা নীলকে হলুদ দিয়েই ছুটে গিয়েছিলো প্যাক্টিস রুমে,, এতোক্ষন ওই রুমেই ছিলো! ওদের নাম এনাউন্স করার সাথে সাথে দৌড়ে আসে! হঠাৎ করেই ছাদের সব লাইট অফ হয়ে যায় আর সাথে সাথে ডিজে(DJ) বক্সে “পারাম সুন্দরী” গান বেজে ওঠে আর সাথে স্মোকার+ (DJ) লাইটও,,,

Romeo Romeo
Gali Ke Romeo
Bholi Shakal Wale Saare Ke Saare Farebiyon (2)

Hein Romeo Romeo
Bhaade Ke Premiyon
Kaahe Gale Pade Ho
Bin Bulaye Baraatiyon..

Le To Gayi Kaleja
Sang Mein Humein Bhi Leja
Yeh To Chori Peh Aise Nazori
Kabhi Lage Monalisa
Kabhi Kabhi Lage Lolita
Aur Kabhi Jaise Kaadambri..

Haaye Meri param
param param param
param Sundari (2)

Sarse Phir Talak Betahasha
Husan Se Bhari
Haaye Meri param
param param param
param Sundari..

ইশা নাচ শেষ করেই স্টেজ থেকে দৌড়ে নেমে যায় পানি খেতে! আর ওর পিছে পিছে তিয়াশও যায়! তবে, তিয়াশ এখন রাগ করে নি! ইশার নাচ সুন্দর হয়েছে বলেই ওর সাথে যায় আর তাছাড়া আজকে সারাদিন তিয়াশ একদম ইশার সাথেই চিপকে ছিলো যেনো কোন ছেলে ওর প্রেয়সীর দিকে তাকানোর আগে তিয়াশের দিকে চোখ পড়ে! বিয়ে বাড়ির অনুষ্টান তাই এই ব্যাপারটা নিয়ে কেও তেমন মাথা ঘামায়নি! আর তিয়াশের শর্ত ছিলো ইশা নাচতে পারবে কিন্তু স্টেজে ওর সাথেও কাপল ডান্স করতে হবে! তাই ইশা বাধ্য হয়ে রাজি হয়,, তবে ওদের সাথে আরেকটা জুটিও নাচবে আর সেটা হলো বাসে তিয়াশের সাথে ওর যে কাজিন টা বাসে বসে ছিলো অর্নব আর সাথে নীরা! এখন দ্বিতীয় পারফর্মেন্সে রানী আর ওর হাসবেন্ড গান গাচ্ছে! এদিকে ইন্দু সাইডে দাঁড়িয়ে আছে আর ওর পাশে রুহান,, রুহানের সাথে বেশ ভালোই বন্ধুত্ব হয়েছে! তবে, এস আ ফ্রেন্ড হিসেবে অন্য কিছু না,, রুহান তো এমনেই সুন্দর আর হ্যান্ডসাম বিয়ে বাড়ির বেশির ভাগ মেয়েই রুহানের সাথে ইন্দুকে দেখে জ্বলে ওঠে! রুহানকে বেশি পছন্দ হয়েছে নীলের বোন নীরার,, ও তো অনেকবার কথাও বলতে গেছে! রুহান হেসে কথা বলেছে ঠিকই কিন্তু খুব অসস্থি নিয়ে,, সব মেয়ের মধ্যে ইন্দুর সাথেই একটু ফ্রী হয়েছে!

একে একে সবাই পার্ফমেন্স করছে,, কেও কেও গান আবার কেও কেও নাচ! রুদ্রাও ডান্স করেছে “এম আ বার্রি গার্ল” গানে! সবার নাচ তুলে দিয়েছে ইশা,, কারন সে অনেক ভালো ডান্সার! আজকে সবাইকেই কম বেশি পারর্ফমেন্স করতে হয়েছে! ইন্দু আর তৃষাও একসাথে একটা গানে ডান্স করেছে,, ইশাই শিখিয়ে দিয়েছে ওদের! আর রুহান গান গেয়েছে,, রুহান তার সুমধুর কন্ঠ দিয়ে গান গেয়ে সবার মন জয় করেছে! সবাইকে রাজি করাতে পারলেও বিন্দুকে পার্ফমেন্স প্যাক্টিস করানোর জন্য তৃষারা রাজি করাতে পারেনি! তখন ইশা রেগে বলে, “ভাবী তুমি রাজি হলে না তো ঠিকআছে পারর্ফমেন্স করার সময় এমন কেস খাওয়াবো দেইখো”! পালাক্রমে এখন ইষা-তিয়াশ আর নিরা-অর্নবের পালা আসে! ইশা যেয়ে ওদের ঠিক করা গান বলে দিয়ে আসে, তারপর স্টেজে ওঠে! স্টেজে ওঠার সাথে সাথেই লাইট অফ হয় আর কয়েক সেকেন্ড পর (DJ) লাইট জ্বলে+ স্মোকারের ধোয়া আসে ওদের দিকে! আর মিউজিক বক্সে গান চলতে থাকে—

Husn Hai.. Iskq Hai..

Husnn Hai Suhana
Iskq Hai Deewana
Roop Ka Khazana
Aaj Hai Lutana
Aake Deewane Muje
Seene Se Laga
Na Na Na…

Goriya Chura Na Mera Jiya
Goriya Chura Na Mera Jiya(2)

Mauka Milan Ka
Kahaan Roz Aaye
Aise Mujhe Kyon
Kareeb Laaye (2)
Dheere Dheere Se,
Haule Haule Se Kyon Tadpaye
Aise Raaton Mein,
Aise Baaton Mein Kyon Bekaye…

Kya Hai Lrada Mere
Yaar Bata
Na Na Na…

Goriya Hai Aasiq Tera piya
Goriya Hai Aasiq Tera piya
Goriya Chura Na Mera Jiya
Goriya Chura Na Mera Jiya..

বিন্দু আর শিশির এতোক্ষন একসাথেই বসেছিলো! বিন্দু প্রায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছে শিশিরের দুষ্টুমীতে,, ও একবার করে রেগে উঠে যায় অন্য জায়গায় কিন্তু শিশির বিভিন্ন কৌশলে আবার ওকে নিয়ে আসে ওর কাছে! শিশির বিন্দুর কানের কাছে গিয়ে ফু দিচ্ছিলো, বিন্দু রেগে শিশিরের হাত মুচড়িয়ে ধরে বলে,,

বিন্দুঃ বেশি বাড়াবাড়ি কিন্তু হচ্ছে,, আপনার কোন কাজ নেই এখানে বসে আছেন? বাবা-ছোট বাবা তারপর নীলের চাচ্চুরা, কাজিনরা কত কাজ করছে আপনে এখানে কেনো বসে আছেন?

শিশিরঃ ( হাত ছাড়িয়ে) এখন সবাই রেস্ট নিচ্ছে, কোন কাজ নেই আমাদের! তবে আমার আছে তোমার সাথে প্রেম করা! (বিন্দুর কোমড়ে সুড়সুরুড়ি দিয়ে)

বিন্দুঃ উফফ শিশির,,,

শিশিরঃ কালকে আমার দেওয়া ব্লাক শাড়িটা পড়বা!

বিন্দুঃ বয়েই গেছে আমার আপনার দেওয়া শাড়ি পড়বো! ( মুখ বাকিয়ে)

শিশিরঃ সমস্যা নেই, আমি পড়িয়ে দিবো! ( বিন্দুর ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়ে)

বিন্দুঃ আমি কিন্তু আবার ওঠে যাবো!

শিশিরঃ আমি আবার গিয়ে নিয়ে আসবো! ( বিন্দুর পায়ের পাতায় পা দিয়ে বিরবির করে সুড়সুড়ি দিয়ে)

আর এদিকে, ইন্দু সাইটে গিয়ে রোদের সাথে ফোনে কথা বলে,, ওয়াটস অ্যাপে ওর পিক, রুদ্রার পিক + নাচের ভিডিও সব সেন্ড করে! রুহান বুঝতে পেরেছে ইন্দু মনোযোগ দিয়ে কারোর সাথে কথা বলছে তাই ও দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো! হঠাৎই নীরা এসে বসে রুহানের পাশে,,,

নীরাঃ আমার ডান্স দেখেছেন? কেমন হয়েছে?

রুহানঃ সুন্দর!

নীরাঃ শুধু সুন্দর?

রুহানঃ ( মৃদু হেসে) না অনেক সুন্দর হয়েছে!

নীরাঃ আমাকে কেমন লাগছে দেখতে?

রুহানাঃ ভালো,,, আপনে এমনিও সুন্দর, না সাজলেও সুন্দর লাগতো!

নিরা খুশী হয়ে যায় রুহানের কথায়,, পাশে তাকাতেই দেখে ইন্দু ফোনে কথা বলছে তখন আবার রুহানকে বলে ওঠে,,,

নীরাঃ ওটা অর্ক ভাইয়ার শালিকা তাইনা? আপনার জিএফ নাকি?

রুহানঃ ( ভ্রু কুঁচকে) জিএফ? না তেমন কিছু না, উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড!

নীরাঃ সত্যি? আচ্ছা আপনার কোন জিএফ নেই?

রুহানঃ নাহ, জিএফ নেই তবে আমার বউ আছে! (মজা করে বলে)

নীরার চোখ বড়বড় হয়ে যায়, তাই দেখে রুহান বলে..

রুহানঃ সাথে একটা বেবীও আছে আমার! (হাসি চেপে)

নীরা এবার যেনো আকাশ থেকে পড়লো…

নীরাঃ আপনে ম্যারিড?

তখনই ইন্দু এসে বলে…

ইন্দুঃ কে ম্যারিড? ( ফোনের দিকে তাকিয়েই)

রুহানঃ আমি,, আমার বেবী+ বউ দুটোই আছে তাই মিস নীরাকে বলছিলাম! ( ইন্দুকে চোখে ইশারা করে)

ইন্দুঃ ওহ হ্যা,, রুহানের তো ২ বছরের একটা বেবী আছে! (হাসি চেপে)

নীরাঃ ওহ আচ্ছা,, আমি আসছি, পরে কথা হচ্ছে! (মন খারাপ করে চলে যায়)

নীরা যেতেই রুহান-ইন্দু দমফাটা হাসি দিয়ে ওঠলো,,,

ইন্দুঃ আপনাকে লাইক করে?

রুহানঃ জানিনা,, তবে বারবার আসছিলো আমার সাথে কথা বলতে! যাইহোক, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

ইন্দুঃ শিওর!

রুহানঃ আপনার লাইফে কি কেও আছে? আই মিন ইম্পরট্যান্ট কেও? মানে আপনে ফোনে কথা বলা দেখে বললাম!

ইন্দুঃ ওহ,, হুম আছে! আমার লাইফে সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট আমার রোদ! মিস্টার রৌদ্দিক মাহবুব রোদ! আমার আগের জিজুর ছোট ভাই মানে রোদ হচ্ছে রুদ্রার ছোট চাচ্চু!

রুহানঃ ওহ.. (রুহান ভাবে, তাইলে শিশির স্যার আমাকে ইন্দুর কথা কেনো বললো? সে তো অন্য কাওকে ভালোবাসে নাকি শিশির স্যার রোদের কথা জানেই না!)

দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের ঠিক শেষ পর্যায়,, যার যার পার্ফমেন্স করার কথা ছিলো সবাই করেছে! তাই ইশা এবার এনাউন্সমেন্ট করে,,,

ইশাঃ আমরা অনুষ্ঠানের একদম শেষ পর্যায় চলে এসেছি,, আর এই শেষ টা হবে কাপল ডান্স দিয়ে! কাপল হিসেবে যারা ডান্স করবে তারা হলো আমাদের সবার প্রিয় অর্ক ভাইয়া আর তার একমাএ ওইফ আমাদের প্রিয় ভাবী বিন্দু!

সবাই হাত তালি দিয়ে ওঠে,, বিন্দু বেশ অবাক হয়! ইশা যে ওকে এই কেস খাওয়ানোর কথা বলেছিল সেটা বিন্দু ভাবতেই পারে নি! বিন্দু অনেকবার নিষেদ করে, পরে সবার জোরাজোরি তে শিশিরের সাথে স্টেজে ওঠে! আর ইশাকে বলে ওকে পড়ে দেখে নিবে, শিশির ইশাকে একটা থ্যাংকস জানিয়ে বলে, তুই যা চাবি তাই দিবো বোন! ইশার নির্দেশে আবার বক্সে মিউজিক বেজে ওঠে,,,

Teri Meri Gallan Ho Gayi Mashhoor
Kar Na Kabhi Tu Muje Nazron Se Door
Kithe Chali Ae Tu, Kithe Chali Ae Tu, Kithe Chali Ae…

Jaanda Ae Dil Yeh Toh Jaandi Ae Tu
Tere Bin Main Na Rahun Mere Bina Tu
Kithe Chali Ae Tu, Kithe Chali Ae Tu, Kithe Chali Ae…

Kaatun Kaise Raatan Of Saaware
Jiya Nahi Jaata Sunn Baaware
Ke Raataan Lambiyan
Lambiyan Re
Kate Tere Sangeyan
Sangeyan Re…(2)
____________________________

বিয়ের দিন সকাল থেকেই পুরো বাড়ি হৈ চৈ এর শোরগোল! কালকে সারা রাত কেও ঘুমোয়নি,, সারা রাত ভরা সবাই মেহেদী দিয়েছে আর সবাইকে দিয়ে দিয়েছে বিন্দু, তৃষা, রানী এরা তিনজনই সুন্দর করে দেয় তাই আর কোন মেহেদী আর্টিষ্ট কে ডাকা হয়নি! সকাল থেকে বক্সে গান বাজাচ্ছে তিয়াশরা,
যখনই শুনেছে সারা রাত মেয়েরা ঘুমোয়নি, ওরা ফাইযলামি করে সকাল থেকে গান বাজাচ্ছে কাওকে আর ঘুমোতে দিবে না! তাই বাধ্য হয়েই সবাই সকাল সকাল উঠে পড়ে! তারপর সকাল নয়টার দিকে সবাই ছাদে গিয়ে নীলকে গোসল করায় পিতলের কলসি দিয়ে, এটা তার দাদার আমলের কলস! গোসল করানোর পর্ব শেষ হতেই মেয়েরা সবাই গোসল করে নেয়,, আর কিছুক্ষন পরেই পার্লারের মেয়েরা আসবে!

দুপুরের দিকে ৩০০ জন বরযাত্রী যায় মেয়ের বাড়িতে! নীলের ওর বউয়ের সাথে রিলেশন ছিলো ৬ বছর! ইতালিতে যাওয়ার ১ বছর আগে থেকেই নীল আর রিমির রিলেশন,, দুই পরিবারই রাজি ছিলো! তাই ইতালী যাওয়ার সময় ওদের এংগেজমেন্ট হয়েছিলো,, তখন ওরা দুইজনই ছোট ছিলো! দীর্ঘ পাচ বছর পর এসে এতোদিনে ওদের বিয়ে হয়! বিয়ে বাড়িতে কারোর কোন কমতি রাখেনি নীলের শ্বশুর,, অনেক সম্মানের সাথে মেয়েকে বিদায় দিয়েছে তারা! সারাদিন সবাই অনেক মজা করে সাথে একরাশ ক্লান্ত নিয়ে আবার শেখ বাড়িতে ফিরে আসে! কালকের বিরক্ত করার জন্য বিন্দু আজকে আর একবারও শিশিরের কাছে যায়নি,, সারাদিন দূরে দূরে থেকেছে! শিশির আর কি? মেয়েকে নিয়ে একাই ঘোরে বিয়ে বাড়িতে আর মেঘকে বিন্দু ওর শ্বাশুড়ির কাছে রেখে আসে! নীলের মা, মামী-চাচীরা কেও আসেনি এখানে, বাড়িতে বউ যাবে অনেক কাজ তো আছেই! বিন্দুর আম্মুও এসে তাড়াতাড়ি চলে গেছে! তন্দ্রাবতি অনেক খুশী, ইন্দুকে সব-সময় রুহানের পাশে দেখে হয়তো ভেবেছে তার মেয়ে মায়ের জন্য রোদকে ভুলে রুহানের সাথে বিয়েতে রাজি হবে! কিন্তু সে কি আদৌ জানে? তার মেয়ের পক্ষে এতো বড় কাজ সম্ভব কি না, ইন্দু বলেছে বেঁচে থাকতে কখনোই ও রোদকে ছাড়বে না!

রাতের দিকে বউকে বাড়ি নিয়ে আসে! সবাই আগেই চলে এসেছিলো কিন্তু নীলের সব কাজিনরা থেকে গেছে! বিন্দুও চলে এসেছিলো আগেই,, তবে রুদ্রা শিশিরের সাথে মেয়ের বাড়িতেই থেকে যায়! সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও সমস্যা হয়, বাসর ঘরে টাকা নিয়ে! ইশারা বলেছে, ২০ হাজারের নিচে ছাড়বে না বাসরঘর! কারোর কোন কথাতে কাজ হয়নি,, লাস্টে শিশির গিয়ে অনেক বুঝিয়ে ১০ হাজারের সাথে নিজে ৫ হাজার এড করে বিচ্ছুদের ১৫ হাজার দিয়ে দেয়! তারপর ওরা নীল আর রিমি কে রুমে যেতে দেয়! আর এই টাকা নিয়ে ওরা প্লান করে,,হলে গিয়ে মুভি দেখবে + রিশিপশনের দিন রেস্টুরেন্টে যাবে! রাত ১২:৩০ টার দিকে একটা ইংলিশ মুভি শুরু হবে সেই টিকিট কাটে কিন্তু বিপত্তি ঘটে গার্জেনরা! তারা কেও রাত করে যেতে দিবে না! পরে শিশিরকে সবাই অনেক রিকুয়েস্ট করে,, দেন শিশির গার্জেনদের বুঝিয়ে নিয়ে যাবে সবাইকে! আর ওদের কাজিনদের মধ্যে যারা বড় আছে সবার ওপরেই দায়িত্ব পড়ে মেয়েদের দেখে রাখতে শিশির একা এতোগুলোকে সামলাতে পারবে না বলে! প্রায় ২৫/৩০ জনের মতো ওরা সব কাজিনরা, ভাই-ভাবীরা যাবে! সবাই গেলেও বিন্দু বলেছে সে যাবে না আর রুদ্রাকেও যেতে দিবে না,, বিন্দু গেলে রুদ্রা যাবে তাই! কিন্তু রুদ্রা সাফসাফ বলেছে, “মাম্মাম তুমি না গেলে আমি বাবাইয়ের সাথে যাবো! সব ফুপিরা যাবে আর ইন্দুমতীও যাবে, তোমার না গেলেও হবে”! কিন্তু এখানে কেও বিন্দুকে ছাড়া যাবে না, বিন্দুর না গেলে সবার যাওয়া নষ্ট! শিশির তো বিন্দুর এগুলো দেখে প্রচুর রেগে আছে,, বিন্দুকে আলাদা ডেকে বলে,,,

শিশিরঃ এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার? তুমি এতো এমন কেনো? সব কিছুতেই তোমাকে জোর করে করাতে হয়! তুমি কি হ্যা?

বিন্দুঃ আমি নতুন বউ!

শিশিরঃ নতুন বউ? নতুন বউ আর কেও নেই, তুমি একা? নিলয় ভাইয়ার বউও নতুন,, রিশাবের বউ নতুন,, তারা সবাই যাবে তাইলে আমার বউ যাবে না কেনো?

বিন্দুঃ আমার এগুলো ভালো লাগে না আর তাছাড়া আমি গেলে রুদ্রা যাবে!

শিশিরঃ তুমি না গেলেও রুদ্রা যাবে! ও কি বলেছে শোন নি? আর তাছাড়া সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট হলো তোমাকে না নিয়ে কেও যাবে না! ওদের সবার প্রিয় ওদের অর্ক ভাই আর তুমি তার একমাত্র বউ, ওরা কি পারে তোমাকে ছাড়া কিছু করতে?

বিন্দুঃ একমাএ না দুইমাত্র! আপনার আরেকটা বউ ছিলো! (মুখে ভেংচি কেটে)

শিশিরঃ উফফ বিন্দু, মেজাজ খারাপ করিয়ো না! তুমি যাবে দ্যাটস ফাইলান!

এই বলে শিশির চলে গেলো.. বিন্দুও যাবে সিদ্ধান্ত নেয়! ওর জন্য এতোগুলো মানুষের অসুবিধে হবে তাই কি হয়?

#চলবে…

[ রি চেক করা হয়নি,, ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here