শিশির বিন্দু পর্ব ১৯

0
459

#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ১৯

রুনুঝুনু শব্দ তুলে এক ধাপ এক ধাপ করে সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠছে বিন্দু,, আজ তাকে যেনো স্বর্গের অপশরীর থেকে কোন অংশে কম লাগছে না! বিন্দু লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়েছে, পায়ে গাঢ় করে লাল আলতা, চুলে খোপা করে বেলী ফুলের মালা গুঁজেছে, কপালে লাল টিপ, চোখে গাড় করে কাজল, ঠোঁটে গাঢ় করে লাল লিপস্টিক, গলায় লাভ বিশিষ্ট একটা লকেটের সাথে চেন, সবকিছুতেই বিন্দুকে খুব মানিয়েছে! আজকে সে নিজের ইচ্ছেয় সেজেছে, খুব করে সেজেছে, প্রতিবছর আজকের দিনটা যেনো তার সাজগোছের একটা রুটিন রয়েছে! আজকের দিনটায় তার প্রিয় জিনিসগুলো দিয়ে সাজা চাই ই চাই!

ইন্দু আর ওর মা নারায়নগঞ্জে চলে এসেছিলো আরো তিন সপ্তাহ আগে! বিন্দুরাও নারায়নগঞ্জে এসেছে দু’দিন হলো,, উদ্দেশ্যে একদিন পর শিশিরের ফুপাতো ভাই– শেখ মোহাম্মদ নীলের বিয়ে! নীল এতোদিন ইতালিতে ছিলো, তাই শিশির_বিন্দুর বিয়েতে আসতে পারেনি! শিশিরের একমাত্র ফুপু আফসানা শেখও অসুস্থ ছিলো তখন তাই ভাতিজার বউ মানে বিন্দু কে বিয়ের সময় দেখতে যেতে পারেনি! তাই নিজের ছেলের বিয়েতে সবাইকে আমন্ত্রণ করেছে,, খুব জাঁকজমক করেই আফসানা শেখ একমাত্র ছেলের বিয়ে দিবেন! এই কারণে ছেলের বিয়ের দায়িত্ব তার দুই ভাইয়ের কাঁধে তুলে দিয়েছে, আরো নীলের চাচারা আছে সবাই মিলেই বিয়ে পাড়ি দিবে! কারন নীলের বাবা শেখ মুহাম্মদ রানা আরো পাঁচ বছর আগেই মারা গিয়েছে!

কালকেই তৃষা- ইশারা শিশিরদের বাড়িতে আসবে তারপর এখান থেকে সবাই একসাথে কিরোরগঞ্জ বিয়েতে যাবে! আর কালকেই ওদের আব্বুরা মানে আশরাফ আহমেদ (শিশির-তিয়াশের আব্বু) আর আশফার আহমেদ (তৃষা-ইশার আব্বু) ওরা দুই ভাই ভাগ্নের বিয়ের জন্য বোনের বাসায় যাবে! বিন্দুরা আজকে ওদের বাড়িতে এসেছে,, কালকে তৃষারা আসলে ও বাড়িতে মানে শিশিরদের বাড়িতে যাবে! শিশির প্রথমে বিন্দুদের বাড়িতে আসতে চায়নি, লোকে কি ভাববে বিয়ের পরেই বউওয়ের আঁচল ধরে ঘুরছে যা মেঘলার বেলায় অনেক শুনেছে। কিন্তু রুদ্রার জেদের কাছে হার মেনে আসতে হলো! রুদ্রার জেদ একদম ওর বাবা রুদ্রের মতো হয়েছে!

যাই হোক,, বিন্দু এতো সেজেগুজে সিঁড়ি দিয়ে ওদের বাড়ির ছাদে যাচ্ছিলো! ছাদে গিয়েই দেখে শিশির আগের থেকেই ছাদে ছিলো! এখন গৌধুলির লগ্ন কিছুক্ষন পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে! এ সময় ছাদে কেও ছিলোও না, শুধু শিশির ছিলো একা! শিশির নামার প্রস্তুত নিয়ে সিঁড়ির দরজার কাছে আসতেই দেখে বিন্দু উপরে আসছিলো! শিশির বিন্দুকে এভাবে দেখে বেশ ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে! শিশিরের চোখের পাতা একটুও নড়ছে না, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিন্দুর দিকে! এই রূপে আজ প্রথম দেখছে তার সুন্দরী বধূকে কিন্তু বিন্দু এতো সেজেছে কেনো তা শিশিরের অজানা! প্রচুর কৌতুহল নিয়ে বিন্দুকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,,,

শিশিরঃ এতো সেজেছো কেনো বিন্দুবালা (ঘোর লাগা কন্ঠে)

বিন্দুঃ দেখি সরুন তো সামনে থেকে,, আমি ভেতরে যাবো!

শিশির সরে যেতেই বিন্দু ভেতরে গিয়ে ছাদের ধার ঘেঁষে গিয়ে দাঁড়ায়! শিশিরও বিন্দুর পিছে পিছে যায়, বিন্দুর পাশে গিয়েই দেখে বিন্দু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে! শিশির ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,,,

শিশিরঃ বিন্দু, একটা কোশ্চেন করেছিলাম? হঠাৎ সেজেগুজে ছাদে এসেছো কেনো?

বিন্দুঃ আজ থেকে ছয় বছর আগে এই দিনটায় আমার আর রুদ্রের বিয়ে হয়েছিলো,, আজকে আমাদের ষষ্ঠতম বিবাহ বার্ষিকী! এই দিনটা আমার কাছে অনেক স্পেশাল!

শিশিরের শুনে মন খারাপ হয়ে যায়! কিছুক্ষন নিরব থেকে শিশিরই আবার বলে..

শিশিরঃ ওহ,, আমাদের বিয়ের ডেট টা যেনো কবে বিন্দু? (মনে আছে, তাও বিন্দুর কাছে শুনবে)

বিন্দুঃ ( শিশিরের দিকে তাকিয়ে) মনে নেই তো, মেবি আড়াই মাস হয়েছে কিন্তু তারিখ টা যেনো কবে!..

বিন্দুর কথা শুনে শিশিরের অনেক টা খারাপ লাগে,, ও যতই চাচ্ছে বিন্দুর মন রুদ্রের কাছে থেকে সরিয়ে নিজের দিকে আনবে কিন্তু কিছুতেই পারছে না! বিন্দু সেই একটা জায়গাতেই আটকে আছে! বিন্দু কেনো এমন করছে বুঝছে পারছে না, রুদ্র তো ওর অতীত কিন্তু শিশির বর্তমান+ ভবিষ্যৎ তাও কেনো বিন্দু ওর অতীত নিয়ে পড়ে আছে? বিন্দু তো বলেছিলো ও কখনো অতীতকে ভেবে বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নষ্ট করেনা, তাহলে?

বিন্দুঃ কি ভাবছেন? মেবি সেপ্টেম্বরে হয়েছিলো!

শিশিরঃ ( একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) আগষ্টেরর ১৮ তারিখ!

বিন্দুঃ ( অবাক হয়ে) আপনার মনে আছে?

শিশির কিছু বলে না,,,

বিন্দুঃ জানেন আজকের দিনে আমি যা যা দিয়ে সেজেছি সবকিছুই ছিলো রুদ্রের দেওয়া লাস্ট এনিভারসারি গিফট! ওর প্রিয় রঙ লাল-সাদা ছিলো, তাই আমাকে সবকিছুই লাল দিয়েছিলো চতুর্থ বিবাহ বার্ষিকী তে,, সেবারই আমার সাথে ওর শেষ এনিভারর্সারি ছিলো! এই শাড়ি থেকে শুরু করে চোখের কাজল, টিপের পাতা, আলতা প্রত্যেকটা জিনিসই ওর দেওয়া! আর আমি এগুলো খুব যত্নে রেখেছি,, গত দুই বছর যাবৎ এই দিনটায় আমি এই সবকিছু পড়ি! আবার যত্ন করে দেখে দেই! আর এগুলো সব যে পর্যন্ত শেষ না হবে পড়তেই থাকবো,, এমনকি নষ্ট হলেও পড়বো! ওর দেওয়া শেষ চিহ্ন বলতে এই সামগ্রীগুলো আর সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট ওর মেয়ে রুদ্রা! এই সম্বলগুলো ছাড়া আর কিছুই নেই আমার কাছে! আর এই গৌধুলি লগ্নে থেকে রাত পর্যন্ত আমি এখানে থাকবো! জানেন তো আজকে আমার রুদ্র আমার সাথে দেখা করবে,, রাতের আকাশে আজকে যে তারা টা বেশি আলোকরশ্মি ছড়াবে সেটাই হবে আমার রুদ্র! আর ওর সাথে আমি একান্তে কথা বলবো!

শিশির এতোক্ষন চুপ করে শুনছিলো বিন্দুর কথাগুলো,, সত্যি বিন্দুর ভালোবাসার কোন তুলনা হয়না! সে রুদ্রকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবসে!
তার মনে কি শিশির নামের এই ব্যাক্তির কোন জায়গা হবে? একবার তো হয়েছিলো, আবার কি হবে? কথায় আছে না,, “কাচের গ্লাস একবার ভেঙে গেলে সেটা হয়তো জোরা লাগানো যায় ঠিকই কিন্তু এর দাগ কখনো যায় না”! হাজার চেষ্টা করেও দাগ মুছে ফেলা যাবে না! বিন্দুর মনে শিশির হয়তো আবারো একদিন জায়গা করতে পারবে, কিন্তু ওর মনে এই দাগটা কখোনোই যাবে না,, বিচ্ছেদের দাগটা থেকেই যাবে আজীবন! এগুলো ভাবতে ভাবতেই বিন্দুর গলার দিকে চোখ গেলো শিশিরের,, ফর্সা গলায় গোল্ডের চেনের সাথে লাভ আকৃতির একটা গোল্ডের পেন্ডেন্ট পড়েছে! কিন্তু এই চেন টা শিশিরের দেওয়া চেনটা না!

শিশিরঃ এটা কোন চেন বিন্দু? কখনো তো পড়োনি,, আমি যেটা দিয়েছিলাম সেটা তো না! ওই চেনটা কোথায়,, যেটা সব-সময় পড়ে থাকতে? কবে বানিয়েছো এটা,, আমাকে তো বললেনা!

বিন্দুঃ এটা বানাইনি! বললাম না, আজকে রুদ্রের দেওয়া সব পড়েছি,,চেন-নুপুড় সব! এটা আমি সব সময় পড়িনা, নষ্ট হয়ে যাবে ভয়ে!

শিশিরঃ আর আমার টা?

বিন্দুঃ খুলে রেখেছি!

শিশিরঃ ওহ!

বিন্দুঃ এটা থ্রী পার্টের চেন! একটাতে আমার পিক, মাঝেরটা তে রুদ্রা আর একটাতে রুদ্রের পিক! রুদ্রা তখন তিন বছরের ছিলো,, আর পিকটাও তখনকারই ছিলো! ( লকেট খুলে দেখিয়ে)

শিশিরঃ আচ্ছা! আমি নিচে যাচ্ছি, তুমি এসো তোমার যখন সময় হয়! ( উলটো দিকে হাটা শুরু করে)

শিশিরের এখানে আর একটুও থাকতে ইচ্ছে করছে না! এটা কোন ছেলের পক্ষেই সম্ভব না, তার স্ত্রী তার সামনে অন্য কোন ছেলের কথা ভাববে! হ্যা হতে পারে, রুদ্র ওর স্বামী ছিলো কিন্তু এখন তো শিশির ওর স্বামী! শিশির প্রথমের দিকে এগুলো নিয়ে বেশি মাথা না ঘামালেও যেদিন থেকে জানতে পেরেছে মেঘলার জন্যই শিশির-বিন্দুর বিচ্ছেদ হয়েছিলো সেদিন থেকেই বিন্দুর প্রতি বেশি করে কেয়ার নিতে শুরু করেছে! হয়তো সে আবার আগের মতো ভালোবাসতেও শুরু করেছে! কিন্তু বিন্দু এগুলো কেনো বোঝে না? ওর কি এতোটা অবুঝ হলে চলে? শিশিরকে কি আর কখনোই ভালোবাসবে না?
_____________________

আজকে সবাই কিশোরগঞ্জ যাচ্ছে বাসে করে! পুরো বাসটাই শিশির ভাড়া করেছে,, এখানে ওর আত্নীয়-স্বজন ছাড়া আর কেও নেই! প্রথমে হাইস ভাড়া করতে চেয়েছিলো কিন্তু হাইসে বিন্দু দূরের রাস্তা জার্নি করতে পারে না, জায়গা কম তাই ও অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়! আবার ট্রেনে ইশাদের সমস্যা হয়, কোথাও নামতে পারবে না, এক কামড়ায় বসে বসে বোরিং হবে! তাই শিশির বাধ্য হয়ে বাসই ভাড়া করলো,, “এবার যা বাঙালি যত ইচ্ছে নেমে নেমে ঘোর, শুয়ে থাক, পা তুলে বসে থাক, লাফালাফি কর কেও কিচ্ছু বলবে না!” এই বাসে শিশির আর ইশাদের ফ্যামিলি ছাড়া শিশিরদের গ্রামের আরো অনেকেই এসেছে! যেমন শিশিরের বাবার চাচাতো, মামাতো ভাইয়েরা তাদের ছেলে-ছেলের বউ, নাতীরা! তাই, বাস পুরো ভর্তি মানুষ,, সবাই কাপল কাপল বসেছে! শুধু শিশিরের মা- লায়লা আহমেদ আর তার ছোটজা- নুরনাহার আহমেদ ( তৃশা-ইশার মা) একসাথে বসে আছে,, কারণ তাদের স্বামীরা আগের দিনই বোনের বাড়ি চলে গেছে! নুরনাহার আহমেদের সাথে বিন্দুর তেমন পরিচয় নেই কারণ ওদের বিয়ের সময় সে খুবই অসুস্থ ছিলেন যার জন্য দুই মেয়ে আর স্বামীকে পাঠিয়ে দিয়েছিলো! তবে ভদ্রমহিলা বিন্দুর সাথে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছে,, বিন্দুকে তার খুবই পছন্দ! একমাএ শিশির বাদে ওর ফ্যামিলির কেওই মেঘলাকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো না,, তবে বিন্দুকে পেয়ে সবাই যেনো আকাশের চাঁদ পেয়েছে এমন অবস্থা! আর রুদ্রাকেও সবাই অনেক ভালোবাসে,, রুদ্রা যে অন্য বংশের সেটা কখনো মনেই করেনা! সবার কাছে রুদ্রাও যেনো শিশিরের আপন মেয়ে মনে করে!

বিন্দু-শিশির একসাথে বসেছে,, বিন্দুর কোলে মেঘ ঘুমিয়ে আছে! রুদ্রা পুরো বাস ছোটাছুটি করছে, ওর যেনো আজকে ঈদ লেগেছে! তৃষা- ইশা ওরা দুইবোন একসাথে,, তিয়াশ ওর এক কাজিনের সাথে পেছনের দিকে! সামনের দিকে শিশিরের চাচারা (মানে ওর আব্বুর চাচাতো-মামাতো ভাইয়েরা) পেছনের দিকে বিন্দুর আম্মু-আব্বু বসেছে! শিশিরের খালামুণি শায়লা রহমান আসতে পারেনি, কিন্তু তার ছেলে রাফিন এবং রাফিনের ছেলে ও বউ নাদিয়া আর রিদম এসেছে! পুরো বাসেই মানুষ কিন্তু সমস্যা হয়েছে ইন্দুর,, ওর বসার কোন জায়গা নেই! শুধু একটা সিটই ফাঁকা সেটা হচ্ছে রুহানের পাশে,, তাই ইন্দু বাধ্য হয়ে রুহানের পাশেই বসে যায়! রুহানকেও শিশির নিয়ে যায় ওর ফুপুর বাড়িতে! ইন্দুর কাছে মনে হচ্ছে সবাই প্লান করেই ইন্দুকে রুহানের পাশে বসতে দিয়েছে,, কারণ ও জেনে গেছে ওর ফ্যামিলি রুহানের সাথে বিয়ে ঠিক করতে চাচ্ছে! হয়তো এ সম্পর্কে রুহানও কিছু জানে আবার জানতে নাও পারে এসব নিয়ে ইন্দুর কোন মাথা ব্যাথা নেই,, ও সবাইকে সাফসাফ জানিয়েছে যে বিয়ে করলে একমাএ রোদকেই করবে তাছাড়া আর কাওকে না!

শিশিরঃ রুদ্রা, মাম্মা এদিকে এসো ঘেমে কি হয়েছো? রিদম আব্বু তুমি গিয়ে আম্মুর কাছে বসো রুদ্রার সাথে আবার পড়ে খেলো!

বিন্দুঃ রুদ্রা দৌড়াদৌড়ি বাদ দিয়ে কোথাও স্থির হয়ে বসো,, নাইলে এখন পিটুনি খাবে!

তখন রুদ্রা গিয়ে ওর দাদীর কোলে বসে পড়ে! আর এদিকে শিশির বিন্দুর পেছন দিয়ে হাত দিয়ে ওর কোমড় জরিয়ে ধরে! বিন্দু রেগে শিশিরের দিকে তাকায়, কিছু বলতেও পারছে না আশেপাশে সবাই আছে জন্য আবার হাত সরাতেও পারছে না মেঘ কোলে আছে জন্য! তাও ফিসফিস করে শিশিরের কানে কানে বলে,,,

বিন্দুঃ কি হচ্ছে কি?

শিশিরঃ কি হচ্ছে? ( চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে)

বিন্দুঃ হাত সরান!

শিশিরঃ কার হাত, কিসের হাত, কোন হাত? (আরেকটু চেপে ধরে)

বিন্দুঃ শিশির! (চোখ রাঙিয়ে)

শিশিরঃ বিন্দু? ( ভ্রুঁ নাচিয়ে)

বিন্দু বুঝতে পেরেছে শিশির প্রচুর ফাইযলামি মুডে আছে এখন! হাজার বললেও ছাড়বে না তাই রেগে গিয়ে শিশিরের পায়ে জোরে করে একটা পাড়া দেয়!

শিশিরঃ আহ বিন্দু! (কোমড় ছেড়ে নিজের পাড়ে হাত দিয়ে)

বিন্দুঃ কি হয়েছে?

শিশিরঃ ল্যাং মাড়লে কেনো?

বিন্দুঃ কই? কখন? কিভাবে?

শিশিরো বুঝেছে বিন্দু ইচ্ছে করে এমন করছে! তাই আর কথা না বাড়িয়ে গলা খেঁকিয়ে সোজা হয়ে বসে! বিন্দু জানালার কাছে বসেছিলো, সে বাহিরে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে! তখনই পেছন থেকে শিশিরের এক কাজিন বলে উঠলো,,

আদনানঃ ভাই, চিল্লিয়ে উঠলি কেনো?কোন সমস্যা? (শিশিরের সমবয়সী)

শিশিরঃ নাহ,,( দাত কটমট করে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে)

আদনানঃ ভাবী আমার ভাইয়েরো একটু সেবা-যত্ন কইরেন! শুধু ছেলে-মেয়ে নিয়েই থাইকেন না!

শিশিরঃ ( বিড়বিড় করে) সেই কপাল কি আর আমার আছে!

আদনানঃ কিছু বললি? দেখ তোর ভাবী আর আমার দেড় বছর হলো বিয়ে হয়েছে, এখনো চুটিয়ে প্রেম করি!

শিশিরঃ ভাবী তো একদম পুচকি! আমাদের ইশার সমান, মেবি উচ্চ মাধ্যমিক দিবে তাইনা? তারে ভাবী কেমনে বলি বলতো!

আদনানঃ বউ তো বউই হয়, ছোট কি আর বড় কি! ( শয়তানি হাসি দিয়ে তার বউয়ের দিকে তাকায়)

আদনানের কথা শুনে শিশির-বিন্দু দুইজনই হেসে ফেলে! ওরা ওদের মতো গল্প করছে!

আর এদিকে,, পাশে বসার অনেক্ষন পরে রুহান ইন্দুর সাথে পরিচয় হয়! লং জার্নি করতে হবে এইরকম বোবা হয়ে বসে থাকতে একটুও ভালো লাগছিলো না রুহানের! তাই ইন্দুর সাথে নিজে থেকেই পরিচয় হয়! আর ইন্দু সব-সময় ম্যাসেঞ্জারে রোদের সাথে চ্যাট করছিলো,, রুহানের সাথে কথা বলতে ইন্দু বেশ বিরক্তই হয়! তাও মুখে মেকি হাসি দিয়ে কথা বলে! তবে ইন্দু এটা খেয়াল করলো,,, ছেলেটির কথা বলার স্টাইল মারাত্মক, দেখতেও বেশ সুন্দর! রোদের থেকে কোন অংশে কম না, বরং একটু বেশিই সুন্দর যেকোন মেয়েই এক নযর দেখে ক্রাশ খাবে! ইন্দুও ক্রাশ খেয়েছে, কিন্তু রোদকে ছাড়া ও কিছু ভাবতে চায় না! বিরক্ত নিয়ে কথা বলতে থাকে রুহানের সাথে!

রুহানঃ আই থিংক, আপনে ডিস্টার্ব ফিল করছেন! সরি, একচুয়েলি আমি বোরিং হচ্ছিলাম,, এই কারণে আপনার সাথে কথা বলা!

ইন্দুঃ না না ডিস্টার্ব কেনো হবো,, ঠিক আছি ক্যারি অন! আপনে কি জানেন, আপনার কথা বলার স্টাইল টা মারাত্মক! ( ফোন থেকে মাথা তুলে)

রুহানঃ বলছেন?

ইন্দুঃ হুম!

রুহানঃ আমার কাছে তেমন কিছু মনে হয় না,, আমি তো নরমালি কথা বলি! আর,,, ( ইন্দু থামিয়ে দেয়)

ইন্দুঃ নিজের গুন গুলো কখনো নিজের কাছে ধরা পড়ে না!

রুহানঃ তাই? তাহলে তো এটাও বলা যায় আপনে বেশ সুন্দরি! সুন্দরি না মারাত্মক লেভেলের সুন্দরি!

ইন্দুঃ হয়তোবা! (আবার ফোনের দিকে মন দেয়)

ওদের মাঝে আর কোন কথা হয়নি,, দুইজনই নিরাবতা পালন করছিলো! তবে, দুজনই ফোন ঘাটছে একজন তার প্রেমিক সাথে চ্যাট আর একজন ফোন বের করে গেম খেলতে থাকে! হঠাৎ কারোর চিল্লানিতে বাসের সবাই তাকায়,, তাকিয়ে দেখে ইশা চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে…

ইশাঃ আমরা কি বিয়ে খেতে যাচ্ছি নাকি মরা বাড়ি যাচ্ছি? এমন মরার মতো সবাই বসে আছো কেনো?
বিয়ের গাড়ি হবে সেই ধুমধাড়াক্কা,, তা না করে সবাই মরা মুরগীর মতো বসে আছো! এই মামা গান ছাড়েন তো,, আমরা নাচবো! ( ড্রাইভার কে)

সবাই ইশার কথায় রেসপন্স করলো! ড্রাইভার একটা গান দিলো কিন্তু সেটা তাদের পছন্দ হলো না! তৃষা এগিয়ে গিয়ে ওর ফোন থেকে গান ছেড়ে দিলো! বাসের মিউজিক সিস্টেম অনেক ভালো ছিলো,, পুরো বাসেই মিউজিকের সিস্টেম মানে একটু পর পর যেমন লাইট থাকে ওইরকম একটু পর পর মিউজিকের বক্স লাগানো! যার জন্য সাউন্ড বক্স না নিয়েও ওদের কোন অসুবিধে হয়নি,, সব মেয়ে কাজিন গুলো নাচতে আসে,, সাথে ইন্দুও আসে! নাদিয়াও আসে লাফাতে লাফাতে,, ওকে তেমন কেও পছন্দ করে না,, নাদিয়া তো শিশিরের নানুর বাড়ির গুষ্টি ওদের কেও হয় না+ নাদিয়ার কথা-বার্তাও কারোর পছন্দ না,, তাও কিছু বলে না কেও, রিলেটিভ হয় তো! গাড়িতে গান বাজছিলো—

“‘Tu Ho Gayi One To Two
Oh Kudiye What To Do
Oh Ho Gayi Munde Di
( Tu Turu Turu Turu)

Patanga Vargi
Tu Ainwayi Udd Di
Oh Ho Gayi Munde Di
( Tu Turu Turu Turu)

Hila De Chaldi Tuk Tuk Tu Kardi
Makeup Tu Kardi Yaar..
Angrezi Padhdi Ghit Pit Tu Kardi
Jimme Queen Saadi Victoria
Tu Ghanti Big Ban Di
Poora London Thumakda
Oh Jaddo Nachche Pehn Di
Poora London Thumakda
Tu Ghanti Big Ban Di
Poora London Thumakda
Oh Jaddo Nachche Pehn Di
Poora London Thumakda””

নাচার মাঝেই ইশার চোখ পড়ে পেছনে বসে থাকা তিয়াশের দিকে! তিয়াশ এতোক্ষন ভরা ইশার কান্ড দেখছিলো আর রাগে ফুঁসছিলো! ইশার তিয়াশকে দেখেই গলা শুকিয়ে যায়, কেমন আগুন চোখে তাকিয়ে আছে যেনো এখনই ইশাকে আগুনে পুড়িয়ে মারবে! ইশা ভয়ে চুপসে যায় আর ও গিয়ে জানালার ধারে তৃষার সিটে গুটিশুটি হয়ে বসে পড়ে! ওকে তেমন কেও খেয়াল করলো না, শুধু তিয়াশ ছাড়া! তিয়াশে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে, যে ওর প্রিয়তমা ওকে দেখে ভয় পায়! ইশা মাথা উঁচিয়ে আবার পেছনের দিকে তাকায়, দেখে তিয়াশের ঠোঁটে হাসি থাকলেও ইশাকে দেখে আবার চোখ গরম করে তাঁকায়! ইশার আর সাহস নেই পেছনে তাকানোর,, ও সিটেই আবার বসে পড়ে ভয়ে! ইশার এই এক সমস্যা,, ও হাজার চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে হলেও এই একটা মানুষের কাছে যেনো নিজেকে নিরীহ মনে হয়, কেনো সেটা সে জানে না!

তৃষা এবার বিন্দুকে ডাকে,, বিন্দু প্র‍থমে অনেকবার না জানায় পরে শিশির ওকে বলে, মেঘকে শিশিরের কোলে দিয়ে ওদের সাথে নাচার জন্য! রুদ্রাও ডাকে ওর মাম্মামকে অনেকবার তাই বিন্দু বাধ্য হয়ে মেঘকে শিশিরের কোলে দিয়ে যায় ওদের সাথে!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here